দাউ দাউ করে জ্বলছে মেজরের গাড়ি থানার বাইরে দাড়িয়ে সমানে মেজর চিৎকার করে গেলেন, ওরে ছুঁচো, ইঁদুর, পেঁচা, হিপো, তোকে যদি হাতের কাছে পেতাম তা হলে, ওঃ, মনের সুখে কিমা বানাতাম।

রাত দশটা নাগাদ পুলিশ ওদের সুধামাসিদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গেল। যাওয়ার আগে মেজর যে কথা পুলিশের লোককে বলেছিলেন তা জীবনে ভুলবে না অর্জুন। মেজর বলেছিলেন, এই অবধি পৌঁছে দেওয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ অফিসার। এর পর আপনাকে থাকতে বলছি না, কারণ সরষে ইলিশ অথবা চিংড়ি পোস্ত শেয়ার করা আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। গুড নাইট।

অফিসার কিছুই বুঝতে না পেরে বলেছিলেন, পার্ভন?

সেটা তো করেই দিয়েছি। গুড নাইট।

অর্জুন এগিয়ে গিয়ে বোতাম টিপল।

ভেতর থেকে দেখে নিয়ে অঞ্জনাদি দরজা খুললেন। অর্জুনকে কিছু বলতে গিয়ে সামলে নিয়ে অত্যন্ত শিক্ষিত গলায় মেজর এবং মিস্টার আলাম্বাকে স্বাগত জানালেন। ওঁদের বসার ঘরে নিয়ে এসে সোফায় বসিয়ে বললেন, আমি অঞ্জনা, সুধামাসি আমার মা।

প্রাথমিক পরিচয় হয়ে যাওয়ার পর অঞ্জনাদি জিজ্ঞেস করলেন, আমাদের বাড়িতে পুলিশের গাড়িতে চেপে কেউ প্রথমবার এল। কোনও অসুবিধে হচ্ছিল?

মেজর তাঁর কঁচা প্রায় নেই, পাকা দাড়িতে আঙুল ঢোকালেন, হ্যাঁ। একটু।

কী হয়েছিল? অবশ্য জানাতে যদি আপত্তি না থাকে।

বিন্দুমাত্র নেই। না জানানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। কী বলো, অর্জুন? আমার গাড়িটা উড়ে গেছে। মানে টাইমবোম বা ওই জাতীয় কিছু নিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে কেউ।

সে কী? কোথায়? কখন?

একটু আগে। খোদ পুলিশের ডেরায় পার্ক করে রাখা গাড়ি উড়ে গেল। নিজের গাড়ি বলে বলছি না, ঠিক ফিল্মের গাড়ির মতো সিন তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দেখুন, রাত অনেক হয়েছে। আমরাও ক্ষুধার্ত। মিস্টার আলাম্বাও স্বাভাবিক নন। যদি ডিনার পরিবেশন করেন তা হলে এখনই তোড়জোড় করুন। তবে তার আগে ড্রিঙ্ক সার্ভ করতে পারেন।

আমাদের ডিনার তৈরি।

ও হো। তা হলে একটা স্কচের বোতল চটপট এনে দিন। আপনি যদিও বাঙালি মহিলা, তবে আমেরিকায় বেশ কিছুদিন আছেন বলে কথাটা বলা গেল। গ্লাস নিয়ে আসার দরকার নেই। অর্জুন খায় না, অন্তত আগে খেত না বলেই জানি। মিস্টার আলাম্বার ইচ্ছে হলে বোতল থেকেই চুমুক মারবেন। মেজর দাড়ি চুলকে যাচ্ছিলেন।

অঞ্জনাদি কিন্তু যেভাবে পরিবেশন করতে হয় সেইভাবেই করলেন। মিস্টার আলাদা এক পেগ হুইস্কি নিয়ে গম্ভীর মুখে চুমুক দিলেন। মেজর পুরো গ্লাস ভর্তি করে চুমুক দিতেই সুধামাসি বেরিয়ে এলেন হাত জোড় করে।

