রাজপুরী একেবারে নিস্তব্ধ। বড় একটা বটগাছে অসংখ্য পাখির বাসার মতন এই প্রাসাদেও খোপে খোপে অনেক মানুষ। তবু তারা চলা ফেরার সময় পায়ের আওয়াজ গোপন করতে ব্যস্ত। সবাই কথা বলছে ফিসফিসিয়ে। মহারাজ বীরচন্দ্ৰ গভীর শোকে মগ্ন। শুধু শোকগ্ৰস্তই নয়, মহারাজ মহাক্রুদ্ধও হয়ে আছেন। সচরাচর খোসমেজাজি ও সুরসিক বীরচন্দ্ৰ এখন যখন-তখন অগ্নিশর্মা হয়ে উঠছেন। কেউ তাঁর সামনে পড়তে সাহস পায় না। এর মধ্যে একজন আলতা-দাসীকে দেখে তিনি সম্পূর্ণ বিনা কারণে গর্জে উঠে বলেছিলেন, এই, তুই এখানে কী করছিস, বেরিয়ে যা, বেরিয়ে যা। জীবনে আর কখনও এই প্রাসাদে ঢুকবি না!

মহারানী ভানুমতীর মৃত্যুতে বীরচন্দ্রের এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া তাঁর পরিষদদের অবাক করে দিয়েছে। মহারাজকে চোখের জল ফেলতে কেউ কখনও দেখেনি, মাঝে মাঝে গান-বাজনা শুনতে শুনতে তাঁর চক্ষু সজল হয়ে ওঠে বটে, কিন্তু শোক-তাপ তিনি শান্তভাবে সহ্য করতে জানেন। রাজা-মহারাজাদের সর্বসমক্ষে বেশি আবেগ বা উচ্ছ্বাস দেখাতে নেই। এবারেও মহারাজ অন্যদের সামনে কাঁদেননি, বাগানবাড়ি থেকে দৌড়ে এসে ভানুমতীর শয্যার পাশে বসে পড়ে তিনি ঘর খালি করে দিতে বলেছিলেন, কিন্তু দূর থেকে অনেকে তাঁর হাহাকার শুনতে পেয়েছে। ভানুমতীর মৃত্যু খুব আকস্মিক, তিনি সুস্বাস্থ্যবতী ছিলেন, রোগ ছিল না কোনও, সেজন্য মহারাজ এত বেশি আঘাত পেয়েছেন, তা অস্বাভাবিক নয়, তবু তাঁর পরের ব্যবহার ব্যাখ্যা করা যায় না। তিনি পালঙ্কে ভানুমতীর মৃতদেহ আঁকড়ে শুয়ে ছিলেন, রাত্রি-প্রভাতেও এই শব দাহ  করতে দিতে রাজি হননি। শিশুর মতন অবোধ হয়ে গিয়ে তিনি বারবার বলছিলেন, না, না, ভানুকে কেউ আমার কাছ থেকে নিয়ে যেতে পারবে না! সরে যা, তোরা সব সরে যা! আত্মীয়-পরিজন, তাঁর একান্ত সচিব, রাজপুত্রদের অনুরোধেও তিনি কৰ্ণপাত করেননি। সারা দিনে মহারাজের আলিঙ্গন থেকে সেই মৃতদেহ ছাড়াতে পারেনি। কেউ। শেষপর্যন্ত কুমার সমরেন্দ্ৰচন্দ্র, যুবরাজ রাধাকিশোর মহারাজের পা ধরে মিনতি করতে লাগলেন। মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দাহ কাৰ্য সম্পন্ন করতে না পারলে মহা পাপ হয়।

শ্মশানে যাননি মহারাজ। তিনি ভানুমতীর কক্ষেই রয়ে গেলেন। মহারানীর সঙ্গে রাত্রিযাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিনি আসেননি, এখন তিনি রাতের পর রাত কাটাতে লাগলেন এই শূন্য ঘরে। মাঝে মাঝে তিনি উচ্চৈঃস্বরে কার সঙ্গে কথা বলেন?

