ল-অফিসে রাত কাটিয়েছে ওরা। আশঙ্কা করেছিল পারকারের লোকেরা হয়তো মন্টানা কিড আর টম লোগানকে বের করে নিয়ে যেতে চাইবে। তাই রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। তেমন কিছু অবশ্য ঘটেনি।

শেষ পালা ছিল ব্রুকসের। কাজ না থাকলে যা হয়, নানান চিন্তায় সময়টা কাটিয়েছে ও। গত কয়েকদিনের ঘটনাগুলো ভেবেছে, ওর জন্যে মিশ্র অনুভূতির-টান টান উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা আর হাড়ভাঙা খাটুনির পর ফ্ল্যাগানদের বাথানে কেটেছে জীবনের সেরা কয়েকটা দিন।

আগাগোড়া একজন নিঃসঙ্গ মানুষ সে, ওর ফেলে আসা জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ট্রেইলে। মাঝে মাঝে এমনও হয়েছে দিনের পর দিন কারও সাথে একটা কথা বলারও সুযোগ হত না। এখানে, মরগান পিক্‌সের কোলে যখন বসতি করেছে তখনও তাই ঘটেছে। হাঁপিয়ে উঠলে ইচ্ছে করত শহরে ছুটে যায়, কিছুক্ষণ কাটিয়ে আসে কোন সেলুনে। পরে যখন সাপ্লাই আনতে যেত, লকহার্টের সাথে মামুলি কথা, যা-ও বা দুএকটা হত উপভোগ করত সেগুলো। এখানকার প্রতিটি মুহূর্ত ওকে মনে করিয়ে দিত একজন সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা-একজন মেয়েমানুষ, একটা সংসার।

লরিয়া ফ্ল্যাগান ওকে আগাগোড়া টেনে রেখেছিল। এ মেয়েটিকে না দেখলে এতকিছু ঘটত না। হঠাৎ করে এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিত না, কোন জমি না পেয়েও মরগান পিসের উষর ওই জায়গাটাকে তৃণভূমিতে পরিণত করার সাহস করত না। সবই ঘটছে এই মেয়েটির জন্যে। ভাবলে নিজেকে বোকা মনে হয়, ছেলেমানুষের মত হয়ে গিয়েছিল ওর আচরণগুলো-বৈরী এ জায়গাটাকে বাসযোগ্য করতে সারা জীবনের সঞ্চয় ব্যয় করেছে, অমানুষিক শ্রম দিয়েছে কেবল অনিশ্চিত বিশ্বাসের ওপর যে শেষ পর্যন্ত একে পছন্দ করবে লরিয়া ফ্লাগান। জন ওয়েসলি হারডিনের পরিচয় ওর কাম্য ছিল না, আবার স্যামুয়েল ব্রকস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার উচ্চকাভক্ষাও ছিল। কাজটা শেষ করার তাড় ছিল, কিন্তু লরির সাথে যেচে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছে কখনও হয়নি দারুণ বোকামি, মেয়েটা যদি অন্য কাউকে পছন্দ করে ফেলত? ওর ইচ্ছে পূরণ হওয়ার কোন নিশ্চয়তাই ছিল না কাজটা পরোক্ষভাবে করে দিয়েছে পারকাররা। ওরাই ব্রুকস আর লরিয়াকে একসূত্রে গেঁথে দিয়েছে।

না, কোন ভুল করেনি সে, সন্তুষ্টচিত্তে উপসংহার টেনেছে ব্রুকস। এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হঠকারিতা, তাতে কোন সন্দেহ নেই, বছরকে বছর ধরে কোথাও থেকে নিজের বসতি গড়ার ইচ্ছেও ওর স্বভাববিরুদ্ধ ছিল ঠিকই, কিন্তু সবই স্থবির একটা ভবিষ্যতের জন্যে। লরিয়া এমন এক মেয়ে যার জন্যে সবকিছু করা যায়। তাই সব হঠকারি সিদ্ধান্ত, পরিশ্রম…সবই ওর জন্যে আত্মপ্রসাদের।

আকাশ পরিষ্কার হতে চেয়ার ছাড়ল ব্রুকস, জানালার কাছে এসে ফাঁকা রাস্তা আর বাড়িগুলোর ওপর নজর বুলাল। দরজা খুলে পার্কে বেরিয়ে এল। খুটিয়ে দেখল জুলিয়াস পারকারের বাড়িটা। নাহ, কোন সাড়া নেই। ফিরে এসে কেতলি চাপাল, গ্যারেটদের জাগাল এরপর। ফাকা দুটো সেলে রাত কাটিয়েছে ওরা।

হবসকে জাগাও, ব্র্যাড। দুবার ডেকেছি। মনে হচ্ছে জাগাতে হলে গুলি ফোটাতে হবে। মগে চিনি ঢালার সময় বলল ও। মার্শালের টেবিলে পড়ে ছিল ওয়ান্টেড পোস্টারগুলো, কফিতে চুমুক দেয়ার সময় তুলে নিয়ে দেখতে শুরু করল। ছবিতে টম স্টিরাপকে চেনা মুশকিল, বেশ কয়েক বছর আগের পোস্টার। কালি ব্রনসন, রব কোহেন আর ওর স্যাঙাতের নামেও হুলিয়া রয়েছে। টেক্সানরাও বাদ যায়নি।

আমাদের ধরিয়ে দেবে নাকি? সামনে বসে পোস্টারগুলো টেনে নিল ব্র্যাড।

মাত্র দুশো ডলার। পোষাবে না।

দুশো ডলার, ফুঃ! শুনতে আমার নিজেরই জঘন্য লাগছে। অথচ কোলম্যানের জন্যে চারশো।

ওর শিষ্য হলে ভাল করতে, কিংবা স্টিরাপের, হেসে মগে কফি ঢালল ব্রুকস। এতে একটা জিনিস পরিষ্কার, আউট-ল হিসেবে তোমরা যাচ্ছেতাই ধরনের। স্টিরাপ বা ব্রনসনের ধারে-কাছেও নয়।

খুব বিপদে না পড়লে তেমন কিছু করি না আমরা, কফির মগ নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল প্যাট গ্যারেট। সনোরায় যা ঘটেছিল ওটা রঙ চড়ানো। শেরিফ ব্যাটা শুধু শুধুই ফাঁসিয়েছে আমাদের। না হয় ওর পকেট থেকে ত্রিশ ডলার নিয়েইছি, সেজন্যে হুলিয়া? একে তো পকেট খালি ছিল তারওপর মাতাল হওয়ায় সেলে ঢুকিয়ে খেতে দেয়নি। খিদে চাগিয়ে উঠলে কি মাথার ঠিক থাকে? ব্যস, বেরিয়ে এসে দুঘা লাগিয়ে ব্যাটার পকেট খালি করে কেটে পড়লাম।

পোস্টারে কিন্তু লেখা তাকে খুন করেছ তোমরা।

আমরা চলে আসার পরের দিন খুন হয় সে। ওর ডেপুটিই ফাঁসিয়েছে আমাদের।

ধরা না দিয়ে কিন্তু তা-ই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলছ।

ওসবে পাত্তা দিলে চলে না, তাচ্ছিল্যের সাথে হাত নাড়ল ব্র্যাড। আমরা নিজেরাই পোস্টারটার কথা ভুলতে বসেছি, আর লোকজন তো দুএক বছর পর

এমনিতেই ভুলে যাবে। তাছাড়া ধরতে পারলে তো!

সব শেরিফ বা মার্শাল কিন্তু হবসের মত নয়।

তা হয়তো ঠিক। কিন্তু যে লোক আমাদের ধরতে আসবে, সে এটাও ভাববে তাকে দুজনের মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের ব্যাপারে রেঞ্জারদের আগ্রহ কম হওয়ার রহস্য বোধহয় এখানেই। তাছাড়া ঝুকির তুলনায় রিওয়ার্ডের টাকা খুব কম।

বোঝা যাচ্ছে যমজ রেঞ্জার ছাড়া তোমাদের সাথে সুবিধা করতে পারবে না কেউ।

বেড়ে বলেছ, স্যাম! টেবিল চাপড়ে বলল ব্র্যাড়। তোমার জানামতে এমন কেউ পয়দা হয়েছে নাকি?

কি সব ফালতু আলাপ করছ! বিরক্তি মাখানো কণ্ঠ মার্শালের, চোখে-মুখে ঘুমের রেশ লেগে আছে এখনও, ভেতরের কামরার দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেবে না? এত জলদি জেগে কি হবে?

ভাবছিলাম দল বেঁধে সিলভারে যাব, সহাস্যে বলল ব্র্যাড। তোমাকে না জানালে তো শেষে দুষবে।

নরকে যাও, ছোকরা! কয়েকবারের চেষ্টায় কোমরের বেল্ট আটকাল সে, এগিয়ে এসে কফির মগ তুলে নিল। নিজের চেয়ারে ছেড়ে দিল ভারী শরীর। হুইস্কি ছাড়া হতচ্ছাড়া এ শহরে আছে কি!

