জিনিয়াদের বাসা নয়া পল্টনে, সে দেখতে শুনতে খুব ভালো। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় টিকলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। অনেকবার তাদের বাসায় গেছে। টেনে পড়ার সময় টিকলী যেদিন তার ভাইয়া আলীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, সেদিন তাকে জিনিয়ার খুব ভালো লাগে। তারপর একদিন কথায় কথায় টিকলীকে বলে ফেলে, তোর ভাইয়া কিন্তু দারুন হ্যাঁন্ডসাম।

 টিকলী হেসে উঠে বলেছিল, তাই নাকি? তা ভাইয়ার পিছনে লাইন লাগাবি নাকি?

জিনিয়া লজ্জা পেয়ে মৃদু হেসে বলেছিল, ধেৎ, কি বাজে কথা বলছিস?

ওমা, এটা আবার বাজে কথা হবে কেন? তুই-ই তো বললি, ভাইয়া দারুন হ্যাঁন্ডসাম। মেয়েরা তো ঐ রকম ছেলেকেই পছন্দ করে। আমি যতদুর জানি, ভাইয়া এখনো কোনো মেয়ের দিকে নজর দেয়নি। তুই চাইলে এ ব্যাপারে আমি তোকে হেল্প করতে পারি।

তোর ভাইয়া যদি আমাকে পছন্দ না করে?

তোর মতো মেয়েকে কোনো ছেলেই অপছন্দ করতে পারে না। তুই আমার থেকে অনেক বেশি সুন্দরী।

জিনিয়া যে অসামান্য সুন্দরী সে কথা ছোট বেলা থেকে শুনে আসছে। তাই লজ্জা পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, তুইও কিন্তু কম না। তা না হলে টোপর ভাইয়ের মতো ছেলের মন কাড়তে পারতিস না।

আমাদের ব্যাপারটা আলাদা, আমরা ছোটবেলা থেকে একে অপরকে ভালবাসি। আসল কথাটা এবার বলে ফেলতো দেখি।

তুই টোপরের সঙ্গে প্রেম করে একেবারে গোল্লায় গেছিস। আমাকেও ঐ পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিস।

তা না হয় হল। এবার কথা না ঘুরিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।

তোর ভাইয়ার সঙ্গে ভালো করে আলাপ করি, তারপর বলব।

টিকলী বলল, ঠিক আছে তাই বলিস।

প্রায় বছর দেড়েক পর ইন্টারে ভর্তি হয়ে জিনিয়া নিজের বার্থডে পার্টিতে টিকলীকে নিমন্ত্রণ করার সময় আলীকেও করল।

আলী বলল, মাফ করবেন ঐদিন আমার একটা প্রোগ্রাম আছে।

জিনিয়া অপমান বোধ করে মাথা নিচু করে নিল।

সেখানে টিকলী ছিল। জিনিয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে বলল, ভাইয়া, আমার বান্ধবী তোমাকে নিমন্ত্রণ করল, আর তুমি ডিনাই করে অপমান করলে। কাজটা কি উচিত হল?

আলী বলল, আমি অপারগতার কথা বলে মাফ চেয়েছি, এতে অপমান করার কি হল? তারপর জিনিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি আমার বোনের বান্ধবী, আপনাকে অপমান করার উদ্দেশ্য নিয়ে কথাটা বলিনি। যদি সত্যি সত্যি অপমান বোধ করে থাকেন, তা হলে আমি দুঃখিত এবং সে জন্য আবার মাফ চাইছি।

জিনিয়ার বদলে টিকলী বলল, তুমি বড় হলে কি হবে, আমার থেকে জ্ঞান তোমার অনেক কম। তারপর জিনিয়ার দিকে চেয়ে বলল, ভাইয়া প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করে নিমন্ত্রণ গ্রহণ না করা পর্যন্ত তুই মাফ করবি না।

জিনিয়া বলল, আমি তোর ভাইয়ার কে যে, আমার জন্য প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করবেন। তারপর আলীর দিকে চেয়ে বলল, দয়া করে প্রোগ্রামের পর যদি আসেন, তা হলেও কৃতার্থ হব। কথা শেষ করে টিকলীকে বলল, এখন চলি রে, আরো কয়েক জায়গায় যেতে হবে।

জিনিয়া চলে যাওয়ার পর টিকলী বলল, ও তোমার উপর খুব মনে কষ্ট পেয়েছে। আলী বলল, উনি যদি শুধু শুধু মনে কষ্ট পান আমি কি করব?

