কিছুক্ষণ লম্বা গড়নের যুবকটাকে দেখল রনি, তারপর মাথা ঝাঁকাল। নিশ্চয়! তুমি কি এখানেই কথা বলতে চাও, নাকি আর কোথাও যেতে চাও?

হার্ট এগিয়ে গেল স্থির দৃষ্টির নীল চোখের লোকটার দিকে। লোকটা ভয়ানক, কিন্তু উগ্র নয়। হার্ট বুঝল, ঝামেলা হলে রনি তা সামলাবে, কিন্তু গায়ে পড়ে লাগাতে যাবে না। যেকোনখানে, বলল হার্ট। শুনলাম তুমিই আমার ভাইয়ের সাথে শেষ কথা বলেছ।

ঠিকই শুনেছ। লোকটা কে তা বুঝতে পারছে রনি। কিন্তু রটনা সত্ত্বেও সে বুঝতে পারছে, ওর সাথে তার বিরোধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ও খুব খারাপ ভাবে আহত হয়েছিল, কিন্তু আমি যখন ওর জন্যে ডাক্তারের খোঁজে আসি তখন সে বেঁচেই ছিল। আমার অনুপস্থিতিতে কেউ ওকে গুলি করে হত্যা করেছে।

শহরে ওই ঘটনার অন্তত ছয়-সাত রকম বিভিন্ন বর্ণনা চালু আছে। একটার সাথে আরেকটার কোন মিল নেই। ড্যাশারকে অভিযুক্ত করার সব রকম চেষ্টাই চলছে। ওর মৃত ভাইয়ের সম্পর্কে পরিষ্কার বক্তব্য ব্যাপারটা সহজ করে দিল। এটা, ও বেঁচে না থাকলে, আমি বানিয়ে বলতে যাব না।

ওর মন্তব্যটার মধ্যে নির্ভেজাল সত্যের একটা গন্ধ রয়েছে। কয়েকজন মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল। কিন্তু অ্যাডাম, ঘটনা ওর মন মত এগোল না দেখে অস্থির বোধ করছে। ওরা দুজন একটা টেবিলে গিয়ে বসল। কথা বলছে কিন্তু সব শুনতে পাচ্ছে না অ্যাডাম। ড্যাশার আর হার্টের সাক্ষাতে সে যা ঘটবে আশা করেছিল তার কিছুই ঘটল না। এই সময়ে ডাক বেইলি বারে ঢুকল।

অ্যাডামই ওকে প্রথম খেয়াল করেছে–ওর ভুরু একটু কুঁচকাল। রনিও ওকে লক্ষ করল। এবং সাথেসাথেই সাবধান হলো।

আউটল লোকটা সোজা বারে গিয়ে একটা ড্রিঙ্কের অর্ডার দিল। ওর চোখ দুটো বারের চারপাশে একবার ঘুরে এল। কিন্তু কাউকে ইশারা দিল বলে মনে হলো না। সে রনিকে চিনতে পারলেও তার কোন চিহ্ন দেখা গেল না। হার্ট খেয়াল করেছে কিনা জানে না রনি।

আমি তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বলিনি, আমি ওদের গোপন আস্তানাও খুঁজে বের করেছি। আমি ওদের ট্র্যাকও দেখেছি।

কোন লোকেশন না দিয়ে, গত দু’দিনের ঘটনা সে ফিনলেকে বলল। ওর কথা শুনে যেটুকু সন্দেহ ছিল ওর মনে, সেটাও দূর হয়ে গেল। হার্ট ওর সরাসরি বক্তব্য পছন্দ করেছে। কঠিন লোক সে। ওর ভাইকে যে মেরেছে সে এ নয়। এই ব্যাপারে সে নিশ্চিত।

সকাল হওয়ার আগেই সেভেন পাইনসের লিভারি আস্তাবলের খড়ের বিছানা ছেড়ে রকিঙ কে-এর দিকে রওনা হলো রনি। টপার সকালের ঠাণ্ডা হাওয়ায় দ্রুত ছুটল। নাস্তা খাওয়ার সময় মতই র‍্যাঞ্চে পৌঁছে গেল সে। দেখল শর্টি মাইক ওর আগেই র‍্যাঞ্চে পৌঁছে গেছে। করালে কাজ করছে সে। শর্টি আড়চোখে ওর দিকে চাইল। তুমি যখন বলেছিলে এখানে অনেক কাজ আছে-ঠাট্টা করোনি, বুঝতে পারছি। অ্যান্টিলৌপের পুবে অনেক গরু ক্যানিয়নের ভিতরে আছে।

