সেরাতে ভালো ঘুম হলো না মুসার। মনে ভাবনা। তিন গোয়েন্দাকে তদন্ত করতে দেয়ার জন্যে কিভাবে রাজি করানো যায় মিস্টার কনরকে? সকাল পর্যন্ত ভেবেও কোনো উপায় বের করতে পারলো না। শেষে চেষ্টা ক্ষান্ত দিলো। রবিন কিংবা কিশোর উপায় বের করে ফেলবে। নাস্তার টেবিলে এসে দেখলো খাওয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছেন মিস্টার আমান।

বাবা, এতো তাড়াতাড়ি উঠেছে আজ? মুসা জিজ্ঞেস করলো।

হ্যাঁ, ডেভিস ক্রিস্টোফার ডেকেছেন। নতুন একটা ছবি করবেন। জরুরী কাজ নাকি আছে, কফির কাপে লম্বা চুমুক দিলেন। কিন্তু এদিকে যে একটা গোলমাল হয়ে গেল।

কী?

 তোমার মাকে কাল রাতে কথা দিয়েছি, আজ বাগান সাফ করে দেবো। তোমার তো স্কুল ছুটি, কাজও নেই। দাও না আমার কাজটা করে।

মনে মনে গুঙিয়ে উঠলো মুসা। মুখে বললো,.বেশ, দেবো।

লাঞ্চের আগে বেরোতে পারলো না। বাগান সাফ করে, দুপুরের খাওয়া খেয়ে, সাইকেল নিয়ে স্যালভিজ ইয়ার্ডে চললো মুসা। হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে দেখলো, কিশোর ডেস্কেই রয়েছে।

কোনো উপায় বের করতে পারলে? ভূমিকা নেই, সরাসরি জিজ্ঞাসা।

নাহ, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো মুসা। তুমি?

 আমিও না, মুখ গোমড়া করে রেখেছে কিশোর। দেখি, রবিন কি জেনে আসে। তার জন্যেই বসে আছি।

বাইরে আওয়াজ শুনে গিয়ে সর্ব-দর্শনে চোখ রাখলো কিশোর। পেরিস্কোপটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটা বিশেষ অবস্থানে আনতেই ইয়ার্ডের অনেকখানি দেখা গেল।

ওই, এসে গেছে।

একটু পরেই ট্র্যাপডোরে টোকা পড়লো। ঢাকনা তুলে উঠে এলো রবিন। হাতে নোটবুক, ভীষণ উত্তেজিত।

রবিনের মুখ দেখেই আন্দাজ করা গেল, খবর আছে।

সারাটা সকাল খরচ হয়েছে আমার, রবিন, বললো। কারনিভলে গুরুত্ব নেই, ফলে খবর থাকলেও কাগজের চিপায়-চাপায় থাকে। একগাদা কাগজ ওল্টাতে হয়েছে আমার।

কি জানলে? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।

নোটবুক খুললো রবিন। তিন হপ্তা আগে ভেনচুরায় পনি রাইড হারিয়েছে কারনিভল। খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা গেছে ওদের তিনটে খেলুড়ে পনি ঘোড়া। তারপর, তিন দিন আগে স্যান মেটিওর উত্তরে একটা জায়গায় থাকার সময় আগুন লেগেছে। তিনটে তাঁবু পুড়েছে আগুনখেকোর তাঁবু, সিংহের তাঁবু, আর শুটিং গ্যালারির খানিকটা নেহাত কপালগুণে সময়মতো নেভাতে পেরেছে।

সিংহের তাঁবু? কপাল কুচকে গেছে মুসার। একখানে দুবার অঘটন?

কাকতালীয় ব্যাপারও হতে পারে, কিশোর বললো। ঝট করে সিদ্ধান্তে চলে আসা ঠিক নয়। তবে ইন্টারেসটিং মনে হচ্ছে। যদি পনি রাইডও ওই একই কারনিভলের হয়।

কোন কারনিভল, পেপারে কিছু লেখেনি, রবিন বললো।

কাল রাতে আমি ও কিছু বইপত্র ঘেঁটেছি, সার্কাসের ওপর লেখা, বললো। কিশোর। চাচার বই। জানোই তো সার্কাসে কি-রকম আগ্রহ তার। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে একবার সার্কাসের দলে ভর্তিও হয়েছিলো। একটা বইতে পেলাম, অনেক কুসংস্কার আছে সার্কাসের লোকের। পুরনো প্রবাদ আছেঃ কোনো সার্কাসে দুর্ঘটনা ঘটতে শুরু করলে পর পর তিনবার ঘটবে। ঘটবেই। সুতরাং, কিঙের বেরিয়ে যাওয়াটা তৃতীয় দুর্ঘটনা বলা যায়।

তুমি বিশ্বাস করো এসব? রীতিমতো অবাক হলো মুসা।

আমার করা না করায় কিছু এসে যায় না, সেকেণ্ড। সার্কাসের লোকে করে। আরও কিছু বইয়ের লিস্ট দিয়েছে চাচা, তার কাছে ওগুলো নেই। ফলে সকালে লস অ্যাঞ্জেলেসে যেতে হলো, লাইব্রেরিতে। অনেক বই ঘেটেছি। জেনেছি, সার্কাসে কি। কি খেলা থাকে, কোন পদে কি রকম লোক থাকে। আশ্চর্য কি জানো, কোথাও স্ট্রং ম্যানের উল্লেখ নেই।

তাহলে কোহেন? প্রশ্ন তুললো মুসা।

কি জানি। হতে পারে নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে। কিংবা তার দেশের সার্কাসে। ওরকম, পদ আছে। লোকটা বিদেশী। আরেকটা ব্যাপার সহজেই চোখে পড়ে, তার। আচার-আচরণ সন্দেহজনক। ঝিক করে উঠলো কিশোরের চোখের তারা। তুড়ি বাজালো। পেয়েছি।

কি পেয়েছো?? একসঙ্গে প্রশ্ন করলো দুই সহকারী।

কারনিভলে তদন্ত করার উপায়। জড়িয়ে নিতে হবে।

কিভাবে? রবিন জানতে চাইলো

বলছি, মন দিয়ে শোনো…

.

কয়েক মিনিট পর সর্ব-দর্শনে চোখ রাখলো মুসা। হঠাৎ বললো, আসছে! আমি যাই।

 তিন গোয়েন্দার ব্যক্তিগত ওয়ার্কশপের বাইরে রবির সঙ্গে দেখা করলো মুসা। ফোন করে তাকে আসতে বলেছে কিশোর।

কি ব্যাপার, মুসা? হাসলো সোনালি-চুল ছেলেটা। জরুরী তলব?

ভাবলাম, আমাদের গোপন হেডকোয়ার্টার দেখাই। হাজার হোক, তিনটে ফ্রি পাস পেয়েছি তোমাদের কাছে। চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা জিনিস আছে। কি করে কাজ করি আমরা, দেখবে এসো।

দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে রবিকে হেডকোয়ার্টারে নিয়ে এলো মুসা।

কি সাংঘাতিক! কি জায়গা বানিয়ে রেখেছো জঞ্জালের তলায়!

চোখ বড় বড় করে দেখলো রবিঃ মাইক্রোস্কোপ, টেলিফোন, পেরিস্কোপ, ওয়াকি-টকি, ফাঁইলিং কেবিনেট, মেটাল ডিটেকটর, তাক বোঝাই বই আর ট্রফি, আর আরও নানা রকম জিনিস যেগুলোর নামই জানে না সে। রবিন আর কিশোর কাজে ব্যস্ত, ঘরে যে লোক ঢুকেছে টেরই পায়নি যেন। একজনও চোখ তুললো না। আতশ কাঁচ দিয়ে একটা তালা পরীক্ষা করছে কিশোর। আলোকিত কাঁচের তলায় রেখে কি যেন দেখছে রবিন।

ওদের কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে নিচু গলায় বললো মুসা, রবি, তোমাদের কারনিভলে গোলমাল হচ্ছে। সেটারই তদন্ত করছি।

কি করে জানলে? অসম্ভব!

তোমার কাছে কঠিন লাগছে, রবি, ভারিক্কি চালে বললো মুসা। আমাদের কাছে কিছু না। বিজ্ঞান আর আমাদের অভিজ্ঞতাই সেটা সম্ভব করেছে।

হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো কিশোর। বুঝলাম। কিংকে ছেড়ে দেয়েছিলো একজন। পেশাদার অপরাধী, রবি যে আছে ঘরে দেখতেই পায়নি যেন। কোনো সন্দেহ নেই। তালাটার বাইরের প্যাটার্ন দেখলাম, টাইপ-সেভেন পিক-লক। সিংহের খাঁচায়ও একই তালা। নিশ্চয় গোলমাল পাকানোর জন্যেই খুলে দেয়া হয়েছিলো।

বোকা হয়ে দাঁড়িয়ে শুনছে রবি, অর্ধেক কথা বুঝতে পারছে না। আরও তাজ্জব হওয়া বাকি আছে তার। কিশোর থামতেই রবিন শুরু করলো, হুঁ, বোঝাই যাচ্ছে, তিন হপ্তা আগে তিনটে ঘোড়া মরে যাওয়াতেই পনি রাইড খেলাটা বন্ধ। করতে হয়েছে। তারপর পুড়লো তবু, শুটিং গ্যালারির ক্ষতি হলো। নতুন তবু কিনতে, গ্যালারি মেরামত করতে অবশ্যই টাকা নষ্ট হয়েছে। বেকায়দায় পড়ে গেছেন মিস্টার কনর। বেতন দিতে পারছেন না।

রবিকে না দেখার অভিনয় চালিয়ে গেল কিশোর। মাথা ঝাঁকিয়ে রবিনের কথার সমর্থন জানালো। জিজ্ঞেস করলো, কর্মীদের কথা কি কি জানলে?

