ডুবুরি-পোশাক পরে সাগরে ডুব দিয়েছ কখনও? জিজ্ঞেস করলেন ডেভিস ক্রিস্টোফার।

প্যাসিফিক স্টুডিও। বিখ্যাত চিত্রপরিচালকের অফিসে বসে আছে তিন গোয়েন্দা।

বিশাল টেবিলের ওপাশে বসা মিসটার ক্রিস্টোফারের দিকে চেয়ে বলল মুসা আমান, হ্যাঁ, স্যার, ড়ুবেছি। গতকাল শেষ পরীক্ষা নিয়েছেন আমাদের ইনস্ট্রাকটর। পাস করেছি। ভালভাবেই।

অভিজ্ঞ ডুবুরি নই আমরা, যোগ করল কিশোর পাশা। তবে নিয়মকানুন সব জানি। ফেস মাস্ক আর ফ্লিপার আছে আমাদের তিনজনেরই।

গ্যাস ট্যাংক আর অন্যান্য যন্ত্রপাতি? জানতে চাইলেন চিত্রপরিচালক।

গুড, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। মনে হয় কাজটা করতে পারবে তোমরা।

কাজ! বলে উঠল রবিন।

হ্যাঁ, বললেন চিত্রপরিচালক। একটা রহস্যের কিনারা করতে হবে। সেজন্যেই ডেকেছি তোমাদের। আর হ্যাঁ, এক-আধটু অভিনয়ও করতে হবে।

অভিনয়? ভুরু কোঁচকাল মুসা। কিন্তু আমরা তো স্যার, অভিনেতা নই। কিশোর অবশ্য মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে…

অভিজ্ঞ অভিনেতার দরকার নেই ওদের, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। মুসা, তোমার বাবা কোথায় আছে এখন, জান?

জানি স্যার, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান মুসার বাবা রাফাত আমান। ছবির শুটিঙের সময় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তদারকির ভার থাকে তাঁর ওপর। ফিলাডেলফিয়ায়।

ভুল বললে, হাসলেন পরিচালক। রাফাত এখন একটা দ্বীপে।

কিন্তু বাবা তো গিয়েছিল ডিরেক্টর জন নেবারের সঙ্গে। এসকেপ ছবির শুটিঙে।

জনের সঙ্গেই আছে। ছবির একটা বিশেষ দৃশ্যের জন্যে পুরানো পার্ক দরকার। স্কেলিটন আইল্যান্ডে আছে তেমনি একটা পার্ক।

স্কেলিটন আইল্যান্ডা ভুরু কুঁচকে গেছে। রবিনের। শুনে মনে হচ্ছে জলদস্যুদের দ্বীপ।

ঠিকই ধরেছ, বললেন পরিচালক। এককালে জলদস্যুদের ঘাঁটি ছিল ওই দ্বীপ। নামটা সত্যিই অদ্ভুত। আজও নাকি ভূতের উপদ্রব রয়েছে ওখানে। বালির তলা থেকে মাঝে মধ্যেই বেড়িয়ে পড়ে মানুষের কঙ্কাল। ভীষণ ঝড়ের পর কখনও-সখনও সৈকতে পড়ে থাকতে দেখা যায় সোনার মোহর। বেশি না, একটা দুটো। ভেবে বস না, গুপ্তধন আছে স্কেলিটন আইল্যান্ডে। অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়েছে, পাওয়া যায়নি। উপসাগরের তলায় হয়ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু মোহর। ঝড়ের সময় ঢেউয়ের ধাক্কায় সৈকতে এসে পড়ে।

এবং ওই দ্বীপেই যেতে বলছেন আমাদেরকে? আগ্রহে সামনে বুকল কিশোর। রহস্যের কিনারা করতে?

হ্যাঁ, এক হাতের আঙুলের মাথা সব একত্র করে মোচার মত বানালেন পরিচালক। দুজন সহকমীকে নিয়ে আছে ওখানে মুসার বাবা। পার্কটার জঞ্জাল পরিষ্কারের জন্যে লোক লাগিয়েছে। কিন্তু গোলমাল শুরু হয়ে গেছে। প্রথম দিন থেকেই। জিনিসপত্র চুরি যাচ্ছে। স্থানীয় একজন লোককে পাহারাদার নিযুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। ভাবনায় পড়ে গেছে জন। খবর পাঠিয়েছে আমাকে।

আমাদের কাজ কি? জানতে চাইল কিশোর।

আসছি সে কথায়, হাত তুললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। এসকেপ ছবিটার প্রযোজক আমি। ঠিক করেছি, তোমাদেরকে পাঠাব। নাম যা-ই হোক, দ্বীপটা কিন্তু খুব সুন্দর। চারদিক ঘিরে আছে আটলান্টিক উপসাগর, গভীরতা খুবই কম। ওখানে ইচ্ছেমত ডোবাড়ুবি করতে পারবে তোমরা। কেউ কিছু সন্দেহ করবে না। ভাববে, তিনটে ছেলে গুপ্তধন খুঁজছে।

খুব…খুবই ভাল হবে, স্যার, বলল কিশোর।

জনের সঙ্গে কোম্পানির একজন লোক আছে, জোসেফ গ্র্যাহাম। দক্ষ ডুবুরি। ভাল ছবি তুলতে পারে, বিশেষ করে পানির তলায়। দরকার পড়লে সে তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারবে। আরও একজন আছে, জনের সহকারী, পিটার সিমনস। সে-ও সাহায্য করবে তোমাদের। তাছাড়া মুসার বাবা তো আছেই। গুপ্তধন শিকারির ছদ্মবেশে চোর ধরার চেষ্টা করবে। আর হ্যাঁ, তোমরা গোয়েন্দা, অপরিচিত কারও কাছে সে কথা ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করবে না।

খুব মজা হবে। তবে, রবিনের গলায় দ্বিধা, বাবা যেতে দিলে হয়।

না দেবার তো কোন কারণ দেখি না, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। খরচ-খরচা সব কোম্পানির। তোমাদের স্কুল ছুটি। তাছাড়া ওখানে মুসার বাবা আছে। দরকার হলে আমিও নাহয় ফোন করব। মিস্টার মিলফোর্ডকে। কিশোর, তোমার কোন অসুবিধে আছে?

নাহ। মুসা আর রবিন যাচ্ছে। তাছাড়া রাফাত চাচা আছে ওখানে, অমত করবে না মেরিচাচী।

তো কখন রওনা হচ্ছি। আমরা? পরিচালকের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।

বাড়িতে গিয়ে জিনিসপত্র গুছিয়ে নাওগে। বিকেলে প্লেনের টিকেট পাঠিয়ে দেব। হ্যাঁ, রবিন, তোমাকে একটা জিনিস দিচ্ছি, ড্রয়ার খুললেন পরিচালক। একটা বড় খাম বের করে ঠেলে দিলেন টেবিলের ওপর দিয়ে। এতে একটা ম্যাগাজিন আছে। রেকর্ড আর রিসার্চের ভার যখন তোমার ওপর, তুমি রাখ এটা। স্কেলিটন আইল্যান্ডের ওপর একটা সচিত্র ফিচার আছে। পড়ে দেখ। অনেক কিছু জানতে পারবে দ্বীপটা সম্পর্কে।

উঠে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা।

যাত্রা শুভ হোক তোমাদের, বললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।

থ্যাংকু, স্যার, বলে বেরিয়ে এলো তিন কিশোর।

<

Super User