মেজরের ফ্ল্যাট মাত্র দোতলার ওপরে কিন্তু ওই ফ্ল্যাটে পা দেওয়ামাত্র সমুদ্রের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। নিউ ইয়র্কের গায়ে যে সমুদ্র তার আওয়াজ নীচের ফ্ল্যাটে না গিয়ে ওপরের ফ্ল্যাটে এত জোরে আসছে কী করে?

মিস্টার আলাম্বা মেজরের অনুরোধে সঙ্গে এসেছিলেন। অর্জুনের প্রশ্ন শুনে হেসে বললেন, ওটা সমুদ্রের আওয়াজ নয়। হাওয়ার শব্দ। এই দিকটায় সারা দিনরাত প্রবল বাতাস বয়ে যায় এই সময়। একটা সোফায় বসে পড়লেন তিনি।

মেজর অর্জুনকে বললেন, এই ফ্ল্যাটে আগেরবার আসোনি তুমি। কেমন লাগছে বলো? একজন অভিযাত্রী যখন ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম খোঁজে তখন এখানে এসে কদিন জিরিয়ে যায়। এখানে আমি সত্যি আনন্দে থাকি। তবে ওই ম্যাক্সিমাম তিন-চার মাস। ওয়েল মিস্টার আলাম্বা, আপনি আপসেট হয়ে পড়ছেন কেন? অর্জুনকে যখন আপনার কেসটা দিয়েছেন তখন নিশ্চিন্তে গল্প করুন।

নিশ্চিন্ত আমার পক্ষে হওয়া সম্ভব নয়। ধর্মবিশ্বাস মানুষকে কী ভয়ঙ্কর করে দেয়, তা আমি জানি। যুক্তি লোপ পেয়ে যায়, ভদ্রতা, মানবতাবোধ উধাও হয়ে যায়। সে তখন একটা বীভৎস রোবট মাত্র। মিস্টার আলাদা অসহায় গলায় বললেন।

মেজর বললেন, আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। আপনি যদি কিছু মনে না করেন তা হলে আমার এখানে কিছুদিন থাকতে পারেন।

আপনার এখানে? তাতে কী লাভ?

ওরা চট করে আপনাকে খুঁজে পাবে না। আর আপনারও একা মনে হবে না।

যারা এবাড়িতে আমার সন্ধানে একবার আসবে, তারা এখানে পৌঁছতে পারবে না এমন ভাবা ভুল হবে। তা ছাড়া এখানে আমি কী নিয়ে বাঁচব? আমার সমস্ত বইপত্র ওই ফ্ল্যাটে! আমার প্রিয় সংগ্রহগুলো এখানে। ওদের ছাড়া আমার পক্ষে থাকা অসম্ভব। না, না। আপনারা যে আমার সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছেন তাতেই আমার ভাল লাগছে। রোজ যদি দয়া করে একবার ফোন করেন তা হলে একটা উপকার হবে। ফোন না তুললে জানবেন আমি মরে গেছি। তখন যা করার। হঠাৎ মিস্টার আলাম্বা একদম অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলেন, আমি একটু চা খাব।

নিশ্চয়ই। মেজর কিচেনের দিকে চললেন।

টিব্যাগের চা নয়। আমি শুনেছি পূর্ব ভারতের মানুষজন চায়ের পাতা জলে ভিজিয়ে খেতে ভালবাসেন। সেটা তাঁরা এখানে দেশ থেকে আনিয়েও রাখেন।

মেজর মাথা নোয়ালেন, ঠিকই শুনেছেন। আমার সংগ্রহে দার্জিলিং জেলার বিখ্যাত চা আছে। একটু সময় দিন, আপনারা কথা বলুন। মেজর চোখের আড়ালে চলে যেতেই মিস্টার আলাম্বা খপ করে অর্জুনের হাত ধরে বললেন, আপনি আমার কাছে এসে থাকলে আমার প্রাণের ভয় থাকবে না।

আমি? অর্জুন হকচকিয়ে গেল।

হ্যাঁ।

কিন্তু আমার পক্ষে কদিন এখানে থাকা সম্ভব?

