পুরনো শত্রু – তিন গোয়েন্দা – সেবা প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর
, ১৯৮৯

সবে থেমেছে স্যালভিজ ইয়ার্ডের ট্রাকটা, চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর পাশা, চাচা, দেখো, দেখো!

 বাড়িটা রকি বীচের কাছেই, রেমুডা ক্যানিয়নে। পুরনো মাল কিনতে এসেছেন রাশেদ পাশা। সঙ্গে এসেছে কিশোর আর তার বন্ধু মুসা আমান।

কী? অবাক হয়ে তাকালেন রাশেদ পাশা। কোথায়?

ওই যে, ওই তো বাড়িটার ধারে!

শেষ গোধূলি, দিনের আলো প্রায় শেষ।

কই, কি দেখেছিস, কিশোর?

খাইছে! আমিও তো কিছু দেখছি না, মুসা বললো।

চেয়ে রয়েছে কিশোর। কালো মূর্তিটা নেই। চোখের পলকে যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছে। নাকি ছিলোই না ওখানে? চোখের ভুল? বিড়বিড় করলো, দেখেছি! কালো পোশাক পরা একটা মূর্তি!

বিরাট কাঠামোর বাড়িটার দিকে তাকালেন রাশেদ পাশা পাহাড়ী অঞ্চল। গিরিসঙ্কটের দেয়ালের ছায়ায় কেমন নিঃসঙ্গ লাগছে বাড়িটাকে। কাছেই হোট কটেজ। শান্ত, নীরব।

ছায়াটায়া দেখেছিস আর কি, বললেন চাচা।

আলোছায়ার খেলা, বললো মুসা।

আলো কোথায় দেখলে? আমি বলছি, আমি দেখেছি। মনে হলো ওই বাড়ির জানালার ভেতরে ঢুকে গেল।

দ্বিধা করলেন রাশেদ পাশা। সাধারণতঃ ভুল করে না তার ভাতিজা। বললেন, বেশ, চল, বাড়িতে ঢুকেই দেখি। প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানা যাবে।

রাশেদ পাশার পিছু পিছু এগোলো দুই গোয়েন্দা।

অনেক পুরনো বাড়ি। একশো বছর হতে পারে, দুশো হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কাঠের টাওয়ার, ছড়ানো কার্নিশ। গাড়িবারান্দার ঢেউখেলানো হাতটা ধরে রেখেছে মোটা মোটা থাম। আর রিশাল সদর দরজা।

দরজায় ধাক্কা দিলেন রাশেদ পাশা।

সাড়া দিয়ে বেরোলেন লম্বা, রোগাটে একজন মানুষ। প্রৌঢ়, কিন্তু মনে হয় বয়েস আরও বেশি, বৃদ্ধ। চোখের নিচে গভীর ছায়া। এই জুলাই মাসের গরমেও টুইডের একটা জ্যাকেট পরে রয়েছেন, তোকাল ধোয়া হয়নি কে জানে, দোমড়ানো। হাতে বিদেশী ভাষায় লেখা মোটা এক বই।

প্রফেসর হোফার? জিজ্ঞেস কলেন রাশেদ পাশা।

হাসলেন প্রফেসর। আপনি নিশ্চয়ই রাশেদ পাশা? আসুন আসুন।

বাধা দিয়ে বললেন রাশেদ পাশা, প্রফেসর সাহেব, এ-আমার ভাতিজা। ও খানিক আগে নাকি কালো, পোশাক পরা একটা লোককে আপনার জানালা দিয়ে চুতে দেখেছে।

আমার বাড়িতে? চোখ মিটমিট করলেন প্রফেসর। নিশ্চয় ভুল করেছে।

না, স্যার, জবাব দিলো কিশোর। আমি শিওর। দামী কোনো জিনিস আছে। আপনার বাড়িতে? চোরে চুরি করবে, এমন কিছু?

 নাহ। কিচ্ছু নেই।…তবু তুমি যখন বলছো..ওহহো, বুঝেছি, আমার ছেলে, রিকি। কালো কাউবয় পোশাক আছে তার। আর কতোবার বুঝিয়েছি, জানালা দিয়ে ঢোকার চেয়ে দরজা দিয়ে ঢোকা অনেক ভালো। প্রফেসর হাসলেন।

মাথা ঝাঁকালেন রাশেদ পাশা। তাই বলুন।

আপনার ছেলের বয়েস কতো, স্যার? জানতে চাইলো কিশোর।

কতো আর, এই তোমাদের মতোই। তোমার মতোই লম্বা।

আমি যাকে দেখেছি, সে আরও লম্বা।

তাই? সংশয় দেখা দিলো প্রফেসরের চোখে। বেশ, এসো, দেখি কোথায় লুকিয়ে আছে তোমার চোর।

বিরাট বাড়িটার নিচতলার ঘরগুলো ঘুরিয়ে দেখালেন প্রফেসর। বেশির ভাগই খালি, বন্ধ করে রাখা হয়েছে। করি ভাষা নিয়ে গবেষণা, বিষণ্ণ শোনালো তার কণ্ঠ। টাকা নেই। এতো বড় বাড়ি আর রাখার ক্ষমতা নেই আমার। এক মুহূর্ত থেমে বললেন, বাপ-দাদারা ছিলো জাহাজী, ক্যাপ্টেন। ভালো টাকা আয় করতো। কতো যে জিনিস আনতে পুব-দেশ থেকে। তারাই বানিয়েছে এই বাড়ি, টিকিয়ে রেখেছে অনেক দিন। নাবিক হলে হয়তো আমিও পারতাম। হইনি। এখন এখানে থাকি শুধু আমি আর আমার ছেলে। এক চাচাতো ভাই ছিলো আমার, সে-ও অনেকদিন হলো এ-বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এতো বড় বাড়িতে থাকার লোক কোথায়? বন্ধই করে রাখি ঘরগুলো। কটেজটা যে দেখলেন, কেয়ারটেকার। থাকতত আগে। এখন ওটা ভাড়া দিয়েই সংসারের খরচ চালাই।

নিচতলায় চোরকে পাওয়া গেল না। ওপর তলায় উঠলো সবাই। ওপরেও নিচের মতোই অবস্থা।

ভালোমতো ঘরগুলো দেখে কিশোর স্বীকার করলো, না, চুরি করার মতো। কিছু নেই।

হতাশ মনে হচ্ছে তোমাকে? বললেন প্রফেসর।

হবেই, বললো মুসা। ভেবেছিলো কি জানি একটা রহস্য পেয়ে গেছে। পায়নি তো, তাই।

 আপনার ছেলেকে দেখছি না? চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর। কাউকে দেখেছি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আচ্ছা, পুরনো জিনিস বিক্রি করবেন বলে ডেকেছেন আমাদের। তার মধ্যে মূল্যবান কিছু নেই তো?

