সেলুনে ঢুকে দরজার একপাশে সরে দাঁড়াল স্যামুয়েল ব্রুকস। বাইরের উজ্জ্বল সকালের তুলনায় ভেতরের আলোকে অন্ধকারই বলা চলে। চোখ সয়ে আসার আগে সিগারেট আর সস্তা হুইস্কির কড়া গন্ধ লাগল নাকে। দম ছেড়ে ধীরে শ্বাস নিল, ইতোমধ্যে দেখে নিয়েছে ভেতরটা। একপাশে, উঁচু বারের ওপাশে ডাস্টি ফগের বিশাল চর্বিবহুল শরীর, বার মোছায় ব্যস্ত হাতদুটো থেমে গেছে। ছড়ানোছিটানো টেবিলগুলোর বেশিরভাগই খালি। এককোণে একটা টেবিল দখল করেছে ওরা। ম্যাট লোগানকে একনজরেই চিনতে পারল ব্রুকস, মুখের লম্বা দাগটা তার পরিচয় দিচ্ছে। দরজার দিকে পিঠ দিয়ে বসা বিশালদেহী লোকটা জেফরি করবেট। তৃতীয় লোকটিকে চিনতে পারল না। আরেক কোণে ভিন্ন একটা টেবিলে দুজন পাঞ্চার বসেছে, ডাবল-এসের শটি হারপার আর টমাস ক্যারি। ওদের দিকে নজর দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলল ব্রুকস, নিতান্তই নিরীহ লোক।
ডাস্টি, যতক্ষণ আমি এখানে আছি তোমার হাত দুটো সামলে রেখো, বারকিপারের হাত বারের ওপর থেকে সরে যেতে উদ্যত হতে গর্জে উঠল ব্রুকস। ভাল হয় যদি ওগুলো ওভাবেই থাকে। চালাকির চেষ্টা কোরো না, পস্তাবে। ওর চোখ তিনজনের ওপর, উল্টোদিকের দেয়ালে লাগানো আয়নায় ডাস্টির সন্ত্রস্ত মুখটা দেখল একবার।
মুখ ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল বার-পি ফোরম্যান, চোখে খানিকটা বিস্ময়। বিমূঢ় ভাব কাটিয়ে ওঠার আগেই টেবিলের কাছে চলে এল ব্রুকস। ম্যাট লোগানের ওপর স্থির হলো ওর দৃষ্টি। বাড়ি ছেড়ে অনেক দূর চলে এসেছ, লোগান। টাকার খুব টানাটানি যাচ্ছে।
নির্বিকার মুখে ওকে দেখছে বন্দুকবাজ। অন্য লোকটা গ্লাসে হুইস্কি ঢালতে যাচ্ছিল, হাতে এখনও বোতল ধরা। শূন্য আরেকটা বোতল রয়েছে টেবিলে। বোঝা যাচ্ছে ভালই উদ্যাপন করছিল ওরা।
খেতে পারো, উদার কষ্ঠে ঘোষণা দিল ব্রুকস। কিন্তু ভুলেও টেবিল থেকে হাত সরিয়ে না কেউ। করবেটকে দেখল, বোকা বোকা দেখাচ্ছে। ওকে এভাবে আশা করেনি বোধহয়। পাশে এসে দাড়িয়ে টেবিল থেকে শূন্য বোতলটা তুলে নিল। হঠাৎ আয়নায় ডাস্টি ফগের নড়াচড়া ধরা পড়ল চোখে, বারের নিচে নেমে যাচ্ছে ওর ডানহাত। মরার খায়েশ হলো নাকি তোমার, ডাস্টি? হেসে ধমকে উঠল ব্রুকস, ধরা পড়ে গাওয়ায় তোকটার থমকে যাওয়া উপভোগ করছে। বের করো শটগানটা, কিংখা তোমার বাচ্চাগুলোর কথা ভাবো একবার। ওরা এতিম হয়ে গেলে কোন গবে? আরে এপাশে এসে দাঁড়াও, খালি হাতে এবং কাধের ওপর হাত তুলে রাখবে…মাথা খাটাও, ভাবাতে থাকে তুমি থাকলে বাচ্চাগুলো আর তোমার বউয়ের কি উপায় হবে।
সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দেরি করল না ডাস্টি ফগ।
এমিলিওকে খুন করেছে কে, কবেই, তুমি?
বার-পি ফোরম্যান চুপ করে থাকল, ঘামতে শুরু করেছে
ওর গ্লাসটা ভরে দাও, লাগানের সঙ্গীর উদ্দেশে বলল ব্রুকস। ঝটপট খেয়ে নাও, জেফরি। আমার সাথে কথা বলতে বোধহয় তোমার সাহসে কুলাচ্ছে না। দুই ঢোক খেলে সাহস বাড়বে।
ঠায় বসে থাকল করবেট, হুইস্কি গেলার আগ্রহ দেখা গেল না তার মধ্যে।
এমিলিওর হাতের কাজটা বোধহয় তোমার, তাই না? বলে বোতলটা নামিয়ে আনল ব্রুকস, টেবিলের কিনারায় লেগে ভেঙে গেল। বোতলের মুখের অংশটা ওর হাতে ধরা। ফোরম্যানের মেলে দেয়া হাতের পাঞ্জার ওপর এবার আচমকা ওটা নামিয়ে আনল। তীক্ষ্ণ চিৎকার বেরিয়ে এল করবেটের কণ্ঠ চিরে, দশাসই দেহ কেঁপে উঠল। হাত সরিয়ো না, জেফরি, তাহলে কিন্তু মনে করব ড্র করতে যাচ্ছ তুমি। ওর শীতল নির্দেশ কাঁপিয়ে দিল লোকটাকে। এমিলিও ছিল, দুর্বল একজন বুড়োমানুষ। ওকে বাধা দেয়ার সুযোগও বোধহয় দাওনি তুমি। ওকে যখন মারছিলে একটা পিস্তল নিশ্চয় ধরা ছিল ওর বুকের দিকে?
এবারও কোন উত্তর দিল না করবেট, যন্ত্রণায় কাতর। বোতলটা পুনরায় চালাল ব্রুকস, আগের চেয়ে জোরে। দ্বিতীয়বারের মত আর্তনাদ করে উঠল র্যামরড। আড়চোখে অন্যদের দেখল ব্রুকস-ললাগান পাথর হয়ে আছে আর ওর সঙ্গী ছটফট করছে। ওদিকে করবেটের সারা শরীর কাঁপছে, কপালে ঘাম। বোকার মত চেয়ে আছে হাতের দিকে। উপচে পড়া রক্তে টেবিল সয়লাব।
তোমার কাছে বাড পারকারের জীবনের এতই দাম, এমিলিওর কোন মূল্য নেই? মরার আগে একটা সুযোগও পেল না হতভাগ্য লোকটা। অথচ কোন অন্যায় করেনি ও, তা তোমার চেয়ে ভাল আর কে জানবে! ফের হাত চালাল ও, ঝড়ের গতিতে নেমে এল বোতলটা। ব্যথায় নীল হয়ে গেছে করবেটের মুখ, কপাল থেকে ঘাম ঝরছে টপটপ করে।
ভাঙা বোতল ছেড়ে অন্যটা তুলে নিল ব্রুকস, ছিপি খুলে ফোরম্যানের রক্তাক্ত হাতের ওপর হুইস্কি ঢালতে শুরু করল। ঘায়ের ওপর লবণের ছিটা পড়েছে যেন, তীব্র জ্বলুনি শুরু হতে দুহাত, শরীর শক্ত হয়ে গেল করবেটের, দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা আর জ্বলুনি সহ্য করার চেষ্টা করছে।
পেছনে সরে এসে বারের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল ও। কাগজ-তামাক বের করে সিগারেট রোল করতে শুরু করল। জেফরি করবেট, আমি এখানে এসেছিলাম শান্তিতে থাকতে। ভেবেছি আর কখনও অস্ত্র ধরব না, কিন্তু তোমরা আমাকে বাধ্য করেছ। পারকারদের শেষ লোকটা বেঁচে থাকা পর্যন্ত থামব না আমি, তার আগেই যদি আমাকে থামাতে না পারো।
একটা সুযোগ দিচ্ছি তোমাদের, লোগান। নিজের ঘরে ফিরে যাও। রোজগারের হাজারটা ফিকির তোমার জানা আছে, এখানকার আশা বাদ দিয়ে তারই একটা চেষ্টা কোরো। সাথে তোমার বন্ধুকেও নিয়ে যাও। দয়া করে ভুলেও এখানে থাকার চিন্তা মাথায় এনো না। পরেরবার আমি হয়তো এমনিতে ছেড়ে দেব না।
তুমি একা, বন্ধু, ম্যাট লোগানের মুখে হাসি দেখা গেল। সে ভাল করে জানে যতক্ষণ পর্যন্ত নিজে পিস্তলে হাত না দিচ্ছে স্যামুয়েল ব্রুকসের তরফ থেকে বিপদের আশঙ্কা নেই। সবসময় এরকম অপ্রস্তুত অবস্থায় পাবে না আমাদের। বরং কয়েকজনে মিলে ঠিকই কোণঠাসা করে ফেলব তোমাকে।
ঠিক এটাই ভাবছিলাম, হেসে উঠল ব্রুকস। জানতাম আমার কথা তোমাদের ভাল লাগবে না। দল বেঁধে কাউকে শিকার করা সত্যি সহজ ব্যাপার সে যত টাফ লোকই হোক, তাই না? আরও সহজ যদি পেছন থেকে গুলি করা যায়। চেষ্টা করে দেখবে নাকি? যদ্দূর জানি এতে তোমাদের আপত্তি নেই।
হিংস্র চাহনি বন্দুকবাজের চোখে, পরে সেটা ঘূণায় রূপ নিল। তুমি টিকতে পারবে না, বন্ধু, সামলে নিয়ে বলল সে, তারচেয়ে এখান থেকে বেরিয়েই স্যাডলে চেপে ছুটতে থাকো, একবারও পেছনে তাকিয়ো না। টেক্সাস বা মেক্সিকোর দিকে গেলে বেঁচে যাবে। সেখানে একবার পৌঁছাতে পারলে নিরাপদ।
আমি থাকছি, লোগান। ব্যাজঅলা কেউ আমার পেছনে ছুটছে না যে টেক্সাস বা মেক্সিকো পাড়ি দিতে হবে।
শ্রাগ করল লোগান, উঠে দাঁড়াল। ভাবখানা যেন বেরিয়ে যাবে। পেছনে ঠেলে দিল চেয়ার, আড়চোখে দেখল সঙ্গীকে। তারপর দৃষ্টি রাখল ব্রুকসের হাতে ধরা সিগারেটের ওপর, ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠোঁটে লাগিয়ে টানতে শুরু করেছে ঠিক এসময়ে বিদ্যুৎ খেলে গেল ওর হাতে। অন্য লোকটাও কোমরে হাত বাড়িয়েছে।
ম্যাট লোগানের চোখে উল্লাস, কিন্তু সেটার স্থায়িত্ব হলো সেকেন্ডেরও কম সময়। হতবাক হয়ে দেখল ভোজবাজির মত ব্রুকসের হাতে উঠে এসেছে জোড়া পিস্তল। আগুন ঝরল। লোগানের মনে হলো দুটো গজাল ঢুকে পড়েছে বুকে। চেয়ারের ওপর ছিটকে পড়ল প্রথমে, তারপর চেয়ারসমেত হুড়মুড় করে পেছনে ঢলে পড়ল তার শরীর।
অন্য লোকটা সবে পিস্তল বের করেছে, ওর কপালে টিপ পরিয়ে দিল ব্রুকস। বুক ফুটো করল, পরের গুলিতে। ধীরে হাঁটু ভেঙে পড়ল লোগানের সঙ্গী, পড়ার সময় থুতনির ধাক্কায় ভারসাম্য হারাল টেবিলটা, শেষে কাত হয়ে পড়ল তারই ওপর।
নিথর দেহগুলোর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ব্রুকস। আরও দুটো লাশ, এ নিয়ে চার হলো। সংখ্যাটা কেবল বাড়তে থাকবে যদ্দিন না ও নিজে মারা যায় কিংবা পারকারদের খায়েশ মেটে।
অবিশ্বাসের সাথে লাশগুলো দেখছে জেফরি করবেট, ব্যথা ভুলে তাকিয়ে আছে। পিস্তল রিলোড় করে হোলস্টারে ফেরত পাঠাল ব্রুকস, ফোরম্যানের সামনে এসে দাঁড়াতে কাপতে লাগল বিশাল কাঠামো। ভয়ে সিটিয়ে গেছে, চোখে নগ্ন আতঙ্ক। বিশ্বাস করো, আ…আমি খুন করিনি এমিলিওকে! মিনতি ফুটে উঠল করবেটের কণ্ঠে। ওই লোগানই ওকে খুন করেছে। আমি শুধু একটু পিটিয়েছি।
ঠোঁট থেকে সিগারেট সরিয়ে ছাই ঝাড়ল ব্রুকস, ফের টান দিল। ম্যাট লোগান তো কিছু বলতে পারবে না। আমিই বলছি; জেফরি, তুমি একটা মিথুক! সিগারেট ফেলে বুটের তলায় পিষল ও করবেটের পেছনে এসে হোলস্টার থেকে তুলে নিল তার পিস্তল। সিলিন্ডার খালি করে বাঁট নামিয়ে আনল করবেটের চাদিতে। আলগোছে ঢলে পড়ল বিশাল দেহটা। পিস্তল পাশে ছুঁড়ে ফেলে বারটেন্ডারের দিকে ফিরল ও। আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে ডাস্টি, চোখে ভয়। ভ্রুকুটি করতে আতঙ্ক ফুটে উঠল চোখে, পিছিয়ে গেল দুপা। বারের সাথে ঠেকে গেছে পিঠ।
সেলুন থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ ধরে দক্ষিণে এগোল ব্রুকস। উল্টোদিকের দোকানের পোর্চে ভিড় করেছে কয়েকজন। তাদের ওপর একবার দৃষ্টি বুলাল ও, মুঠোভরা বুলেটগুলো ছুঁড়ে ফেলল রাস্তায়।
স্টোরের পোর্চে দাঁড়িয়ে ছিল উইলিয়াম লকহার্ট। সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিতে দেখছে ব্রুকসকে। গুলির শব্দ শুনেছে সে, তারপর ওকে বহাল তবিয়তে বেরোতে দেখে আঁচ করতে পারছে অবিশ্বাস্য ব্যাপারটা। ম্যাট লোগান অ্যারিজোনার সেরা গানশ্লিংগার, তারওপর অন্য লোকটা আর জেফরি করবেট তো ছিলই…অন্তত তিনজনকে সামলাতে হয়েছে, ভাবছে স্টোর মালিক, কিভাবে সম্ভব হলো?
রোয়ানের কাছে এসে লকহার্টকে এক ঝলক দেখল ব্রুকস, স্যাডলে চড়ে বসল। আমার একজন উকিলের দরকার। পারকারের চামচা নয় এমন কেউ আছে?
বিল কারভারের কাছে যেতে পারো। সৎ লোক। ও-মাথায় রাস্তার পশ্চিমে দোতলায় ওর অফিস। পেছনের বাড়িটায় থাকে সে। অফিসে না পেলে বাড়িটাতে খোজ কোরো।
লাগাম ঢিলে করতে ধীরে এগোেল রোয়ানটা। পেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্রুকস খেয়াল করল প্যালেস-এর সামনের ভিড় বেড়েছে। নিশ্চল দাড়িয়ে থেকে ওকে দেখছে লোকগুলো।
অসম একটা লড়াই শুরু হলো, ভাবছে ও। ম্যাট ললাগান ঠিকই বলেছে, শেষপর্যন্ত টিকে থাকার সম্ভাবনা ওর একেবারে নেই। ঠিক এ জন্যেই ব্রুকস চায়
মরগান পিকসের ওই জায়গা পারকার বা ওরকম কারও হাতে পড়ক। অনেক ঘাম ঝরিয়ে জমিটাকে আজকের অবস্থায় নিয়ে আসতে হয়েছে। অনাহূত কেউ এর ফল ভোগ করলে ওর সব পরিশ্রম বৃথা যাবে। নিজের কোন নিকটজন নেই, থাকলেও চেনে না। এমিলিওর ব্যাপারটাও সেরকম। সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রথম যে নামটা মাথায় এল তাতে চমকে উঠল ব্রুকস, কিন্তু একটু পরে সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলল।
ঘণ্টাখানেক পর বিল কারভারের অফিস থেকে বেরিয়ে স্যাডলে চাপল ও। কাজটা কি ভাল হলো? ভাবছে, এমিলিও বেঁচে থাকলে চিন্তা করতে হত না। এখন ওর সবকিছুর উত্তরাধিকারী ওই একজনই। এটা একটা চমক হবে। ক্ষমা প্রার্থনা করে একটা চিঠি লিখেছে, ওর মৃত্যুর পরই কেবল সেটা ভোলা হবে।
বাথানে ফিরে ঘোড়ার পরিচর্যা শেষে রান্না করল। খাওয়া সেরে অনুশীলন করল কিছুক্ষণ। সজি বাগানের কাছে চলে এল এরপর। তৃণভূমিতে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে গরুগুলো, সার্কেল-এফের কয়েকটা গরুও আছে সাথে। ফ্রি রেঞ্জ বলে এটা হবেই।
ব্রুকসের মনে হচ্ছে আগের জীবনে ফিরে গেছে, কেবল বিরামহীন চলাটা ছাড়া। সেই উদ্বেগ, সারাক্ষণ সতর্কতা আর বিপদের আশঙ্কা। মোটেও আফসোস নেই ওর। বরং এটাই ওকে শান্ত, সুস্থির রেখেছে। বাফেলো টাউনে যা ঘটল তা শুরুমাত্র, এরচেয়েও কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। জুলিয়াস পারকারকে একটা নাড়া দেয়া গেছে, এবার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে বুড়ো। জেফরি করবেট আজ ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু লোকটার ধাত ভাল করে জানে ব্রুকস। সুযোগ পেলে পেছন থেকে গুলি করতেও দ্বিধা করবে না বার-পি ফোরম্যান।
শুধু লোক ভাড়া করেনি, টাফ লোকই জোগাড় করেছে বার-পি। নগণ্য এক স্যামুয়েল ব্রুকসকে শায়েস্তা করতে ম্যাট লোগানের মত বন্দুকবাজের প্রয়োজন হয় না। করবেট ওকে দেখে এত ভয় পেল কেন? এর ব্যাখ্যা একটাই-ওরা জানে কার সাথে লড়তে হবে। কি করে জানল? যেভাবে হোক, ভাবল ব্রুকস, টের পেয়েছে, এটাই হচ্ছে মূল ব্যাপার। ম্যাট লোগানের ব্যর্থতা সতর্ক করে দেবে ওদের। আরও টাফ লোক আনার চেষ্টা করবে এবার। নাকি ইতোমধ্যে এসে গেছে? সবাই লোগানের মত নয়, একই ভুলও বারবার করবে না। ওর কপালে সত্যি খারাবি আছে।
বিকেলে তৃণভূমিতে দুজন ঘোড়সওয়ারকে দেখতে পেল ব্রুকস, শহরের দিক থেকে আসছে। ওদের পরিচয় আন্দাজ করতে পারছে। কেবিনে গিয়ে চুলোতে পানি চড়িয়ে পোর্চে এসে অপেক্ষায় থাকল। কাছে আসার পর চিনতে পারল আগন্তুকদের, মার্শাল আর তার ডেপুটি।
দশ হাত দূরে এসে থামল ওরা। স্যাডল ছেড়ে হিচিং রেইলে ঘোড়ার লাগাম বাঁধল জ্যাক হবস।
ভেতরে এসো, জ্যাক, কফি আছে। আমন্ত্রণ জানাল ব্রুকস।
গাঁট হয়ে স্যাডলে বসে আছে টিম ম্যাসন, রোষ মাখানো দৃষ্টিতে দেখছে ওকে।
কি হলো তোমার, নামছ না কেন? ভেতরে ঢুকতে উদ্যত হয়েছিল মার্শাল, ফিরে খেঁকিয়ে উঠল ডেপুটির উদ্দেশে। নাকি ধরেই নিয়েছ ফ্ল্যাগানদের মত উপাদেয় হবে না ওর কফি?
দেখার মত প্রতিক্রিয়া হলো ম্যাসনের। রক্তশূন্য ফ্যাকাসে মুখ স্বাভাবিক হতে সময় লাগল। ধীরে স্যাডল ছাড়ল সে, বিড়বিড় করে বলল কি যেন। ঘোড়ার রাশ বেঁধে কেবিনে ঢুকল। খাবার ঘরে একটা চেয়ারে জাকিয়ে বসেছে মার্শাল, আর চুলোর কাছে কফির আয়োজনে ব্যস্ত ব্রুকস।
তোমার সাথে কথা বলতে এলাম, হালকা সুরে বলল হবস। কিছু ব্যাপার খোলসা হওয়া দরকার।
কফির মগ হাতে ওদের সাথে যোগ দিল ব্রুকস। সিগারেট অফার করল।
তোমার কাজ-কারবার ধাধার মত লাগছে, স্যাম, গরম কফিতে চুমুক দিয়ে বলল মার্শাল। দুদিন আগেও যে লোক নিরস্ত্র থাকত, হঠাৎ করে কোমরে পিস্তল ঝুলিয়েছে সে। অনায়াসে ধরাশায়ী করে ফেলল ম্যাট লোগানের মত দুজন টাফ লোককে। তারও আগে থেকে, এখানকার লোকেরা সবচেয়ে কম জানে তোমার সম্পর্কেআমিও। নিজের সম্পর্কে কিছু বললানি তুমি। কোথেকে এসেছ এটাও পরিষ্কার জানে না কেউ।
নীরবে মার্শালকে দেখল ব্রুকস, ধীরে ধোয়া ছাড়ল। দেখো, জ্যাক, আমি কথা কম বলি সেটা তো কোন সমস্যা নয়। কারও সাতে-পাঁচে নেই এবং তোমার পোস্টারগুলোয় আমার ছবি পাবে না, এটাই হচ্ছে বড় কথা।
সেটাই তো চিন্তার বিষয়! পিস্তলগুলো দেখে মনে হচ্ছে ভাল চালাতে জানো, না খুব ভাল…নইলে ম্যাট লোগান মারা পড়ত না। এত ভাল একজন বন্দুকবাজকে চিনি না এটাই আমার মাথা-ব্যথার কারণ।
চুপ করে থাকল ও।
ম্যাট লোগানকে খুন করলে কেন?
আত্মরক্ষা করা কি খুন?
