বিদ্যোৎসাহিনী সভা থেকে বেরুবার মুখে একদিন রাইমোহনকে ধরলেন বিধুশেখর। প্রতি শনিবার সন্ধ্যাকালে তিনি এসে সিংহবাড়ির বৈঠকখানায় বসে থাকেন। নজর রাখেন কারা আসা-যাওয়া করছে। মজলিস কক্ষে।

সভা চলাকালীন বিধুশেখর সেখানে কক্ষনো যান না। ছেলেছোঁকরাদের ব্যাপার, তাঁর মতন একজন প্ৰবীণ ব্যক্তির সামনে ওরা কখন কী অসমীচীন বাক্য বলে ফেলবে তার ঠিক নেই, তাঁর নিজের মান রক্ষা করাই দায় হতে পারে। ছোটকু অর্থাৎ নবীনকুমার এখন এই সভা নিয়ে মেতেছে, বিধুশেখর এতে কোনো বাধার সৃষ্টি করেননি, কিন্তু ব্যাপারটিকে তিনি সন্দেহের চক্ষে দেখেন। কতকগুলি অল্প বয়েসী যুবক সন্ধ্যাবেলা এক স্থলে মিলিত হয়ে গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এবং দেশোন্নিতির চিন্তায় ললাটে ঘর্ম ছোটায়, এ যেন তাঁর কাছে ঠিক স্বাভাবিক মনে হয় না। এ আবার কোন নতুন ধরনের হুজুগ?

সারা দেশেই যুবক দলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অনাচার ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। অতি অল্প বয়েসেই তারা সুরাপান ধরছে, এবং ধরা মানে কী, সে যেন চূড়ান্তভাবে আঁকড়ে ধরা। আগে তবু গুরুজনদের সামনে যেটুকু চক্ষুলজ্জা  ছিল এখন তারও বালাই নেই। শহর ছেয়ে গেছে বারাঙ্গনায়। পূর্বে এদের পৃষ্ঠপোষক ছিল মধ্যবয়েসী ধনীরা, এখন যুবকরাই সে সব কুস্থানে প্রকাশ্যে গতায়াত করে। কিছুটা ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তনের ফলে যুবকদের মধ্যে সরকারী চাকুরি পাবার সুযোগ এসেছে, তৈরি হয়ে উঠেছে একদল চাকুরিজীবী যুব-সম্প্রদায়। অনেকে আসছে। মফঃস্বল থেকে, দেশের বাঁড়িতে স্ত্রী-পুত্র-পরিবার ফেলে রেখে শহরে মেস-বাড়িতে দল মিলে থাকে এবং ইন্দ্ৰিয় সুখ চরিতার্থ করার জন্য সন্ধ্যার পর কুলটা নারীদের সংসর্গে মত্ত হয়ে ওঠে। সন্ধ্যার পর এই অসংযমী মদ্যপ কামপরায়ণদের দৌরাত্ম্যে পথ চলা দায়!

আবার এক শ্রেণীর যুবক মেতেছে ধর্ম নিয়ে। সেও এক ধরনের অনাচার। কিছুদিন আগে পর্যন্ত খুব খৃষ্টান হবার হিড়িক উঠেছিল, এখন তা খানিকটা প্রশমিত হলেও একদল আবার নিরাকার ব্ৰহ্ম ভজনার নামে এক উৎকট ধর্ম নিয়ে পাগলামি শুরু করেছে। সে ধর্মের কোনো মাথামুণ্ড নেই, সনাতন হিন্দু ধর্মকে হেয় করাই যেন তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।

বিধুশেধর ভেবেই পান না যে, ধর্ম কিংবা সুরা কিংবা পরিনারী নিয়েই যদি দেশের যুবকরা সকলে মেতে থাকে, তাহলে পরিবারের শুচিতা ও সমৃদ্ধি রক্ষা হবে কী প্রকারে? যারা ব্যভিচারী এবং নেশাখের তারাও যেমন নিজ নিজ সংসারের সর্বনাশ করছে, তেমনি যারা ধর্ম-পাগল, তাদেরও জাগতিক উন্নতির দিকে কোনো মন নেই। বিষয়সম্পত্তির কথা চিন্তা করাও তাদের চক্ষে যেন পাপ। এই সুযোগে ইংরেজ লুটেপুটে নিচ্ছে দেশের যাবতীয় সম্পদ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির দেবেন্দ্র ধর্মের নামে নাচাচ্ছেন এই সব যুবকদের। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের অকালকুষ্মাণ্ড পুত্র এই দেবেন্দ্র, ওঁর পিতা পরম সাহসের সঙ্গে ইংরেজদের সঙ্গে পর্যন্ত বাণিজ্য প্ৰতিযোগিতায় নেমেছিলেন। আর দেবেন্দ্র সে সব গোল্লায় দিয়ে সঞ্চিত বিষয়সম্পত্তির অংশ বেচে বেচে ধার শুধছেন এবং ধর্ম করছেন।