স্ট্রং ম্যান কোহেন কারনিভলে আগে কখনও কাজ করেনি, রেকর্ড নেই। আমার বিশ্বাস, লোকটা ভণ্ড।

ভাব দেখে মনে হলো, বাজ পড়েছে রবির মাথায়। ঝুলে গেছে নিচের : চোয়াল। আর চুপ থাকতে পারলো না। এসব কথা কে বলেছে তোমাদের?

ফিরে তাকালো কিশোর আর রবিন। রবিকে দেখে যেন অবাক হয়েছে।

আরে, রবি, কখন এলে? কিশোর বললো।

নিশ্চয় কেউ বলেছে তোমাদেরকে এসব কথা! প্রশ্নের জবাব না দিয়ে গরম হয়ে বললো রবি।

না, রবি, মাথা নাড়লো কিশোর। আমরা গোয়েন্দা। তদন্ত করে জেনেছি। তারমানে, সত্যি জেনেছি?

মাথা ঝোঁকালো রবি। হ্যাঁ, প্রত্যেকটা বর্ণ। এমনকি কোহেনের কথাও। ছদ্মনামে ঢুকেছে। টাকার দরকার, তাই একটা পদ তৈরি করে নিয়ে কারনিভলে কাজ করতে এসেছে। সার্কাসের চেয়ে কারনিভলের আয় কম, বেতনও কম, তারপরেও এসেছে। আমাদের এখানে যে কাজ করছে, পরিচিত কাউকে জানতে দিতে চায় না। আমরাও ওর আসল নাম জানি না। তবে স্ট্রং ম্যান হিসেবে খুব ভালো, একথা বলা যায়।

তা হতে পারে। কিন্তু, রবি, তোমাদের কারনিভলে যে গোলমাল করছে। কেউ, এটা তো ঠিক? কে করছে, সেটা বের করতে চাই আমরা। যদি তোমার। বাবা অনুমতি দেন।

এক এক করে তিন গোয়েন্দার মুখের দিকে তাকালো রবি। আগে বলো, কি করে জানলে? যাদু বিশ্বাস করি না আমি।

ভূতে বলেছে, রহস্যময় হাসি হাসলো কিশোর। খুলে বললো, কিভাবে জেনেছে।

 রবিন আর মুসার মুখেও হাসি.। রবিকে তাজ্জব করে দিতে পারার আনন্দে।..

দারুণ হে! সত্যি তোমরা জাতগোয়েন্দা! না বলে পারলো না রবি। কারনিভলের গণ্ডগোলের হোতা কে, বের করতে পারবে তোমরা। কিন্তু বাবাকে। নিয়েই মুশকিল। বাইরের সাহায্য নিতে রাজি হবে না।

তাহলে খুব শীঘ্রি কারনিভল খোয়াতে হবে তাকে, কিশোর বললো।

বুঝি, বিমর্ষ হলো রবি। আগামী হপ্তায় বেতন দিতে না পারলে…,.থেমে গেল সে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। বেশ, বাবা না নিলে না নিক, আমি নেবো তোমাদের সাহায্য। আমি জানি কি কারণে বাবাকে কারনিভল খোয়াতে বাধ্য করা হচ্ছে। আমার জন্যে!

.

০৭.

আমার নানী, রবি বললো। বাবাকে দেখতে পারে না, বিষণ্ণ হয়ে গেল। খুব ছোটবেলায় মা মরেছে আমার। অ্যাকসিডেন্ট। মায়ের স্নেহ পাওয়ারও সুযোগ। হয়নি আমার… গলা ধরে এলো তার।

 দুঃখ করো না, রবি, সান্তনা দিলো কিশোর। তোমার বাবা আছে, আমার তো তা-ও নেই। দুজনেই মারা গেছে মোটর দুর্ঘটনায়।

এক মুহূর্ত অস্বস্তিকর নীরবতার পর রবি বললো, নানী বাবাকে দেখতে পারতো না, তার কারনিভলও পছন্দ করতো না। মা বাবাকে বিয়ে করুক, এটাও চায়নি। তাই বাবাকে দূষতে লাগলো নানী। বাবার জন্যেই নাকি মারা গেছে তার মেয়ে। বললো, কারনিভলে থাকা হতে পারে না আমার। মা মারা যাওয়ায় খুব দুঃখ পেয়েছিলো বাবা, কাজকর্ম ঠিকমতো করতো না, ফলে কারনিভলের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেল। নানী চাইলো আমি তার কাছে থাকি। মোটামুটি ধনীই বলা যায় তাকে। তা ছাড়া বাবা এক জায়গায় থাকতে পারে না, ব্যবসার খাতিরে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতে হয়। ছায়া নামলো রবির চেহারায়। যতোই বড় হলাম, নানীর ওপর বিতৃষ্ণা বাড়লো আমার। খারাপ নয় মহিলা, আমাকে অনেক আদর করে, কিন্তু আমি দেখতে পারি না। একটাই কারণ, দুনিয়ার সব কিছুতেই তার ভয়, আমাকে বাইরে বেরোতে দিতো না, কিছু করতে দিতো না। আমার ইচ্ছে বাবার কাছে কারনিভলে চলে যাই। নানী যেতে দেয় না। শেষে এ-বছরের গোড়ার দিকে পালিয়ে চলে এলাম বাবার কাছে। কি সাংঘাতিক, পাগলের মতো ছুটে এলো নানী। বাবাকে ভয় দেখালো, কেস করে দেবে। বাবা বললোঃ ঠিক আছে, রবি যদি যেতে চায়, আমার কোনো আপত্তি নেই, নিয়ে যান। আমি যেতে চাইলাম না। আইনত নানীও কিছু করতে না পেরে ফিরে গেল।

শাসিয়ে-টাসিয়ে গেছেন? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

হ্যাঁ। বাবাকে বলে গেছে, আমাকে কিছুতেই কারনিভলে থাকতে দেবে না। মায়ের মতো মরতে দেবে না আমাকে। কোর্টে গিয়ে নালিশ করবে, আমার খাওয়া-পরা জোটানোর সাধ্য নেই বাবার। নানীর ভয়েই অনেকটা পালিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে এসেছে বাবা। প্রাণপণে খাটছে টাকা রোজগারের জন্যে, যাতে আদালতে নানীর নালিশ না টেকে। কিন্তু যে-হারে অ্যাকসিডেন্ট হচ্ছে, কারনিভলই খোয়াতে হবে বাবাকে!

তুমি সত্যি বিশ্বাস করো, তোমার নানী এসব করাচ্ছেন।

 জানি না, কিশোর, ধীরে ধীরে বললো রবি, নানী করাচ্ছে ভাবতেও খারাপ লাগে আমার। বাবাকে দেখতে পারে না, কিন্তু আমাকে তো ভীষণ আদর করে। নানী ছাড়া বাবার শত্রু আর কে থাকবে, বলো?

একটা ব্যাপার পরিষ্কার, তোমার ক্ষতি চান না তোমার নানী। কিশোর যুক্তি দেখালো, দুর্ঘটনায় তোমারও ক্ষতি হতে পারতো। তিনিই যদি করাবেন, এসব কথা কি তিনি ভাবেননি? নিচের ঠোঁটে একবার চিমটি কাটলো সে। রবি, আমার বিশ্বাস, এরকম কিছু তিনি করাতে পারেন না। হয়তো অন্য শত্রু আছে তোমার বাবার, যার কথা তুমি জানো না। কার্নিভল ধ্বংস করার পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে।

কে করছে জানি না, কিশোর। তবে একথা ঠিক, শীঘ্রি তাকে ঠেকাতে না পারলে বাবাকে শেষ করে দেবে। ঐ তৃতীয় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে আছে কারনিভলের সবাই।

ততীয়টা তো ঘটেই গেছে? অবাক হলো কিশোর।

মাথা নাড়লো রবি। না, কিরে বেরিয়ে যাওয়াটাকে দুর্ঘটনা ধরছে না ওরা। কারণ তাতে কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি নাহলে দুর্ঘটনা ধরা হয় না। কাজেই তৃতীয়টার অপেক্ষায় আছে।

খুব খারাপ কথা, রবিন বললো। সর্বনাশ হয়ে যাবে তো। আতঙ্ক নার্ভাস করে ফেলে মানুষকে, আর নার্ভাস হলে দুর্ঘটনা বেশি ঘটায় মানুষ।

একমত হলো কিশোর। এবং এসবের মূলে সার্কাসের লোকের কুসংস্কার। লোকে যেটার ভয় বেশি করবে, সেটাই বেশি ঘটবে।

কিন্তু রবিদের কারনিভলে তো অন্য ব্যাপার ঘটছে, মুসা মনে করিয়ে দিলো। আপনা-আপনি ঘটছে না। ঘটানো হচ্ছে।

সেটাই শিওর হওয়া দরকার, সেকেণ্ড, কিশোর বললো। একটা ব্যাপার মনে খচখচ করছে, কিঙের ছাড়া পাওয়াটা অন্য দুটো দুর্ঘটনার মতো নয়। প্যাটার্ন মিলছে না। ওদুটো ঘটার সময় কারনিভল খোলা ছিলো না। দর্শকদের ক্ষতি হওয়ার ভয় ছিলো না।

তাহলে এটা হয়তো আসলেই দুর্ঘটনা?

