জয়ার মা। আহা, অমন মেয়েও মরে! কিন্তু তোদের এ ডাইনী কোত্থেকে উঠল?
মা। কলকাতা থেকে।
জয়ার মা। মাগী বুঝি বাবুকে ওষুধ করেচে?
মা। শুনতে ত পাই।
জয়ার মা। কিন্তু আমি তার ওষুধ করা আজ ভেঙ্গে দেব।
মা। দিও—মাগী যেমন—তেমনি শোধ দিয়ে তবে যেয়ো।
জয়ার মা। তা যাব। মাগী মন্তর-তন্তর কিছু জানে?
মা। মন্তর-তন্তর? শুনতে পাই কামিখ্যে থেকে শিখে এসেছিল। মানুষকে ভেড়া কোরে রাখতে পারে। এই বাবুকে এমনি করেচে যে, ইনি উঠতে বললে ওঠেন, বসতে বললে বসেন।
জয়ার মার মুখখানা কিছু বিবর্ণ হইয়া গেল। শুষ্কমুখে বলিল, তা মন্তর-তন্তর আমিও জানি।
মা। জানবে না কেন? তা আজ দুপুরবেলা যখন আসবে তখন দেখিয়ে দেব।
জয়ার মা। বাণ মারতে জানে?
মা। জানে বৈ কি!
জয়ার মা। কখন আসবে?
মা। দুপুরবেলা।
জয়ার মা জানালা দিয়া বাহিরে চাহিয়া দেখিল। বোধ হইল যেন দুপুর হইতে অধিক বিলম্ব নাই। ইতস্ততঃ করিয়া বলিল, আজ কিন্তু আমার ঢের বরাত আছে—আজ তবে এখন যাই, কাল আসব। জয়ার মা উঠিয়া দাঁড়াইল।
মা। না, না, আজ এখানে খেয়ে-দেয়ে যান।
জয়ার মা।বড় দেরি হবে যে।
মা। কিছুই দেরি হবে না!
জয়ার মা। তবে শীগ্গির শীগ্গির নে মা। তোর নামটি কি বাছা?
মা। আমার নাম মালতী।
জয়ার মা। আহা বেশ নাম।
জয়ার মা তখন নীচে আসিয়া তাড়াতাড়ি করিয়া কিছু আহার করিয়া লইল। মালতী নিকটে বসিয়া দেখিল যে, জয়ার মার আহারে তেমন সুবিধা হইল না, উঠিয়া বলিল, তবে এখন যাই মা।
মা। একটা কথা আপনাকে এখনো বলা হয়নি—জয়াদিদির কাছে আমি দশ টাকা ধার নিয়েছিলাম—তা তিনি ত নেই, এখন আপনি যদি দয়া করে আমাকে ঋণমুক্ত করেন।
জয়ার মা ভাল বুঝিতে পারিল না। বলিল, কি করি?
মা। সেই দশ টাকা আপনি নিন।
জয়ার মা। আমাকে তুমি দেবে?
মা। হাঁ।
মালতী উপর হইতে দশ টাকা আনিয়া তাহার হাতে দিল।
জয়ার মা অনেকক্ষণ ধরিয়া মালতীর মুখপানে চাহিয়া রহিল। তাহার পর ধীরে ধীরে বলিল, বাছা, তুই নিশ্চয় ভদ্দরঘরের মেয়ে।
মালতী মৃদু হাসিয়া বলিল, আমি দুঃখী লোক।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ২) Chapter : 12 Page: 62
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ২)
- Read Time: 1 min
- Hits: 175