তা হলে ওই লকেটটা আমাকে দিন। অন্তত কিছুদিনের জন্যে। ওই লকেট আমার গলায় থাকলে ওরা কিছুতেই খুন করতে পারবে না। মিস্টার আলাম্বার চোখ চকচক করতে লাগল।

অর্জুন ফাঁপরে পড়ল। মিস্টার আলাম্বা যখন কথা বলছিলেন তখন তাঁর চোখ কেবলই চলে যাচ্ছিল কিচেনের দরজার দিকে। অর্থাৎ উনি মেজরকে এ-ঘর থেকে সরিয়ে প্রস্তাবটা দিলেন। কেন?

অর্জুন বলল, আমি একটু ভেবে দেখি।

এতে নতুন কিছু ভাবার নেই মিস্টার অর্জুন। ওই লকেটটা আপনার কাছে কিছু নয়। একটা খেলনা। আপনার ধর্মের সঙ্গে এর কোনও মিল নেই। অথচ এই আমেরিকায় অনেক কালো মানুষ ওটাকে দেবতা বলে এখনও মনে করে। আপনি তো আমার কেস নিয়েছেন। বেশ, আপনার পারিশ্রমিক আমি বাড়িয়ে দেব। আবার হাত ধরতেই মেজরের গলা পেয়ে নিজেকে সংযত করলেন বৃদ্ধ।

চায়ের ট্রে দুহাতে নিয়ে এসে টেবিলে রাখলেন মেজর। রেখে বললেন, এখন আমরা স্বচ্ছন্দ আমার যৌবনের দার্জিলিং শহরকে মনে করতে পারব। কুয়াশা উঠে আসছে গাছ থেকে, ছায়ামাখা সাপের মতো পথ, ঘোড়ার ওপর গহাড়ি মেয়ে, ক্যাভেন্ডার্স রেস্তরাঁর খোলা ছাদে বসে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে চায়ের কাপে চুমুক—আঃ। পট থেকে চা ঢেলে দুজনের হাতে কাপ তুলে দিলেন মেজর। সঙ্গে-সঙ্গে ঘরটা দারুণ মিষ্টি চায়ের গন্ধে ভরে গেল। মেজর বললেন, মিস্টার আলাম্বা, চুমুক দিন, প্লিজ।

কাপে ঠোঁট ছুঁইয়েই মিস্টার আলাদা বলে উঠলেন, সত্যি বিউটিফুল।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি চা নিলেন না?

নো। প্রত্যেক মানুষের উচিত তার নিজস্ব নিয়মকানুন মেনে চলা। আমি রোজ ভোর পাঁচটার সময় এক কাপ চা খাই। নো মিল্ক, নো শুগার। একেবারে চা-পাতার নির্যাস। এবং ওই একবারই। আর নয়। তারপর তুমি সন্ধে পর্যন্ত যতবার বিয়ার খেয়ে যেতে বলবে, খাব। কিন্তু সন্ধে নেমে গেলে মরে গেলেও বিয়ার খাব না। তখন হুইস্কি। ওয়েল মিস্টার আলাদা। স্টে উইথ আস, ইউ উইল বি হোমলি। আজ অর্জুনের ফোন পাওয়ামাত্র একটা টার্কি এনে জম্পেশ করে প্রসেসিং শুরু করে দিয়েছি। বেশ বড় প্রাণী। আপনি আমাদের সঙ্গে ডিনার করুন। কী, আপত্তি আছে?

মিস্টার আলাম্বা কিছু বলার আগেই অর্জুন বলল, আমার একটু অসুবিধে হবে। সুধামাসিকে বলিনি কিছু। ওঁরা নিশ্চয়ই রান্না করে রাখবেন।

ফোন করে দাও। বলল, আজ রাত্রে ফিরবে না।

অসম্ভব! মা জানতে পারলে গালাগাল দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দেবে।

মা? তোমার মা? এই নিউ ইয়র্কে?

না। নিউ ইয়র্কে না। আপনি ঠিক বুঝবেন না।

নিউ জার্সির নাম্বারটা দাও তো।

পকেট থেকে নাম-ঠিকানা টেলিফোন নাম্বার লেখা কাগজটা বের করে এগিয়ে দিল অর্জুন। ছোট্ট তারবিহীন টেলিফোন পকেট থেকে বের করে নাম্বার ডায়াল করে জিজ্ঞেস করলেন, ভদ্রমহিলার নাম কী বললেন যেন? কী মাসি?

