অমূল্যকে কহিল, তুই একবারও আর ওখানে যাবি না—হারামজাদা বজ্জাত! কে বললে আমার মত, নরেন?

অমূল্য ভয়ে ভয়ে বলিল, হাঁ সে দেখেচে যে।

কৈ নরেন? আচ্ছা, আসুক সে।

মাধব হাসি দমন করিয়া বলিলেন, পাগল তুমি! দাদা শুনেছেন, আর গোলমাল করো না। কাজেই বিন্দু কথাটা নিজের মধ্যে পরিপাক করিয়া রাগে পুড়িতে লাগিল।

সন্ধ্যার প্রাক্কালে অমূল্য আসিয়া অন্নপূর্ণাকে ধরিয়া বসিল, দিদি, পূজা-বাড়িতে নাচ দেখতে যাব। দেখে, এখনি ফিরে আসব।

অন্নপূর্ণা কাজে ব্যস্ত ছিলেন, বলিলেন, তোর মাকে জিজ্ঞেস কর গে!

অমূল্য জিদ করিতে লাগিল, না দিদি, এখ্‌খনি ফিরে আসব, তুমি বল, যাই।

অন্নপূর্ণা বলিলেন, না রে না, সে রাগী মানুষ, তাকে বলে যা।

অমূল্য কাঁদিতে লাগিল, কাপড় ধরিয়া টানাটানি করিতে লাগিল—তুমি ছোটমাকে বলো না॥আমি নরেনদার সঙ্গে যাই—এখনি ফিরে আসব।

অন্নপূর্ণা বলিলেন, নরেনের সঙ্গে যদি যাস ত—

অমূল্য কথাটা শেষ করিবারও সময় দিল না, এক দৌড়ে বাহির হইয়া গেল।

ঘণ্টা-খানেক পরে অন্নপূর্ণার কানে গেল, বিন্দু খোঁজ করিতেছে। তিনি চুপ করিয়া রহিলেন।খোঁজাখুঁজি ক্রমেই বাড়িতে লাগিল। তখন তিনি বাহিরে আসিয়া বলিলেন, কি নাচ হবে, নরেনের সঙ্গে তাই দেখতে গেছে,—এখনি ফিরে আসবে, তোর কোন ভয় নেই।

বিন্দু কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কে যেতে বলেছে, তুমি?

অমূল্য যে সম্মতি না লইয়াই গিয়াছে, এ কথা অন্নপূর্ণা ভয়ে স্বীকার করিতে পারিলেন না, বলিলেন, এখনি আসবে।

বিন্দু মুখ অন্ধকার করিয়া চলিয়া গেল। খানিক পরে অমূল্য বাড়ি ঢুকিয়া যাই শুনিল ছোটমা ডাকিতেছে, সে গিয়া তাহার পিতার শয্যার একধারে শুইয়া পড়িল।

প্রদীপের আলোকে বসিয়া চোখে চশমা আঁটিয়া যাদব ভাগবত পড়িতেছিলেন, মুখ তুলিয়া বলিলেন, কি রে অমূল্য?

অমূল্য সাড়া দিল না।

কদম আসিয়া বলিল, ছোটমা ডাকছেন, এস।

অমূল্য তাহার পিতার কাছে সরিয়া আসিয়া বলিল, বাবা, তুমি দিয়ে আসবে চল না।

যাদব বিস্মিত হইয়া বলিলেন, আমি দিয়ে আসব? কি হয়েছে কদম?

কদম বুঝাইয়া বলিল।

Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়