আহাম্মক

রিকির জন্যে অপেক্ষা না করেই বিজ্ঞান আকাদেমির অধিবেশন শুরু হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম অপেক্ষা করা হত, আজকাল আর করা হয় না। সে অনেক দিন হল এইসব অধিবেশনে যোগ দেয়া ছেড়ে দিয়েছে। তাই আজ হঠাৎ করে যখন অধিবেশনের মাঝখানে রিকি এসে হাজির হল, সবাই একটু অবাক না হয়ে পারল না। রিকি সবার দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তার স্বভাবসুলভ উদ্ধত ভঙ্গিতে নিজের আসনে গিয়ে বসে। শব্দ করে তার হাতের ব্যাগ থেকে একটা ছোট পানীয়ের শিশি বের করে এক ঢোক খেয়ে শিশিটা টেবিলের উপর রাখে।

বৃদ্ধ সভাপতি রু সচরাচর রিকির উদ্ধত আচার-আচরণকে সযত্নে এড়িয়ে যান, সবাই ভেবেছিল আজও তাই করবেন। কিন্তু রু কী কারণে জানি টেবিলে তাঁর কাগজপত্র ভাঁজ করে রেখে শান্ত গলায় বললেন, রিকি, তুমি তিরিশ মিনিট দেরি করে এসেছ।

রিকি মুখে একটু হাসি টেনে আনার ভান করে বলল, জানি।

সে ক্ষেত্রে তোমার অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে।

তাই নাকি? রিকি গলার স্বরে ব্যঙ্গটুকু আড়াল করার কোনো চেষ্টা করল না।

এসব নিয়মকানুন বেশিরভাগই স্বাভাবিক ভদ্রতা, তুমি জান না এতে আমি খুব অবাক হই না। রু হঠাৎ অত্যন্ত কঠিন স্বরে বললেন, তোমার অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন আছে রিকি।

রিকি কিংবা অন্য কেউই মহামান্য রুকে এ রকম কঠিন স্বরে কথা বলতে দেখে নি। মুহূর্তের মাঝে পরিবেশটি আশ্চর্য রকম শীতল হয়ে যায়।

রিকি একটু বিপন্ন অনুভব করে, কষ্ট করে নিজের গলার স্বরকে স্বাভাবিক রেখে বলল, ঠিক আছে, অনুমতি নিচ্ছি।

নাও।

আমি কি অধিবেশনে যোগ দিতে পারি?

রু তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, না।

ঘরে বজ্ৰপাত হলেও মনে হয় কেউ এত অবাক হত না। বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা এত প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী যে পৃথিবীর শাসনতন্ত্র পর্যন্ত তাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। রিকির ফর্সা মুখ অপমানে টকটকে লাল হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, আপনি আমাকে সবার সামনে অপমান করার চেষ্টা করছেন।

না।

তাহলে? বিজ্ঞান আকাদেমির তোমাকে আর প্রয়োজন নেই। তোমাকে এই ছোট একটি সত্যি কথা জানানোর চেষ্টা করছি।

সেই সত্যি কথাটি কার মাথা থেকে বের হয়েছে?

আমার।

আপনাকে কে এই ক্ষমতা দিয়েছে?

কেউ দেয় নি। রু আস্তে আস্তে বললেন, আমি নিজেই নিয়েছি।

বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যদের ক্ষমতা প্রায় ঈশ্বরের মতো। তাদেরকে আদেশ দেওয়া যায় না।

হ্যাঁ, তাদের ক্ষমতা দিয়েছে পৃথিবীর সাধারণ মানুষ। তারা যখন দেখবে সেই ক্ষমতা অপব্যবহার করা হচ্ছে, সে-ক্ষমতা তারা আবার নিয়ে নেবে। তুমি তোমার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছ রিকি।

কী করেছি আমি?

