ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
একথা শুনিয়া সুরেন্দ্রনাথ খুব হাসিয়া বলিলেন, তবে তোমার সঙ্গে খুব ঝগড়া হয়ে গেল?
মালতী বলিল, ঝগড়া হবে কেন, বরং বেশ ভাব হয়ে গেল।
সু। তবে ভাব করে নিয়েচ?
মা। নিয়েচি।
সু। কিন্তু ওর নিজের মেয়ের সঙ্গে কখন বনতো না। চিরকাল ঝগড়া ছিল।
মা। তা শুনেচি।
সু। কি করে?
মা। নিজেই মনের দুঃখে আমাকে কিছু কিছু বলেচে।
মনদুঃখের কারণটা কিন্তু মালতী খুলিয়া বলিল না।
সু। প্রথমে বাড়িতে ঢুকেই বুঝি তোমাকে খুব গালাগালি দিয়েছিল?
মালতী হাসিয়া বলিল, আমাকে দেয়নি। যে ডাইনীকে তুমি কলিকাতা থেকে এনেচ তাকেই দিয়েছিল।
সু। সে ডাইনী ত তুমিই।
মা। আমি কেন হব? আমি ত কলিকাতা থেকে আসিনি।
সু। তা হোক, তবু ত তুমিই সে।
মা। আমাকে সে চিনিতেও পারেনি। একটা দাসী মনে করেছিল।
সুরেন্দ্র ঈষৎ দুঃখিতভাবে বলিলেন, তা ছাড়া অপরে আর কি মনে করতে পারে?
মা। আমিও সেই জন্যে আজ বেঁচেচি—না হলে বোধহয় আমাকে আস্ত রাখত না।
সু। মেরে ফেলত?
মা। বোধ হয়।
সু। তার পর?
মা। আমি বললাম, সে মাগী এখানে নেই। তাতে বললে যে, সে এলেই তাকে খেয়ে ফেলবে।
সুরেন্দ্রবাবু হাসিতে লাগিলেন।
তার পর জিজ্ঞাসা করলে, তোমাকে ওষুধ করেচে কি না; আমি বললাম, বোধ হয় করেচে, না হলে বাবু উঠতে বললে ওঠেন, বসতে বললে বসেন কেন?
সু। আমি বুঝি তাই করি?
মা। কর না কি?
সু। আচ্ছা তা দেখচি; তার পর?

তার পর জিজ্ঞাসা করলে যে, সে মন্তর-তন্তর জানে কিনা, আমি বললাম, খুব জানে; কামরূপ থেকে শুনতে পাই শিখে এসেচে। বললে, আমিও জানি, কিন্তু বুঝতে পারলাম মনে মনে ভয় পেয়েচে।জিজ্ঞাসা করলে, বাণ মারতে পারে? আমি বললাম, পারে।
সুরেন্দ্রবাবু এবার খুব জোরে হাসিয়া ফেলিলেন। বলিলেন, তখন বুঝি পালিয়ে গেল?
মা। হাঁ।
সু। আর কখন এখানে আসবে না?
মা। আসবে বৈকি। কিন্তু তোমার সে ডাইনীর কাছে আসবে না—আসে ত আমার কাছে আসবে।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়