অর্জুন আলাপ করিয়ে দিল। গ্লাস টেবিলে রেখে মেজর বললেন, আপনার রান্নার নাম শুনে ছুটে এসেছি। কিন্তু এই একটা অভ্যেস, অভ্যেসটা বল, জানি, মানে কিছু খাওয়ার আগে একটু এটা খেয়ে নেওয়া।

শুনলাম কে নাকি বোমা মেরে গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে।

হ্যাঁ। তবে ক্ষতি তেমন হয়নি। ইনস্যুরেন্স করা ছিল। তবে সরষে ইলিশ–।

এক মিনিট, ওসব জিনিসের স্বাদ পেতে গেলে জিভ পরিষ্কার রাখতে হয় যে! মেজর গ্লাস তুলে চুমুক দিতে গিয়ে কথাগুলো শুনে থমকে গেলেন, অ্যাঁ?

হ্যাঁ। প্রত্যেকটি জিনিসের আলাদা স্বাদ আছে। চিংড়ির স্বাদ আলাদা, আবার ইলিশের স্বাদ তার নিজের। যে মশলা পড়ছে তার নিজের স্বাদ আছে। আমার শ্বশুরমশাই রায়বাহাদুর সাহেব ওই জিনিস খেতেন। শুনলাম উনি নাকি খাবারে কোনও স্বাদ পাচ্ছেন না।

সুধামাসি বলামাত্রই গ্লাস টেবিলে নামিয়ে মেজর উঠে দাঁড়ালেন, চলুন সবাই, ডিনারে যাই। মিস্টার আলাম্বা, এক পেগ মদ তাও শেষ করতে পারছেন না!

এই রাত্রের খাওয়ার টেবিলের স্মৃতি অর্জুনের অনেককাল মনে থাকবে। একেবারে শিশুর মতো খেয়েছিলেন মেজর। ফুলকপির প্রিপারেশন এত ভাল হয়? ভাতের সঙ্গে আলু সেদ্ধ সরষের তেলে মেখে দিয়েছিলেন সুধামাসি। কাঁচালঙ্কা পাশে। তাতেই তিনি প্রথমে উদ্বুদ্ধ হন। প্রতিটি খাবার খাচ্ছেন আর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন। এমনকী মিস্টার আলাম্বার হাঁড়িমুখে হাসি ফুটল যখন চিংড়িপোস্ত খেতে লাগলেন। মিষ্টিতে পৌঁছে মেজরকে রোখা গেল না। চিৎকার করে বললেন এরকম খাবার পেলে আমি মদ্যপান ছেড়ে দিতে পারি। আহা।

সুধামাসি বললেন, আজ আমার জামাই-এর জন্মদিন।

আচ্ছা! তিনি কোথায়? ওহে, অর্জুন, গলা নামিয়ে বললেন, কী যেন হয়েছে?

অ্যাক্সিডেন্ট। তবে এখন অবস্থা ভাল। হাসপাতালে আছেন। অঞ্জনাদি বললেন।

ওঁর স্বাস্থ্য চটজলদি ফিরে আসুক। জলের গ্লাস ওপরে তুলে বললেন মেজর, গলা পর্যন্ত খেয়ে ফেললাম। এখন একটা বালিশ না পেলেই নয়।

অঞ্জনাদি বললেন, বালিশ কেন? বিছানাই তৈরি।

ওঃ, এর চেয়ে সুখবর আর কী হতে পারে! এই যে আফ্রিকা বিশেষজ্ঞ, বাঙালি মেয়ের গুণ দেখতে পাচ্ছ? বাংলায় প্রশ্নটি করা বলে কিছু না বুঝে পায়েস খেতে-খেতে হাসলেন মিস্টার আলাম্বা।

