কেন তসলিমার বিরুদ্ধে আন্দোলন?

সম্মানিত দেশবাসী!
আসসালামু আলায়কুম,

কেন তসলিমার বিরুদ্ধে আন্দোলন? তসলিমার এজেন্ট এবং ইসলাম বিদ্বেষী শক্তি জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যে এ প্রশ্ন তুলছে। এদেশের সর্বস্তরের জনগণ তার মৃত্যুদণ্ড দাবী করেছে। স্মরণাতীতকালের সর্বত্মক হরতাল পালিত হয়েছে এ দাবীতে। তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। বিশ্ব ইহুদি-খ্রিস্টান চক্রের আশ্রয়ে দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে সে ইসলামের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালিয়েছে। সম্প্রতি আবার ফিরে আসায় স্বাভাবিকভাবেই দেশপ্রেমিক ইসলামী জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এবারে দেশী-বিদেশী ইসলাম বিরোধী চক্রটি তাকে কেন্দ্র করে মাথা চারা দিয়ে উঠবার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্য তাদের ইসলাম ও দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের বৈধতা ও উৎসাহ যুগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, তসলিমার বিরোধিতাকারীরা বাড়াবাড়ি করছে। অথচ তসলিমা আল্লাহ রাসুল ও কুরআনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, বাংলাদেশের মানচিত্রকে অন্য দেশের সাথে মিশিয়ে না দিয়ে স্বস্তি পাচ্ছে না। সে অবাধ যৌন সংসর্গের প্রকাশ্য ইন্ধন যোগাচ্ছে, বিয়ের শৃঙ্খল ভাঙবার জন্যে নারীদের আহবান জানাচ্ছে আর অকথ্য, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেছে আলেম উলামা পীর মাশায়েখ ও মসজিদের ইমামকে। মসজিদকে বলছে বৈষম্যের প্রতীক। শেখ হাসিনা কেন মাথায় ঘোমটা দেয় এজন্যে যার আত্মহত্যা করার ইচ্ছে হয় —- এই দেশদ্রোহী ও ধর্মদ্রোহীর জন্যে একটি চিহ্নিত মহলের উকালতি নিঃসন্দেহে উদ্দেশ্যমূলক। একটা ভদ্র সমাজের মানুষ, স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক কি তা মেনে নিতে পারে? ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মূল্যবোধকে নিয়ে কটাক্ষ ও উপহাস করার অধিকার তাকে কে দিল?

সম্মানিত দেশবাসী! তসলিমার অসংখ্য অশ্লীল ও অসভ্য বিষোদগার থেকে নিম্নের কয়েকটি উদ্ধৃতি লক্ষ করুনঃ

০ আমি ছোটখাটো কোনও পরিবর্তনের পক্ষে নই। এর দ্বারা কোনও উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। কুরআনের পুরোপুরি সংশোধন করা প্রয়োজন। (০৯/০৫/৯৪ তারিখে কলিকাতা থেকে প্রকাশিত The Statesman পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তসলিমার উক্তি) উপরোক্ত বক্তব্যের প্রতিবাদ করলে ১১/০৫/৯৪ তারিখে ঝবন জঢ়তঢ়নড়লতশ পত্রিকায় তার একটি চিঠি ছাপা হয়। তা পূর্বের চাইতে মারাত্মক এবং ভয়ংকর। তসলিমার কথায়, এই ব্যাপারে আমার মত পরিষ্কার এবং সুস্পষ্ট। আমার মত হলো কুরআন, বেদ, বাইবেল এবং এ ধরণের যাবতীয় গ্রন্থ যা তাদের অনুসারীদের জীবন পরিচালনা করে তা আজকের স্থান ও কালের সঙ্গে সঙ্গতিহীন। যে সমাজ ইতিহাসের পটভূমিতে এগুলো লেখা হয়েছিল, তা আমরা অতিক্রম করে এসেছি। সুতরাং এই সবের দ্বারা পরিচালিত হবার আমাদের কোনও প্রয়োজন নেই। আংশিক বা পুরোপুরি সংশোধনের কথা এখানে অপ্রাসঙ্গিক। আমরা যদি উন্নতি করতে চাই তাহলে এই পুরোনো গ্রন্থগুলোকে পরিত্যাগ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