ওদের কেউ একটা গুলিও ছুঁড়তে পারেনি।
উল্টোটা হলে কি তুমি খুশি হতে, জ্যাক? ওরাই আমার আগে পিস্তল বের। করেছিল।
ডাস্টি কিন্তু এ কথা বলেনি। ও বলেছে হঠাৎ অস্ত্র বের করে গুলি শুরু করেছ তুমি.। একটা যুক্তিও দেখিয়েছে ও, আগে পিস্তলে হাত না দিলে লোগানের মত লোক তোমার হাতে খুন হবে না।
ডাস্টি ফগ একটা মিথুক! সেলুনে ডাবল-এসের দুজন পাঞ্চার ছিল, শর্টি আর টম। ওদের সাথে কথা বললে ভিন্ন কিছু শুনতে পাবে।
আমাদের ঠেকা পড়েছে? ফোড়ন কাটল ম্যাসন।
শীতল দৃষ্টিতে ডেপুটিকে দেখল ব্রুকস, যুবকের উদ্ধত আচরণ পছন্দ করতে পারছে না।
এখানে টিকতে পারবে না তুমি, স্যাম, খেই ধরল মার্শাল। সম্ভাবনা একেবারেই কম। পারকারদের সাথে সমানে-সমান লড়ার শক্তি তোমার নেই। তারচেয়ে, জমিটা বেচে দিয়ে কেটে পড়ো। তুমি থাকলেই ঝামেলা বাড়বে, আমাদের সমস্যা হবে।
ঝামেলা সামাল দেয়াই তোমাদের কাজ, জ্যাক।…সবকিছুর শুরু পারকাররাই করেছে। মিস্ ফ্ল্যাগানকে উত্ত্যক্ত করছিল ছেলেটা, আমি তাতে বাধা দিয়েছি। তুমি হলেও তাই করতে। এরপর বাড নিজে আগ বাড়িয়ে এসেছে আমাকে শায়েস্তা করতে। পরেরবার জেফরি করবেটসহ চারজন এসেছিল। আমি নিরস্ত্র ছিলাম, তারপরও ড্র করেছিল বাড়। আমার সৌভাগ্য রাইফেল হাতে জানালায় বসে ছিল এমিলিও। পারকারদের পক্ষ থেকে এমন কাপুরুষােচিত আচরণ আশা করিনি আমি, অথচ তা ঠিকই টের পেয়েছে এমিলিও।
নিজের জীবনের বিনিময়ে আমাকে বাঁচানোর খেসারৎ দিয়েছে ও। গতকাল ওকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল করবেট, ওর শরীরে ইচ্ছেমত হাতের কারসাজি দেখিয়েছে। কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে এরপর নির্দয়ভাবে খুন করেছে। একটা সুযোগ কি ওর পাওয়া উচিত ছিল না?
আত্মরক্ষা করা কি দোষের, তোমার আইন কি বলে, জ্যাক? বারবার মার দেবে ওরা, আর চুপ করে থেকে দেখব কেবল? ম্যাট লোগানকে আমি চলে যেতে বলেছিলাম, সুযোগটা ও নেয়নি।
এরকম আর কোন ঘটনা বরদাস্ত করব না আমি, কঠিন শোনাল মার্শালের কণ্ঠ। পিস্তলবাজি করতে হলে শহরের বাইরে করবে।
আমি যা করেছি, সবই বাধ্য হয়ে। ওরা কিছু না করলে আমিও ভাল মানুষ।
আমার শহরে তুমিই শুরু করেছ। ওরা তোমার কাছে যায়নি, বরং তুমিই ওদের কাছে গিয়েছিলে।
করবেটকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম ও এমিলিওকে খুন করেছে কি-না। তবে তৈরি ছিলাম কেউ যাতে আগের মত নিশ্চিন্তে গুলি করতে না পারে। পার্থক্যটা এখানেই। ওরা ড্র করায় আমাকে পিস্তল ব্যবহার করতে হয়েছে।
কিন্তু পিস্তলের মুখে করবেটকে বোতল দিয়ে পিটিয়েছ তুমি, যোগ করল ম্যাসন। ডাস্টি কসম খেয়ে বলেছে।
বুঝতে পারছি না ডাষ্টি নাকি পারকারদের সাথে তোমার খাতির বেশি, কাটা কাটা স্বরে ডেপুটির উদ্দেশে বলল ব্রুকস। ডাস্টি এটা নিশ্চয়ই বলেনি যে আমি সেলুনে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শটগান বের করতে চেয়েছিল ও? জ্যাক হবস, মার্শালের দিকে ফিরল ও। তোমার ডেপুটিকে একটা অপদার্থ মনে হচ্ছে। তদন্তের আগেই একজন বারকিপারের কথাকে যে ধ্রুবসত্য হিসেবে ধরে নেয়, তাকে এছাড়া অন্য কিছু ভাবা বোধহয় ঠিক হবে না।
বিতৃষ্ণার সাথে ডেপুটিকে দেখল হবস। দয়া করে চুপ করে থাকো, টিম।
ওরা তিনজন ছিল, ম্যাসন, ব্যাখ্যা দিল ব্রুকস। কারও দিকে পিস্তল ধরিনি আমি, আসলে ওখানে কোন শো-ডাউন হবে এটাই আশা করিনি। তিনজনের বিরুদ্ধে একা লড়তে যাব কোন্ দুঃখে? টেবিল থেকে হাত সরাতে নিষেধ করেছিলাম কেউ যাতে আমার অজান্তে পিস্তলে হাত দিতে না পারে। কিন্তু লোগান আমাকে বাধ্য করেছে। ওদের আগে গুলি করতে পেরেছি বলে বেঁচে আছি, নইলে আমার রক্তই ডাস্টিকে মেঝে থেকে পরিষ্কার করতে হত এবং ও তা করত আনন্দের সাথে।
ব্রুকস থেমে যেতে নীরবতা নেমে এল। জ্যাক হবস ভাবছে কি যেন, নিরাসক্ত দৃষ্টিতে জানালাপথে প্রেইরি দেখছে ডেপুটি। বোঝা যাচ্ছে ব্রুকসের ব্যাখ্যা তার মনে ধরেনি।
তুমি কে, ব্রুকস? মার্শালের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বিদ্ধ করল ওকে। সাধারণ কেউ ম্যাট লোগানের মত লোককে ধরাশায়ী করে ফেলবে এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বোলো না। পিস্তলের ব্যবহার তুমি ওদের চেয়ে ঢের ভাল জানেনা।
সহাস্যে মার্শালের দিকে তাকিয়ে থাকল ও।
কপালটাই মন্দ আমার, হাল ছেড়ে দিয়ে বলল হবস। শেষ বয়সে এসে উটকো সব ঝামেলা সামাল দিতে হচ্ছে, যেগুলো সামাল দেয়া আমার ক্ষমতার বাইরে। তোমার বা লোগানদের মত লোককে সামাল দেবে আমার মত চুনোপুঁটি? তাহলে তো কথাই ছিল না! বার কয়েক মাথা নাড়ল মার্শাল, অস্থিরভাবে নাড়াচাড়া করছে হাতের আঙুলগুলো। কণ্ঠে হতাশা আর বিরক্তি ফুটে উঠল। পারকার একগাদা লোক ভাড়া করেছে। পুরানো একজন কাউহ্যান্ডও নেই ওর, সব কটা আজেবাজে লোক। ঘোড়া বা গরু সামলানোর চেয়ে পিস্তলবাজি ভাল জানে ওরা। এসব লোক আমাকে পাত্তাই দেবে না। পারকার তো আরও এককাঠি বাড়া, মুখের ওপর বলে দেবে পারলে কিছু করো গিয়ে।