কিন্তু ডিনার টেবিল থেকে উঠে মিস্টার আলাম্বা রাত্রে এবাড়িতে থাকতে চাইলেন না। তাকে ওই রাত্রে নিউ ইয়র্কে ফিরে যেতে হবেই। মেজর অনেক বোঝালেন। তাঁর তখন শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে। সঙ্গে গাড়ি নেই। যদি থাকত, এত খাওয়ার পর অতদূরে চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করত না বলে তাঁর মুখ দেখে মনে হচ্ছিল, উড়ে গিয়ে তাঁর ভালই হয়েছে। শেষপর্যন্ত মিস্টার আলাম্বার ইচ্ছাই মান্য করা হল। টেলিফোন করলেন অঞ্জনাদি। মিনিট তিনেকের মধ্যে ট্যাক্সি এসে গেল দরজায়। মিস্টার আলাম্বা ঘড়ি দেখলেন। প্রায় মধ্যরাত। তিনি অর্জুনকে বললেন, আপনি আমাদের সঙ্গে যাচ্ছেন তো?

ও কেন যাবে? মেজর আপত্তি করলেন, ও বাড়ি থেকে আমাদের পৌঁছতে চলল, আমরা একবার ওকে পৌঁছতে আসলাম, সারারাত এই চলুক আর কী।

কিন্তু মিস্টার আলাম্বার অবস্থা দেখে মায়া হচ্ছিল অর্জুনের। একেবারে নার্ভাস হয়ে গিয়েছেন। সুধামাসির সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে উঠল অর্জুন। মিস্টার আলাম্বাকে মাঝখানে রেখে সে এবং মেজর দুদিকে বসল। ট্যাক্সিওয়ালা ঠিকানা জানতে চাইলে মেজর সেটা বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু মিস্টার আলাম্বা দ্রুত বলে উঠলেন, জ্যাকসন হাইট।

মেজর অবাক হয়ে ঘুরে তাকাতে ইশারায় জানালেন চুপ করে থাকতে।

দিনের বেলায় যে-পথ নির্জন, রাতের বেলায় সেখানে শব্দ খুঁজেও পাওয়া যাবে না। শুধু হুস-হাস গাড়ি ছুটে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। মেজরের চোখ বন্ধ, নাক ডাকছে। মানুষটি কত অল্পে সন্তুষ্ট থাকেন।

হাডসন পেরিয়ে জ্যাকসন হাইটে ট্যাক্সি পৌঁছে গেলে মিস্টার আলাদা ভাড়া মিটিয়ে নেমে পড়লেন। মেজর তখনও ঘুমোচ্ছেন। মিস্টার আলাম্বা বললেন, ঝটপট ওকে ডাকুন? এরকম জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।

মেজরকে ঘুম থেকে তুলে রাস্তায় নামাতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হল। সোজা হয়ে দাড়িয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমি কোথায়?

জ্যাকসন হাইটে! অর্জুন বলল।

কী? এই ভিতু লোকটাকে নিয়ে মুশকিলে পড়া গেল। ট্যাক্সিটা চলে গিয়েছিল, দ্বিতীয় একটা ট্যাক্সি সামনে এসে পঁাড়াতেই মেজর চেঁচিয়ে উঠলেন, আরে শুটকি মাছ, তুমি?

আসেন দাদা, কী সৌভাগ্য। পেছনের দরজা খুলে দিল ড্রাইভার।

কোথায় ছিলা ভাই? তোমারে ছাড়াই সরষে ইলিশ খাইলাম আজ। ট্যাক্সির ভেতর শরীর চালান করে দিয়ে ইশারায় বললেন আলাম্বাকে ডেকে আনতে।

মিস্টার আলাদা একটু দূরে ঠিক লাইটপোস্টের মতো দাড়িয়ে ছিলেন। অর্জুন গিয়ে তাঁকে বলতেই এদিকে তাকালেন। অর্জুন বলল, মেজরের চেনা ট্যাক্সিওয়ালা।

শোনামাত্র দৌড়ে ফিরে এসে ট্যাক্সিতে উঠলেন তিনি। অর্জুন আশেপাশে তাকিয়ে দেখল, দৃশ্যটি দেখার মতো কেউ এখানে নেই।

ট্যাক্সি চলছিল। ড্রাইভারের সামনে রেডিয়োতে সমানে খবরাখবর এবং নির্দেশ ঘোষিত হয়ে চলেছে। ট্যাক্সিওয়ালা জিজ্ঞেস করল, এই রাইতে

জ্যাকসন হাইটে কী করতে ছিলেন? দাওয়াত ছিল নাকি?

