ছয়
বিন্দু বাপের বাড়ি হইতে ফিরিয়া আসিবার দিন-দশেক পরে একদিন মধ্যাহ্নে অন্নর্পূণা তাহার ঘরে ঢুকিতে ঢুকিতে বলিলেন, ছোটবৌ?
ছোটবৌ একরাশ ময়লা কাপড়-জামার সুমুখে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া ছিল।
অন্নর্পূণা বলিলেন, ধোপা এসেছে?
ছোটবৌ কথা কহিল না। অন্নর্পূণা এইবার তাহার মুখের ভাব লক্ষ্য করিয়া ভয় পাইলেন। উদ্বিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কি হয়েছে রে?
বিন্দু আঙুল দিয়া ছোট ছোট দুই টুকরো পোড়া সিগারেট দেখাইয়া দিয়া বলিল, অমূল্যর জামার পকেট থেকে বেরুল।
অন্নর্পূণা নির্বাক হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন।
বিন্দু সহসা কাঁদিয়া ফেলিয়া বলিল, তোমার দুটি পায়ে পড়ি দিদি, ওদের বিদেয় কর, না হয়, আমাদের কোথায় পাঠিয়ে দাও।
অন্নর্পূণা জবাব দিতে পারিলেন না। আরও কিছুক্ষণ নিঃশব্দে দাঁড়াইয়া থাকিয়া চলিয়া গেলেন।
অপরাহ্নে অমূল্য ইস্কুল হইতে ফিরিয়া খাবার খাইয়া খেলা করিতে গেল। বিন্দু একটি কথাও বলিল না। ভৈরব চাকর নালিশ করিতে আসিল, নরেনবাবু বিনা দোষে তাহাকে চপেটাঘাত করিয়াছে।
বিন্দু বিরক্ত হইয়া বলিল, দিদিকে বল গে।
আদালত হইতে ফিরিয়া আসিয়া মাধব কাপড় ছাড়িতে ছাড়িতে কি একটা ক্ষুদ্র পরিহাস করিতে গিয়া ধমক খাইয়া চুপ করিল। অদৃশ্যে যে কতবড় ঝড় ঘনাইয়া উঠিতেছে, বাড়ির মধ্যে তাহা কেবল অন্নপূর্ণাই টের পাইলেন। উৎকন্ঠায় সমস্ত সন্ধ্যাটা ছটফট করিয়া, এক সময়ে নির্জনে পাইয়া তিনি ছোটবৌয়ের হাতখানি ধরিয়া ফেলিয়া মিনতির স্বরে বলিলেন, হাজার হোক, সে তোরই ছেলে, এইবারটি মাপ কর।বরং আড়ালে ডেকে ধমক দে।
বিন্দু বলিল, আমার ছেলে নয়, সে কথা আমিও জানি, তুমিও জান। মিছামিছি কতকগুলো কথা বাড়িয়ে দরকার কি, দিদি?
অন্নপূর্ণা বলিলেন, আমি নয়, তুই তার মা—আমি তোকেই ত দিয়েচি!
যখন ছোট ছিল, খাইয়েছি পরিয়েছি। এখন বড় হয়েচে, তোমাদের ছেলে তোমরা নাও—আমাকে রেহাই দাও, বলিয়া বিন্দু চলিয়া গেল।
রাত্রে কাঁদ-কাঁদ মুখে অমূল্য অন্নপূর্ণার কাছে শুইতে আসিল।
অন্নপূর্ণা ব্যাপার বুঝিয়া বিরক্ত হইয়া বলিলেন, এখানে কেন? যা এখান থেকে—যা বলচি।
অমূল্য ফিরিয়া দেখিল, তাহার পিতা ঘুমাইতেছেন, সে কোন কথাটি না বলিয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল।
গল্প : বিন্দুর ছেলে Chapter : 6 Page: 27
- Details
- Sarat Chandra Chattopadhyay ।। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
- Category: কবিতার বিষয়
- Read Time: 1 min
- Hits: 176