তিনদিন তিনি সেই মহল থেকে বেরুলেন না একবারও, রাজকার্যে তাঁর মতি নেই, জরুরি কোনও দলিলে সই করতেও তিনি রাজি নন। দাস-দাসীরা খাবার সাজিয়ে দিয়ে যায়, তিনি স্পর্শ করেন না কিছুই। অন্য রানীরা এসে সাধ্য সাধনা করেছেন কত, কৰ্ণপাত করেননি মহারাজ। তাঁর ওপর জোর করার কেউ নেই। বীরচন্দ্রের জননী এখনও জীবিত, কিন্তু তিনি বর্তমানে রয়েছেন উদয়পুরে।

তিনদিন পর মহারাজ সেই কক্ষ থেকে বেরুলেন বটে কিন্তু কথা বলেন না কারুর সঙ্গে। তাঁর হাঁটা-চলা যেন স্বপ্নচালিতের মতন। দৃষ্টিতে কিন্তু ঔদাসীন্য নেই, মুখখানা গনগনে হয়ে আছে রাগে। তিনি নিজের ওপরেই সাঙ্ঘাতিক ক্রুদ্ধ। ভানুমতীকে তিনি কতকাল ধরে চেনেন, ভানুমতীর তেজ, জেদ, চাপল্য, রাগ সবই তিনি জানেন। কিন্তু অভিমানের বশে ভানুমতী যে আত্মঘাতিনী হতে পারেন, তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। সচিব, দেওয়ান আর ঠাকুর লোকদের সন্তুষ্ট করার জন্য রাধাকিশোরের নাম তিনি যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু এ প্রস্তাব তো তিনি আবার ইচ্ছে করলেই বদল করতে পারেন। সমরেন্দ্র তাঁর প্রিয় সন্তান। ভানুমতী এটা না বুঝেই চলে গেল!

ভোজ উৎসবের পরদিন সকালেই সমরেন্দ্র দূরের জঙ্গলে চলে গিয়েছিল শিকার করতে তার মামার বাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে। শিকারের উপলক্ষ শলা-পরামর্শের পক্ষেও আদর্শ। মায়ের মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সমরেন্দ্ৰকে। পিতার মুখের ওপর সে কোনও কথা বলতে পারে না, কিন্তু যায় যে সে সাঙ্ঘাতিক ক্ষুব্ধ, সে মহারাজের ঘরের দিকে আসছে না একবারও।

বীরচন্দ্ৰ প্ৰাসাদ থেকে বেরিয়ে উদ্যানে পায়চারি করছেন কখনও কখনও, মাঝে মাঝে কমলদিঘির ধারে একা বসে থাকছেন চুপটি করে। স্কুল পালানো বালকের মতন ছোট ছোট ঢিল ছুড়ে দেখছেন তরঙ্গভঙ্গ। গভীর কালো জলে যেন কার চেখের কথা মনে পড়ে। ঘন বৃক্ষরাজির আড়ালে কোনও একটা পাখি এক টানা শিষ দিয়ে চলেছে, মহারাজ সে দিকে তাকিয়ে থাকেন, পাখিটাকে দেখা যায় না। ওই শিসের মতনই মহারাজের অবচেতনে কিছু যেন গুঞ্জরিত হচ্ছে, অদেখাপাখিটার মতন তা ভাষায় রূপ পাচ্ছে না।

এক একবার তিনি উঠে যাচ্ছেন মানা-ঘরে, অসমাপ্ত ছবি আঁকার চেষ্টা করে একটু পরেই ফেলে দিচ্ছেন তুলি। ফটোগ্রাফির ঘরে গিয়ে নাড়াচাড়া করছেন পুরনো প্রিন্ট। গানের ঘরে বাজাতে চেষ্টা করছেন এস্রাজ, কিছুতেই মন লাগছে না। কিছুতেই মনের অবসাদ কাটছে না।

বেশ কয়েকজন মহারাজের কাছাকাছি গিয়ে ধমক খেয়েছে। একান্ত সচিব ঘোষমশাই বুদ্ধিমান মানুষ, তিনি প্রথম কয়েকদিন মহারাজের সঙ্গে কোনও কথাই বলতে যাননি, বয়স্ক মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়া যে অতি দুঃসাধ্য তা তিনি জানেন। রাজা-মহারাজারা সহজে কাতর হন না, আর যে রাজার অনেক রানী, তাঁর পক্ষে এক বিগতযৌবনা রানীর মৃত্যুতে এমন ব্যাকুল হয়ে পড়া নিছক শোক হতে পারে না, আরও অন্য কিছু কারণ আছে নিশ্চিত। ঘোষমশাই দূর থেকে কয়েকদিন মহারাজকে লক্ষ করলেন, তারপর যখন দেখলেন রাজকাৰ্য প্রায় আচল হয়ে পড়েছে তখন তিনি অবলম্বন করলেন এক কৌশল।

ছবি-ঘরে একটা তুলি হাতে নিয়ে বিহ্বল হয়ে বসে আছেন বীরচন্দ্র। আজ সকালে ঠিক করেছিলেন, ভানুমতীর একটি চিত্র অঙ্কন করবেন। কিন্তু ইজেলের সামনে দাঁড়াবার পর, কী আশ্চর্য, ভানুমতীর মুখচ্ছবি স্পষ্ট মনে আসছে না। এও কী সম্ভব! ভানুমতীর কথা চিন্তা করে তাঁর নিদ্রাহীন রাত কাটে, অন্ধকারের মধ্যে জ্বলজ্বল করে ভানুমতীর মুখ, আর এখন এই দিবালোকে সেই মুখ আবছা হয়ে গেল কী করে? কেমন যেন জলে-ডোবা মূর্তির মতন!