অনেক কিছু করেছ। সবচেয়ে দুঃখজনক হল তোমার স্ত্রীর মৃত্যু। তুমি তাঁকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছ রিকি।

রিকি চমকে উঠে বৃদ্ধ রুয়ের মুখের দিকে তাকাল। রু শান্ত গলায় বললেন, সাধারণ মানুষ হলে তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত। বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা সব নিয়মকানুনের উর্ধ্বে, তাই তোমাকে স্পর্শ করা হয় নি।

রিকি কষ্ট করে নিজেকে শান্ত করে বলল, আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি কে। আমি হচ্ছি সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ আনাহাসু রিকিশান, সংক্ষেপে রিকি। চোদ্দ বৎসর বয়সে আমি মহাজাগতিক সূত্রের সপ্তম সমাধান করেছি। সতের বৎসর বয়সে আমার নামে তিনটি ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছে। বাইশ বছর বয়সে আমি বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য হয়েছি, সময়সূত্রের একমাত্র সমাধানটি আমার নিজের হাতে করা, নবম সূত্রের রিকি পরিভাষা ব্যবহারিক অঙ্কের জন্যে নূতন জগতের সন্ধান দিয়েছে—

রু হাত তুলে তাকে থামালেন, বললেন, আমরা জানি তুমি অত্যন্ত প্রতিভাবান বিজ্ঞানী।

আমার জন্য পৃথিবীর সাধারণ নিয়ম খাটে না মহামান্য রু। পৃথিবীর দুই-চারটি সাধারণ মানুষের প্রাণ আমার ব্যক্তিগত খেয়াল থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার স্ত্রী অত্যন্ত নির্বোধ মহিলা ছিল।

আমি মৃতদের নিয়ে অসম্মানজনক কথা পছন্দ করি না, রিকি।

রিকি থতমত খেয়ে থেমে যায়, আস্তে আস্তে তার মুখের মাংসপেশি শক্ত হয়ে আসে। টেবিল থেকে পানীয়ের শিশিটি তুলে এক ঢোক খেয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুছে বলল, ঠিক আছে, তা হলে জীবিত ব্যক্তিদের কথাই বলি। এই বিজ্ঞান আকাদেমি হচ্ছে একটা গণ্ডমূর্খের আড়া। এখানকার সবাই হচ্ছে একজন করে নির্বোধ। বিজ্ঞানের সবগুলো শাখায় আমি একা যে পরিমাণ অবদান রেখেছি, আপনারা সবাই মিলে তার এক শ ভাগের এক ভাগ অবদান রাখেন নি।

সেটা নির্ভর করে তুমি অবদান বলতে কী বোঝাও তার উপর। রিকি, তুমি ভুলে যাচ্ছ, বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যদের ব্যক্তিগত গবেষণার সময় কিংবা সুযোগ নেই।

আমাকে সেটা বিশ্বাস করতে বলছেন?

রু কোমল গলায় প্রায় হাসিমুখে বললেন, সেটা তোমার ইচ্ছে রিকি। কিন্তু তুমি যেহেতু বিষয়টি তুলেছ, তোমাকে একটা ঘটনার কথা বলি। প্রায় কুড়ি বছর আগে পশ্চিমের পাহাড়ী অঞ্চলের একটা কৃষিজীবী এলাকার বাচ্চাদের স্কুল থেকে আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম। স্কুলের একজন শিক্ষকের চিঠি—অনেক ঘুরে আমার কাছে এসেছিল। চিঠিতে শিক্ষক লিখেছেন, তাঁর ক্লাসে নাকি একজন অস্বাভাবিক প্রতিভাবান শিশু রয়েছে। আমি শিশুটির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তার বয়স তখন সাত, সে ছয় বৎসর বয়সে মহাজাগতিক সূত্রের প্রথম সমাধানটি করেছিল। সাত বৎসর বয়সে সে সময়ে পরিভ্রমণের উপর প্রায় সঠিক একটা সূত্র দিয়েছিল। আমি তাকে এবং তার পরিবারকে রাজধানীতে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। বাচ্চাটি রাজি হয় নি। সে বিজ্ঞানে উৎসাহী নয়।

রিকি শক্তমুখে বলল, কী নাম তার? কোথায় থাকে?

তাতে তোমার প্রয়োজন কি? তোমাকে যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে, সেই শিশুটি তোমার থেকে অনেক বেশি প্রতিভাবান ছিল। সে ইচ্ছে করলেই আমাদের সাথে এই সভায় থাকতে পারত। কিন্তু সে থাকে নি। যে-বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য হয়ে তোমার এত অহঙ্কার, সেই শিশুটির তাতে বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। পৃথিবীতে তোমার থেকে অনেক বড় প্রতিভাবান মানুষ আছে, তবে হ্যাঁ, তোমার মতো অহঙ্কারী, ক্ষমতালোভী উচ্চাকাঙ্ক্ষী সম্ভবত আর কেউ নেই।

রিকি কী-একটা বলতে চাইছিল, রু হাত তুলে তাকে থামিয়ে বললেন, প্রায় তিরিশ বৎসর আগে মহাজাগতিক মেঘ দিয়ে পৃথিবীতে একটা বিপর্যয় নেমে আসার কথা ছিল। আমরা–এই বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা, সেই বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলাম, তুমি সেই ঘটনার কথা জান?

