হেদায়েত সেতুর জন্যে সেন্ট কিনে বাসায় ফিরেছে। সেন্টের নাম ক্লিওপেট্রা। বোতলের কভারে ক্লিওপেট্রার ছবি। ক্লিওপেট্রা সাপ হতে বসে আছে। সাপটার দিকে তাকিয়ে আছে গভীর ভালোবাসায়। গন্ধটা তার কাছে যথেষ্টই ভালো লেগেছে। সে বেলায়েতকেও গন্ধ শুকিয়েছে। বেলায়েত বলেছে, আমি তো কোনো গন্ধই পাচ্ছি না। মনে হয় সর্দিতে নাক বন্ধ।

 

সেতু বলল, রাত দশটা বাজে। কোথায় ছিলে এত রাত পর্যন্ত?

ভাইজানের কাছে গিয়েছিলাম।

খবর দিলেই পারতে, চিন্তা করছিলাম।

হেদায়েত বলল, তোমার জন্যে একটা সেন্ট কিনেছি। ক্লিওপেট্রা নাম।

সেতু বিস্মিত হয়ে বলল, হঠাৎ সেন্ট কিনলে কেন? তুমি তো সেন্ট কেনার মানুষ না! ধারাপাতের একটা বই কিনে আনলে বুঝতাম হিসেব মতো কিনেছ। এই তুমি কি খেয়ে এসেছ?

হুঁ।

খেয়ে এসে ভালোই করেছ। ঘরে তেমন কিছু রান্না হয় নি। কাঁঠাল-বিচি দিয়ে ডিমের ঝোল। তুমি কী খেয়েছ?

পাঙ্গাস মাছ আর মুরগির ঝাল ফ্রাই। ভাইজানের রেস্টুরেন্টে খেয়েছি। ভাইজান তোমার জন্য খাবার দিয়ে দিয়েছেন। রান্নাঘরে রেখে এসেছি।

সেতু বলল, আমি তো খাব না।

খাবে না কেন?

আমি মা’র বাসায় যাচ্ছি। মা কোখেকে এক রেসিপি পেয়েছে— সজনে গাছের ছালের ভর্তা। খেতে না-কি অসাধারণ। রবিন ভাই আমাদের সঙ্গে খাবেন। উনি একটা ছবি নিয়ে আসবেন। ছবির নাম Swan। এমনই ভয়ের যে দুর্বল হার্টের লোকজনের দেখা নিষেধ।

সেতু সাজ-গোজ করছে। হেদায়েত সামান্য টেনশান বোধ করছে। সেতু কি তার পুরানো সেন্টটাই মাখবে? হেদায়েতের উচিত ছিল বলা, পুরানো সেন্টের গন্ধটা আমার ভালো লাগে না। এই জন্যেই ক্লিওপেট্রা কিনেছি। এখন থেকে ক্লিওপেট্রা দেবে। মেয়েরা কি অন্যের পছন্দের সেন্ট গায়ে মাখে? মনে হয় না। সব মেয়েরই নিজের পছন্দের সেন্ট থাকে।

সেতুর সাজ-গোজ শেষ হয়েছে। আজকের সাজটা ভালো হয় নি। তাকে সিনেমার এক্সট্রা মেয়েদের মতো লাগছে। তার গাড়ি এখনও আসে নি। সে হেদায়েতের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার দিকে ভালো করে তাকাও। আমার হাতে কী?

হেদায়েত বলল, দড়ি।

সেতু বলল, এক হাতে দড়ি, অন্য হাতে কঁচি। এই কাঁচি দিয়ে আমি দড়ির মাঝখানটা কেটে ফেলব।

হেদায়েত বলল, কেন?

ম্যাজিক দেখাচ্ছি। ঐ দিন কি বললাম, রবিন ভাইয়ের দড়ি কাটার একটা ম্যাজিক আমি ধরে ফেলেছি। সেইটাই এখন তোমাকে দেখাচ্ছি। এই দেখ দড়ির মাঝখানটা কাটলাম। দেখছ ঠিকমতো?

টিসুপেপার দিয়ে কাটা অংশটা ঢাকলাম। দেখছ তো? অন্য দিকে তাকাবে। আমার দিকে তাকিয়ে থাক।

আচ্ছা।

এখন দেখ দড়ি কি জোড়া লেগেছে?

হুঁ।

সেতু বলল, তুমি অবাক হও নি?

হেদায়েত বলল, না। অবাক হব কেন? তুমি তো ম্যাজিক দেখাচ্ছে। এমন যদি হতো যে, আমরা দড়ি কাটছি আর আপনা-আপনি কাটা দড়ি জোড়া লেগে যাচ্ছে তাহলে অবাক হতাম।

তুমি এমন অদ্ভুত মানুষ!

হেদায়েত বলল, সরি!

