ঋগ্বেদ ১০।০৪৬
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৪৬
অগ্নি দেবতা। বৎসপ্রি ঋষি।

১। যে অগ্নি মনুষ্যদিগের মধ্যে অবস্থিতি করেন, জলের মধ্যেও অবস্থিতি করেন, যিনি আকাশের বৃত্তান্ত অবগত আছেন, যেহেতু আকাশে তাহার জন্ম; তিনি এক্ষণে বিপুলমূর্তি ধারণপূর্বক হোতা হইয়াছেন। তিনি যজ্ঞের ধারণ কর্তা, অতএব তাহাকে আধান করা হইয়াছে। তুমি তাহার পরিচর্যা করিতেছ, অতএব তিনি তোমার দেহ রক্ষাপূর্বক তোমাকে অন্ন ও সম্পত্তি দিবেন।

২। এই অগ্নি জলের মধ্যে লুক্কায়িত হইলেন; যেমন একটি গাভী হারাইয়া গেলে তাহার পদচিহ্ন দর্শনে অনুসন্ধান হয়, তদ্রুপ অগ্নি পরিচর্যা কারীরা তাহার সন্ধান করিলেন। গুভৃবংশীয়েরা অগ্নির কামনা করিলেন, অগ্নি নিভৃতস্থানে ছিলেন, সেই সুপণ্ডিত ঋষিগণ অগ্নি পাইবার ইচ্ছায় নমোবাক্য বলিতে বলিতে তাহাকে পাইলেন।

৩। বিভুবসের পুত্র ত্ৰিত বিশিষ্টরূপে ইচ্ছা করিয়া অগ্নিকে ভূমির উপর প্রাপ্ত হইলেন। অগ্নি যজমানদিগের অট্টালিকাতে নবীন মূর্তিতে জন্ম গ্রহণ পূৰ্ব্বক অতি সুখকর হইয়াছেন, তিনি জ্যোতির্ময় লোক প্রাপ্তির মুলীভূতকারণস্বরূপ হইয়াছেন।

৪। অগ্নিকামনাকারী ঋত্বিকগণ মনুষ্যসমাজে অগ্নিকে প্রবর্তিত করিয়া মনুষ্যদিগের পবিত্র হইবার উপায় করিয়া দিয়াছেন, সে অগ্নি এক্ষণে সোমপানে মত্ত হয়েন, হোতা হয়েন, নমোবাক্য দ্বারা অনুকূল হয়েন, যজ্ঞ গ্রহণ করেন, অনুষ্ঠানের পথ দেখাইয়া দেন, সর্বত্র বিচরণ করেন, হোমের দ্রব্য দেবতাদিগের নিকট বহন করেন।

৫। হে হোতা! যে অগ্নি জয়শীল, যিনি অতি মহৎ, যিনি বুদ্ধিমাদিগকে আশ্রয় দেন, তুমি উপযুক্ত মত তাহার স্তব কার্য নির্বাহ কর, সেই অগ্নি বিপক্ষ দিগের পুরী ধবংস করেন, তিনি অরণি, অর্থাৎ অগ্নি মন্থনকাষ্ঠের প্রসবস্বরূপ, তিনি অতি চমৎকার পদার্থ, তাহাকে স্তব করিলেই সম্পত্তি পাওয়া যায়। তিনি নিজে মোহবিহীন, মনুষ্যগণ তাহাকে হোমের দ্রব্য দিয়া তাহার দ্বারা যত অনুষ্ঠান করাইয়া লয়।

৬। সেই অগ্নির তিন মূৰ্ত্তি, তিনি শিখা পরিবেষ্টিত হইয়া আলোকের দ্বারা যজমানদিগের গৃহ পরিপূর্ণ করতঃ যজ্ঞগৃহ মধ্যে আপন স্থানের অভ্যন্তরে উপবেশন করেন। তথায় মনুষ্যগণের যাহা কিছু দেয়, সকলি তিনি সংগ্রহপূর্বক নানাবিধ কাৰ্যের দ্বারা শত্রুদমন করিতে করিতে ঐ সমস্ত হোমের দ্রব্য দেবতাদিগকে দিতে যান।

৭। এই যে যজমান, এই ব্যক্তির অনেকগুলি অগ্নি আছেন, তাহারা সকলেই জরাবিহীন, শত্রুবর্গের শাসনকর্তা ও চমৎকার ধূম নির্গত করেন। তাহারা পবিত্রতা উৎপাদন করেন, শ্বেত বর্ণ ধারণ করেন, শীঘ্র শীঘ্র পরিপূর্ণ অবস্থা প্রাপ্ত হয়েন, কাষ্ঠে উপবেশন করেন এবং সোমরসের ন্যায় গতিবিধি করেন।

৮। অগ্নি কাঁপিতে কাঁপিতে পৃথিবীর উত্তম উত্তম সামগ্রী জিহ্বাসহযোগে ধারণ করিতেছেন মনে মনেও জানিতেছেন। মনুষ্যগণ তাহাকে আধান করিলেন, কারণ তিনি সোমরস পানে মত্ত হইয়া পবিত্রতা উৎপাদন করেন, শুভ্র বর্ণ ধারণ করেন, হোতর কাৰ্য্য সম্পাদন করেন। যজ্ঞ পাইবার উপযুক্ত তাহার তুল্য কেহ নাই।

৯। ইনি সেই অগ্নি, যাহাকে দ্যাবা ও পৃথিবী জন্মদান করিয়াছেন, জল ও ত্বষ্টা ও ভৃগুবংশীয়রা বলের দ্বারা যাঁহাকে উৎপাদন করিয়াছেন; যিন সর্বশ্রেষ্ঠ স্তবের যোগ্য; মাতরিশ্বা ও অপরাপর দেবতারা মনুষ্যের যজ্ঞ করিবার জন্য যাহাকে নিৰ্মাণ করিয়াছেন।

১০। হে অগ্নি! তোমাকে দেবতারা আপন করিয়াছেন; তোমাকে যজ্ঞ দিবার জন্য মনুষ্যগণ বিশিষ্ট বিশিষ্ট কামনাসহকারে আধান করেন; সেই তুমি যজ্ঞের সময় স্তবকারী ব্যক্তিকে অন্ন দান কর, দেবভক্তব্যক্তি যেন বিশিষ্ট যশ প্রাপ্ত হয়।

<

Super User