চোখ দুটো খোলা রেখো, পরামর্শ দিল রনি। তুমি হ্যারি আর কিডের সাথে কাজ করবে। কোন ঝামেলা শুরু করতে যেয়ো না। কিন্তু কারও দুর্ব্যবহারও সহ্য করতে বলছি না। থ্রী এইচের কোন গরু দেখলে ওদের পুব দিকে তাড়িয়ে দিও।

হেনরি বাঙ্ক-হাউস থেকে বেরিয়ে এল। ওর চাল-চলন একটু উদ্ধত, খেয়াল করল রনি। অল্পক্ষণ ওকে লক্ষ করে চোখ ফিরিয়ে নিল সে। রজার কাজের মানুষ, কিন্তু হেনরির সাথে ওর মোটেই বনে না। রজারকে সে খেয়াল করেছে–কিন্তু হেনরির থেকে দূরে থাকলেই সে ভাল কাজ করে। রজার তুমি আজ টেরির সাথে কাজ করবে। গরুগুলোকে তাড়িয়ে ম্যাণ্ডালে স্প্রিংসের কাছে জড়ো কোরো। তোমরা যারা খড়ের গাদা নিয়ে কাজ করছ, তোমাদেরও ওই একই কাজ।

আর আমি? হেনরি জানতে চাইল।

তুমি আমার সাথে যাবে। আমরা রোউজ বাডের দিকে যাব।

ওর চেহারায় কিছু চকচক করে উঠল। কিন্তু আমি তো রজারের সাথেই কাজ করি। আমরা দুজনে চমৎকার আছি।

হ্যাঁ, কিন্তু আজকে তুমি আমার সাথে যাবে। আমরা রোউজ বাডের দিকে যাব। তুমি আর আমি একসাথেই যাব। রোউজ বাড, র্যাবিটহোল, আর শুগারলোফের কাছে মরুভূমিটাও একটু দেখে আসব।

কার্প ওকে সাবধান করেছে যে বোজ বাডের কাছেই কোথাও ওকে অ্যামবুশ করে হত্যা করার চেষ্টা করা হবে। এটা খুবই সম্ভব যে হেনরি নিজেই এর সাথে জড়িত আছে। কিন্তু লোকটা যদি তার সাথেই থাকে তবে তার পক্ষে হত্যাকারীদের গোপনে খবর দেয়াটা সম্ভব হবে না। সেই সাথে ওই বিশাল লোকটা সম্পর্কে, আর অচেনা এলাকা সম্পর্কেও তার জ্ঞান বাড়বে।

পুবের আকাশে রিজের মাথায় সূর্যটা মাত্র উঁকি দিয়েছে, এই সময়েই ওরা রওনা হয়ে গেল। হেনরিকে কিছুটা বিষণ্ণ দেখাচ্ছে-কোন কথাই বলছে না সে। ওর পাশাপাশি রোউজ বাড ক্যানিয়নের দিকে এগোচ্ছে রনি।

গরু চুরি, হঠাৎ বলে উঠল রনি, ওটা এই এলাকার জন্যে শেষ। এক মাসের মধ্যেই আমরা ওটার শেষ দেখে ছাড়ব। এই দলটা খুব অসাবধান হয়ে উঠছে। স্টেজ ডাকাতদের থেকেও ওরা খারাপ।

এখন পর্যন্ত ওদের কেউ কিছু করতে পারেনি, মন্তব্য করল হেনরি। ওর মুখের ভাবে কৌতুক।

এখনও পারেনি, এটা ঠিক, স্বীকার করল রনি। কিন্তু ওদের গোপন আস্তানা এখন আর ওদের কোন কাজে আসবে না।

কোন আস্তানা? অবাক হয়েছে হেনরি। আর ওটা কেন কাজে আসবে না?