তুমি এখনো টিনার এজে রয়ে গেছ। ভার্সিটিতে পড়ছ, অথচ একটা মেয়ের মন বুঝতে পারলে না।

আলী রেগে উঠে বলল, দেখ, আজে বাজে কথা বলবি না। দেব এক থাপ্পড়।

টিকলী একটু দূরে সরে গিয়ে বলল, ঐ একটা কথাই শুধু জান দেব এক থাপ্পড়। আর একটা মেয়ে যে তোমাকে কেন নিমন্ত্রণ করল, তা জানতে পারলে না।

আলী আরো বেশি রেগে গিয়ে ওকে মারার জন্য এগিয়ে আসার উপক্রম করলে, টিকলী হাত তুলে বলল, দাঁড়াও, আগে আমাকে কথা শেষ করতে দাও, তারপর না হয় মেরো। জিনিয়া তোমাকে খুব পছন্দ করে, বলে ছুটে পালিয়ে গেল।

ছোট বোনের বান্ধবী হিসাবে আলী তাকে এতদিন দেখে এসেছে। আজ টিকলীর কথা শুনে রেগে গেলেও তার শেষের কথা শুনে মনে হোঁচট খেল। ভাবল, তাই বোধ হয় জিনিয়া যখনই বাসায় আসে তখনই আমার সঙ্গে দেখা করে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস। করে, চোখে চোখ পড়লেই ফর্সা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। সে সময় মনে কিছু না। হলেও এখন সেই সব কথা চিন্তা করে জীবনে এই প্রথম মনের মধ্যে কি রকম এক রকমের আনন্দ অনুভব করল। ভেবে রাখল, ওর জন্মদিনে যাবে। যাবে না বলে মিথ্যে প্রোগ্রামের কথা বলেছিল।

জিনিয়ার বার্থডে পার্টির দিন সকালে নাস্তার টেবিলে বাবাকে উদ্দেশ্য করে টিকলী বলল, আজ জিনিয়ার বার্থডে পার্টিতে যাব। একটা প্রেজেন্টেশান কিনতে কিছু টাকা লাগবে। আর গাড়িটাও নেব।

হালিম সাহেব বললেন, বার্থডে পার্টি করা যে ইসলামিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে নাজায়েজ, সে কথা তো তুই জানিস, তবু যাবি কেন? তোর তো তাকে এসব করতে নিষেধ করা উচিত ছিল।

টিকলী বলল, আমি নিষেধ করেছি, জিনিয়াও এসব করতে চায় না। সে কথা ওর মা-বাবা শুনে বললেন, এসব এখন সভ্য সমাজের ফ্যাশন। এসবের সঙ্গে প্রেস্টিজের প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া এটাতো কোনো অন্যায় কাজ না যে, গোনাহ হবে।

হালিম সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, হায়রে সভ্য সমাজ, মুসলমান হয়ে নিজের দ্বীনকে না জেনে বিধর্মীদের রীতিনীতি মেনে নিজেদেরকে বড় মনে করছে। আজকাল লোকের টাকা হলেই পাশ্চাত্যের জীবন-ধারায় চলতে শুরু করছে। সভা সমিতি বা বাসায় যে কোনো ফাংসানে সাংস্কৃতির নামে যে নাচ গান হচ্ছে, সে সবও ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ। মুসলমানরা আজকাল ধর্মীয় শিক্ষাকে এড়িয়ে কলেজ। ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আল্লাহ ও তার রসুল (দঃ) এর আদেশ নিষেধ মেনে চলছে না। আর সেই জন্য সারা পৃথিবীতে মুসলমানরা অত্যাচারিত নিপীড়িত হচ্ছে। তবু তাদের জ্ঞান ফিরছে না। মুসলমানদের পরিণতি আরো যে কত অবনতি হবে তা আল্লাহকেই মালুম। যেতে চাস যা, তবে নাচ গান হওয়ার আগে চলে আসবি।

সাজেদা বেগম বললেন, ধর্মের বিধি নিষেধ আজকাল কয়জনে আর মেনে চলে। যারা জানে না তারা তো মানেই না। আর যারা জানে, তারাও মানে না। তারপর বললেন, তোমার অফিস যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

হালিম সাহেব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, ও তাইতো, তারপর ড্রেস চেঞ্জ করার জন্য রুমে চলে গেলেন।

সাজেদা বেগম স্বামীকে অনুসরণ করলেন।

মা বাবা চলে যাওয়ার পর টিকলী ভাইয়াকে বলল, বিকেলে তোমাকে নিয়ে মার্কেটে যাব, তাড়াতাড়ি ফিরো।

সে দেখা যাবে, বলে আলী নিজের রুমে চলে গেল।

বিকেলে টিকলী ভাইয়াকে নিয়ে নিউ মার্কেটে এসে দেশী বিদেশী তিন চারটে গল্পের ও একটা হাদিসের বই কিনল। তারপর ভাইয়াকে বলল, তুমি কিছু কিনবে না?

আলী যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু কিনতে চায়। তবু বলল, আমি কিনে কি করব?

কেন, তুমি যাবে না?

সেদিন যাব না বললাম, আজ যাওয়াটা কি ঠিক হবে?

