০৫.

অ্যাপার্টমেন্টটা খুব সুন্দর না নুহাশ?

হ্যাঁ সুন্দর!

তাহলে এমন মন খারাপ করে আছ কেন? নতুন অ্যাপর্টমেন্টে আসার পর একবারও হাসলে না। দেখি সোনা হাস তো?

নুহাশ হাসল।

তোমার ঘরটা কত সুন্দর তাকিয়ে দেখ। জানালা খুললে কত বাতাস। তার চেয়েও বড় কথা-জানালা খুললে পুরো আকাশটা দেখা যায়। আকাশ দেখতে পাচ্ছ?

পাচ্ছি।

আকাশটা সুন্দর না?

 হ্যাঁ সুন্দর।

দেখ কত বড় বড় দুটা ক্লসেট তোমার ঘরে। একটাতে থাকবে তোমার খেলনা। একটায় বইপত্র। পড়ার টেবিলটা থাকবে জানালার পাশে। পড়তে পড়তে যদি আকাশ দেখতে ইচ্ছা করে তাহলে শুধু মুখ তুলে তাকালেই হবে।

নুহাশ হাই তুলল। তার কিছু ভাল লাগছে না।

আবার এই দেখ, ঘরের সঙ্গে বাথরুম। এই বাড়িটার সবচে ভাল জিনিস কি বল তো নুহাশ?

জানি না।

সবচেয়ে ভাল জিনিসটা হচ্ছে বাথরুম। দেখ, ঘরের সঙ্গে লাগোয়া কি সুন্দর বাথরুম। সুন্দর না?

নুহাশ মায়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলল, মা, বাবা কি এই বাড়ির ঠিকানা জানে?

রেবেকা চট করে জবাব দিতে পারল না। ইতস্তত করে বলল, দেখা হলে আমি তাকে ঠিকানা দিয়ে দেব। তখন জানবে।

কবে দেখা হবে?

হবে, শিগগিরই হবে। এসো তো নুহাশ, আমরা তোমার বাথরুমটা দেখি। এখানে গরম পানির ব্যবস্থা আছে।

আমার বাথরুম দেখতে ইচ্ছা করছে না।

রাতে কিছু রান্না হয় নি। রেবেকা প্যাকেটে করে চাইনীজ খাবার নিয়ে এসেছে। মুনার-মা মুখ বিকৃত করে সেই খাবারই টেবিলে সজিয়ে দিচ্ছে। বিড়বিড় করে বলছে, মানুষ এই জিনিস ক্যামনে খায়বদ গন্ধ আসতাছে। ওয়াক থু।

নুহাশ খাবার টেবিলে বসে হঠাৎ করে বলল, মা আমার ভাল লাগছে না।

রেবেকা বলল, কি ভাল লাগছে না?

বাবা থাকবে এক জায়গায়, তুমি থাকবে আরেক জায়গায়, এটা আমার ভাল লাগছে না মা।

সব কিছু তোমার ভাল লাগামত করতে হবে তা তো না। তাছাড়া কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ তাও তুমি জান না। ভাল-মন্দ বোঝার বয়স তোমার হয় নি। ওকি, খাচ্ছ না কেন?

আমার খেতে ইচ্ছা করছে না।

 খেতে ইচ্ছা না করলে হাত ধুয়ে উঠে যাও। খাবার নাড়াচাড়া করবে না।

নুহাশ টেবিল ছেড়ে উঠে গেল। নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। রেবেকা দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল, এ কি নুহাশ, দরজা বন্ধ করছ কেন? নুহাশ জবাব দিল না। রেবেকা বলল, একা তুমি ঘুমুতে পারবে না। রাতে ভয় পাবে। মুনার-মা ঘুমুবে তোমার সঙ্গে।

নুহাশ জবাব না দিয়ে বাতি নিভিয়ে দিল।

তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছ নুহাশ। খুব বাড়াবাড়ি করছ। একটু পরেই আমিও দরজা বন্ধ করে ঘুমুতে যাব। তখন ভয় পাবে।

নুহাশ জবাব দিল না।

  রেবেকা বাতি নিভিয়ে ঘুমুতে গেল।

Humayun Ahmed ।। হুমায়ূন আহমেদ