না। ছেড়েই দেয়া হয়েছে, জোর দিয়ে বললো গোয়েন্দাপ্রধান। কারনিভলে। যাওয়া দরকার রবি; এখন তো বন্ধ, আমরা ঢুকতে পারবো?

নিশ্চয় পারবে। আমি সবাইকে বলবো, রিহারস্যাল দেখতে এসেছে। তোমাদের কথা সবাই জানে এখন। বিশেষ করে মুসার কথা। কোনো অসুবিধে হবে না।

কি খুঁজবো আমরা, কিশোর? মুসার প্রশ্ন।

বলতে পারবো না। কড়া নজর রাখার চেষ্টা করবো, যাতে আরেকটা দুর্ঘটনা। ঠেকানো যায়। সাবধান থাকতে হবে আমাদের…, থেমে গেল হঠাৎ।

মেরিচাচী ডাকছেন। দ্রুত গিয়ে সর্ব-দর্শনে চোখ রাখলো মুসা।

রবিন, আবার ডাকলেন তিনি, জলদি বেরিয়ে এসো। তোমার মা ফোন করেছেন। ডাক্তারের কাছে নাকি যাবার কথা?

হায়, হায়, ডেন্টিস্ট। গুঙিয়ে উঠলো রবিন। ভুলেই গিয়েছিলাম!

ভ্রূকুটি করলো কিশোর। কাজে বাধা পড়লে রাগ লাগে তার। মেনে নিতে পারে না। জোরে নিঃশ্বাস ফেলে হাত নেড়ে বললো, কি আর করবে, নথি, যাও। তোমার জন্যে আমাদের বসে থাকা উচিত হবে না। আমি আর মুসা যাচ্ছি। সময়। নষ্ট হলে কখন কি করে বসে…ও হ্যাঁ, একটা দিনিজসপ্রে নিয়ে যাও। যোগাযোগ রাখতে পারবে আমাদের সঙ্গে।

কী সপ্রে! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।

দিনিজসপ্রে, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। দিক-নির্দেশক ও জরুরী-সংকেত প্রেরক, সংক্ষেপে বাংলায় দিনিজসপ্রে, গর্বের হাসি হাসলো সে। কাল যেটা বানানো শুরু করেছিলাম তোমাকে নিয়ে, মাঝপথে তো চাচা এসে গামলা রঙ করতে দিলো। আজ সকালে বানিয়ে ফেলেছি। তবে মাত্র দুটো। আপাতত তাতেই চলবে। একটা রবিন নিয়ে যাক, আরেকটা আমরা নেবো। সুবিধে হবে। ওয়াকি টকি দেখলেই লোকে চিনে ফেলে। এটা দেখবেও না, আর দেখলেও সহজে চিনবে না।

ওই যন্ত্র দিয়ে কি হয়, কিশোর? জানতে চাইলো রবি।

ওটা? একধরনের হোমার বলতে পারো। নিজস্ব কিছু আবিষ্কার ঢুকিয়েছি ওটাতে। হোমার আমরা আগেও বানিয়েছি, ব্যবহার করেছি, তবে এখনকারটা আরও আধুনিক সুযোগ-সুবিধে বেশি। প্রথমেই ধরো, সিগন্যাল পাঠাবে এটা। শব্দ করবে। আরেকটা হোমার নিয়ে যতোই কাছে যাবে, বাড়বে শব্দ। একটা ডায়াল আছে, তাতে দিক-নির্দেশক কাটা আছে, যেদিক থেকে শব্দ আসবে সেদিকে ঘুরে যাকে কাটাটা। প্রতিটি দিনিজসপ্রেতে গ্রাহক আর প্রেরক, দুধরনের যন্ত্রই আছে। জরুরী অবস্থার জন্যে ছোট্ট একটা লাল আলোর ব্যবস্থা আছে এতে। সুইচ টেপার ঝামেলা নেই, ভয়েস অপারেটেড মুখে বললেই কাজ শুরু করবে। ধরো, আমাদের মধ্যে কেউ বিপদে পড়লো। আর কিছু করার দরকার নেই, শুধু বলতে হবে সাহায্য। ব্যস, অমনি অন্যদের দিনিজসপ্রের লাল আলো জ্বলতে নিভতে শুরু করবে, এক মুহূর্ত থেমে দম নিলো কিশোর। সব চেয়ে বড় সুবিধে, খুদে এই হোমারটা পকেটেই জায়গা হয়ে যাবে।

বিস্ময় চাপা দিতে পারলো না রবি। চেঁচিয়ে উঠলো, কি সাংঘাতিক, খুব কঠিন করে কথা বলো তুমি, কিশোর! …আর…আর, দুনিয়ার সব কিছুই করতে পারো, তাই না? সব কিছুতেই বিশেষজ্ঞ।

ইয়ে, রবি…, প্রশংসায় খুশি হয় কিশোর। কিন্তু এতো বেশি প্রশংসা করেছে রবি, কিশোর পাশাকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছে, সব কিছু পারা তো একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক কিছুই করার চেষ্টা করি আরকি। গোয়েন্দাগিরিতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করি। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, আমাদের হোমারের সঙ্কেত শুধু আমাদের হোমারই ধরতে পারবে, অন্য কোনো যন্ত্র নয়। রেঞ্জ তিন মাইল।

ডাক পড়লো আবার।এই, রবিন, কোথায়? বেরোচ্ছো না? মেরিচাচী অধৈর্য হয়ে উঠেছেন। তুমি এসো। আমি অফিসে যাচ্ছি।

দাও, কোথায় তোমার দিনিজসপ্রে, কিশোরকে বললো রবিন। যতো তাড়াতাড়ি পারি ডাক্তার দেখিয়েই কারনিভলে চলে যাবো আমি।

বাইরে বেরিয়ে, অফিসে মেরিচাচীকে বলে সাইকেল নিয়ে রওনা হয়ে গেল রবিন। মুসা আর কিশোরও সাইকেল বের করলো। রবি সাইকেল নিয়েই এসেছে। তিনজনে চললো কারনিভলে।

খানিক আগেও রোদ ছিলো, এখন মেঘলা বাতাস। বাতাস বাড়ছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় না হলে এই সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই বৃষ্টি আশা করা যেতো। এখানে এখন বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, কিন্তু সূর্যের মুখ ঢেকে দিয়েছে মেঘ। মন খারাপ-করা আলো।

কারনিভলের কাছে পৌঁছে সাইকেল থেকে নামলো কিশোর। অন্য দুজন। থামতে বললো, রবি, তুমি আগে যাও, আমাদের সাথে গেলে সন্দেহ করতে পারে। শুটিং গ্যালারির আশোঁপাশে কড়া নুজব রাখবে। মুসা মাঠের ওদিকে গিয়ে কর্মীদের রিহারস্যাল দেখবে, ওপাশটায় চোখ রাখবে। আমি টহল দেবো বুঁদ আর তাঁবু গুলোর কাছে। সন্দেহজনক সামান্যতম ব্যাপারও যেন চোখ না এড়ায়। ঠিক আছে?

রবি আর মুসা, দুজনেই মাথা ঝাঁকালো।

.