কেন, সেদিন তো জিনিয়া তোমার প্রোগ্রামের পরও যেতে বলল।

আলী একটা বিশ্বনবী কিনল। তারপর ফেরার সময় কাঁটাবন থেকে একগুচ্ছ রজনী গন্ধা ও একটা গোলাপের তোড়া কিনে বাসায় ফিরল।

মাগরিবের নামায পড়ে দুভাই বোন জিনিয়াদের বাসায় রওয়ানা দিল।

জিনিয়া মা বাবার একমাত্র সন্তান। তার বাবা মোয়াজ্জাম সাহেব হার্ট স্পেশালিস্ট। সরওয়ার্দি হাসপাতালে আছেন। এলিফেন্ট রোডে বাড়ি করেছেন। বাড়ির নিচ তলায় চেম্বার।

জিনিয়া ক্লাস নাইনে পড়ার সময় বান্ধবী টিকলীদের বাসায় যেত। সেই সময় তার ভাইয়ার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে ভালবেসে ফেলে। কিন্তু সে কথা কাউকে বলে নি। ক্লাস টেনে উঠার পর টিকলী বুঝতে পারে। তাই একদিন চাপাচাপি করতে স্বীকার করে। জিনিয়া আজ বার্থডে পার্টির নিমন্ত্রণ করে এসে, বাবাকে বলল, ঐদিন একটা ছেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। তার ইন্টারভিউ নিবে। যদি পাশ করে, তা হলে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব। অবশ্য ছেলেটা যদি আসে।

মোয়াজ্জাম সাহেব মৃদু হেসে বললেন, কিন্তু মা, চেম্বারের জন্য যে বিজ্ঞপ্তী দিয়েছিলাম, তার ইন্টারভিউ হয়ে গেছে। দুই জনকে এ্যাপয়েন্টমেন্টও দেওয়া হয়ে গেছে।

জিনিয়া বলল; আমি তো তোমার চেম্বারের জন্য কারো ইন্টারভিউ নিতে বলছি না। মোয়াজ্জাম সাহেব বেশ অবাক হয়ে বললেন, তবে কিসের জন্য? আগে ইন্টারভিউ নাও, পরে বলব।

মোয়াজ্জাম সাহেব মেয়ের মনের খবর একটু টের পেলেন। গম্ভীর স্বরে বললেন, জিনিয়া তোর বয়স কত হল বলতে পারিস?

তা পারব না কেন? উনিশ পেরিয়ে বিশে পড়েছে। তোমরা আদর করে ঘরে বসিয়ে না রেখে যদি আমাকে ঠিক সময়ে স্কুলে ভর্তি করতে, তা হলে এতদিনে বি.এ. পাশ করে এম.এ. পড়তাম।

মেয়েরা ম্যাচিওর হয় কত বছরে জানিস?

তোমাদের ডাক্তারী মতে তো কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের তারতম্য অনুসারে পনের থেকে আঠার বছর, তাই না বাবা?

তুই কি আউট বই অনেক পড়িস?

অনেক পড়ার সময় কোথায়? তবু কিছু কিছু পড়ি। এত কথা জিজ্ঞেস করছ কেন? শোন, যা বললাম মনে রাখবে কিন্তু।

তোর মাকে ছেলেটার ইন্টারভিউ নিতে বলবি না?

জিনিয়া হেসে উঠে বলল, বলব, তবে তোমার কাছে পাশ করার পর। তারপর আমি এখন যাই বলে চলে গেল।

মোয়াজ্জাম সাহেব এতদিন মেয়ের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করেন নি। আজ তার কথা শুনে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলেন, সে ম্যাচিওর হয়েছে।

সন্ধ্যে সাড়ে সাতটার মধ্যে নিমন্ত্রিত অতিথিরা এসে যাওয়ার পর জিনিয়ার মা মুকাররামা বেগম মেয়েকে বললেন, দেরি করছিস কেন? কেক কেটে পার্টির কাজ শুরু কর।

জিনিয়া বলল, টিকলীর জন্য অপেক্ষা করছি।

মুকাররামা বেগম জানেন, টিকলী ওর খুব অন্তরঙ্গ। অনেক বার এসেছে। অন্যান্য বান্ধবীদের চেয়ে সে যে অনেক ভালো তাও জানেন। তাই বললেন, ঠিক আছে, আর একটু অপেক্ষা কর।

প্রায় দশ মিনিট পর টিকলী ও আলী এসে পৌঁছাল।

আলীকে দেখে জিনিয়ার মন আনন্দে ছলকে উঠল। এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে টিকলীকে উদ্দেশ্য করে বলল, দেরি করলি কেন?

