আজ চাউল নাই, আজ দাইল নাই, আজ কাষ্ঠ অভাবে রন্ধন হইতেছে না, নিত্য এ-নাই, ও-নাই, তা নাই-এ পড়িয়া মুখুজ্যে মহাশয় অসৎ উপায় উদ্ভাবন করিলেন অর্থাৎ সরকারি তহবিলের কিছু অংশ আপনার ব্যয়ে গ্রহণ করিতে লাগিলেন। বিশ্বাসী হারাণবাবুকে প্রথমে কেহ সন্দেহ পর্যন্ত করিল না, কিন্তু এ উপায় অধিক দিন চলে না; ক্রমশঃ জমিদারের সন্দেহ হইতে লাগিল; সন্দেহ যখন গাঢ়তর হইয়া উঠিল তখন তিনি একদিন সমস্ত খাতাপত্র দেখিতে চাহিলেন; খাতায় অনেক ভুল, অনেক গোলমাল প্রকাশ পাইল ও সঙ্গে সঙ্গে চুরিও ধরা পড়িল। হারাণবাবু এযাবৎ বহু অর্থ আত্মসাৎ করিয়াছিলেন; জমিদার শ্রীভগবান নন্দী দয়ালু এবং ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি হারাণবাবুকে ডাকিয়া বলিলেন, কত টাকা চুরি করিয়াছ?
তাহা জানি না।
জানি না? খাতাপত্র দেখিয়া বোধ হয় তিন হাজারের উপরও চুরি করিয়াছ—এত টাকা কি করিলে?
খরচ করিয়াছি।
খরচ ত করিয়াছ, কিন্তু চুরি করিলে কেন?
কুড়ি টাকায় আমার চলে না, কাজেই চুরি করিতে হয়।
কুড়ি টাকায় তোমার এতদিন চলিয়াছে, এখন না চলিবার কোন কারণ আমি বুঝিয়া উঠিতে পারি না; যা হোক, তাই বা আমাকে বল নাই কেন যে, তোমার কুড়ি টাকায় সংসার চলে না।
বলিলে কি আমাকে বেশি টাকা দিতেন?
হয়ত দিতাম, কিন্তু সেকথা যাউক; যা লইয়াছ তাহার অর্ধেক আমাকে ফিরাইয়া দিলে তোমাকে ছাড়িয়া দিতে পারি।
কেমন করিয়া দিব, আমার কিছুই নাই।
তোমার কোন জমিজিরাত থাকে ত বিক্রয় করিয়া দাও।
জমিজিরাতের মধ্যে আমার একমাত্র ভদ্রাসন আছে, তাহাই বিক্রয় করে লউন।
তোমার স্ত্রী-পুত্র থাকিবে কোথায়?
গাছতলায়।
ভগবানবাবু অনেকক্ষণ ধরিয়া হারাণ মুখুজ্যের মুখপানে চাহিয়া রহিলেন। তাহার পর বলিলেন, তোমার চক্ষু অত রাঙা কেন?
কেমন করিয়া জানিব?
তখন হারাণ মুখুজ্যেকে বিদায় দিয়া অন্য একজন আমলাকে ডাকিয়া বলিলেন, হারাণ মুখুজ্যের বাটীর সংবাদ লইতে পার?
কি সংবাদ লইব?
এইরকম যে ওদের সাংসারিক অবস্থা কেমন, কেমন সম্পত্তি আছে, কোনরূপ দেনাকর্জ আছে কি না—এই সব।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ১) Chapter : 2 Page: 6
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ১)
- Read Time: 1 min
- Hits: 141