থাকলে, তো খুশিই হতাম। আছে শুধু বুড়ো ডেনবারের কিছু পুরনো জিনিস। কটেজে থাকতো। কয়েক মাস আগে মারা গেছে। থাকার মধ্যে আছে গোটা দুই সুটকেস, আর কয়েকটা ছবি, তার আঁকা। লোকটার বোধহয় দুনিয়ায় কেউ ছিলো না, অনেকটা সন্ন্যাসীর মতোই থাকতো। টাকাপয়সা ছিলো না। শেষ কমাসের ভাড়াও মিটিয়ে যেতে পারেনি। সেজন্যেই তার জিনিস বিক্রি করতে চাইছি, কটা ডলারও যদি আসে মন্দ কি?

সন্ন্যাসীদের কাছে অনেক সময় মূল্যবান জিনিস থাকে, বললো কিশোর।

কি ব্যাপার, গোয়েন্দার মতো কথা বলছো?

গোয়েন্দাই তো আমরা, মুসা বললো। কিশোর, দেখাও না।

পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে দিলো কিশোর।

মুচকি হেসে মাথা দোলালেন প্রফেসর। কিন্তু এখানে তদন্ত করার কিছু পাবে না। যা দেখেছো, ওটা ছায়া ছাড়া কিছু না।

ঠিক এই সময় চিৎকার শোনা গেল, চোর! চোর! বাবা, জলদি এসো!

স্থির হয়ে গেল সবাই। কান পেতে শুনলেন প্রফেসর। আরে, রিকি! সিঁড়ির দিকে দৌড় দিলেন তিনি। পেছনে ছুটলো অন্য তিনজন।

বাবা, তাড়াতাড়ি! আবার শোনা গেল চিৎকার, বাঁয়ে কটেজের দিক থেকে।

.

০২.

লন মাড়িয়ে ছুটলেন প্রফেসর হোফার। ঠিক পেছনেই রাশেদ পাশা আর মুসা। তাদের পেছনে কিশোর।

কটেজের সামনের ছোট ছাউনির নিচে পৌঁছলো ওরা। এক ধাক্কায় দরজা খুলে ছোট একটা লিভিংরুমে ঢুকলেন প্রফেসর। হাঁপাচ্ছেন। চেঁচিয়ে ডাকলেন, রিকবার!…রিকি!

এই যে এখানে, বাবা, জবাব এলো কটেজের খুদে বেডরুম থেকে।

প্রফেসর ঢুকলেন। পেছনে ঢুকলেন রাশেদ পাশা আর মুসা। লিভিংরুমের মতোই এ-ঘরেও আসবাব তেমন নেই। একটা সিঙ্গল খাট, একটা চেয়ার, আর একটা ভারি টেবিল–উল্টে পড়ে আছে। টেবিলের ওপাশে দাঁড়িয়ে গায়ের ধুলো ঝাড়ছে একটা ছেলে। রোগী টিনটিনে শরীর।

তাড়াতাড়ি তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন প্রফেসর।

আমি ঠিকই আছি, বাবা, বললো রিকি। নড়াচড়ার শব্দ শুনে ঢুকে দেখি কালো পোশাক আর, কালো মুখোশ পরা একটা লোক। আমি চেঁচিয়ে উঠতেই টেবিলটা উল্টে আমার গায়ের ওপর ফেললো। ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে গেলাম। এই সুযোগে পেছনের দরজা দিয়ে পালালো ব্যাটা।

কিশোরের কথাই ঠিক! বলে উঠলো মুসা। তবে একটা ভুল করেছে। লোকটাকে ঢুকতে নয়, বেরোতে..আরি, কিশোর গেল কই?

ফিরে এসে লিভিংরুমে ঢুকলো মুসা। ওখানেও নেই কিশোর। গেল কোথায়?

কিশোর? চিৎকার করে ডাকলেন রাশেদ পাশা।

আমাদের পেছনেই তো ছিলো, ঢোক গিললো মুসা।

ছেলের দিকে তাকালেন প্রফেসর। লোকটার হাতে কিছু ছিলো? ছুরি, পিস্তল…

দেখিনি।

হঠাৎ আরেকটা তীক্ষ্ণ চিৎকার শোনা গেল কটেজের পেছন দিক থেকে।

পাক খেয়ে ঘুরলেন প্রফেসর। নালার ওদিক থেকে! হয়তো কেউ পড়ে গেছে!

নালাটা কি খুব গভীর? শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন রাশেদ পাশা।

মোটামুটি। পড়লে হাত-পা ভাঙতে পারে। আসুন আমার সঙ্গে।

ওদেরকে কটেজের পেছনে নিয়ে এলেন প্রফেসর। ছোট ঝোপঝাড়, মাঝে মাঝে বড় বড় গাছ। ঝোপঝাড় ভেঙে ছুটলো ওরা। নালাটার প্রান্তে এসে থমকে দাঁড়ালো। দশ ফুট মতো গভীর নালাটার দুই মাথা, বাঁক নিয়ে চোখের আড়াল হয়ে গেছে। নিচে আলগা পাথরের ছড়াছড়ি, হালকা গাছপালাও আছে।

কিশোরের চিহ্নও নেই।

দেখুন! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।

নিচে, ডানের কয়েকটা পাথরের ওপর কালচেমতো কি যেন লেগে রয়েছে। আলো নেই। ওপর থেকে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।

প্রায় খাড়া ঢাল বেয়ে হাঁচড়ে-পাঁচড়ে নামলো ওরা।

হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলো মুসা। ভেজা। রক্ত! আঁতকে উঠলো সে।

.

কালো মূর্তিটা আবার চোখে পড়লো কিশোরের। কটেজের পেছন থেকে বেরিয়ে জঙ্গলের দিকে ছুটে যাচ্ছে।

কিশোর বুঝলো, লোকটাকে সে একাই দেখেছে। অন্যেরা ঢুকে গেছে কটেজে। তাদেরকে ডেকে বের করে আনতে সময় লাগবে, ততোক্ষণে বনে ঢুকে। হারিয়ে যাবে লোকটা। এক মুহূর্ত দ্বিধা করলো গোয়েন্দাপ্রধান, তারপর মোড় নিয়ে ধাওয়া করলো মূর্তিটাকে।

কিন্তু তা-ও দেরি হয়ে গেল। লোকটার চেহারা দেখতে পেলো না সে, তার আগেই ঢুকে গেল জঙ্গলে। ঝোপ মাড়ানোর শব্দ কানে আসছে। কয়েক সেকেণ্ড। পরেই কি যেন গড়িয়ে পড়তে লাগলো, ধ্যাপ করে পাথরের ওপর পড়লো ভারি কিছু। যেন একটা বস্তা পড়েছে। পরক্ষণেই শোনা গেল তীক্ষ্ণ চিৎকার।

এক নালাটার কিনারে এসে দাঁড়ালো কিশোর। নিচে উঁকি দিলো। কোনোমতে উঠে দাঁড়িয়েছে কালো মূর্তিটা। খোঁড়াতে খোঁড়াতে দৌড় দিলো ডান দিকে, বা পায়ে চোট লেগেছে। হারিয়ে গেল মোড়ের ওপাশে।

