বেলা তখন প্রায় একটা বাজে, অন্নপূর্ণা আর থাকিতে না পারিয়া বলিলেন, হাঁ ছোটবৌ, সত্যি আজ তুই অমূল্যকে খেতে দিবিনে? তার জন্য কি বাড়িসুদ্ধ লোক উপোস করে থাকবে?

বিন্দু জবাব দিল, বাড়িসুদ্ধ লোকের ইচ্ছে!

অন্নপূর্ণা বলিলেন, এ তোর কি-রকম কথা ছোটবৌ! বাড়ির মধ্যে ঐ একটি ছেলে, সে উপোস করে থাকলে, তোর আমার কথা ছেড়ে দে, দাসী-চাকরেই বা মুখে ভাত তোলে কি করে বল দেখি!

বিন্দু জিদ করিয়া বলিল, তা আমি জানিনে।

অন্নপূর্ণা বুঝিলেন, তর্ক করিয়া আর লাভ হইবে না, বলিলেন, আমি বলচি, বড়বোনের কথাটা রাখ। আজ তাকে মাপ কর। তা ছাড়া পিত্তি পড়ে অসুখ হলে তোকেই ভুগতে হবে।

বেলার দিকে চাহিয়া বিন্দু নিজেই নরম হইয়া আসিয়াছিল, কদমকে ডাকিয়া বলিল, যা নিয়ে আয় তাকে। কিন্তু তোমাদেরও বলে রাখচি দিদি, ভবিষ্যতে আমার কথায় কথা কইলে ভাল হবে না।

গোলযোগটা এইখানেই সেদিনের মত থামিয়া গেল।

ছোটভাইয়ের ওকালতিতে পসার হওয়ার পর হইতে যাদব চাকরি ছাড়িয়া দিয়া নিজেদের বিষয়-আশয় দেখিতেছিলেন। ছোটবধূর দরুন হাতে যে দশ হাজার টাকা ছিল, তাহাও সুদে খাটাইয়া প্রায় দ্বিগুণ করিয়াছিলেন। সেই টাকার কিয়দংশ লইয়া এবং মাধবের উপার্জনের উপর নির্ভর করিয়া তিনি গত বৎসর হইতে প্রায় পোয়াটাক পথ দূরে একখানি বড় রকমের বাড়ি ফাঁদিয়াছিলেন। দিন-দশেক হইল তাহা সম্পূর্ণ হইয়াছিল। কথা ছিল, দুর্গাপূজার পরে ভাল দিন দেখিয়া সকলেই তথায় উঠিয়া যাইবেন, তাই একদিন যাদব
৯০৮

আহারে বসিয়া ছোটবৌকে উদ্দেশ করিয়া বলিলেন, তোমার বাড়ি ত তৈরি হ’ল মা, এখন একদিন গিয়ে দেখে এস, আর কিছু বাকি রয়ে গেল কিনা।

বিন্দুর একটা অভ্যাস ছিল, সে সহস্র কাজ ফেলিয়া রাখিয়া ভাশুরের খাবার সময় দরজার আড়ালে বসিয়া থাকিত।ভাশুরকে সে দেবতার মতই ভক্তি করিত—সকলেই করিত। বলিল, আর কিছু বাকি নেই।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়