সেতু বলল, সরি বলার কিছু নেই। সব মানুষ কখনো এক রকম হয় না। একটা কাজ করে দাও।

কী কাজ করতে হবে হেদায়েত বুঝতে পারছে না। শাড়ি পরার পর সেতুর একজনকে লাগে, যে পায়ের কাছে শাড়ির পার ধরে টানাটানি করে। এই কাজ? না-কি সেফটিফিন লাগানো কাজ? ব্লাউজের বোতাম লাগানোর কাজও হতে পারে? এইসব কাজ মেয়েরা একা করতে পারে না। দ্বিতীয় একজন লাগে। সিস্টেমটা এমন হওয়া উচিত যেন এই ধরনের কাজ মেয়েরা নিজেরাই করতে পারে। হেদায়েত বলল, কী কাজ?

সেতু বলল, আমার জন্যে একটা সেন্ট কিনে এনেছ, সেন্টটা গায়ে নিজের হাতে স্প্রে করে দাও। এক গাদা দিও না।

হেদায়েত স্পেতে চাপ দিল। মিষ্টি গন্ধ বের হচ্ছে।

সেতু বলল, পুরুষদের কিছু কিছু কাজে মেয়েরা খুব খুশি হয়। এই যে তুমি সেন্ট কিনে আনলে আমি খুশি হয়েছি। গায়ে স্প্রে করে দিলে এতে আরও খুশি হয়েছি। তবে স্প্রে করার ব্যাপারটা আমাকে বলে দিতে হয়েছে, এটাই সমস্যা।

হেদায়েত বলল, সমস্যা কেন?

সেতু বলল, সমস্যা কেন তোমাকে ব্যাখ্যা করতে পারব না।

হেদায়েত হঠাৎ লক্ষ করল, সেতুর পায় থেকে আগের সেন্টের অতি বোটকা গন্ধ আসছে। দম বন্ধ হয়ে আসার মতো গন্ধ। এ রকম তো হওয়ার কথা না! আগের সেন্টটা তো সেতু গায়ে মাখে নি। সমস্যা কী?

সেতু বলল, গাড়ির হর্ন শুনতে পাচ্ছি। আমি গেলাম।

হেদায়েত বলল, আচ্ছা।

সেতু বলল, একটা চুমু খেতে চাইলে খেতে পার। চুমু খেতে ইচ্ছা করছে?

হেদায়েত বলল, চুমু খেতে ইচ্ছা করবে কেন?

সেতু বলল, তোমার স্ত্রী সুন্দর করে সেজে-গুজে বাইরে যাচ্ছে, তাকে বিদায় দেবার সময় চুমু খেতে ইচ্ছা করবে না, আশ্চর্য তো!

হেদায়েত বলল, তোমার ঠোটের লিপস্টিক নষ্ট হয়ে যাবে তো।

সেতু বলল, কী অদ্ভুত তোমার কথাবার্তা! Ok আমি গেলাম। রাতে টেলিফোনে কথা হবে।

হুঁ।

সব সময় হুঁ হুঁ করবে না। তুমি বোবা-কালা না।

 

হেদায়েত শোবার ঘরের খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আসে। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। নাদুর মা অ্যাশট্রে দিয়ে গেছে। অ্যাশট্রেতে সামান্য পানি দেয়া হয়েছে বলে সিগারেটের ছাই ওড়ছে না। নাদুর মার বুদ্ধিতে হেদায়েত মুগ্ধ। অতি সাধারণ একটা বিষয়ের জন্যে কত বড় সুবিধা হয়ে গেল। হেদায়েতের ঘুম পাচ্ছে, তবে এখন ঘুমানো যাবে না। সেতু টেলিফোন করে বলে গেছে। তার টেলিফোনের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। হেদায়েতের শান্তি শান্তি লাগছে। ঘরে টিভি চলছে না বলেই হিন্দি কথাবার্তা কানে আসছে না। রান্নাঘরও নিস্তব্ধ। নাদুর মা মনে হয় শুয়ে পড়েছে। কাজের মেয়েরা অতি দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে পারে। নিস্তব্ধ ফ্লাটবাড়ি জটিল চিন্তার জন্যে ভালো। কী নিয়ে। চিন্তা করা যায়? ম্যাজিক নিয়ে?

হেদায়েত গভীর চিন্তা শুরু করল। প্রকৃতি কি ম্যাজিক পছন্দ করে? সৃষ্টির রহস্যের অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে? এমন কি হতে পারে যে, আলোর গতি ধ্রুবক না। প্রকৃতির ম্যাজিকের কারণে মানুষের কাছে মনে হচ্ছে ধ্রুবক। আলোর গতির বিষয়টা জটিল। প্রকৃতির ম্যাজিক প্রকাশ হয়ে পড়লে দেখা যাবে বিষয়টা দড়ি কাটার মতই সহজ।

টেলিফোন বাজছে। পাঁচটা রিং হবার পর হেদায়েত টেলিফোন ধরল, কারণ পাঁচ হলো প্রাইম সংখ্যা।

কে সেতু। ঠিকমতো পৌঁছেছ?