টিকলী সালামের উত্তর দিয়ে বই ও রজনীগন্ধার প্যাকেট তার হাতে দিয়ে বলল, ট্রাফিক জামে পড়েছিলাম।

জিনিয়া সেগুলো একজনের হাতে দিয়ে আলীর দিকে তাকিয়ে বলল, আসুন।

আলী জিনিয়াকে আগে অনেক বার দেখলেও আজকের অপরূপ সাজে সজ্জিতা জিনিয়া যেন অন্যজন। এক দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে ছিল। বাস্তবে ছিল না। জিনিয়ার কথায় বাস্তবে ফিরে এসে বইয়ের প্যাকেট ও গোলাপের তোড়াটা তার হাতে দেওয়ার সময় বলল, দোওয়া করি, আল্লাহ যেন এই দিন আপনার জীবনে শতবার পার করান।

ধন্যবাদ বলে জিনিয়া তাদেরকে নিয়ে কেকের টেবিলের কাছে এল।

নাস্তা খাওয়ার পর জিনিয়ার বান্ধবীদের দুএকজন গান গেয়ে শোনাল। জিনিয়া একটা নজরুল সংগীত গাইল। এক ফাঁকে জিনিয়া বাবাকে ঈশারা করে আলীকে চিনিয়ে দিয়ে বলল, আমার বান্ধবী টিকলীর ভাইয়া।

ফাংসান শেষে সবাই চলে গেলে। টিকলী চলে যেতে চাইলে জিনিয়া বলল, আর একটু বস। তোর ভাইয়া আজ প্রথম এলেন, মা বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। তারপর মা-বাবাকে ডেকে নিয়ে এসে আলীকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমার মা-বাবা।

আলী ওদের দেখে দাঁড়িয়ে সালাম দিল।

 মোয়াজ্জাম সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে আলীকে বসতে বলে নিজেরাও বসলেন।

তোমরা গল্প কর আমরা এক্ষুণী আসছি বলে জিনিয়া টিকলীর হাত ধরে তাকে। নিয়ে ভিতরে চলে গেল।

ওরা চলে যাওয়ার পর মোয়াজ্জাম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি, বাবা?

আলী নাম বলল।

পড়াশোনা নিশ্চয় করছ?

জ্বী ম্যানেজমেন্টে অনার্স করছি?

তোমার বাবার নাম?

 হালিম সাহেব।

 উনি কি করেন?

সেক্রেটারীয়েটে চাকরী করেন।

আমি এক হালিম সাহেবকে চিনি। উনি মিনিষ্ট্ৰী অব হেলথে আছেন। তোমার বাবা কিসে আছেন?

জ্বী উনিই আমার বাবা।

তাই নাকি? জান বাবা, আমি স্কলারসিপ নিয়ে ডাক্তারী পাশ করার পর ফরেনে উচ্চ ডিগ্রী নিতে যাওয়ার ব্যাপারে উনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। একদিন যাব তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে। আলী বলল, বেশ তো যাবেন।

এমন সময় জিনিয়া টিকলীকে নিয়ে ফিরে এসে বলল, তোমাদের আলাপ শেষ হয়েছে?

মোয়াজ্জাম সাহেব কিছু বলার আগে আলী দাঁড়িয়ে উঠে বলল, এবার আসি।

মোয়াজ্জাম সাহেব বললেন, আবার এস।

জ্বী আসব বলে আলী সালাম বিনিময় করে টিকলীকে বলল, চলরে অনেক দেরী হয়ে গেল।

জিনিয়া ওদেরকে গাড়িতে তুলে দিতে গেল।

মোয়াজ্জাম সাহেব স্ত্রীকে বললেন, দুতিন দিন আগে জিনিয়া আমাকে বলেছিল, বার্থডে পার্টিতে একটা ছেলেকে আসতে বলেছি, এলে তার ইন্টারভিউ নিও। ছেলেটা যে টিকলীর ভাই সে কথা বলেনি। আমার মনে হচ্ছে, ছেলেটাকে জিনিয়া পছন্দ করে।

মুকাররামা বেগম বললেন, ছেলেটাকে তো বেশ সুন্দর বলে মনে হল। জিনিয়ার সঙ্গে মানাবে ভাল। তোমার কি মনে হয়?

আমার ও খুব পছন্দ। কিন্তু——?

এমন সময় জিনিয়াকে ফিরে আসতে দেখে মোয়াজ্জাম সাহেব থেমে গেলেন।

বাবার পাশে বসে জিনিয়া জিজ্ঞেস করল, ইন্টারভিউ নিয়েছ?

 মোয়াজ্জাম সাহেব মেকী রাগ দেখিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, হ্যাঁ।

রেজাল্ট বল।

ফুল মার্ক পেয়ে ফেল।

জিনিয়া বুঝতে পারল বাবা জোক করছে। হেসে উঠে বলল, ফুল মার্ক পেয়ে কেউ ফেল করে বুঝি?