ভানুমতীর ফটোগ্রাফ তিনি তুলেছেন কয়েকখানা। এখানে হাতের কাছে তার প্রিন্টগুলি নেই, খুঁজতে প্রবৃত্তিও হচ্ছে না, মনশ্চক্ষে দেখতে না পেলে ফটোগ্রাফ দেখে চিত্রাঙ্কনের প্রয়োজন কী? মনের কোন অতলে তলিয়ে যাচ্ছেন মহারানী!

এই সময় মহারাজ যেন কার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। কে যেন মন্ত্র উচ্চারণ বা স্তোত্র পাঠ করছে। একটুক্ষণ উৎকর্ণ হয়ে তিনি বুঝলেন, না, সংস্কৃত নয়, বাংলা। জানালা দিয়ে তিনি দেখলেন, প্রশস্ত বারান্দায় ধীর পদে পায়চারি করছেন ঘোষমশাই। পরিষ্কার, ঝঙ্কৃত কণ্ঠে আবৃত্তি করছেন :

“হয় তো জানো না, দেবি, অদৃশ্য বাঁধন দিয়া

নিয়মিত পথে এক ফিরাইছ মোর হিয়া।

গেছি দূরে, গেছি কাছে, সেই আকর্ষণ আছে,

পথভ্রষ্ট হই নাকো, তাহারি অটল বলে!

নইলে হৃদয় মম ছিন্ন ধূমকেতু-সম

দিশাহারা হইত। সে অনন্ত আকাশ তলে!…”

মহারাজ জিজ্ঞেস করলেন, কী পড়ছ, ঘোষমশাই, এ কার কবিতা?

ভানুমতীর মৃত্যুর পর পঞ্চম দিনে এই প্রথম বীরচন্দ্রের কণ্ঠ থেকে একটি স্বাভাবিক বাক্য নির্গত হল।

ঘোষমশাই কাছে এসে মহারাজকে নমস্কার করে বললেন, শশিভূষণের কাছে একটা বই আছে। তাতে এই পাণ্ডুক্তিগুলি পড়ে ভালো লেগে গেল। আমাদের বৈষ্ণব কাব্যে রাধার বিরহ কিংবা শোকের কথা অনেক আছে। কিন্তু পুরুষের শোকের কাব্য বিশেষ চোখে পড়ে না। এই কবির বইটিতে অনেক অংশই পুরুষের আক্ষেপ ও বেদনায় ভরা।

মহারাজ বললেন, কবিটি কে? হেমবাবু কিংবা নবীনবাবু?

ঘোষমশাই বললেন, না, না। এ এক অতি তরুণ কবির রচনা। এর নাম রবি ঠাকুর।

মহারাজ ভ্রুকুঞ্চিত করে বললেন, ঠাকুর। আমাদের ত্রিপুরার ঠাকুর লোকদের কেউ নাকি?

ঘোষমশাই বললেন, না, মহারাজ। ত্রিপুরায় কবি বলতে তো আপনিই একমাত্র। আর মদন মিত্তির আছেন। এই রবি ঠাকুর কলকাতার। এঁর সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানি না। শশিভূষণ অনেক খবর রাখে।

মহারাজ বললেন, আহা, ভারি খাসা রচনা! আবার শোনাও তো!

ঘোষমশাই পুনরায় আবৃত্তি করলেন :

“হয়তো জানো না, দেবি, অদৃশ্য বাঁধন দিয়া

ননিয়মিত পথে এক ফিরাইছ মোর হিয়া…”

ঘোষমশাই থামতেই মহারাজ অতৃপ্তভাবে বললেন, আহা! এ যে আমারই মনের কথা। আরও শোনাও। আর একটু!

ঘোষমশাই সঙ্কুচিতভাবে বললেন, আর যে মনে নেই। মাত্র দু একবার পড়েছি। শশিভূষণের কাছ থেকে বইখানা আনব?