দয়া করে শহরটা এড়িয়ে চলল, স্যাম, যদ্দূর সম্ভব, অনুরোধ ঝরে পড়ল মার্শালের কণ্ঠে। তোমার যা ইচ্ছে শহরের বাইরে কোরো, নাক গলাতে আসব না আমি। শহর কমিটির কেউ এ লড়াই পছন্দ করতে পারছে না। ওরা ভাবছে কেবল ব্যবসা নিয়ে। কদিন পর রেলরোড আসবে, তরতর করে উঠে যাবে বাফেলল টাউন। কেউ চায় না তোমাদের কারণে তার আগেই শহরটা ধ্বংস হয়ে যাক।
শহর কমিটির আশঙ্কা অমূলক নয়, বুঝতে পারছে ব্রুকস। পশ্চিমের অনেক উঠতি শহর এভাবেই ধ্বংস হয়ে গেছে। দুটো বাথানের লড়াইয়ে পরোক্ষভাবে আশপাশের বাথানগুলোরও ক্ষতি হয়। এসব লড়াইয়ে বেশিরভাগ লোক থাকে ভাড়াটে, বেপরোয়া। ওঁদের থামানো যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা নিজেরা থামে বা শেষ হয়ে যায়। শেষমেশ ওদের রোষ গিয়ে পড়ে শহর বা অন্য বাথানের ওপর। যদি চলেও যায়, যাওয়ার আগে লুঠপাট তোকরেই দুএকটা খুন করতেও কসুর করে না।
বার-পিতে যাব ভাবছি, উঠে দাঁড়াল জ্যাক হবস। নিজের দায়িত্ব আমাকে পালন তো করতেই হবে, যদিও ভাল করে জানি পারকারকে বোঝানো আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। এমন একরোখা লোক আর দেখিনি। এমিলিওর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করব ওকে, হলফ করে বলতে পারি অস্বীকার করবে সে। তাছাড়া তুমিও কোন অভিযোগ করোনি। বেরিয়ে এসে রেইল থেকে লাগাম খুলে স্যাড়লে চাপল মার্শাল, তারপর ফিরল পোর্চে দাঁড়ানো ব্রুকসের দিকে। সামনে কঠিন সময়। অসম একটা লড়াই, তবু তোমার সাফল্য কামনা করছি, বাছা। নড করে স্পার দাবাল হবস।
মাটিতে একদলা থুথু ফেলল টিম ম্যাসন, হিংস্র দৃষ্টিতে তাকাল ব্রুকসের দিকে। তোমার পরিচয় ঠিকই বের করে ফেলব, ব্রুকস, নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারবে না। পরেরবার যখন আসব তখন আমার হাতে একটা পোস্টার আর ওয়ারেন্ট থাকবে।
উদার ভঙ্গিতে হাসল ব্রুকস। পারকারের ডালকুত্তাদের সাথে এসো না আবার, তাহলে কিন্তু তোমার বুকের ওই তারাটা বুলেট ঠেকাতে পারবে না।
কদিন টিকবে! দ্বিগুণ তেজে উত্তর দিল ডেপুটি। সবাই মিলে ওরা তোমাকে কচুকাটা করে ফেলবে।
তুমি ওদের রাইফেলগুলো লোড করে দিয়ো।
অপমানে লাল হয়ে গেল ম্যাসনের ফর্সা মুখ। ব্রুকস যা বলেছে সেটা বাচ্চা বা মেয়েদের কাজ। খুব বেড়েছ দেখছি! চাপা গর্জনের মত শোনাল যুবকের কণ্ঠ, স্যাডলে চেপেছে। লোগানকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পেয়েছিলে বলে নিজেকে বড় বন্দুকবাজ ভাবতে পারছ। জেফরি করবেট ঠিকই এর শোধ নেবে। স্পার দাবাল সে, দ্রুত ছুটতে শুরু করল ঘোড়াটা।
ক্ষীণ হাসল স্যামুয়েল ব্রুকস, হাড়ে হাড়ে চিনে ফেলেছে ডেপুটিকে। এক রত্তি মুরোদ নেই, অথচ সারাক্ষণ নিজেকে জাহির করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছে। ঠিক বাড পারকারের মত, যেন জেফরি করবেটের আরেক শিষ্য। কিন্তু ওকে শত্রু ভাবার কারণটা অজানাই রয়ে গেল। পারকারদের সাথে হয়তো কোন সম্পর্ক আছে ডেপুটির হতে পারে সেজন্যেই ওর প্রতি এত বিদ্বেষ। শ্রাগ করে কেবিনে ঢুকল ব্রুকস। টিম ম্যাসনকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দূর থেকে লাফ-ঝাপ দেয়াই সার, কাছে এসে কিছু করার মত বুকের পাটা তার নেই।
সন্ধ্যার খানিক আগে বার-পি বাথানে পৌঁছাল মার্শাল ও তার ডেপুটি। অফিসে এনে ওদের বসিয়েছে অ্যালান পারকার। দুদফা কফি পরিবেশন করা হয়েছে, কিন্তু বাথান মালিকের পাত্তা নেই। জ্যাক হবস তিতিবিরক্ত। বাঙ্ক হাউস থেকে ভেসে আসা হৈচৈ ওর ধৈর্যচ্যুতির খোরাক হয়েছে।
উঠে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঠিক এসময়ে দরজায় দেখা গেল জুলিয়াস পারকারকে। দৃঢ় পায়ে হেঁটে এসে নিজের আসনে বসে মার্শালের দিকে তাকাল। কোন সম্ভাষণ এমনকি দেরি করার জন্যে দুঃখও প্রকাশ করল না। কেন এসেছ? স্পষ্ট কর্তৃত্বের সুরে জানতে চাইল।
পকেট থেকে চুরুট বের করে ধরাল জ্যাক হবস, দেখল র্যাঞ্চারকে-পাথরের মত মুখ, দৃঢ় সঙ্কল্পবদ্ধ। আয়েশ করে ধোয়া ছাড়ল মার্শাল, মৃদু স্বরে জবাব দিল: বোঝা যাচ্ছে আমাদের আসা পছন্দ হয়নি তোমার। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি তুমিই আসতে বাধ্য করেছ।
চটে গেল বুড়ো, চোখ জ্বলছে। মুখ সামলে কথা বলো, জ্যাক! আমি তোমাকে কখন বাধ্য করলাম?