করে করে, আর কেউ না করলেও এই ছেলেটা করেছে।

কোন ডিভিশানে?

 ফেলের আবার ডিভিশান আছে নাকি?

ফুল মার্ক পেয়ে যদি কেউ ফেল করে, তা হলে সেই ফেলের ডিভিশানও আছে। এবার সত্যি করে রেজাল্টের খবরটা বলত?

ফুল মার্ক যখন পেয়েছে তখন রেজাল্ট ভালো। ওর বাবাকে চিনি। তোকে তো একদিন আমার বাবার দুরাবস্থার কথা বলেছিলাম। আমি যে কত কষ্ট করে ডাক্তারী পাশ করেছি, তাও বলেছি। স্কলারশীপ পেয়ে ফরেনে পড়তে যাওয়ার জন্য অনেক বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ওর বাবা সে সময় সাহায্য না করলে আমার যাওয়াই হত না। ঘটনাটা বলছি শোন, আমাদের সঙ্গে এক মন্ত্রীর মেয়ে পাশ করেছিল। সেই মন্ত্রী নিজের মেয়েকে পাঠাবার জন্য মিস্ত্রিী অব হেলথে ফোন করে আমার যাওয়া ক্যান্সেল করে দিয়েছিলেন। হালিম সাহেব, মানে ঐ ছেলেটার বাবা হেলথ মিনিষ্ট্রারের সঙ্গে এক রকম যুদ্ধ করে আমাকে পাঠাবার ব্যবস্থা করে দেন। আমি ওর ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারব না। আজ আমি যে এত বড় হয়েছি তা ওরই দয়াতে।

জিনিয়া খুব আনন্দিত হল। বলল, ফরেন থেকে এসে ওঁর সঙ্গে দেখা করনি?

তা আবার করিনি। তবে কাজের ব্যস্ততায় পরে আর অনেক বছর হল দেখা করতে পারিনি। আমি তো বাসা চিনি না। একদিন তোর সাথে যাব। এবার বল ছেলেটা তোকে পছন্দ করে কিনা?

তা কি করে বলব? টিকলীর সঙ্গে ওদের বাসায় অনেক বার গেলেও ওর সঙ্গে তেমন একটা আলাপ হয়নি বললেই চলে।

তুই ওদের বাসায় অনেকবার গেছিস বললি, ওরা যে খুব ধার্মীক তা নিশ্চয় জেনেছিস।

হ্যাঁ জেনেছি।

ধার্মীকরা কিন্তু মেয়েদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার উপর খুব কড়াকড়ি করে থাকে। মেয়েরা নিজের ইচ্ছায় কোথাও যেতে পারে না। তুই স্বাধীন ভাবে মানুষ হচ্ছিস। ওদের ফ্যামিলীতে গিয়ে কি এ্যাডজাষ্ট করতে পারবি? ঐ ধরনের লোকেরা গোড়া প্রকৃতির।

তোমার অনুমানটা ভুল। ধর্ম মানুষকে সঠিক পথে চলার নির্দেশ দেয়। মানুষ ধর্ম থেকে দূরে সরে গেছে বলেই না, আজকাল মানুষ যত রকমের অসৎকাজ লিপ্ত হয়ে পড়েছে। সারা পৃথিবীর সমাজে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাতে হলে কড়াকড়ি কিছু নিয়ম-কানুন তো থাকবেই। তবে গোঁড়ামির স্থান যে ইসলামে নেই, তা জানি। আর সুবিধাবাদিরা স্বার্থের কারণে ঐ কড়াকড়ি নিয়ম কানুনকেই গোঁড়ামী বলে থাকে। এটা তাদের একটা অহমিকা অথবা অজ্ঞতা।

মোয়াজ্জাম সাহেব মেয়ের কথা শুনে খুব অবাক হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ইসলাম সম্বন্ধে তুই এত কথা জানলি কি ভাবে?

জিনিয়া মৃদু হেসে বলল, টিকলীর কাছ থেকে। মাঝে মাঝে ওর থেকে ইসলামিক বই নিয়ে পড়াশোনা করি।  

তোর কথা শুনে খুব খুশি হলাম মা। আমরা ধর্ম কর্ম যেমন জানি না তেমনি মানি না। আর তোকেও আমরা ঐসব শিক্ষা দিইনি। তুই যদি ঐ ফ্যামিলীতে গিয়ে সুখি হবি মনে করিস, তা হলে আমি হালিম সাহেবের সঙ্গে কথা বলব।

জিনিয়া বলল, না বাবা, এখন কিছু বলার দরকার নেই। আগে আলীর মতামতটা আমাকে জানতে দাও। যদি পজিটিভ হয়, তা হলে আমি তোমাদের জানাব। তারপর যা করার তোমরা করবে। তবে ও পাশ করার পর।

 মোয়াজ্জাম সাহেব বললেন, ঠিক আছে, তুই আমাদের একমাত্র সন্তান। তোর অমতে কিছু করব না।

ঐদিন ফেরার পথে টিকলী ভাইয়াকে বলল, তুমি জিনিয়াদের বাসায় ঢুকেই, যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে ছিলে যেন কখনো তাকে দেখনি।

আলী তার মাথায় আদরের একটা চাঁটি মেরে বলল, ভাইয়ার সঙ্গে ফাজলামী করছিস? 