সুধামাসি। কিন্তু উনি ইংরেজি জানেন না। ওঁর মেয়ে–।

ততক্ষণে মেজর কথা বলতে শুরু করেছেন, হেলো। আমি যে নাম্বারটি ডায়াল করলাম সেটি রিপিট করছি। গুড। আমি, লোকে আমাকে মেজর বলে ডাকে, ওটাই এখন নাম হয়ে গিয়েছে, সুধামাসি নামে যিনি এ বাড়িতে জলপাইগুড়ি থেকে এসেছেন তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই। মেজর এতক্ষণ খুব কায়দা করে ইংরেজিতে বলছিলেন। এবার অর্জুনের দিকে একটা চোখ টিপে পরিষ্কার বাংলায় বললেন, নমস্কার সুধামাসি, আমি মেজর। আরে আপনি কী করে চিনবেন? জলপাইগুড়িতে যখন গিয়েছি তখন শ্রীমান অর্জুন ভূতের মতো খাটিয়েছে। হ্যাঁ, আঁ, ঠিক ধরেছেন, পুরনো বন্ধু তো, নিউ ইয়র্কে এসেই আমার কাছে চলে এসেছে। আজ রাত্রে একটু খাওয়াদাওয়া। আঁ, কী বললেন? সর্ষে ইলিশ, মানে ভাপা ইলিশ? ভাপা নয় সর্ষে? চিংড়ি পোস্ত। ওরে বাবা রে! ফুলকপির দিশি কোপ্তা? আমি যাব? নিশ্চয়ই যাব! এখনই যাচ্ছি। হ্যাঁ, অর্জুনকে নিয়েই যাচ্ছি। সেইজন্যে ফোনটা করা।

অ্যাঁ, পায়েস আর পাটিসাপটা, মরে যাব। না, না। কিন্তু মাসিমা, আমাদের আর এক বন্ধু মিস্টার আলাদা সঙ্গে আছেন। কম পড়ে যাবে না তো? ঠিক আছে। চলে আসছি। টেলিফোন অফ্ করে দাড়িতে হাত বোলাতে লাগলেন মেজর। অর্জুন কোনও কথা বলছিল না। মেজরই মৌনতা ভাঙলেন, আসলে, ওইসব খাবারের নামই ভুলে গিয়েছিলাম। শোনামাত্র নাভিকুণ্ডলীতে টান লাগল যেন। আর রেজিস্ট করতে পারলাম না।

বেশ তো, চলুন। অর্জুন হাসল।

আরে ওই টার্কিফার্কি তো রোজই খাই। এ খোদ বাংলামায়ের হাতের রান্না। এই যে সার, চলুন।  মিস্টার আলাম্বার দিকে তাকালেন মেজর।

আপনি একা রাঁধবেন না। আমিও আপনার সঙ্গে আছি।

ওখানে রান্নার কথা বলা মানে যিশুকে বাইবেল পড়ানো। আমরা এখানে ডিনার করছি না। অর্জুনের বাড়িতে, ঠিক অর্জুন যদিও নয়, তবে ও নিয়ে মাথা ঘামাতে আর রাজি নই আমি। মেজর বললেন।

নো, নো! অসম্ভব। অন্য কোথাও যেতে পারব না আমি।

কেন?

তোমরা বুঝতে পারছ না আমার জীবন–।

মিস্টার আলাম্বাকে থামিয়ে দিল মেজর, আপনি বুঝতে পারছেন না। আজ যে ডিনার করবেন তা না করে বেঁচে থাকা মানে আপনার জীবন বৃথা। তা ছাড়া আমরা সঙ্গে আছি অর্জুন আছে ওই লকেট পরে। নো ভয়।

সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। একেই রাস্তা জনমানবশূন্য তার ওপর ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তবু মুখ-মাথা চাপা দিয়ে মিস্টার এমন ভঙ্গিতে গাড়িতে উঠলেন যে, সাধারণ লোকই তাঁকে সন্দেহ করবে। মেজরের পাশে অর্জুন, পেছনে মিস্টার আলাদা।

মিস্টার আলাদা জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কোনদিকে যাচ্ছি?

নিউ জার্সি। ক্লোস্টার টাউনে। ওখানে ব্ল্যাক নেই। তাই তো অৰ্জুন?