এ সব কথা চিন্তা করলেই বিরক্তিতে বিধুশেখরের ভ্রূকুঞ্চিত হয়ে যায়। ধর্ম হিন্দুদের কাছে একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। গৃহী হিন্দু নিজ নিজ রুচি অনুযায়ী ধর্মচৰ্চা করবে এবং নিজের জীবনে সুনীতিগুলি যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করবে। কিন্তু ধর্মের নামে একদল লোক এক স্থানে মিলিত হয়ে বক্তৃতা করবে কিংবা গান গাইতে গাইতে নৃত্য বা ক্ৰন্দন শুরু করবে অথবা পথ দিয়ে মিছিল করে যাবে, এ আবার কী অদ্ভুত কথা! এ যেন বোষ্টম ন্যাড়া-নেভীদের ব্যাপার। তা হলে সংসার ছেড়ে ওরা আশ্রম খুললেই পারে, কিংবা বনেজঙ্গলে চলে যাক না! দেবেন্দ্ৰ তো আবার প্রতি বৎসরই একটি করে পুত্র বা কন্যার জন্ম দিয়ে চলেছেন!

নবনীকুমার অতি দুরন্ত, অতি খেয়ালী। বিধুশেখর জানেন, এ ছেলের ওপর খুব কড়া নজর রাখা দরকার, একটু রাশ আলগা দিলেই এ সম্পূর্ণ উৎসন্নে চলে যেতে পারে। নবীনকুমারের স্বভাব এমনই অস্থির যে, কোনো দুষ্ট লোকের কুমন্ত্রণায় যে-কোনো কু-কাজ করা তার পক্ষে মোটেই অসম্ভব নয়। তাছাড়া, এখন থেকেই তার যেমন খরচের হাত দেখা যাচ্ছে, তাতে রামকমল সিংহের অতুল বৈভবও সে উড়িয়ে দিতে পারে ইচ্ছে করলে। আইন মোতাবেক এখনও নবীনকুমার সাবালক নয়, সম্পত্তি ও জমিদারি পরিচালনার অধিকার তার এখনো জন্মায়নি, সে অধিকার এখনো বিম্ববতী ও বিধুশেখরের। পুত্ৰস্নেহে অন্ধ বিম্ববতী পুত্র যখন যা টাকা পয়সা চায়, তাই তিনি দিয়ে দেন, বিধুশেখর অনেক চেষ্টা করেও এর নিবারণ করতে পারছেন না।

নবীনকুমার জ্ঞান ও বিদ্যাচচার জন্য এমনভাবে মেতে উঠেছে, এটাকে বিধুশেখর এখনো সুলক্ষণ বলে গণ্য করেননি। তাঁর ধারণা, এ উচ্ছ্বাস অতি সাময়িক, এ যেন ঠিক বয়সোচিত নয়, হঠাৎ সে এর সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে চলে যেতে পারে বলে বিধুশেখরের সন্দেহ হয়।

তিনি নিজে বিদ্যোৎসাহী সভার অধিবেশনে যোগদান করেন না, কিন্তু দিবাকরকে তিনি চর হিসেবে লাগিয়েছেন। দিবাকর আশেপাশে ঘুর ঘুর করে। দিবাকরের মারফৎ তিনি জেনেছেন যে, ঐ সভায় শ্যাম্পেন-ব্র্যাণ্ডি চলে না। এমনকি গোপনেও না। স্ত্রীলোক বিষয়ে রসালাপও হয় না। ওখানে। আবার ধর্ম নিয়েও কোনো প্রসঙ্গ ওঠে না ঐ সভায়। শুধু নিরস সমাজ সংস্কার ও সাহিত্য আলোচনা? বিধুশেখরের খটকা লাগে।

এই সভার উদ্যোগে থিয়েটার করার কথা শুনে বিধুশেখর প্রথমে প্রবল বাধা দিতে চেয়েছিলেন। যাত্রা, পালাগান এসব নিছক ভাঁড়ামো ও নিকৃষ্ট রসের ব্যাপার, ইতর শ্রেণীর জনসাধারণই সে সব উপভোগ করে, কচিৎ কখনো ভদ্র ব্যক্তিরা তা দর্শন করে স্বাদ বদলায় মাত্র। তা বলে সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকেরা নিজেরা ঐ সব করবে?

