মালতী হাত তুলিয়া চক্ষু মুছিল।
এ সৌন্দর্য যে কি, এ রূপে যে কত মুগ্ধ হইয়াছি তাহা প্রকাশ করিতে পারি না। মনের সাধে সাজাইব বলিয়া কত অলঙ্কার আনিলাম, কত বস্ত্র সংগ্রহ করিলাম, কিন্তু একদণ্ডের তরেও তুমি পারিলে না। মালতী! তুমি কি আমাকে দেখিতে পার না?
মালতী তাঁহার ক্রোড়ের উপর মস্তক স্থাপিত করিয়া কাঁদিতে লাগিল।
সুরেন্দ্রনাথের চক্ষুও আর্দ্র হইয়া আসিল। আদর করিয়া তাহার মস্তকে হাত রাখিয়া গদগদ স্বরে কহিলেন, তুমি যে আমাকে দেখিতে পার না তাহা বলি না, কিন্তু আমার আরও অনেক কথা মনে হয়—তুমি আমার অপরাধ লইও না—আমার যাহা মনে হয়—আজ তাহা বলিয়া যাই—আমার বিশ্বাস তুমি যে পন্থা অবলম্বন করিয়াছ, নীচ স্ত্রীলোকে আত্মসুখের জন্যই সে পন্থা অবলম্বন করিয়া থাকে এবং বস্ত্রালঙ্কার ধনরত্ন ঐশ্বর্য ভিন্ন তাহাদের সুখ যে আর কিসে আছে তাহা জানি না, কিন্তু তোমাকে তাহাদের মত বোধ হয় না, সেইজন্য বুঝিতেও পারি না কি করিলে তুমি সুখ পাইবে। যদি তাহা হইত তাহা হইলে তুমি এতদিনে সুখী হইতে—বলিতে বলিতে সুরেন্দ্রনাথ অল্পক্ষণ মৌন হইয়া রহিলেন; পরে ঈষৎ গম্ভীরভাবে বলিলেন, মালতী! তোমার স্বামী জীবিত আছেন কি?
মালতী ক্রোড়ের উপর মাথা নাড়িয়া জানাইল যে তাহার স্বামী জীবিত নাই।
তবে বল, তোমাকে বিবাহ করিলে কি সুখী হও? বল—বল, আমি তাহাতেও কুণ্ঠিত নহি।
এইবার মালতী গড়াইয়া তাঁহার পায়ের উপর পড়িল; হাত দিয়া তাহা জড়াইয়া ধরিল, তাহাতে মুখ লুকাইল। সুরেন্দ্রনাথ কিন্তু তুলিবার চেষ্টা করিলেন না, বুঝিলেন চক্ষের জলে তাঁহার পদদ্বয় সিক্ত হইতেছে, তথাপি উঠাইলেন না, বরং দীর্ঘনিঃশ্বাস মোচন করিয়া নীরব হইয়া রহিলেন।
বহুক্ষণ গত হইল; তাহার পর ম্লানভাবে ধীরে ধীরে বলিতে লাগিলেন—ভগবান জানেন আমার কি হইয়াছে। তোমাকে অন্তরের সহিত ভালবাসিয়াছি, কি ও অতুল রূপে উন্মত্ত হইয়াছি তা বলিতে পারি না, কিন্তু কাণ্ডজ্ঞান আমার আর নাই, ভালমন্দ বুঝিয়া দেখিবার ক্ষমতা আমাকে ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছে। তোমার একটি কথার জন্য প্রাণ পর্যন্তও বুঝি দিতে পারি।
উপন্যাস : শুভদা (অধ্যায় ২) Chapter : 10 Page: 45
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: শুভদা (অধ্যায় ২)
- Read Time: 1 min
- Hits: 158