আমি আজ দেখিনি। মিস্টার আলাম্বা বললেন, অর্জুন, একটু অনুরোধ করতে পারি?

নিশ্চয়ই।

সামনের উইন্ডস্ক্রিনের ওপরের হুকে তুমি লকেটটা টাঙিয়ে দাও।

কেন?

তা হলে লোকে সহজে দেখতে পাবে।

মেজর এবার গলা তুললেন, আপনি এত ভয় পাচ্ছেন কেন? চুপটি করে বসুন। আঃ, আজকের দিনটাই আলাদা। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। তিনি গান ধরলেন, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ে লাগছে ভারী মিষ্টি।

অর্জুন সংশোধন করে, ওটা মেঘলা ভাঙা হবে।

একই ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ কী খেতে ভালবাসতেন হে?

দুধকা সন্দেশ একসঙ্গে মেখে খেতে খুব ভালবাসতেন।

আমি খেলে ব্লাডগার হয়ে যেত। আমরা এখন হাডসনের নীচ দিয়ে যাব। মাথার ওপর নদী আর আমরা যাচ্ছি সুড়ঙ্গ দিয়ে। কেমন লাগছে?

দারুণ। অর্জুন বলল। সুড়ঙ্গ কিন্তু সিনেমার মতো আলো ঝলমলে। হুহু করে গাড়ির পর গাড়ি ছুটে যাচ্ছে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে। এই সময় পেছনে সাইরেন বেজে উঠল। মেজর বললেন, কোন নির্বোধ আজ ধরা পড়ল কে জানে!

ধরা পড়ল মানে?

মামার ডাক শুনতে পাচ্ছ না। মেজরের গাড়ি সুড়ঙ্গ থেকে বের হতেই দুরন্ত গতিতে একটি পুলিশের গাড়ি তাঁকে ওভারটেক করতে গিয়েও পারল না। কোনওমতে সঙ্ঘর্ষ বাঁচিয়ে মেজর চিৎকার করে উঠলেন, ছুঁচো, ইঁদুর, পাচা, হিপোপটেমাস! পুলিশ বলে পাবলিকের মাথা কিনে নিয়েছিস নাকি? ডিনার খেতে দেবে না এমন প্ল্যান ছিল। হুঁ। ১,

পুলিশের গাড়ি পেছনে পড়ে গেছে। বীরদর্পে গাড়ি চালাচ্ছিলেন মেজর। হঠাৎ হাইওয়ের ওর দাঁড়ানো পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ানো অফিসার হাত বাড়িয়ে দাঁড়াতে বলল। অতএব মেজর পাশের পার্কিং-এর জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি দাঁড় করালেন। অর্জুন দেখল, দুজন পুলিশ অফিসার রিভলভার উঁচিয়ে ধরে পায়ে-পায়ে এগিয়ে আসছে। মেজর বললেন, নোড়ো না। হাত মাথা স্থির রাখো। ওরা এত ভিতু যে-কোনও সময় ভয় পেয়ে গুলি ছুড়তে পারে। আরশোলার ঘিলুও নিউ ইয়র্ক পুলিশের কাছে লজ্জা পাবে।

ততক্ষণে দুজন অফিসার দুই জানলায় এসে গেছেন। নির্বিকার গলায় মেজর জিজ্ঞেস করলেন, ইয়েস অফিসার, আপনাদের জন্যে কী করতে পারি?

ডোন্ট মুভ। স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন না। পেপার্স?

মেজর একটা খাম বের করে দিয়ে দিলেন। অর্জুন দেখল তার দিকে যে পুলিশ অফিসার বন্দুক তাক করে আছে তার নিশ্বাসে রসুনের গন্ধ। এবার প্রথম অফিসার পেছনে তাকাল, হু ইজ হি?

হি ইজ প্রোফেসর; প্রোফেসর আলাম্বা। বিল নোজ হিম।

হু ইজ দ্যাট বিল?

মেজর অফিসারের দিকে তাকালেন, হাই ম্যান, তুমি তোমার নাম ভুলে যেতে পারো, কিন্তু বিলের নাম ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

তোমরা পুলিশ স্টেশনে এসো।

কেন? আমাদের অপরাধটা কী?