টিকলী গাল ফুলিয়ে বলল, সত্যি কথা বলতে মারলে,, এবার মিথ্যা কথা বলি তা হলে? আমার বান্ধবীকে অপরূপ সাজে সজ্জিত দেখে তুমি মুগ্ধ হয়ে বাস্তব জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে।

আলী আবার তাকে মারতে গেল।

টিকলী হাতটা ধরে ফেলে বলল, আমি জিনিয়াকে ভাবি হিসাবে পেতে চাই। আর আজই মা-বাবাকে সে কথা জানাব।

আলী বলল, হাতটা ছাড়।

না, ছাড়লেই মারবে।

আলী মৃদু হেসে বলল, নারে মারব না। তোর সঙ্গে আমি একমত। এবার ছেড়ে দে, এক হাতে গাড়ি চালাতে অসুবিধা হচ্ছে, এ্যাকসিডেন্ট করে ফেলব।

টিকলী হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল, ও তোমাকে স্কুল লাইফ থেকে ভালবাসে।

আলী কিছু বলল না, শুধু মৃদু হেসে গাড়ি চালাতে লাগল। তখন তার মন অজানা এক আনন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।

কিছু বললে না যে?

কি বলব?

জিনিয়া তোমাকে স্কুল লাইফ থেকে ভালবাসে শুনে কিছু একটা তো বলবে।

আমি তো তা জানতাম না; কি বলব?

এখন তো জানলে।

আগে অনেকবার দেখলেও আজ দেখে সত্যিই আমি খুব মুগ্ধ হয়েছি।

শুধু মুগ্ধ হলে? ভালবাসতে ইচ্ছা করছে না?

তুই টোপরকে ভালবেসে খুব পেকে গেছিস। এবার চুপ কর নচেৎ আবার চাটি খাবি।

বাসায় ফিরে আলী কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারল না। জিনিয়া স্কুল লাইফ থেকে তাকে ভালবাসে শোনার পর থেকে কেবলই তার অনিন্দ্য সুন্দর মুখের ছবি মনে পড়তে লাগল। হঠাৎ কবিতা লেখার প্রেরণা পেল। যদিও জীবনে কোনো দিন কবিতা লেখেনি। মনের আবেগ চেপে রাখতে না পেরে খাতা কলম নিয়ে লিখতে শুরু করল।

তুমি চতুর্দশীর চাঁদ
অথবা সূর্য,
যা কিছু হওনা কেন
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
 তুমি শুকতারা
অথবা সন্ধ্যা তারা,
যা কিছু হওনা কেন।
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
তুমি উষা লগ্নে পূব আকাশের রক্তিম আভা
 অথবা পশ্চিম আকাশের সূর্যাস্তের গোধুলী লগ্ন,
 যা কিছু হওনা কেন
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
তুমি বিশ্বের শেষ্ঠা সুন্দরী।
অথবা বেহেস্তের হুর,
যা কিছু হওনা কেন।
তোমার তুলনা শুধু তুমি।
তুমি অতি মূল্যবান কোহীনুর হীরক খন্ড
যা শোভিত হয়েছিল শাজাহানের ময়ূর সিংহাসনে,
যা কিছু হওনা কেন।
তোমার তুলনা শুধু তুমি।

কবিতাটা লিখে বারবার পড়ে ও আলীর বিশ্বাস হচ্ছে না, এটা তার নিজের লেখা। ভাবল, মানুষ প্রেমে পড়লে বোধ হয়, অসাধ্য সাধনও করতে পারে। আরো কয়েকবার। পড়ে নিচে নিজের নাম ও তারিখ লিখল। তারপর কাগজটা খাতা থেকে কেটে ভাঁজ করে রেখে দিয়ে ভাবল, সময় সুযোগ মতো জিনিয়াকে দেবে।

পরেদিন কলেজে অফ পিরিয়ডে গল্প করতে করতে এক সময় টিকলী জিনিয়াকে। বলল, তোকে একটা সুখবর দেব, কি প্রেজেন্ট করবি বল।

জিনিয়া বলল, সেটা নির্ভর করছে সুখবরটার গুরুত্বের উপর।

এর থেকে গুরুত্ব তোর জীবনে আর কিছু নেই।

তা হলে মূল্যবান কিছু একটা দেব। এবার সুখবরটা বল।

 ভাইয়া এতদিন তোকে দেখলেও কাল দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছে।

 সত্যি বলছিস?