বসে পড়লো কিশোর। পার্কের পারে বাচ্চারা যেমন করে স্লীপ করে, তেমনিভাবে পিছলে নামলো নালায়। পাথরে রক্ত দেখতে পেলো। এগিয়ে গেছে রক্তের দাগ। সাবধানে চিহ্ন ধরে ধরে এগোলো সে। বৃষ্টির সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির তীব্র স্রোতের কারণে সৃষ্টি হয়েছে এই নালা। পানি গিয়ে পড়ে ডানের একটা গর্তে, তৈরি করেছে একটা ছোট গিরিখাত, ঘন ঝোপঝাড়ে ভরা। ওটার মধ্যে কেউ লুকিয়ে বসে থাকলে ওপর থেকে দেখা যাবে না।

কিশোর ভাবলো লোকটা ওটার ভেতরেই লুকিয়েছে।

ভুল করেছে। সামনে দড়াম করে বন্ধ হলো একটা গাড়ির দরজা। এঞ্জিন গর্জে উঠলো।

ছুটতে শুরু করলো কিশোর। গিরিখাতের পাশ দিয়ে সরু পথ, সেটা দিয়ে। বেরিয়ে যাওয়া যায় মেইন রোডে।

কিশোর যখন রাস্তার ধারে পৌঁছুলো, গাড়িটা তখন আঁকাবাঁকা পথটার একটা মোড়ের কাছে চলে গেছে। হারিয়ে গেল লাল টেলাইট। শহরের দিকে চলে গেল।

রক্তের দিকে চেয়ে রয়েছে মুসা, চোখে আতঙ্ক। কানে এলো পদশব্দ, কে যেন আসছে।

রাশেদ পাশাও শুনতে পাচ্ছেন। মুসা, শুয়ে পড়ো, জলদি! সবাই…

ছায়ায় লুকিয়ে পড়তে যাবে ওরা, এই সময় দেখতে পেলো, মোড়ের ওপাশ থেকে বেরিয়ে আসছে কিশোর।

কিশোর? চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো মুসা, কি হয়েছে?

ব্যাটাকে তাড়া করেছিলাম। ধরতে পারলাম না। পালালো।

কাজটা ভালো করোনি! গম্ভীর হয়ে বললেন রাশেদ পাশা। ছুরিটুরি যদি মেরে বসতো?

ধরতে যাইনি ওকে, চাচা। চেহারা দেখার চেষ্টা করেছি। অন্ধকারে পারলাম। গাড়ি নিয়ে এসেছিলো, পালালো।

 আনমনে মাথা নাড়লেন প্রফেসর। বুঝতে পারছি না, কি নিতে এসেছিলো! আমার মনে হয়, ভুল করেছে। আশপাশে বড়লোকের বাড়ি আছে, আমাকেও বড় লোক মনে করেছে আরকি। তাই ঢুকে পড়েছে।…চলুন, মিস্টার পাশা, কাজ শেষ। করি।

কটেজে ফিরে এলো ওরা।

সুইচ টিপে আলো জ্বাললেন প্রফেসর। বেডরুমের দেয়াল-আলমারি থেকে বের করলেন চামড়ার দুটো পুরনো সুটকেস। একটার ভেতরে শুধু কাপড় চোপড় পুরনো ফ্যাশনের একটা ড্রেস সুট, ধূসর রঙের একটা ফ্লানেল কাপড়ের সুট, কয়েকটা শার্ট, টাই, আর কয়েক জোড়া মোজা। আরেকটা সুটকেসে রয়েছে ছবি আঁকার কিছু রঙ, স্টাফ করা একটা পেঁচা, গ্রীক পুরাণের দেবি ভেনাসের ছোট একটা মূর্তি, বড় একটা বিনকিউলার, আর এক বাক্স রূপার ছুরি, কাঁটাচামচ, চামচ।

সারাক্ষণ গম্ভীর হয়ে থাকতো ডেনবার, বললেন প্রফেসর। পুরনো একটা প্যান্ট আর শার্ট ছাড়া আর কিছুই পরতো না। তবে লোকটা শিক্ষিত ছিলো। আর খাওয়ার সময় এই ছুরি-চামচ ব্যবহার করতো। সাত মাস ছিলো এখানে। লনে একটা ক্যানভাসের  চেয়ারে বসে থাকতো, আর ছবি আঁকতে, সর্বক্ষণ। রাতেও। বুঝলেন কিছু?

ঘরের কোণ থেকে ক্যানভাসের  আবরণ সরিয়ে বিশটা ছবি বের করে। আনলেন প্রফেসর। এই কটেজ আর তার আশপাশের এলাকার দৃশ্য আঁকা হয়েছে। কোনোটা খুব কাছে থেকে-ক্লোজআপ, আর কোনোটা এতো দূরে, ঘরটা ভালোমতো বোঝাই যায় না।

 মন্দ না, একবার দেখেই নজুর ফেরালেন রাশেদ পাশা। সুটকেস দুটো, বিশেষ করে রূপার জিনিসগুলো দেখে চোখ চকচক করছে তাঁর। ঠিকমতো দরদাম করে কিনতে পারলে পুরনো জিনিসে বেশ ভালো লাভ। তবে কাউকে ঠকাতে চান না তিনি, ন্যায্য দাম দেন। এগুলো বিক্রি করবেন?

হ্যাঁ। মৃত্যুর আগে আমাকে একটা ঠিকানা দিয়ে বললো ডেনবার, ওখানে। চিঠি লিখলেই আমার পাওনা টাকা পেয়ে যাবো। লিখেছি, ভাড়া বাকি আছে সে কথাও জানিয়েছি, কোনো জবাব আসেনি। কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি। আর কতো অপেক্ষা করবো? আমার টাকার খুব দরকার?

দাম নিয়ে দর কষাকষি শুরু করলেন রাশেদ পাশা আর প্রফেসর।

রিগ ডেনবারের জিনিসগুলো দেখতে চাইলো কিশোর। একটাও দামী জিনিস নেই, যার জন্যে গাড়িওয়ালা চোর আসতে পারে।

রিকি, জিজ্ঞেস করলো গোয়েন্দাপ্রধান। মিস্টার ডেনবারের কি হয়েছিলো?

অসুখ হয়েছিলো, জানালো রিকি। ভীষণ জ্বর উঠলো। প্রলাপ বকতো, খালি ক্যানভাস আর আঁকাবাঁকা রেখা, না পথ, কি কি সব বলতো। ওর দেখাশোনা তখন আমিই করতাম। শেষে অসুখ এতো বেড়ে গেল, ডাক্তারকে খবর না দিয়ে আর পারলাম না। ডাক্তার আসার আগেই মারা গেল বেচারা। বয়েস, হয়েছিলো, হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বোধহয় বাঁচতো না।

চোরটা ভুলই করেছে, কি বলো, কিশোর? মুসা বললো। দামী কিছুই নেই এখানে।

আস্তে মাথা ঝোঁকালো শুধু কিশোর।

রিগ ডেনবারের জিনিসগুলো কিনে নিয়ে ট্রাকে তোলা হলো। পাহাড়ী পথ ধরে ছুটে চললো গাড়ি। একটা গিরিপথের ভেতর থেকে বেরোতেই বিড়বিড় করলো কিশোর, চোরেরা সাধারণতঃ ভুল করে না, ঘনঘন নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে সে।

কি চুরি করতে এসেছিলো সে, কোনোদিনই জানতে পারবো না আমরা, বললো.মুসা।

তাই তো দেখছি, দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিশোর।

.