ও পাশ থেকে মিষ্টি গলা ভেসে এল, স্যার আমার নাম নীতু। রোল নাম্বার টেন।

ও আচ্ছা।

স্যার আমাকে চিনেছেন?

হুঁ।

সেতু কে স্যার। ম্যাডাম?

হুঁ।

উনি বাসায় নেই?

না।

কোথায় গেছেল?

তার মা’র বাসায় গেছে। রাতে থাকবে। তারা একটা ভূতের ছবি দেখবে। ছবির নাম Swan। দুর্বল হার্টের মানুষদের জন্যে ছবিটা নিষিদ্ধ।

তাহলে তো স্যার ছবিটা আমি দেখতে পারব না। আমার হার্ট অত্যন্ত দুর্বল। প্যালপিটিশন হয়।

সেই ক্ষেত্রে তোমার এই ছবি না দেখাই ভালো।

স্যার আমি কী জন্যে টেলিফোন করেছি জানতে চাইলেন না তো?

কী জন্যে করেছ?

আপনি ক্লাসে বলছিলেন গত কাল রাতে একটা হাতের উপর আপনার হাত পড়েছিল। সেই হাতটা কার সেটা বের করেছি। আমার ধারণা বের করে ফেলতে পেরেছি।

হেদায়েত আগ্রহের সুরে বলল, কার হাত?

নীতু বলল, মাহজাবিনের হাত স্যার। রোল নাইটিন।

তার হাত কীভাবে হবে? সে তো আমাদের ফ্লাটে থাকে না।

আত্মার ব্যাপার স্যার। সে মগবাজারে থাকে, তার আত্মা আপনাদের ফ্ল্যাটে চলে গিয়েছিল।

সেটা কীভাবে সম্ভব? আত্মার হাত থাকবে কীভাবে?

নীতু বলল, তার আত্মার সঙ্গে আপনার আত্মার মিলন হয়েছে স্যার।

হেদায়েত বলল, তোমার কথায় কোনো যুক্তি পাচ্ছি না তো। Soul কোনো material বস্তু না।

নীতু বলল, অনেক বিষয় আছে স্যার যুক্তির ঊর্ধ্বে। আত্মা তো আর আপনি অংক দিয়ে প্রমাণ করতে পারবেন না।

হেদায়েত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তা ঠিক। তবে আত্মা যদি সত্যি থাকে তাহলে কোনো একদিন সেটা অংকের সীমানায় চলে আসবে। ম্যাথমেটিসিয়নরা আত্মার একটা ইকুয়েশন বের করে ফেলবেন। একটা ওয়েভ ফাংসান। ওয়েভ ফাংসানটা হতে হবে টাইম ইনডিপেনডেন্ট। কারণ আত্মা সময়ের বাইরে।

স্যার আমি রাখি? মা দুর থেকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে। মা ভাবছে আমি কারো সঙ্গে প্রেম করছি। আমার মা খুব সন্দেহবাতিকগ্রস্ত মহিলা।

ও আচ্ছা!

আমার বাবাও সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, তবে মার চেয়ে সামন্য কম।

ও আচ্ছা!

স্যার আপনার হাতের কাছে কি কাগজ-কলম আছে?

কাগজ-কলম হাতের কাছে নাই।

হাতের কাছে কাগজ-কলম থাকলে আমার টেলিফোন নাম্বারটা লিখে রাখতে বলতাম। আত্মার ইকুয়েশনটা যদি আপনি বের করে ফেলতে পারেন তাহলে টেলিফোনে আমাকে জানতে পারবেন। আমার ধারণা কেউ না পারলেও আত্মার ইকুয়েশনটা আপনি বের করতে পারবেন। কারণ আপনি আফু।

‘আফু’ মানে কী?

‘আফু’ মানে আপনাকে বলব না। স্যার, কাগজ-কলম পেয়েছেন?

হেদায়েত বলল, একবার শুনলেই আমার টেলিফোন নাম্বার মনে থাকে। তুমি নাম্বারটা বল।

স্যার আপনার এত স্মৃতিশক্তি!

আমার স্মৃতিশক্তি ভালো না। আমি একটা বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করি। নাম্বার মনে রাখার জন্যে টেকনিকটা ভালো।

স্যার টেকনিকটা আমাকে বলবেন?

