লক্ষ্মী। তুমি ত ওর হয়ে বলবেই রমাদিদি। তোমার বাপকে কেউ ঘরে ঢুকে মেরে গেলে কি করতে বল ত?
রমা। আমার বাপ ও তোমার বাপে অনেক তফাত লক্ষ্মী, তুমি সে তুলনা কোরো না। কিন্তু আমি কারও হয়েই কথা বলিনি, ভালোর জন্যই বলেচি।
লক্ষ্মী। বটে! ওর হয়ে কোঁদল করতে তোমার লজ্জা করে না? বড়লোকের মেয়ে বলে কেউ ভয়ে কথা বলে না, নইলে কে না শুনেচে? তুমি বলে তাই মুখ দেখাও, আর কেউ হলে গলায় দড়ি দিতো।
বেণী। (লক্ষ্মীকে তাড়া দিয়া) তুই থাম না লক্ষ্মী—কাজ কি ও-সব কথায়?
লক্ষ্মী। কাজ নেই কেন? যার জন্যে বাবাকে এত দুঃখ পেতে হোলো তার হয়েই উনি কোঁদল করবেন? বাবা যদি আজ মারা যেতেন?
রমা। (লক্ষ্মীর প্রতি) লক্ষ্মী, ওঁর মত লোকের হাতে মরতে পাওয়া ভাগ্যের কথা। আজ মারা পড়লে তোমার বাবা স্বর্গে যেতে পারতো।
লক্ষ্মী। তাতেই বুঝি তুমি মরেচো রমাদিদি?
রমা। (ক্ষণকাল নীরবে তাহার প্রতি চাহিয়া থাকিয়া মুখ ফিরাইয়া লইল) কিন্তু কথাটা কি তুমিই বল ত বড়দা?
বেণী। কি করে জানবো বোন! লোকে কত কথা বলে—তাতে কান দিলে ত চলে না।
রমা। লোকে কি বলে?
বেণী। বললেই বা রমা। লোকের কথাতে ত গায়ে ফোস্কা পড়ে না। বলুক না।
রমা। তোমার গায়ে হয়ত কিছুতেই ফোস্কা পড়ে না, কিন্তু সকলের গায়ে ত গণ্ডারের চামড়া নেই? কিন্তু লোককে এ কথা বলাচ্চে কে? তুমি?
বেণী। আমি?
রমা। তুমি ছাড়া আর কেউ নয়। পৃথিবীতে কোন দুষ্কর্মই ত তোমার বাকি নেই,—জাল, জোচ্চুরি, চুরি, ঘরে আগুন দেওয়া সবই হয়ে গেছে, এটাই বা বাকী থাকে কেন? মেয়েমানুষের এতবড় সর্বনাশ যে আর নেই সে বোঝবার তোমার শক্তি নেই। কিন্তু জিজ্ঞেসা করি কিসের জন্য এ শত্রুতা তুমি করে বেড়াচ্চো? এ কলঙ্ক রটিয়ে তোমার লাভ কি?
বেণী। আমার লাভ কি হবে? লোকে যদি তোমাকে রাত্রে রমেশের বাড়ি থেকে বার হতে দেখে,—আমি করব কি?
রমা। এত লোকের সামনে আর সব কথা আমি বলতে চাইনে, কিন্তু তুমি মনে করো না বড়দা, তোমার মনের ভাব আমি টের পাইনি। কিন্তু তুমি নিশ্চয় জেনো,—আমি রমা। যদি মরি, তোমাকেও জ্যান্ত রেখে যাবো না।
[দ্রুতবেগে প্রস্থান]
গোবিন্দ। অ্যাঁ? এ হোলো কি বড়বাবু? তোমাকেও চোখ রাঙ্গিয়ে যায়,—মেয়েমানুষ হয়ে? আমি বেঁচে থেকে এও চোখে দেখতে হবে?
নাটক : রমা Chapter : 3 Page: 56
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 310