অবশ নয়ন নিমীলিয়া
সুখ কহে নিশ্বাস ফেলিয়া ,
“ এমন জোছনা সুমধুর ,
বাঁশরি বাজিছে দূর দূর ,
লেগেছে মৃদুল , ঘুমঘোর ।
নদীতে উঠেছে মৃদু ঢেউ ,
গাছেতে নড়িছে মৃদু পাতা ,
লতায় ফুটিয়া ফুল দুটি
পাতায় লুকায় তার মাথা
মলয় সুদূর বনভূমে
কাঁপায়ে গাছের ছায়াগুলি
লাজুক ফুলের মুখ হতে
ঘোমটা দিতেছে খুলি খুলি ।
এমন মধুর রজনীতে
একেলা রয়েছি বসিয়া ,
যামিনীর হৃদয় হইতে
জোছনা পড়িছে খসিয়া । ”
হৃদয়ে একেলা শুয়ে শুয়ে
সুখ শুধু এই গান গায় ,
“ নিতান্ত একেলা আমি যে
কেহ , কেহ , কেহ নাই হায় । ”
আমি তারে শুধাইনু গিয়া ,
“ কেন , সুখ , কার কর আশা ?”
সুখ শুধু কাঁদিয়া কহিল ,
“ ভালোবাসা , ভালোবাসা গো ।
সকলি , সকলি হেথা আছে --
কুসুম ফুটেছে গাছে গাছে ,
আকাশে তারকা রাশি রাশি ,
জোছনা ঘুমায় হাসি হাসি ।
সকলি , সকলি হেথা আছে -
সেই শুধু , সেই শুধু নাই ,
ভালোবাসা নাই শুধু কাছে । ”
অবশ নয়ন নিমীলিয়া
সুখ কহে নিশ্বাস ফেলিয়া ,
“ এই তটিনীর ধারে , এই শুভ্র জোছ্নায় ,
এই কুসুমিত বনে , এই বসন্তের বায় ,
কেহ মোর নাই একেবারে ,
তাই সাধ গেছে কাঁদিবারে ।
তাই সাধ যায় মনে মনে --
মিশাব এ যামিনীর সনে ,
কিছুই রবে না আর প্রাতে ,
শিশির রহিবে পাতে পাতে ।
সাধ যায় মেঘটির মতো
কাঁদিয়া মরিয়া গিয়া আজি
অশ্রুজলে হই পরিণত । ”
সুখ বলে , “ এ জন্ম ঘুচায়ে
সাধ যায় হইতে বিষাদ । ”
“ কেন সুখ , কেন হেন সাধ ?”
“ নিতান্ত একা যে আমি গো
কেহ যে , কেহ যে নাই মোর । ”
“ সুখ , কারে চায় প্রাণ তোর ?
সুখ , কার করিস রে আশা ?”
সুখ শুধু কেঁদে কেঁদে বলে ,
“ ভালোবাসা , ভালোবাসা গো । ”
<