০৩.

ওই ঘটনার এক হপ্তা পর, এক বিকেলে পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে কাজে ব্যস্ত দুই গোয়েন্দা। রবিনই প্রথমে গাড়িটা ঢুকতে দেখলো। হলুদ রঙের একটা মার্সিডিজ গিয়ে থামলো অফিসের সামনে।

চকচকে গাড়িটা থেকে বেরিয়ে এলো মার্জিত পোশাক পরা মাঝারি উচ্চতার একজন মানুষ। বিকেলের রোদে তার ধূসর চুল রূপালি দেখাচ্ছে। পরনে শাদা সামার সুট, সিল্কের নীল শার্ট। হাতে সরু কালো একটা বেত, আর একটা কি যেন ঝিক করে উঠলো। এক মুহূর্ত দেখলো ছেলেদের, তারপর ঘুরে রওনা হলো অফিসের দিকে।

চেয়ে রয়েছে ছেলেরা। হঠাৎ বলে উঠলো কিশোর, ওহহহ, ভুলেই গিয়েছিলাম, চাচা-চাচী কেউ নেই অফিসে। চলো, চলো।

গাড়িটার কাছাকাছি এসেছে, এই সময় খুলে গেল পেছনের দরজা। বেরিয়ে এলেন এক লম্বা মহিলা। নীলচে-ধূসর চুল। শাদা সিল্কের পোশাক পরনে। তাতে লাগানো একটা হীরার ব্রোচ। রাজকীয় ভঙ্গিতে তাকালেন ছেলেদের দিকে। মিস্টার রাশেদ পাশা আছেন?

না, ম্যাডাম, জবাব দিলো কিশোর। উনি আমার চাচা। ইয়ার্ডের ভার আমার ওপর দিয়ে গেছেন।

তাই? বয়েস তো বেশি লাগছে না। কাস্টোমার সামলাতে পারো?

পারি।

গুড, হাসলেন মহিলা। কনফিডেন্স থাকা ভালো।

আসলে, হেসে বললো রবিন। পাঁচটার পরে কাস্টোমার বেশি আসেই না।

আবার হাসলেন মহিলা। আমি একজন কাস্টোমার। আর ওই যে অফিসে ঢুকলো, ও আমার এস্টেট ম্যানেজার, ফ্রেড ব্রাউন। চলো ওখানে।

ডেস্কের ওপর ঝুঁকে কি দেখছিলো লোকটা, ছেলেদের ঢুকতে দেখে চট করে সুরে গেল। তবে ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছে কিশোর। ইয়ার্ডের পার্চেজ বুকটা ঘাঁটছিলো ম্যানেজার।

 ফ্রেড, মহিলা বললেন। এরাই এখন দায়িত্বে আছে।

ও, ছেলেদের দিকে চেয়ে মাথা সামান্য নোয়ালো ম্যানেজার। ওরা দেখলো, ঝিক করে উঠেছিলো: যে জিনিসটা, ওটা বেতের রূপার হাতল-মুঠো করে ধরার জন্যে। তাহলে তোমাদেরকেই বলি। প্রফেসর হোফারের কাছ থেকে কিছু জিনিস কিনে এনেছো তোমরা, মিস্টার রিগ ডেনবারের জিনিস। ওগুলো ফেরত চাইছেন আমাদের কাউন্টেস, মহিলাকে দেখালো সে। দাম অবশ্যই দেবো। যা দিয়ে কিনেছ, তার ডাবল।

দামী কিছু আছে নাকি ওগুলোর মধ্যে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

দামী? তা তো আছেই। যতো ফালতু জিনিসই হোক না কেন, মৃত ভাইয়ের। জিনিস, বোনের কাছে তার দাম অসাধারণ। ও হ্যাঁ, কাউন্টেস মিস্টার ডেনবারের বোন।

ভুরু কোঁচকানো রবিন। আপনি সত্যি কাউন্টেস?

আমার মরহুম স্বামী কাউন্ট ছিলেন, হেসে বললেন মহিলা। আর ডেনবার। আমার বড় ভাই, বিশ বছরের বড়। আমাদের মধ্যে মিল ছিলো না খুব একটা। তাছাড়া ভাই ছিলো একটু অন্য রকম, খামখেয়ালী, শামুকের মতো কেমন যেন গুটিয়ে রাখতে নিজেকে। এই দেখোনা, অসুখে ভুগে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল, একবার জানালো না পর্যন্ত আমাকে।

আফ্রিকায় ছিলাম আমরা, বুঝেছো? কাউন্টেস থামতেই বলে উঠলো তার ম্যানেজার। কাউন্টের বাড়িতে পৌঁছলো প্রফেসরের চিঠি, সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হলো আফ্রিকায়। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম। তা-ও দেরি হয়ে গেল। এসে দেখি, বেচারা মানুষটার শেষ স্মৃতিগুলোও বিক্রি করে দিয়েছেন প্রফেসর। ওগুলো ফেরত পেলে খুবই খুশি হবেন কাউন্টেস।

বসুন, নিয়ে আসছি, রবিনকে নিয়ে বেরিয়ে এলো কিশোর।

একধারে কাজ করছে ইয়ার্ডের কর্মচারী দুই ব্যাভারিয়ান ভাই বোরিস আর রোভার। জিনিসগুলো খুঁজে না পেয়ে, কোথায় রাখা হয়েছে–ওদেরকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

কয়েক মিনিট পর অফিসে ফিরে এলো দুই গোয়েন্দা।

সরি, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো কিশোর। কাপড়গুলো ছাড়া আর সব বিক্রি হয়ে গেছে।

ওগুলো রেখে দাও, বললো ম্যানেজার। আর কিছুই নেই? ছবিগুলোও না?

এটাই অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে, বললো কিশোর। কতো ভালো ভালো ছবি কিনে এনে ফেলে রাখি, পড়ে থেকে নষ্ট হয়, আর এই ছবিগুলো আনতে না আনতেই বিক্রি হয়ে গেল!

কে নিলো?