গতকাল আমি ওখানে গেছিলাম। যেন কোন গুরুত্বই নেই এভাবে কথাটা বলল সে। ওখানে দু’জনের সাথে দেখা হলো। একজন ডাক বেইলি, অন্যজন ট্রেসার। লারামি ওখানে ছিল না।

হেনরি যে অবাক হয়েছে সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। তার মানে তুমি ওদের গোপন আস্তানা খুঁজে পেয়েছ?

মাথা ঝাঁকাল রনি। ইচ্ছে করে খুব সাধারণ ভাবেই কথাটা বলল সে। ওখানে ডাক আর ট্রেসার ছিল।

বেইলিকে চিনি না। কিন্তু ট্রেসারকে চিনি। খুব সাংঘাতিক লোক।

হা, কঠিন লোকই ছিল সে। স্বীকার করল ড্যাশার। খুব খারাপ লোক। কিন্তু সে এখন কবরে।

কি বললে? অবাক হয়ে প্রশ্ন করল সে। ট্রেজার মারা গেছে?

হ্যাঁ, সে নিজেকে যতটা ফাস্ট মনে করেছিল, তা সে ছিল না। তাই মারা পড়েছে।

এই ব্যাপারে কিছুই সে শোনেনি। কর্ন প্যাচের পোকার খেলার কথা সে শুনেছে। কিন্তু ট্রেসারের মত ফাস্ট গানকে হারানো–এটা একটা অচিন্তনীয় ঘটনা।

এদেশে ঢোকার পথে এদেশের সবথেকে ফাস্ট পিস্তলবাজকে ড্যাশার প্রায় ঠেকিয়ে দিয়েছিল। লঙ হিউবার্টও শক্ত মানুষ–কিন্তু এর সামনে দাঁড়াতে পারেনি। এই লোকই স্বেচ্ছায় কর্ন প্যাচের মত জায়গায় গিয়ে বেরিয়ে এসেছে। ওখান থেকে বেরিয়ে সে নিশ্চয় ডাকাতদের গোপন আস্তানায় গিয়েছিল। এবং ট্রেসারের মত লোককে হত্যা করে বেরিয়ে এসেছে।

একটু অস্বস্তিভরেই নিজের অবস্থাটা বিচার করে দেখল সে। বছরখানেক ধরে গরু চোরদের সাথে সহযোগিতা করে লাভের অংশ নিয়েছে হেনরি। কিন্তু আজ সত্যিই সে ভয় পেয়েছে। রনি কি ওর সম্পর্কে জানে? এত কিছু সে এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে জানল? এবং রোউজ বাডে যাবার সঙ্গী হিসেবে তাকেই কেন সে বেছে নিল? ও কি সবই জানে?

হয়তো ড্যাশার তাকে মারার প্লট সম্পর্কেও জানে। তাই ইচ্ছে। করেই ওকে সাথে নিয়ে রোউজ বাডের দিকে যাচ্ছে-হয়তো ওকেই কান ফাঁদে ফেলার মতলব আছে ওর। কাপুরুষ নয় হেনরি। কিন্তু তবু…কেন যেন ওর ভয় করছে। লোকটা কি ওকে কোন ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় আছে? অজ্ঞ মানুষের সন্দেহ অনেক বিচিত্র দিকেই যায়। রনি কি, আর কতটা জানে, তা হেনরি আঁচ করতে পারছে না। এই লোকটা আসার পর থেকে যা ঘটেছে, আর ওর সম্পর্কে যা শুনেছে, তাতে সে ঘামতে শুরু করল।

তাছাড়া রোউজ বাডের দিকে যাওয়ায় সে নার্ভাস বোধ করছে। সে ওদের খবরটা না দিতে পারলে ফাঁদটা কার্যকর হবে না। কিন্তু পোকার হ্যারিস ওর ওপর প্রচণ্ড খেপেছে, কারণ ওর কাছে তার দারুণ হার হয়েছে। নিজেকে হেনরি প্রচণ্ড শক্ত লোক মনে করে। কিন্তু একে সে প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে। ভীষণ ভয়। তার জীবন নাশেরও সম্ভাবনা রয়েছে। যে ট্রেসারের মত ফাস্ট লোককে যে শেষ করতে পারে সে অনেক কিছুই করতে পারে। ঘামছে সে।

