মাটিতে বসে আছে কিশোর। অল্প অল্প মাথা ঘুরছে এখনও। দৃষ্টি পরিষ্কার হতেই লোকটার ফেলে যাওয়া জিনিসটার ওপর চোখ পড়ল। ওঅর্কবেঞ্চের নিচে। প্লাস্টিকের বাক্স, একপাশে কিছু ছিদ্র।
ইনটারেসটিং, বলল সে। যেন তার কথার জবাবেই দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা সরিয়ে উঁকি দিল মুসা। জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? কি বলছ?
মেহমান এসেছিল, বলে হামাগুড়ি দিয়ে চলে এল জিনিসটা তোলার জন্যে। হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বলল, কোন ধরনের শ্রবণ যন্ত্র। একধরনের খুদে মইক্রোফোন, স্পাইরা বলে বাগ। পত্রিকায় ছবি দেখেছি। অন্ধ লোকটা এসেছিল, বুঝলে, মোটেই অন্ধের মত আচরণ করেনি। মনে হয় ওঅর্কশপে মাইক্রোফোন লাগানোর জন্যে এসেছিল।
কানা ফকিরটা? কিশোরের হাত থেকে যন্ত্রটা নিয়ে দেখতে লাগল মুসা। কেন লাগাবে? আমাদের খোঁজই বা পেল কিভাবে? চারপাশে তাকাল সে, যেন এখনও এখানেই কোথাও লুকিয়ে রয়েছে লোকটা। আশ্চর্য!
ওঅর্কবেঞ্চের কাছে চেয়ারে বসল কিশোর। মুসার হাত থেকে যন্ত্রটা নিয়ে পেনোইফ দিয়ে খুলল। যা বলেছি। মিনিয়েচার ব্রডকাস্টিং ইউনিট। রেঞ্জ বড় জোর কোয়ার্টার মাইল।
এখন চালু নেই তো? আমরা যা বলছি, সব শুনে ফেলছে না তো ব্যাটা?
ছুরির মাথা দিয়ে খুঁচিয়ে ছোট ছোট কয়েকটা পার্টস খুলে ফেলল কিশোর। বাক্সটা বন্ধ করতে করতে বলল, এবার পারলে শুনুক। পুরো এক মিনিট নীরবে ভাবল সে, তারপর মুসার দিকে তাকাল। স্যালভিজ ইয়ার্ডে কতক্ষণ আগে ঢুকেছ?
মিনিট বিশেক।
সবুজ ফটক এক দিয়ে?
হ্যাঁ।
গম্ভীর হয়ে গেল কিশোর। তোমার পিছে পিছেই এসেছে ব্যাটা। মনে হল।
কি করে?
কাল রাতে মীটিঙেই হয়ত তোমার ওপর নজর পড়েছে। অনুসরণ করে এসেছে এখানে। কিংবা আমাদের দুজনকেই দেখেছে নিকারোদের ওখানে। কিংবা তিনজনকে, মিস্টার রোজারের বাড়িতে। যেভাবেই হোক, গত তিন দিনে কোন এক সময় তার চোখে পড়েছি আমরা, বা আমাদের কেউ। ভাবছি, আর একআধটা বাগ লুকিয়ে রেখে যায়নি তো?
আবার চারপাশে তাকাল মুসা, যেন তাকালেই যন্ত্রটা চোখে পড়বে। তারপর খুঁজতে শুরু করল দুজনে। পাওয়া গেল না। জিনিস নড়াচড়া করা হয়েছে, এমন কোন চিহ্নও নেই। আগের মতই আছে ওঅর্কশপকে ঘিরে রাখা জঞ্জাল।
অস্বস্তিতে পড়ে গেছে মুসা। বাড়ি থেকে এসেছি আমি। আমাকে অনুসরণ করলে…আচ্ছা, আমাদের বাড়ির ওপর চোখ রাখেনি তো?
