গোলোক চীৎকার করিয়া উঠিলেন, বাঃ—? চিকিৎসার তুই কি জানিস হারামজাদা নচ্ছার? কে তোকে ডেকেচে? কোথা দিয়ে বাড়ি ঢুকলি? খিড়কির দরজা কে তোকে খুলে দিলে?
জ্ঞানদার প্রতি ফিরিয়া কহিলেন, হারামজাদী! তাই অন্ধ শ্বশুর কেঁদে কেঁদে ফিরে গেল, যাওয়া হলো না! বুড়ো শাশুড়ী মরে—আমি নিজে কত বললুম, জ্ঞানদা যাও, এ-সময়ে তাঁর সেবা করো গে। কিছুতে গেলিনে এইজন্যে? রাত-দুপুরে চিকিচ্ছে করাবার জন্যে? দাঁড়া হারামজাদী, কাল যদি না তোর মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে গ্রামের বার করে দিই ত, আমার নাম গোলোক চাটুয্যেই নয়।
জ্ঞানদার মাথায় কাপড় নাই—কখন পড়িয়া গেছে জানিতেই পারে নাই—মুখেও কথা নাই—কেবল দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া সে যেন একেবারে পাথর হইয়া রহিল।
গোলোক রাসমণির প্রতি চাহিয়া কহিলেন, রাসু, চোখে দেখলি ত এদের কাণ্ড? আমি দশখানা গ্রামের সমাজের কর্তা, আমার বাড়িতে পাপ! এ যে বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা হলো রে!
রাসমণি নিজেও এতক্ষণ আড়ষ্ট হইয়া বসিয়াছিলেন, কহিলেন, হলোই ত দাদা!
গোলোক কহিলেন, কিন্তু সাক্ষী রইলি তুই।
রাসমণি কহিল, রইলুম বৈ কি। আমি বলি, রাত্রিতে ত একটু হাত আজাড় হলো—দেখে আসি জ্ঞানদা কেমন আছে, দেখি, না বেশ দুটিতে বসে বসে হাসি-তামাশা, খোশগল্প হচ্ছে।
জ্ঞানদা ইহার কোন উত্তর দিল না, তেমনি প্রসারিত-চক্ষে পাষাণমূর্তির ন্যায় বসিয়া রহিল।
প্রিয় আচ্ছন্ন অভিভূতের মত দাঁড়াইয়া ছিলেন, গোলোক ছোঁ মারিয়া তাঁহার হাত হইতে বইগুলি কাড়িয়া লইয়া তাঁহার গলায় সজোরে একটা ধাক্কা মারিয়া বলিলেন, বেরো ব্যাটা পাজী নচ্ছার আমার বাড়ি থেকে! কি বলব, তুই রামতনু বাঁড়ুয্যের জামাই, নইলে জুতিয়ে আজ আধ-মরা করে তোকে থানায় চালান দিতাম! বলিয়া পুনশ্চ একটা ধাক্কা দিলেন এবং যে চাকর-দাসীরা গোলযোগ শুনিয়া বারান্দায় আসিয়া দাঁড়াইয়া ছিল, তাহাদেরই মধ্য দিয়া তাঁহাকে বারংবার ঠেলিতে ঠেলিতে বাহির করিয়া লইয়া গেলেন।
প্রিয় বলিতে বলিতে গেলেন, বাঃ—বেশ মজা ত!
চাকর-দাসীরাও সঙ্গে সঙ্গে গেল এবং রাসমণি নীরবে তাহাদেরই পিছনে পিছনে নিঃসাড়ায় সরিয়া পড়িলেন।
রহিল কেবল জ্ঞানদা—তেমনি নিশ্চল, তেমনি বাক্যহীন, তেমনি অচেতন মূর্তির মত বসিয়া।
উপন্যাস : বামুনের মেয়ে Chapter : 2 Page: 59
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: বামুনের মেয়ে
- Read Time: 1 min
- Hits: 180