সেখানে গেলেই জানতে পারবে।

অগত্যা একটি পুলিশের গাড়িকে অনুসরণ করতে হল। ডেস্কে পৌঁছেই মেজর বললেন, মিস্টার আলাম্বা, আফ্রিকার লোকশিল্প এক্সপার্ট, একটা ফোন করতে চান অফিসার। তাকে সেটা কি করতে দেওয়া হবে?

নিশ্চয়ই। কাকে করতে চান?

মেজর পেছনে এসে দাঁড়ানো অফিসারকে দেখিয়ে বললেন, ওঁকে বললাম, উনি বুঝতেই পারলেন না। উনি হোয়াইট হাউসে ফোন করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলতে চান।

মাই গড়। আপনি বিল বললেন, সেই বিল—? অফিসার এগিয়ে এলেন সামনে, এক মিনিট। আমরা একটু আগে একটা কল পেয়েছি আপনার গাড়িতে একজন ভয়ঙ্কর লোক যাচ্ছে, যার উদ্দেশ্য আফ্রিকা থেকে আসা কালো মানুষের মধ্যে দাঙ্গা বাধিয়ে দেওয়া। মনে হচ্ছে মিস্টার আলাম্বাই সেই মানুষ। ওয়েল, মিস্টার আলাম্বা, আপনার কিছু বলার আছে?

মাথা নাড়লেন মিস্টার আলাম্বা, হা। ওরা আমাকে মারতে চায়।

কারা?

যাদের ধর্মীয় মূর্তি আমি না জেনে সংগ্রহ করেছি।

আপনি যদি সেটা মিউজিয়ামে দান করে দেন, তা হলে?

তা হলেও আমি নিষ্কৃতি পাব না। আপনার সঙ্গে যে কালো ছেলেটি ছিল সে কোথায়? তাকে নিয়ে আসুন মিস্টার আলাম্বা বললেন।

কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই কালো অফিসার এগিয়ে এসে বলল, ইয়া।

তুমি আফ্রিকায় গিয়েছ? মিস্টার আলাদা প্রশ্ন করলেন। নো। কখনও না।

তোমার পূর্বপুরুষ ও-দেশ থেকে এসেছেন? কোত্থেকে? নাম বলো।

আই ডোন্ট নো। আমি আমেরিকান, সেটাই শেষ কথা।

যে ফোন করে পুলিশকে বলে আমাদের আটকাতে, তার নাম কী?

অদ্ভূত। আমি কী করে জানব? মিস্টার আলাদা অর্জুনের দিকে তাকালেন, অর্জুন। ওকে দেখান।

অর্জুন চট করে ভেবে নিল। নিউ ইয়র্কে কেউ যদি সন্দেহ করে পুলিশকে ফোন করে জানায়, তা হলেও নিউ জার্সির মাটিতে দাঁড়িয়ে কোনও পুলিশ অফিসারের পক্ষে সেটা অনুমান করা সম্ভব নয়।

সে বলল, দেখিয়ে লাভ হবে না।

আমি দেখতে চাই সেটা।

অগত্যা অর্জুনকে জামার ভেতর থেকে লকেটটাকে বের করতে হল, দেখুন তো, এই লকেটটা আপনার কাছে অর্থবহ কিনা।

কালো অফিসার লকেট দেখলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী?

অর্জুন মিস্টার আলাম্বাকে বলল, তা হলে দেখলেন—!

ইয়েস।

প্রায় মিনিট পনেরো আলোচনা করল অফিসাররা। তারপর সেই প্রথমজন এসে বলল, আমরা খুব দুঃখিত। তোমরা কোথায় যাচ্ছিলে?

মেজর ঠিকানা বললেন। অফিসার বললেন, ওখানে রাত্রে থাকবে?

না। ডিনার খেয়ে ফিরে আসার ইচ্ছে ছিল।

তা তোমরা আসতেই পারো। আমাদের একটা গাড়ি তোমাদের সঙ্গে থাকবে। তোমরা যখন ফিরে আসবে তখন হাডসন পর্যন্ত এসকর্ট করবে। এটা আমাদের কর্তব্য, বুঝলে?

ঠিক তখনই সমস্ত চরাচর কাঁপিয়ে বিস্ফোরণের আওয়াজ হল। সেই আওয়াজে কেঁপে উঠল সবাই। একজন অফিসার ছুটে এসে বলল, এদের কার উড়ে গেল।

<

Samaresh Majumdar ।। সমরেশ মজুমদার