জানি।

পৃথিবীর ইতিহাসে সেই প্রচেষ্টার কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কেন থাকবে জান?

জানি।

না, তুমি জান না। তোমার জানার ক্ষমতা নেই। তুমি লোভী এবং স্বার্থপর। দশজন প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞানীর একসাথে কাজ করার কি আনন্দ, তুমি কল্পনাও করতে পার না রিকি। পৃথিবীর ইতিহাসে আমাদের প্রচেষ্টার কথা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, কারণ আমরা সবাই একসাথে কাজ করে একটি ভয়ংকর বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলাম। বিজ্ঞানীদের জীবনে এর থেকে বড় সার্থকতা আর কিছু নেই। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে এর কোনো তুলনা হয় না। রিকি, তোমাকে আমাদের প্রয়োজন নেই। তুমি কিংবা তোমার মতো একজন বিজ্ঞানী যে-কাজের জন্যে এত অহঙ্কারী হয়ে যাও, তার প্রত্যেকটিই অন্য কয়জন প্রথম শ্রেণীর বিজ্ঞানী কয়েক বৎসর চেষ্টা করে বের করে ফেলতে পারে। খুব দুঃখের ব্যাপার, তুমি এই সহজ সত্যটি জান না। তুমি আমাদের কোনো কাজে আস না রিকি, তোমাকে আমাদের প্রয়োজন নেই। তুমি এখন যাও, ভবিষ্যতে আর কখনো এসো না।

রিকি ষড়যন্ত্রীর মতো মুখ করে বলল, যদি না যাই?

যাবে। তুমি নিশ্চয়ই যাবে। তুমি অনেক দিন থেকে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছ।

আপনি কেমন করে জানেন?

আমি জানি। আমি বিজ্ঞান আকাদেমির সভাপতি, তাই আমার কাছে সব খবরাখবর আসে। আমি না চাইলেও আসে। আমি জানি, তুমি পৃথিবীর পুরো রথিনিয়ামটুকু নিজের কাছে এনে জমা করেছ। তুমি এখন পালাবে। কোথায় পালাবে জানি না, কিন্তু তুমি পালাবে।

রিকি মুখে একটা ধূর্ত হাসি ফুটিয়ে বলল, আমি পালাব?

হ্যাঁ। কারণ তুমি জান, আমরা বিজ্ঞান আকাদেমির নিয়মকানুন পাল্টে ফেলছি। তোমার মতো মানুষের যেন বিচার করা যায় তার ব্যবস্থা করছি।

রিকি এবারে উচ্চৈঃস্বরে হেসে ওঠে, আমার বিচার করবেন আপনারা? পৃথিবীর মানুষেরা? কখনো শুনেছেন পৃথিবীর মানুষ ঈশ্বরের বিচার করার চেষ্টা করছে?

রু কোনো কথা না বলে ভুরু কুঁচকে রিকির দিকে তাকিয়ে থাকেন।

রিকি উঠে দাঁড়ায়। হাসতে হাসতে বলে, বেশ, চেষ্টা করে দেখেন। আমি যাচ্ছি—এই নির্বোধদের আসরে আমার জন্যে থাকা আর সম্ভব নয়। বিদায়।

কেউ কোনো কথা বলল না, রিকি দরজা খুলে সভাকক্ষ থেকে বের হয়ে গেল।

 

রিকি বের হয়ে যাবার পর কয়েক মুহূর্ত কেউ কোনো কথা বলল না। রু আস্তে আস্তে তাঁর চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন তোমাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ যে তোমরা এই উন্মাদ ব্যক্তিটির সাথে আমার কথোপকথনটি ধৈর্য ধরে শুনলে। তোমরা কেউ যে কোনো কথা বল নি, সে জন্যে আমি সারা জীবন তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।