শশিভূষণের কাছে খবর যাবে, তারপর বইটি আসবে, এই দেরিটুকুও যেন সহ্য করতে পারবেন না মহারাজ, তাই বললেন, চলো তো, শশিভূষণের কাছে বইটা দেখি গে।

এই কদিন বীরচন্দ্ৰ পোশাক পরিবর্তন করেননি, ধুতি ও বেনিয়ান মলিন হয়ে গেছে, পায়ে খড়ম, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, তিনি দ্রুত পদে এগিয়ে চললেন পাঠশালা বাড়ির দিকে।

আজ সকালেও শশিভূষণ একজন মাত্র ছাত্র নিয়েই ক্লাস চালাচ্ছেন। শ্লেটে ইংরেজি লেখা শিখছে ভরত। এর মধ্যেই সে শুনে শুনে লিখতে শিখেছে অনেকটা। শশিভূষণ ডিটেকশন দিচ্ছেন, Once upon a time, there lived…

মহারাজ ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ঘোষমশাই প্রায় দৌড়ে এসে বললেন, ওই যে সেই রবিবাবুর বইটা, বার করো তো, শিগগির, শিগগির।

শশিভূষণ বললেন, বইটা তো আমি ভরতকে পড়তে দিয়েছি। ভরত, কোথায় রেখেছিস রে? তোর ঘরে?

বইখানি ভাগ্যক্রমে ভরতের সঙ্গেই আছে। ছেঁড়া ঝুলি থেকে বইটি বার করে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবার ভঙ্গিতে সে দেয়ালের এক কোণে সেঁটে দাঁড়িয়ে রইল।

মহারাজ পাতা খুলেই পড়তে লাগলেন :

“স্নেহের অরুণালোকে খুলিয়া হৃদয় প্রাণ

এ পাড়ে দাঁড়ায়ে, দেবি, গাহিনু যে শেষ গান

তোমারি মনের ছায়া, সে গান আশ্রয় চায়

একটি নয়নজাল তাহারে করিও দান।…”

মুখ তুলে তিনি বললেন, তুমি ঠিক বলেছ, ঘোষমশাই, পুরুষের এমন বেদনার গাথা তো আগে এত মৰ্মন্তুদ করে কেউ লেখেনি। আহা, নিশ্চয় এর বুকেও শোকের শেল বিঁধেছে। আমারই মতন এই কবিও বুঝি তার প্ৰিয়তমা মহিষীকে সদ্য হারিয়েছে!

শশিভূষণ গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, না, মহারাজ-

বীরচন্দ্ৰ বললেন, না মানে?

শশিভূষণ বললেন, এই কবির বয়েস খুবই কম, একুশ-বাইশের বেশি নয়। আমি যতদূর জানি, ইনি বিবাহ করেননি!

বীরচন্দ্র বললেন, কলকাতার বাবুদের বুঝি একুশ-বাইশ বছরে বিবাহ হয় না? কত বয়েস পর্যন্ত তারা আইবুড়ো থাকে?

শশিভূষণ বললেন, তা নয়, ওই বয়েসে অনেকেরই বিবাহ হয় বটে, তবে ইনি তো বড় ঘরের ছেলে, এঁদের বিবাহ খুব ঘটা করে হয়, সংবাদপত্রে সে খবর ছাপা হয়।

—বড় ঘর মানে কোন ঘর?

—জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি। এই রবিবাবু দেবেন ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র।

—দ্বারিকানাথ ঠাকুরের বংশ। দ্বারিকাবাবুর সঙ্গে আমাদের পরিবারের একবার যোগাযোগ হয়েছিল বলে শুনেছি। দেবেন্দ্রবাবুর নাম শুনেছি বটে, কখনও সাক্ষাৎ হয়নি।

—ওই ঠাকুরবাড়ি থেকে ভারতী নামে একটা মাসিক কাগজ বেরোয়। আপনি বোধহয় সে পত্রিকাটি দেখেননি, মহারাজ। আমি সেই পত্রিকায় গ্রাহক। সে কাগজে প্রত্যেক সংখ্যায় এই ছেলেটির একাধিক লেখা থাকে। নাম ছাপা হয় না অবশ্য, কিন্তু আমি পড়লেই ঠিক চিনতে পারি। কবিতার চেয়েও ইনি গদ্য অধিক ভালো লেখেন। বালক বয়েস থেকেই রবি ঠাকুরের নানান রচনা পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। ছেলেটির বেশ কলমের জোর আছে। এর মধ্যেই একাধিক গ্ৰন্থ প্রকাশিত হয়ে গেছে। অবশ্য নিজেরাই পয়সা খরচ করে ছাপায়।

বইখানির প্রথম পৃষ্ঠা খুলে মহারাজ অস্ফুট স্বরে বললেন, একুশ-বাইশ বছরের ছেলে?