অবশ্যই বলব। তুমি করবে কি নাম্বারগুলি তিনটা ভিজিট করে আলাদা করবে। তারপর দেখবে প্রতিটি ভাগে কয়টা প্রাইম নাম্বার আছে। প্রাইম নাম্বারগুলির পাশের সংখ্যাটার সঙ্গে কত যোগ করলে আবার প্রাইম সংখ্যা হয় সেটা হিসাব করবে। শূন্য কয়টা আছে সেটা বের করবে। একক দশক শতক হিসাবে শূন্যের অবস্থানটা জানবে…

স্যার আপনি তো আমার মাথা পুরা আউলায়ে দিয়েছেন। আমি আমার লাম্বারটা বলি এক সপ্তাহ পরে জিজ্ঞেস করব, দেখি বলতে পারেন কিনা? আমার নাম্বার হল ৯৬৫০৩০২১, স্যার মনে থাকবে?

অবশ্যই মনে থাকবে। মোট চারটা প্রাইম সংখ্যা আছে। শূন্য আছে দু’টা। তাদের অবস্থান শতকের ঘরে এবং অযুতের ঘরে।

স্যার খোদা হাফেজ। মা এদিকে আসছেন তো আর কথা বলা যাবে না।

খোদা হাফেজ।

হেদায়েত টেলিফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গেই টেলিফোন বাজতে লাগল। হেদায়েত রিসিভার কানে নিতেই সেতু বলি, টেলিফোন এতক্ষণ এনগেজ কেন? যতবারই রিং করছি এনগেজ টোন। কার সঙ্গে কথা বলছিলে?

আমার এক ছাত্রীর সঙ্গে, তার নাম নীতু। রোল নাম্বার টেন।

এত রাতে ছাত্রীর সঙ্গে কীসের কথা?

তার ধারণা সে একটা সমস্যার সমাধান করেছে। সমাধানটা আমাকে জানাতে টেলিফোন করেছিল। তবে সমাধান ঠিক না, হাস্যকর! আমার ধারণা কোনো একটা ফাজলামি করার জন্যে সে টেলিফোন করেছে।

বকবকানি রাখ। শোন তুমি শোবার ঘরে সিগারেট খাচ্ছ না তো!

একটা খেয়েছি।

আর খাবে না। খেতে ইচ্ছা হলে বারান্দায় গিয়ে খাবে।

আচ্ছা।

টেবিল-ল্যাম্পের কাছে এক পাতা ডরমিকাম ট্যাবলেট আছে। এক্ষুনি একটা খেয়ে নাও।

এই ট্যাবলেট খেলে কী হবে?

ভালো ঘুম হবে। তুমি আজে-বাজে স্বপ্ন, হাতের উপর হাত— এইসব দেখবে না।

আচ্ছা ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমাব।

এক্ষুনি খাও। নয় তো মনে থাকবে না। আমি টেলিফোন ধরে আছি, তুমি ট্যাবলেট খেয়ে আস।

হেদায়েত ট্যাবলেট খেয়ে আবার টেলিফোন ধরল। সেতু বলল, আমাদের সমস্ত প্রোগ্রাম বাতিল হয়ে গেছে। এমন মেজাজ খারাপ লাগছে!

প্রোগ্রাম বাতিল হলো কেন?

ভিসিডির প্রিন্ট খারাপ। ছবি ঝিঝিড় করছে। আটকে আটকে যাচ্ছে।

অন্য কোনো ছবি দেখ।

ভূতের ছবি দেখার মুড নিয়ে বসেছি, এখন অন্য ছবি কীভাবে দেখব?

তাও ঠিক।

তুমি মাঝে-মাঝে এত বোকার মতো কথা বল।

সরি।

সরি-ফরি বলতে হবে না। শুয়ে পর, রাত অনেক হয়েছে। ও আচ্ছা বলতে ভুলে গেছি, তোমার সেন্টাটা রবিন ভাই খুব পছন্দ করেছেন। রবিন অই বলেছেন সেন্টটার গন্ধের সঙ্গে এলিজাবেথ আর্ডেনের গন্ধের খুব মিল আছে। এলিজাবেথ আর্ডেনের নাম শুনেছ?

না।

পৃথিবীর সেরা সেন্ট। আচ্ছা রাখি তুমি শুয়ে পড়। ডরমিকাম খাবার আধ ঘণ্টার মধ্যে শুয়ে পড়তে হয়, নয় তো পরে মাথা ধরে। বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়। ঘুম তাড়াতাড়ি আসবে।

হেদায়েত টেলিফোন রেখে শুয়ে পড়ল। আজকে রাতটা ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা। গায়ের উপর চাদর রাখলে গরম লাগে। চাদর ফেলে দিলে আবার ঠাণ্ডা লাগে।