মনে হয় না। ইয়ার্ডের ওপর চোখ রাখলেই যথেষ্ট।
হাতুড়ি আর পেরেক বের করে সবুজ ফটক, এক-এর বোর্ড দুটো সাময়িকভাবে আটকে দিতে চলল কিলোর। এই সময় এল রবিন। তিনজনে মিলে আটকে দিল ফটকটা। তারপর হেডকোয়ার্টারে ঢুকল।
ইন্টারেস্টিং নিউজ আছে, রবিন বলল। বিল এসেছিল সিনথিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। চেহারা দেখে চিনেছি, তোমার বর্ণনার সাথে মিলে যায়। পুলের পাড়ে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ চেঁচাল দুজনে, তর্কাতর্কি করল। স্প্যানিশ ভাষায়।
ঠিক? ভুরু কোঁচকাল মুসা।
মাথা ঝাঁকাল রবিন। বেশি চেঁচাল মেয়েটাই। কিছু একটা বোঝনোর চেষ্টা করেছে বিল, শুনতে চায়নি সিনথিয়া। শেষে লোকটাও গেল রেগে। চেঁচামেচি শুনে পাশের বাড়ির এক মহিলা বেরোল, গলিতে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনল খানিকক্ষণ। তারপর পুলিশ ডাকার হুমকি দিল।
আর থাকতে সাহস করল না লোকটা। সে চলে যেতেই ঘরে ঢুকে হ্যাণ্ডব্যাগ নিয়ে এল সিনথিয়া। কয়েক মিনিট পরে দেখলাম একটা গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছে। আরও আধ ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলাম। আসছে না দেখে চলে এসেছি।
হুঁম! মাথা দোলাল কিশোর। কি নিয়ে ঝগড়া করল কে জানে। যাকগে। এখন দেখি, আমরা কতটা এগিয়েছি? টেবিলে কনুই রেখে সামনে ঝুঁকল সে। অন্ধ ফকির ডাকাতিতে জড়িত, এটা বলা যায় এখন। বিল জড়িত, তার দুই বন্ধু জড়িত। বিল আর মিস্টার রোজারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে সিনথিয়ার। যেহেতু সে মেকাপ আর্টিস্ট, সন্দেহ করতে বাধা কোথায় সে-ই মেকাপ করে কাউকে অ্যাট্রানটো বানিয়েছে? সে নিজেও পুরুষ সেজে ডাকাতিতে গিয়ে থাকতে পারে। রোজার বলেছে, তিনজন ডাকাতের মাত্র একজন কথা বলেছে, অন্য দুজন। কিছুই বলেনি।
মেয়েলি গলা চিনে যাবে, এই ভয়ে? মুসার প্রশ্ন।
হতে পারে। কিংবা ওরা ইংরেজি জানে না। স্প্যানিশ বললে ধরা পড়ার ভয় আছে। হয়ত মেসা ডিওরোর নাগরিক ওরা।
বিলের দুই বন্ধুও হতে পারে, বলল মুসা। কোত্থেকে এসেছে ওরা, বলতে পারব না। স্প্যানিশ বলেছিল। হয়ত ইংরেজি জানেই না।
বিল জানে। দুটো ভাষাই জানে চমৎকার। ওদের সম্পর্কে ভালমত খোঁজখবর করা দরকার। রবিন, নিকারোদের ওখানে এখন একমাত্র তোমাকেই কেউ চেনে না। জেটির কাছে গিয়ে চোখ রাখবে। পারবে তো?
পারব।
আমি যাব সিনথিয়াদের ওখানে। মুসা, তুমি হেডকোয়ার্টারেই থাক। কানাটা আবার আসতে পারে। নাম তো জানি না ব্যাটার, কানা না হলেও কানা বলতে হচ্ছে।
গালকাটাও বলা যায়, মুসা বলল। যদিও সত্যি কাটা কিনা বলা মুশকিল। এলে কি করব? পুলিশকে ফোন করব?
পারলে অবশ্যই করবে। খুব সাবধানে থাকবে। আমাদের ঠিকানা জেনে গেছে সে। হয়ত জানে, কিংবা আন্দাজ করেছে আমরা কি করছি। একবার পালিয়েছে বটে, আবার না-ও পালাতে পারে। বাগের বদলে বোমা ফেলে গেলে সর্বনাশ!
<