গণিতবিদ কিরি বললেন, আমরা আপনার ধৈর্য দেখে বিস্মিত হয়েছি মহামান্য রু। একটি ঘুসি দিয়ে তার সবকয়টি দাঁত খুলে না ফেলে কী ভাবে তার সাথে কথা বলা যায় আমার জানা নেই।

অধিবেশন-কক্ষে অনেকে উচ্চৈঃস্বরে হেসে ওঠে। রসায়নবিদ নীষা তরল স্বরে বললেন, ভাগ্য ভালো যে তুমি কথা বলার চেষ্টা কর নি, কিরি। এই বয়সী মানুষের মারপিট দেখতে ভালো লাগার কথা নয়।

আবার অধিবেশন-কক্ষে মৃদু হাসির শব্দ শোনা গেল। রু বললেন, চল, কাজ শুরু করা যাক।

নীষা বললেন, মহামান্য রু, আপনি কি খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিতে চান? রিকির সঙ্গে কথা বলা খুব সহজ ব্যাপার নয়।

ঠিকই বলেছ। মিনিট পনেরর জন্যে বিরতি নেয়া যাক। কী বল?

সবাই সানন্দে রাজি হয়ে যায়।

 

সন্ধেবেলা মহামান্য রু জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলেন, এমন সময় তাঁর সহকারী মেয়েটি নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায়। রু ঘুরে তার দিকে তাকালেন, কিছু বলবে?

কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক আপনার সাথে দেখা করতে চান। কি নাকি জরুরি ব্যাপার।

রু অন্যমনস্কভাবে বললেন, আসতে বল।

প্রায় সাথে সাথেই তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক এসে হাজির হলেন। বয়স্ক ভদ্রলোক, কপালের দুপাশে চুলে পাক ধরেছে। কমনীয় চেহারা, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। অত্যন্ত বিনীতভাবে বললেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত আপনাকে এভাবে বিরক্ত করার জন্য।

রু হাসিমুখে বললেন, কে বলেছে তুমি বিরক্ত করছ? তোমার কাছে আমি যে সব মজার খবর পাই, আর কোথায় সেগুলো পাব বল?

আমি খুব দুঃখিত মহামান্য রু, কিন্তু একটা খবর জানানোর জন্যে আমার নিজের আসতে হল।

কি খবর? রিকি কিছু করেছে?

আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন। মহামান্য রিকি তাঁর গোপন গবেষণাগারে কুরু

সেটা কী জিনিস?

কুরু মহাকাশযানের ইঞ্জিন অত্যন্ত মূল্যবান জিনিস। একটি শেষ করতে প্রায় ছয় বছর সময় নেয়। প্রচণ্ড ক্ষমতাশালী ইঞ্জিন–আন্তঃনক্ষত্র ভ্রমণ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবহার নেই। মহামান্য রিকি কী কাজে ব্যবহার করবেন, সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই।

রু মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, রিকি এখন পালাবে। তুমি দেখ, সে পালাবে। খুব ভয় পেয়েছে আজ।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক কোনো কথা বললেন না, বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যদের নিয়ে কৌতূহল দেখানো শোভন নয়। ক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ঘুরে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে জানানোর জন্যে। ইঞ্জিনটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে আর লাভ নেই, ধরে নাও ওটা গেছে। আমি মহাকাশ কেন্দ্রের সাথে কথা বলে একটা-কিছু ব্যবস্থা করে দেব।

অনেক ধন্যবাদ মহামান্য রু। তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, রু তাঁকে থামালেন। জিজ্ঞেস করলেন, রিকি এখন পর্যন্ত কী করেছে না করেছে তুমি তো সব জান?

জানি।

তার স্ত্রীকে হত্যা করা, রথোনিয়াম জড়ো করা, মুদ্রা অপসারণ, এখন কুরু মহাকাশযানের ইঞ্জিন–

পরিচালক ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বললেন, জ্বি, জানি।

তুমি খুব সাবধানে এইসব খবর বাইরের পৃথিবীর কাছে গোপন রেখেছ?

জ্বি। বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যদের অবমাননা করে কোনো ধরনের খবর প্রকাশ করা আমাদের নীতির বিরুদ্ধে।

রু একটু ভেবে বললেন, রিকি আজকালকের ভিতরে উধাও হয়ে যাবে। কোথায় যাবে ঠিক বলা যাচ্ছে না, কিন্তু উধাও হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সে উধাও হবার পর তার সম্পর্কে তুমি যা জান, সবকিছু খবরের কাগজে প্রকাশ করে দিতে পারবে?