মাথা নাড়লো কিশোর। শুধু কেনার রেকর্ড রাখি আমরা, মিস্টার ব্রাউন, বিক্রির রাখি না। লোকে আসে, পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায়। পুরনো জিনিস, গ্যারান্টি তো আর দিতে হয় না, তাই রশিদও লাগে না। আমাদের কর্মচারী বোরিস এক লোকের কাছে সবগুলো ছবি বেচে দিয়েছে। কার কাছে, কিছুতেই মনে করতে পারছে না। পারার কথাও নয় অবশ্য।

আমার কপালই বোধহয় খারাপ, হাসি চলে গেছে কাউন্টেসের মুখ থেকে।

কোনো ভাবেই কি খোঁজ বের করা যাবে না? জিজ্ঞেস করলো ম্যানেজার।

উজ্জ্বল হলো কিশোরের চোখ। চেষ্টা করে দেখতে পারি, যদি…, দ্বিধা করতে লাগলো সে।

ভ্রূকুটি করলেন মহিলা। যদি কি, ইয়াং ম্যান? বলো, বলে ফেলো।

যদি আমাদেরকে ভাড়া করেন আপনারা। আমরা গোয়েন্দা। …এই যে, আমাদের কার্ড। পুলিশ চীফের সার্টিফিকেটও আছে আমাদের কাছে, চাইলে দেখাতে পারি।

আবার হাসি ফুটলো কাউন্টেসের মুখে। কিন্তু…

কোনো কিন্তু নেই, কাউন্টেস, বাধা দিয়ে বললো ম্যানেজার। আমরা এখানে নতুন। আর ওরা এখানে থাকে, জায়গাটায়গা চেনে। তাছাড়া গোয়েন্দা। পুলিশ চীফ সার্টিফিকেট দিয়েছে বলছে যখন, নিশ্চয় যোগ্যতা আছে ওদের। খুঁজুক না। খুঁজে বের করতে পারলে তো ভালোই।

বেশ, মাথা কাত করলেন মহিলা। তুমি যখন বলছো… ভাইয়ের আঁকা জিনিস, ওগুলো আমার চাই। দেখে তাকে মনে তো করতে পারবো।

বের করে দেবো আমরা, ম্যাডাম, কিশোর বললো।

পারবে তো?

পারবো।

গুড। তা কার্ডে তো দেখলাম তিনজনের নাম, আরেকজন কোথায়?

নেই এখন। বাড়িতে কাজটাজ করছে হয়তো। ওর নাম মুসা আমান। আমি কিশোর পাশা, আর ও রনি মিলফোর্ড।

ঠিক আছে, ভাড়া করলাম তোমাদেরকে, বললো ম্যানেজার। উপকূলের কাছে সী বীচ মোটেলটা চেনো তো? ওখানেই উঠেছি আমরা। দরকার হলে যোগাযোগ কোরো। এক হপ্তা থাকবো। তারপর ইউরোপে ফিরে যাবো। গুড লাক, বয়েজ।

গাড়িতে উঠে চলে গেল দুজনে।

কিশোর, বলে তো দিলে খুঁজে দেবে, কিন্তু কিভাবে…

থেমে গেল রবিন। কিশোর চেয়ে রয়েছে গেটের দিকে। ছোট নীল একটা সেডান ইয়ার্ডের বাইরে দাঁড়িয়েছিলো, মার্সিডিজটা বেরোতেই ওটার পিছু নিয়েছে।

আশ্চর্য! বললো গোয়েন্দাপ্রধান।

কী?

নিশ্চয় রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলো।

অনুসরণ করছে বলছো?

কিশোর জবাব দেয়ার আগেই দেখা গেল, সাইকেল চালিয়ে গেট দিয়ে ঢুকছে রোগাটে এক কিশোর। মাথায় কালো চুল। প্রফেসর হোফারের ছেলে রিকি।

অফিসের বাইরে বেরোলো দুই গোয়েন্দা।

ওদের দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো রিকি, এই যে! কাউন্টেস এসেছিলো?

হ্যাঁ। এইমাত্র গেল, জবাব দিলো রবিন।

ডেনবারের জিনিসগুলো দিয়ে দিয়েছো?

না, বললো কিশোর। প্রায় সবই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ওদেরকে কথা। দিয়েছি, খুঁজে বের করে দেবো।

হুউফ! বাঁচা যাবে তাহলে। বিকেলে আমাদের ওখানে গিয়েছিলো। বাবা। বিক্রি করে দিয়েছে শুনে কাউন্টেস যা রাগ করলো না। বাবাকে ধমকাতে শুরু করলো। বললো, চিঠি যখন দিয়েছে, আরও কিছুদিন দেখা উচিত ছিলো। মহিলাকে শান্ত করলো তার ম্যানেজার। বুঝিয়ে বললো, প্রফেসরের জানার কথা নয় যে ডেনবারের এক বোন আছেন। যাই হোক, শান্ত হলো মহিলা। তবে বাবা চিন্তায় পড়ে গেছে। তার ধারণা, জিনিসগুলো না পেলে গোলমাল কররে কাউন্টেস।

আচ্ছা, রিকি, ওরা, যখন তোমাদের বাড়ি গেল, একটা নীল সেডান দেখেছো?

নীল সেডান…? ভাবলো রিকি। হ্যাঁ, দেখেছি। মার্সিডিজটা চলা শুরু করতেই ক্যানিয়ন রোডের মোড় থেকে বেরোলো নীল গাড়িটা। ওরকম গাড়ি ওখানে কারও নেই। প্রতিবেশী যারা আছে, সবার গাড়ি চিনি আমি। থাকেই তো.। অল্প কয়েকজন। কেন?

আমিও দেখলাম গাড়িটা। মার্সিডিজকে ফলো করছে।

কাউন্টেসের ওপর নজর রাখছে? মানে স্পাইইং?

তাই তো মনে হলো, চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে। প্রথমে একটা রহস্যময় লোক চুরি করে ঢুকলো তোমাদের ঘরে। এখন কাউন্টেসকে ফলো করছে কে জানি। এর কারণ নিশ্চয় রিগ ডেনবারের জিনিসগুলো। কোথায় যেন একটা রহস্য আছে।

দামী কিছু ছিলো নাকি ডেনবারের কাছে? প্রশ্ন করলো রবিন।

কি জানি, নথি, এখনও বুঝতে পারছি না। আগে ডেনবারের জিনিসগুলো খুঁজে বের করতে হবে, তারপর বুঝতে পারবো!

কে কিনেছে? জিজ্ঞেস করলো রিকি। জানো?

না।

তাহলে, অবাক হলো রিকি, কি করে বের করবে?

ভূত-থেকে-ভূতে।

.

০৪.

ভূত-থেকে-ভূতে! হাঁ হয়ে গেল রিকি। তোমাদের পোষা নাকি? ভূত তাহলে। সত্যি আছে?

আজকাল অনেক বিজ্ঞানীও বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছেন, ভূত আছে, বললো, কিশোর। তবে আমাদের ভূত সেই ভূত নয়।

তাহলে কোন ভূত?

বাচ্চা ছেলেমেয়ের দল, হেসে বললো রবিন।

তবুও কিছুই বুঝতে পারলো না রিকি।

গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। ফিরে এসেছেন কিশোরের চাচা-চাচী। এবার তার ছুটি। রিকি আর রবিনকে নিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকতে চললো।

তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার দেখে দ্বিতীয়বার হাঁ হলো রিকি। আর তৃতীয়বার হলো ভূত-থেকে-ভূতে কি, সেটা জেনে। বললো, সব্বোনাশ! কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তো দুনিয়ার সমস্ত ছেলেমেয়ে জেনে যাবে!