ডেন্টিস্টের ওখানে পৌঁছে দেখলো রবিন, রোগীর লাইন। তার ডাক চলে গেছে। কাজেই অপেক্ষা করতে হলো। অযথা বসে থাকা স্বভাব নয় তার। সামনের টেবিলে রাখা পত্র-পত্রিকা ঘাটতে লাগলো।

ম্যাগাজিন ওল্টানো শেষ করে দৈনিক পত্রিকা ধরলো। স্থানীয় পত্রিকা। রকি বীচ থেকে বেরোয়। কিং-এর ছাড়া পাওয়ার খবর আছে কিনা খুঁজলো। কোনোটাতে নেই। তবে কারনিভল সম্পর্কে একটা প্রতিবেদন লিখেছে একটা পত্রিকা। বলা যায় এক ধরনের বিজ্ঞাপনঃ কারনিভলটা কতো ভালো, কতো কিছু দেখার আছে এতে, কতো মজা পাওয়া যাবে, এসব। এতো ছোট আর সাধারণ খবর নিয়ে এই বাড়াবাড়ি কেবল ছোট পত্র-পত্রিকাতেই সম্ভব। বিরক্ত হয়ে পত্রিকাটা রেখে দিয়ে আরেকটা তুলে নিলো সে। ওল্টাতেই ছোট বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়লো। আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনঃ

কানা বেড়াল আবশ্যক
বাচ্চাদের খেলাঘরের জন্য স্টাফ করা বেড়াল চাই।
লাল-কালো ডোরাকাটা হতে হবে, শরীরটা কিম্ভুত রকমের বাঁকা,
 এক চোখো, গলায় লাল কলার। ওরকম প্রতিটি বেড়ালের জন্যে
১০০ (একশো) ডলার দেয়া হবে।
অতি-সত্বর যোগাযোগ করুনঃ
রকি বীচ, ৫-১২৩৪।

 নাড়ির গতি বেড়ে গেল রবিনের। ঠিক এরকম একটা বেড়াল নিয়েই কারনিভলে গোলমাল করেছিলো চোর, পুরস্কার পেয়েও হারিয়েছে মুসা। বিজ্ঞাপন ছিঁড়ে নিয়ে গিয়ে সোজা ডেন্টিস্টের চেম্বারে ঢুকলো রবিন। চেঁচিয়ে বললো, ডাক্তার সাহেব, আজ আমার দাঁত দেখানোর দরকার নেই! আরেকদিন! বলেই

বেরিয়ে এলো হতভম্ব ডেন্টিস্টের ঘর থেকে। সাইকেলের দিকে দৌড় দিলো।

.

০৮.

মেঘাচ্ছন্ন ধূসর বিকেল একদম ভালো লাগে না মুসার। উত্তেজনা আছে বলেই তেমন খেয়াল করছে না এখন। একটা ঘন্টা যে কোন দিক দিয়ে কেটে গেছে, বলতেই পারবে না। মাঠের এখানে ওখানে ঘুরছে। রিহারস্যাল দেখছে কর্মীদের।

নতুন একটা ভাঁড়ামি প্র্যাকটিস করছে দুই ভাঁড়। বেঁটে লোকটার হাতে একটা খাটো ঝাড়ু, লম্বার হাতে একটা ছোট বালতি। বেঁটে ভাড় ঝাড়ু দিয়ে ময়লা তুলে বালতিতে রাখছে, সেটা তুলে নিয়ে তার পেছন পেছন যাচ্ছে লম্বা। কিছু ময়লা জমলেই তার ভারে বালতির তলা খসে যাচ্ছে। বিশেষ কায়দায় আবার তলাটা লাগিয়ে ময়লাগুলো কুড়িয়ে রাখছে লম্বা। তোলার চেষ্টা করলেই আবার। খসে পড়ছে। ক্রমেই বিষণ্ণ হচ্ছে তার চেহারা, আর বেঁটে লোকটা হাসছে। লম্বার দুর্গতি দেখে যেন খুব মজা পাচ্ছে বেঁটে।

তলোয়ারের মাথায় আটকানো তুলোর দলায় আগুন লাগিয়ে নির্দ্বিধায় মুখে পুড়ছে আগুনখেকো। চোখ বড় বড় করে দিচ্ছে মুসার। প্রতিবারেই সে ভাবছে, এইবার লোকটার মুখ পুড়বেই। কিন্তু পোড়ে না।

ভার উত্তোলন, আর মোটা বই টেনে ছেঁড়ার প্র্যাকটিস করছে স্ট্রং ম্যান কোহেন। তাকে সন্দেহ, তাই তার কাছেই বেশি সময় ব্যয় করছে মুসা। সন্দেহজনক কিছুই করছে না লোকটা।

সিংহের খাঁচায় কিংকে নতুন একটা খেলা শেখাচ্ছে মারকাস দ্য হারকিউলিস।

এই দুটো উঁচু খুঁটিতে বাঁধা তারের ওপর ভারসাম্য বজায়ের রোমাঞ্চকর খেলা খেলছে দুজন দড়াবাজ।

সবই দেখছে মুসা। এমন ভাব করছে, যেন শুধু ওসব দেখার জন্যেই এসেছে সে।

কিছুই ঘটলো না মাঠে।

বুদ আর তাঁবুগুলোতে ঘোরাঘুরি করছে কিশোর। রাফনেক আর বুঁদ অপারেটররা রাতের জন্যে সেট সাজাচ্ছে, নষ্ট জিনিস মেরামত করছে। কোনো বুদ। কিংবা তাঁবুই বাদ দিলো না সে, কোনো কোনোটাতে কয়েকবার করে ঢুকলো। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লো না। ঘূর্ণমান নাগরদোলা দেখার জন্যে থেমেছে, এই সময় সেখানে এলো রবি। শুটিং গ্যালারিতে কাজ শেষ করে এসেছে।

নাগরদোলাটা টেস্ট করবে না, রবি? স্তব্ধ বিশাল চাকাটা দেখালো কিশোর, কাঠের ঘোড়াগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে ক্যানভাস দিয়ে।

চালাতে অনেক খরচ। কারনিভল খোলার আগে চালু করি, একটা মাত্র টেস্ট রান দিয়েই চড়ার জন্যে ছেড়ে দিই।

ওটার জন্যে নিশ্চয় মেকানিক আছে? কিংবা অপারেটর?

আছে। বাবা নিজেই।

চিন্তিত দেখালো কিশোরকে। বিড়বিড় করে কি বললো সে-ই বুঝলো।

কিশোর, রবি বললো। রবিন এসে পড়েছে।

সাইকেল চালিয়ে মুসার কাছে গেল প্রথমে রবিন, তারপর দুজনে মিলে এলো কিশোরদের কাছে। এসেই বললো রবিন, কিশোর, কানা বেড়ালটা চাইছে!

কোনটা? আমরা যেটা হারিয়েছি? রবিনের মতোই চেঁচিয়ে বললো মুসা।

 আমার মনে হয় না ওটা হারিয়েছে, গলা আরও চড়ালো রবিন। পকেট থেকে ছেঁড়া বিজ্ঞাপনটা বের করলো। চুরি হয়েছে! কিশোর, দেখো।

গোয়েন্দাপ্রধানকে ঘিরে দাঁড়ালো সবাই। পড়তে পড়তে চোখ উজ্জ্বল হলো। কিশোরের। নিশ্চয় মুসার কানাটার মতো। রবি, ওরকম বেড়াল মোট কটা পেয়েছিলে?

পাঁচটা। রকি বীচেই ছেড়েছি ওগুলো। মুসাকে দিয়েছিলাম শেষটা।

হুমম্, মাথা দোলালো কিশোর, প্রথমবারে চেষ্টা করেছিলো, নিতে পারেনি। দ্বিতীয়বারে সফল হয়েছে। হুঁ, মিলতে শুরু করেছে।

কী? রবিন জিজ্ঞেস করলো।

কানা বেড়ালটা কারও দরকার, নথি। হয়তো পাঁচটাই দরকার। কিংকে ছেড়ে দেয়ার কারণ বোঝা যাচ্ছে।

কি কারণ? মুসা জানতে চাইলো।

আমাদের নজর অন্যদিকে সরানোর জন্যে। প্রথমবার বেড়ালটা নিতে না পেরে পালিয়ে গিয়েছিলো লোকটা, সেই গোঁফ আর কালো চশমাঅলা। তারপর। ঘুরে এসে আবার ঢুকেছে শুটিং গ্যালারিতে, মুসাকে পুরস্কার জিততে দেখেছে। বুদ্ধি করে ফেলেছে তখনই। গিয়ে কিংকে বের করেছে। তোমরা বেরোতেই ওকে নিয়ে গিয়ে ঠেলে দিয়েছে তোমাদের সামনে। উদ্দেশ্য সফল হয়েছে তার। দুজন গেছে মারকাসকে খবর দিতে। মুসা বেড়াল ফেলে সিংহ সামলাতে ব্যস্ত। সেই সুযোগে ওটা তুলে নিয়ে চলে গেছে চোরটা।

খাইছে, কিশোর, নিশ্চয় দামি কিছু আছে বেড়ালটার ভেতর।

থাকার সম্ভাবনা বেশি, একমত হলো কিশোর। রবি, বেড়ালটার কোনো বিশেষত্ব আছে?

জানি না।

নিচের ঠোঁটে দুবার চিমটি কাটলো কিশোর। ভাবছে। অধীর হয়ে আছে অন্যেরা। ঠোঁট কামড়ালো একবার, সে, বললো, হতে পারে কোনো খেপাটে, সংগ্রহ করে রাখতে চাইছে তার সংগ্রহশালার জন্যে, বিজ্ঞাপন সে-ই দিয়েছে। : কিংবা হয়তো বিশেষ কিছু রয়েছে ওই বেড়ালগুলোর মধ্যে…

কাকাতুয়াগুলোর যেমন ছিলো? বলে উঠলো রবিন। ওই যে, তোতলা কাকাতুয়া…

হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকালো কিশোর। দামি কিছু থাকতে পারে।…রবি, কারনিভল নিয়ে মেকসিকোতে গিয়েছিলে তোমরা? কিংবা সীমান্তের কাছে?

না, কিশোর। শুধু ক্যালিফোর্নিয়া।

মেকসিকোতে গেলে কি হতো? রবিন জানতে চাইলো।

স্মাগলিঙের কথা ভাবছি আমি, নথি। ওরকম জিনিসের ভেতর মাল লুকায়। চোরাচালানীরা, পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্যে। রবি, বেড়ালগুলো কোত্থেকে কিনেছো?

