১১.
কিন্তু কেন? নীরব পথের এমাথা-ওমাথা দেখছে গোয়েন্দা-সহকারী। যেখানে। পুলিশ আর মানুষে গিজগিজ করার কথা সেখানটা এখন পুরোপুরি নির্জন।
রসিকতা করেছে আমাদের সঙ্গে, কিশোর বললো।
কিংবা যাতে পুলিশকে খবর দিতে না পারি সে জন্যে। কে জানে, হয়তো এখনও এখানকারই কোনো পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে। কচি, দেখো তো রাস্তাগুলো ঘুরে।
আবাসিক এলাকার রাস্তাগুলো ধরে ধীরে ধীরে গাড়ি চালালো কচি। পথের পাশে কোনো গাড়ি দাঁড়ানো দেখলেই বকের মতো গলা বাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছে তিন গোয়েন্দা, সেটার কাঁচ ভাঙা কিনা।
ওই যে একটা! আচমকা চেঁচিয়ে উঠলো রবিন।
গাড়ি থামাও! সাথে সাথে বললো কিশোর।
ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলো কচি। তারপর গাড়ি পিছিয়ে আনলো। একটা লাল টয়োটা করোলার কাঁচ ভাঙা। মালিক এখনও বোধহয় জানে না। পথের পাশে গাড়ি, রেখে গেছে, ফিরে এলে দেখবে। কিংবা হয়তো জানে। কিন্তু কি আর করবে? এখন তো কাঁচ বদলানো সম্ভঘ না। দিনের বেলা যা করার করবে।
তারমানে গাড়ির কাঁচ সত্যি সত্যি ভাঙা হয়েছে এই এলাকায়, আনমনে। বিড়বিড় করে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। সেটা মিথ্যে কথা নয়। ভূত থেকে-ভূতেরা সত্যি কথাই বলেছে। শুধু শেষ ভূতটা ছাড়া।
মানে? মুসার প্রশ্ন।
ওই যে, যে ভূতটা আমাদের বললো সাইকেলওয়ালাকে পুলিশে ধরেছে। হাত নাড়লো কিশোর, কচি, চলো বাড়ি চলো।
.
কাঁচগুলো ভাঙতে দেখলো, রবিন বললো, কিন্তু তাকে যেতে দেখলো না কেন কেউ?, সমস্ত শহরেই ভূত রয়েছে আমাদের। তাদের কারো চোখেই পড়লো না। কেন আর? কাঁচ ভাঙার পর একেবারে উধাও! _ বাড়ি ফিরে বসার ঘরে আলোচনা হচ্ছে ওদের। আরিফ সাহেব এখন ফেরেননি।
গাড়িটা গ্যারেজে ঢুকিয়ে রেখে এলো কচি। রবিনের কথা শুনতে পেয়েছে। বললো, ঠিক, পালালো কোথায় ব্যাটা? এতোগুলো চোখকে এভাবে ফাঁকি দিলো। কিভাবে?
দুটো উপায়ে সেটা করতে পারে, দুই আঙুল তুললো গোয়েন্দাপ্রধান। হয় সমস্ত কাপড়-চোপড় বদলে সাইকেলটা কোথাও ফেলে পালিয়েছে। নয়তো কোথাও একটা পিকআপ অপেক্ষা করছিলো তার জন্যে, সাইকেলসহ তুলে নিয়ে গেছে।
কেন এই সাবধানতা? মুসার জিজ্ঞাসা। ছেলেমেয়েরা যে তার ওপর চোখ। রেখেছে, টের পেয়েই কি পালালো?
আমার তা-ই ধারণা।
কিভাবে জানল? কচির প্রশ্ন।
তার ওপর যে চোখ রাখা হয়েছে, এটা বলে দেয়া হয়েছে তাকে। তাড়াতাড়ি কাঁচ ভাঙা বাদ দিয়ে পালিয়েছে যখন, এছাড়া আর কোন কারণ নেই।
কিন্তু সতর্ক করলো কি ভাবে? সন্দেহ যাচ্ছে না কচির।
কোনো ভূত হয়তো চেনে তাকে। বলে দিয়েছে, রবিন অনুমান করলো।
উঁহু, তা নয়, মাথা নাড়লো কিশোর। আস্তে আস্তে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে ন্টআসছে। অন্য কোনো ভাবে জেনেহে আমাদের কথা। যেভাবে সব সময় সে জেনে যায় কোন রাস্তায় পুলিশ যাচ্ছে তার ওপর নজর রাখার জন্যে। নিশ্চয় হুঁশিয়ার করা হয় তাকে, হেডফোনের মাধ্যমে।
তার কানে লাগানে হেডফোন?