এই লোকের সাথে রোউজ বাডে যেতেও ওর ভয় করছে। সন্দেহ নেই লোকটা ভয়ানক। ওর ভয় হচ্ছে কেউ হয়তো পাহাড়ের মাথা থেকে ওদের লক্ষ করছে। যে কোন সময়ে গোলাগুলি আরম্ভ হতে পারে। রনিকে মারতে গিয়ে যদি হেনরিও মরে, তাতে বিলের ঘুম নষ্ট হবে না।

বিশাল লোকটার শঙ্কা ক্রমাগত কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার কারণ আঁচ করতে রনির মোটেও অসুবিধা হচ্ছে না। ওর চোখ দুটো এখন অত্যন্ত সতর্ক হয়ে উঠেছে। মাটিতে কোন ট্র্যাকই দেখা যাচ্ছে না। তবে যে কোন গুপ্তঘাতক অবশ্যই চক্রাকারে ঘুরে সুবিধা মত জায়গায় লুকিয়ে অবস্থান নেবে।

জানো, হঠাৎ বলে উঠল ড্যাশার, কেউ যদি একটা মানুষকে অ্যামবুশ করে মারতে চায়, তবে সামনের ড্ৰটাই হবে উৎকৃষ্ট জায়গা।

চমকে উঠল হেনরি। ওর মুখটা ফেকাসে হয়ে গেছে। রনির চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারছে না। কাঁধ উঁচাল সে। হতে পারে। কিন্তু এখানে কেউ কাউকে মারতে আসবে কেন?

খবর পেয়েছি আমি, এখানে কিছু লোক আছে যারা আমাদের মারতে চায়।

আমাদের? আবার নতুন করে চমকাল হেনরি।

হ্যাঁ, রাসলাররা রকিঙ কে-এর সব গরুই চায়। আমরা বিরোধিতা করাতেই পারছে না। ওরা তাই সব ফাইটিঙ হ্যাণ্ডকেই শেষ করতে চায়। তার মধ্যে তুমি আর আমিও পড়ি।

স্বভাবতই আমাকে ওরা চায়। আর ওরা ভাবছে তুমি এই এলাকা এত ভাল করে চেনো যে তুমি হয়তো আমাকে বলে দিতে পারো গরুগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ইউনিয়নভিলের মাইনে যায়, কিছু যায় সেভেন পাইনসে। তবে একটা বিরাট অংশ অন্যখানে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার বিশ্বাস ওগুলো উত্তরে আর পশ্চিমে যায়।

কথাটা যে কতটা সত্যি এটা হেনরির চেয়ে বেশি আর কেউ জানে। সে নিজেই ওই ড্রাইভে কয়েকবার সাহায্য করেছে। কিন্তু ড্যাশার এটা কেমন করে বুঝল? সরাসরি প্রশ্নই করে বসল সে।

সহজ। এখানকার পুবে কি? ওয়াইওমিঙ আর ইউটাহ। ওদের কি গরুর কোন দরকার আছে? ওদের প্রচুর আছে। বাকি রইল কি? অরিগন, ক্যালিফোর্নিয়া, এবং হয়তো পশ্চিম মনট্যানার মাইন। পুবে অল্পই দাম পাওয়া যাবে। কিন্তু উত্তরে বা পশ্চিমে দেড় থেকে দুইগুণ দাম মিলবে।

কিন্তু গরু নেবে কোন পথে?

জেসি অ্যাপলগেটের নাম কখনও শুনেছ? কিংবা লাসেন? ওদের একটা জায়গা আছে উত্তর-পশ্চিমে। কয়েকটা খারাপ প্যাঁচও আছে, কিন্তু শুনেছি হাই রক ক্যানিয়নে প্রচুর ঘাস আর পানি আছে। রাসলাররা অনায়াসেই ওই পথে গরু পাচার করতে পারবে।

ক্যানিয়নের সরু গিরিপথটার দিকে চেয়ে একটা ময়লা রুমাল বের করে ভুরুর ঘাম মুছল হেনরি। ওরা যদি আজই অ্যামবুশ করার পরিকল্পনা নিয়ে থাকে, তবে সামনের গিরিসঙ্কটের মাথা থেকেই গুলি আসবে। ঘোড়ার পিঠে সে ওর ভিতরেই ঢুকতে যাচ্ছে। ড্যাশার ঠিক কথাই বলেছে বলে মনে হচ্ছে-এই এলাকা থেকে রাসলি সে বন্ধ করেই ছাড়বে। রকিঙ কে-এর এই সেগুলো যদি এত ভালভাবে সব কিছু আঁচ করতে পারে, তবে ঝুঁকি নেয়াটা তার কোন মতেই সঙ্গত হবে না।

