চতুর্থ অঙ্ক
প্রথম দৃশ্য
[রমার পূজার দালানের একাংশ। দুর্গা-প্রতিমা স্পষ্ট দেখা যায় না বটে, কিন্তু পূজার যাবতীয় আয়োজন বিদ্যমান। সময় অপরাহ্ণ-প্রায়। এ-বেলার মত পূজার কার্য সম্পন্ন হইয়া গেছে। একধারে রমা স্থির হইয়া বসিয়া ছিল, তাহার বাটীর সরকার প্রবেশ করিয়া কহিল]
সরকার। মা, বেলা ত যায়, কিন্তু শূদ্দুররা ত কেউ এলো না। একবার ঘুরে দেখে আসবো কি?
রমা। কেউ এলো না?
সরকার। কৈ না।
[বেণী ঘোষালের প্রবেশ]
বেণী। ইস্! এত খাবার-দাবার নষ্ট কোরে দিতে বসেচে দেশের ছোটলোকের দল! এত বড় আস্পর্ধা! কিন্তু ব্যাটাদের শেখাবো, শেখাবো, শেখাবো! চাল কেটে যদি না তুলে দিই ত আমি—
[রমা তাহার মুখোপানে চাহিয়া শুধু একটুখানি হাসিল। কিছুই বলিল না]
না না, এ হাসির কথা নয় রমা, বড় সর্বনেশে কথা! একবার যখন জানবো এর মূলে কে তখন এই এমনি কোরে ছিঁড়ে ফেলব। আরে হারামজাদা ব্যাটারা এ বুঝিস নে যে, যার জোরে তোরা জোর করিস, সেই রমেশবাবু যে নিজে জেলের ঘানি টেনে মরচেন! তোদের মারতে কতটুকু সময় লাগে? ভৈরব আচায্যিকে ছুরি মারতে ঢুকেছিল,—হাতে এত বড় ভোজালি স্পষ্ট প্রমাণ করে দিলাম। কৈ, কোন্ শালা আটকাতে পারলে? আর মনে করি যদি ত রাতকে দিন, দিনকে রাত করে দিতে পারি যে! আচ্ছা—আরো খানিকটা দেখি, তার পরে—শাস্তরে বলেছে যথা ধর্ম স্তথা জয়ঃ। শূদ্দুর হয়ে বামুনবাড়ির ধর্মকর্মের ওপর আড়ি? আচ্ছা—
[প্রস্থান]
[ধীরে ধীরে বিশ্বেশ্বরীর প্রবেশ]
বিশ্বেশ্বরী। রমা!
রমা। কেন মা?
বিশ্বেশ্বরী। চুপটি কোরে বসে আছিস মা, কে বলবে মানুষ। ঠিক যেন কে মাটির মূর্তি গড়ে রেখেচে। (ধীরে ধীরে তাহার পাশে আসিয়া বসিলেন) সে হাসি নেই, সে উল্লাস নেই,—যেন কোথায় কোন্ বহুদূরে চলে গেছিস।
রমা। (ঈষৎ হাসিয়া) বাড়ির ভেতরে এতক্ষণ কি করছিলে জ্যাঠাইমা?
বিশ্বেশ্বরী। তোমার যজ্ঞিবাড়িতে ত কাজ কম নেই মা। অন্ন-ব্যঞ্জনের যেন পাহাড় জমিয়ে তুলেচ।
রমা। এবারে কিন্তু সমস্ত মিছে। বোধ করি একজন চাষাও আমার বাড়িতে মায়ের প্রসাদ পেতে আসবে না। কিন্তু অন্যান্য বারের কথা জানো ত জ্যাঠাইমা, এই সপ্তমীর দিনে প্রজাদের ভিড় ঠেলে বাড়িতে ঢুকতে পারা যেত না।
নাটক : রমা Chapter : 4 Page: 60
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 190