না, তা জানবে না, হেসে বললো কিশোর। যেতো, যদি ভাষা সমস্যার সমাধান করা যেতো। যদি দুনিয়াময় একটা সাধারণ ভাষা চালু থাকতো। যাই হোক, রকি বীচ আর আশপাশের এলাকার ওরা খুব শীঘ্রি জেনে যাবে।

আনুমানিক কতক্ষণ? রাতে ডিনারের পর লস অ্যাঞ্জেলেসে যাবে বাবা। আমাকেও নিয়ে যাবে। খবর পাওয়া যাবে কখন?

সকালের আগে না। ডিনারের পরই বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে বাড়ি থাকে। ফোন শুরু করবে ওরা তখনই। রাতেই জানাজানি হয়ে যাবে। খবর আসতে আসতে সকাল।

পুরস্কারের ব্যবস্থা করবো নাকি? জিজ্ঞেস করলো রবিন।

তা তো করতেই হবে, কিশোর বললো। আগে বলবো না, কি দেবো। আনুক আগে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবো।

রিকি চলে গেল।

প্রথমেই মুসাকে ফোন করলো কিশোর। সব কথা জানালো। বললো, মুসাও যেন তার পাঁচ বন্ধুকে ফোন করে দেয়।

সন্ধ্যা আটটার মধ্যেই রকি বীচের সমস্ত ছেলেমেয়ের জানা হয়ে গেল খবরটা।

.

পরদিন সকাল নটায়, হেডকোয়ার্টারে অপেক্ষা করছে তিন গোয়েন্দা। বার বার তাকাচ্ছে টেলিফোনের দিকে, কখন বেজে ওঠে!

অনেক আজেবাজে জিনিসের খোঁজ দেবে, বললো, কিশোর। তবে। আসলগুলোও পাওয়া যেতে পারে।

দশটা বাজলো।

ফোন বাজলো না।

কিশোরের বিশ্বাসে চিড় ধরতে শুরু করলো। মুসা উসখুস করছে। রবিন স্থির চোখে ফোনের দিকে চেয়ে আছে তো আছেই।

ঠোঁট কামড়ালো গোয়েন্দাপ্রধান। এতোক্ষণে ফোন আসা উচিত ছিলো।

দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনায় টোকার শব্দ হলো, চমকে উঠলো তিনজনেই। একে অন্যের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো ওরা। শেষে রবিন উঠে গিয়ে ঢাকনার হুক খুলে দিলো। উঠে এলো হোফার।

তোমরা এখনও এখানে বসে আছো? ভুরু কুঁচকে বললো সে। ওদিকে যে ইয়ার্ড ভরে গেছে…

ইয়ার্ড ভরে গেছে! কিশোর অবাক।

কেন, জানো না? ওদের আসতে বলোনি?

এখানে চলে এসেছে নাকি? সর্বনাশ হয়েছে। কিন্তু ওদের তো ফোন করার কথা…

কিশোর, লজ্জিত কণ্ঠে বললো মুসা, আমাদের ফোন নম্বর দিতে ভুলে গেছি। শুধু বলেছি, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে যেন যোগাযোগ করে।

আমিও তাই করেছি, মুসার কথার প্রতিধ্বনি করলো যেন রবিন।

কিশোরের মুখও লাল হয়ে গেল। পেপারওয়েট সরিয়ে মেসেজটা টেনে নিলো, আগের দিন সন্ধ্যায় যেটা লিখেছিলো। ফোন নম্বর লেখেনি। মেসেজটা দেয়ার সময় রবিন আর মুসাও ভুলটা ধরতে পারেনি।

ভুল হয়েছে, কি আর করা? হাত নাড়লো কিশোর। চলো, বেরোই।

রিকি, ভয় ফুটেছে, মুসার চোখে, অফিসে মেরিচাচী আছে?

দেখলাম না তো। রাশেদ আংকেলকেও না। শুধু বোরিস আর রোভার।

কিশোর, করুণ হয়ে উঠেছে মুসার চেহারা। আমার না গেলে হয় না?

এমন ভাবে দম নিলো কিশোর, যেন গভীর পানিতে অনেকক্ষণের জন্যে ডুব দেবে। চারজনেও সামলাতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। চলো।

.

বাইরে প্রচণ্ড কোলাহল।

আল্লাহরে আল্লাহ! গুঙিয়ে উঠলো মুসা। তুমিই জানো!

আরে, এ-তো খালি আসতেই আছে! চোখ বড় বড় হয়ে গেছে রিকির।

স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর।

রবিন নীরব।

বাচ্চা ছেলেমেয়েতে ভরে গেছে ইয়ার্ডের চত্বর। কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কেউ ছুটছে, কেউ কেউ আবার জঞ্জালের ওপর উঠে বসে আছে। চেঁচাচ্ছে সবাই। শয়ে। শয়ে, যেন পিঁপড়ের দল। ওদের মাঝখানে পড়ে যেন হাবুডুবু খাচ্ছে বিশালদেহী দুই ব্যাভারিয়ান। ইয়ার্ডের জিনিস যার যেটা খুশি তুলে নিচ্ছে বাচ্চারা, তাদের। হাত থেকে কেড়ে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে দুই বেচারা! ছেলেমেয়েরা কেউ এসেছে, সাইকেলে, কেউ স্কুটারে। বেশি বয়েসী কিছু ছেলেকেও দেখা গেল, ওরা এসেছে মোটর সাইকেল নিয়ে। গোটা দুই গাড়িও আছে। রঙ মেখে সঙ সাজে যে সার্কাসের ভাড়-গাড়িদুটোরও করা হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা। আসল রঙ আর। চেনার জো নেই এখন।

কি চাও তোমরা! আর সহ্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলো রোভার।

কে বলেছে আসতে? চেঁচালো বোরিস।

শুরু হলো তারস্বরে চিৎকার। কারও কথা কিছু বোঝা গেল না। তাড়াতাড়ি কানে আঙুল দিলো দুই ভাই।

হঠাৎ তিন গোয়েন্দার ওপর চোখ পড়লো একটা ছেলের। চেঁচিয়ে বললো, ওই তো, ওই যে এসে গেছে!