কিন্তু নবীনকুমারের জেদের কাছে বিধুশেখরকে বশ্যতা স্বীকার করতে হয়েছে। যাত্রা, পালাগান আর ইংরেজদের অনুকরণে এই থিয়েটার নাকি এক নয়। উচ্চপদস্থ সাহেবরা এই প্রকার থিয়েটারের উৎসাহদাতা। কিছু কিছু হিন্দু ধনী গৃহে ইদানীং এর প্রচলন শুরু হয়েছে।

নবীনকুমার বিধুশেখরকে এড়িয়ে চলে, পারতপক্ষে সামনে আসতে চায় না। কখনো মুখোমুখি পড়ে গেলে সে কোনো একটা ছুতো দেখিয়ে পালায়। সে প্রকাশ্যে বিধুশেখরকে অগ্রাহ্য করে না, বিধুশেখরের প্রতি মনে মনে তার এখনো কিছুটা ভয় ভোব আছে। কিন্তু বিধুশেখর কোনো মতামত জোর করে তার ওপর চাপিয়ে দিলে সে মায়ের কাছে প্ৰবল আবদার জানিয়ে সেটাকে খারিজ করিয়ে আনে। এইভাবে সে থিয়েটারের অনুমতি আদায় করেছে।

বিধুশেখর বুঝেছেন, জোর জবরদস্তি করে এ ছেলেকে ঠাণ্ডা রাখা যাবে না। একে বশে রাখতে হবে নানাপ্রকার গোপন সুকৌশলে।

বৈঠকখানা ঘরে তিনি আরাম কেদারায় বসে আলবোলার নল মুখ দিয়ে টানছিলেন, পায়ের কাছে দিবাকর তাঁর পদসেবায় ব্যাপৃত। বিদ্যোৎসাহী সভার কার্যক্রম শেষ হয়েছে, বক্তা ও সদস্যরা একে একে বিদায় নিচ্ছেন, বিধুশেখরের চোখ সেই দিকে। একেবারে শেষের দিকে রাইমোহনকে বেরুতে দেখে বিধুশেখর চকিতে উঠে বসে দিবাকরকে বললেন, ঐ লোকটাকে ডেকে নিয়ায় তো! ঐ যে সিড়িঙ্গেটা—।

দিবাকর ডেকে নিয়ে এলো রাইমোহনকে।

বিধুশেখরের এক চোখের ওপর আজকাল একটি কালো ঢাকনা দেওয়া থাকে। ঐ নষ্ট চক্ষুটিতে তাঁর একেবারেই আলো সহ্য হয় না। বৈঠকখানা ঘরে মাথার ওপর জ্বলে একশো মোমের বিরাট ঝাড়বাতি।

সুস্থ চোখটিতে রাইমোহনের আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই যে, তোমার নাম যেন?

হাত দুটি যুক্ত করে বিনয়ে খানিকটা কুক্ত হয়ে গিয়ে বিগলিত হাস্যে রাইমোহন বললো, হুজুর, আমাকে বারবার দ্যাকেন। আর বারবার ভুলে যান। অবশ্য আমি অতি সামান্য প্রাণী, হুজুরের মতন ব্যস্ত মানুষ আমাকে মনে রাকবেনই বা কী করে! অধমের নাম রাইমোহন ঘোষাল।

বিধুশেখর বললেন, ই, মনে পড়েচে। তা তুমি আবার এখেনে এসে ভিড়লে কী করে? তোমাকে তো আমি দেকিচি সেই কমলী মাগীটার বাড়িতে!

—হুজুর আমাকে আরও অনেক জায়গায় দেকেচোন। স্বর্গীয় বাবু রামকমল সিংগী আমায় বিশেষ তেঁহ কত্তেন। তেনার অভাবে আমাদের মতন দশ-পাঁচজন একেবারে অনাথ হয়ে পড়িচি!

—বুজলুম! তুমি নিজেই একদিন বলেছিলে, তুমি হলে গে সুখের পায়রা! তা তোমার আবার বিদ্যেচৰ্চার মতিগতি হলো কবে থেকে? সুখের পায়রাদের তো এমন সুখ্যাতি নেই!

—হুজুর, মানুষের ভাগ্যে কখুন কী আচে, স্বয়ং কালপুরুষও বোধ হয় তা বলতে পারেন না। বয়েস হলে বেড়ালও নিরামিষাশী হয়। বয়েসে ভোগীও যোগী হয়। যে পাপী সেও ভোক নিয়ে অন্য পাপীদের তরায়। তা আমারও আপনাদের পাঁচজনের আশীর্বাদে বয়েস কম হলো না! তাই আমি একদিন নিজেকে শুধোলুম, ওরে অবোধ মন, বেলা তো যেতে বসলো, এতদিন জগতে থেকে কী সঞ্চয় কল্লি? জ্ঞান-বুদ্ধি তো কিচুই হলো না। সোনা বাইরে পড়ে রইলো, আমি শুদু আঁচলে গিরে বেধিচি! এখন শেষ বেলায় দুটো ভালো কতা, দেশের উন্নতির কতা অন্তত কিচু শুনে যাই, নইলে যমরাজের কাচে কী জবাবদিহি দেবো! তাই দেকলুম, বাবু রামকমল সিংগীর সুযোগ্য পুত্ৰ নবীনকুমার বিদ্যোৎসাহী সভা খুলেচেন, তাই আমিও সেখেনে এক কোণায় ঠাঁই নিলুম।

—ওরা তোমাকে ঠাই দিল?