শিকাগো। এক প্রাইজ সাপ্লাইয়ারের কাছ থেকে কিনেছে বাবা।

গাল চুলকালো কিশোর। যা-ই হোক; বেড়ালগুলোর বিশেষত্ব আছে। রবি, কাল রকি বীচে তোমাদের তৃতীয় দিন ছিলো, না? .

হ্যাঁ। মাত্র দুটো শো দিয়েছি। স্যান মেটিওতে দুই শো দেখিয়ে রাতারাতিই চলে এসেছি এখানে।

বেড়ালগুলো কবে থেকে দিতে শুরু করেছো?

এখানে এসে, পয়লা শো থেকেই। শেষটা দিয়েছি কাল রাতে, মুসাকে। সেটা পঞ্চম বেড়াল।

প্রথম রাতেই চারটে দিয়ে দিলে কেন? চারজনেই ফার্স্ট হলো?

কড়াকড়ি কম করেছিলাম সেরাতে। চারটে হাঁস ফেলতে পারলেই ফার্স্ট ধরেছিলাম। বিজ্ঞাপনের জন্যে করেছিলাম এটা। লোকে বাড়ি গিয়ে বলাবলি করবে, প্রাইজ দেখাবে। তাতে আরও বেশি লোক আসবে পরের শো-তে।

ফার্স্ট প্রাইজ কি শুধু বেড়ালই দিয়েছো?

এখানে এসে প্রথম শো-তে বেড়াল।

কাল দেখলাম, একটা ট্রেলারে রাখো প্রাইজগুলো। নিরাপদ?

সব সময় তালা দিয়ে রাখি। শো যখন বন্ধ থাকে, ট্রেলারটা এনে আমাদের, ট্রাকের সঙ্গে আটকে রাখি। বার্গলার অ্যালার্ম আছে, চুরির চেষ্টা হলেই বেজে, ওঠে। কতোবার যে ওটা চুরি ঠেকিয়েছে। বেশির ভাগই ছোট ছেলেমেয়ে। ট্রাকের কাছে এসে ঘুরঘুর করে, পুরস্কারের জিনিসগুলো খুব লোভনীয় ওদের কাছে। শো যখন চলে, ট্রেলারটা এনে বুদের পেছনে রাখি, তখনও তালা লাগিয়ে।

 বোঝা যাচ্ছে, তোমাদের চোখ এড়িয়ে ট্রেলার থেকে বেড়াল চুরি করা খুব কঠিন।

হ্যাঁ। তালা ভাঙ্গা সহজ, কিন্তু জিনিস নিয়ে পালানো কঠিন। তালা ভেঙে জিনিস বের করে নিয়ে দৌড় দিতে দিতে দেখে ফেলবো।

হ্যাঁ, বললো গোয়েন্দাপ্রধান। দুই সহকারী যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, তীব্র গতিতে ঘুরছে তার মগজের বুদ্ধির চাকাগুলো। তাহলে, পাঁচটা কানা বেড়াল নিয়ে, স্যান মেটিও থেকে রওনা হয়েছিলে। সোজা এসেছে এখানে। স্যান মেটিও আর রকি বীচের মাঝে বেড়ালগুলো চুরি করা কঠিন ছিলো। এখানে এসেও ট্রেলার থেকে চুরি করতে পারেনি, কারণ, সেটাও কঠিন। চোখে পড়ার ভয়। এখানে শো করে প্রথমেই চারটে বেড়াল দিয়ে দিলে। বাকি থাকলো একটা। সেটা ছিনিয়ে নিতে চাইলো গোঁফওয়ালা, কালো চশমা পরা বুড়ো। ব্যর্থ হলো। মুসা পেয়ে গেল। বেড়ালটা। কিং ছাড়া পেলো, মুসা বেড়াল হারালো। এখন পেপারে বিজ্ঞাপনঃ ওরকম বেড়াল চায়।

সবই বুঝলাম। কিন্তু কেন চায়? কি মানে এসবের?

গোয়েন্দাপ্রধানের চোখে অদ্ভুত চাহনি। কিশোর পাশার এই চাহনির অর্থ। জানা আছে তার দুই সহকারীর-রহস্যের সমাধান করে ফেলেছে সে, কিংবা জরুরী কোনো তথ্য আবিষ্কার করেছে।  তর্জনী নাচালো কিশোর। কাল রাতের আগে বেড়ালগুলো ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়নি। দুটো সম্ভাবনা, স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাতে। চকচক করছে তার চোখ। হঠাৎ করে দামি হয়েছে ওগুলো। আর যার কাছে দামি, সে এই কারনিভলেরই কেউ।

.

০৯.

 কিন্তু, কিশোর, প্রতিবাদ জানালো রবি, ওরকম চেহারার কেউ নেই কারনিভলে।

ছদ্মবেশ নেয়া সহজ ব্যাপার। পুরু গোঁফ, হ্যাট টেনে দিয়েছে, যাতে চেহারাটা ভালোমতো দেখা না যায়। তার ওপর কালো চশমা। আবছা আলোয়। আসল চেহারা বোঝা মুশকিল।

কারনিভলের লোক হলে ওভাবে নিতে আসবে কেন? প্রশ্ন তুললো মুসা। ট্রেলার থেকেই তো নিয়ে নিতে পারতো।

হ্যাঁ, তাই তো, রবিনও মুসার সঙ্গে সুর মেলালো। এতো চালাকির দরকার কি. ছিলো তার? কোনো এক ফাঁকে ট্রেলার থেকেই নিয়ে নিতে পারত। রবি খেয়ালই করতো না।

ট্রেলার থেকে নেয়ার চেষ্টা করেনি বলেই আমার সন্দেহ বেড়েছে, কিশোর জবাব দিলো। বাইরের কেউ হলে সে-চেষ্টাই কুরতো প্রথমে। কঠিন বুঝলেও করতো। আর চিনে ফেলবে, এই ভয়ও করতো না।

তাহলে?

ওই যে বললাম, কারনিভলেরই কেউ। তার জানা আছে, ট্রেলার থেকে নেয়া। প্রায় অসম্ভব। দেখে ফেললে মুশকিলে পড়বে, জবাবদিহি করতে হবে রবির বাবার। কাছে। সব চেয়ে বড় কথা, ওই বেড়ালসহ ধরা পড়লে অনেকেরই সন্দেহ হবে। ওগুলোতে দামি কিছু আছে।

ঠিক তাই। কানা বেড়ালের ওপর কারো নজর পড়ুক এটাই চায়নি সে। ভেতরের লোক নিলে স্পষ্ট হবে, জিনিসটা দামি। বাইরের কেউ নিলে, কাল। যেভাবে ছিনিয়ে নিতে চাইলো, মনে হবে লোকটা পাগল। কিংবা খেপাটে, সংগ্রহকারী। আর যা-ই ভাবুক, চোর ভাববে না কেউ।

কি সাংঘাতিক! ঊরুতে চাপড় মারলো রবি। হয়তো ঠিকই বলেছো। সন্দেহ যাচ্ছে না তার। মেনে নিতে পারছে না।

আমি জানি আমি ঠিক বলছি, ঠোঁটের এক কোণ কুঁচকালো কিশোর। শিওর হচ্ছি লোকটার অপেক্ষার ধরন দেখে। কাল রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে সে, চুরি। করার জন্যে। কারনিভলের লোক বলেই সাবধান হতে হয়েছে তাকে, আর কারনিভলের লোক বলেই সময় নষ্ট করার ঝুঁকি নিতে পেরেছে। ঠিক সময়টা বেছে নিয়েছে, যখন বেড়াল করলে কারও সন্দেহ পড়বে না তার ওপর। কারনিভলের কারও পক্ষেই শুধু রবির ওপর সারাক্ষণ চোখ রাখা সম্ভব, ঝোপ বুঝে কোপ মারা সম্ভব। তবে কোপ মারতে বেশি দেরি করে ফেলেছে।

এই না বললে ঠিক সময়? মুসা ধরলো কথাটা।

কাজটা করেছে ঠিক সময়ই, তবে বেশি দেরি করেছে আরকি।

বুঝলাম না।

বুঝলে না? রকি বীচে আসার আগে বেড়ালগুলোকে ফার্স্ট প্রাইজ হিসেবে চালানোর কথা ভাবেনি রবি। আর কিছু না পেয়েই ওগুলোকে চালিয়েছে। পয়লা রাতেই পার করে দিয়েছে চারটে। তাতে চমকে গেছে চোরটা। সে ভাবেওনি এরকম কিছু একটা করে বসবে রবি। চারটে চলে যাওয়ার পর আর ঝুঁকি নিতে চায়নি চোর, তাড়াহুড়ো করেছে, যাতে পঞ্চমটাও হাতছাড়া না হয়ে যায়। দেরি করে করেছে বললাম এই জন্যে, আগের দিন চেষ্টা করলে চারটে না হোক, অন্তত আরও দুএকটা বেড়াল সে হাতাতে পারতো। পঞ্চমটাও ছুটে যাচ্ছে দেখে। বেপরোয়া হয়ে ওঠে সে, সিংহ ছাড়তেও দ্বিধা করেনি।

মুসার কাছে কিংকে নিয়ে যেতে হয়েছে, রবি বললো। যদি সত্যিই নিয়ে গিয়ে থাকে। আর তা করতে হলে করেছে এমন কেউ, যাকে কিং চেনে।

মারাত্মক ঝুঁকি নিয়েছে, সন্দেহ নেই, কিশোর বললো। তবে সফল হয়েছে। একটা বেড়াল অন্তত নিতে পেরেছে। এখন বিজ্ঞাপন দিয়েছে বাকিগুলোর জন্যে। হয় মুসার বেড়ালটা সঠিক বেড়াল নয়, যেটা সে খুঁজছে, নয়তো সবগুলোই তার দরকার।

মাথা দোলালো রবিন। হ্যাঁ, মনে হচ্ছে তোমার কথাই ঠিক। হঠাৎ করে। বেড়ালগুলো দামি হয়ে উঠেছে, একথা বললে কেন?

