এই লোকটি হারাণবাবুর অনেক কথা জানিত। সে বলিল, আমি যতদূর জানি, মুখুজ্যেমশায়ের সংসারের অবস্থা ভাল নহে, সম্পত্তিও বোধ হয় কিছুই নাই—তবে দেনাকর্জ আছে কি না বলিতে পারি না।
ভাল করিয়া সংবাদ লইয়া আমাকে জানাইও।
দুইদিন পরে সে বাবুকে জানাইল যে, সাংসারিক অবস্থা যতদূর মন্দ হওয়া সম্ভব মুখুজ্যেমশায়ের তাহা হইয়াছে, অন্যান্য সংবাদ পূর্বে যাহা বিদিত করিয়াছিল, সমস্তই সত্য।
ভগবানবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, মুখুজ্যে কোনরূপ নেশাটেশা করে কি?
আজ্ঞা হাঁ, গাঁজা খান।
তাই সেদিন চোখ অত রক্তবর্ণ দেখিয়াছিলাম; আনুষঙ্গিক আর কোন দোষ আছে কি?
আমলা নতমুখে বলিল, শুনতে পাই আছে।
তবে এক কাজ কর—কাল কোর্টে গিয়া চুরির অপরাধে মুখুজ্যের নামে নালিশ করিয়া দিও—পুলিসকেও সংবাদ পাঠাইয়া দাও।
পরিশেষে ফল এই দাঁড়াইল যে, মুখুজ্যে মহাশয়কে পুলিসের হস্তে গ্রেপ্তার হইয়া হাজতে যাইতে হইল।
নিকট হইলেও হলুদপুরে একথা প্রায় কেহই জানিতে পারিল না ; তবে বিন্দুর পিতা ভবতারণ গাঙ্গুলী একথা জানিলেন; বোধ হয় নন্দীরাই তাঁহাকে এ ঘটনা জানাইয়াছিল। তিনি সম্ভ্রান্ত ও বর্ধিষ্ণু লোক, ইচ্ছা করিলে হারাণ মুখুজ্যেকে অনায়াসে হাজতমুক্ত করিতে পারিতেন, কিন্তু কিছুই করিলেন না। সহায়-সম্বলহীন মুখুজ্যে মহাশয় হাজতগৃহেই পচিতে লাগিলেন। আর এক কথা—কলহপ্রিয়া কৃষ্ণঠাকুরানী এ ঘটনা যে কেমন করিয়া শুনিয়াছিলেন, তাহা শুধু তিনিই বলিতে পারেন।
বৈশাখের দ্বিপ্রহর কালমেঘে আচ্ছন্ন হইয়া ক্রমশঃ অন্ধকার হইয়া আসিতেছে। এইসময় হারাণবাবুর বাটীর রন্ধনশালার বারান্দায় তাঁহার স্ত্রী ও বড়কন্যা ললনা মুখোমুখি হইয়া বসিয়া আছে। দুজনেরই মুখ শুষ্ক, আজ একাদশী—ললনা বালবিধবা; আর তাহার জননী—তিনিও এখন পর্যন্ত কিছুই আহার করেন নাই।
ললনা বলিল, মা, আজো বোধ হয় বাবা আসবেন না। মেঘ করে আসছে, যদি জল হয় তাহলে রান্নাঘরে দাঁড়াবার জায়গা থাকবে না; তুমি কেন একটু কিছু খেয়ে নাও না।
ললনার জননী বলিল, আরও একটু দেখি, তিনদিন আসেন নি—আজ যদি আসেন।
মা, বাবা এমনতর ত কখন করেন নি; তিনদিন আসেন নি—আজ যদি না আসেন? কি করব বল, ভগবান আছেন!
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ১) Chapter : 2 Page: 7
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ১)
- Read Time: 1 min
- Hits: 196