হাঁ, তার মাসীর বাড়িতে বালিগঞ্জে। মেসো পাঞ্জাবের বড় ডাক্তার, মেয়ের বিয়ে দিতে দেশে এসেছেন। হঠাৎ হাওড়ার ইস্টিশানে দেখা, তাঁরাও নাবচেন গাড়ি থেকে, এঁরাও যাচ্চেন বোম্বায়ে। মাসী জোর করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে এলেন, বললেন, দৈবাৎ যখন পাওয়া গেল তখন মেয়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তিনি কিছুতে ছেড়ে দেবেন না। শুধু একদিন আটকে রেখে ওর বাপকে তারা যেতে দিলে।

বিপ্রদাস জিজ্ঞাসা করিল, মাসীটি কি চেনা?

হাঁ, আপনার বড়মাসী। দূরে দূরে থাকে। সর্বদা দেখাশুনো হয় না, সত্যি, কিন্তু আপন লোক বটে।

তুমি এত কথা জানলে কি করে অনুদি?

কাল এসেছিলেন তাঁরা বেড়াতে, দ্বিজুর খবর নিতে। দুপুরবেলায় ওপরের বারান্দায় বসে নাতির জন্য কাঁথা সেলাই করচি, দেখি বাইরের উঠানে দু-গাড়ি লোক এসে উপস্থিত। মেয়ে-পুরুষে অনেকগুলি। কে এঁরা? উঁকি মেরে দেখি আমাদের বন্দনাদিদি। কিন্তু সাজসজ্জায় এমনি বদলেছে যে হঠাৎ চেনা যায় না, যেন সে মেয়ে নয়। কি করি, কোথায় বসাই,—ব্যস্ত হয়ে উঠলুম। খানিক পরে দিদি এলেন ওপরে, সকলের খবর নিলেন, খবর দিলেন,—তাঁর নিজের মুখেই শুনতে পেলুম অন্ততঃ মাসখানেক কলকাতায় থাকা হবে। বললেন, বেশ আছি। থিয়েটার, সিনেমা, চড়িভাতি, বাগান-বাড়ি—আমোদের শেষ নেই। নিত্য নতুন ঘটা।

বিপ্রদাস জিজ্ঞাসা করিল, বাসুর অসুখের খবর তাকে দিয়েছিলে?

হাঁ, দিলুম বৈ কি। শুনে বললেন, ও কিছু না,—সেরে যাবে।

বিপ্রদাস ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া কহিল, তাকে খবর দিয়ে কি হবে অনুদি, আমিও সেরে যাবো। সে কটা দিন তুমি একলা পারবে না আমাকে দেখতে?

অন্নদা জোর করিয়া কহিল, পারবো বৈ কি ভাই, কিন্তু তবু মনে হয় একবার জানানো উচিত, নইলে বউ হয়ত দুঃখ করবে। হাজার হোক বোন ত?

ঠিকানা জানো?

আমাদের শোফার জানে। ওদের পৌঁছে দিয়ে এসেছিল।

বিপ্রদাস অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, আচ্ছা দাও একটা খবর। কিন্তু অতো আমোদ-আহ্লাদ ছেড়ে কি সে আসতে পারে? মনে ত হয় না দিদি।

অন্নদা বলিল, মনে আমারও বড়ো হয় না ভাই। তার সাজগোজের কথাই কেবল চোখে পড়ে। তবুও একবার বলে পাঠাই।

বিপ্রদাস নিরুৎসুক ক্লান্তকণ্ঠে শুধু বলিল, পাঠিও দিদি, তাই যখন তোমার ইচ্ছে।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়