স্বেচ্ছাসেবক হারশারদের সকালে আসার কথা। লকহার্ট জানিয়েছে আরও দুজনকে পাঠাবে। সব মিলিয়ে আটজন…মন্দ নয়, ভাবছে ব্রুকস। বার-পি ক্রুদের হয়তো ঠেকিয়ে দেয়া যাবে। আজকের দিনটা সবার জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটা সকাল দেখার সৌভাগ্য থেকে কে বঞ্চিত হবে সেটা আগে থেকে কেউ বলতে পারবে না।

পেছনের দরজার খিড়কি খুলে রেখো, জ্যাক, রাইফেল হাতে উঠে দাঁড়াল ব্রুকস।

কোথায় যাচ্ছ?

লকহার্টের সাথে কিছু পরামর্শ করা দরকার। তাছাড়া, ভাবছি কয়েদীদের দেখে আসব। কেভিনের ওপর নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। টেক্সানদের দেখল ও, নিরুদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে, অথচ জানে খুব শিগগির ভয়ঙ্কর কিছু লোকের মুখোমুখি হতে হবে।

বেরিয়ে এসে পোর্চে দাঁড়াল ও, খুঁটিয়ে দেখল ছোট্ট শহরটাকে। দক্ষিণে গির্জার দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে এক ভবঘুরে। কামারের দোকান থেকে হাতুড়ির সাথে ধাতব কোন বস্তুর সংঘর্ষের শব্দ ভেসে আসছে। নাপিত সাইরাস ওর দোকানের ঝাপ তুলে ঝাড় দিচ্ছে। ধোয়া উঠছে মিসেস রিচার্ডসের রেস্তোরাঁর চিমনি দিয়ে। জুলিয়াস পারকারের বাড়িটা তেমনি আছে, কোন সাড়া নেই। বোঝার উপায় নেই ভেতরে কোন লোক আছে কি-না, কিন্তু ব্রুকস নিশ্চিত জানে অন্তত আধডজন লোক ওখানে রাত কাটিয়েছে।

টিম ম্যাসনের আচরণ অবাক করেছে ওকে। ডেপুটির সাধের অফিস বেহাত হয়ে যাওয়ার পর পুরো একটা দিন পেরিয়ে গেছে অথচ কোন পাত্তা নেই তার। ম্যাসন যেরকম অস্থিরমতির ওর জন্যে ব্যাপারটা একেবারে অস্বাভাবিক। খুব সম্ভব পারকারের সাথে বসে ঘোট পাকাচ্ছে।

উইলিয়াম লকহার্টের স্টোরের ওপর চোখ পড়তে ধারণাটা মাথায় এল। ষাট গজ দূরত্ব, একটা রাইফেলের জন্যে কোন ব্যাপারই নয়। প্যাট, একটু বাইরে আসবে? টেক্সানকে ডাকল, সে পোর্চে বেরিয়ে আসতে ব্যাখ্যা করল পরিকল্পনাটা।

মন্দ নয়, সিগারে টান মেরে মন্তব্য করল প্যাট। বাড়তি সুবিধে পাওয়া যাবে। হারপারদের নিয়ে তুমি বরং ওখানেই চলে যাও। আমরা এদিকটা সামলাতে পারব।

বেগতিক দেখলে প্রথম সুযোগে কেটে পড়ো।

মাথা ঝাঁকাল টেক্সান। পেটে ছুঁচো, নাচছে। মিসেস রিচার্ডসকে কি বলবে নাস্তাটা একটু তাড়াতাড়ি পাঠাতে?

পোর্চ থেকে নেমে সাইডওঅক ধরে এগোল ব্রুকস। রেস্তোরাঁয় ঢুকল প্রথমে, প্যাটের তাড়ার কথা মহিলাকে জানিয়ে বেরিয়ে এসে সিলভারে গেল। কেভিনকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না, ওর কর্মচারী বার পরিষ্কার করছে। পেছনে এসে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠে এল। ডানে প্রথম কামরার সামনে একটা টুলে বসে দুলছে কেভিন লকহার্ট, কোলের ওপর একটা শটগান। কাছে যেতে চমকে চোখ মেলল সে ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়াল। কি-কিছু ঘটেছে, মি. ব্রুকস? এইমাত্র চোখ লেগে এসেছিল। দ্রুত আমতা আমতা করে কৈফিয়ত দিল।

দরজার পাল্লা দুটো টেনে ফাঁক গলে ভেতরে তাকাল ও, বাঙ্কের ওপর ঘুমাচ্ছে দুই আসামী। জুলিয়াস পারকার এদেরকে বের করে নিতে পারে ভেবে গতকাল সন্ধেয় সবার অগোচরে এখানে নিয়ে এসেছে। ফালতু কিছু ঝামেলা বেচেছে এতে। খুশি হয়ে দায়িত্ব নিয়েছিল কেভিন, হয়তো বিনে পয়সায় খাওয়া হুইস্কির পাওনা তুলে নেওয়ার খায়েশ হয়েছে ওর।

দরজাটা ভাল করে দেখল ব্রুকস। সরু কড়াতে লাগানো তালা সন্তুষ্ট করতে পারছে না ওকে। মরিয়া হয়ে ওঠা দুজন শক্তিশালী লোকের কাছে খোদ দরজাই কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। কবাট টেনে দিয়ে ওপরের শিকল তুলে দিল ও, কেভিনের দিকে ফিরল। দায়িত্বটা তুমি স্বেচ্ছায় নিয়েছ, সবকিছু তোমাকেই সামলাতে হবে, কেভ। দরজাটা দেখে আমি মোটেও ভরসা পাচ্ছি না। উল্টোদিকে দূরে গিয়ে বসো, শটগান তাক করে রাখবে। বেচাল দেখলেই গুলি করবে। তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে আসবে না কেউ। ওরা খুব ভয়ঙ্কর লোক, দরকার মনে করলে কাউকে ডেকে নাও।

আমি পারব।

শ্রাগ করে ফিরতি পথ ধরল ও। মনের খুঁতখুঁতে ভাব যাচ্ছে না। জেনারেল স্টোরে চলে এল। ইতোমধ্যে সবকিছু গুছিয়ে প্রথম খদ্দেরের অপেক্ষায় আছে লকহার্ট টাকার বাক্সের পেছনে রাইফেলের নল উঁকি দিচ্ছে

ঠিক আছে সব? জানতে চাইল স্টোর মালিক।

পোর্চে কয়েকটা ময়দার বস্তা এনে ফেলল, নড় করে বলল ও। হারপাররা এলে এখানেই পজিশন নিতে বোলো।

পরকারের বাড়িটা ঘেরাও করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়, বাপ বাপ করে বেরিয়ে আসবে সবকটা।

যতটা সহজ ভাবছ তা কিন্তু নয়। সবাই সেখানে না-ও থাকতে পারে। মার্শালের পক্ষে হলেও আমরা তা করতে পারি না, বেআইনী হবে। তাছাড়া বাড়িটা এমন যে কয়েকদিন অবরোধ করে রাখলেও সুবিধা করতে পারব না। তারচেয়ে ওরাই বেরিয়ে আসুক। একটু ঝুঁকি আছে কিন্তু এটাই সহজ হবে।

শহরের আরও কয়েকজনের সাথে আলাপ হয়েছে আমার। পারকার যদি মন্টানা আর লোগানকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তো রুখে দাঁড়াবে ওরা। সব মিলিয়ে চার-পাঁচজন হবে, তবে নিরীহ লোক।

কয়েদীরা কোথায় আছে ভুলেও কাউকে জানিয়ো না।

মাথা ঝাঁকাল লকহার্ট।

দরজার কাছে এসে বসো। উত্তরে শহরে ঢোকার মুখে নজর রাখবে। বারপি রাইডাররা ওদিক থেকে এলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ওদের দেখতে পেলে তিনবার ফাঁকা গুলি কোরো।

স্টোর থেকে বেরিয়ে এসে মিসেস রিচার্ডসের রেস্তোরাঁয় কোণের একটা টেবিল দখল করল ব্রুকস। ল-অফিস আর পারকারের বাড়ির সম্মুখটা চোখে পড়ছে। সেদ্ধ মটরশুটি, ডিম আর স্টু দিয়ে নাস্তা সেরে নিল।

তুমি চলে যাওয়ার পরপরই নাস্তা পাঠিয়ে দিয়েছি, মি. ব্রুকস। কফি পরিবেশন করার সময় বলল মহিলা।

ধন্যবাদ, ম্যাম। হিসেব রেখো, শহর কমিটি তোমার পাওনা মিটিয়ে দেবে। আর আমাকে মিস্টার বলার দরকার নেই, বন্ধুদের জন্যে শুধু স্যাম নামটাই আমার পছন্দ।

নড করল মিসেস রিচার্ডস, স্মিত হাসল। লরিয়া তোমার খোঁজ করেছিল।

কখন? কফিতে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে গেল ব্রুকস।

ফ্ল্যাগানসহ রাতে শহরে এসেছে। সাপার করার সময় তোমার কথা জানতে চেয়েছিল, বলেছিল ল-অফিসে গেলে পাওয়া যাবে তোমাকে। তুমি রাগ করতে পারো ভেবে দেখা করতে যায়নি।

কোথায় ও, তোমার এখানে উঠেছে?