পরিচালক ভদ্রলোক ভয়ানক চমকে উঠলেন, কী বলছেন আপনি।

রু শান্ত গলায় বললেন, পারবে? আপনি যদি বলেন নিশ্চয়ই পারব। কিন্তু—

কিন্তু কি?

বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা আমাদের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তাঁরা পৃথিবীর জন্যে যে অবদান রেখেছেন, তার কোনো তুলনা নেই, তাঁদের কোনো-একজন যদি ছোটোখাটো কোনো ভুলত্রুটি করে থাকেন, সেটা সারা পৃথিবীকে জানানোর সত্যিই কী কোনো প্রয়োজন আছে?

রু আস্তে আস্তে মাথা নাড়লেন, আছে। বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্যরা ঈশ্বর নয়, তারা মানুষ। তাদের সাধারণ মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া ঠিক না। তুমি আমার এই অনুরোধটি রাখ।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক বিদায় নেয়ার পর রু অনেকক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলেন, বিজ্ঞান আকাদেমির কাঠামোতে একটি বড় রদবদল করতে হবে, এভাবে আর চালানো যায় না। আজ একজন রিকি বের হয়েছে, ভবিষ্যতে যদি দশজন রিকি বের হয়, তখন কী হবে?

সহকারী মেয়েটি নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করে বলল, মহামান্য রু, আপনার জন্য কিছু খাবার আনব?

না, এই তো খেলাম একটু আগে। বয়স হয়ে গেলে বেশি খিদে পায় না।

তা হলে কোনো ধরনের পানীয়? ফলের রস বা অন্য কিছু?

না না, কিছু লাগবে না। আমার জন্যে তুমি ব্যস্ত হয়ো না। যদি পার তা হলে দেখ আমাদের যাদুঘরের মহাপরিচালককে কোথাও পাওয়া যায় কী না। জরুরি কিছু নয়, এমনি একটু কথা বলব।

সহকারী মেয়েটি হাসি গোপন করে সরে গেল। মহামান্য রু নিজে থেকে একজন মানুষের সাথে দেখা করতে চাইছেন, এর থেকে জরুরি খবর পৃথিবীতে কি কিছু হতে পারে? কোমল স্বভাবের এই বৃদ্ধ কি সত্যি জানেন, কী প্রচণ্ড তাঁর ক্ষমতা?

 

কিছুক্ষণের মাঝেই রু তাঁর ঘরের হলোগ্রাফিক্স স্ক্রিনে যাদুঘরের মহাপরিচালককে দেখতে পেলেন। মহাপরিচালক দুই হাতে নিজের টুপি ধরে রেখে ফ্যাকাসে মুখে বললেন, মহামান্য রু, আপনি আমায় খোঁজ করছিলেন?

হ্যাঁ, করছিলাম। জরুরি কোনো ব্যাপারে নয়, এমনি একটা কাজে। কথার সুর পাল্টে বললেন, আপনার যাদুঘর কেমন চলছে?

ভালো, খুব ভালো। তাড়াতাড়ি কথা বলতে গিয়ে মহাপরিচালকের মুখে কথা জড়িয়ে যায়, গত মাসে আমরা নূতন একটা সভ্যতা আবিষ্কার করেছি, বিশ্বয়কর একটা সভ্যতা। অংশবিশেষ আমাদের যাদুঘরে আনা হয়েছে।

তাই নাকি? একদিন আসতে হয় দেখতে।

আসবেন? আপনি আসবেন মহামান্য রু? মহাপরিচালকের চোখ উত্তেজনায় চকচক করতে থাকে, আপনি শুধু আমাকে জানান, কবে আসবেন।

আমার নাতনি আমার সাথে দেখা করতে আসবে সামনের সপ্তাহে। তাকে নিয়ে আসব। নাতনির বয়স ছয়। সে কিছুতেই যাদুঘরে যেতে চাইবে না, বলবে চিড়িয়াখানাতে নিয়ে যেতে। আমি অবশ্যি যাদুঘরেই আসব। আমার খুব ভালো লাগে। যাদুঘরে যেতে।

যাদুঘরের মহাপরিচালক নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেন না। কী বলবেন বুঝতে না পেরে প্রায় চিৎকার করে বললেন, যাদুঘরকে আমরা নূতন করে সাজাব। নূতন করে–

সে কী!