বাতি নেভানোর পর ঘর কবরের মতো অন্ধকার হয়ে গেছে। ভোরবেলায় জানালা দিয়ে আলো আসে বলে সেতুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই কারণেই প্রতিটি জানালার সে ভারী পর্দা দিয়েছে। এতেও লাভ হয়নি দেখে জানালার কাচে কালো রঙ দিয়ে দিয়েছে। কোনো দিন থেকে ঘরে আলো আসার ব্যবস্থা নেই। এমন অন্ধকার ঘরে ঘুমানো যায় না। সাউন্ড অফ করে টিভি ছেড়ে দিলে ঘর সামান্য আলো হবে। টিভির রিমোট টেবিলে রাখা। রিমোটের জন্যে হাত বাড়াতেই আগের রাতের মতো নরম একটা হাতের উপর হাত পড়ল। হেদায়েত আগের রাতের মতো চেঁচিয়ে উঠল না। ভয়ে তার শরীর জমে গেছে। তার পরেও সে হাত সরাল না। ব্যাপারটা বুঝতে হবে। সে যদি শক্ত করে হাতটা ধরে তার কাছে আনে তাহলে কি হাতটা আসবে? শুধু হাতটা আসবে না হাতের মানুষটাও আসবে? চিন্তা করতে করতেই হেদায়েত উরমিকামের প্রভাবে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।

গাঢ় ঘুম হলো না। সারারাতই আজে-বাজে স্বপ্ন। একটা স্বপ্নে বড় হলঘরে পুতুলের মতো চেহারার একটা লম্বা মেয়ে মেঝেতে বসে আছে। মেয়েটার হাত দুটি অসম্ভব লম্বা। দুটি হাতই মেঝেতে পরে আছে সাপের মতো। মেয়েটার আঙ্গুলগুলি অস্বাভাবিক লম্বা। প্রতিটি আঙ্গুলে আংটি। আংটি থেকে আলো বেরিয়ে আসছে। স্বপ্নে হেদায়েত মেয়েটাকে চেনে। মেয়েটার নাম এলিজাবেথ আর্ডেন। তার গা থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে।

স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। আরেকটা স্বপ্ন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো। সেই স্বপ্নে আগের হলঘরটাই আছে, তবে এলিজাবেথ আর্ডেন নেই। হলঘর ভর্তি পুরানো আমলের টেলিফোন। এখানেও একটা মেয়ে আছে। মেয়েটার মুখ গোল। মাথাভর্তি কোঁকড়ানো চুল। মেয়েটি বলছে, আমি টেলিফোন অপারেটর। আমার নাম নীতু। রোল নাম্বার টেন। আপনার কাকে দরকার বলুন। আমি এক্ষুনি লাইন করে দিচ্ছি।

হেদায়েত বলল, সেতুর সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার। সে তার মায়ের বাড়িতে আছে।

মায়ের বাড়িতে কেন?

তার একটা ভূতের ছবি দেখার কথা। ছবির খুব ভালো প্রিন্ট পাওয়া গেছে।

স্যার উনাকে তো কোনো নাম্বারেই পাচ্ছি না।

চেষ্টা করে যাও।

মেয়েটা চেষ্টা করেই যাচ্ছে। লাভ হচ্ছে না। এক সময় সে হতাশ হয়ে বলল, স্যার টেলিফোনে পেলাম না। তবে উনার আত্মা নিয়ে আসতে পারি। আনব?

না না, এই কাজ করতে যাবে না। পরে তার সমস্যা হবে।

স্যার গুড নিউজ! উনাকে টেলিফোনে পাওয়া গেছে। নিন কথা বলুন।

হেদায়েতের ঘুম ভাঙলো টেলিফোনের শব্দে। টেলিফোন বেজেই যাচ্ছে। ঘরে ঝলমলে আলো। ঘড়িতে দশটা পাঁচ বাজে। দশটা থেকে ক্লাশ ছিল। ক্লাসটা মিস হয়েছে। কী সর্বনাশ! হেদায়েত টেলিফোন ধরে বলল, কে?

সেতু বলল, কে বলছ কেন? টেলিফোনটা ভদ্রভাবে ধরতে পার না। এতক্ষণ ধরে ঘুমাচ্ছ?

হুঁ,

ঘুমের অষুধে তাহলে ভালো কাজ করেছে।

হুঁ।

এখন থেকে অর্ধেকটা করে খাবে, পুরো ট্যাবলেট খেয়ে সারাদিন ঘুমানোর কিছু নেই।

হুঁ।

আচ্ছা শোন আমার আসতে আসতে কিন্তু বিকাল হয়ে যাবে। ছোট্ট একটা ঝামেলায় পড়ে গেছি। ঝামেলাটা কি শুনবে?

