পাথরের ছাউনি, পুড়বে না, শুধু কাঠগুলো ছাড়া। ভেতরে ঘন ধোঁয়া।

ফায়ার এক্সটিংগুইশারের জন্যে দৌড় দিল এড। জ্যাকেট খুলে তৈরি রইল রবিন আর মুসা। এড ফিরতেই তার সঙ্গে সাবধানে ঢুকল ভেতরে।

আলগা কাঠ রাখা ছিল, বলল এড। ওগুলোতে লেগেছে।

বাইরে দাঁড়িয়ে কিশোর, প্রফেসর আর মিসেস ডাই শুনছেন এক্সটিংগুইশারের শব্দ। জ্যাকেট দিয়ে জোরে জোরে বাড়ি মারা হচ্ছে আগুনের ওপর। কিছুক্ষণ পর ধোঁয়া পাতলা হয়ে এল। বেরিয়ে এল মুসা, মুখে বিজয়ীর হাসি। হাতে জার্নাল। জানাল, আর সামান্য দেরি হলেই যেত পুড়ে।

হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি পাতাগুলো উল্টে দেখল কিশোর, ঠিক আছে কিনা।

কাকে যেন দৌড়ে আসতে শেৰ্মিা গেল। ডিনো। চেঁচাচ্ছে, আর হাত তুলে দেখাচ্ছে ছাউনির পেছনটা। ওদিকে, ওদিকে…ব্যাটাকে দেখেছি আমি। এদিকেই তাকিয়ে ছিল…এই এক মিনিট আগে।

যাবে, ধরা যাবে! চেঁচিয়ে উঠলেন প্রফেসর।

চোরের পেছনে ছুটল ওরা। দৌড় দিল গাছপালার ভেতর দিয়ে। ডিনো আগে আগে। নিশ্চয় বড় রাস্তার দিকে গেছে।

বনের ভেতর একেকজন একেক দিকে ছড়িয়ে পড়ল ওরা। প্রফেসর গেলেন ডানে, ডিনো গেল সামনের দিকে। রবিন আর কিশোর সবার পেছনে। থেমে ঝোপঝাড়ে চোখ বোলাচ্ছে। ধূসর-সবুজ ঘন ওকের আড়ালে কেউ লুকিয়ে আছে কিনা দেখছে।

হঠাৎ নীরব হয়ে গেছে সব, যেন সবাই দাঁড়িয়ে কান পেতে শব্দ শোনার চেষ্টায় রত। সামনে বিড়বিড় করে গাল দিল একজন। আবার এগোল রবিন আর কিশোর, সতর্ক। গাছের আড়ালে আড়ালে চলে এল পঞ্চাশ গজ মত। মট করে কি যেন ভাঙল।

ঝট করে ঘুরল কিশোর। চিৎকার শোনা গেল ডানে। কে যেন এসে লাফিয়ে পড়ল তার ওপর। জাপটে ধরে তাকে নিয়ে পড়ল মাটিতে। – ধরেছি! ধরেছি! ব্যাটাকে ধরেছি! চেঁচাতে লাগল মুসা।

আরে এই মুসা, তাড়াতাড়ি এগিয়ে এল রবিন। এই। কিশোরকে ধরেছ তো।

কী? ভাল করে তাকাল মুসা। খাইছে। আমি…. ভেবেছিলাম…শুনলাম…

সর, সর, মুসাকে ঠেলে সরিয়ে উঠল কিশোর। কাপড়ের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, কানা নাকি? দেখে লাফ দাওনি?

শব্দ শুনলাম। আর দেখে কে?

অমনি চোরের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়লে, হাসতে শুরু করল রবিন।

প্রফেসর, ডিনো আর এড ফিরে এসে দেখল তিনজনেই হাসছে। রিমলেস গ্লাসের ওপাশে রাগে জ্বলছে প্রফেসরের চোখ। গোল লাল মুখ আরও লাল হয়ে উঠেছে।

পালাল হারামজাদা, দাঁতে দাঁত চাপল ডিনো। টিক বানাউ ছাড়া কেউ না।

দেখলে নোবলকে দেখেছেন, প্রফেসর বললেন।

কি করে এত শিওর হচ্ছেন? নোেবলকে নয়, বানাউকেই দেখেছি আমি। দাড়ি দেখলাম মনে হল…।

দাড়ি না। বোধহয় গোঁফ দেখেছেন। কালো গোঁফকে অনেক সময়…

বলে কি? গোঁফকে দাড়ি? আপনার…

মাথা খারাপ, না? রেগে উঠতে গিয়েও উঠলেন না প্রফেসর। ছেলেদেরকে অবাক করে দিয়ে নতি স্বীকার করে নিলেন। বেশ, দেখিনি যখন, জোর করে কিছু বলল না। আপনি সত্যিই লোকটাকে দেখেছেন তো?