ওর মুখের ভিতরটা শুকিয়ে গেছে। বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটছে হেনরি। অস্বস্তিভরে আড়চোখে একবার রনির দিকে তাকাল সে। কিন্তু ওস্তাদ পিস্তলবাজ লোকটা শান্তভাবেই সামনে এগিয়ে চলেছে। ওর জন্যে সামনে কি অপেক্ষা করছে, সেটা যদি আঁচ করেও থাকে, ওর চেহারা দেখে তা বোঝার উপায় নেই।

কয়েকবার গরুকে ঘাস খেতে দেখে, যেখানে গরু জড়ো করা হবে, সেদিকে তাড়িয়ে দিল ওরা। এবং তারপর গিরিসঙ্কটে মুখের কাছে পৌঁছে, হঠাৎ ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে একটা ক্ষীণ ট্রেইল ধরে সোজা উত্তর দিকে রওনা হলো রনি।

ওর এই কাজে হেনরি নিশ্চিন্ত হওয়ার চেয়ে দুশ্চিন্তাতেই পড়ল বেশি। সে নিজেও এই ট্রেইল সম্পর্কে কিছু জানে না, অথচ ড্যাশার কিভাবে এর অস্তিত্ব জানল? আসলে কয়েক মাইল দূর থেকেই একটা সবুজ এলাকা রনির চোখে পড়েছে। পানির এমন সুন্দর একটা উৎসে পৌঁছা’র একটা ট্রেইল থাকতেই হবে, এটা সে পুরানো অভিজ্ঞতা থেকে জানে।

আরও অনেক গরু ওদের চোখে পড়ল। ওরা দুজনে কঠিন পরিশ্রম করল। হেনরি রাসলার হলেও, অনেক রাসলারের মত সে ভাল কাউহ্যাণ্ডও বটে। দুই ঘণ্টার মধ্যেই ওরা দুশোর বেশি গরু ম্যাণ্ডালে ম্প্রিংসের দিকে পাঠাল।

এর মাঝেও রনি সতর্ক নজর রেখেছে কিন্তু আশপাশে কোন রাইডারের চিহ্ন সে দেখতে পেল না।

মনে হচ্ছে ওই ট্রেইলটা একজন লোকেরই তৈরি। ওর খোঁজেই রওনা হবে ড্যাশার। হেনরিকে গরু তাড়িয়ে নেয়ার কাজে রেখে, সে ট্রেইল ধরে এগোল।

ঘোড়ার পিঠে চলার সময়েই সে লক্ষ করেছে বেশিরভাগ গরুই রকিঙ কে র‍্যাঞ্চের। তবে থ্রী এইচ র‍্যাঞ্চেরও কিছু গরু এত ভিতরে চরছে। ওদের সাথে একটা বোঝাপড়া হওয়া দরকার। বুড়ো কেসি মারা যাওয়ার পর থেকেই কঠিন লোকের অভাবে রকিঙ কে র‍্যাঞ্চ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বুড়ো ছিল বাঘ। আর ছেলেটা হচ্ছে ভেড়া। কোন সাহস নেই। শক্ত নয় সে।

চলার পথে বারকার উত্তর-পশ্চিমের দিকে দেখছে রনি। ওখানেই একক রাইডারের ট্রেইলটা হারিয়ে গেছে। ওদিকে মরুভূমি। কিন্তু ওদিকেই কোথাও আছে হাই রক ক্যানিয়ন, যেখানে ভাল ঘাস আর পানি আছে। কয়েকটা ছোট লেকও আছে ওখানে। এটা পার হওয়া কঠিন কাজ নয়। যে জানে কোথায় পানি আছে, সে সহজেই পার হতে পারবে। কিন্তু যে জানে না, সে পানির থেকে দশ গজ দূরেও তৃষ্ণায় মারা যেতে পারে। কারণ ওগুলো পাহাড়ের ভাজে এমন সব জায়গায় আছে যে আগে থেকে না জানলে খুঁজে বের করা অসম্ভব।