—অযোগ্যকেও তো মানুষ কথুনো কখুনো দয়া করে! কনে পাঁচটা ভালো কতা গেলেও আত্মার উন্নতি হয়। আহা ছেলে আপনার হীরের টুকরো! ধন্য রামকমল সিংগী, এমন পুত্রের জন্ম দিয়ে গ্যাচেন। প্রতিভার জ্যোতিতে এ ছেলে যেন চন্দ্র-সৃয্যি এক করেচেন!

—তা তো বুঝলুম। কিন্তু এখানে যারা আসে তারা তো সবাই কলেজে-পড়া, ইংরেজি-জানা কেষ্ট-বিষ্ট ধরনের লোক। তাদের মধ্যে তুমি ঠাঁই পেলে কী করে? পোশাকে-আসাকে তো দিব্যি ভেক ধরেচো দেকচি, কিন্তু হাঁ করলেই যে তোমার বিদ্যে বেরিয়ে যাবে!

—আজ্ঞে আমি ইংরেজিটে জানিনি বটে, কিন্তু অল্প বয়েসে দু-চার পাতা শাস্তর পড়িচিলুম। আমি মন্দ হতে পারি, আমার বংশটা তো মন্দ নয়। বংশের ধারায় আমার রক্তের মধ্যে কিচু নেকাপড়ার বিদ্যে আচে। মাঝে মাঝে সেই রক্তই কথা কয়ে ওঠে।

—ব্যাঃ, বলতে কইতে তো দিব্যি শিকে গ্যাচে দেকচি। কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।

—তা হুজুর আর একটি সত্যি কতাও বলি। আমাদের এ সভায় নেছক ট্যাস-ফিরিঙ্গিদের মতন সর্বক্ষণ ইংরেজিতে কত হয় না। বাংলাতেও কত হয়। বাবু নবীনকুমার বাংলার বড় পৃষ্ঠপোষক, কাজে কাজেই বাংলায় যখন দেশের কত হয়, জ্ঞানের কত হয়, তখন মাঝেমদ্যে আমিও একটু আধটু ফোঁড়ন দিই, দু-চারটে শাস্তরের বচন উগরে দিই।

—বেশ, বেশ, তোমার যোগ্যতা বুঝলুম। কিন্তু ঠিক কোন উদ্দেশ্যে এখানে যাতায়াত করছে, সেটি বুঝলুম না এখনো। টাকা পয়সা কিছু পাবার আশা আচে নাকি?

রাইমোহন দারুণ চমকিত হয়ে জিভ কেটে বললো, আজ্ঞে না, হুজুর! পয়সার ধান্দায় তো অনেক ঘুরিচি, এখন একটু নিষ্কাম জ্ঞানচর্চার সাধ জেগেচে। আমাদের সভায় সভ্যদের চাঁদা ধার্যকরার কতা উঠেচে, আমিও চাঁদা দোবো। আর তাছাড়া—

বিধুশেখর ব্যগ্র হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তাছাড়া?

—সভ্যরা যে থ্যাটার কচ্চেন, তার জন্য আমি তিনখানা গান বেঁধে দিইচি। সুরও আমার দেওয়া। বাবু নবীনকুমারকে আমি গান শিকোচ্চি। এখেনে অনেক ইংরেজি জানা, জ্ঞানীবাবুরা এলেও আমার মতন বাংলা গান বাঁধার এলেম তো আর কারুর নেই। কাজে কাজেই, আমিও যাকে বলে, প্রয়োজনীয়।

—এবার অনেকখানি খোলসা হয়েচে। তোমার মতন বুদ্ধিমানের যোগ্য কাজই বটে, নিজেকে আগে প্রয়োজনীয় করে ফেলা দরকার। তারপর যত ইচ্ছে ঐ কচি ছেলেটার মাতায় হাত বুলোবে, এই তো? সবাই ওর মাতাটি চিবিয়ে চুষে খেয়ে ফেলার জন্য একেবারে মুখিয়ে আচে, তাই না রে, দিবাকর? কিন্তু এ কতা জানো কি, যতদিন আমি জীবিত আচি, ততদিন সেটি হচে না? সে রকম চেষ্টা যে করবে, তাকে আমি এখুনো ঝাড়ে-বংশে একেবারে নির্বংশ করে দিতে পারি?