০ এখানে হাসান হোসেন থেকে শুরু করে মুহম্মদ পর্যন্ত কেউই পুতপবিত্র মানুষ নয়। সকলেই দোষে গুণে লোভে মোহে, হিংসায় এজিদ মাবিয়ার মত অর্থাৎ অন্ধকার সমাজের আর সব মানুষের মত। ( ছোট ছোট দুঃখ কথা)

০ আমি নামাজ বা কোরান বিশ্বাস করি না। আমি যখন কোরান পড়ছিলাম, তখন তাতে দেখেছি, কোরানে বলা হয়েছে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। আমি তখন আমার মাতৃদেবীকে বলেছিলাম আমি বিজ্ঞানের বই পড়ে জেনেছি যে, সূর্যেরই চারদিকে পৃথিবী ঘুরছে। কাজেই আল্লাহ একজন মিথ্যাবাদী। (বোম্বে থেকে প্রকাশিত ফ্যাশন ম্যাগাজিন Savvy র নভেম্বর ৯২ সংখ্যায় প্রকাশিত তসলিমার আত্মকথা)

০ রবীন্দ্রনাথকে আমি ঈশ্বর বলে মানি। আমার চোখের সামনে ঈশ্বরের যে ছবিটি ভেসে ওঠে, সে তার রক্তমাংস শিল্পসহ কেবলই রবীন্দ্রনাথ। এই আমার ধর্ম, আমি এই এক ঈশ্বরের কাছে পরাজিত। আর কোনও ঈশ্বর দোষ, আর কোনও লৌকিক বা পারলৌকিক মোহ আমার নেই। জগতে রবীন্দ্রনাথ ছাড়া কোনও দেয়াল রাখিনি। আর কোনও গন্তব্য নেই আমার। ( নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য পৃঃ ৮০)

০ এইসব আখেরাত, পুলসেরাত, দোযখ, বেহেস্ত এগুলো আমার বিশ্বাস হয় না। আল্লাহ টাল্লা আবার কি? সব বাহানা। ( নিমন্ত্রণ পৃঃ ২৯)

০ হ্যাঁ আমি ইসলামকে আঘাত করে থাকি। কারণ ইসলাম নারী স্বাধীনতা দেয় না। (জতৎৎঁ নভেম্বর ৯২)

০ ইসরাফিলের জ্বর হয়েছে/ জিবরাইলের কাশি/মুনকার আর নাকির গেছে হুরের নিমন্ত্রণে/ফেরেশতারা যে যার মত সাত আকাশে ঘোরে/ইসরাফিলের জ্বর হয়েছে শিঙ্গা ফুঁকবে কে?/পুলসেরাতে একলা বসে শেষ বিচারক কাঁদেন/আর, আখেরাতের দাড়িপাল্লা কব্জা খসে পড়ে। ( কবিতাঃ ইসরাফিলের জ্বর হয়েছে, সূত্র সাপ্তাহিক পূর্ণিমা ১৭ নভেম্বর ৯৩)

০ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমি লজ্জা লিখেছি বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী পরিস্থিতিকে ভিত্তি করে। আমি বাবরি সম্পর্কে লিখেছি, কারণ এটা বৈষম্যের এক প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। ( পূর্ণিমাঃ ১৭ নভেম্বর ৯৩)