এদিকে লোকের অভাবে রকিঙ কে-এর লোক নজর রাখতে পারে। এখান থেকে যে অল্পদিন আগেই গরু চুরি করা হয়েছে তার চিহ্ন সে সব জায়গাতেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।

ছোটছোট পাহাড় পার হয়ে চলেছে ও। সামনে ঘোড়ার গাড়িতে একটা লোককে যেতে দেখল। সাবধানে এগিয়ে নড় করল রনি।

হাওডি! খুশি মনেই লোকটা বলল। অনেক দিন হলো এদিকে কোন মানুষের দেখা পাইনি।

তুমি কোন দিকে যাচ্ছ?

ওই রকগুলোর দিকে। ওই পাহাড়ে অনেক সোনা আছে। কেবল খুঁজে বের করাটাই সমস্যা। ওর খোঁজেই আমি যাচ্ছি।

এখানে কতদিন আছ?

তিরিশ বছর। পাহাড়ের প্রতিটা ইঞ্চি আমি চিনি, কিন্তু কোন সোনা এখনও পাইনি।

নিশ্চয় এলাকাটা বুনো ছিল তখন। অনেক আউটল।

বুনো ছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিছু খারাপ লোকও ছিল। পুবের দিকে দেখাল সে। আমি বুড়ো কেসিকে ওদিক দিয়ে রাসলারদের তাড়িয়ে নিয়ে মারতে দেখেছি।

তুমি দেখেছ? কিন্তু ড্যাকোটা জ্যাক তো খুব শক্ত মানুষ ছিল।

তুমি যদি নিজের চোখে দেখতে–দুটোই ছিল শক্ত দল। কিন্তু রাসলারের দলকে ওরা একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিল। শক্ত লোক ছিল বুড়ো কেসি। ড্যাকোটা জ্যাক মরেনি, প্রতিশোধ নিতে ফিরে এসেছিল ভাস্কো গ্ৰেহাম আর তার দল নিয়ে। কিন্তু বুড়ো গুলি করে ঘোড়ার থেকে স্কোকে ফেলে দিল। সবই আমি নিজের চোখে দেখেছি। ভাস্কোর ঘোড়া গুলি খাওয়ায় সে পড়ে গেল। ড্যাকোটা জ্যাক ওর জন্যে ফিরে এল। গুলি করে ওকে ঘোড়ার পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে, ওর ঘোড়া নিয়েই পালাল ভাস্কো।

ড্যাকোটা জ্যাক ওকে সাহায্য করতে ফিরে আসছিল?

হা। এমন ঘটনা আমি আর দুটো দেখিনি। আমার বিশ্বাস সে বুঝেছিল এক ঘোড়ার পিঠে দু’জনে চাপলে বুড়ো কেসির ঘোড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ওরা পারবে না। তাই এমন জঘন্য একটা কাজ করল।

এটা হজম করা কঠিন…সত্যিই খুব শক্ত। মন্তব্য করল রনি।

তা ঠিক। কিন্তু ওটা ছিল ভাস্কো। প্রায়ই ভাবি লোকটার পরে কি হলো। এই এলাকার প্রতিটা ইঞ্চি লোকটার মুখস্থ ছিল। পিস্তলেও ওর হাত ছিল খুব চালু। এবং এর ব্যবহারে সে মোটেও দ্বিধা করত না।

হ্যাঁ, ওর কথা আমি শুনেছি, মন্তব্য করল রনি। মনটানায় একজন শেরিফকেও সে হত্যা করেছে।

র‍্যাঞ্চে ফিরতে ওর বেশ রাত হলো। চীনা রাধুনী ওকে রান্নাঘরের দিকে আসতে দেখে বিরক্ত হয়ে তাকাল। সাপার, সে ঠাণ্ডা, অসন্তোষভরে

সে বলল। সময় মত কেন আসোনি?