জ্বি। আপনি আসবেন, কত বড় সম্মান আমাদের যাদুঘরের জন্যে। মহামান্য রু, আপনার প্রিয় রং কি?

কেন?

আপনার প্রিয় রং দিয়ে পুরো যাদুঘর আমরা নূতন করে রং করে নেব।

সে কী! রু ব্যস্ত হয়ে বললেন, পুরো যাদুঘর রং করে ফেলবেন মানে? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?

মহাপরিচালক একেবারে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, আপনার জন্য কিছু-একটা করতে চাই আমরা, আপনি আপত্তি করবেন না মহামান্য রু। আপনাকে বলতেই হবে কী রং আপনার প্রিয়।

রু এবার হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন, সব রংই আমার পছন্দ। ক্যাটক্যাটে হলুদ একটা রং আছে, সেটা বেশি ভালো লাগে না, তা ছাড়া—

সব হলুদ রং সরিয়ে নেব আমরা। পুরো ব্লকে কোনো হলুদ রং থাকবে না। পুরো শহরে–

না না, সেটা করবেন না –কিছুতেই না।

তাহলে বলেন আপনার প্রিয় রং।

নীল, হালকা নীল।

নীল। যাদুঘরের মহাপরিচালক উত্তেজিত হয়ে ওঠেন, আমার প্রিয় রং হালকা নীল। কী যোগাযোগ! কত বড় সৌভাগ্য আমার। পুরো যাদুঘর নূতন করে সাজাব অবিশ্বাস্যরকম সুন্দর করে–

রু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন, তাঁর কিছু করার নেই। যাদুঘরের মহাপরিচালকের ভাবাবেগ একটু কমে আসার পর বললেন, আপনার কাছে আমি একটা জিনিস জানতে চাইছিলাম।

বলুন মহামান্য রু।

আপনারা যাদুঘরের পক্ষ থেকে কয়েক বছর পরপর পৃথিবীর ছোটখাটো ব্যবহার্য জিনিস একটা বাক্সে করে মাটির নিচে পুঁতে রাখেন বলে শুনেছি। ভবিষ্যতের মানুষ দেখবে, দেখে আমাদের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা করবে, সেজন্যে। ব্যাপারটা সত্যি নাকি?

সত্যি মহামান্য রু। আমরা দশ বছর পরপর এটা করে থাকি। গতবার আপনার লেখা একটা বই আমরা সেখানে রেখেছিলাম।

সেখানে কী কী জিনিস রাখা হয়?

সাম্প্রতিক ছায়াছবি, গানের রেকর্ড, জনপ্রিয় বই, খাবার, খেলনা, পোশাক–এই ধরনের জিনিস।

কোনো খবরের কাগজ কি রাখা হয়?

জ্বি, আমরা খবরের কাগজও রাখি। খবরের কাগজ এবং সাময়িকী।

এবারের কোন খবরের কাগজটি রাখবেন সেটি কি ঠিক করেছেন?

না, এখনো ঠিক করি নি।

আমি যদি বিশেষ একটি খবরের কাগজের কথা বলি–আপনারা কি সেটি রাখবেন?

অবশ্যি অবশ্যি রাখব। আপনি একটি খবরের কাগজ রাখতে চাইবেন, আমরা সেটি রাখব না, সেটি কি কখনো হতে পারে? মহামান্য রু, আপনার জন্যে যে-কোনো কাজ করতে পারলে আমরা আমাদের জীবন ধন্য হয়ে গেছে মনে করি। কোন কাগজটি রাখতে চাইছেন?

সেটি এখনো বের হয় নি, আজ-কালের ভিতরে বের হবে। সেখানে বিজ্ঞান আকাদেমির একজন সদস্য সম্পর্কে কিছু খবর থাকবে। অনেক ব্যক্তিগত খবর। খবরটা ভালো হবে না, দেখে সবাই খুব অবাক হয়ে যাবে। সেই খবরের কাগজটা রাখতে পারবেন?