না।

এত কম কৌতূহল কেন তোমার, বল তো। একটা বোয়াল মাছের যে কৌতূহল, তোমার তাও নাই। বোয়াল মাছ পানিতে নড়া-চড়া করে। আশেপাশে কী হচ্ছে বুঝার চেষ্টা করে। তুমি তাও কর না।

সরি!

কথায় কথায় সরি বলার কিছু নেই। সরি বলে সমস্যার সমাধান হয় না। আচ্ছা শোন, কেউ কি আমার নামে কিছু তোমার কাছে লাগিয়েছে?

না তো।

উল্টা-পাল্টা কিছু কি বলেছে–যেমন আমার ইল্লিসিট রিলেশনশিপ আছে একজনের সঙ্গে।

না।

দুষ্টলোকের তো পৃথিবীতে অভাব নেই। মানুষের নামে কুৎসিত গল্প তৈরী করে এরা কী যে আনন্দ পায়। কোন একটা বদমাশ আমার নামে আজে-বাজে কথা চারদিকে ছড়াচ্ছে।

আজে-বাজে কী কথা?

আমি না-কি রাতে হোটেলে কার সঙ্গে থাকি।

হেদায়েত বলল, তুমি হোটেলে থাকবে কেন? নিজের ফ্ল্যাট আছে। মায়ের বাসা আছে। তোমার হোটেলে থাকার দরকার কী?

তুমি যত সহজে ব্যাপারটা বুঝতে পারছ, অন্যরা তা পারছে না। নাশতা খেয়েছ?

না।

হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা খাও। কলেজে যাও। আর শোন রাতে তোমাকে নিয়ে বাইরে কোথাও যাব। টি বোন স্টেক খেতে ইচ্ছা করছে। আমি একটা রেস্টুরেন্টের খোঁজ পেয়েছি, ভালো স্টেক বানায়।

হেদায়েত বলল, আচ্ছা।

নাদুর মা চা নিয়ে এসেছে। বাসি মুখে চা খেতে দেখলে সেতু রাগ করত। সেতু নেই, আরাম করে চা-টা খাওয়া যায়।

নাদুর মা বলল, ভাইজানের শরীর কি ঠিক আছে?

হুঁ।

দশটা পর্যন্ত ঘুম, এই জন্যে চিন্তাযুক্ত ছিলাম। ভাইজান, অনেক দিন ধইরা ভাবতেছি আপনারে একটা কথা বলব। সাহসে কুলায় না। কথাটা বলি? আপামণির বিষয়ে একটা কথা। আপনেরে বলা প্রয়োজন।

হেদায়েত হাই তুলতে তুলতে বলল, আরেকদিন বল। আজ শরীরটা খারাপ। নাশতা খেয়ে শুয়ে পড়ব। কলেজেও যাব না। গত রাতে একটা ঘুমের অষুধ খেয়েছিলাম। মনে হয় তার অ্যাফেক্ট। পুরোটা খাওয়া ঠিক হয় নি। এখন থেকে অর্ধেকটা করে খাব।

হেদায়েত নাশতা খেয়ে শুয়ে পড়ল। সারাদিন ঘুমাল। দুপুরে নাদুর মা কয়েকবার ডাকতে এলেও ঘুম ভাঙতে পারল না। তার ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার আগে আগে। টেলিফোনের রিংয়ের শব্দ। হেদায়েত টেলিফোন তুলে তার স্বভাবমতো বলল, কে সেতু?

স্যার আমি নীতু। রোল টেন।

 

ও আচ্ছা তুমি।

আজ ক্লাস নেননি কেন স্যার? মাহজাবিন খুব মন খারাপ করেছে।

কেন?

আপনার ক্লাস তার খুব পছন্দ। মনে হয় এই কারণে কিংবা অন্য কিছুও হতে পারে।

অন্য কী? সেটা স্যার আপনাকে বলতে পারব না। সেতু ম্যাডাম এখনো ফিরেন নি?

না।

উনার সঙ্গে কি আপনার ঝগড়া হয়েছে?

না তো! আমাদের ঝগড়া হয় না। স্যার আপনাকে যে আমার টেলিফোন নাম্বার দিয়েছিলাম সেটা কি আপনার মনে আছে।

হ্যাঁ মনে আছে। ৯৬৫৪৩২১ হয়েছে?

জ্বি স্যার হয়েছে। এখন বাসায় কি আপনি একা?

একা না, নাদুর মা আছে।

আপনাদের কাজের বুয়া?

হুঁ।

নিশ্চয়ই ময়মনসিংহ বাড়ি। সব কাজের বুয়াদের বাড়ি ময়মনসিংহ হয়।

ঠিকই ধরেছ?

ওদের ফেভারিট খাবার কী জানেন স্যার?

না। কখনও জিজ্ঞেস করি নি।

পাটশাক। এরা আবার পাটশাকের শুটকিও খায়। পাটশাক রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে বৈয়মে ভরে রাখে। সেটা দিয়ে ভর্তার মতো বানায়। কখনো খেয়েছেন?