ব্যস্ত, চায়না, হেসে জবাব দিল রনি। একটু কফি দিলেই চলবে। বাকিটা ভুলে যাও।

কিছু ভুলব না, জবাব দিল রাঁধুনী। তুমি কাজ করো, তোমাকে খেতে হবে।

দরজা খুলে গেল। চোখ তুলে তাকিয়ে লিসাকে দেখতে পেল রনি। ওহ, তুমি? মনে হলো নিরাশ হয়েছে মেয়েটা। শুনলাম তুমি বেশ ব্যস্ত ছিলে। ওর স্বরটা ঠাণ্ডা। ঝামেলা পাকানোটা তোমার স্বভাব।

কেউ-কেউ করে, স্বীকার করল রনি। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি এর পক্ষপাতি নই।

একজুন লোক যে দাবি করে ঝামেলা অপছন্দ করে তার পক্ষে সর্বক্ষণ বিপদের মাঝখানে কাটানোটা মানায় না! ছ্যাঁৎ করে জ্বলে উঠল মেয়েটা। আমি জেনেছি কর্ন প্যাচে গিয়ে তুমি গোলমাল বাধিয়ে এসেছ?

মুহূর্তে সতর্ক হলো রনি। আমি আবার ওখানে কি করলাম? আমার তো কিছুই মনে পড়ছে না।

একটা মানুষকে মেরেছ। ট্রেসারকে তুমি খুন করেছ!

পুরো এক মিনিট লিসার দিকে তাকিয়ে থাকল রনি। হেনরি ছাড়া আর কাউকে সে কথাটা জানায়নি। এবং লোকটা রাত করেই ফিরেছে। সুতরাং কথাটা লিসা ওর কাছ থেকে শোনেনি। তাছাড়া ঘটনাটা ঘটেছে ওদের গোপন আড্ডায়। কেবল বেইলি ছিল তার একমাত্র সাক্ষী। মেয়েটাকে একটু বাজিয়ে দেখতে চাইল সে।

তুমি এটা শুনেছ? কি জানো তুমি? এর থেকেই বোঝা যায় লোকজন যে বিষয়ে কিছুই জানে না সেই সম্পর্কেও কথা বলে।

এটা আমি নিশ্চিতভাবে জানি? প্রতিবাদ করল লিসা। তুমি ওর সাথে একটা ঝগড়া বাধিয়ে ওকে মেরেছ।

শহরের সবাই বুঝি এই কথাই বলছে?

আমি শহরে যাইনি। কিন্তু ওরা সবাই কথাটা অবশ্যই শুনবে। এবং ওরা সবাই বলবে আমরা একজন খুনীকে ভাড়া করেছি!

হতে পারে। নিজের কাপে আবার কফি ঢেলে নিল সে। কিন্তু আমি তো শুনলাম জেরি সমার্সকে তোমার ভাই কাজে নিক, এটাই তুমি চেয়েছিলে। সে কি খুনী নয়?

রাগে ওর মুখটা লাল হয়ে উঠল। সে তা নয়! প্রতিবাদ করল সে। মানুষকে গুলি করেছে সে, কিন্তু সে একজন ইতস্তত করছে লিসা। কিন্তু হঠাৎ বুঝতে পারল সে যা বলছে সেটা কতটা অবাস্তব। নিজের মনেই ওকে স্বীকার করতে হলো অনেক মানুষ হত্যা করেছে সমার্স। তার মধ্যে কিছু প্রায় বিনা কারণে। এটা নিয়ে ওকে অনেকবার দোষারোপও করেছে লিসা। কিন্তু ওর মুখের ওপরই হেসেছে জেরি।

যাহোক, বলল সে, যদি সে তা করেও সেটা প্রশ্রয়ের যোগ্য কোন কাজ হলো না। অযথা হত্যা আমি মোটেও দেখতে পারি না।

আমিও না, শান্ত স্বরে রনি বলল, কিন্তু তাই বলে ভাল লোকের অস্ত্র ছেড়ে দেয়ার কোন অর্থ হয় না, যখন অন্যেরা তা করছে না। শান্তির কথা দুই পক্ষ থেকেই আসতে হবে।

তোমার বাবা সুন্দর একটা র‍্যাঞ্চ গড়ে তুলেছিল। এখানে শান্তিও সে রক্ষা করেছে, মাঝেমাঝে কঠিন হাতে, কিন্তু সে তা রক্ষা করেছে। মানুষ শান্তিতে বাস করেছে।

