শিশির কাঁদিয়া শুধু বলে , 
                        “ কেন মোর হেন ক্ষুদ্র প্রাণ -- 
                         শিশুটির কল্পনার মতো 
                         জনমি অমনি অবসান ? 
                         ঘুম - ভাঙা উষা - মেয়েটির 
                          একটি সুখের অশ্রু হায় , 
                         হাসি তার ফুরাতে ফুরাতে 
                         এ অশ্রুটি শুকাইয়া যায় । 
                         টুকটুকে মুখখানি নিয়ে 
                         গোলাপ হাসিছে মুচকিয়ে ,   
                         বকুল প্রাণের সুধা দিয়ে , 
                         বায়ুর মাতাল করি তুলে -- 
                         প্রজাপতি ভাবিয়া না পায় 
                         কাহারে তাহার প্রাণ চায় , 
                         তুলিয়া অলস পাখা দুটি 
                         ভ্রমিতেছে ফুল হতে ফুলে -- 
                         সেই হাসি - রাশির মাঝারে 
                         আমি কেন থাকিতে না পাই ! 
                         যেমনি নয়ন মেলি , হায় , 
                         সুখের নিমেষটির প্রায় , 
                         অতৃপ্ত হাসিটি মুখে লয়ে 
                         অমনি কেন গো মরে যাই । ” 
  
                         শুয়ে শুয়ে অশোক - পাতায় 
                         মুমূর্ষু শিশির বলে ,” হায় , 
                         কোনো সুখ ফুরায় নি যার 
                         তার কেন জীবন ফুরায় ?” 
                          “ আমি কেন হই নি শিশির ?” 
                          কহে কবি নিশ্বাস ফেলিয়া ।   
                          “ প্রভাতেই যেতেম শুকায়ে 
                          প্রভাতেই নয়ন মেলিয়া । 
                          হে বিধাতা , শিশিরের মতো 
                         গড়েছ আমার এই প্রাণ , 
                          শিশিরের মরণটি কেন 
                          আমারে কর নি তবে দান ?” 
<

Rabindranath Tagore ।। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর