শীত-অপরাহ্নের ম্লান আলোয় উত্তর অ্যারিজোনার ট্রেইল ধরে এগিয়ে আসছে এক ঘোড়সওয়ার। পরনে মোষের চামড়ার কোট। হাঁটু পর্যন্ত লম্বা। রং জ্বলা জিনসের প্যান্টের ওপর মোষের চামড়ার লেগিং। মাথায় চওড়া কার্নিসের হ্যাট। অদ্ভুত তার বসার ভঙ্গিটা। বুকের কাছে নুয়ে পড়েছে চিবুক।
তুষার পড়ে চলেছে। হালকাভাবে। তারই মাঝে এগিয়ে চলেছে, ঘোড়া। নিজের ইচ্ছেতেই এগোচ্ছিল এতক্ষণ। এবার একটা উঁচু টিলার ওপর উঠে এল।
মুখ তুলে সোজা হয়ে বসল লোকটি। তাকাল চারদিকে। বহুদূর পর্যন্ত দৃষ্টি যায় এখান থেকে। কোর্টের কলার খানিকটা তুলে দিল আরোহী। আরও খানিকটা সামনে টেনে দিল হ্যাট। কিন্তু তাতে কাজ হল না বিশেষ। ইতিমধ্যেই তীব্র শীতে লাল হয়ে গেছে তার মুখ।
কোটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে মুখ বিকৃত করল সে, তীক্ষ্ণ ব্যথাটা পাঁজরে। দস্তানা পরা হাতটা বার করে আনল, দেখল কিছু লেগে রয়েছে কিনা। বেশ কিছুক্ষণ সামনের দিকে চেয়ে রইল লোকটি। শহর দেখা যাচ্ছে। তবে তুষারের কারণে আবছা তার অস্তিত্ব। বরফ ঢাকা উপত্যকায় কিছু ঘরবাড়ি, গাছপালা। কয়েকটা বাড়ির চিমনি থেকে ধোয়া বেরোচ্ছে, আবার মিলিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ঘোড়র পেটে স্পার দাবাল আরোহী, ক্লান্ত ঘোড়াটা নেমে আসতে লাগল উঁচু টিলা থেকে।
শীতের বিকেল শেষ হয়ে আসছে দ্রুত। শহরে ঢোকার মুখে ট্রেইলের পাশে একটা কাঠের সাইনবোর্ড দেখে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল সে। সাইনবোর্ডের লেখাটা পড়া যাচ্ছে না। তুষার জমেছে। সামনে ঝুঁকল আগন্তুক। দস্তানা পরা হাতে সরিয়ে দিল তুষার। সানশাইন, অ্যারিজোনা। কাঠের গায়ে খোদাই করা দুটো শব্দ। এক দষ্টে সেদিকে তাকিয়ে রইল সে। তারপর কি মনে হতে আকাশের দিকে মুখ তুলে চাইল। পড়েই চলেছে তুষার। আবার স্পার দাবাল ঘোড়র পেটে।
সোজা হয়ে বসেছে এখন আরোহী। সতর্ক চোখে চাইছে এদিক-ওদিক। বাড়ি-ঘরগুলোর মাঝখান দিয়ে একটা একতলা বাড়ির সামনে এসে থামল সে। স্যালুন অ্যাণ্ড জেনারেল স্টোর লেখা একটা জীর্ণ সাইনবোর্ড ঝুলছে দরজার মাথায়। গ্রিফিথ পড়ল সে। এক হাতে মুখ মুছে স্যালুনের ডান পাশে চলে এল। সে। ঠাণ্ডা বাতাস এখানে অপেক্ষাকৃত কম। একটা খুঁটির সাথে বাধল ঘোড়াটাকে। জিনের পেটি আলগা করল। তারপর মুখের কাছে ঠেলে দিল ছোলার ডাবা।
এই সামান্য পরিশ্রমেই হাঁফ ধরে গেল তার। পাঁজরের ব্যথাটা মাথাচাড়া দিতে চাইছে। হাঁ করে শ্বাস নিল সে। তারপর স্যাডল বুট থেকে অস্বাভাবিক লম্বা ও ভারি একটা রাইফেল বার করল। নিয়মিত যত্নের ফলে চকচকে মসৃণ ওটার বাট আর ব্যারেল।
ডান হাতে রাইফেল নিয়ে স্যালুনের বারান্দায় উঠে এল লোকটি। হ্যাট দিয়ে বাড়ি মেরে কোট প্যান্টের তুষার ঝাড়ল। আবার পরে নিল হ্যাটটা। কোটের। বোতামগুলো খুলে ফেলল। পেছন দিকে টেনে দিল খানিকটা। যাতে কোমরে ঝোলানো রিভলভারটা যে-কোন মুহূর্তে অনায়াসে বার করে আনা যায়।
স্যালুনে ঢুকে লোকটি সরাসরি বারের দিকে এগোল না। দাঁড়িয়ে রইল এক মুহূর্ত। তাকাল চারদিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভেতরটা। ধোয়াটে। সবার আগে তার চোখ পড়ল গ্রিফিথির ওপর। বারের মালিক। দাঁড়িয়ে আছে সে বারের পেছনে, লোকটা মোটা-সোটা। পরনে সাদা অ্যাপ্রন, তবে ব্যবহারের ফলে নোংরা। আগন্তুকের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল গ্রিফিথ। তারপর কাজে মন দিল।
দুটো টেবিল ঘিরে পাঁচ-ছয়জন মারকুটে চেহারার লোক বসে আছে। তার দিকে চেয়ে রয়েছে সবাই। টেবিলের ওপর পা তুলে বসে থাকা লোকটা থুথু ফেলল। তার দিক থেকে চোখ না সরিয়েই।
স্যালুনের পেছন দিকে বিশাল ফায়ারপ্লেস। দু’একজন লোক আছে। সেখানেও। তবে ধোয়ার কারণে প্রায় অস্পষ্ট তাদের অবয়ব।
স্যালুনের ডানদিকটা জেনারেল স্টোরের মালপত্রে ঠাসা। তিন চারটে কাঠের র্যাকে নানা আকারের টিনের পট। মেঝেতে গোটা তিনেক ময়দার বস্তা। সিলিং থেকে ঝুলছে শুকনো বেকন এবং কয়েক গোছা দড়ি।
আগন্তক ধীরপদক্ষেপে বারের কাছে এসে দাঁড়াল। হাতে এখনও সেই বিশাল আকৃতির রাইফেল। সতর্কদষ্টিতে ঘরের চারপাশে আরেকবার নজর বোলাল সে। তারপর রাইফেলটা বারের সঙ্গে হেলান দিয়ে রেখে নিচু গলায় ফরমায়েশ দিল, হুইস্কি।
স্পেশাল না দেশী?
বারম্যানের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল লোকটি, দুটোর মধ্যে কোনও তফাৎ আছে?
পাঁচ সেন্ট।
তাহলে দেশীটাই দাও।
একটা গেলাসে হুইস্কি ঢেলে আগন্তুকের দিকে ঠেলে দিল বারম্যান। লম্বা এক চুমুকে সবটুকু শেষ করল সে। ইঙ্গিত করতেই গেলাসটা আবার ভরে দিল গ্রিফিথ। এক চুমুকে অর্ধেকটা খালি করল সে। গেলাসটা নামিয়ে রাখল বারের ওপর। উষ্ণ হয়ে উঠছে শরীর। শিথিল হচ্ছে পেশীগুলো। খোলা বোতুল হাতে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করল গ্রিফিথ। কিন্তু গেলাসটা শেষ করার লক্ষণ দেখা গেল
লোকটির মধ্যে। ছিপি এঁটে বলল গ্রিফিথ, চল্লিশ সেন্ট, মিস্টার।
ক্লান্ত হাতে পকেট থেকে একটা ডলার বার করল লোকটি। রাখল বারের ওপর।
এসময় ঘরের অন্ধকার কোণ থেকে এক কালো, রোগাটে ইণ্ডিয়ান তরুণ ওর পাশে এসে দাঁড়াল। পরনে রঙীন পোশাক। আমাকে একটু হুইস্কি খাওয়াবে?
আগন্তুক জবাব দেয়ার আগেই তেড়ে উঠল গ্রিফিথ। ভাগো এখান থেকে!
একপা পিছিয়ে আবার দাঁড়িয়ে রইল ছেলেটি। কি হল? কথা কানে যায় না? তীক্ষ্ণ গলায় চেঁচিয়ে উঠল গ্রিফিথ। তারপর বারের ওপর ঝুঁকে পড়ে হ্যাট দিয়ে বাড়ি মারল ছেলেটির মুখে।
উফ শব্দ করে গাল চেপে ধরে পিছিয়ে গেল ছেলেটি।
ফের যদি কাউকে বিরক্ত করতে দেখি তবে তোর হাড় গুঁড়ো করে দেব, হারামজাদা, খিস্তি করল গ্রিফিথ।
ঘটনাটা যেন লক্ষ্যই করেনি নবাগত। ছিপি খুলে পুরো এক গেলাস হুইস্কি ঢালল সে। তারপর মার খেয়ে ফায়ারপ্লেসের পাশে জবুথবু হয়ে বসে থাকা ছেলেটিকে মৃদু গলায় ডাকল, এই, এদিকে এস।
দৌড়ে এল ছোঁকরা। ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে বারটেণ্ডারের দিকে। তারপর গেলাসটা চেপে ধরে এক চুমুকে সাবড়ে দিল হুইস্কিটুকু।
গ্রিফিথ লোকটির দিকে তাকিয়ে অপ্রসন্ন মুখে বলল, অযথা পয়সা নষ্ট করলে, মিস্টার। এক গেলাস স্পেশাল হুইস্কি খেতে পারতে ওই পয়সা দিয়ে। যাক, এখন মোট আট সেন্ট দিতে হবে।
গ্রিফিথের কথার জবাব দিল না লোকটি। খানিক বাদে অনেকটা স্বগতোক্তির মত ফিসফিস করে বলল, শীত, বড্ড শীত।
আরও বাড়তে পারে, গ্রিফিথ বলল।
বল কি? অস্ফুটে বলল লোকটি। তলানিটুকু শেষ করে গেলাসটা নামিয়ে রাখল বারের ওপর। অনেকখানি ফিরে পেয়েছে উষ্ণতা। হ্যাটটাও খুলে রাখল। মৃদু গলায় প্রশ্ন করল, আমার ঘোড়াটার জন্যে কোনও আস্তাবল পাওয়া যাবে?
গ্রিফিথ প্রথমে যেন শোনেইনি প্রশ্নটা। তারপর বলল, কিছু বললে? প্রশ্নটা আবার করল লোকটি। টেবিলে বসা লোকগুলোর দিকে একটা চোরা চাহনি হানল গ্রিফিথ। বলল, না, কোনও আস্তাবল খালি নেই।
ভ্রুকুটি করল লোকটি। বোতলের দিকে হাত বাড়িয়ে আবার কি ভেবে সরিয়ে নিল। তারপর শান্তস্বরে বলল, আমি আসার সময় একটা খালি বার্ন দেখেছি।
গ্রিফিথ বারের তক্তা মুছতে মুছতেই জবাব দিল, দেখতে পার। তবে ওটা খালি নয়। তাছাড়া এ শহরে বাইরের কারও থাকার নিয়ম নেই।
ধীরে ধীরে সোজা হল লোকটি। কড়া চোখে চাইল গ্রিফিথের দিকে। একটা খালি বাঙ্ক হাউসও চোখে পড়েছে আমার। ঘুরে দাঁড়িয়ে টেবিলে বসা লোকগুলোর দিকে চাইল সে। বিছানার দরকার নেই। কোনওমতে শীত কাটলেই হল। কেবল ঘোড়াটার জন্যে আশ্রয় দরকার।
বললাম তো খালি নেই, গ্রিফিথ বলল আবার।
গ্রিফিথের দিকে চাইল নবাগত। ধীরে ধীরে বলল, এই শীতের মধ্যে নিশ্চয় তাড়িয়ে দেবে না আমাকে? হাসল একটু। কাজটা কি ঠিক হবে?
গ্রিফিথ, প্রতিটি কথার ফাঁকে টেবিলে বসা লোকগুলোর দিকে চাইছে। ব্যাপারটা সন্দেহজনক ঠেকল তার কাছে। লোকগুলো নিশ্চয় জড়িত এর সাথে। টানটান হয়ে উঠল তার পেশীগুলো। প্রস্তুত হচ্ছে বিপদের আশঙ্কায়। এবার সবাইকে শুনিয়ে স্পষ্ট গলায় বলতে শুরু করল সে, আমাকে তাড়িয়ে দেয়ার পেছনে কোনও যুক্তি আছে? থাকলে শুনতে চাই আমি।
লোকটির কাঁধের ওপর দিয়ে চাইল গ্রিফিথ, কাছের, টেবিল থেকে বলে উঠল একজন, গ্রিফিথ, আজ রাতটা থাকতে দাও ওকে।
কথাটা কে বলল বোঝার জন্যে ঘুরে দাঁড়াল লোকটি। একে একে দেখল সবাইকে। অল্পবয়সী এক কাউবয় নড় করল।
ঠিক আছে, বলল গ্রিফিথ। ঘোড়ার জন্যে লাগবে এক ডলার। আর তোমার বিছানার জন্যে পঞ্চাশ সেন্ট।
ক্ষীণ হাসল লোকটি। মৃদু গলায় বলল, ঠিক আছে, পাবে।
দেড় ডলার।
বারের ওপর দুই ডলার রাখল লোকটি। বলল, খুচরো ফেরত দিতে হবে। পরে হুইস্কি খেয়ে নেব।
পিকো! গলা চড়িয়ে ডাকল গ্রিফিথ ইণ্ডিয়ান ছেলেটিকে। এর ঘোড়াটাকে আস্তাবলে রেখে দিয়ে এস।
হুকুম তামিল করতে ছুটল ছোঁকরা।
খালি গেলাসে মদ ঢেলে ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে মৃদু গলায় বলল লোকটি, সানশাইন।
কিছু বললে? প্রশ্ন করল গ্রিফিথ।
না, তেমন কিছু না। ভারী অদ্ভুত তোমাদের শহরটার নাম।
টেবিলের ওপর পা তুলে দেয়া বেঁটে লোকটা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, নামটা মনে হয় পছন্দ হয়নি তোমার!
উত্তর দিল না নবাগত চেয়ে রইল অন্যদিকে।
কথা কানে যায় না? নামটা পছন্দ হয়নি তোমার? জিজ্ঞেস করল বেঁটে লোকটা।
নামে কিছু যায় আসে না আমার, বলল আগন্তুক। বেঁটে লোকটা খটাশ করে পাটা নামিয়ে আনল মেঝেতে। পুরু ঠোঁটে কুৎসিত হেসে বলল, অনেক কিছু যায় আসে। মনে হচ্ছে শহরটা পছন্দ হয়নি তোমার। কাজেই কেটে পড়।
ভূ কুঁচকে তার দিকে খানিক চেয়ে রইল লোকটি। চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে। অল্প বয়সী কাউবয়টি দ্রুত বলে উঠল, আহ, রজার! অযথা গোলমাল বাধাচ্ছ কেন?
তার কথা যেন কানেই যায়নি রজারের। খানিকটা গলা তুলে জিজ্ঞেস করল সে, কোত্থেকে এসেছ তুমি? এমন অভদ্র রসিকতা শিখেছ কোথায়?
রজারের দিকে সোজাসুজি তাকাল লোকটি। শান্ত গলায় বলল, দক্ষিণে।
পরিবেশটাকে হালকা করার জন্যে গ্রিফিথ জিজ্ঞেস করল লোকটিকে, এটা কামান না রাইফেল, মিস্টার? আঙুল দিয়ে দেখাল বারের সাথে হেলান দিয়ে রাখা রাইফেলটা।
রাইফেল। তবে বিশেষ ভাবে তৈরি, বলল লোকটি।
তুমি কি শিকারী?
ছিলাম।
ক্যালিবার কত অস্ত্রটার?
অনেক, সংক্ষেপে বলল লোকটি।
কত?
এবার আর জবাব দিল না লোকটা। গেলাসের পানীয়টুকু শেষ করে জিজ্ঞেস করল, বাঙ্কহাউসটা কোথায়?
গ্রিফিথ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, দাঁড়াও, দেখিয়ে দিচ্ছি…কিন্তু তোমার সাথে বেডরোল আছে তো?
‘আছে।’
বাড়তি পয়সা দিলে কম্বল পাবে।
মৃদু হেসে দরজার দিকে এগোল লোকটি। বেরিয়ে যাওয়ার সময় চেঁচাল রজার, রাইফেলটা কি আসল?
জবাব দিল না লোকটি। জিদ চেপে গেল রজারের। গুলি করা যায় ওটা দিয়ে?
বেরিয়ে গেল লোকটি।
ও বেরিয়ে যেতেই উইলসন নামের তরুণ কাউবয়টি রজারের দিকে চেয়ে মাথা নাড়ল, খামোকা ওকে রাগাচ্ছিলে কেন?
রজার কঠিন মুখে বলল, ওকে পছন্দ হয়নি আমার। তাছাড়া এখানে ওর থাকার কোন অধিকার নেই। গ্রিফিথকে ডেকে বলল সে, ওকে থাকতে দিলে কেন? জান না মিস্টার হিগিন্স গোটা শহরটাই কিনে নিয়েছেন? অপরিচিত লোকজন মোটেও পছন্দ নয় তার।
আমার কি দোষ? ও-ই তো বলল, উইলসনের দিকে আঙুল তাক করল গ্রিফিথ।
কোনও রকম ঝামেলা চান না তিনি। ওকে তাড়িয়ে দিলে বা মারামারি করলে ঝামেলা বাড়ত বই কমত না, বলল উইলসন।
ব্যাপারটা ভাল ঠেকছে না আমার কাছে। জানতে হবে ব্যাটা কি চায়। কেন এসেছে এখানে। খেকিয়ে উঠল রজার।
শ্রাগ করল উইলসন। বলল, ওর রাইফেলটা শার্পশূটারদের। সেজন্যেই ভয় পাচ্ছ তুমি। ওকে তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছ।
গেলাসে লম্বা একটা চুমুক দিল রজার। উইলসনের দিকে তাকিয়ে বলল, দরকার হলে ওকে মেরে তাড়াব।
দরকার হবে না। কাল সকালেই চলে যাবে ও, বলল উইলসন।
বাইরে এসে ধীর পদক্ষেপে হাঁটতে লাগল লোকটি তুষারের ওপর দিয়ে। পাজরের ব্যথাটা হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কোটের ভিতর দস্তানাপরা হাতটা ঢোকাল সে। খানিকবাদে বার করে মেলে ধরল চোখের সামনে। যা সন্দেহ করেছিল তাই। রক্ত। কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে রইল সে। তারপর প্যান্টের লোমশ লেগিং-এ হাতটা মুছল। হাঁটা ধরল আবার।
বাঙ্কহাউসটা বেশ বড়সড়। একসাথে বিশ-পঁচিশজন লোক থাকতে পারবে। ছোট ছোট অনেকগুলো জানালা, মাথার ওপর টালির ছাদ। ভেতরটা ফাঁকা। লোকজন নেই। দু’ধারে সারি সারি খালি বাঙ্ক। ওপরে মাদুর নেই। কাঠের ফ্রেমে ম্প্রিঙের পরিবর্তে দড়ি লাগানো। সবচেয়ে কাছের বাঙ্কটাতে শরীর এলিয়ে দিল সে। অনেকক্ষণ কোনও নড়াচড়া নেই। পড়ে রইল চুপচাপ।
বেশ অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পর কাপড় ছাড়ার কথা মনে পড়ল তার। বিছানায় উঠে বসতে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ব্যথা উঠল বুকে। দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথাটা সহ্য করল সে।
ব্যথা কিছুটা কমে আসার পর গা থেকে কোটটা খুলে ফেলল। আরও কিছুক্ষণ চেষ্টার পর শার্টটাও খুলতে পারল। বুকের বাঁ দিকে বেশ বড়সড় একটা ব্যাণ্ডেজ। খানিকটা অংশ লাল হয়ে আছে।
আলতো হাতে ব্যাণ্ডেজটা স্পর্শ করল সে। রক্তে ভেজা জায়গাটা চটচটে আঠাল। মৃদু চাপ দিল সে, প্রচণ্ড ব্যথা। তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিয়ে সুতির গেঞ্জিটা টেনে দিল নিচের দিকে।
খানিকবাদে বেডরোল নিয়ে পিকো এল। তার পায়ের কাছে বেড়োলটা নামিয়ে রেখে বলল, তোমার ঘোড়াটা বেশ ভাল জাতের। মাসট্যাঙ, তাই না?
মাথা ঝাঁকাল সে। বলল, গ্রিফিথের কাছে আমার কিছু পয়সা জমা আছে। ওকে আমার কথা বললেই তোমাকে হুইস্কি দেবে।
পিকোর যেন বিশ্বাসই হয়নি কথাটা। চেয়ে রইল অবাক হয়ে।
কোটের পকেট থেকে একটা ডলার বার করে পিকোর হাতে দিল লোকটি। বলল, এটা দিয়ে হুইস্কি আর তামাক নিয়ে এস।
ছেলেটি ডলার হাতে দাঁড়িয়ে রইল। ওর দিকে চেয়ে বলল, তুমি অসুস্থ?
না, বলল লোকটি। যাও।
পিকো চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে উঠল লোকটি। বেডরোলটা বিছাল খাটের ওপরে। রাইফেলটা রাখল বিছানার এক পাশে। তারপর বুটসহই শুয়ে পড়ল বিছানায়।
শুয়ে থেকে হোলস্টার থেকে রিভলভারটা বার করে আনল সে। লোড করা আছে কিনা দেখে নিয়ে রেখে দিল আবার।
সিলিং-এর দিকে চেয়ে শুয়ে রইল সে। অপেক্ষা করছে পিকোর জন্যে। হুইস্কি আনতে গেছে ও। দু’এক ঢোক পেটে পড়লে ব্যথা হয়ত কমবে কিছুটা।
সকাল। তুষারপাত বন্ধ হয়েছে। বাঙ্ক হাউসের ছোট ছোট জানালাগুলো দিয়ে রোদ এসে পড়েছে ঘরের ভেতর।
এইমাত্র লোকটির ঘুম ভাঙল। চোখ মেলেই টের পেল তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে কয়েকজন-তিনজন। স্যালুনে কাল বিকেলে দেখেছে যাদের। অভ্যাসবশেই তার হাতটা চলে গেল হোলস্টারে। তবে সরিয়ে নিল দ্রুত, লোকগুলোর হাতে অস্ত্র নেই। নিজের বুকের দিকে চোখ গেল তার। শাটের বোতামগুলো খোলা। ওপর দিকে ওঠানো গেঞ্জিটা। বেরিয়ে পড়েছে ব্যাণ্ডেজ। কাজটা যে ওদেরই কারও বুঝতে পারল সে।
কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে রজার। বিছানার পায়ের কাছে উইলসন।
সারাদিনই ঘুমাবে নাকি? হেসে বলল উইলসন। জবাব দিল না লোকটি। তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে রজারকে। কোমরে গানফাইটারদের কায়দায় পিস্তল ঝুলানো। হঠাই সামনে ঝুঁকে পড়ল রজার। আঙুল দিয়ে খোঁচা মারল বাঁ দিকের পাজরে। এটা কি করে হল? প্রশ্ন করল সে।
কুঁকড়ে গেল লোকটি। তবে শব্দ করল না কোনও। হাতটা আবার চলে গেল রিভলভারের বাটে, আহ! এসব কি হচ্ছে? ব্যথা পাচ্ছে ও! উইলসনের কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ল।
পাক,বলল রজার। ঠোঁট চেটে ভেংচি কাটল সে। ওটা কিসের জখম? জিজ্ঞেস করল সে। জবাব না দিয়ে উঠে বসল লোকটি। কপালের ডান দিকে একটা শিরা লাফাচ্ছে। রিভলভারের বাটে আরও শক্ত হল আঙুলগুলো।
ব্যাপারটা লক্ষ্য করল উইলসন। শান্ত অথচ কঠিন গলায় বলল, ভুল কোরো না, স্ট্রেঞ্জার, আমরা তোমার সম্বন্ধে জানতে চাই। গোলমাল চাই না।
রিভলভারের বাট থেকে হাত সরে গেল।
আবার ঝুঁকল রজার। খোঁচা দেবার জন্যে হাত বাড়িয়ে বলল, গুলি খেয়েছ, তাই না?
আশ্চর্য ক্ষীপ্রতায়, লোকটি ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিল রজারের হাত। তারপর প্রায় অর্ধেকটা বার করে আনল রিভলভার। কিন্তু বোধহয় পরিস্থিতি অনুধাবন করেই থেমে গেল সেখানেই। কাজটুকুর দ্রুততা লক্ষ্য করে স্বগতোক্তি করল উইলসন, গানফাইটার!
প্রায় চেঁচিয়ে বলল রজার, ‘আমি জানতে চাই ও কে এবং এখানে কি চায়।’
রজার, তুমি সর। আমি দেখছি। রজারকে সরিয়ে দিয়ে কাছে এসে দাঁড়াল উইলসন। নরম গলায় বলল, কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও। তোমার নাম কি?
একে একে ওদের মুখের দিকে চাইল লোকটি। ভাঙা গলায় বলল, টেকন।
কোত্থেকে এসেছ?
দক্ষিণ•••নেভাদা থেকে।
‘জানি,’ উইলসন বলল। আমরা জানতে চাইছি তুমি সানশাইনে এসেছ কেন, কিভাবে?
টেকন ক্লান্ত গলায় বলল, আমার বিশ্রাম দরকার। শহরটা পেয়ে গেলাম..তাই এলাম এখানে।
বাজে কথা রাখ, দাঁত খিচিয়ে বলল রজার। টেকনের ক্ষতটা দেখাল সে। গুলি খেয়ে পালাচ্ছ তুমি। কারা তাড়া করছে?
ম্লান হেসে বলল টেকন, কেউ তাড়া করছে না।
বললেই হল? বিদ্রূপ ঝরে পড়ল রজারের কণ্ঠে। ভাল চাইলে সব খুলে বল।
‘সে অনেক কথা। পরে শুনো।’
‘এখনই শুনব। আমাদের হাতে সময় আছে।’ রজারের কথায় কান দিল না সে। ক্লান্ত ভাবে শুয়ে পড়ল।
রজার জবাবের জন্যে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করল। তারপর মুঠো পাকিয়ে এগিয়ে এল। বিদ্যুৎ বেগে উঠে বসল আহত লোকটা। উইলসন দ্রুত বাধা দিয়ে বলল, ওকে বিশ্রাম নিতে দাও। পরে সব শোনা যাবে। আমরা বরং নাস্তা সেরে আসি।
হাত ধরে টেনে রজারকে নিয়ে বেরিয়ে গেল উইলসন। ওরা চলে যাবার পরও বসে রইল টেকন। গেঞ্জিটা টেনে নামিয়ে শার্টের বোতামগুলো লাগাল। ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বলছে। তবু শীত করছে। হ্যাট পরে নিয়ে কোটটা গায়ে চাপাল সে।
এ সময় এল পিকো। দু’হাত ভর্তি চেলাকাঠ। ফায়ারপ্লেসের কাছে কাঠগুলো নামিয়ে রাখল সে। কয়েকটা টুকরো ফেলে দিল আগুনে। উসকে দিল আগুনটা। ফিরে এল টেকনের কাছে। এক গ্লাস হুইস্কি খাওয়াবে?
বাঙ্কের তলা থেকে হুইস্কির বোতল বার করে আনল টেকন। বেশ খানিকটা অবশিষ্ট আছে এখনও, ছিপি খুলে গলায় ঢালল খানিকটা, তারপর বোতলটা বাড়িয়ে দিল পিকোর দিকে।
কোটের পকেট থেকে চুরুট বার করে ধরাল টেকন। ওকে দেখছে পিকো।
লোকগুলো কারা? জিজ্ঞেস করল টেকন।
শ্রাগ করল পিকো, কেন?
দরকার আছে। ওরা এ শহরেই থাকে?
হ্যাঁ।
কি করে? শিকার না অন্য কিছু?
কিছু করে না।
কত দিন ধরে আছে? আবার শ্রাগ করল পিকো। অনেকদিন।
এক সপ্তাহ? এক মাস?
জানি না। অনেকদিন হবে।
লোকগুলো সারাদিন বসে থাকে?
হ্যাঁ। ওরা ভাল লোক না। আমাকে হুইস্কি খাওয়ায় না। শুনেছি কয়েকজকে খুন করেছে ওরা।
কেন? ওরা কি লুটপাট করে নাকি?
কে জানে? আমাকে এত কথা জিজ্ঞেস করছ কেন? তারপর সহসাই উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার চোখমুখ। আমাকে আরও হুইস্কি কিনে দেবে?
মৃদু হেসে বলল টেকন, পরে। এখন যাও।
পিকো চলে যাওয়ার পর কোটের পকেট থেকে একটা হরিণের চামড়ার ব্যাগ বার করল সে। উপুড় করে ঢালল বিছানায়। গুণে আবার রেখে দিল ব্যাগে। মাত্র আট ডলার। এ দিয়ে বেশিদিন চলবে না। ঝেড়ে ফেলল চিন্তাটা। ব্যাগটা ঢুকিয়ে রাখল কোটের পকেটে।
শহরটার কথা ঘুরছে তার মাথায়। এখানকার লোকগুলোর আচরণ বড় অদ্ভুত। কিছু একটা ঘটছে এখানে। তবে যাই ঘটুক নিজেকে এসবের সঙ্গে জড়াবে না সে। ওকে অসুস্থ দেখেও তাড়িয়ে দিতে চাইছে লোকগুলো। কিন্তু কারণটা কি?
রজারের কথা ভাবল সে। দাঙ্গাবাজ লোক। পশ্চিমের বিভিন্ন ক্যাম্পে, রেস্টুরেন্টে এ ধরনের লোক অনেক দেখেছে সে। শেষতক হয়ত খুনই করতে হবে ওকে। তবে রজার তো আর একা নয়, আরও অনেকে আছে তার সঙ্গে। অসুস্থ শরীরে বেশ কঠিন পরিস্থিতিতেই পড়েছে সে। ওরা চাইছে সে চলে যাক। কিন্তু এ মুহূর্তে যে তা সম্ভব নয় সেটা বুঝতে চাইছে না।
বাঙ্কহাউস থেকে বেরিয়ে স্যালুনে গিয়ে ঢুকল টেকন। কাল বিকেলের সবাই আছে আজও। কোণের দিকে একটা টেবিলে বসল সে। সবাই চেয়ে রয়েছে ওর দিকে।
কফি দেব? বারের পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল গ্রিফিথ।
দাও, বলে পকেট থেকে একটা চুরুট বার করে ধরাল। চুরুট ধরানোর ফাঁকে খেয়াল করল রজার লক্ষ্য করছে তাকে।
গ্রিফিথ কফি নিয়ে এলে টেকন জিজ্ঞেস করল, কি নাস্তা আছে?
শিম আর বেকন, যেটা খুশি খেতে পার, জানাল গ্রিফিথ।
ডিম হবে?
গ্রিফিথ জোরে হেসে উঠে অন্যদের ডেকে বলল, শুনেছ? ও ডিম চাইছে!
ওকে পেড়ে নিতে বল, বলল রজার। চুপ করে রইল টেকন। ব্যথা করছে। পাজর। গোটা দুয়েক হাড় ভেঙেছে। তবে জখমটা আরও মারাত্মক হতে পারত। ইঞ্চি খানেক নিচ দিয়ে গেলেই ফুটো হয়ে যেত ফুসফুস;
গ্রিফিথ খাবার দিয়ে গেল, খানিক বাদে। শিম আর বেকন ভাজা। খেতে শুরু করল সে। এসময় উঠে এল উইলসন। কফির কাপ হাতে দাঁড়াল সামনে, বসতে পারি? জিজ্ঞেস করল সে।
ঘাড় নেড়ে সায় দিল টেকন। দীর্ঘক্ষণ বসে রইল উইলসন। টেকন খেয়েই চলেছে। শেষমেশ জিজ্ঞেস করল, নাস্তা সেরেই চলে যাচ্ছ তো?
না।
সামান্য হাসল উইলসন। তারপর মাথা নেড়ে বলল, এখানে থেকে কি করবে? এখানে আছেটা কি?
টেকন বলল, সে তো তোমাদের জানার কথা। আমার দরকার বিশ্রাম।
ছ, তোমার জখমটা•••, কথা শেষ না করেই অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল উইলসন। রাইফেলটা দেখিয়ে বলল, দারুণ জিনিস। সবখানে নিয়ে যাও?
মাথা ঝাঁকাল টেকন। তার খাওয়া প্রায় শেষ। প্রথম থেকেই লক্ষ্য করছে সে, যে কোনও কারণেই হোক উইলসন খুব ভাল ব্যবহার করছে তার সাথে। কারণটা হয়ত জানা যাবে শিগগিরই। আন্দাজ করল সে।
তুমি তো শিকারী। কি ধরনের?
