ঋগ্বেদ ১০।০৪৫
ঋগ্বেদ সংহিতা ।। ১০ম মণ্ডল সূক্ত ৪৫
অগ্নি দেবতা। বৎসপ্রি ঋষি।

১। অগ্নি প্রথমে আকাশে অর্থাৎ বিদ্যুৎরূপে জন্ম গ্রহণ করিলেন, তাহার দ্বিতীয় জন্ম আমাদিগের নিকট, তাহাতে তাহার নাম জাতবেদা। তাঁহার তৃতীয় জন্ম জলের মধ্যে। এইরূপে সেই নরহিতকারী অগ্নি নিরন্তর জাজ্বল্যমান আছেন। যিনি উত্তম ধ্যান করিতে জানেন, তিনি তাহাকে স্তব করেন।

২। হে অগ্নি! আমরা তোমার তিন প্রকারের তিন মুর্তি জানি, তোমার স্থান অনেক স্থলে আছে, তাহাও জানি। তোমার অতি নিগুঢ় যে নাম, তাহাও অবগত আছি; আর যে উংপত্তিস্থান হইতে তুমি আসিয়াছ, তাহাও জানি ।

৩। নরহিতকারী বরুণদেব সমুদ্র মধ্যে জলের অভ্যন্তরে তোমাকে প্রজ্বলিত রাখিয়াছেন। আর আকাশের উধঃস্বরূপ যে সূর্য তন্মধ্যেও তুমি প্রজ্বলিত আছ। আর তোমার তৃতীয় স্থান মেঘলোক, তথায় বৃষ্টিবারিতে তুমি বাস কর, প্রধান প্রধান দেবতারা তোমার তেজ বৃদ্ধি করেন।

৪। অগ্নির ঘোরতর শব্দ উথিত হইল, আকাশে যেন বজ্রপাত হইতেছে; অগ্নি পৃথিবীকে লেহন করিতেছেন, লতা প্রভৃতিকে আলিঙ্গন করিতেছেন। যদিও এই মাত্র জন্মিয়াছেন, তথাপি বিশেষরূপে প্রজ্বলিত ও বিস্তারিত হইয়াছেন। দ্যাবা ও পৃথিবীর মধ্যে কিরণ বিস্তার করাতে তাহার শোভা হইয়াছে।

৫। অগ্নি যখন প্রভাতের প্রথম ভাগেই প্রজ্বলিত হয়েন, তখন তাহার কি শোভা হয়। তিনি কত শোভা আবিষ্কৃত করে। তিনি অশেষ সম্পত্তির আধারস্বরূপ। তিনি স্তুতিবাক্য সকল স্ফূরিত করিয়া দেন, সোমরসকে রক্ষা করেন। তিনি নিজেই ধনস্বরূপ, তিনি বলের পুত্র, তিনি জলের মধ্যে বিরাজ করেন।

৬। তিনি সকল বসুকে প্রকাশযুক্ত করেন, তিনি জলের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জাতমাত্রে দুলোক ও ভূলোক পরিপূর্ণ করিলেন। যখন পঞ্চজনপদের মনুষ্য তাহার উদ্দেশে যজ্ঞ করিল, তখন তিনি সুকঠিন মেঘের দিকে উদগত হইয়া সেই মেঘ ভেদপূর্বক জল আনয়ন করিলেন।

৭। অগ্নি হোমের দ্রব্য কামনা করেন, সকলকে পবিত্র করেন, চতুর্দিকেও গতিবিধি করেন। তাঁহার মেধা চমৎকার, তিনি নিজে অমর হইয়া মরণধৰ্ম্মাম্বিত মনুষ্যদিগের মধ্যে সমর্পিত আছেন। সুরঞ্জিত ধূম ধারণপূর্বক তিনি গতিবিধি করিয়া থাকেন এবং শুক্লবর্ণ আলোকের দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ করেন।

৮। তিনি দেখিতে জ্যোতির্ময়, তাহার দীপ্তি অতি মহৎ, তিনি দুর্ধর্ষ দীপ্তিসহকারে যাইতে যাইতে শোভা ধারণ করেন। সেই অগ্নি বৃক্ষের কাঠ অন্নস্বরূপ প্রাপ্ত হইয়া অমর অর্থাৎ অনির্বানশীল হইয়া উঠিনে। দিব্যলোক ইহাকে জন্ম দিয়াছেন, দিব্যলোকের জন্মদানশক্তি কি সুন্দর।

৯। হে মঙ্গলময় শিখাধারী নবীন অগ্নি! যে ব্যক্তি অদ্য তোমার জন্য ঘৃতযুক্ত পিষ্টক প্রস্তুত করিয়াছে, সেই উৎকৃষ্ট ব্যক্তিকে তুমি উত্তম উত্তম ধনের দিকে লইয়া যাও, সেই দেবভক্ত ব্যক্তিকে সুখসচ্ছন্দের দিকে লইয়াযাও।

১০। যখনই উত্তম উত্তম অন্নসহকারে ক্রিয়াকলাপ অনুষ্ঠিত হয়, তখনই তুমি যজমানের প্রতি অনুকূল হও। প্রত্যেক স্তব উচ্চারিত হইবার সময় অনুকূল হও। সে যেন সুর্যের নিকটে প্রিয় হয়, অগ্নির নিকট প্রিয় হয়। তাহার যে পুত্র জন্মিয়াছে, অথবা যে পুত্র জন্মবে, সকলের সহিত সে যেন শত্রু মর্দন করে।

১১। হে অগ্নি! প্রতিদিন যজমানগণ তোমার নিকট উত্তম উত্তম নানা বস্তু পূজা দেয়। বুদ্ধিমান্ দেবতাগণ তোমার সহিত একত্র হইয়া ধন কামনা পূর্ণ করবার জন্য গাভীপরিপূর্ণ গোষ্ঠের দ্বার উদঘাটন করিয়াছিল।

১২। মনুষ্যদিগের মধ্যে যাহার মূর্তি সুগঠন, যিনি সোম রক্ষা করেন, ঋষিরা সেই অগ্নিকে স্তব করিলেন। দ্বেষবিবর্জিত দ্যাবাপৃথিবীকে আমরা ডাকিতেছি। হে দেবতাগণ! আমাদিগকে লোকবল ও ধনবল প্রদান কর।

<

Super User