কারণ, স্যান মেটিওতে আগুন লাগার আগে ওগুলো নেয়ার চেষ্টা করা হয়নি। হতে পারে, আগুন লাগানোই হয়েছে বেড়ালগুলো নেয়ার জন্যে। পারেনি। রবি, স্যান মেটিওতে শুটিঙের সময় বের করেছিলে ওগুলো?

কয়েকটা। এমনি লোককে দেখানোর জন্যে। শো-কেসে সাজিয়ে রেখে ছিলাম। প্রাইজ দেয়ার ইচ্ছে ছিলো না।

কিশোর, রবিন বললো। তুমি বললে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো চোর। স্যান মেটিওতেই যদি নেয়ার চেষ্টা করে থাকে, তোমার যুক্তি গোলমাল হয়ে যাচ্ছে না?

মোটেই না। আমি বলেছি, ঠিক সময়ের অপেক্ষায় ছিলো সে। হয়তো স্যান মেটিওতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আরেকটা ভালো সুযোগের জন্যে বসেছিলো। তবে। আগুন লাগার অন্য কারণও থাকতে পারে। সেই কারণটাই জানার চেষ্টা করবো। জানতে হবে, কেন, কে চায় কানা বেড়ালগুলো?

কি করে সেটা জানবো? মুসার প্রশ্ন।

ভাবলো কিশোর। তুমি থাকবে। এমন কোথাও, যেখানে বসে কারনিভল থেকে কে কে বেরোয় সব দেখতে পাবে। তোমাকে যেন না দেখে।

আমার ওপরই এই গুরুদায়িত্ব?

আবারও বলছি, চোর এই কারনিভলেরই লোক, মুসার কথা কানে তুললো কিশোর। একশো ডলার কম না, লোকে সাড়া দেবেই। বেড়াল আনার জন্যে বেরোতেই হবে চোরকে। অবশ্য তার কোনো সহকারী না থাকলে। নেই বলেই মনে হয় আমার। একাই করছে যা করার। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়তে পারে। তোমার। রবিন, দিনিজসপ্রেটা দিয়ে দাও ওকে। আমারটা আমার কাছেই থাক।

যাচ্ছো নাকি কোথাও? রবি জিজ্ঞেস করলো। আমি আসবো?

তা আসতে পারো। জলদি জলদি করতে হবে আমাদের।

কোথায় যাচ্ছো তোমরা? আমাকে একা ফেলে? প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।

তার প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো না কেউ। ছুটতে শুরু করেছে। সাইকেলের দিকে। করুণ চোখে ওদের যাওয়া দেখলো মুসা। তারপর ঘুরলো। শেষ বিকেল। আরও মলিন হয়েছে ধূসর আলো। লুকানোর জায়গা খুঁজতে শুরু করলো সে। পরিত্যক্ত পার্কের একটা উঁচু বেড়ার ওপর চোখ পড়লো, কারনিভলের প্রবেশপথ থেকে বিশ গজমতো দূরে।

বেড়ার জায়গায় জায়গায় এখানে ফুটো, ফোকর। পুরনো, বিশাল নাগরদোলার ভারি স্তম্ভগুলোর মাথা বেড়া ছাড়িয়ে উঠে গেছে। ওখানে লুকানোই সব চেয়ে সুবিধেজনক মনে হলো মুসার। চট করে একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো সে। কেউ তাকিয়ে নেই তার দিকে, সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। আস্তে আস্তে বেড়ার কাছে সরে এলো সে।

কেউ দেখছে না তাকে, আরেকবার চেয়ে নিশ্চিত হয়ে নিয়ে বেড়ার একটা। ফোকরে মাথা ঢুকিয়ে দিলো সে। অন্যপাশে চলে এলো। নাগরদোলার স্তম্ভের মাঝের ফ্রেম বেয়ে উঠতে শুরু করলো। এমন একখানে এসে থামলো, যেখান থেকে কারনিভলের প্রবেশ পথ পরিষ্কার দেখা যায়।

মোটা একটা লোহার ডাণ্ডার ওপর পা ঝুলিয়ে বসলো সে। গা ছমছমে অনুভূতি। চারপাশের বিষণ্ণতা যেন হা করে গিলতে আসছে তাকে। ঠাণ্ডা বাতাসে বিচিত্র ক্যাচকোচ আওয়াজ করছে ভাঙা, পুরনো কাঠের কাঠামো, নীরব শূন্যতা সইতে না পেরে যেন গুঙিয়ে উঠছে মাঝে মাঝে, সেই সঙ্গে মিলিত হচ্ছে জোর বাতাসের দীর্ঘশ্বাস। মুসার মনে হলো, উঁচু ওই বেড়াটা ওপাশের জীবন্ত পৃথিবী থেকে আলাদা করে দিয়েছে তাকে।

মাথার অনেক ওপরে উঠে গেছে স্তম্ভগুলো, কালচে ধূসর আকাশ ছুঁড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে যেন। স্তম্ভ আর বেড়ার মাঝের পোড়ো ফান হাউসটাকে কেমন ভূতুড়ে লাগছে। ওটার প্রবেশ পথ দেখে মনে হয়, মস্ত দৈত্যের হাঁ করা মুখে রঙ মাখিয়ে দিয়েছে। কেউ হাসছে নীরব হাসি। ডানে, সাগরের ধারে লাশ হয়ে পড়ে আছে বুঝি টানেল অভ লাভ। মানুষের তৈরি ওই সুড়ঙ্গের দেয়ালে অসংখ্য ফোকর। সরু মুখের কাছে গড়িয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট ঢেউ, একসময় ওখানে বাধা থাকতো অনেক নৌকা, টিকেট কেটে লোকে চড়তো ওগুলোতে, ঘুরে আসতো সাগর থেকে।

 বড় একা লাগছে মুসার। সতর্ক হয়ে উঠলো হঠাৎ। কারনিভলের গেট দিয়ে। লম্বা লম্বা পায়ে বেরিয়ে যাচ্ছে একজন। রকি বীচের বাণিজ্যিক এলাকার দিকে চলে গেল লোকটা। চেনা চেনা লাগলো তাকে। পরনে ধোপদুরস্ত শহুরে পোশাক, দূর থেকে ম্লান আলোয় চিনতে পারলো না লোকটাকে মুসা।

কোহেন না তো? চওড়া কাঁধই তো, নাকি? দাড়িও আছে না মুখে? তবে এলোমেলো লম্বা চুল দেখা গেল না, হ্যাঁটের জন্যেই বোধহয়। পরনে কালো সোনালি পাজামাও নেই, কাজেই শিওর হতে পারলো না মুসা।

খানিক পরেই আরেকজনকে বেরোতে দেখা গেল। লম্বা। ওকেও চেনা চেনা লাগলো, কিন্তু চিনতে পারলো না মুসা। সান্ধ্য পোশাক পরে মারকাস দ্য হারকিউলিস গেল না তো?

দমে গেল মুসা। পঞ্চাশ-ষাট গজ অনেক দূর। এতো দূরে বসা উচিত হয়নি। পোশাক বদলে বেরোলে এখান থেকে দেখে কারনিভলের একজন কর্মীকেও চিনতে পারবে না সে। স্থান নির্বাচন যে ভুল হয়ে গেছে, নিশ্চিত হলো আরও দুজন বেরোনোর পর। তৃতীয়জনও লম্বা, মনে হলো বয়স্ক, ধূসর চুল। চতুর্থজনকে চিনতে পারলো শুধু মাথার টাকের জন্যে, আগুন খেকো। তবে চতুর্থ লোকটার ব্যাপারেও কিছুটা সন্দেহ রয়ে গেল। টাকমাথা আর কি কেউ থাকতে পারে না?

নেমে, জায়গা বদল করে বসবে কিনা ভাবতে ভাবতেই আরও অনেকে। বেরিয়ে গেল। নিশ্চয় রিহারস্যালের সময় শেষ। বাইরে বেরোচ্ছে তাই কারনিভলের লোকেরা। ওদেরকে চিনতে পারলেও খুব একটা লাভ হতো না, বুঝতে পারলো মুসা। অনেকেই তো বেরোচ্ছে। কজনকে সন্দেহ করবে?