বইটির নামপত্রে লেখা: ভগ্নহৃদয়। শ্ৰী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত। কলিকাতা বাল্মীকি যন্ত্রে…মুদ্রিত…। দাম এক টাকা।

উৎসর্গের পৃষ্ঠায় শ্ৰীমতী হে-র উদ্দেশ্যে লেখা একটি পাঁচ স্তবকের উপহার কবিতা।

মহারাজ চোখ তুলে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শ্ৰীমতী হে—’, এর মানে কী?

ঘোষমশাই বললেন, হেমাঙ্গিনী বা হেমবালা-টালা কেউ হবে।

মহারাজ আবার জিজ্ঞেস করলেন, তবে যে তোমরা বললে এর বিবাহ হয়নি?

ঘোষমশাই বললেন, মা কিংবা দিদি-টিদি কেউ হতে পারে।

মহারাজ এবার খানিকটা ধমকের সুরে বললেন, মা কিংবা দিদি হলে এমন সাঁটে নাম লিখবে কেন?

এ প্রশ্নের কী উত্তর হতে পারে তা শশিভূষণ বা ঘোষমশাই কেউই জানেন না। সুতরাং নীরব রইলেন।

মহারাজ জানতে চাইলেন, এই ছেলেটির আর কি বই আছে?

শশিভূষণ বললেন, আমি ‘রুদ্রচণ্ড’ নামে একটি নাটিকা পড়েছি। সেখানি তেমন সরেস হয়নি। তবে, ‘ভারতী’ পত্রে এর গদ্য রচনাগুলি একেবারে অনবদ্য।

মহারাজ ‘ভগ্নহৃদয়’ থেকে নিজে কয়েক লাইন পড়লেন। তারপর ঘোষমশাইয়ের দিকে বইটি এগিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি পাঠ করে শোনাও। তোমার কণ্ঠস্বর ভালো।

ঘোষমশাই পড়তে লাগলেন :

“আজ সাগরের তীরে দাঁড়ায়ে তোমার কাছে

পরপারে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকার দেশ আছে

দিবস ফুরাবে যবে     সে দেশে যাইতে হবে

এ পারে ফেলিয়া যাব আমার তপন শশী.”

কে বলে কবিতা পাঠের কোনও উপকারিতা নেই? এই কয়েকটি দিন বীরচন্দ্রের মনখানি দুর্ভেদ্য কুয়াশায় ঢাকা পড়েছিল। তাঁর বোধ বুদ্ধি, চিন্তাশক্তি অবশ হয়েছিল, এমনকি ছিল ঝাপসা। কবিতা শুনতে শুনতে সেই কুয়াশার জাল কেটে যেতে লাগল, ফিরে এলো অনুভূতির তীক্ষ্ণতা। ভানুমতীর মৃত্যুর পর তিনি তার অভ্যেসমতন গোঁফ মুচড়োতেও ভুলে গিয়েছিলেন। এবার গোঁফে আঙুল বোলাতেই বোঝা গেল তিনি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসছেন। ফিরে এলো তামাকের নেশা। এমনকি এতদিন পর তিনি খিদে অনুভব করলেন।

কিছুক্ষণ কবিতা পাঠ শ্ৰবণ করার পর মহারাজ হুঁকো-বরদারের জন্য ছটফট করতে লাগলেন। ঘোষমশাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, দাও, বইখানি আমি নিয়ে যাই।

এতক্ষণ পর ভরতের দিকে তাঁর চোখ গেল। ভরত এ ঘর ছেড়ে চলে যায়নি, সে তৃষ্ণার্তের মতন মহারাজ ও অন্য দু’জনের কথোপকথন ও কবিতা পাঠ শুনছিল। মহারাজ জিজ্ঞেস করলেন, কি রে, তুই এ সব পড়িস নাকি?

যে-কাব্য মহারাজের ভালো লেগেছে, সেই কাব্য মহারাজেরও আগে ভরতের মতন এক অকিঞ্চিৎকর মানুষের পক্ষে পড়ে ফেলাটা দোষের কি না তা সে বুঝতে পারল না। কিছু উত্তর দিল না সে, বিবর্ণ হয়ে গেল তার মুখখানি। মহারাজ আর কিছু বললেন না, বেরিয়ে গেলেন দ্রুতপদে।

প্রাসাদে ফিরে মহারাজ স্নান করলেন অনেক সময় নিয়ে। তারপর পরিপূর্ণ আহারে বসলেন। সেই পর্ব শেষ হলে আলবেলার নলে কয়েকবার টান দিতে না দিতেই ঘুমে ঢুলে তাঁর চোখ। দিবানিদ্রা দিলেন প্রায় চার ঘন্টা। ঘুমের মধ্যে ভ্রুকুঞ্চন নেই, প্রশান্ত ওষ্ঠের ভঙ্গি। এক অর্বাচীন কবির রচনা তাকে সুস্থ করে তুলেছে।