বিধুশেখরের এই হুমকিতেও রাইমোহনের মুখমণ্ডলে কোনো ভয়ের রেখাপাত হলো না। ওষ্ঠে একই রকম হাস্য লেগে রইলো।

বিধুশেখর তার দিকে তীব্র দৃষ্টি স্থাপন করে একটুক্ষণ চুপ করে রইলে সে আবার বললো, হুজুর, আমার আর এখন দাঁত নেই যে কারুর মুণ্ড চিবিয়ে খাবো। বাহুতে সে শক্তি নেই, নোখে। সে ধার নেই যে, কারুর ঘাড় মটকাবো। এখুন। পরকালের ডাক এসে গ্যাচে, এখুন যতটা পারি চিত্তের বিকার সাফ করে যেতে চাই। আমার ধর্মে তেমন মতি নেই, তাই জ্ঞান চাচার দিকে ঝুঁকিচি! আপনাকে তো বল্লম, এ আমার নিষ্কাম সাধনা!

—এ অতি উত্তম কতা! এবার আমি তোমার গান শুনবো। দিবাকর, তুই বাইরে যা। দরোজাটা বন্ধ করে দিবি আর আমি ফের না ডাকা পর্যন্ত এখেনে আসবিনি।

দরজা বন্ধ হবার পর বিধুশেখর বললেন, বাসো, সামনের ঐ কেদারাটায় বসে শোনাও, থিয়েটারের জন্য কেমন গান বেঁধেচো!

একটু গলা খাঁকারি দিয়ে রাইমোহন গুণগুণ করে গান ধরলো।

নিশি যায় হায় হায় করি কি উপায়
নাথ বিহনে সখি বুঝি প্রাণ যায়
হ্যার হ্যার শশধর অস্তাচলগত সখি
প্ৰফুল্লিত কমলিনী, কুমুদ মলিনমুখী
আর কি আসিবে কান্ত তুষিবে আমায়—।

শিবনেত্র হয়ে গাম্ভীর্য মাখা মুখে বিধুশেখর শুনতে লাগলেন গান। তাঁর কোনো রকম সংগীতপ্রীতি আছে বলে আগে কখনো শোনা যায়নি। এ রকম হালকা আমোদে তিনি কখনো সময় ব্যয় করেন না। আজ রাইমোহনের মুখ থেকে গানগুলি শুনবার অন্য গূঢ় উদ্দেশ্য আছে।

একটি শেষ হবার পর তিনি বললেন, আর একটি শুনি।

রাইমোহন আবার ধরলো :

হৃৎপিঞ্জরের পোষা পাখি উড়ে এলো কার
ত্বরা করে ধর গো সখি দিয়ে হৃদয়ের আধার।
কোন কামিনীর পোষা পাখি, কাহারে দিয়েচে ফাঁকি
উড়ে এলো দাঁড় ছেড়ে শিকলিকাটা ধরা ভার।

বিধুশেখরের মুখে আরও গাম্ভীর্যের মেঘ জমাট হলো। তিনি ধমক দিয়ে বললেন, শুধু এই সব ছ্যাবলামো গান তুমি শিখোচ্চো ওকে?

বিধুশেখরের গান শোনার উদ্দেশ্য রাইমোহনের বুঝতে বাকি ছিল না। সেইজন্যই সে দ্বিতীয় গানে প্ৰণয়ের আধার গাইবার সময় বদলে দিয়ে গেয়েছে, হৃদয়ের আধার।

সে নিরীহ মুখ করে বললো, হুজুর, নাটকে য্যামন য্যামন কতা, সেই অনুযায়ী তো গান বাঁধতে হবে। সবারই খুব পছন্দ হয়েচে!

—তা হবে না কেন? এ সব চটুল জিনিস আর ভালো লাগবে না ছোঁকরাদের? এ তো মেয়েছেলের গান, এই সব গান তুমি নবীনের মুখে গাওয়াচ্চো?

—আজ্ঞে, আমাদের নাটকে যে উনি রাজকুমারীর ভূমিকায় অ্যাক্টো কচ্চেন! সেই জন্যিই এমন গান!