অবশেষে সত্যি সত্যি একজনকে চিনতে পারলো। মিস্টার কনর। দ্রুত হেঁটে গিয়ে একটা ছোট গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।

নড়েচড়ে বসলো মুসা। ভাবছে। নামবে? গিয়ে খুঁজে বের করবে বন্ধুদের? নাকি যেখানে আছে, বসে থাকবে আরও কিছুক্ষণ?

সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

বাতাস বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পুরনো নাগরদোলার ক্যাঁচকোঁচ আর গোঙানি।

.

১০.

আগে আগে চলেছে কিশোর। দুই সঙ্গীকে নিয়ে যাচ্ছে স্যালভিজ ইয়ার্ডে।

ইয়ার্ডে ঢুকে, ওদেরকে দাঁড়াতে বলে সাইকেল রেখে গিয়ে জঞ্জালের গাদায়। ঢুকলো সে।

সাইকেলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জঞ্জালের ভেতর জিনিসপত্র ঘাঁটা আর ছুঁড়ে ফেলার আওয়াজ শুনতে লাগলো ররিন আর রবি।

করছেটা কি? রবি বুঝতে পারছে না।

জানি না, রবিনও পারছে না। আগে থেকে কিছু বলতে চায় না কিশোর, স্বভাব। কাজ শেষ করে তারপর বলে। কি করছে সে-ই জানে।

দুড়ুম-দাডুম আওয়াজ হচ্ছে জঞ্জালের গাদায়। রেগে গিয়ে সব যেন ছুঁড়ে ফেলছে কিশোর। অবশেষে শোনা গেল উল্লসিত চিৎকার, হাসিমুখে বেরিয়ে এলো সে-। হাতে একটা অদ্ভুত জিনিস। ওখান থেকেই চেঁচিয়ে বললো, জানতাম পাবো। পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে সব মেলে।

কিশোর কাছে এলে জিনিসটা চিনতে পারলো অন্য দুজন। স্টাফ করা একটা বেড়াল। সাদার ওপর কালো ফোঁটা। তিনটে পা ছিঁড়ে ঝুলছে, একটা নেই-ই। একটা চোখ খসে পড়েছে। চামড়া ফেটে ভেতরের তুলা-ছোবড়া সব বেরিয়ে পড়েছে।

এটা দিয়ে কি হবে? রবি জিজ্ঞেস করলো!

বিজ্ঞাপনের জবাব দেবো, হাসি-চওড়া হলো কিশোরের।

কিন্তু ওটা তো কানা বেড়ালের মতো না! হাত নাড়লো রবিন।

না তো কি হয়েছে? হয়ে যাবে। এসো।

দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকলো ওরা। ছোট একটা ওয়ার্কবেঞ্চে বসলো কিশোর। ফিরে চেয়ে বললো, রবিন, ফোন করে জিজ্ঞেস করো তো, কোথায় যেতে হবে।

রবিন রিসিভার তোলার আগেই কাজে হাত দিলো কিশোর। রঙ, ব্রাশ, সুই সুতো, কাপড়, তুলা, তার, আর দ্রুত রঙ শুকানোর কেমিক্যাল বের করলো। তিনটে পা মেরামত করে সেলাই করলো জায়গামতো, নতুন আরেকটা পা বানিয়ে লাগালো, শরীরের ছেঁড়া জায়গা সেলাই করলো। টিপে, চেপে বাঁকা করলো বেড়ালটাকে। পা-গুলো বকিয়ে দিলো। তারপর রঙ করতে শুরু করলো।

ফোন শেষ করে ফিরে এলো রবিন।

কি বললো? মুখ তুললো না কিশোর, বেড়ালের গায়ে ব্রাশ ঘষছে।

একটা আনসারিং সার্ভিসের নাম্বার ওটা, রবিন জানালো। তেত্রিশ স্যান। রোকুইওয়েতে যেতে বললো। এখান থেকে মাত্র দশ বুক দূরে।

গুড। অনেক সময় আছে। অ্যানসারিং সার্ভিসের সাহায্য নিয়েছে, তার কারণ, বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় লোকটার কোনো ঠিকানা ছিলো না।

আধ ঘন্টা পর সন্তুষ্ট হয়ে ব্রাশ রাখলো কিশোর। একটা কলারে লাল রঙ করে পরিয়ে দিলো বেড়ালের গলায়। ব্যস, হয়েছে, লাল-কালো ডোরাকাটা কানা। বেড়াল। পা ঠিকমতো বাকা হয়েছে তো? হয়েছে। তবু, চোখ থাকলে চিনে। ফেলবে। কাজ চালানো যাবে আশা করি।

আমার কাছেও রবির বেড়ালের মতো লাগছে না, রবিন বললো।

না লাগুক। গিয়ে অন্তত দেখাতে পারবো, বেড়াল এনেছি।

পনেরো মিনিট পর, ৩৩ স্যান রোকুই ওয়ে-র সীমানায় পাম গাছের একটা জটলায় ঢুকলো তিন কিশোর। ইটের তৈরি ছোট একটা বাড়ি, রাস্তা থেকে দূরে। রঙচটা একটা সাইনবোর্ড বুঝিয়ে দিলো, একসময় ওটা এক ঘড়ি মেরামতকারীর অফিস-কাম-বাড়ি ছিলো। মেঘলা বিকেলে অস্বাভাবিক নির্জন লাগছে বাড়িটা। জানালায় পর্দা নেই, ভেতরে আলো জ্বলছে না।

তবে রাস্তা নির্জন নয়। দলে দলে আসছে ছেলেমেয়েরা। হাতে, বগলের তলায় স্টাফ করা বেড়াল। নানা জাতের, নানা রঙের, নানা ধরনের। যার কাছে যা আছে, নিয়ে এসেছে, বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মিলুক না মিলুক। একশো ডলার অনেক টাকা, বিক্রির জন্যে সবাই উদ্বিগ্ন।

বেশির ভাগই তো মেলে না, রবিন বললো। তবু এনেছে।

লোকে কিছু না দিয়েই টাকা নিতে চায়, তিক্তকণ্ঠে বললো রবি। শুটিং গ্যালারি চালাই তো, লোকের স্বভাব-চরিত্র আমার জানা।

ওরা ভাবছে, কিশোর বললো। ওদেরটা পছন্দ হয়ে যেতেও পারে। হলেই কড়কড়া একশো ডলার। একটার দামও দশের বেশি হবে না, নব্বই ডলারই লাভ।

এই সময় নীল একটা গাড়ি ঢুকলো বাড়ির আঙিনায়, ঘুরে চলে গেল ওপাশে। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত হেঁটে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো একজন লোক। দূর। থেকে তার চেহারা ভালোমতো দেখলো না ছেলেরা, চিনতে পারলো না।

দরজার তালা খুলে ভেতরে ঢুকলো লোকটা। হুড়মুড় করে ঢুকতে শুরু করলো। ছেলেমেয়ের দল।

গাছের আড়ালে হুমড়ি খেয়ে থাকতে থাকতে উত্তেজিত হলো রবি। আমরা কি করবো, কিশোর?

নীল গাড়িটা চিনেছো? জবাব না দিয়ে প্রশ্ন করলো কিশোর।

আরেকবার তীক্ষ্ণ চোখে দেখলো রবি। না। আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কারনিভলের সবার গাড়িই এরচে বড়, ট্রেলার টানতে হয় তো!

বেশ, মাথা কাত করলো কিশোর। আমরা দুজন এখানে থাকছি। বেড়াল নিয়ে রবিন যাক। কয়েক মিনিট পর আমরা একজন গিয়ে কাছে থেকে দেখবো গাড়িটা। হুশিয়ার থাকতে হবে আমাদের, যাতে দেখে না ফেলে। চোরটা যাতে বুঝতে না পারে কেউ তাকে সন্দেহ করেছে, পিছু নিয়েছে। কারনিভলের লোক, হলে তোমাকে চিনবেই।

আমি গিয়ে কি কি করবো? রবিন জিজ্ঞেস করলো।

বেড়াল বিক্রির চেষ্টা করবে। হয়তো কিনবে না সে। না কিনুক। তোমার। আসল কাজ হবে, তার চেহারা দেখে আসা। জেনে আসা, বেড়াল নিয়ে কি করে সে।

বেশ, যাচ্ছি, আবার সাইকেলে চাপলো রবিন।

বেড়ালটা বগলে চেপে, সাইকেল চালিয়ে এসে বাড়ির দরজায় থামলো সে। সাইকেল স্ট্যাণ্ডে তুলে মিশে গেল ছেলেমেয়েদের স্রোতে। = বড় একটা হলঘরে ঢুকলো। বাচ্চারা গিজগিজ করছে ওখানে। আসবাব। বলতে কয়েকটা কাঠের চেয়ার, আর একটা লম্বা টেবিল। টেবিলের ওপাশে বসে আছে একজন মানুষ, চেয়ার-টেবিলের বেড়ার ওপাশে আত্মগোপন করতে চাইছে। যেন। এক এক করে বেড়াল নিয়ে পরীক্ষা করছে। ও