মাথা ঝাঁকাল মহিলা। ফ্ল্যাগান অবশ্য হোটেলে উঠেছে।

ধন্যবাদ, ম্যাম। আমাকে জানিয়ে ভাল করেছ।

ওর সাথে দেখা করবে?

চুপ করে থাকল ও, সিগারেট ধরাল। খুচরো পয়সা বের করে বিল মেটাল। তারপর এগোল দরজার দিকে। ওকে বোলো আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত যেন এখানেই থাকে। রাস্তায় বের না হওয়াই বোধহয় ভাল হবে। ঝামেলা হতে পারে।

স্যাম?

দরজার কাছে পৌঁছে গেছে ও, ঘুরে তাকাল। খানিকটা বিরক্ত।

মেয়েটা উদ্বেগের মধ্যে আছে, তোমাকে নিয়ে চিন্তিত ও। দুবার ক্যাফেতে, এসেও দেখা না করে চলে গেলে ওর আত্মসম্মানে লাগবে। ভাববে তোমার কাছে ওর গুরুত্ব কম। শুরুতে এ ভুলটা ইচ্ছে করলেই এড়িয়ে যেতে পারো তুমি, ও-ও খুশি হবে।

লরিয়া নিজে এসব বলেছে?

না। এগুলো আমার নিজস্ব ভাবনা।

ধন্যবাদ, ম্যাম। আমি এভাবে ভেবে দেখিনি।

এঁটো থালাবাসন নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোল মিসেস রিচার্ডস। দোতলায়, বামে প্রথম কামরায় পাবে ওকে, সহাস্যে জানাল মহিলা। সিঁড়িতে তোমার জুতোর শব্দ শোনার জন্যে হয়তো এতক্ষণে অধীর হয়ে গেছে বেচারি।

দোতলায় এসে দরজায় নক করল ও।

সরে যাওয়া পাল্লার মাঝখানে এসে দাড়াল লরিয়া ফ্ল্যাগান। দ্রুত চোখ বুলাল ব্রুকসের সারা শরীরে, তারপর খুশিতে উজ্জ্বল হলো ওর সবুজ চোখজোড়া। ব্রুকস কাছে টেনে নিল ওকে, উপলব্ধি করল মিসেস রিচার্ডসের পরামর্শ না শুনলে সত্যি ভুল করত। খানিকটা নির্ভরতা একজোড়া নারী-পুরুষের পারস্পরিক বিশ্বাস অনেক দৃঢ় করতে পারে।

একদণ্ড শান্তিতে থাকতে পারছি না, অভিযোগ করল লরিয়া। ঝামেলা দেখছি তোমার পিছু ছাড়ছে না। ওই তারাটা বুকে লাগানোর কি দরকার ছিল?

মরগান পিকসের বসতিতে বাকি জীবনটা আমি শান্তিতে কাটাতে চাই, এই শহরে নিশ্চিন্তে আসবে-যাবে আমার বাচ্চারা, প্রয়োজন এটাই। জুলিয়াস পারকারকে হটাতে না পারলে বেসিনে কখনও শান্তি আসবে না। কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। গ্যারেটদের দেখো, কি জন্যে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে লোকগুলো? এখানে থাকে না ওরা, থাকবেও না, আবার কখনও আসে কি-না তারও ঠিক নেই অথচ বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিনিময়ে কি পাবে ওরা? অন্য দশজনকে শান্তিতে রাখার জন্যে দুর্ধর্ষ লোকগুলোর চেষ্টা, আরেকটা কারণ-লড়াইটা ওরা উপভোগ করছে। সত্যিকার পুরুষ মানুষের মত যেমন মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে চায় তেমনি মরতেও চায় সাহস, প্রত্যয় আর সম্মানের সাথে। একজন জুলিয়াস পারকারকে ওরা ভয় পায় না, আমলও দেয় না।

দুঃখিত, স্যাম। দুশ্চিন্তা কাটছে না। ওদের জন্যে কেউ অপেক্ষা করছে কিজানি না, কিন্তু আমি তোমার জন্যে সাগ্রহে অপেক্ষা করছি।

সবকিছু হয়তো আজকেই চুকে যাবে।

ব্রুকসের গলা ধরে থাকল লরিয়া, চোখ তুলে কঠিন মুখটা দেখল। সাবধানে থেকো, প্লীজ, স্যাম! ফেরার সময় আমাকে নিয়ে যাবে তুমি।

নাস্তা করেছ?

না।

চলো নিচে যাই।

না, তোমার দেরি হচ্ছে। বাবা এলে নাস্তা করব।

মাথা ঝাঁকাল ব্রুকস। ভুলেও বেরোবে না, আমি তাহলে নিশ্চিন্ত থাকতে পারব।

বাধ্য মেয়ের মত মাথা ঝাঁকাল লরিয়া, সরে গিয়ে মৃদু হাসল। তারপর ফের ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল ওকে। আমার ভয় হচ্ছে, এত উদ্বেগ ভাল লাগছে না, স্যাম। আমি তোমাকে হারাতে চাই না, অনেক উৎকণ্ঠার পর পেয়েছি… শেষ করল না লরিয়া, থামিয়ে দিয়েছে ব্রুকস।

একদিন তোমাকে বলেছিলাম, সাহস ছাড়াও কিছু স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে মানুষ, মনে আছে? এত ধকল গেল, এত বিপদ পার হয়ে এতটুকু আসতে পেরেছি কেবল এই কারণেই। জুলিয়াস পারকারকে দেখো, জেদ আর প্রতিহিংসা আছে ওর, কোন স্বপ্ন নেই। ওর লোকদেরও নেই। কিন্তু আমার আছে। তাই যেভাবে হোক সবকিছু উতরে যাব আমরা।

এটা কোন যুক্তি হলো? হেসে ফেলল লরিয়া।

যুক্তি নয় ঠিকই, কিন্তু বিশ্বাস তো! যা নিয়ে অসাধ্য সাধন করার প্রেরণা পায় মানুষ।

অত কিছু বুঝি না। তুমি মরতে পারবে না, জন স্যামুয়েল ব্রুকস! এই হচ্ছে আমার সাফ কথা। মিসেস লকহার্টকে গাউন আর আঙটির ফরমাশ দিয়েছ, রোববারে ওগুলো পরতে চাই আমি। গাঢ় স্বরে বলল লরিয়া, সবুজ চোখে বিপুল প্রত্যাশা ফুটে উঠল।

মাথা ঝাঁকাল ব্রুকস, ধীরে ছেড়ে দিল লরিয়াকে।

রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে ফিরতি পথে ল-অফিসের দিকে এগোল। স্টোর পেরোনোর সময় দেখল পোর্চে একটা টুলের ওপর বসে আছে লকহার্ট, কোলে রাইফেল, দৃষ্টি উত্তরে শহরের প্রবেশপথে।

পারকারের বাড়ির ওপর চোখ পড়তে দেখল বেরিয়ে আসছে ক্রুরা। রাস্তার ওপর সার বেঁধে দাড়াল। সবশেষে সাদা একটা সোরেলে চেপে বেরোল জুলিয়াস পারকার নিজে। দলটার সামনে এসে চড়া গলায় কথা বলল কিছুক্ষণ, তারপর ল অফিসের দিকে এগোতে শুরু করল।

ফিরে এলে যে? পোর্চে উঠে আসতে জানতে চাইল প্যাট।

লকহার্ট ওদিকটা সামলাবে। মনে হলো যা কিছু সব এদিকেই ঘটবে। নিজেদের পজিশন একবার যাচাই করল ব্রুকস-ল-অফিসে ওরা চারজন, লকহার্টের স্টোরের পোর্চে সে নিজে আর হারপাররা দুভাই, নাপিতের দোকানের ছাদে অবস্থান নিয়েছে আরও তিনজন…মন্দ নয়। পারকার সহজে ছাড় পাবে না।

পিশাচটা দেখছি নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছে, জানালার পাশ থেকে সুকৌতুকে। বলল ব্র্যাড গ্যারেট। ভালই হয়েছে, এ ঠেলায় গোড়াসুদ্ধ উপড়ে ফেলা যাবে।

ভেতরে ঢুকতে মার্শালাকে দেখতে পেল ব্রুকস, এইমাত্র বোতল খালি করেছে। কঠিন কিছু বলতে চেয়েও নিজেকে নিবৃত্ত করে নিল ও। পারকার আসছে, জ্যাক। তৈরি হয়ে নাও। ও বোধহয় আগে তোমার সাথে কথা বলতে চাইরে।

পরোয়া করি না, জ্যাক হবসের কণ্ঠে উত্তেজনা আসুক ব্যাটা, বহুত জ্বালিয়েছে, আজ ওর নয়তো আমারই শেষ দিন! দাড়িয়ে গানবেল্ট, হোলস্টার ঠিক করে নিল সে, পিস্তল পরখ করল।

নীরবতা নেমে এল, ব্র্যাড গ্যারেট পর্যন্ত চুপ মেরে গেছে।

পারকারের দলটা পৌঁছে গেছে। ল-অফিসের সামনের রাস্তায় সার বেঁধে দাঁড়াল, সবার সামনে জুলিয়াস পারকার। তারপর অ্যালান, স্টিরাপ, ম্যাসন…যোলোজন। বুক টান টান করে স্যাডলে বসেছে বুড়ো, মাথা উঁচু। অস্থির দৃষ্টিতে দেখল ল-অফিসের কাঠামো। বেরিয়ে এসো, হবস! তোমার সাথে কথা আছে। চড়া গলায় ডাকল, আত্মবিশ্বাসী কর্তৃত্বপূর্ণ স্বর বেরিয়ে যাওয়ার সময় দরজাটা একটু বেশি জোরে ভিড়িয়ে দিল মার্শাল। দৃঢ় পায়ে পোর্চে গিয়ে দাঁড়াল। অনিশ্চয়তা বা পিছুটানের কোন নমুনা নেই ওর মধ্যে। হারানো আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে। আমার সাথে কথা বলতে এত লোক লাগে নাকি, পারকার? স্থির নিষ্কম্প কণ্ঠে জানতে চাইল হবস, খানিকটা বিদ্রুপের সুরে। ভয় পাচ্ছ নাকি? সাহস থাকে তো ভেতরে এসে তোমার প্যাচাল পাড়তে পারো।

চোপরাও, হবস! খেপে গেল পারকার, রাগে জ্বলে উঠল চোখজোড়া। আমি তোমার চাকুরি করি না। বরং মাসশেষে তুমিই আমার কাছ থেকে বেতন মাও।

সেজন্যে তোমাকে কোলে বসিয়ে চুমো খেতে হবে?

বেড়ে বলেছ, জ্যাক! ভেতর থেকে উৎসাহ জোগাল ব্র্যাড গ্যারেট।

মরার আগে যত ইচ্ছে তড়পে নাও, হবস! চেঁচিয়ে বলল অ্যালান পারকার।

হাঁসের বাচ্চাটাকে চুপ করতে বলল, পারকার বড়দের মধ্যে ফোড়ন কাটার অভ্যাস দেখছি ওর যায়নি।

তোমাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু দুজন ডেপুটিকে খুন করে ল-অফিস দখল করেছ। একটা টিনের তারাও দেখছি জোগাড় করে ফেলেছ। জোর করে ক্ষমতা দখল আর দুই ডেপুটিকে খুনের দায়ে বিচার হবে তোমার।

আমাকে ধরতে আসছে কে, পারকার? আর কেনই বা! শহরের লোকেরা এখানকার কর্তা হিসেবে তোমাকে মানতে রাজি নয়, ওরা ঠিক করেছে তোমার বিষদাতকে আর ভয় করবে না। ব্যাজটা আমাকে ফেরত দিয়েছে, বাফেলোর শান্তি রক্ষার দায়িত্ব তাই এখনও আমারই, তোমার পোষা বাদর ডেপুটিদের নয়। আফসোেস না করে মেনে নাও। আমার ক্ষমতা কেবল শহরে সীমাবদ্ধ নয় এখন, বুঝতেই পারছ এ তল্লাটে যা ঘটবে তাতেই নাক গলাতে পারব। বাড়াবাড়ি করলে তোমাকেই গ্রেফতার করব। কেমন বুঝছ?।

বোঝার বাপারটা সবার আগে চুকিয়ে ফেলল অ্যালান পারকার। এক রাইডারের পেছনে ছিল সে, হাতে খোলা পিস্তল। কিন্তু কেউই সেটা দেখেনি। রাইডারের আড়াল থেকে সরে এসে নিমেষে পিস্তল তুলে গুলি করল। এমন কিছু হতে পারে আশা করেনি জ্যাক হবস, তবু ড্র করল। বুকে দুটো গুলি নিয়েও পাঁচটা গুলি করল সে। ততক্ষণে রক ভেঙে পড়েছে জায়গাটায়, সমানে গোলাগুলি হচ্ছে। শক্তি পাচ্ছে না মাশাল, মুখ থুবড়ে পড়ে আছে পোর্টে। ডান হাতে সব শক্তি সঞ্চয় করল সে, তারপর সময় নিয়ে নিশানা করে গুলি করল। ছুটে আসছিল অ্যান্সাম পারকার, মাত্র দশ গজ দূর থেকে ভারী কালিবারের গুলি ওর মাথায় আঘাত করল। স্যাল থেকে ছিটকে পড়ল দেহটা।

সবকাকে শেষ করে ফেলো! রাগে চেঁচাল জুলিয়াস পারকার। লাফিয়ে স্যাডল ছেড়ে, হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল স্যালানের দিকে। কাছে গিয়ে বসে পড়ল, কোলে তুলে নিল ছেলের মাখা! প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যেও তার অস্কুট আর্তনাদ স্পষ্ট শোনা গেল।

থেমে গেছে লড়াইটা। রাস্তার ওপাশে সরে গেছে বার-পির তুরা, অস্থির ঘোড়াগুলোকে সামলে নিচ্ছে। বুঝতে পারছে না কি করবে। ল-অফিসের পোর্কের কাছে ছেলের মাথা কোলে নিয়ে অনড় বসে আছে পারকার। হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে, মুখে শোক আর সর্বস্ব হারানোর বেদনা। মাঝরাস্তায় আরও পাঁচটা লাশ পড়ে আছে।

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে নীরবে পরিস্থিতি দেখছে ব্রুকস। অপেক্ষমাণ রাইডারদের ওপর নজর থাকলেও বারবার ওর মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে জুলিয়াস পারকার। এখন আর উদ্ধত ভাবটা নেই বুড়োর মধ্যে। নিদারুণ বাস্তবতা মেনে নিতে পারছে না লোকটা। শোকে বিহ্বল পিতা, এ-নিয়ে দুবার একই অভিজ্ঞতা হলো বার-পি মালিকের। মোটেও সুখকর নয়, করুণার সাথে ভাবল ও। কিন্তু এর পেছনে তার নিজেরও কিছুটা দায় আছে, উদ্ধত অহঙ্কারী ছেলেগুলোকে সামলে রাখার কোন চেষ্টা সে কখনও করেনি। কারণহীন আক্রোশের মাসুল তাকে দিতে হয়েছে চড়া দামে। এরপরও কি থামবে পারকার?

একই প্রশ্ন বোধহয় রাইডারদের মনেও ভিড় করেছে। উসখুস করছে লোকগুলো, চাইছে পারকার একটা নির্দেশ দিক। আকস্মিক থেমে যাওয়া লড়াইটা শুরু করতে পারে কেবল তার একটা নির্দেশ, কিংবা থামিয়েও দিতে পারে চিরদিনের জন্যে। নিজেদের মধ্যে কি যেন আলাপ করল স্টিরাপ আর ব্রনসন। পাশে দাঁড়িয়ে তা শুনছে ম্যাসন।

সঙের মত দাঁড়িয়ে আছ কেন? হঠাৎ করে শোনা গেল পারকারের পরিচিত জেদী কণ্ঠ। সব কজনকে চাই আমি, ওদের লাশ দেখতে না পেলে আমার শান্তি হবে না! মন্টানা আর লোগানকে বের করে আনো, তারপর পুড়িয়ে দেবে শহরটা, একটা বাড়িও যেন আস্ত না থাকে!

একসঙ্গে নড়ে উঠল সবাই, ছুটে আসছে। শুরুতে স্যাডলশূন্য হলো কয়েকটা ঘোড়া। মরা ঘোড়ার পেছনে অবস্থান নিল দুজন। পোর্চের কাছে এসে নিমেষে স্যাডল ত্যাগ করল কার্লি ব্রনসন, ছুটে এসে দরজার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ভেজানো পাল্লা সরে যেতে গড়িয়ে ভেতরে ঢুকল তার শরীর। চোখ তুলে দশ হাত দূরে দেখতে পেল ব্র্যাড গ্যারেটকে, জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পিস্তল সোড় করছে। চার চোখ এক হতে স্থির দৃষ্টিতে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকল ওরা, মাত্র একটা সেকেন্ড, তারপর দুজনেই সক্রিয় হলো। ব্রনসনের উল্লাসধ্বনি চমকে দিল অন্যদের, গোলাগুলির আওয়াজ ছাপিয়ে উঠল সেটা। পিস্তল তুলে গুলি করল সে। ওদিকে অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছে টেক্সান, বিদ্যুৎ বেগে ঘাড়ের পেছনে চলে গেল ওর ডানহাত। তীক্ষ্ণ শব্দে বাতাস কাটল একটা ছুরি, ঠক করে বিঁধল ব্ৰনসনের গলায়। হাঁটু ভেঙে মেঝেতে পড়ল বিস্মিত ব্রনসন, গলগল করে বের হওয়া রক্ত অবিশ্বাসের সাথে দেখছে। এদিকে তীব্র ব্যথায় কুঁচকে উঠেছে ব্র্যাড গ্যারেটের মুখ, বুক চেপে ধরে কাত হয়ে পড়ে গেল সে।

