চোদ্দ
সন্ধ্যা উত্তীর্ণপ্রায়, বন্দনা আসিয়া দ্বিজদাসের ঘরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া ডাকিল, একবার আসতে পারি দ্বিজবাবু? ভিতর হইতে সাড়া আসিল, পার।একবার নয়, শত সহস্র অসংখ্য বার পার।
বন্দনা দরজার পাল্লা-দুটা শেষপ্রান্ত পর্যন্ত ঠেলিয়া দিয়া প্রবেশ করিল এবং ঘরের সবকয়টা আলো জ্বালিয়া দিয়া খোলা দরজার সম্মুখে একটা চৌকি টানিয়া লইয়া উপবেশন করিল।
দ্বিজদাস হাতের বইটা একপাশে উপুড় করিয়া রাখিয়া বিছানায় উঠিয়া বসিয়া বলিল, কি হুকুম?
কি পড়ছিলেন?
ভূতের গল্প।
অতিথি বড়, না, ভূতের গল্প বড়?
ভূতের গল্প বড়।
বন্দনা বিরক্ত হইয়া বলিল, সকল সময়েই তামাশা ভাল নয়। আমরা যে আপনার বাড়িতে অতিথি এ জ্ঞান আপনার আছে?
দ্বিজদাস কহিল, তোমরা যে দাদার বাড়িতে অতিথি এ জ্ঞান আমার পূর্ণমাত্রায় আছে। এবং বাড়িওলা আদেশ দিয়ে গেছেন তোমাদের যত্নের যেন কোন ত্রুটি না হয়। ত্রুটি নিশ্চয় হত না, কিন্তু এই ভূতের গল্পটায় আত্মবিস্মৃত হয়ে কর্তব্যে কিঞ্চিৎ শৈথিল্য ঘটেছে। অতএব অতিথির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
সমস্ত দিনটা আমার কত কষ্টে কেটেছে জানেন?
নিশ্চয় জানি।
নিশ্চয় জানেন, অথচ, প্রতিকারের কি কোন উপায় করেছেন?
দ্বিজদাস কহিল, না করার প্রথম কারণ পূর্বেই নিবেদন করেছি। দ্বিতীয় কারণ, এ প্রতিকার আমার সাধ্যাতীত।
কেন?
সে আমার বলা উচিত নয়।
বন্দনা জিজ্ঞাসা করিল, মা এবং মেজদি এমন হঠাৎ বাড়ি চলে গেলেন কেন?
মেজদি গেলেন প্রবলপরাক্রান্ত শাশুড়ীর হুকুম বলে। নইলে তিনি নির্দোষ।
কিন্তু মা গেলেন কেন?
মা-ই জানেন।
আপনি জানেন না?
দ্বিজদাস কহিল, একেবারেই জানিনে বললে, মিথ্যা বলা হবে। কারণ, বৌদি কিঞ্চিৎ অনুমান করেছেন এবং আমি তার যৎসামান্য একটু অংশ লাভ করেচি।
বন্দনা বলিল, সেই যৎসামান্য অংশটুকুই আমাকে আপনার বলতে হবে।
দ্বিজদাস এক মুহূর্ত মৌন থাকিয়া কহিল, তবেই বিপদে ফেললে বন্দনা। এ কথা কি তোমার না শুনলেই চলে না?
না, সে হবে না, আপনাকে বলতেই হবে।
না-ই বা শুনলে?
বন্দনা বলিল, দেখুন দ্বিজবাবু, আমাদের শর্ত হয়েছিল, এ বাড়িতে আপনার সমস্ত কথা আমি শুনব এবং আপনিও আমার সমস্ত কথা শুনবেন। আপনি জানেন আপনার একটি আদেশও আমি লঙ্ঘন করিনি। বলিতে গিয়া তাহার চোখে জল আসিতেছিল, আর
একদিকে চাহিয়া তাহা কোনমতে সামলাইয়া লইল।
উপন্যাস : বিপ্রদাস Chapter : 14 Page: 56
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: বিপ্রদাস
- Read Time: 1 min
- Hits: 212