অবশ্যই অবশ্যই—

যাই হোক, আপনি এখন কাউকে কিছু বলবেন না।

অবশ্যই বলব না, কাউকে বলব না, কিছুতেই বলব না। যাদুঘরের পরিচালক প্রচণ্ড কৌতূহলে ভিতরে ভিতরে হটে গেলেও সেটা বাইরে প্রকাশ করার সাহস পেলেন না।

রু আস্তে আস্তে বললেন, ঠিক আছে, তাহলে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার সাথে খানিকক্ষণ সময় ব্যয় করার জন্য।

যাদুঘরের মহাপরিচালক মাথা নিচু করে অভিবাদন করে বিদায় নিয়ে হলোগ্রাফিক স্ক্রিন থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

 

রিকি সবুজ রঙের সুইচটা স্পর্শ করতেই কানে তালা লাগানো শব্দে ইঞ্জিনটা চালু হল। কুরু মহাকাশযানের ইঞ্জিন হাইপারডাইতের জন্যে তৈরি, তার প্রচণ্ড শব্দে পুরো গবেষণাগার থরথর করে কাঁপতে থাকে। রিকি খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে ইঞ্জিনটাকে পুরোপুরি চালু হবার সময় দিল। সামনের প্যানেলে সবুজ বাতিটি জ্বলে উঠতেই সে লাল রঙের হ্যান্ডেলটা নিজের দিকে টেনে ধরে। সাথে সাথে সমস্ত শব্দ হঠাৎ যাদুমন্ত্রের মতো থেমে যায়। রিকি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল, কিছু ভালো করে দেখা যায় না, কেমন যেন কুয়াশার মতো আবছায়া। সে এখন স্থির সময়ের ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। স্থির সময়ের ক্ষেত্র থেকে অন্য কোনো সময়ে পরিভ্রমণ করার কথা। রিকি দুই হাজার বছর সামনে এগিয়ে যেতে চায়—বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান তার জন্যে যথেষ্ট নয়। দুই হাজারের বেশী আগে যাওয়া সম্ভবত নিরাপদ নয়—মানুষের সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন হয়তো এত বেশি হয়ে যাবে যে রিকি তাল মিলিয়ে থাকতে পারবে না।

রিকি সাবধানে কিছু সংখ্যা কন্ট্রোল বোর্ডে প্রবেশ করাতে থাকে। এই সংখ্যাগুলো তাকে দুই হাজার বছর ভবিষ্যতে নিয়ে যাবে। ভবিষ্যতের মানুষ অতীত থেকে আসা এই অসাধারণ বিজ্ঞানীকে দেখে বিস্ময়ে কেমন হতবাক হয়ে যাবে, চিন্তা করে রিকির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। তাকে প্রথম যখন অভিবাদন করবে, উত্তরে বুদ্ধিদীপ্ত একটা কথা বলতে হবে—কী বলা যায়?

কন্ট্রোল প্যানেলে সংখ্যাগুলো দ্রুত পাল্টাতে থাকে। প্রতি মিনিটে রিকি একটি করে শতাব্দী পার হয়ে যাচ্ছে। আর কিছুক্ষণ, তারপর রিকি পৌঁছে যাবে দুই হাজার বছর ভবিষ্যতে। না জানি কত রকম বিস্ময় অপেক্ষা করছে তার জন্যে।

 

ইঞ্জিনের গর্জন থেমে যাবার পর রিকি সাবধানে চেয়ার থেকে নিজেকে মুক্ত করে দরজা খুলে দিল। দরজার ওপাশে দুজন ফ্যাকাসে চেহারার লোক দাঁড়িয়ে আছে। লম্বায় তার থেকেও প্রায় অনেকটুকু উঁচু। গায়ে অধস্বচ্ছ এক ধরনের পোশাক, নিশ্চয়ই কোনো আশ্চর্য পলিমারের তৈরি। কোমর থেকে যে জিনিসটা ঝুলছে, সেটাকে দেখে এক ধরনের অস্ত্র বলে মনে হয়।

রিকি হাতের ছোট মাইক্রোফোনে মুখ লাগিয়ে বলল, আমি অতীত থেকে তোমাদের জন্যে শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি।

মাইক্রোফোনটি শক্তিশালী অনুবাদকের সাথে যুক্ত—দুই হাজার বছরে ভাষায় যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটা হিসেব করে সঠিক ভাষায় পাল্টে দেয়ার কথা।