এক মুহূর্ত দেরি করলো না আর মুসা। পাঁই করে ঘুরলো, ছুটে পালানোর জন্যে। পারলো না। চোখের পলকে ঘিরে ফেলা হলো তাদেরকে। ধাক্কা খেয়ে আরেকটু হলেই মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলো কিশোর। ফ্যাকাশে হয়ে গেছে চেহারা।

কিশোর! ভিড়ের ভেতর থেকে শোনা গেল রবিনের চিৎকার। কিছু একটা। করো!…ভর্তা করে ফেললো…

ওদেরকে বাঁচালো রিকি। তাড়াতাড়ি একটা তেলের ড্রামের ওপর উঠে জংলী নাচ জুড়ে দিলো। সেই সঙ্গে বিচিত্র ভাষায় গান। বাচ্চাদের জর সরে গেল তার দিকে।

এই সুযোগে ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে কয়েকজনকে সরিয়ে-কিশোরের কাছে চলে এলো মুসা। বললো, জলদি! পুরস্কারের কথা বলো! হাতে কিছু ধরিয়ে দিয়ে বিদেয় করতে না পারলে মারা পড়বো।

কি…ক্বি দেবো… এই হৈ-চৈয়ে কিশোরের মাথায়ও কিছু ঢুকছে না। একটা পিপার মধ্যে আর্মিদের ব্যাজ আছে অনেকগুলো, অনেক পুরনো। টেক্সাসে লড়াই করেছিলো যারা…

জলদি আনো গিয়ে… বলতে বলতেই কোনোমতে এসে ড্রামের ওপর উঠলো মুসা, রিকির পাশে। হাত তুলে চেঁচিয়ে বললো, শোনো তোমরা! এই চুপ! আমার কথা শোনো! থেমে গেল কোলাহল। দারুণ একেকখান ব্যাজ পুরস্কার পাবে। সেই ওল্ড ওয়েস্টের জিনিস। আমি শিওর, তোমাদের কারও কাছে নেই একটাও। ওরকম হট্টগোল করলে কাউকে দেয়া হবে না। এদিকে মুখ করে লাইনে। দাঁড়াও। পাঁচ লাইন। যারা সুটকেস এনেছে, তারা এক লাইন করো। পেঁচা আর মূর্তিওয়ালারা আরেক লাইন। বিনকিউলারদের তিন নম্বর লাইন। চার নম্বর লাইনে দাঁড়াবে ছুরি-চামচওয়ালারা। আর শেষ লাইনটা হবে ছবিওয়ালাদের। কোনো হৈ চৈ নয়, ঠেলাঠেলি নয়। হ্যাঁ, দাঁড়িয়ে যাও। তারপর আমরা দেখবো, কে কি এনেছো।

কথা শুনলো ছেলেমেয়েরা। দ্রুত কিভাবে লাইনে দাঁড়াতে হয়, স্কুলের ট্রেনিং আছে। দেখতে দেখতে তৈরি হয়ে গেল পাঁচটা লাইন। এমনকি বেশি বয়েসী ছেলেগুলোও দাঁড়িয়ে গেল সারির পেছনে।

ব্যাজের পিপেটা নিয়ে আসতে বললো কিশোর বোরিসকে।

প্রথম লাইন থেকে শুরু করলো তিন গোয়েন্দা, তাদেরকে সাহায্য করলো, রিকি। পিপেটা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রইলো বোরিস আর রোভার।

কে কি এনেছে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো তিন গোয়েন্দা।

যে যা এনেছে, রেখে দিলো, তারপর একটা করে ব্যাজ ধরিয়ে দিলো। একেকজনের হাতে।

এক ঘন্টা পর খালি হয়ে গেল ইয়ার্ডের চতৃর। স্টাফ করা পেঁচা, পুরনো সুটকেস দুটো, আর রূপার চামচ, কাঁটা চামচ, ছুরি, সবই পাওয়া গেল। পাওয়া। গেল না শুধু ভেনাসের মূর্তিটা আর ছবিগুলো।

মূর্তিটা কোথায় আছে, একটা মেয়ে বলেছে আমাকে, রবিন বললো। ঠিকানাও বলেছে। এক মহিলার কাছে আছে ওটা। বিক্রি করবে না।

তুমি গিয়ে একবার বলে দেখো, কিশোর বললো। বুঝিয়ে বললে হয়তো বিক্রি করতেও পারে।…আর মুসা, তুমি কাউন্টেসকে ফোন করো। বলবে, কোনটা কোটা পাওয়া গেছে।

চলে গেল দুই সহকারী গোয়েন্দা।

আরেকটু হলেই মাথা খারাপ করে দিয়েছিলো, ঘাসের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়েছে রিকি। আরিব্বাপরে, কি কাণ্ড! তবে কাজ হয়েছে। এখন মূর্তিটা আর ছবিগুলো পেলেই…

ছবিগুলো মনে হয় শহরের বাইরে চলে গেছে, বললো কিশোর। রকি বীচে থাকলে… থেমে গেল সে। চকচকে একটা গাড়ি ঢুকছে গেট গিয়ে।

ওদের কাছে এসে ঘ্যাচ করে থামলো গাড়িটা।

দরজা খুলে বেরোলো লম্বা, লিকলিকে একটা ছেলে, তাল পাতার সেপাই। কিশোরের দিকে চেয়ে দাঁত বের করে হাসলো, হাতে একটা ছবি।

.

০৫.

এটাই খুঁজছো, তাই না শার্লক পাশা? ছবিটা তুলে দেখালো ছেলেটা।

শুঁটকি! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। তোমার এখানে কি?

খিকখিক করে হাসলো তিন গোয়েন্দার পুরনো শত্রু টেরিয়ার ডয়েল, ওরফে শুঁটকি টেরি। আমার প্রশ্নের জবাব দাও।

 ছবিটা চিনতে পেরেছে রিকি, মুখ খুলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই তাড়াতাড়ি বলে ফেললো কিশোর, না, বোধহয় না। কোথায় পেলে এটা, শুঁটকি?

সেটা আমার ব্যাপার।

কোথায় পেয়েছে, আমাদেরও জানা দরকার, বললো রিকি। বেচতে পারবে। কিনা বুঝতে চাই।

মানে? ফ্যাকাশে হয়ে গেল টেরিয়ার।

আমাদের এখান থেকে কেনোনি… শুরু করলো কিশোর। শেষ করলো রিকি, তারমানে কোনোখান থেকে চুরি করে এনেছে।

না! সরু হয়ে এলো টেরিয়ারের চোখের পাতা। যাক বোঝা গেল, এটাই খুঁজছিলে। আমিও তাই ভেবেছি।

হ্যাঁ, এটাই খুঁজছি, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। কিনতে চাই।

কিন্তু আমি তো বেচবো না, কুৎসিত হাসি হেসে গাড়ির দিকে এগোলো টেরিয়ার।

ওকে থামানোর আগেই গাড়িতে ঢুকে গেল। স্টার্ট নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। ইয়ার্ড থেকে।

অফিস থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো মুসা। শুঁটকির গাড়ি না?