—রাজকুমারী হলেই সে সর্ব সময় প্রেম লীলের জন্য হাংলামি করবে? কেন, রাজকুমারীরা বুঝি কখুনো ভক্তির গান গায় না? তুমি ভক্তির গান শিখোও ওকে, ভালো হয় যদি শ্যামাসংগীত–

রাইমোহন তৎক্ষণাৎ বললো, তাও আচে হুজুর, এই যে তৃতীয় গানটি শুনুন :

অনুগত আশ্ৰিত তোমার
রেখো মা, মিনতি আমার…

এই গানেও রাইমোহন নাথ বদলে মা করে দিল এবং তার প্রণয় গীতিটি দিব্যি শ্যামাসংগীত হিসেবে চলে গেল।

বিধুশেখর এবার কিছুটা সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, তোমায় দিয়ে আমার দু-চারটি কাজ আচে।

দিবাকরের উদ্দেশ্যে তিনি হাঁক দিতেই দিবাকর দরজা, ঠেলে উঁকি দিল। বিধুশেখর তাকে হুকুম দিলেন, খাজাঞ্চির কাচ থেকে কুড়িটে টাকা নিয়ে আয়, আমার নাম করে।

দিবাকর চলে যেতেই রাইমোহনকে জিজ্ঞেস করলেন, থাকা হয় কোতায়? জানবাজারে ঠেঁটি মেয়েছেলেটার কাচে?

রাইমোহন বললো, না না, হুজুর, সেখেনে আমি কালেভদ্রে দু-চারবার গেচি মাত্তর। যবে থেকে শুনিচি আপনি ওকে ও বাড়ি থেকে বেঁটিয়ে বিদেয় কত্তে চান, তারপর আর আমি ও ধারও মাড়াইনি! ও বিদেয় হয়নি এখুনো?

—মামলা চলচে এখুনো। অমন দাগাবাজ মাগী আর দুটি দেকা যায় না! সমানে লড়ে যাচ্চে। আমার মনে হয় তলে তলে কেউ ওকে বুদ্ধি জোগান দেয়, ওর একলার এমন ক্ষ্যামতা নেই।

—তা হতে পারে, হুজুর, ওর কাচে অনেক মাতা মাতা লোকেরা আসে।

দিবাকর কুড়িটি সিক্কা টাকা এনে দিল। টাকাগুলি নিয়ে বিধুশেখর আবার দিবাকরকে ইঙ্গিত করলেন বেরিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিতে।

তারপর টাকাগুলি রাইমোহনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, এই নাও।

রাইমোহন বিরাট বিস্ময়ের সঙ্গে বলে উঠলো, টাকা? টাকা কিসের জন্য, হুজুর?

—কেন, তুমি টাকা ছোঁও না নাকি? টাকা অপবিত্তর জিনিস?

—আজ্ঞে না, টাকা হলো বক্ষের হৃৎপিণ্ড, নয়নের মণি, বাপ-মায়ের স্তেঁহ আর সন্তানের ভালোবাসা। টাকাই ইহলোকের মোক্ষ। টাকার বাণ্ডিলে বসতে পারলে কত পাপী-তাপীও মহাত্মন বনে যায়। খালি জিজ্ঞেস কচ্চি, হঠাৎ আমার ওপরে আপনার এই দয়া কেন?

—ধরে নাও, তুমি গান শোনালে তার ইনাম। বাড়ির দোরগোড়ায় ভিকিরি এসে গান শোনালেও তাকে কিচু দিতে হয়।

রাইমোহন টাকার তোড়াটি দু হাতে ধরে বারবার কপালে ঠেকাতে লাগলো।

নিবন্ত আলবোলায় কয়েকবার বড় বড় টান দিয়ে আবার চাঙ্গা করে নিয়ে বিধুশেখর বললেন, মাসে মাসে তুমি আমার কাঁচ থেকে কুড়ি টাকা পাবে। তবে তার বদলে শুদু গান শোনালে চলবে না। তোমাদের ঐ সভায় কী কী কতাবাত হয় তা সব আমায় জানাবে। পাই পয়সা পর্যন্ত, কিচু বাদ না यश!

এবার একটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রাইমোহন বললো, নিশ্চয় হুজুর, এ সব কতা আপনার জানা তো দরকার বটেই!

—নবীন যাতে ভুল পথে না যায়, সেদিকে তোমায় নজর রাকতে হবে।

–অবশ্যই রাকবো!

—এর মধ্যে বেসুরো কিচু তোমার নজরে এয়েচে? ঐ থিয়েটারের হুজুগটা আমার পছন্দ নয়, তাও কতা শুনলে না।

—ওটা নির্দোষ আমোদ, ওর মধ্যে দোষের কিচু নেই। তবে ঐ নাস্তিক বিদ্যেসাগরকে নিয়ে যে এত মাতামতি করা হচ্চে, সেটা ঠিক ভালো কতা নয়।

—বিদ্যেসাগর নাস্তিক? তাঁকে তো আমি অনেকদিন ধরে চিনি। বয়েস কম, একটু মাতা-গরম ধাঁচের, কিন্তু মানুষটি নির্লোভ। ছোটকুর হাতে-খড়ির সময় দক্ষিণা, বিদেয় কিচুই নিতে চায়নি, বড় অবাক হয়েচিলুম হে! বামুন পণ্ডিত অথোচো অর্থলোভ নেই, কলিকালে এমন হয়?