মুহূর্তের জন্যে সহোদরের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়েছিল প্যাট, ঠিক এসময়ে ওর উরু ভেদ করল গুলিটা। হাঁটু ভেঙে পড়ে গেল সে, দরজার দিকে তাকাতে দেখতে পেল টম স্টিরাপকে। পিস্তল তুলছে আবার। টেক্সানের গুলি তার পেট ফুটো করল, পরেরটা বুকে বিঁধল। দরজার বাটের ওপর কাত হয়ে পড়ল তার বিশাল দেহ। শেষবারের মত চেষ্টা করল স্টিরাপ, কিন্তু ঝাপসা দৃষ্টি বিশ্বাসঘাতকতা করল ওর সাথে। শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ছেড়ে দিল পিস্তলটা, মরার আগে নিজের উদ্দেশে তীব্র গাল বকল।

ঘোড়ার পেছনে অবস্থান নেয়া লোকগুলো এলোপাতাড়ি গুলি করে যাচ্ছে। ছেলের পাশে পড়ে আছে জুলিয়াস পারকার, কখন কিভাবে গুলি লেগেছে কেউই বলতে পারবে না। চারজন লোক চম্পট দিয়েছে। ইচ্ছে করলে ওদের অন্তত দুজনকে ধরাশায়ী করতে পারত ব্রুকস, তা করেনি। পেছন থেকে কাউকে গুলি করা ওর ধাতে নেই।

লকহার্টের তোপের মুখে শেষতক অবশ্য রেহাই পেল না লোকগুলো।

হঠাৎ করে এভাবে লড়াই শুরু হবে পারকারের কল্পনাতেও বোধহয় তা ছিল না। বোকার মত সবকিছু ভজকট করে দিয়েছে অ্যালান, তারপর আর কারও পিছিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। যে লড়াই অনেকক্ষণ ধরে চলার কথা তা মাত্র অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। জুলিয়াস পারকার লোক হিসেবে যাই হোক না কেন তার ছেলেগুলো অকম্মার চূড়ান্ত, ওরাই তাকে ডুবিয়েছে, এমনকি এই শেষ মুহূর্তেও।

তোমরা দুজন, ঘোড়ার পেছনে, চেঁচাল ব্রুকস। হাত তুলে উঠে দাঁড়াও। আমার হাতে একটা শটগান আছে। শুনেছ?

উত্তরে পাল্টা গুলি করল ওরা। শটগান কক করল ও। শব্দটা নিশ্চিতভাবেই ওদের কানে যাবে।

ধীরে উঠে দাঁড়াল ওরা, টিম ম্যাসন আর অচেনা এক লোক। ব্রুকস খেয়াল করল হাত তোলেনি ডেপুটি এবং পিস্তলটা এখনও ডান মুঠিতে ধরে রেখেছে। ক্ষীণ হাসল ও, নিজেকে খুব স্মার্ট ভেবেছে ম্যাসন। ওটা ধরে আছ কেন, ম্যাসন? হালকা সুরে জানতে চাইল ও।

এই তো ফেলে দিচ্ছি, বলে ঝুঁকল সে, এবং গুলি করল।

গোলাটা দুভাগ করে ফেলল ডেপুটিকে। বসে পড়েছে অন্য লোকটা, চোখে আতঙ্ক। গড়গড় করে বমি করতে শুরু করল।

দুটোকে ধরে এনেছি, স্যাম, লকহার্টের চড়া গলা শোনা গেল।

এটাকেও নিয়ে এসো, বিল। সেলে ঢোকাও। সাড়া দিল ও। আর জলদি কাউকে ডকের কাছে পাঠাও। আসতে না চাইলে যেন জোর করে নিয়ে আসে। গ্যারেটদের কাছে গেল ও। ভাইকে চেপে ধরে আছে প্যাট। ব্র্যাডের বুকের ক্ষত থেকে রক্ত গড়িয়ে মেঝেতে ছোটখাট একটা পুকুরের সৃষ্টি হয়েছে। অচেতন টেক্সানকে পরীক্ষা করল ও, ঠিকমত চিকিৎসা হলে হয়তো বেঁচে যাবে।

বিষণ্ণ, শূন্য দৃষ্টিতে ওকে দেখল প্যাট, চোখের কোণ ভিজে উঠেছে। কঠিন লোকটাকে এ মুহূর্তে পশ্চিমের আর দশজনের মতই সাধারণ মনে হচ্ছে-কষ্ট, প্রিয়জন হারানোর বেদনা যাদের সহজেই স্পর্শ করে।

ডাক্তার আসার পর কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে বাঙ্কে ভোলা হলো ব্র্যাডকে। একপাশে সরিয়ে ফেলা হয়েছে লাশগুলো, বেঁচে যাওয়া বার-পি ক্রুদের সেলে ঢোকানো হলো।

বেরিয়ে এল ব্রুকস, লম্বা করে শ্বাস টানল। গান পাউডারের গন্ধে ভারী হয়ে আছে বাতাস, রাস্তার কয়েক জায়গায় জমাট বাধা রক্ত। শেষপর্যন্ত বোধহয় চুকল ঝামেলাটা, ভাবল ও, অনেক রক্তের বিনিময়ে পারকারদের জেদ থেমেছে।

মি. ব্রুকস?

সেলুনের পোর্চে দাঁড়িয়ে আছে ডাস্টি ফগ।

তোমার সাথে কথা বলতে চায় মি. পারকার।

ভূ-লুণ্ঠিত জুলিয়াস পারকারের লাশ ভেসে উঠল ওর মানসপটে।

জুলিয়াস পারকারের বড় ছেলে, নিকোলাস পারকার।

ওর কাছে তার কি প্রয়োজন? বাপের সাথে যোগ দেয়নি নিকোলাস, এটাও বিস্ময়ের ব্যাপার। কদিন আগে পারকারের সাথে মুখোমুখি পড়ে যাওয়ার সময়েও বুড়োর সাথে ছিল না নিকোলাস। সম্ভবত এড়িয়ে যাওয়ার স্বভাবটাই ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে এখনও, আজকের লড়াইয়ে যোগ দিলে হয়তো বাপ-ভাইয়ের মত একই পরিণতি হত ওর।

রাস্তা পেরিয়ে ডাস্টির পিছু নিল ও।

সেলুনে ঢুকে দেখতে পেল তাকে। একটা টেবিলে বসে আছে, বিধ্বস্ত জড়সড় দেখাচ্ছে। সামনে হুইস্কির বোতল আর গ্লাস। ফোলা ফোলা চোখ তুলে একবার দেখল ওকে, তারপর মাথা নিচু করল। অপরাধবোধ আর স্বজন হারানোর ব্যথায় কাতর। সারাটা জীবন ভুগবে যুবক।

নিকোলাস পারকারের প্রতি করুণা অনুভব করল ব্রুকস। চেয়ার টেনে বসল ও, অপেক্ষায় থাকল।

অনেকক্ষণ পর মুখ তুলল নিকোলাস। বুঝলে, ব্রুকস, আমি একটা কাপুরুষ! চোখের সামনে ওদের মরতে দেখলাম অথচ কিছুই করতে পারলাম না। এমন নয় যে পিস্তল চালাতে জানি না, কিন্তু আমি জানতাম, শেষপর্যন্ত ওরা হেরে যাবে। অ্যালান দলে থাকলে তা ঘটবেই। প্রথম থেকেই ওদের সিদ্ধান্তগুলো আমি মেনে নিতে পারিনি।

বিরক্তিবোধ করছে ব্রুকস, কিন্তু নির্লিপ্ত থাকল।

এখান থেকে চলে যেতে চাই আমি। সব বেচে দেব। তুমি কি আমাকে এটুকু সাহায্য করবে?

আমি কি করতে পারি?

শহরের লোকজনকে বোঝাবে যে আমার পক্ষ থেকে আর কোন ঝামেলা হবে না। তোমার কথা ওরা ফেলবে না।

তোমার বাবা বোধকরি এটা কখনোই চায়নি। তার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার চেষ্টাই হয়তো তোমার করা উচিত।

একগাদা গানম্যান, আউট-ল ভাড়া করে, তারপর ওভাবে আত্মাহুতি দিয়ে?