সন্ধের পর ভানুমতীর কক্ষে প্ৰদীপের আলোয় তিনি জোরে জোরে পাঠ করতে লাগলেন ‘ভগ্ন হৃদয়’। যেন তিনি ভানুমতীকেই শোনাচ্ছেন।

পরদিন থেকে মহারাজ অনেকটা স্বাভাবিকভাবে সরকারী কাজকর্ম শুরু করলেন বটে। তবে সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন যে তাঁর শোকপর্ব এখনও শেষ হয়নি। প্রথম কয়েকটি দিন তাঁর ভাবাবেগ ছিল যুক্তিহীন রকমের বিহ্বল, তারপর তিনি মহারানীর বিচ্ছেদ শোক পালন করতে লাগলেন রাজকীয় প্রথাবিহিতভাবে। সকালে কিছুক্ষণ তিনি কীর্তন গান শোনেন, তখন তাঁর মুখখানি গম্ভীর থমথমে হয়ে থাকে, চক্ষু মাথা দোলান শুধু, আগেকার মতন আহা আহা শব্দে তারিফ করেন না। কিংবা নিজে আখির দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ গেয়ে ওঠেন না।

ঠিক একঘণ্টা কীর্তন শ্রবণের পর তিনি জলপান সেরে নেন, তারপর যান দরবারে। দেওয়ান ও মন্ত্রীদের তিনি প্রয়োজন মতন নির্দেশ দেন দুটি একটি বাক্যে। বোঝা যায় নিছক কর্তব্যের খাতিরেই তিনি সিংহাসনে এসে বসেছেন। কারুর আবেদন শুনতে শুনতে মধ্যপথে উঠে চলে যান অকস্মাৎ।

বিকেলবেলা গান-বাজনার আসর বসে বটে, কিন্তু কালোয়াতি গান কিংবা হালকা রসের গানও নয়। শুধু পদাবলি ও ধর্মসংগীত। পঞ্চানন্দ পাখোয়াজ বাজিয়ে বিরহের পালা ধরে, তার গান শুনলে সকলেরই চোখে জল আসে। এই নেশাখোর, ধড়িবাজ লোকটি গান গাইবার সময় একেবারে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তখন তার কণ্ঠ দিয়ে যেন অমৃত ঝরে।

রাত্রে মহারাজের শয্যা নারীবর্জিত। কোনও রানী কিংবা রক্ষিতার কক্ষেই তিনি এর মধ্যে একদিনও পদার্পণ করেননি। এমনকি স্ত্রীলোকদের সেবাও গ্রহণ করছেন না। ভানুমতীর স্মৃতি যে তাঁর হৃদয়ে তীব্রভাবে অঙ্কিত তা তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন সকলকে।

ছবি আঁকা কিংবা ফটোগ্রাফি চর্চাও এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। তবে দিনের কোনও সময়ে কিছুক্ষণের জন্য তিনি কবিতা রচনা করেন। ‘ভগ্নহৃদয়’ নামে এক তরুণ কবির কাব্যগ্রন্থ তাঁর নিজের কবিত্ব শক্তিকেও উস্কে দিয়েছে। বেশ ঝরঝর করে লিখে যেতে পারছেন পাতার পর পাতা। মহারাজের কবিতা চর্চা অবশ্য কোনও নিভৃত সাধনার ব্যাপার নয়। লেখামাত্রই তিনি কয়েকজনকে শোনাতে চান, সেইজন্য দু-তিনজন অন্তরঙ্গ ব্যক্তি সে সময় তার কাছাকাছি থাকে। দুচার লাইন লিখেই তিনি তাদের শুনিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ঠিক হয়েছে? উপমাটি কেমন, জুতসই তো? সেই লাইনগুলি মুখে মুখে ছড়িয়ে যায়। রাজপুরীর সবাই জানে মহারাজ বীরচন্দ্ৰ মাণিক্য তাঁর প্রিয়তমা ভানুমতীর স্মৃতি অমর করে রাখছেন কবিতায়।

