স্ত্রীলোকটি রুদ্ধশ্বাসে সে অলৌকিক ভঙ্গি দেখিতে লাগিল।
ওরে হারামজাদী তোকে খাব (বক্ষে চপেটাঘাত)—ওরে আবাগী—শতেক খোয়ারি—ছেনাল—ডাইনী (মস্তকের কেশাকর্ষণ) তোকে খাব—তোকে খাব—তোকে খাব—মা-কালীর পায়ে বুক চিরে রক্ত দেব—আর এমনি কোরে মাথা খুঁড়ে হাড় দেব (ভূমিতলে মস্তক ঠোকন)—ওরে আবাগী, এমনি কোরে—এমনি কোরে (দন্তে দন্ত ঘর্ষণ)— কই, কোথা সে?
যাহার উদ্দেশে এত হইতেছিল, সেই সুমুখে বসিয়াছিল; জয়ার মা কিন্তু তাহা জানিত না, জানিলে বোধহয় সেদিন কিছু একটা ঘটিয়া যাইত।
মালতী নিকটে আসিয়া হাত ধরিল, ধীরে ধীরে বলিল, আপনি চুপ করুন—
আমি চুপ কোরব! তুই হতভাগী সেকথা বলবার কে? আমার মেয়েকে খেয়েচে, আর আমি চুপ কোরে থাকব? (পুনরায় ভূমিতলে মস্তকাঘাত)
মালতী বুঝিল, অত মোটা কার্পেট না থাকিলে জয়ার মা সেদিন আস্ত মাথা লইয়া বাটী ফিরিয়া যাইতে পারিত না। কহিল, তিনি আজ এখানে নাই।
এখানে নাই?
মা। না।
জয়ার মা। আমি কিন্তু এক পাও এখান থেকে নোড়ব না—হারামজাদীকে দেখব, খাব—তবে যাব!
মালতী অল্প হাসিয়া বলিল, যাবেন কেন? স্বচ্ছন্দে এখানে থাকুন। কিন্তু অনেক বেলা হল, খাওয়া-দাওয়া ত এখনও আপনার হয় নাই?
জয়ার মা। খাওয়া-দাওয়া? তা তখন একেবারেই কোরব।
মা। আহা, মেয়ের শোক! মার প্রাণ যে কি কোরচে তা আমিই জানি।
জয়ার মা ঈষৎ নরম হইল, বলিল, তাই বুঝে দেখ বাছা!
মা। তা কি আর বুঝিনে! কিন্তু কি করবেন বলুন—মুখেও ত কিছু দুটো দিতে হয়, পোড়া পেট ত আর মানে না।
জয়ার মা। তা সত্যি কথা।
মা। তাই বলচি, এখানেই দুটো জোগাড় করে দিই—
জয়ার মা। দিবি? তা দে বাছা।
মা। আহা! জয়াদিদি আপনার কথা কত বোলতেন।
জয়ার মা। বোলত? তা বলবে বৈ কি! তুই তাকে দেকেচিস!
মা। আহা—কতদিন একসঙ্গে এলাম—তাঁকে আর দেখিনি?
জয়ার মা। তুই বুঝি তার সঙ্গে ছিলি?
মা। হাঁ, তিনি আমাকে আমার দেশ থেকে তুলে নিয়েছিলেন।কত কথা বোলতেন—তার মধ্যে আপনার কথাই বেশি হোত।
জয়ার মা। তা হবে বৈ কি! সে আমার তেমন মেয়ে ছিল না।
মা। তিনি খুব ভাল লোক ছিলেন।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ২) Chapter : 12 Page: 61
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ২)
- Read Time: 1 min
- Hits: 167