হ্যাঁ। ডেনবারের একটা ছবি দেখাতে এসেছিলো, বললো রিকি

জিজ্ঞেস করলাম বেচবে কিনা, রাজি হলো না, কিশোর জানালো।

খাইছে! মিস্টার ব্রাউনকে তো আসতে বলে দিলাম। আসছে।

আসুক। যা পেয়েছি সেগুলোই নিয়ে যাবে।

 ব্রাউনের আসার অপেক্ষায় রইলো ওরা। ইতিমধ্যে ফিরে এলো রবিন। বললো, অনেক চেষ্টা করলাম। মূর্তিটা বেচবেই না মহিলা।

মার্সিডিজ নিয়ে এলো ফ্রেড ব্রাউন। যা যা পাওয়া গেছে, ওগুলো দেখেই হাসি ছড়িয়ে পড়লো মুখে। বাহ, ভালো ডিটেকটিভ তো তোমরা। এতো তাড়াতাড়ি কাজ করে ফেলেছে।

কিন্তু মূর্তিটা আনতে পারিনি, রবিন বললো। মিসেস ওয়াগনার নামে এক মহিলার কাছে আছে, বেচতে রাজি নয়। ঠিকানা, একশো তিন নম্বর রোজাস স্ট্রীট।

টেরিয়ার ডয়েলের কথা বললো কিশোর। ছবি নিয়ে এসেছিলো, সে-কথাও জানালো।

ঠিক আছে, ঠিকানা তো পেলাম, বললো ব্রাউন। মিসেস ওযাগনারের সঙ্গে কথা বলে দেখবো। আর ছেলেটার নাম যেন কি বললে…ও, টেরিয়ার ডয়েল। রকি বীচেই থাকে। বড়লোকের ছেলে। এই তো?

হ্যাঁ, স্যার, মাথা ঝাঁকালো মুসা। সৈকতের কাছে বিরাট এক বাড়ি আছে।

তাহলে, আশা আছে ছবিগুলো জোগাড় করবে তোমরা। কাউন্টেস খুব খুশি হবেন। হাজার হোক, ভাইয়ের শেষ স্মৃতি… হ্যাঁ, এই জিনিসগুলোর দামাটা দিয়ে দিই। আর প্রত্যেকটা জিনিসের জন্যে পাঁচ ডলার করে পুরস্না না বলি, গোয়েন্দাগিরির ফিস, হলো গিয়ে পঁচিশ ডলার। খুশি তো?

হ্যাঁ, খুব খুশি, দাঁত বের করে হাসলো মুসা।

বেশ, ব্রাউনও হাসলো। তাহলে ধরে নিচ্ছি ছবিটাও শীঘ্রি পাবো।

 জিনিসগুলোর জন্যে রশিদ লিখে দিলো কিশোর। সবাই মিলে ওগুলো তুলে দিলো গাড়িতে। ছেলেদের দিকে চেয়ে সামান্য মাথা নুইয়ে, হাতের বেতটা দোলাতে দোলাতে গিয়ে গাড়িতে উঠলো ব্রাউন। চলে গেল।

রিকি বললো, আমিও যাই। বাবাকে শান্ত করি গিয়ে।

.

লাঞ্চের পর হেডকোয়ার্টারে মিলিত হলো তিন গোয়েন্দা। চিন্তিত দেখাচ্ছে। কিশোরকে। বললো, শোনো, শুঁটকি ছবিটা বেচার জন্যে আনেনি। আমাদের দেখিয়ে শিওর হয়ে গেল।

কেন? রবিনের প্রশ্ন।

জানি না। হয়তো, সে জানে অন্য ছবিগুলো কোথায় আছে। একটা ছবি দেখিয়ে শিওর হয়ে গেল। বাকিগুলোও আনবে আমাদের কাছে, একসঙ্গে বিক্রি করতে, চড়া দাম হাঁকবে। কিংবা অন্য কারো কাছে বেচবে। হতে পারে, সেই নীল সেডান গাড়িওয়ালার কাছে।

গাড়িটা কার, জানতে পারলে হতো, বিড়বিড় করলো মুসা।

সেকথা এখন ভাবছি না, বললো কিশোর। আগে কুড়িটা ছবি খুঁজে বের করা দরকার। আর সেটা করতে হলে শুঁটকির মাধ্যমেই করতে হবে।

বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে দেখবো নাকি? পরামর্শ দিলো রবিন।

ঠিক বলেছো। তাহলেই বেচে দেরে, মুসারও তা-ই ধারণা।

টেলিফোন লাইনের সঙ্গে লাগানো স্পীকারের সুইচ অন করলো কিশোর। রিসিভার তুলে ডায়াল করলো। শুঁটকিই ধরলো ওপাশ থেকে তুলেই কড়া গলায় বললো, দেখো, শার্লকের বাচ্চা, আমাকে জ্বালিও না। আমি ব্যস্ত।

শুঁটকি, শোনো, শান্ত রইলো কিশোর। ডারল টাকা দেবো তোমাকে। ছবিটা দিয়ে দাও।

ছবি? কিসের ছবি? আকাশ থেকে পড়লো যেন টেরিয়ার, পিত্তি জ্বালানো, হাসি হাসলো।

জানো না কোনটা? রাগে চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। একটু আগে যেটা দেখিয়ে গেছে, পচা শুঁটকি কোথাকার!!

তাই? দেখিয়ে গেছি নাকি? হি হি করে হাসলো টেরিয়ার। কই, আমার তো মনে পড়ে না। ওহহো, বুঝেছি, স্বপ্নে দেখেছো। রাখি, আঁ? গুড বাই।

কেটে গেল লাইন।

একে অন্যের দিকে তাকালো তিন গোয়েন্দা।

শয়তানটার ওপর নজর রাখতে হবে, মুসা বললো। ছায়ার মতো লেগে থাকতে হবে পেছনে।

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। ওর গাড়ি আছে, সেকেণ্ড। আর আমাদের আছে শুধু সাইকেল। তবে, চাচার পিকআপটা নিতে পারি, বোরিসকেও ড্রাইভার বানাতে পারি। কিন্তু কোথায় যেতে বলবো? শুঁটকি কোত্থেকে ছবিগুলো এনেছে, তাই তো জানি না।

আমাদের হোমারগুলো কাজে লাগাতে পারি, মনে করিয়ে দিলো রবিন। ওর গাড়িতে লাগিয়ে দেবো। তারপর পিছু নেয়া সোজা।

তা বটে, একমত হলো কিশোর। চেষ্টা করা যেতে পারে। চলো, ওর বাড়িতে যাই। আরেকবার কথা বলে দেখি, রাজি করানো যায় কিনা। না পারলে…

কিশোর! এই কিশোর! মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল।

খাইছে! আঁতকে উঠলো মুসা। তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে সর্বদর্শনে চোখ রাখলো। স্পষ্ট দেখতে পেলো মেরিচাচীকে। সাথে একটা লোক রয়েছে।

কে লোকটা? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

জিন্দেগীতে দেখিনি। বেঁটে, মোটা, কালো সুট, মাথায় হ্যাট…আর কিশোর, হাতে একটা ব্যাগের মতো। চ্যাপ্টা, বড়।

এক লাফে উঠে এসে প্রায় ধাক্কা দিয়ে মুসাকে সরিয়ে পেরিস্কোপে চোখ রাখলো কিশোর। হুমম! এরকম কেসেই ছবি রাখে লোকে! জলদি চলো।

<

Super User