কিছু ঝামেলাবাজ লোক ভাড়া করেছ তুমি। বাফেলোতে গিয়ে যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে ওরা, পণ্যের বদলে একটা পয়সাও দিচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টে মারধর করছে। এটা তোমাকে বন্ধ করতে হবে, নয়তো…
নয়তো কি?
শহর কমিটি বাধ্য হবে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে। ব্যবসায় ক্ষতি করতে ওরা আসেনি এখানে। গায়ের ঘাম ঝরিয়ে প্রতিটি পয়সা রোজগার করতে হয় ওদের। কতগুলো গুণ্ডার ইচ্ছেমাফিক চলতে পারে না শহরটা।
ওরা যদি পয়সা না দেয় তো সেটা আমার দোষ?
তুমি বলে দিলে ওরা তা শুনতে বাধ্য, যেহেতু লোকগুলো তোমার কাছে ওদের পিস্তল বিকিয়েছে।
আমি যদি তোমার দিকে পিস্তল তাক করতে বলি, ওরা তা শুনবে। কিন্তু নিজেদের রোজগারের টাকা কিভাবে খরচ করবে সেটা বললে মোটেও পছন্দ করবে না। তুমি করবে? বেতনের টাকায় দেদারছে মদ গিলছ, জ্যাক, আমি মানা করলে শুনবে?
খানিক অস্বস্তি অনুভব করল মার্শাল, শ্রাগ করল। বুঝতে পারল আসল কথার ধারে-কাছে দিয়েও যাবে না বাগান মালিক। এ জন্যে তুমিই দায়ী থাকবে, জুল। স্যামুয়েল ব্রুকসকে নিয়ে যা ইচ্ছে কোরো, আপত্তি নেই আমাদের। নিজের দোষে মারা গেছে তোমার ছেলে, বদলে এমিলিওকে খুন করেছে তোমার লোকেরা, খেলাটা তারপরও চালিয়ে যাচ্ছ। আমার কাছে ওয়ারেন্ট থাকলে আগে তোমাকেই গ্রেফতার করতাম। তোমার লোকেরা যদি এভাবে ঝামেলা করতে থাকে…
হবস! তুমি নিজের অফিসে নেই এটা বোধহয় ভুলে গেছ, জুলিয়াস পরকারের কঠিন কৃর্তত্বপূর্ণ স্বর থামিয়ে দিল মার্শালকে, র্যাঞ্চারের চোখে উপহাস। তোমার কাজ হচ্ছে শহরের শান্তি রক্ষা করা। আমার কোন ব্যাপারে তোমার ওই নোংরা নাক গলিয়ো না।
শুনে রাখো, পারকার, মোটেও দমল না হবস। তোমার কোন লোক যদি শহরে আরেকটা ঝামেলা করে, তাকে গ্রেফতার করব আমি।
তোমার ক্ষমতায় কুলাবে?
কাজটা কঠিন, কিন্তু পারব, হেসে বলল মার্শাল, আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। তোমার ভুলে যাওয়া উচিত নয় শহরের শুরুতে এমন ডজনখানেক লোককে মোকাবিলা করেছি। ভেবেছিলাম শেষ কটা দিন ঝামেলা ছাড়া কাটিয়ে দেব, তোমার কারণে তা যখন হচ্ছে না তখন উঠে পড়েই লাগব আমি।
তেমন একটা অতীত তুমি ফেলে এসেছ, পনেরো বছর আগে। কিন্তু সেটা অতীতই। কত হলো তোমার, হবস, সাতচল্লিশ? বেশ বুড়িয়ে গেছ। আগের ক্ষিপ্রতা নেই, শরীরও মুটিয়ে গেছে। তোমার তুলনায় ওরা অনেক তরুণ।
পুরানো সময়ে ফিরে যেতে হবে আমাকে।
সেটা কি এতই সহজ?
পরীক্ষা নিতে চাও, পারকার? শীতল কণ্ঠে বলল মাশাল। ভুলেও ও-কাজ কোরো না। নিজে মরার আগে যে কটাকে পারি সাথে নিয়ে যাব। শহরের লোকজন আমার পেছনে এসে দাঁড়াবে। প্রয়োজনে ওরা তোমাকেও ছাড়বে না।
সশব্দে হেসে উঠল জুলিয়াস পারকার। ভয়ে নড়েচড়ে বসল ডেপুটি টিম ম্যাসন, সারাক্ষণই অস্বস্তিবোধ করছে।
বাফেলো টাউনের শুরু পারকারদের হাত দিয়ে, এটা তোমরা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে? উল্লসিত দেখাল বুড়োকে, গলায় চাপা অহঙ্কার। দরকার হলে শহরটাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেব আমি!
তোমার এত রাগের কারণ তো বুঝতে পারছি না, কৌশল বদলাল মার্শাল, গলায় আপসের সুর। বুঝতে পেরেছে বাগান মালিককে খেপিয়ে লাভ হবে না। সবাই মিলে হামলে পড়েছ ব্রুকসের ওপর। অন্যায় করেছে তোমার ছেলে, অথচ তুমি আগুনটাকে আরও উস্কে দিতে চাই।
তুমি তো আর ছেলে হারাওনি, বুঝবে কি করে। শ্লেষের সাথে বলল পারকার। যত অন্যায়ই করুক, ও আমার ছেলে। ওর মৃত্যুর শোধ আমি নেই!
এমিলিওকে খুন করেও তোমার সাধ মেটেনি?
