বিশ্বেশ্বরী। এখনো বলা যায় না রমা। হয়ত সন্ধ্যের পরেই সবাই আসবে।
রমা। না, আসবে না জ্যাঠাইমা।
জ্যাঠাইমা। সবাই ওই কথাই বলচে। বেণী, গোবিন্দঠাকুরপো রাগে দাপাদাপি করে বেড়াচ্চে, ভেতরে তোর মাসীর গালাগালির জ্বালায় কান পাতবার জো নেই, কেবল তোর মুখেতেই নালিশ নেই। সে রাগ নেই, অভিমান নেই,—তোর চোখের পানে চাইলে মনে হয় যেন ওর নীচে কান্নার সমুদ্র চাপা আছে। কেমন কোরে এমন বদলে গেলি মা?
রমা। রাগ করব কাদের ওপর জ্যাঠাইমা? প্রজাদের ওপরে? গরীব বলে কি তাদের সম্ভ্রমবোধ নেই? তারা আমার মত পাপিষ্ঠার অন্ন গ্রহণ করবে কেন?
বিশ্বেশ্বরী। তোমাকে পাপিষ্ঠা বলে সাধ্য কার মা?
রমা। বললেও ত অন্যায় হয় না। তারা জানে আমরা তাদের ভালোবাসিনে, আমরা তাদের আপনার জন নই। আমরা ত আদর কোরে আহ্বান করিনে মা, আমরা জোর কোরে হুকুম করি দুটো খেয়ে যাবার জন্যে। তাই তাদের না আসায় আমরা রাগে ক্ষেপে উঠি।—কিন্তু আদর যে কি, সে স্বাদ তারা পেয়েচে, ভালোবাসা যে কি, সে তারা রমেশদার কাছে জেনেচে। তাদের সেই বন্ধুকেই আমরা যখন মিথ্যে মামলায়, মিথ্যে সাক্ষী দিয়ে জেলে পুরে এলাম, এ দুঃখ তারা ভুলবে কি করে জ্যাঠাইমা?
বিশ্বেশ্বরী। কিন্তু তুমি ত মিথ্যে সাক্ষী দাওনি মা?
রমা। দিইনি আমি? তাদের বড় আশা ছিল, আর যেই কেননা মিথ্যে বলুক, আমি বলতে পারব না। কিন্তু বলতে ত পারলাম। মুখে ত বাধল না! আচায্যিমশায়ের কত বড় অপরাধ, কত বড় কৃতঘ্নতা যে রমেশদাকে আত্মবিস্মৃত করেছিল, সে ত আমি জানি। আমি ত জানি তাঁর হাতে একটা তৃণ পর্যন্ত ছিল না, তবু আদালতে দাঁড়িয়ে স্মরণ করতেই পারলাম না, হাতে তাঁর ছুরি-ছোরা ছিল কি না!
বিশ্বেশ্বরী। রমা—
রমা। জ্যাঠাইমা, তুমি বলছিলে মিথ্যে ত আমি বলিনি। এখানকার আদালতে হলফ কোরে মিথ্যে হয়ত আমি বলিনি, কিন্তু যে আদালতে হলফ করার বিধি নেই, সেখানে আমি কি জবাব দেবো? উঃ—ভগবান! সত্য-গোপনের যে এতবড় বোঝা এ আমাকে তুমি আগে জানতে দাওনি কেন?
বিশ্বেশ্বরী। কিন্তু আমি তোমাকে বলচি মা, শাস্তি তার হয়েচে সত্যি, কিন্তু অকল্যাণ তার কখনো হবে না।
রমা। হবে কি কোরে জ্যাঠাইমা, আজ সমস্ত অকল্যাণের ভার এসে পড়েচে যে আমার মাথার ওপর।
নাটক : রমা Chapter : 4 Page: 61
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 576