তোমার ভাইয়ের অনুভূতিও তোমারই মত। সেও হত্যার বিরোধী, কিন্তু তাতে কি ঘটছে? আর সবাই কি সে ভাল বোলে তার সাহায্যে এগিয়ে আসছে? তার বদলে ওকে নরম পেয়ে র‍্যাঞ্চটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। এখন তোমার ভাই আমাকে কাজে নিয়েছে, এক মাসের মধ্যেই যে এখানে আবার শান্তি ফিরে আসবে, তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি।

আবার খাওয়ার দিকে মন দিল রনি। লিসা চিন্তামগ্ন ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জেরির বদলে তার ভাই ড্যাশারকে কাজে নেয়ায় সে খাপ্পা হলেও এই নীল চোখের গানম্যানকে ওর পছন্দহচ্ছে। নিশ্চয়তা নিয়ে লোকটার ওপর নির্ভর করা যায়।

তুমি জেরিকে পছন্দ করো না, তাই না? হঠাৎ প্রশ্ন করল সে।

ইতস্তত করল ড্যাশার। জানে ওই বিষয়ে লিসার সাথে আলাপ করা বিপজ্জনক ব্যাপার। লিসা, ধীরে আরম্ভ করল সে, ওকে আমি চিনি না। কিন্তু ওর সম্পর্কে যা শুনেছি তা আমার মনকে নাড়া দিতে পারেনি। হয়তো আমার ভুলও হয়ে থাকতে পারে। অনেকবারই আমি করেছি। তোমার নিজেরই অনেক বুদ্ধি আছে। তুমি তো ওকে চেনো। ও কেমন, আর তোমার বিচারে মানুষের কেমন হওয়া উচিত, সেটা তুমি নিজেই সভাবে বিচার করে দেখো।

উঠে দাঁড়াল লিসা। মনে হচ্ছে আমিই তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।

দরজা দিয়ে বেরোবার সময়ে একটু ইতস্তত করল রনি। হ্যাঁ, ভাল কথা, সন্ধ্যায় তুমি হেনরিকে ফিরতে দেখেছ?

না তো? জবাব দিল লিসা, ওর সাথে গত দু’দিনে আমার একবারও দেখা হয়নি। ও কি কোথাও গেছে?

না, ঠিক মত ফিরল কিনা জানতে চাচ্ছিলাম। বাইরে বেরিয়ে সিঁড়ির ওপর একটা সিগারেট তৈরি করার জন্যে থামল সে। তাহলে ট্রেসার মফিটকে হত্যার কথা হেনরি মেয়েটাকে বলেনি। তাহলে কে ওকে খবরটা দিল। আর ঘটনা কর্ন প্যাচে ঘটেছে, এটাই বা কেন। বলেছে?

হেনরি জেগেই তার বাঙ্কে শুয়ে আছে–ভাবছে। আজকের দিনটা ওর ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে কেটেছে। সন্দেহ আর চিন্তা ওর মাথায় ভিড় করে আছে।

ড্যাশার কতটা জানে? স্টেজ ডাকাতদের গোপন আস্তানাই বা সে কিভাবে চিনল? রাসলাররা অবশ্য অন্য দলটার সম্পর্কে জানে। কিন্তু ওরা কে বা কারা তা কেউ জানে না। জানলে, কেবল বিল ওয়াটসন জানতে পারে।হেনরি হঠাৎ টের পেল সে ভয় পেয়েছে–দারুণ ভয়। মৃত্যুকে সে আগে কখনও ভয় করেনি। গুলি খেয়ে মৃত্যু, স্ট্যামপিড, বা খ্যাপা ষাড় কিছুই সে কেয়ার করেনি। ওর কেবল একটাই ভয়, সেটা ফাঁসির দড়ি। সারা জীবন সে কাউহ্যাণ্ড হিসেবেই কাজ করেছে। ওর ভাল করেই জানা আছে রাসলিঙ করে ধরা পড়লে ফঁসি অনিবার্য। রনি ড্যাশার আসার পর থেকেই তার ভয়টা দ্বিগুন হয়েছে। হেনরির দেশ ছাড়ার স হয়েছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে সে সরে পড়বে। হেনরি সিদ্ধান্ত নিল, সকালেই চুপিচুপি অরিগমের পথে রওনা হবে।

<

Super User