যার কারণে এত কিছু সে তো বহাল তবিয়তে আছে। আমি চাইলেও করবেট এখন আর থামবে না। ম্যাট লোগান আর ওই লোকটার বন্ধুরাও অসন্তুষ্ট হবে আমি যদি ওদের কেটে পড়তে বলি। বুঝতেই পারছু ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গেছে ব্যাপারটা, আমার ইচ্ছের ওপর এখন আর নির্ভর করছে না। থেমে সিগার ধরাল বুড়ো, একসঙ্গে অনেক ধোয়া টানতে গিয়ে কেশে উঠল। দুঃখিত, জ্যাক, এর শেষ না দেখে ছাড়ছি না। নিজ হাতে ছেলেকে কবরে শুইয়েছি আমি। একজন বুড়ো বাপের কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ বোধহয় এটাই।
বোঝা গেল, তোমার কাছে অযথাই এসেছি।
করবেটকে দেখে যাও।
অভিযোগ করছ?
উঁহু, হিসেবটা নিজেই মিটিয়ে ফেলতে পছন্দ করবে ও, থেমে সিগারে টান দিল পারকার, ধোয়ায় ঢাকা পড়ে গেল মুখ। ও আবার সহজে কিছু ভোলে না। তোমার এত উতলা হওয়ার কিছু নেই। মাত্র তো কটা দিন, ব্রুকসও একা। জেফরির লোকজন প্রথম দফায় শেষ করে ফেলবে ওকে। ভাড়াটে লোকগুলোকে রাখার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে তখন। তোমারও আর মাথা ঘামাতে হবে না। হতচ্ছাড়া এ শহরের চেয়ে ওদের জন্যে ঢের মজার শহর পড়ে আছে।
উঠে মাথায় হ্যাট চাপাল জ্যাক হবস। বেরোতে গিয়েও দরজার কাছে ফিরে দাঁড়াল। তোমার ক্রুদের আবার অন্য বাথানগুলোর পেছনে লাগিয়ে দিয়ো না। তাহলে কিন্তু ভুল করবে। সবাই একাট্টা হলে তুমি টিকতে পারবে না, কারণ স্যামুয়েল ব্রুকসের গতি করার পর তোমার অবস্থা হবে অনেকটাই নড়বড়ে। ব্রুকস মামুলি কেউ নয়, মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে ও এবং মরার আগে তোমার ক্রুদের যে কটাকে পারে খসিয়ে দেবে।
তাতে আমার কিছু আসে-যায় না।
সেটা ঠিক, বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভাল জ্যাক হবস, তোমার সাম্রাজ্য টিকে থাকলেই হলো। ব্রুকসের জন্যে করুণা অনুভব করল মার্শাল, শক্তপাল্লার এক শত্রু জুটিয়েছে ও। পারকার থামবে সবকিছু শেষ হওয়ার পর।
মার্শাল আর ডেপুটি বেরিয়ে যেতে আপনমনে হাসলা জুলিয়াস পারকার। বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে পেয়েছে জ্যাক হবসকে, কারণটা কি? গত কয়েক বছরে এ লোকের আচরণ ছিল মেরুদণ্ডহীন একটা জীবের মত, সারাক্ষণ মদে চুর হয়ে থাকত। ডেপুটি টিম ম্যাসনই শহরে কর্তৃত্ব করে এসেছে এ কারণে যে নিজের অফিস ছেড়ে বেরোয় না হবস। হঠাৎ করে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে লোকটা। খারাপ লক্ষণ। জ্যাক হবসকে তার ভালই চেনা আছে। যুবক বয়সের ক্ষিপ্রতা নেই ঠিকই, কিন্তু আত্মবিশ্বাসেরও কমতি নেই। পারকার জানে মার্শাল ওকে অপছন্দ করে, সে-ও। ঝামেলাটা মিটে গেলে টাইট দিতে হবে হবসকে, সিদ্ধান্ত নিল বার-পি মালিক। করবেটকে লেলিয়ে দিলে ল্যাঠা চুকে যাবে। হতচ্ছাড়াকে একেবারে শেষ করে দিলেও অবশ্য মন্দ হয় না। কিন্তু তা করতে হলে অন্য কারও সাহায্য লাগবে, করবেট এ কাজের উপযুক্ত নয়। বাফেলো টাউনের শুরুতে বহু ফাস্টগানকে সামাল দিয়েছে হবস, তার কিছুটাও যদি অবশিষ্ট থাকে তো অনায়াসে ফোরম্যানকে মোকাবিলা করতে পারবে। কারণ পিস্ত লের চেয়ে মুঠি চালাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে জেফরি করবেট। ঝুঁকির মধ্যে না গিয়ে বরং অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নেয়াই সবদিক থেকে ভাল হবে, এমন কেউ যে আইনের লোককে খুন করতে পিছ-পা হবে না।
অ্যাল! মেঝো ছেলেকে ডাকল পারকার। জেফরিকে ডাকো।
ও তো অসুস্থ, বাবা।
পায়ে হেঁটে আসবে সে, হামাগুড়ি তো দিতে হবে না! বিরক্তি প্রকাশ করল বার-পি মালিক।
একটু পর কামরায় প্রবেশ করল করবেট। এমনিতে সে, বিশালদেহী, তারওপর ব্যান্ডেজ থাকায় হাতগুলোকে প্রকাণ্ড দেখাচ্ছে। সামনে এসে দাঁড়াল ও, অস্বস্তিভরে তাকাল মালিকের দিকে।
সাপারের পর তৈরি হতে বোললা ওদের, দৃঢ় কণ্ঠে আদেশ করল জুলিয়াস পারকার। ব্রুকসের বাথানে গিয়ে নজর রাখবে। মাঝরাতের দিকে কেবিনটা ঘেরাও করার পর কাজ শেষে পুড়িয়ে দেবে।
আমি তো রাইড করতে পারব না, বসু।
তোমাকে রাইড করতে বলল কে? বিরক্তিতে কুঁচকে উঠল বুড়োর কপাল। কি করতে হবে তা ভাল করে বুঝিয়ে দাও ওদের, কোথাও যেন ভুল না হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে চাই, স্যামুয়েল ব্রুকস নামে বেসিনে কেউ নেই।
<