০ চরিত্র গঠনের জন্য খাদিজা কেন অপরিহার্য এই দেশে? হযরতের তের বা চৌদ্দজন বিবির জীবনী পড়ে স্কুলের মেয়েরা কোন আদর্শে দীক্ষিত হচ্ছে তা আমার জানবার প্রয়োজন বৈ কি!..তাদের কেন জোন অব আর্ক, মেরি ওল্টস্টনক্রাফটের জীবনী, বাংলার মাতঙ্গিনী হাজরা, সরোজিনী নাইডু, বেগম রোকেয়া, ননীবালা দেবী, লীলা নাগ, ইলা মিষেনর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে কোনও ধারণা দেয়া হয় না? ( নষ্ট মেয়ের নষ্ট গদ্য পৃ: ১২১)

০ এদেশে নানা জাতের অসাধু পুরুষ আছে, তাদের মধ্যে পীর অন্যতম। .. দেশের আনাচে কানাচে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা পীর নামে পরিচিত মানুষগুলোর মূল পেশা অসাধুতা। লম্বা চুল, দাড়ি, জোব্বার আড়ালে অর্থ ও নারী লিপ্সাই পীর চরিষেনর প্রধান দিক। .. পীর বলতে এখন আর সিদ্ধ সাধু পুরুষের ভাবমূর্তি মনে আসে না। পীর মানেই দুশ্চরিত্র, লম্পট, পীরমাত্রই ঝাঁক ঝাঁক যুবতী বেষ্টিত প্রচণ্ড কামুক পুরুষ। ( নির্বাচিত কলাম পৃঃ ২৭)

০ আমাদের মত সমাজে মেয়েদের কখনও বিয়ে করাই উচিত নয়। কারণ তার ফলে তারা পুরুষের ক্রীতদাসীতে পরিণত হবে। .. যৌনতার ব্যাপারে বলি আমি অবাধ যৌন সংসর্গে বিশ্বাস করি তার জন্য আপনাকে বিয়ে করার দরকার নেই। (জতৎৎঁ নভেম্বর ৯২)

০ জরায়ুর স্বাধীনতা নারী মাষেনরই প্রয়োজন। সে পতিতা হোক কী অপতিতা হোক। (সাক্ষাৎকার পাক্ষিক সোনার তরী ১-১৫ ডিসেম্বর ৯৩)

০ নারী ধর্ষণ করতে শিখুক, ব্যাভিচার করতে অভ্যস্ত হোক। (নির্বাচিত কলাম পৃ: ১১৮/কলিকাতা ১৯৯২)

০ শালা শুয়োরের বাচ্চা বাংলাদেশ। ( লজ্জা পৃষ্ঠা ৫৭)

০ স্বৈরাচারী সরকার এই দেশের জন্য একটি রাষ্ট্রধর্ম তৈরি করেছে। যে ধর্ম দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মানুষ ভারত বিরোধিতায় ভোগে এবং দেশে একটি ইসলামতন্ত্র চালু করতে চায়। ( যাবো না কেন, যাবো , পৃঃ ৪৯)

০ বাঙালি বলতে আমি উনিশ কোটি মানুষকে বুঝি। দেশ বলতে বঙ্গদেশ বুঝি। আমরা তোমরা বলে কথা বলতে আমি পছন্দ করি না। আজ না হয় ধর্মের দেওয়াল উঠেছে। আমাদের মাঝে এ তো সূর্যের মত সত্য যে একদিন এই দেওয়াল ভাঙবে। ধর্ম নির্বাসিত হবে, বাঙালি ফিরে পাবে তার পূর্ব পুরুষের মাটি, দিগন্ত অবধি অবাধ সবুজ ধানক্ষেত, আম জাম কাঁঠালের বন। মাটির মূর্তির পায়ে ফুলপাতা রেখে কেউ নমো নমো বলবে না, পাপী আর সন্তপ্ত মানুষ মসজিদে পাঁচবেলা কপাল ঠুকবে না। একদিন নিশ্চয়ই বাঙালিরা হাতে হাত ধরে হাঁটবে বনগাঁ থেকে বেনাপোল, রংপুর থেকে কুচবিহার, মেঘালয় থেকে হালুয়াঘাট, শিলং থেকে তামাবিল, ভাটিয়ালি গাইতে গাইতে বৈঠা বাইবে মাঝি পদ্মা থেকে গঙ্গার উত্তাল জলে। এরকম একটি স্বপ্ন বুকে নিয়ে আমি বাঁচি। (বন্দি আমি — তসলিমা নাসরিন ঃ আনন্দবাজার পত্রিকা ৩১ অক্টোবর, ৯৩)