তোমার বেলায় ওরকম না-ও ঘটতে পারে।

বেসিনে অশান্তির কারণ হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই, কখনও ছিল না।

তুমি যদি কেবল নিজেকে নিয়ে থাকো তো কেউ তোমাকে তাড়া করতে আসবে না। তবে দুএকজন যে তোমার সাথে তামাশা করবে না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। এটা তোমার প্রাপ্য, বাপ-ভাইদের অপকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। উঠতে যাচ্ছিল ব্রুকস, মন্টানা কিড আর টম ললাগানকে দেখে আড়ষ্ট হয়ে গেল ওর শরীর। দুকান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে ওদের হাসি, হাতে উদ্যত পিস্তল। দরজার সাথে শরীর ঠেস দিয়ে দাঁড়াল লোগান, মন্টানা এগিয়ে এল।

ঝাঁপটা নামিয়ে দাও, ডাস্টি, আমুদে কন্ঠে নির্দেশ দিল মন্টানা। দেনাপাওনা চুকাতে সময় লাগবে। লোকজন এসে অযথা বাগড়া দিলে আমার মোটেও ভাল লাগবে না।

ছুটল বারকিপ, বেরিয়ে গিয়ে ঝাপ নামাতে শুরু করল।

ধীরে বসে পড়ল ব্রুকস, নিকোলাসের দিকে তাকাল। তো নিকোলাস পারকার, বাপ-ভাইদের পথেই আছ তুমি। আরেকটু হলে তোমার গল্প বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। দারুণ অভিনয় করেছ কিন্তু।

শ্লেষের জবাবে বিদ্যুৎবেগে এল চড়টা, জ্বালা ধরে গেল ব্রুকসের গালে। অভিনয়? কোনটা অভিনয়? সম্পূর্ণ বদলে গেছে নিকোলাসের চাহনি, এখুনি যেন ঝাঁপিয়ে পড়বে ওর ওপর। তোমার কারণে মারা গেল আমার বাপ-ভাইয়েরা। ভেবেছ সহ্য করব? একটু আগে তুমিই বলেছ যে ওদের দেখানো পথেই যাওয়া উচিত। হঁ্যা, আমি বাধ্য হয়েছি। ওদের মত কখনও ভাবিনি, কিন্তু মরে গিয়ে আমাকে হিংস্র হতে বাধ্য করেছে ওরা। কি মনে করেছ, পারকাররা এতদিন ইচ্ছেমত বেসিন শাসন করেছে আর আজ আমি মাথা হেঁট করে বাফেলো থেকে বেরিয়ে যাব? সেটা কখনও হবে না। মাথা উচু করেই যাব আমি। তাবৎ লোকজন বিস্মিত হয়ে দেখবে জুলিয়াস পারকারের সবচেয়ে শান্ত ও বোকা ছেলেটা বাপের মতই হিংস্র হয়ে উঠেছে। এখন থেকে এ তল্লাটে শাসন করবে এই নিকোলাস পারকার।

রাজত্ব পাওয়ার আগেই স্বপ্ন?

মন্টানা কিড সক্রিয় হলো এবার। তার চালানো পিস্তলের নলের আঘাতে ব্রুকসের মনে হলো থুতনি ভেঙে গেছে। তীব্র ব্যথায় অবশ হয়ে গেল জায়গাটা। মনে মনে কেভিন লকহার্টের চোদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করল, তার ওপর নির্ভর করা মোটেও ঠিক হয়নি। এমন একটা ভুল ও করল কি করে? মন্টানা আর লোগান ছাড়া না পেলে পারকার এত হিংস্র হয়ে উঠতে পারত না।

আমাদের পুরানো ব্যাপারটা ভুলে গেছ নাকি, ব্রুকস? মন্টানায় একচোট নিয়েছিলে আমার ওপর, উঁহু, মোটেও ভুলিনি আমি। আজ পেয়েছি তোমাকে, সুদে-আসলে সব উসুল করে নেব!…ডাস্টি, আমাকে হুইস্কি দাও।

পাশ ফিরে বারকিপারের দিকে তাকাল ব্রুকস, চোখাচোখি হতে চোখ সরিয়ে নিল সে। ব্রুকস ধারণা করল; এ বিশ্বাসটা অন্তত নষ্ট হয়নি, ডাস্টি ফগের হাত নেই এসবে। যেভাবেই হোক তাকে ম্যানেজ করেছে পারকার, সম্ভবত ওর মতই ভাওতা দিয়ে। তবে উল্টোটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেলুনটা মূলত পারকারদের আর বার-পি রাইডাররা আগাগোড়া এখানেই সময় কাটাত। ডাস্টি ফগকে এখনও সবাই জানে পারকারদের দোসর হিসেবে।

তোমার তো অনেক দেনা, আলাপী সুরে বলছে মন্টানা। আমার, পারকারের, লোগানের, এমনকি ফগের কাছেও কিভাবে এত দেনা শোধ করবে? বারকিপারের হাত থেকে হুইস্কির গ্লাস নেয়ার সময় ডাস্টির ব্যান্ডেজ বাঁধা নাকের দিকে তাকাল। কি ফগ, ভুলে গেলে নাকি তোমার নাক ভেঙে দিয়েছিল এ ব্যাটা?

না।

পাওনা তুলে নেবে না?

আমার হয়ে তোমরাই না হয়… অন্যরা হেসে উঠতে থেমে গেল সে।

কখন ছাড়া পেল ওরা, পারকারের সাথে যোগাযোগ হলো কিভাবে? যেভাবেই হোক সুষ্ঠুভাবে ঘটেছে সবকিছু। বাপের সাথে যোগ না দিয়ে এভাবেই নিজের কাজ সারতে চেয়েছে নিকোলাস, হয়তো পুরো দলের ওপর আস্থা ছিল না ওর কিংবা লড়াই শেষ হওয়ার পর পরিকল্পনা করেছে। কৌশলটা কাজে দিয়েছে এটাই হচ্ছে বড় কথা। বাগে পেয়েছে ওকে। মন্টানা কিড, স্বভাব বা আচরণে না হলেও গায়ে-গতরে সে বিলি দ্য কিডের ছায়া। ওঁর হাতে মরা লোকের সংখ্যা কিংবদন্তীর ওই বন্দুকবাজের চেয়েও বেশি। শারীরিক মিলের কারণে কিড হিসেবে আখ্যা পেলেও ফেয়ার ডুয়েলে সে আসল কিডের ধারে-কাছেও হবে না। কিন্তু তাতে খুশি হওয়ার কিছু নেই। ওকে কোন সুযোগই দেবে না মন্টানা, লোকটার ধাতে তা নেই। চোখের দিকে তাকিয়ে, কপালে পিস্তলের নল ঠেকিয়ে বহু নিরস্ত্র লোককে খুন করেছে সে। টম লোগান আরও এক কাঠি বাড়া, পেছন থেকে খুন করা তার সবচেয়ে পছন্দ। ওর ভাই, ম্যাট লোগান খুন হয়েছে ব্রুকসের হাতে, লোগানের আক্রোশ তাই মন্টানার চেয়েও বেশি।

এত কি ভাবছ, ব্রুকস? লাভ হবে না, গ্যাড়াকলে পড়েছ এবার। মুখিয়ে উঠল মন্টানা, পিস্তল নাচাল ওর মুখের সামনে। সারা পশ্চিমে তোমার এত নামডাক, এতবড় একজন বন্দুকবাজকে নিরস্ত্র অবস্থায় মারতে চেয়েছিল লোগান, আমি বাদ সেধেছি। তোমার জোড়া পিস্তল তোমারই থাকবে, কিন্তু আমার হাতে থাকবে হ্যামারটানা পিস্তল, কেবল ট্রিগার টানলেই হলো। বোঝে ব্যাপারটা, পিস্তল থেকেও অসহায় তুমি! মজাটা তো এখানেই। আমি দেখতে চাই তুমি কত বড় বন্দুকবাজ, আমার ট্রিগার টানার আগেই পিস্তল বের করে গুলি করতে পারবে?

ঘামতে শুরু করেছে ব্রুকস। মাত্র একটা সুযোগ চাই ওর, তাহলেই লোকটার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস গুড়িয়ে দিতে পারবে। নিদেনপক্ষে তাকে নিয়ে মরবে। মাথাটা দ্রুত সচল হয়ে উঠল, ভাবছে একটার পর একটা সম্ভাবনা, বাতিলও করে দিচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে। উহু, অতিরিক্ত ঝুঁকি। অস্বীকার করার উপায় নেই, এরকম কঠিন অবস্থায় জীবনে পড়েনি আর। নিশ্চিত মৃত্যু এসে দাঁড়িয়েছে সামনে। কিন্তু এভাবে অসহায়ভাবে মরতে চায় না ও। হঠাৎ করে লরিয়া ফ্ল্যাগানের অনিন্দ্যসুন্দর মুখটা ভেসে উঠল ওর মানসপটে, মেয়েটাকে পাওয়া তার হলো না…স্বপ্নটা অপূর্ণই থেকে যাবে?