ভানুমতীর অকাল মৃত্যুতে তাঁর বাপের বাড়ির পক্ষ, রাজধানীর মণিপুরি সম্প্রদায় খুবই ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়ে আছে। নীরোগ মহারানীর এমন আচম্বিতে মৃত্যু বরণ করা খুবই সন্দেহজনক ঠিকই, কিন্তু তাঁর খাদ্যে বিষপ্রয়োগ কিংবা তাঁকে কোনওরকম হত্যার চেষ্টার বিন্দুমাত্র প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রাজবৈদ্যরা সবাই একমত হয়ে ঘোষণা করেছে, মহারানী প্রাণত্যাগ করেছেন সন্ন্যাস রোগে। ঘুমের মধ্যে এই রোগে সহসা শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তবু মহারানীর পুত্র সমরেন্দ্রকে যে দিন যুবরাজ পদ থেকে বঞ্চিত করা হল সেদিনই তাঁর মৃত্যু হল, এ জন্য মহারাজ পরোক্ষে অবশ্যই দায়ী। কিন্তু মহারাজের শোকের বহর দেখে মণিপুরিরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাতে পারছে না।

মহারানীর শ্ৰাদ্ধ হবে মহা আড়ম্বরের সঙ্গে, তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান হবে দু’জায়গায়, আগরতলায় এবং বৃন্দাবনে। মহারাজ স্বয়ং বৃন্দাবনে যাবার অভিপ্ৰায়ের কথা জানিয়েছেন। সে জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন, অথচ রাজকোষের অবস্থা সুবিধের নয়।

মহারাজ একদিন একান্ত সচিব রাধারমণ ঘোষের সঙ্গে নিভৃত আলোচনায় বসলেন। হিসাব কষে দেখা হয়েছে, সমস্ত অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গেলে অন্তত এক লক্ষ টাকার প্রয়োজন। সে টাকা আসবে কোথা থেকে?

ঘোষমশাই একটুক্ষণ চিন্তা করে বললেন, এই কাৰ্তিক মাসে প্রজাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহের উপায় তো দেখি না। পীড়ন করতে গেলে বিদ্রোহ হবে।

বীরচন্দ্র বললেন, তা আমি বিলক্ষণ জানি। সেইজন্যই প্রজাদের ওপর চাপ দিতে চাই না। তাই তো তোমার কাছে অন্য উপায় জানতে চাইছি।

ঘোষমশাই বললেন, আর এক উপায় আছে কিছু সোনাদানা বিক্রি করা। সম্প্রতি মোহরের দাম উঠেছে আঠেরো টাকা ন আনা। গত সপ্তাহে দর ছিল সাড়ে আঠেরো টাকা। এখন ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

মহারাজ ভুরু কুঞ্চিত করে বললেন, সোনা-দানা বিক্রি করতে হবে কলকাতায়। অমনি কলকাতার খবরের কাগজওয়ালারা জেনে যাবে। তোমাদের কলকাতার কাগজগুলো আমার ব্যাপারে সবসময় ছিদ্রান্বেষী। পত্রিকা পলিটিকাল এজেন্ট নিয়োগের ব্যাপারে প্রায়ই আমাকে খোঁচা দেয়। সোনা বিক্রির খবর ফাঁস হয়ে গেলে ওরা ধরে নেবে যে আমি দুর্বল হয়ে গেছি। অনেকেই ধরে রেখেছে যে ত্রিপুরার রাজমুকুট আমি ওয়াজিদ আলি শা’র মতন যেকোনও দিন ইংরেজদের হাতে তুলে দেব!

ঘোষমশাই দৃঢ়স্বরে বললেন, তা কোনদিন হবে না। ত্রিপুরা চিরদিন স্বাধীন থাকবে। তবে ইংরেজ পলিটিকাল এজেন্ট এখানকার বিচার ব্যবস্থার রিফর্ম করার জন্য খুব চাপ দিচ্ছে। এর একটা সুরাহা করা দরকার।

মহারাজ বললেন, দাঁড়াও একটু সুস্থির হয়ে নিই, তারপর ও দিকে মন দেব। সোনা বিক্রি এখন হবে না, অন্য পথ বাতলাও।

ঘোষমশাই বললেন, কিছুদিন আগে এক ইংরেজ এ রাজ্যের বালিশিয়ার পাহাড় ইজারা নিতে চেয়েছিল। এককালীন প্রায় সওয়া লক্ষ টাকা দিতেও তাদের আপত্তি ছিল না। কথাবার্তা কিছুদূর এগিয়ে ছিল, তারপর আপনি আর রাজি হলেন না।

মহারাজ বললেন, ‘হু! রাজি হইনি কেন জান? প্রস্তাবটা ভালোই ছিল, কিন্তু লোকটি যে ইংরেজ। এ রাজ্যে আমি বেশি ইংরেজ ঢোকাতে চাই না।

ঘোষমশাই বললেন, মহারাজ, ইংরেজদের রোধ করার সাধ্য আমাদের নেই। আসতে চাইলে তারা আসবেই। তবু মন্দের ভালো যে এই লোকটি বেসরকারি ইংরেজ। পাহাড়গুলি এমনিই পড়ে আছে, আমরা কোনও কাজে লাগাতে পারি না। ইংরেজরা সেখানে ধাতু-খনিজের সন্ধান করবে। টাকার অঙ্কটাও বেশ ভালো।