হারে সত্যি। মিথ্যে করেই বা বলব কেন? আমিও তো তোকে ভাবি করতে চাই।

যাহ্ গুল মারছিস।

আমার কথা বিশ্বাস না হলে আজই আমাদের বাসায় গিয়ে ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করলেই সত্যি মিথ্যা প্রমাণ পেয়ে যাবি।

ঠিক আছে তাই যাব; তবে আজ নয়, কয়েক দিন পরে। এবার চল ক্লাসে যাই। সময় হয়ে গেছে।

টিকলীর কাছে কথাটা শোনার পর থেকে জিনিয়া আলীর সঙ্গে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠল। কয়েকদিনের কথা বললেও দুদিন পর টিকলী যখন বলল, চল না আজ আমাদের বাসায়, তখন প্রতিবাদ না করে তার সঙ্গে এল।

জিনিয়া প্রায় আসে টিকলীর সঙ্গে কলেজ থেকে। এলে খাওয়া দাওয়াও করে। সাজেদা বেগম তাকে মেয়ের মতই দেখেন। জিনিয়াকে তার খুব পছন্দ। তাই একদিন স্বামীকে সে কথা বলে বৌ করার কথা বলেছিলেন। হালিম সাহেব বলেছিলেন, মেয়েটাকে আমারও পছন্দ। তবে আলী এখন পড়াশোনা করছে। তাছাড়া এখনো ওদের বিয়ের বয়স হয়নি। এখন ওসব চিন্তা মাথায় এনো না। আল্লাহ ওদেরকে জোড়া করে থাকলে, আলীর পড়াশোনা শেষ করার পরও হবে।

আজ এসে প্রতিবারের মতো জিনিয়া সাজেদা বেগমকে সালাম দিয়ে বলল, কেমন আছেন খালাআম্মা?

সাজেদা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছ? তোমার মা বাবা ভালো আছেন?

জিনিয়া বলল, আমরা সবাই ভালো আছি।

সাজেদা বেগম বললেন, যাও মা তোমরা মুখ হাত ধুয়ে এস, খেতে দেব।

খেতে বসে টিকলী মাকে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া ফিরেছে?

হা ফিরেছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে খেয়ে গেল।

খাওয়ার পর রুমে এসে টিকলী জিনিয়াকে বলল, আমার কথাটা সত্য মিথ্যা যাচাই করতে চাইলে ভাইয়ার রুমে যা।

জিনিয়া তাই চাচ্ছিল। তবু লজ্জা পেয়ে বলল, তোর ভাইয়া যদি কিছু মনে করে?

তা করতে পারে, তবে খারাপ কিছু করবে না, বরং ভালো কিছু করবে।

যদি খারাপ কিছু ভাবেন?

যদির কথা ভেবে প্রেমের পথে এগোন যায় না, তুই যা তো। তারপর তার একটা হাত ধরে ভাইয়ার রুমের দরজার কাছে এসে ফিস ফিস করে বলল, তেমন খারাপ কিছু হলে, আমি সামলাব। কথা শেষ করে টিকলী ফিরে এল।

জিনিয়া দুরু দুরু বুকে পর্দা ফাঁক করে বলল, আসতে পারি।

আলী খেয়ে এসে খাটে শুয়ে জিনিয়াকে কিভাবে কবিতাটা দিবে চিন্তা করতে করতে তার তন্দ্রামত এসেছিল। হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠে আসতে পারি শুনে তন্দ্রা ছুটে গেল। চোখ খুলে দরজায় জিনিয়াকে দেখে চমকে উঠল। তাড়াতাড়ি উঠে বসে বলল, আপনি?

জিনিয়া সালাম দিয়ে কয়েক সেকেন্ড তার চোখের দিকে তাকিয়ে রাগের বদলে। অনুরাগ দেখে ভিতরে ঢুকে বলল, কেন আসতে নেই বুঝি?  

আলী সালামের উত্তর দিয়ে বলল, না, মানে আপনি কখনো আমার রুমে আসেন নি তো, তাই আর কি? তারপর একটা চেয়ারের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, বসুন।

জিনিয়া বসে বলল, ধন্যবাদ। তারপর বলল, আপনার বিরুদ্ধে দুটো নালিশ আছে।

আলী বেশ অবাক হয়ে বলল, নালিশ?

হা নালিশ। প্রথমটা হল, আমি আপনার ছোট বোনের বান্ধবী তবু আপনি করে বলেন। দ্বিতীয়টা হল, আপনি আমাকে খুব এড়িয়ে চলেন।

আলী কি বলবে বুঝতে না পেরে চুপ করে রইল।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে জিনিয়া বলল, কিছু বলছেন না যে?