নাদুর মা’কে বলবেন, বানিয়ে দেবে। খেতে কিন্তু অখাদ্য। স্যার আপনাকে আরেকটা টেলিফোন নাম্বার বলি? একবার বললেই তো আপনার মনে থাকবে। মাহজাবিনের মোবাইল নাম্বার।

তার মোবাইল নাম্বার মনে রেখে কী হবে?

কিছু হবে না। তারপরও মনে থাকল। স্যার বলব?

বল।

 

নীতু মোবাইল নাম্বার বলল।

হেদায়েত বলল, নাম্বারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। প্রতিটি সংখ্যা প্রাইম।

স্যার টেলিফোন রাখি। মায়ের সাল্ডেলের আওয়াজ পাচ্ছি। আমার হাতে টেলিফোন দেখলেই মা ভাববে আমি প্রেম করছি। আপনাকে তো বলেছি, আমার মা খুব সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত মহিলা।

স্যার খোদা হাফেজ।

খোদা হাফেজ।

হেদায়েত বাথরুমে ঢুকে অনেকক্ষণ ধরে চোখে-মুখে পানি দিল। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। মনে হয় বেশি সময় ঘুমালে মাথার যন্ত্রণা হয়। দুটা প্যারাসিটামল আর এক কাপ গরম চা খেতে হবে।

নাদুর মা চা দিয়ে গেছে। চায়ের সঙ্গে একটা চিঠি। চিঠি পাঠিয়েছে বেলায়েত। চিঠিতে লেখা—

 

ছোটন

পীর সাহেবের তাৰিজ এবং পানি-পড়া যোগার করেছি। পানিটা ফ্ল্যাটের প্রতিটি ঘরে ছিটায়ে দিতে হবে। তাবিজটা বানতে হবে ডান হাতের কব্জিতে।

তুই রাতে আমার বাসায় চলে আয়। তখন তোর হাতে তাবিজ এবং পানি-পড়া দিয়ে দেব। কিশোরগঞ্জ থেকে বড় পাবদা মাছ এসেছে। তোর ভাবীকে ঝোল ঝোল করে বাঁধতে বলেছি। ঢেঁপি বুড়োর চালের ভাত আর পাবদা মাছ। সেতুকেও সঙ্গে নিয়ে আসিস। তাকে দু’একটা উপদেশ দেয়া প্রয়োজন। তোক একা ফেলে মায়ের বাড়িতে প্রায়ই যায়, এটা ঠিক না।

রাত ন’টার দিকে আমি বাসায় ফিরব। করাত কলে কি যেন নষ্ট হয়েছে। রাত আটটায় মিস্ত্রী ঠিক করতে আসবে। তখন সামনে থাকতে হবে। সব চোরের গুষ্ঠি।

আমার উপস্থিত থাকা দরকার।

বেলায়েত হোসেন

 

চিঠি শেষ করে হেদায়েত চিঠিতে মোট কতগুলি শব্দ আছে গুগল। মোট ৬৭টি শব্দ আছে, প্রাইম নাম্বার। এটা একটা ভালো বিষয়। নাদুর মা মুখ শুকনা করে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হেদায়েত বলল, কিছু বলবে?

নাদুর মা বলল, আপা তো এখনও আসে নাই।

কোনো একটা কাজে আটকা পড়েছে। চলে আসবে। আর শোন, রাতে আমি খাব না। ভাইজান পাবদা মাছ খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন।

নাদুর মা বলল, আপার মায়ের বাসার ডেরাইভার আপা সম্পর্কে অনেক আজেবাজে কথা আমাকে বলেছে। আপা নাকি প্রায়ই হোটেলে থাকে।

হেদায়েত বিরক্ত গলায় বলল, কেউ কোনো কথা বললে কথাটা লজিক দিয়ে বিচার করবে। লজিক মানে হচ্ছে যুক্তি। কারণ এই প্রকাণ্ড বিশ্বভ্রহ্মাণ্ড চলছে লজিকে। তোমার আপার নিজের ফ্ল্যাট আছে। আছে না? ভাড়া হলেও তো আছে?

জ্বি আছে।

তার মায়ের বাড়ি আছে। আছে কি-না বল।

আছে।

সেতুর দুই মামা থাকেন ঢাকায়। সেতু ইচ্ছা করলে এদের বাসাও থাকতে পারে। হোটেলে থাকবে কেন?

নাদুর মা চুপ করে রইল। হেদায়েত বলল, যুক্তি বুঝতে পারছ?