দুঃখিত, বললো সে। এই তিনটে চলবে না। খসখসে কণ্ঠস্বর। বিজ্ঞাপনেই বলেছি কেমন বেড়াল চাই।…না, তোমার ওটাও চলবে না, সরি।

আরেকটা বেড়াল নিয়ে এগিয়ে গেল একটা ছেলে। হাত বাড়িয়ে বেড়ালটা প্রায় কেড়ে নিলো লোকটা। ওরকম জিনিসই পুরস্কার জিতে আবার হারিয়েছে মুসা। লোকটার বাহুতে একটা টাট্টু আঁকা দেখলো রবিন, পালতোলা একটা জাহাজের ছবি, স্পষ্ট।

গুড, লোকটা বললো। এই জিনিসই চাই। এই নাও তোমার একশো ডলার।

রবিনের কানে ঢুকছে না যেন কথা। ভাবছে, ওই লোকটা কি কারনিভলের কেউ?, তাহলে নিশ্চয় চিনতে পারবে রবি। ওই টাট্ট তার চোখে না পড়ার কথা নয়। বাদামী চামড়ার লোক, সোজা তাকালো রবিনের দিকে। এই, এই ছেলে, তুমি। দেখি এদিকে এসো, তো।

চমকে গেল রবিন। তাকে কি সন্দেহ করলো লোকটা? দুরুদুরু বুকে এগিয়ে গিয়ে বেড়ালটা রাখলো টেবিলে। ওটার দিকে একবার চেয়েই হাসলো লোকটা। হু, মেরামত করা হয়েছে। মন্দ না। আমার বাচ্চারা পছন্দ করবে। এই নাও, তোমার টাকা।

থ হয়ে গেল রবিন। হাত বাড়িয়ে নিলো একশো ডলার, বিশ্বাস করতে পারছে না। চেয়ে আছে লোকটার দিকে। কিন্তু লোকটা গুরুত্ব দিলো না তাকে। আরেকটা ছেলের দিকে তাকালো।

টেবিলের কাছ থেকে সরে এলো রবিন। দেখলো, টেবিলের ধারে মেঝেতে বেড়ালের স্তূপ। তারটা সরিয়ে রাখা হয়েছে একপাশে। ওটার সঙ্গে ওরকম আরও একটা। খানিক দূরে রাখা আরও দুটো, মুসা যেটা পুরস্কার পেয়েছিলো অবিকল সেরকম।

ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে আসছে ভিড়। অস্বস্তি লাগছে রবিনের। বেরিয়ে যাবে, না থাকবে?- কিছুই তো জানা হলো না এখনও, যায় কি করে? আবার থাকলেও যদি সন্দেহ করে লোকটা? ঝুঁকি নেয়াই ঠিক করলো সে। থাকবে আরও কিছুক্ষণ।

দেখো, খোকা, ওরকম বেড়াল চাইনি আমি, নাছোড়বান্দা একটা ছেলেকে বোঝাচ্ছে লোকটা। দেখতে পাচ্ছি তোমারটা ভালো, কিন্তু আমি অন্য জিনিস চাই। বাচ্চাকে বড়দিনের উপহার দেবো। আমার পছন্দ না হলে দিই কি করে, তুমিই বলো? ছেলেটাকে চওড়া হাসি উপহার দিলো সে। হাত নাড়তে আবার পাল-তোলা-জাহাজটা চোখে পড়লো রবিনের।

কি জিনিস চান, বুঝতে পারছি, ছেলেটা বললো। ওই দুটোর মতো তো? একটার খবর আপনাকে দিতে পারি। আমার বন্ধু ডিক ট্যানারের কাছে আছে। কারনিভলে পুরস্কার পেয়েছে।

তাই? ভুরু কুঁচকে গেল লোকটার, ঠোঁট সামান্য ফাঁক। নিশ্চয় আমার বিজ্ঞাপন দেখেনি। আমার হাতেও আর সময় নেই, শুধু আজকের দিনটাই।

গিয়ে তাহলে কথা বলুন ওর সাথে, ছেলেটা বললো। আমাদের বাড়ির কাছেই থাকে। টোয়েন্টি ফোর কেলহ্যাম স্ট্রীট।

এহহে, দেরি হয়ে গেল, হঠাৎ যেন তাড়াহুড়া বেড়ে গেল লোকটার। ক্ষণিকের জন্যে তাকালো রবিনের দিকে। জ্বলে উঠলো না? নাকি চোখের ভুল? ঠিক বুঝতে পারলো না রবিন। অল্প কয়েকটা ছেলে রয়েছে আর ঘরে। ওরা যতোক্ষণ থাকে, সে-ও থাকবে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।

 আরেকটা ছেলের কাছে একটা লাল-কালো ডোরাকাটা কানা বেড়াল কিনলো লোকটা। আর কারও কাছে নেই ওরকম বেড়াল। হাত নেড়ে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বললো লোকটা। বাধ্য হয়ে বেরিয়ে আসতে হলো রবিনকে। সাইকেল নিয়ে তাড়াতাড়ি চললো পাম গাছগুলোর কাছে।

অনেকক্ষণ থাকলে, রবি বললো।

জানার চেষ্টা করলাম, হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছলো রবিন। লোকটা লম্বা, বাদামী চামড়া, বাহুতে একটা পাল-তোলা-জাহাজের টাট্টু। কারনিভলের কেউ?

পাল-তোলা-জাহাজ? চিবুক ডললো রবি। না, ওরকম কেউ তো নেই। কয়েকজন রাফনেকের হাতে টাট্টু আছে, তবে জাহাজ নয়। আর চেহারাও…নাহ, মেলে না কারও সাথে।

চিন্তিত লাগছে কিশোরকে। কারনিভলে হয়তো লুকিয়ে রাখে, বললো সে। আর মেকআপ নিয়ে মুখের রঙ বদলানোও কিছু না। রবিন, রবি গিয়ে ওর গাড়িটা দেখে এসেছে। কোনো সূত্র পায়নি। লাইসেন্দ্র নম্বর লিখে নিয়েছি।

আসল কথাটাই বলিনি এখনও, কিশোর। ও আমাদের বেড়াল কিনেছে।

বাড়ি পড়লো যেন কিশোরের মাথায়। কিনেছে! নকলটা!

পকেট থেকে একশো ডলার বের করে দেখালো রবিন। এই যে, টাকা। ওরকম দেখতে আরও চারটে কিনেছে। তারমধ্যে তিনটে আসল মনে হলো।

তোমাকে চিনেছে?

কি করে? আগে কখনও দেখা হয়নি তো।

কাল রাতের চোরটাই না তো? নিজেকেই করলো প্রশ্নটা। যদি সে হয়, আর তোমাকে চিনে থাকে, তাহলে আমাদের বোকা বানানোর জন্যেই কিনেছে বেড়ালটা।

আসল তাহলে তিনটে পেয়েছে? রবি বললো।

আরও একটার খোঁজ দিলো একটা ছেলে। কারনিভলে নাকি পুরস্কার পেয়েছে। থাকে চব্বিশ নম্বর কেলহ্যাম স্ট্রীটে। নাম ডিক ট্যানার।

এটাই আসল খবর, রবিন! চুটকি বাজালো কিশোর। তিনটে কিনেছে, আমার ধারণা, চার নম্বরটাও কিনতে যাবে। আমরাও যাবো ডিকের বাড়িতে। তার আগে দেখি বেড়াল তিনটে নিয়ে লোকটা কি করে…

কিশোর, বলে উঠলো রবি। শেষে যে ছেলেটা ঢুকেছিলো, সে-ও বেরোচ্ছে।

ছেলেটার বগলে একটা সাদা বেড়াল। বিক্রি করতে পারেনি। লোকটাকেও দেখা গেল দরজায়। আর কেউ আসছে কিনা বোধহয় দেখতে বেরিয়েছে। নির্জন। পথে চোখ বোলালো, তারপর ঢুকে গেল আবার ভেতরে।

এসো, বলে, উঠে দাঁড়ালো কিশোর।

কালচে হয়ে আসছে ধূসর গোধূলি। পা টিপে টিপে বাড়িটার কাছে চলে এলো ওরা। সাবধানে মাথা তুলে লিভিং রুমের জানালা দিয়ে সাবধানে ভেতরে তাকালো।

আগের জায়গাতেই বসা লোকটা। সামনে টেবিলে রেখেছে এখন তিনটে কানা বেড়াল, যেগুলো মুসারটার মতো দেখতে। একটা বেড়াল হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে শুরু করলো।

হ্যাঁ, ওগুলোই পুরস্কার দিয়েছি, ফিসফিসিয়ে বললো রবি।

ওই যে, দুটো ফেলে রেখেছে, কিশোর বললো। কোণের দিকে দেখো৷

রবি আর রবিনও দেখলো। দুটোই নকল। তার একটা রবিন নিয়ে গিয়েছিল।

ফেলে দিয়েছে, আবার বললো কিশোর। তারমানে তোমারগুলোই চায়, রবি।

শশশ! হুঁশিয়ার করলো রবিন।

তৃতীয় বেড়ালটাও দেখা শেষ করেছে লোকটা। রেখে দিয়েছে টেবিলে। হাতে বেরিয়ে এসেছে ইয়া বড় এক ছুরি।

<

Super User