মেজর বললেন, হ। মরণের বাসায়।

আপনি কী যে কন! ট্যাক্সিওয়ালা একটু জোরেই বলল।

হঠাৎ মিস্টার আলাদা চেঁচিয়ে উঠলেন, সাইলেন্স, সাইলেন্স প্লিজ।

কয়েক সেকেন্ড সব চুপচাপ। শুধু রেডিয়ো বেজে যাচ্ছে। ট্যাক্সিওয়ালা বলল, অ। ওই সাপের কথা। বিকাল থিকা প্রায়শই বলতেছে। পাগল।

মিস্টার আলাম্বা মেজরকে বললেন, বাড়ির সামনে ট্যাক্সি ছাড়বেন না। দূরে রেখে হেঁটে যাব আমরা। বুঝতে পারছেন?

কোনও চান্স নেই। এই ছোকরা আমার ফ্ল্যাট পর্যন্ত জানে। তবে বিশ্বস্ত। মেজর হাত নাড়লেন, অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি বাংলাদেশের?

হ। দাদার লগে অনেকবার পরিচয় হইছে। আমার নাম রতন রহমান।

এখানে ট্যাক্সি চালাতে অসুবিধে হচ্ছে না?

প্রথম-প্রথম হইত। তবে পুলিশ তো খুব ভাল, তাদের সাহায্য পাওয়া যায়। দাদারে কইছিলাম শুটকি খাওয়ামু, লইট্যা শুটকি, উনি সেটা ভোলেন নাই।

রাস্তাটা চিনতে পারছে অর্জুন। এই পথেই মেজর তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। মেজরের ফ্ল্যাট যে অট্টালিকায়, তার সামনে পৌঁছেই সে দুটো গাড়ি দেখতে পেল। গাড়িদুটো অদ্ভুতভাবে রাস্তার দুপাশে দাড়িয়ে আছে। ট্যাক্সি থামতেই দুটো গাড়ির দরজা প্রায় একসঙ্গে খুলে গেল। অর্জুনের মনে হল বিপদ সামনে। সে রতন রহমানকে বলল, বিপদ। তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে ওদের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে যান।

রতন যে এত দ্রুত সেটা করবে, অনুমান করেনি অর্জুন। যারা গাড়ি থেকে নেমেছিল তারাও ভাবতে পারেনি। ছিটকে রাস্তার দুপাশে সরে গেল ওরা। ট্যাক্সিটা সোজা চলে এল আর-একটি বড় রাস্তায়। রতন বলল, বলেন?

অর্জুন মেজরের দিকে তাকাল। তিনি তখন ঘুমোচ্ছেন। মিস্টার আলাদা সিঁটিয়ে বসে আছেন। অর্জুন বলল, ভাই রতন, ওরা আমাদের শত্রু, ওদের হাত থেকে আমাদের বাঁচান।

তাই কন। অরা বাঙ্গালিরে চেনে না। জয় বাংলা। কী দুরন্ত গতিতে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার ছুটে গেল রতন রহমান, তা বিশ্বাস হত না চোখে না দেখলে। দুটো গাড়ি তখন সবে চলা শুরু করেছিল, ওই গতিতে ট্যাক্সিকে ছুটে আসতে দেখে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তার আগে নিজেরাই রেলিং-এ ধাক্কা খেল। বেরিয়ে এল ট্যাক্সিটা। মেজর চোখ মেলে বললেন, কতদূর?