নাদুর মা বিড়বিড় করে কি যেন বলল। হেদায়েত বলল, ঘড়ির দিকে একটু লক্ষ রাখ। ভাইজানের বাসায় রাত ন’টার সময় পৌঁছতে হবে। বাসা থেকে বের হব আটটা একুশ মিনিটে, ৮২১ একটা প্রাইম নাম্বার। বুঝেছ?

জ্বি ভাইজান বুঝেছি। টেলিফোনে আপার একটা খুঁজ নেন, কই আছে।

হেদায়েত বলল, অকারণে খোঁজাখুঁজির দরকার নেই। অকারণে খোজাখুঁজির মানে বিরক্ত করা। তাছাড়া সেতুর মায়ের বাড়ির টেলিফোনের নাম্বারে গণ্ডগোল আছে। একটা সংখ্যাও প্রাইম না। বুঝেছ?

নাদুর মা হ্যাঁ  সূচক মাথা নাড়ল। বুঝেছে।

 

বেলায়েত ভাইকে নিয়ে খেতে বসেছে। খাবার বেড়ে দিচ্ছে বেলায়েতের স্ত্রী হেনা। রূপবতী মহিলা কিন্তু গলব্লাডারে কি একটা অপারেশনের পর সে মোটা হতে শুরু করেছে। মুখমণ্ডল আগের মতোই ছোট। শরীর বিশাল। তাকে এলিয়েনের মতো দেখায়। বেলায়েত তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, পাবদা মাছ পাতে তুলে দিয়ে তুমি দূরে চলে যাও। কাছে থাকবা না।

হেনা বলল, কেন?

বেলায়েত বলল, তোমার শরীর থেকে রসুনের গন্ধ বের হয়। হেদায়েতের ডিসৰ্টাব হয়।

হেনা বলল, আমি তো রান্না ঘরেই যাই না। শরীরে রসুনের গন্ধ কেন আসবে?

তর্ক বন্ধ। মাছ বেড়ে দিয়ে শোবার ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাক।

মাছ বাড়তে গিয়েও সমস্যা হলো। হেনা তার স্বামীর পাতে সবচেয়ে বড় মাছটা তুলে দিল। বেলায়েত বলল, তুমি কাজটা কী করলা? পতিপ্রেম দেখাইলা। ভাইকে দাওয়াত দিয়ে এনেছি বড় মাছটা তার পাতে দিবে। তাকে দেখায়ে দেখায়ে আমি বড় মাছটা খাব!

হেনা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, সব মাছ একই সাইজ।

বেলায়েত বলল, সবই একই সাইজ! খোকন তুই বল, সবই একই সাইজ -কি আমার পাতেরটা বড়?

হেদায়েত বলল, তোমার পাতেরটা বড়।

বেলায়েত বলল, মুখের কথায় বিশ্বাস কি! স্কেল দিয়ে মাপা হবে। হেনা যাও স্কেল আন। টেবিলে স্কেল আছে।

স্কেলে প্রায় ছয়টা মাছই আলাদা আলাদা মাপা হলো। সবচেয়ে বড়টা ৮.৩ ইঞ্চি। তারপরেরটা ৮ ইঞ্চি বাকি চারটা ৭,৮, ৭.২, ৬.৫ এবং ৬ ইঞ্চি।

খেতে খেতে হেদায়েত অনেকগুলি হিসাব করেছে। মাছগুলির লম্বার গড় কত। স্ট্যান্ডার্ড ভেরিয়েশন কত। তার মনে হলো শুধু লম্বা না মেপে ওজন মাপা প্রয়োজন ছিল। Body mass index বের করা। মানুষের বডি মাস ইডেক্স ডাক্তাররা অংক করে বের করেন।

BMI = kg/M^2

Kg ইচ্ছে মুনষের শরীরের কিলোগ্রামে ওজন। আর M হলো মিটারে উচ্চতা।

বেলায়েত বলল, খেতে কেমন হয়েছে রে?

হেদায়েত বলল, খুব ভালো। তুমি পরে যদি কখনও পাবদা মাছ কিন তাহলে আমি BMI বের করব।

BMI টা কী?

হেদায়েত দীর্ঘ সময় নিয়ে BMI ব্যাখ্যা করল। ক্লাসে বক্তৃতা দেয়ার মতো করে ভাইকে বুঝানো। বেলায়েত মুগ্ধ। ছোট ভাইটার সঙ্গে খেতে বসার এই আনন্দ। খেতে খেতে কত কিছু শেখা যায়।

বেলায়েত বলল, আমার BMI কত হবে?

হেদায়েত বলল, যা Standard সেটা হবে। ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে।

তোর ভাবীর?

উনার চল্লিশের উপর হবে।

বেলায়েত বলল, পরের বার যখন পাবদা মাছের BMI মাপবি তখন তোর ভাবীরটা মেপে দিস। তোর ভাবীর BMI জানা থাকা দরকার।

হেদায়েত হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।

<

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