জবাব দিতে একটু সময় নিল টেকন। বলল, কন্ট্রাক্ট। কন্ট্রাক্টের ভিত্তিতে রেল রাস্তার হয়ে শিকার করে দিতাম।
রেল রাস্তা? অবাক মনে হল উইলসনকে। একবার চাইল টেবিলে বসা লোকগুলোর দিকে। মনোযোগ দিয়ে শুনছে ওরা। সে তো অনেক দূরে! বলল সে।
এখন এগিয়ে এসেছে, বলল টেকন। আধপোড়া চুরুটটা ঠোঁটে গুজল সে। ওটা জ্বালানোর আগেই শার্টের পকেট থেকে একটা আনকোরা চুরুট বার করল উইলসন। ছুঁড়ে দিল ওর দিকে।
সময় নিয়ে চুরুটটা ধরাল টেকন। তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল, ‘ধন্যবাদ।’
কাজটা ছাড়লে কেন? শুনেছি ও কাজে ভাল পয়সা আছে, বলল উইলসন।
ছাড়িনি। ওরাই ছাড়িয়ে দিয়েছে, শান্ত স্বরে বলল টেকন।
ওর জখমের দিকে দেখিয়ে জানতে চাইল উইলসন। কারও সাথে গোলমাল করেছিলে?
বড় বেশি প্রশ্ন করছে উইলসন, তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে চাইছে। ভেতর ভেতর অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে সে। কিন্তু প্রকাশ না করে ঠাণ্ডা গলায় বলল, ওটা ফেয়ার ফাইট ছিল। পুরানো এক শত্রুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ওকে খুন না করে উপায় ছিল না।
শব্দ করে হাসল উইলসন। সেই লোকও যে শক্ত চিজ ছিল তা তোমার জখম দেখেই বুঝতে পারছি।
চুরুটটা নিভিয়ে ফেলল টেকন। উইলসনকে বলল, এবার আমার কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও। তোমরা আমাকে তাড়াতে চাইছ কেন?
স্থির চোখে টেকনকে দেখল উইলসন। আমাদের ধারণা কোনও ল অফিসার চলে আসবে এখানে। তোমাকে ফলো করে। তখন বিপদে পড়ে যাব আমরা। এবার বুঝেছ, কেন আমরা তোমাকে চাইছি না?
‘আগেই বলেছি আমাকে কেউ ফলো করছে না। আমি ওয়ানটেড নই।’
ঠোঁটে চুরুট গুঁজে হাসল উইলসন। তোমার অবস্থায় পড়লে একই কথা বলতাম আমিও, কিন্তু আমরা ওয়ানটেড, লোক। আমাদের চিন্তার কারণটা বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই?
টেকন উইলসন এবং অন্যদের দেখে নিয়ে বলল, আইন খুঁজলে তোমাদেরই খুঁজবে। আমাকে নয়। আমার জন্যে তোমাদের ভয় না পেলেও চলবে।
তারপরও কথা থাকে, বলল উইলসন।
টেকন খানিক চুপ করে থেকে বলল, ঠিক আছে, এই স্যালুন ছেড়ে দেব আমি। রাস্তার ওপারে যে বাড়িটা আছে সেটায় চলে যাব।
অন্য টেবিল থেকে হেসে উঠল রজার। দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করল উইলসন। বলল, তাতেও লাভ নেই। গোটা শহরটাই আমাদের। বলতে পার এটা আমাদের হেডকোয়ার্টার। বাইরের লোককে চাই না আমরা।
সে তো দেখতেই পাচ্ছি, ক্লান্ত স্বরে বলল টেকন।
তাহলে যাচ্ছ তুমি?
হ্যাঁ, বলল টেকন। যাচ্ছি। বারের দিকে ধীর পায়ে এগোল সে। একটা বোতল দাও, এক বোতল দেশী হুইস্কি দেখাল সে গ্রিফিথকে।
দেড় ডলার, বোতলটা বারের ওপর নামিয়ে রেখে বলল গ্রিফিথ।
পকেট থেকে চামড়ার ব্যাগটা বার করল টেকন। ছয় ডলার গুনে ধরিয়ে দিল গ্রিফিথের হাতে। মদ এবং নাস্তার জন্যে দেড় ডলার, বাকিটা আমার আর ঘোড়াটার তিনদিনের খরচ। বোতলটা তুলে নিয়ে রাইফেলটা কাঁধে ঝোলাল টেকন। বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
ও বেরিয়ে যেতেই অন্যলোকগুলোর দিকে চেয়ে অসহায় ভঙ্গিতে ত্যাগ করল উইলসন। ভাবটা এমন যেন ওর আর কিছু করার নেই।
বাইরে এসে চারদিকটা দেখার জন্যে থামল টেকন। বুক ভরে নিল টাটকা বাতাস। আকাশ এখন অনেকখানি নীল। ঝলমল করছে সূর্য।
রাস্তার ওপাশের বাড়িগুলোর দিকে তাকাল সে। একটা বাড়ির চিমনি দিয়ে ধোয়া বেরোচ্ছে। বাড়িটার দরজায় চোখ পড়তেই দেখতে পেল দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক তরুণী। সুন্দরী। তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। মাত্র কয়টি মুহূর্ত। তারপরই দ্রুত ভিতরে চলে গেল মেয়েটি। কিন্তু ওই নীরব ক’টি মুহূর্ত দু’জোড়া চোখ পরস্পরকে দেখে নিল প্রাণভরে।
<