—কিন্তু হুজুর, কলিকালেই এমন হয় যে বামুন পণ্ডিত, অথচ নাস্তিক! ঐ বিদ্যেসাগর নাস্তিক ছাড়া কী? বেধবাদের বে দিতে চায়!

—কী বললে?

—আপনি শোনেননি? এই নিয়ে শহরে কত সোর উঠেচে! আপনার নবীনকমার কিন্তু বেধবা বে নিয়ে খুব নেচেচে।

বিধুশেখর কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। হঠাৎ তাঁর কণ্ঠ বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে গেল। নিজের এই বৈকল্যে অবাক হলেন তিনি। একটু পরে মুখ তুলে অসহায় স্বরে বললেন, আমার পাঁচ মেয়ে, তাদের কারুরই ভাগ্যে সধবা হয়ে থাকা ঘটলো না। আমার প্রাণাধিক কন্যা বিন্দু কাশীতে গিয়ে আত্মঘাতিনী হয়েচে। আমি সব সয়িচি। সমাজ ও দেশাচারের মুখ চেয়ে আমি কখনো দুর্বল হইনি। কোনো ভ্ৰষ্টাচারের প্রশ্রয় দিইনি। কিন্তু এখুন বয়েস হয়েচে, এখুন। আর পারি না। ঘোষাল, তুমি বিধবাদের কথা আমার সামনে কক্ষনো উচ্চারণ করো না! ওরা যা কচেচ করুক।

রাইমোহন চুপ করে গেল।

বিধুশেখর আবার বললেন, আমিই ঐ বিদ্যেসাগরকে এনে নবীনের হাতেখড়ি দিইয়েচি, বিদ্যেসাগর ওর গুরুস্থানীয়। এখন যদি নবীন তার গুরুর কথা মান্য করে চলে তা হলে আমি কোন মুখে নিষেধ করবো?

—তা অবশ্য ঠিক কত।

—তুমি একটু নজর রেকো, নবীন যেন কুসঙ্গে না পড়ে, কুপথে না যায়। আমাদের দুই বংশে এই একটি মাত্র পুরুষ সন্তান!

—ছেলে আপনাদের একেবারে হীরের টুকরো। এতটুকুনি বয়েস অথচ কী মেধা, কত বুঝদার, এমনটি আর কেউ কখুনো দেকেনি!

বিধুশেখরের কাছ থেকে বিদায় গ্রহণ করে রাইমোহন পথে বেরিয়ে পড়লো। শরীরটা বেশ উষ্ণ আর চনমনে লাগছে। লাগবেই তো, ফতুয়ার পকেটে নগদানগদি কুড়িটা টাকা। খুব ইচ্ছে করছে সোডা ওয়াটার দিয়ে দু-চার গেলাস নাম্বার ওয়ান একসাক্যাস্টলিয়ন ব্ৰাণ্ডী খেতে। অনেক দিন ওসব খাওয়া হয় না। আগের সে জীবন এখন নেই। নবীনকুমারের সভায় তাল রাখবার জন্য আজকাল রাইমোহনকে বইপত্র পড়তে হয়।

রাইমোহন উসখুসি করতে লাগলো। আবগারির কড়াকড়ির জন্য ইদানীং সন্ধে হতে না হতেই সূরার দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তবু দু পয়সা বেশী দাম দিলে এ সময়ও কোথায় ওসব পাওয়া যায়, রাইমোহন তা জানে, কিন্তু সেখানে গেলে পুরোনো ইয়ার-বক্সীদের পাল্লায় পড়তে হবে।

পথে আজ গোরা-পুলিশের বড় গিসগিস। রাইমোহন প্ৰথমে ভাবলো, এ বোধ হয় সেই হিসির হুজুগ। শহরে তো হুজুগের অভাব নেই। কিছুদিন ধরে নগরপালকরা শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য খুব ক্ষেপে উঠেছে, ঝোঁপ-ঝাড় সাফ হচ্ছে, পুকুর-ডোবা ভরাট করার কাজ চলেছে পুরোদমে, তার ওপর এক হুকুম জারি হয়েছে যে পথে কেউ প্রস্রাব করতে পারবে না। এমন অদ্ভুত আইনের কথা আগে কেউ শোনেনি, অনেক পথচারী মন্তব্য করেছিল, রাস্তায় না মুতে তবে কি লোকে শোবার ঘরে মুততে যাবে? কিন্তু মাসকরার বিষয় নয়, বয়স্ক থেকে বালক নির্বিশেষে বেশ কয়েক জনকে পাহারাওয়ালারা ঐ নির্দেশ ভঙ্গ করার অপরাধে কোতোয়ালিতে ধরে নিয়ে গেছে এবং তাদের জরিমানা করা হয়েছে।