রাজত্বের কথা বলছিলে না, ব্রুকস? সিগার ধরিয়ে সজোরে ধোঁয়া ছাড়ল পারকার, ব্রুকসের চোখে-মুখে এসে পড়তে চোখ জ্বালা করে উঠল। ওটা তো আগে থেকেই আছে, আমি কেবল আরেকটু জাঁকিয়ে বসব। একটু টাইট দেব এখানকার কয়েকটা হারামজাদাকে, এমন শিক্ষা দেব যাতে জীবনে আর আমার বিরুদ্ধে লাগার সাহস না হয়। রাজকন্যার কথা শুনবে না? লরিয়া ফ্ল্যাগান। আমার ভাগ্যটা সত্যি দারুণ! বাড়ও ওকে পছন্দ করত, কিন্তু শেষপর্যন্ত ওকে আমিই পাব। জেমস ফ্ল্যাগানকে চেপে ধরলে বাপ-মেয়ে দুজনেই রাজি হয়ে যাবে।

না, এত সহজ হবে না, ভাবল ব্রুকস। ফ্লাগান জেদী মানুষ, প্রখর আত্মসম্মানবোধ আছে তার। লরিয়া ওর বাপের মতই, আপস করার মানসিকতা ওর মধ্যে নেই। তুমি ওদের চিনতে ভুল করেছ, পারকার। ফ্লাগান রুখে দাড়াবে।

বাইরে হৈ-হল্লা শোনা যাচ্ছে, ফুর্তি করছে লোকজন। তাঁদের জানার উপায় নেই পারকারের সেলুনের ভেতর কি ঘটছে। নামানো ঝাপের ওপর অনেকগুলো ঢিল এসে পড়ল, সাথে কয়েকটা মন্তব্য। ফগটা একটা দালাল! চলো সেলুনে আগুন লাগিয়ে দেই। একজন প্রস্তাব করতে অন্যরা হৈ-হৈ করে উৎসাহ জোগাল। কিন্তু সবাইকে নিরস্ত করল লকহার্টের চড়া গলা।

ব্রুকসের কপালে পিস্তলের নল চেপে ধরেছে মন্টানা, তাকিয়ে আছে চোখে। দৃষ্টিতে খুনের নেশা। ও টু-শব্দ করলে গুলি করার সুযোগ পাবে। ঠায় বসে আছে ব্রুকস, নীরবে দেখছে তিনজনকে। পারকার নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করেও উদ্বেগ চেপে রাখতে পারছে না, মৃদু অস্বস্তি তার চোখের তারায়। লোগানৈর পিস্তল দরজার দিকে তাক করা। বারের ওপাশে এককোণে দাঁড়িয়ে থেকে সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে দরজা দেখছে ডাস্টি ফগ, তার আশঙ্কা উন্মত্ত লোকগুলো হয়তো দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়বে।

সময় যেন আটকে থাকল, অনেকক্ষণ। একসময় ধীরে দূরে সরে গেল লোকগুলো। ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ল ওদের। পিস্তল সরিয়ে নিল মন্টানা। আরও কিছুক্ষণ, আয়ু বাড়ল তোমার, সহাস্যে বলল সে, সরে গেল খানিকটা। ডাস্টিকে ইঙ্গিত করল হুইস্কি দিতে, ব্রুকসের ওপর থেকে চোখ না সরিয়েই। ওকে একটা ড্রিঙ্ক দাও, ডাস্টি। দেখছ না গলা শুকিয়ে গেছে? মরার আগে শেষবারের মত গলা ভিজিয়ে নিক।

আমাকে পিস্তলবাজ বলবে না, ব্রুকস? সন্তুষ্টি পারকারের গলায়, হাসছে। নিজে পিস্তল না চালিয়েও জন ওয়েসলি হারডিনকে কত সহজে বধ করতে যাচ্ছি। সেরা পিস্তলবাজ তো আমাকেই বলা উচিত।

হুইস্কি ভরা গ্লাস ওর সামনে নামিয়ে রাখল বারকিপ।

নাও, গলা ভেজালে কিছু মনে করব না। কিন্তু সাবধান, ভুলেও কিডকে সুযোগ দিয়ো না! ও এমনিতেই মুখিয়ে আছে। দুর্ভাগ্য ব্রুকস, তোমার শত্রুরা তোমার মতই জেদী এবং বেপরোয়া। ওদের দোষ দিতে পারো না তুমি, শোধবোধের সময় রাখ-ঢাক কেউই পছন্দ করে না। খেলাটা বুঝতে পারছ? তোমাকে পিস্তল বের করতে বলে গুলি করবে মন্টানা কিড। কেবল একটা চেষ্টা করার সুযোগ পাবে তুমি, ব্যর্থতার সম্ভাবনা যোলো-আনা। খেলাটার মজা আমাকেও স্পর্শ করেছে! উৎফুল্ল দেখাল নিকোলাসকে।

দুজনকে সামলাতে হবে, ভাবছে ধ্রুকস, সম্ভব কি অসম্ভব তা এখন আর ওর মাথায় নেই। একটা সুযোগের অপেক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। হাতু বাড়িয়ে তুলে নিল গ্লাসটা, ধীরে চুমুক দিল। বিস্বাদ লাগছে, এমন একটা মুহূর্তে কিছুই ভাল লাগার কথা নয়। ইতোমধ্যে সবার অগোচরে দুটো কাজ সেরে ফেলেছে-চেয়ারের পায়ার পেছনে চলে গেছে ওর ডান পা, আর সামনে খানিকটা মেলে দিয়েছে বাম পা-টা। শেষপর্যন্ত তুমি ব্যর্থ হবেই, নিকোলাস পারকার, গ্লাস নামিয়ে রাখার সময় ধীরে ধীরে বলল ও। সম্পূর্ণ শিথিল করে দিয়েছে শরীর, যাতে ওরা কিছু আন্দাজ করতে না পারে। যা হওয়ার হবে, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, শেষ চেষ্টা করবে। ক্ষীণ একটা সম্ভাবনা আছে।

বারের ওপাশে নড়ে উঠল ডাস্টি ফগ। বোধহয় শটগান তুলে আনছিল, ধরা পড়ে গেল লোগানের চোখে। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে গুলি করল লোগান। ব্রুকসের দিকে তাক করা ছিল ওর পিস্তল, সেটা ঘোরাতে যে সময় লাগল তাতে অনায়াসে বারের আড়ালে বসে পড়তে পারল ডাস্টি। তাকে রাখা বোতল ফুটো করল গুলিটা। তরল হুইস্কি ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এসে বার ভিজিয়ে দিল।

মন্টানার চোখ সরে গিয়েছিল সেদিকে, কিন্তু একচুলও নড়েনি পিস্তলের নল। ঘুণাক্ষরেও আশা করেনি বাগড়া দেবে বারকিপার! এ সুযোগটাই নিল ব্রুকস। ডান পা চেয়ারের পায়ার সাথে বাধিয়ে ধাক্কা দিল, একইসাথে বাম পায়ে মেঝেতে ভর দিয়ে পেছনে ঠেলে দিল চেয়ার আর নিজের শরীর। গুলি করল মন্টানা, কিন্তু ব্রুকস আগের অবস্থানে নেই আর। গুলিটা ওর কপালে গরম আঁচ লাগিয়ে চুলে সিঁথি কাটল। চেয়ারসমেত মেঝেয় পড়ার আগেই গুলি করল ব্রুকস, মন্টানা কিডের মুখ তুবড়ে দিল সেটা। মাত্র চার হাত দূর থেকে করা, নাক বরাবর বিশাল গর্তের সৃষ্টি হলো। বুলেটের ধাক্কায় ছিটকে পড়ল সে।

কেবল একটা গুলি করার সুযোগ পেল টম লোগান। ওটা ব্রুকসের বাম কাঁধে বিধতে কেঁপে উঠল ওর দেহ, নিশানা ছুটে গেল। তবু, লোগনের কান ফুটো করেছে গুলিটা। পরেরটা এত দ্রুত করল যে শব্দে মনে হলো একটাই গুলি করেছে। লোগানের গলা ফুটো হয়ে যেতে গলগল করে রক্ত বেরোতে শুরু করল। পিস্তল ছেড়ে দিয়ে দুহাতে গলা চেপে ধরল গানম্যান, বাতাসের জন্যে হাঁসফাস করছে। গলা থেকে ঘড়ঘড় শব্দ বেরোচ্ছে। চোখে নগ্ন বিস্ময় আর সীমাহীন আতঙ্ক। গড়িয়ে পড়া রক্ত ভিজিয়ে দিল ওর হাত আর বাহুমূল, কাশি দিতে রক্ত উঠে এল মুখে। ফেনিল রক্তের ধারা বমির মত গলা দিয়ে উগরে দিতে শুরু করল এবার। দেয়াল বরাবর হেঁচড়ে নেমে গেল শরীর, কয়েকবার খিচুনি দিয়ে স্থির হয়ে গেল।

নিকোলাস পারকারের দিকে নিশানা ধরে রেখেছে ব্রুকস, সারা শরীর কাঁপছে। এতক্ষণ চেপে রাখা অবর্ণনীয় মানসিক চাপ আর একই সাথে বিপদমুক্তির প্রশান্তি সারা দেহ জুড়ে। বিহ্বল হয়ে পড়েছে পারকার, বিশ্বাস করতে পারছে না ছক পাল্টে গেছে। ক্লান্তি অনুভব করল ব্রুকস, গুলির শব্দে কান ঝাঁঝাঁ করছে। মন্টানার সাথে ওর গুলি বিনিময় হয়েছে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক রেঞ্জে। সারা ঘরে গান পাউডারের ধোয়া আর তীব্র গন্ধ।

ছুটে এসে ওকে ধরল ডাস্টি, একটা চেয়ারে বসাল। হুইস্কির গ্লাস এগিয়ে ধরতে তাতে চুমুক দিল ব্রুকস। কিছুটা সুস্থির বোধ করছে। ধন্যবাদ, ডাস্টি, তুমিই আমাকে বাঁচিয়েছ! আন্তরিক কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল ও।

আমি আবার কি করলাম!

তখন শটগান তুলে নিতে হাত বাড়ালে না?