নিশ্চয়ই। তবে চেহারাটা দেখিনি।

তাহলে, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর। দেরি করা যায় না আর। টিক বানাউ হয়ে থাকলে, বোঝা যাচ্ছে জার্নালটা আর তার দরকার নেই। যা জানার জেনে নিয়েছে। চলুন, চলুন।

বন থেকে বেরিয়ে এল ওরা। উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছেন মিসেস ডাই। বোরিস রয়েছে তাঁর সঙ্গে। হৈ চৈ শুনে ট্রাক ফেলে দেখতে এসেছে কি হয়েছে।

পালিয়েছে শয়তানটা, ডিনো বলল। ইস, আর একটা মিনিট আগে বেরোলেই…, কথা শেষ না করে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল সে।

আপনি ঘরে ছিলেন, মিস্টার হ্যাংবার? জিজ্ঞেস করল কিশোর।

হ্যাঁ। ধোঁয়ার গন্ধ পেয়ে বেরিয়েছি।

পুলিশকে জানানো দরকার, বললেন প্রফেসর। কাজ পড়ে আছে ওদিকে। তবু, যাবার সময় থানায় ঢু মেরে যেতে পারব।

তা-ই করবেন, ডিনো বলল। ছেলেদের দিকে তাকাল। তোমাদের ধারণাই ঠিক। আমিই ভুল করেছি। গুপ্তধন হয়ত আছে। জোরে জোরে মাথা নাড়ল সে। না থাকলেও কয়েকটা শয়তান লোক অন্তত বিশ্বাস করে বসেছে যে আছে। তোমরা আর এসবে নাক গলিয়ো না। যা করার পুলিশই করবে। তোমরা করতে গিয়ে বিপদে পড়বে খামোকা।

আমিও তাই বলি, বয়েজ, ডিনোর সঙ্গে একমত হলেন প্রফেসর।

হয়ত…, শুরু করেও বাধা পেয়ে থেমে গেলেন মিসেস ডাই।

কিছুই হবে না, ম্যাডাম, কিশোর বলল। টিক ভাবছে, যা পাওয়ার পেয়ে গেছে। আমাদের কিছু করতে আসবে না সে। আর দ্বীপ থেকে আমাদের তাড়া খেয়ে পালিয়েছে নোবল। কিছু করার ইচ্ছে থাকলে তখনই করতে পারত। আমাদের এখন প্রধান কাজ তাড়াতাড়ি গুপ্তধন খুঁজে বের করা। নইলে নিয়ে চলে যাবে ওরা।

আত্মবিশ্বাস থাকা ভাল, খোকা, ডিনো পছন্দ করতে পারছে না কিশোরের কথা। তবে বেশি থাকা ভাল না। বিপদ বাড়ে তাতে।

আমার তা মনে হয় না, দৃঢ়কণ্ঠে বলল কিশোর।

আমারও, বললেন মিসেস ডাই। তাছাড়া ওরা কচি খোকা নয়। নিজেদের, ভাল-মন্দ বোঝার বয়স হয়েছে।

প্রফেসর হাসলেন। আমারও তাই বিশ্বাস। ইতিমধ্যেই যথেষ্ট বুদ্ধি আর সাহসের পরিচয় দিয়েছে ওরা।… আমি এখন যাই। নতুন কিছু জানলে আমাকে জানিও। চলি। গুড বাই।

চলে গেলেন প্রফেসর।

যাও, গিয়ে সময় নষ্ট করে আস সবাই। আমি এসবে নেই। দেখি গিয়ে, আগুনে কি ক্ষতি করল। ছাউনিতে ঢুকল ডিনো।

ট্রাক থেকে সাইকেল নামিয়ে রওনা হয়ে গেল রবিন আর মুসা।

কিশোর আর এড ট্রাকে উঠল। চলল উত্তরে, সান্তা বারবারায়।

<

Super User