খানিক দূর এগিয়ে রাইমোহন বুঝলো, আজ সে ব্যাপার নয়। পথে মানুষ জন বেশী নেই। পুলিশের সংখ্যাই যেন বেশী। একদল দিশি সিপাহীর সঙ্গে কয়েকজন গোরা-সৈন্যকে কুচকাওয়াজ করে আসতে দেখে রাইমোহন দেয়াল সেঁটে দাঁড়িয়ে ফুল। তারপর আবার একটু এগুতে যেতেই আবার আর একটি ঐ রকম দল।

এক ভোজপুরী বিশালদেহী পাহারাওয়ালা লম্বা লাঠিটিকে বাম বগলে রেখে দু হাতে খৈনী টিপছিল, রাইমোহন তার সামনে গিয়ে মস্ত সেলাম বাজিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সিপাহীজী, আজ ব্যাপার কী, এত সেনা-পুলিশের যাতায়াত?

পাহারাওয়ালাটি তার দিকে কৃপার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, জানো না, আজ অমুক নবাব আসবে?

সিপাহী যে নবাবের নামটি কী বললো, তা রাইমোহন ঠিক বুঝতে পারলো না। কেমন যেন অচেনা নাম। সে ভাবলো, মরুক গে, নবাব বাদশাদের খোঁজ রেখে তার দরকার কী? অমন কত রাজা-মহারাজা, নবাব-বাদশা এই শহরে আসে যায়!

একটু রাত হলে কেরাঞ্চি গাড়িগুলো আর পাওয়া যায় না। পাল্কীওয়ালারাও উধাও। রাইমোহনকে হেঁটেই যেতে হবে বৌবাজার পর্যন্ত। সে সন্তপণে চতুর্দিকে চেয়ে চলতে লাগলো।

 

হীরেমণির ছেলে চন্দ্রনাথ সেই যে পলায়ন করেছে, আর সে ফেরেনি। রাইমোহন দু-চারবার দেখেছে তাকে। কখনো সে জাহাজঘাটায় কুলিগিরি করে, কখনো মাটি কাটার কাজ নেয়। রাইমোহনকে দেখলেই সে রক্তচক্ষে তাকায়। রাইমোহন বুঝে গেছে যে ওকে আর ঘরে আনা যাবে না। তার মা এবং রাইমোহনের প্রতি এক সময় যে তীব্ৰ অভিমান ছিল, তা এখন জাতক্ৰোধ। রাইমোহন চন্দ্রনাথকে দেখতে পাওয়ার কথা হীরেমণিকে আর বলে না।

হীরেমণি তার পেশা একেবারে পরিত্যাগ করেছে। সে আর গানও গায় না। রাইমোহন অনেক করে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল, গানটা অন্তত না ছাড়তে, সে হীরা বুলবুল, শহরে তার গানের কত কদর! কিন্তু হীরেমণি কিছুতেই তা শুনবে না! যে বড়মানুষরা তার ছেলের সর্বনাশ করেছে, তাদেরই আবার গান শুনিয়ে সে মনোরঞ্জন করবে? তার ঘৃণা হয়!

রাইমোহন হালকা পায়ে বাড়িতে ঢুকলো। আজ তার মনে বেশ ফুর্তি। সারা বাড়ি অন্ধকার। হীরেমণি আজকাল যখন তখন বাতি নিবিয়ে শুয়ে থাকে। গন্ধক-কাঠি নিয়ে রাইমোহন কয়েকটা বাতি জ্বেলে দিল। নিজের ঘরের পালঙ্কের ওপর হীরেমণি শুয়েছিল উপুড় হয়ে, রাইমোহন তার পিঠে আস্তে হাত রেখে ডাকলো, হীরে, ওঠ্‌! আজি তোকে একটা গান শোনাবো!

হীরেমণি বললো, না।

রাইমোহন বললো, ওঠ না! এ গান বাবুদের জন্য নয়কো। এ গান শুধু তোতে আমাতে দুজনে শুনবো। ওঠ, দ্যাক, মন ভালো হয়ে যাবে!

-না।

—হীরে আমার, মানিক আমার, সোনা আমার, আমার দিনের কমলিনী, রাতের কুমুদিনী, ওঠ!

—না। তুমি খেয়ে নাও গে। খাবার ঢাকা আচে।

রাইমোহন এবার জোর করে হীরেমণির মুখটা ফিরিয়ে বললো, লক্ষ্মীটি, ওঠ। দুজনে একসঙ্গে বসে খাবো। শোন, হীরে, এই আমার কতা শুনে রাক। যারা তোর ছেলে চাঁদুর ওপর অবিচের করেচে, তাদের ওপর আমি শোধ নেবোই নেবো, নেবোই নেবো! তুই দেকিস একদিন।

<

Sunil Gangapadhyay।। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়