আদপে ওখানে কিছু ছিল না, হাসছে ডাস্টি। ভাওতা দিয়েছি ওদের। আসলে তোমার ওপর চোখ রেখেছিলাম, দেখলাম তৈরি হয়ে গেছ। পা নাড়তে দেখে আন্দাজ করে নিয়েছি কি করতে চেয়েছ। আমি কেবল একটা ডাইভারশন সৃষ্টি করেছি। অন্য কেউ হলে এতেও শেষ রক্ষা করতে পারত না। তুমি হারডিন বলেই…

ভুলে যাও, ব্রুকস নামটাই আমার পছন্দ, বাধা দিল ও। নয়তো স্যাম ডাকতে পারো। তুমি যা-ই করে থাকো না কেন আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এখন দয়া করে দুটো কাজ করবে? আগে পারকারকে কষে বেঁধে কোথাও আটকে রাখা, তারপর দরজাটা খোলো।

আঁতকে উঠল ডাস্টি। আমার সেলুনের বারোটা বাজাবে ওরা!

তা করবে না। লোকজনকে বোঝনোর দায়িত্ব আমার।

মাথা ঝাঁকিয়ে কাজে নেমে পড়ল বারকিপ, যদিও পুরোপুরি সন্তুষ্ট দেখাচ্ছে তাকে।

দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে গোড়ালি আর কাঁধে একরাশ ব্যথা অনুভব করল ব্রুকস। ক্ষত থেকে চুইয়ে রক্ত ঝরছে। আর কত ক্ষত তৈরি হবে ওর শরীরে, তিক্ত মনে ভাবল। হাত নাড়তে টের পেল ব্যথাটা আঙুল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। হাঁটতে গিয়ে মচকে যাওয়া গোড়ালিতে জোর পেল না, বসে পড়ল চেয়ারে। লাশগুলো এককোণে সরিয়ে ফেললা, ডাস্টি। দুঃখিত, সাহায্য করতে পারছি না।

লাগবে না, স্যাম। কাঁধে তো বইব না, টেনে সরিয়ে নেব কেবল। বহুত জ্বালিয়েছে ওরা। ওদের মরতে দেখে শান্তি লাগছে। বিশ্বাস করো, লাশগুলো টানতেও সুখ পাব।

একটু পর দরজা খুলল সে, উঠে দাঁড়াল ব্রুকস।

এত তাড়া কিসের? বলে উঠল বারকিপ। বসে পড়ো, ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছি। অবশ্য অনেক আগেই তা করা উচিত ছিল। আমি আসলেই একটা গাধা! ওদের সরিয়ে লাভটা কি, যা করলাম তা মরা মানুষগুলোর কোন কাজে আসবে না!

বাইরে ছুটন্ত শব্দ, অনেকের। সবার আগে পোর্চে উঠে এল লরিয়া ফ্ল্যাগান। ব্যাটউইং দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল। ছুটে আসছে। বারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল ব্রুকস। উড়ে এসে ওর বুকে আছড়ে পড়ল লরিয়া, দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে ফোপাতে শুরু করল। সারা শহরে খুঁজে মরছি, কোথাও পাচ্ছিলাম না তোমাকে। বোঝে আমার মনের অবস্থাটা! তারপর কেভিন বলল এদিকে গুলির শব্দ শোনা গেছে, ছুটে এলাম। ওহ, স্যাম, এত খুশি লাগছে!

গাধাটা তাহলে বেঁচে আছে। মন্টানা আর লোগানের তো ওকে ছেড়ে দেয়ার কথা নয়।

লরিয়া খেয়াল করল ব্রুকসকে কষ্ট দিচ্ছে। লজ্জায় আরক্ত হলো ওর গাল, মাথা নিচু করে ফেলল। ছুটে গিয়ে একটা চেয়ার এনে বসাল ব্রুকসকে। নিচু হয়ে গাউনের দুটো পরতা তুলে আরেক পরতা থেকে একখণ্ড কাপড় ছিড়ে ফেলল। তারপর ব্রুকসের কাঁধে বাধতে শুরু করল।

সজল সবুজ চোখজোড়ার দিকে তাকাল ব্রুকস। মেয়েটা ওর কাজে পুরোমাত্রায় মনোযোগী। লরিয়া?

চোখ তুলে তাকাল ফ্ল্যাগান-কন্যা।

আমার গানবেল্টগুলো খুলে নেবে? আর কখনও ওগুলো ছোঁব না আমি।

পরে হয়ত এগুলোর দরকার হবে, স্যাম।

হবে না। বেসিনের অশান্তি মিটে গেছে। আমার খোজেও আর আসবে না কেউ। কারণ ওয়েসলি হারডিন মরে গেছে আজ। বিকেলে বুটহিলে দুটো কবর খোড়া হবে, একটা মন্টানা কিডের আরেকটা হারডিনের। দারুণ একটা ডুয়েল শেষে দুজনেই মারা গেছে।

বিমূঢ় লরিয়া, গানবেল্ট খুলে নিয়েছে। অনেকেই তোমার আসল পরিচয় জানে।

কজন হবে? যারা জানত তাদের বেশিরভাগই এখন আর নেই। এখানকার দুএকজন হয়তো জানে, কিন্তু ওরা বোধহয় আমার জন্যে এটুকু করবে। মিথ্যে তো বলতে হবে না, স্রেফ হজম করে ফেলবে সত্যটা। তাছাড়া একটা কবর মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্যে যথেষ্ট। কি বলল, ডাস্টি?

একমত আমি,সহাস্যে বলল সে। আমার মনে হয় সবার কাছ থেকে এটুকু পাওয়ার দাবি ও করতে পারে।

বেরিয়ে এল ওরা। ডাক্তার হেনরীর চেম্বার হয়ে মিসেস রিচার্ডসের রেস্তোরাঁয় বসল। উফুল্ল দেখাচ্ছে শহরের লোকজনকে। পারকার পরিবারের গ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়াটা সবার কাছে উপভোগ্য মনে হচ্ছে।

ওয়েসলি হারডিন একজন ভয়ঙ্কর মানুষ, বেসিনের লোকজনের কাছে এখানকার অধিবাসী হিসেবে স্যামুয়েল ব্রুকসের মত নিরীহ লোকই পছন্দ, এটা কি তুমি ধরতে পেরেছ? সারা জীবনে আমি অনেক দেখেছি–পশ্চিমের লোকেরা বন্দুকবাজদের এড়িয়ে চলে, কখনোই সহজ হতে পারে না এবং ভয় করে। এক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে মহিলারাই বেশি এগিয়ে। লরিয়া, এ জন্যেই হারডিন হিসেবে তোমার সামনে আসতে চাইনি আমি। তাই পণ করেছিলাম কখনও পিস্তল ধরব না।

ভুল জানো তুমি। আমার কিন্তু মোটেও সেরকম মনে হচ্ছে না। তবে এটা ঠিক, স্যামুয়েল ব্রুকসকেই আমার কাছে সহজ মনে হয়। বুঝতে পারি তাকে। আচ্ছা, পিস্তল ধরতে তোমাকে বাধ্য করেছিল পারকাররা, পণ ভাঙায় তোমার দুঃথ হয়নি?

না, সহাস্যে, গাঢ় স্বরে বলল ব্রুকস। একটুও না। কারণ বিনিময়ে আকাক্ষিত রত্নটি পেয়েছি আমি।

হাসল লরিয়া, কপাল থেকে অবাধ্য একগোছা চুল সরিয়ে দিল। সে দিনটি আমার তাড়াতাড়িই এসেছে, তাই না? এখন থেকে আমার কোন প্রশ্নই তুমি এড়িয়ে যাবে না।

ঘটনাটা মনে পড়তে আপনমনে হাসল ব্রুকস। আমার ভয় ছিল তুমি হয়তো আমাকে পছন্দ করবে না। নিজের ইচ্ছের কথা তাই তোমাকে বুঝতে দিতে চাইনি।

ওহ, ওই উইলটার কথা না জানলে আমি ধরতেই পারতাম না! অথচ আমি তখন ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে। তুমি ধরতে পারোনি। অভিযোগ লরিয়ার কণ্ঠে। অথচ বাবা ঠিক ঠিক বুঝে ফেলেছিল।

আমার ভয় হচ্ছিল হয়তো তোমার আগ্রহকে ভুল বুঝেছি।

এবার বলো, ওই প্রশ্নটার উত্তর আমার পাওনা।

শুনতেই হবে? তুমি নিজেও জানো ওটার উত্তর, অন্তত এখন।

তবু শুনতে চাই। শুনতে যে আমার ভাল লাগবে!

হ্যাঁ, লরিয়া ফ্ল্যাগান অপমানিত হলে অনেক কিছু আসত-যেত স্যামুয়েল ব্রুকুসের। এখানে ওর জীবন নতুন করে শুরু হয়েছিল তো ওই মেয়েটির জন্যেই।

 

পরের রোববারে গির্জায় বিয়ে হয়ে গেল ওদের। প্রিস্টের কাছে অস্ত্র জমা রেখে শপথ করল ব্রুকস যে আর কখনও ওগুলো তুলে নেবে না।

স্যামুয়েল ব্রুকস তার শপথ অটুট রাখতে পারেনি, পরে আবারও তুলে নিয়েছিল নিজের বহুল ব্যবহৃত অস্ত্র।

সেটা ভিন্ন গল্প।

<

Super User