০ দেখুন, যেটুকু নিরাপত্তা এখন পাচ্ছি সেটাতো বিদেশি সংস্থাগুলো দিয়েছে বলে। (সাক্ষাৎকার সোনার তরী ১-১৫ ডিসেম্বর ৯৩)

০ ভারতবর্ষ কোনও বাতিল কাগজ ছিল না / যে, তাকে ছিঁড়ে/টুকরো করতে হবে/সাতচল্লিশ শব্দটিকে আমি রাবার দিয়ে মুছে ফেলতে চাই/সাতচল্লিশ নামের কাঁটা আমি গিলতে চাই/উগড়ে দিতে চাই/উদ্ধার করতে চাই আমার পূর্ব পুরুষের অখণ্ড মাটি। ( কলকাতা, দেশ ১২ মার্চ ৯৪ঃ কবিতা – অস্বীকার, তসলিমা নাসরিন)

সম্মানিত ভাইয়েরা,
ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে কারো উপর কোনও জোর জবরদস্তি নেই। তেমনি কেউ ইচ্ছে করলে অন্য দেশের নাগরিকত্বও নিতে পারে। কিন্তু ইসলামের নাম পরিচয় ব্যবহার করে ইসলামের মূল আক্বিদা বিশ্বাসকে অস্বীকার করা, বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সুবিধা ভোগ করে এর স্বাধীন মানচিত্রকে অন্যদেশের সাথে মিশিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বিশ্বের কোনও ধর্মীয়, নাগরিক এবং মানবীয় আইনেই স্বীকৃত নয়। অনেক দেশেই ধর্মীয় মূল্যবোধের অবজ্ঞাকারী শাস্তির জন্য ব্লাসফেমি আইন আছে। কিন্তু আশ্চর্য, বাংলাদেশে অনুরূপ কোনও আইন নেই। অথচ বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল ও বিশ্বাস সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতির অন্যতম। এদেশের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ ইসলামের অনুসারী। তসলিমা প্রকাশ্যে এসবকে অশ্লীল, অশিষ্ট ও অনাগরিক ভাষায় পদদলিত করেছে। তার সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা বিরোধী। অথচ এদেশে এতসব কিছুর পরও তসলিমাকে সরকার আশ্রয় ও শেল্টার দিচ্ছে। তাহলে কি এদেশে আমরা মুসলমান পরিচয় নিয়ে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পারবো না? আমরা আমাদের ঈমান ও দেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে আপোস করতে পারি না। রাসুল (সঃ) বলেছেন, তোমরা কোনও অন্যায় দেখলে তৎক্ষণাৎ তা শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ কর। অবস্থা এখন যা দাঁিড়য়েছে তাতে তসলিমাদের এই অন্যায় ঔদ্ধত্যের প্রতিরোধ শুধু মুখের প্রতিবাদ ও নিছক অন্তরের ঘৃণা দিয়ে সম্ভব নয়। সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

আসুন! দেশ প্রেমিক ধর্মপ্রাণ ভাইয়েরা! ঈমান ও দেশ রক্ষার জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের মর্যাদাকে সর্বোচ্চে বুলন্দ করি এবং আওয়াজ তুলি।

মুরুরতাদদের মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস কর
তসলিমার মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে দিয়ে দাও

ই স লা মী ঐ ক্য জো ট
অস্থায়ী কার্যালয়ঃ ৪৪/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত

Taslima Nasrin ।। তসলিমা নাসরিন