লোক দুটি একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। একজন তার পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে এগিয়ে গিয়ে পরিষ্কার রিকির ভাষায় বলল, শুভেচ্ছা পরে হবে, আগে ফর্মটাতে তোমার নাম–ঠিকানা লেখ–

রিকি উত্তপ্ত হয়ে বলল, তুমি বুঝতে পারছ না—

লোকটা বাধা দিয়ে বলল, খুব বুঝতে পারছি যে তুমি একজন বড় বিজ্ঞানী। যারা অতীত থেকে আসে সবাই দাবি করে তারা বড় বিজ্ঞানী। প্রতিদিন অন্তত দু-চারজন করে আসছে, কাজেই আমাদের এত সময় নেই। ভবিষ্যতে আসা সোজা—কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে অতীতে যাওয়া যায় না। তা হলে ধরে ধরে সবগুলোকে ফেরত পাঠাতাম। তুমি কি ভাব, তোমার এই আজব ভাষায় কথা বলতে আমার খুব আনন্দ হচ্ছে?

রিকি স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, এটা কী ধরনের অভ্যর্থনা।

লোকটা গলার স্বর উঁচু করে বলল, তাড়াতাড়ি নাম-ঠিকানা লেখ, কেন এসেছ, কী বৃত্তান্ত—সবকিছু। কোয়ারান্টাইনে নিয়ে তোমাকে পরীক্ষা করতে হবে। এখন কী কী রোগজীবাণু এনেছ সাথে?

রিকি কাঁপাহাতে ফর্মটি পূরণ করতে থাকে। নিজের চোখ-কানকে তার বিশ্বাস হয় না, পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী সে, অথচ তার সাথে এমনভাবে ব্যবহার করছে, যেন সে একজন তৃতীয় শ্রেণীর অপরাধী।

ফর্মটি পূরণ করে রিকি লোকটির হাতে দেয়। লোকটি ভ্রূ কুঁচকে পুরোটা চোখ বুলিয়ে হাতের উল্টো পিঠের ছোট মাইক্রোফোনে কথা বলতে থাকে, অতীত থেকে আরেকজন এসেছে। দাবি করছে সে বিজ্ঞান আকাদেমির সদস্য ছিল। মনে আছে, একজন দাবি করেছিল সে নাকি যীশুখ্রিস্ট। হাঃ হাঃ হাঃ।

রিকি লোকটার কথা বুঝতে পারে না, কিন্তু ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করছে। রিকি বুঝতে পারে, প্রচণ্ড ক্রোধের সাথে সাথে আরো একটা অনুভূতি তার ভিতরে ছড়িয়ে পড়ছে, যেটার সাথে তার ভালো পরিচয় নেই–অনুভূতিটি ভয়ের।

দ্বিতীয় লোকটি তার পকেট থেকে চৌকোণা একটা যন্ত্র বের করে ফর্মটি দেখে দেখে রিকির নামটি লিখতে থাকে। রিকি কৌতূহলী হয়ে তাকাল, সম্ভবত একটি কম্পিউটার, কোনো কেন্দ্রীয় ডাটা বেসের সাথে যুক্ত। তার সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছে।

লোকটি নিস্পৃহ দৃষ্টিতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিল, হঠাৎ কিছু-একটা দেখে চমকে উঠল, চোখ বড় বড় করে তাকাল একবার রিকির দিকে। তারপর আবার তাকাল স্ক্রিনের দিকে।

তোমার নামে আমাদের একটা ফাইল আছে। আমার নামে?

হ্যাঁ। ফাইলে একটা খবরের কাগজের কাটিংও আছে। সেখানে তোমার সম্পর্কে বড় খবর। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট করে পালিয়ে গিয়েছিলে, শীকে খুন করেছিলে নিজের হাতে লেখা আছে, তুমি অনেক বড় ক্রিমিনাল!

লোক দুটির গায়ে প্রচণ্ড জোর, খুব সহজে রিকির হাত দুটি পিছনে টেনে হাতকড়া লাগিয়ে দিল। সামনে যাবার ইঙ্গিত করে একজন মাথা নেড়ে বলল, আমি জীবনে অনেক আহাম্মক দেখেছি, কিন্তু প্রেসির মতো আহাম্মক আর দেখি নি।

 

রিকি মাথা নিচু করে এগিয়ে যায়।

<

Muhammed Zafar Iqbal ।। মুহম্মদ জাফর ইকবাল