আলী বুঝতে পারল, টিকলী নিশ্চয় আমার কথা ওকে বলেছে। আর আজ সেই-ই একে পাঠিয়েছে। বলল, ঠিক আছে, এবার থেকে তুমি করে বলব। তারপর কবিতাটা একটা বইয়ের ভিতর থেকে বার করে এনে তার হাতে দিয়ে বলল, এবার থেকে এড়িয়ে চলব না বলে এটা লিখেছি।

জিনিয়া ভাবল, নিশ্চয় এটা প্রেমপত্র। আনন্দে কেঁপে উঠল। কাঁপা গলায় বলল, এখনই পড়তে পারি?

পার।

কবিতাটা পড়তে পড়তে জিনিয়ার হার্টবিট বেড়ে গেল। আনন্দে থরথর করে কাঁপতে লাগল।

তাই দেখে আলী ভয় পেয়ে বলল, কি হল কাঁপছ কেন? শরীর খারাপ লাগছে?

জিনিয়া সামলে নিয়ে এগিয়ে এসে তার দুটো হাত ধরে বলল, তুমি আমাকে এত ভালবাস, এযে আমি ভাবতেই পারছি না। আনন্দের চোটে তার চোখে পানি এসে গেল। ভিজে গলায় বলল, অসাবধানে তুমি করে বলে ফেললাম। মাফ করে দিন।

আলী আলহামদুলিল্লাহ বলে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, চেয়ারে বস।

বসার পর বলল, মাফ চাইছ কেন? এটাই তো স্বাভাবিক। এবার থেকে তুমি করেই বলবে।

এরপর থেকে তাদের বিভিন্ন পার্কে অভিসার চলতে থাকে। জিনিয়া আলীকে মাঝে। মাঝে বাসায় নিয়ে আসে। মা বাবাকে যা জানাবার জানিয়েছে। মোয়াজ্জাম সাহেব ও মোকাররমা বেগম আলীর বাবার সঙ্গে দেখা করে কাবিন করে রাখতে চেয়েছিলেন; কিন্তু জিনিয়া তা করতে দেয়নি। বলেছে, আগে আলী পড়াশোনা শেষ করুক তারপর।

এই ঘটনা এক বছর আগের। এর মধ্যে আলী ও জিনিয়ার সম্পর্ক আরো অনেক গম্ভীর হয়েছে।

যেদিন জিনিয়া ভার্সিটিতে টিকলীর চিঠি টোপরকে দেয়, সেদিন দূর থেকে হঠাৎ আলীর নজরে পড়ে। টোপর চলে যাওয়ার পর আলী জিনিয়ার কাছে এসে বলল, টোপরকে কি যেন দিলে দেখলাম।

জিনিয়া মৃদু হেসে বলল, চিঠি দিলাম।

আলী চমকে উঠে বলল, চিঠি?

 হ্যাঁ চিঠি। একজন দিতে দিয়েছিল।

একজনটা কে শুনি?

বলা যাবে না।

 কেন?

 তাও বলা যাবে না।

এমনি টোপরকে চিঠি দিতে দেখে আলীর জেলাস হয়েছিল। এখন জিনিয়াকে টাল বাহানা করতে দেখে সন্দেহ হল। বলল, না বললে, মাইন্ড করব কিন্তু।

দুঃখিত, তবু বলতে পারব না।

আলীর সন্দেহটা আরো দৃঢ় হল। একটু রাগের সংগে বলল, মনীষীরা যে বলেছেন, নারীরা ছলনাময়ী, তার প্রমাণ পেলাম।

জিনিয়া আহত স্বরে বলল, মনীষীদের কথা সব নারীর জন্য প্রযোজ্য নয়।

তা হয় তো হবে, তবে তুমিই তো তার প্রমাণ দেখালে।

জিনিয়ার চোখে পানি এসে গেল। ভিজে গলায় বলল, তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছ?

আগে করতাম না, এখন করতে বাধ্য হলাম।

 সামান্য একটা চিঠির জন্য তুমি আমাকে অবিশ্বাস করতে পারলে? স্কুল জীবন থেকে যাকে নিজের প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসি, যার জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করতে পারি, সে কিনা এই সামান্য কারণে আমাকে অবিশ্বাস করল। আল্লাগো এ কথা জানার আগে আমার মৃত্যু দিলে না কেন? কথা শেষ করে জিনিয়া চোখ মুছতে মুছতে সেখান থেকে চলে গেল। আলী তার দিকে তাকিয়ে চিন্তা করল, টোপর ছোটবেলা থেকে টিকলীকে ভালবাসে। এখন আবার জিনিয়ার সঙ্গে কি ভালবাসায় মেতেছে? কথাটা বিশ্বাস করতে পারল না। তবু সিদ্ধান্ত নিল, প্রথমে চিঠির রহস্য উদঘাটন করবে, তারপর জিনিয়ার সঙ্গে দেখা করবে।

<

Super User