একটুও চিন্তা করবেন না দাদা, আমি আছি। এইসব ফাইটিং সিন আমি হিন্দি সিনেমা দেইখ্যা শিখছি।

আরে, আরে! তুমি ছুটছ কেন? মেজর উঠে বসলেন। অর্জুন দ্রুত তাকে ঘটনাটা জানিয়ে দিল। মেজর বললেন, যাঃ বাবা! এর মধ্যে টের পেয়ে গেল?

অর্জুন ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল দুটো গাড়ি প্রবল গতিতে ছুটে আসছে তাদের পেছনে। রতন তখন তার ওয়্যারলেসে বলছিল, ক্যাব নাম্বার এক্স ওয়াই জেড থ্রি নট থ্রি, হেল্প হেল্প প্লিজ। বলেই সেটা বন্ধ করে বলল, আমি লেফটে টার্ন নিয়া থামাব। আপনারা জলদি গাড়ি থিকা নামতে পারবেন?

শিওর। কিন্তু আমি ওদের ফেস করতে চাই।

ওনারা আর আসতেছেন না। পুলিশের বাঁশি শুইন্যাই ভাগছেন। পুলিশে ইলে কী সব হয় না, তাই নামতে কইলাম।

বাঁ দিকে ঘুরে গাড়ি দাঁড়াতেই ওরা দ্রুত নেমে পড়তেই রতন ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওরা দৌড়ে একটা কাফের মধ্যে ঢুকে পড়তেই শুনল, গুড মর্নিং সার। আপনাদের বসতে অনুরোধ করছি।

মেজর বললেন, আই অ্যাম সরি সার। কিন্তু আপনাদের টয়লেটের জন্যে এখানে ঢুকতে হল, অবশ্য যদি আপত্তি থাকে।

ওঃ, নো, নো। প্লিজ। ভদ্রলোক ডান দিকে হাত প্রসারিত করলেন। অর্জুন দেখল রাত প্রচুর হলেও কাফে একেবারে খালি নয়। ওরা তিনজনেই টয়লেটে পৌঁছলেন। একসঙ্গে দুজনের বেশি যাওয়া যাবে না। বয়স্কদের যেতে দিয়ে অর্জুনের মনে হল, তার প্রয়োজন নেই, খামোকা যাচ্ছিল। সে কাফের বাইরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতে সেই মালিক অথবা ম্যানেজারের খপ্পরে পড়ল, ইটস আ নাইস মর্নিং সার। হাউ অ্যাবাউট এ কাপ অব কফি উইদ লিকার?

সরি। আই ডোন্ট ওয়ান্ট দ্যাট।

লুক সার, ইফ ইউ স্টার্ট দ্য ডে উইথ কফি–

ইটস নট ডে, ইটস মিডনাইট।

ইটস ওয়ান থার্টি এ এম। সো উই ক্যান কল ইট মর্নিং।

ঠিক তখনই দরজা ঠেলে একৰ্টি লোক এবং একজন মহিলা ঢুকলেন। দুজনেরই বেশ নেশা হয়ে গেছে বোঝা যাচ্ছিল। লোকটি মহিলার হাত ধরে একটা খালি টেবিলের দিকে যেতে-যেতে বলল, আমি জানি আমি মারা যাব। আর আমি যে এটা জানি তা কেউ জানে না।

ম্যানেজার বা মালিক হাত নাড়ল, হাই জিম, আফটার আ লং গ্যাপ।

লোকটা তার বান্ধবী বা স্ত্রীকে ছেড়ে এগিয়ে এল ম্যানেজারের কাছে, মেড মানি, লট অব মানি, ড়ু ইউ নো? চলতে চলতে লোকটা অর্জুনের দিকে তাকাতেই অর্জুন চমকে উঠল। লোকটা বলল, হেই ম্যান, আই হ্যাভ সিন ইউ সামহোয়ার। হু আর ইউ?