মহারাজ দু-এক মিনিট চুপ করে রইলেন। এ প্রস্তাবটি তাঁর মনঃপূত হয়েছে। সাহেবটিকে একবার না বলে দেওয়া হয়েছে, এখন রাজি হলেও সে আর উৎসাহ দেখাবে কি না তা বাজিয়ে দেখা দরকার। চুক্তিটা সারতে হবে গোপনে, যাতে কেউ না ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়ে তিনি রাজ্যের কিছু অংশ ইংরেজকে ইজারা দিচ্ছেন।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মহারাজ বললেন, ঘোষমশাই, আমাকে এক কথায় এক লক্ষ টাকা কে ঋণ দিতে পারতো জান? সে নেই, আজ তারই জন্য আমাকে অন্যত্র অর্থ যাঞ্চা করতে হচ্ছে। নিয়তির কি অদ্ভুত গতি! যাই হোক, তুমি দুএকদিনের মধ্যেই কলকাতায় যেতে পারবে?

ঘোষমশাই বললেন, অবশ্যই পারব মহারাজ।

মহারাজ বললেন, আমার সম্মতিপত্র নিয়ে তুমি নিজে যাও। একেবারে দলিল লিখিয়ে টাকা পাঠাবার ব্যবস্থা করো। এমনভাবে সব কাজটা করবে, যাতে আমার প্রজাদের মধ্যে প্রচার হয় যে তাদের মঙ্গলের জন্যই ইংরেজদের ডাকা হয়েছে!

ঘোষমশাই বললেন, সেটা মিথ্যে প্রচার হবে না। ইংরেজ কোম্পানি এসে এখানে খোঁড়াখুঁড়ির কর্মকাণ্ড শুরু করলে আমাদের প্রজারা অনেকে কাজ পাবে। তাদের জীবিকার সাশ্রয় হবে।

মহারাজ উঠে দাঁড়ালেন। ঘর থেকে বেরুতে গিয়েও থেমে গেলেন আবার। তাঁর মুখে একটা দ্বিধার ভাব। গোঁফ চোমড়াতে চোমড়াতে তিনি বললেন, তুমি ফিরে এলে… আমি বৃন্দাবন যাব … তারপর আমার আর একটা দায়িত্ব আছে। মহারানী ভানুমতী আমার কাছে সেই সন্ধ্যাবেলা একটা ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর শেষ ইচ্ছা পালন করতেই হবে আমাকে।

ঘোষমশাইয়ের মুখের রেখা কাঁপল না, কিন্তু অন্তরে কেঁপে উঠলেন। যুবরাজ রাধাকিশোরকে বঞ্চিত করে আবার সমরেন্দ্ৰচন্দ্রের নাম উত্থাপন করবেন নাকি? এর মধ্যে রাধাকিশোর কিছু কিছু রাজকার্যের ভার নিয়ে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। মহারাজের শোকের সময় তো সব কিছু সামলেছেন তিনিই। এখন হঠাৎ রাধাকিশোরকে সরিয়ে দিলে প্রচণ্ড একটা গণ আন্দোলন হবে। এ রাজ্যের অনেকেই রাধাকিশোরের পক্ষপাতী।

ধীরে ধীরে মস্তক আন্দোলন করে মহারাজ বললেন, তুমি যা ভাবছি, তা নয়, ঘোষমশাই, তা নয়। এখন আমি বিশৃঙ্খলা চাই না। তুমি ঘুরে এসো, তারপর আমি সব কথা খুলে বলব!

কক্ষ থেকে যেতে গিয়ে আবার কিছু মনে পড়ায় তিনি থমকে দাঁড়ালেন। ঘোষমশাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললেন, তোমার আর একটা কর্তব্য আছে। কলকাতায় যাচ্ছই যখন, একবার ঠাকুর বাড়িতে ঘুরে এসো আমার প্রতিনিধি হয়ে। দ্বারিকানাথ ঠাকুরের নাতি অতি দিব্য কবিতা লিখেছে, তা পাঠ করে আমি বিশেষ শান্তি পেয়েছি। দেশের রাজার উচিত এমন এক প্রতিভাবান কবিকে শিরোপা দেওয়া। ইংরেজ ব্যাটারা তো এই কবিতার মর্ম বুঝবে না, কোনওদিন আমাদের কবিদের সমাদরও করবে না। তুমি খানকতক মোহর আর শাল-দোশালা আমার হয়ে উপহার দিও সেই কবিকে।

<

Sunil Gangapadhyay।। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়