ব্যারিস্টারসাহেব অকস্মাৎ জোর গলায় বলিয়া উঠিলেন, ট্রেন এতক্ষণে হাওড়া প্লাটফর্মে ইন্‌ করলে।

বন্দনার পিতার বোধ করি তন্দ্রা আসিয়াছিল, চমকিয়া চাহিয়া কহিলেন, বাঁচা গেল।

বন্দনা মৃদুকণ্ঠে চুপি চুপি বলিল, আমার কলকাতায় নামতে আর যেন ভাল লাগচে না, মুখুয্যেমশাই। ইচ্ছে হচ্ছে আপনার মার কাছে ফিরে যাই। গিয়ে বলি, মা, আমি ভাল করিনি, আমাকে মার্জনা করুন।

বিপ্রদাস শুধু হাসিল, কিছু বলিল না।

স্টেশনে নামিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কোথায় যাবেন?

রায়সাহেব বলিলেন, গ্র্যান্ড হোটেলেই ত বরাবর উঠি, তাদের তার করেও দিয়েছি—ঐখানেই উঠব।

এই লোকটির সুমুখে গ্র্যান্ড হোটেলের কথায় বন্দনার কেমন যেন আজ লজ্জা করিতে লাগিল।

পাঞ্জাবের ব্যারিস্টারসাহেব গাড়ির অত্যন্ত লেট হওয়ার প্রতি নিরতিশয় ক্রোধ প্রকাশ করিয়া বার বার জানাইতে লাগিলেন তাঁহাকে বি. এন. লাইনে যাইতে হইবে,—অতএব ওয়েটিং রুম ব্যতীত আজ আর গত্যন্তর নাই।

বিপ্রদাস নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া আছে, রায়সাহেব নিজেও একটুখানি যেন লজ্জিত হইয়াই কহিলেন, কিন্তু বিপ্রদাস, তুমি—তুমিও বোধ হয় আমাদের সঙ্গে—

গ্র্যান্ড হোটেলে? বলিয়াই বিপ্রদাস হাসিয়া ফেলিল, কহিল, আমার জন্যে চিন্তা নেই। বৌবাজারে দ্বিজুর একটা বাড়ি আছে, প্রায়ই আসতে হয়, লোকজন সবই আছে—আচ্ছা, আজ সেইখানেই কেন সকলে চলুন না?

বন্দনা পুলকিত হইয়া উঠিল—চলুন, সবাই সেইখানেই যাব। তাহার মাথার উপর হইতে যেন একটা বোঝা নামিয়া গেল। আনন্দের প্রাবল্যে অপর দুই সহযাত্রীকে সে-ই সাদরে আহ্বান করিয়া সবাই মিলিয়া মোটরে গিয়া উঠিল।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়