আই অ্যাম ইওর ফ্রেন্ড। অর্জুন হাসার চেষ্টা করল।

ওঃ। দেন জয়েন আস। কাম, কাম প্লিজ। হাত ধরে টানতে টানতে জিম অর্জুনকে নিয়ে গেল সেই টেবিলে, যেখানে মহিলা একা বসে ছিলেন। এই সময় মেজর এবং মিস্টার আলাদা টয়লেট থেকে বেরিয়ে আবার ম্যানেজার বা মানিকের খপ্পরে পড়লেন। মেজর হাত তুলে চালিয়ে যেতে বলে মিস্টার আলাম্বাকে নিয়ে অন্য একটি টেবিলে গিয়ে বসলেন।

মহিলা বললেন, ইউ আর অলরাইট, জিম?

অ্যাবসোলিউটলি। লুক, ডার্লিং, হি ইজ মাই ফ্রেন্ড।

মহিলা মাথা নাড়লেন, গ্ল্যাড টু মিট ইউ? তোমরা অনেকদিনের পরিচিত?

না, না। তিনদিন আগে আলাপ হয়েছে।

তিনদিন? মহিলা অবাক হয়ে জিমের দিকে তাকালেন, সে চোখ বন্ধ করে আছে। মহিলা বললেন, তিনদিন আগে জিম বিদেশে ছিল, তাই না জিম?

ইয়েস ডার্লিং।

আমার সঙ্গে এয়ারপোর্টে আলাপ হয়। প্রথমে হিথরোতে, পরে জে এফ কে-তে। উনি আমাকে চিনতে পারছেন না। দাড়ান, মিস্টার জিম? আমি যদি কাস্টমস অফিসারকে বলে দিতাম যে আপনি দাতের নীচে লুকিয়ে কিছু নিয়ে আসছেন তা হলে কী হত? জেলে থাকতেন এই সময়, তাই না? তা হলে না বলে বন্ধুর কাজ করেছি আমি, তাই না?।

জিম ছোট চোখে তাকে কিছুক্ষণ দেখল। হঠাৎ শরীরের সব রক্ত তার মুখে উঠে এল। এয়ারপোর্টর স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়ায় সে বোধ হয় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল কিন্তু অর্জুন বলল, একটা শব্দ করলে তুমি খুন হয়ে যাবে। আমার সাপ তোমাকে মারবে।

সঙ্গে-সঙ্গে ভেঙে পড়ল জিম, নো, নো। প্লিজ। আমাকে বাঁচাও। প্লিজ।

তুমি খুব খারাপ লোক। তাই না?

আমি মানছি। আমি খুব খারাপ।

এয়ারপোর্টে তোমাকে ধরিয়ে দিইনি কেন জানো? আমি বলার পর যদি ওরা তোমার মুখে ব্যাগ না পেত তা হলে আমি বেইজ্জত হয়ে যেতাম। অর্জুন বলল।

আমি ভেবেছিলাম, তুমি বলবে। তাই পেটে চালান করে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যিস করিনি। ওরা আমার পেটের ভিতরটা পরীক্ষা করেছে, দাতের নীচটায় কেউ দ্যাখেনি। এক লাখ ডলারের মাল। আমি পেয়েছি দশ হাজার।

আমার কথা কজনকে বলেছ?

কাঁধ নাচাল জিম, উত্তর দিল না।

তুমি কি আফ্রিকান? অর্জুন জিজ্ঞেস করল।

ইয়েস। আমি মুল্যাটো। বাবার সাদা চামড়া নাকমুখ পেয়েছি।

কজনকে বলেছ আমার কথা?

শুধু বসকে। আর কাউকে বলিনি।

কে তোমার বস্? অর্জুন গলা নামাল।

প্লিজ, ডোন্ট আস্ক মি। লোকটা সরে গেল কিছুটা।

অর্জুন পকেট থেকে লকেটটা বের করে জিজ্ঞেস করল, এটার দিকে তাকিয়ে বলল, কে আমাদের খুন করতে আজ এত ব্যস্ত হয়েছে? বলো?

<

Samaresh Majumdar ।। সমরেশ মজুমদার