সিবি রেডিও! বললো মুসা।
নাকি হ্যাম রেডিও! রবিন বললো।
যে রেডিওই হোক, সেটা পুলিশের ওয়্যারলেসে বলা কথা ধরতে পারে, বললো কিশোর। থানার সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখে ডিউটিতে থাকা পুলিশ। অফিসার, রেডিওর মাধ্যমে। ওই ধরনের যন্ত্র আর কারও কাছে থাকলে তার পক্ষেও সেই কথা শোনা সম্ব। একই ওয়েভলেংথে টিউন করে রাখে সে রেডিও। পুলিশের কথাবার্তা সব শোনে। হুঁশিয়ার হয়ে যায়। যে রাস্তায় পুলিশ থাকে সেখানে আর কাঁচ ভাঙতে যায় না। আজ রাতেও রেডিওতেই কেউ তাকে সাহায্য করেছে।
কিন্তু কিশোর, প্রতিবাদ করলো, ভূত-থেকে-ভূতের খবর শুধু আমরা। চারজনই জানি।
ঠিক, একমত হয়ে বললো মুসা। আমাদের সঙ্গে রসিকতা যে করলো সে কিভাবে জানলে? আর কি করেই বা জানলো কোন নম্বরে ফোন করতে হবে। আমাদের?
চলো, বোধহয় দেখাতে পারবো, কিশোর বললো। টর্চ আর একটা মই দরকার। গ্যারেজে লম্বা মই আছে, দেখেছি।
মিনিট কয়েক পর দল বেঁধে চললো চারজনে। টর্চ হাতে কিশোর চলেছে আগে আগে। পেছনে মই বয়ে নিয়ে চলেছে মুসা আর কচি। রবিন সাহায্য করছে। তাদের। সেই টেলিফোনের থামটার কাছে এসে দাঁড়ালো ওরা, যেটা থেকে লাইন। এসেছে আরিফ সাহেবের বাড়িতে।
টেলিফোন বক্সটা থামের মথাির কাছে। সেটা দেখিয়ে মুসাকে নির্দেশ দিলো। কিশোর, যাও, মই লাগিয়ে ওখানে উঠে যাও।
কি করবো উঠে?
বাক্স খুলে দেখো কি আছে। জানাবে আমাদের।
টর্চের পেছনে লাগানো কর্ডটা হাতে ঢুকিয়ে কনুয়ের কাছে ঝুলিয়ে নিয়ে মই বেয়ে উঠে গেল মুসা। বাক্সের দরজা খুলে ভেতরে আলো ফেললো। শুধু তো তার… না না, দাঁড়াও আরেকটা জিনিস আছে!
কী? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
আরো ভালো করে দেখলো মুসা। চিনতে পারছি না। চারকোণা খুব ছোট একটা বাক্সের মতো জিনিস। ধাতুর না প্ল্যাস্টিকের বোঝা যায় না। দুটো তার বেরিয়ে গেছে। বোধহয় টেলিফোনের তারের সঙ্গে জোড়া দেয়া হয়েছে। খুলে আনবো?
না। নেমে এসো।
মাটিতে নেমে আবার ওপরের বাক্সটার দিকে তাকিয়ে বললো মুসা, ওয়্যারট্যাপ, না? চৌধুরী আংকেলের লাইনের সঙ্গে লাগিয়ে দিয়ে আমাদের। কথাবার্তা শুনেছে। এভাবেই জেনেছে ব্যাটা ভূত-থেকে-ভূতের কথা।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। এটাই একমাত্র জবাব।
বাক্সটার দিকে রবিনও তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু শোনে কোত্থেকে? বাক্স থেকে তো আর কোনো তার বেরিয়ে যায়নি। মানে, স্বাভাবিক তারগুলো ছাড়া আর কিছু?
নিশ্চয় কোনো ধরনের রিমোট লিসেনিং ডিভাইস। রেডিওর মতো তার ছাড়াই সঙ্কেত পাঠায়। যে এই কাজ করেছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে তার অসাধারণ জ্ঞান।
তারমানে আমাদের ওপর সর্বক্ষণ নজর রেখে চলেছে সে, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো রবিন।
রবিনের কথার মানে বুঝতে পারলো মুসা। তার দিকে তাকিয়ে গুঙিয়ে উঠলো।
মইটা নিয়ে আবার ফিরে চললো ওরা।
গ্যারেজে মই রেখে আবার ঘরে এসে বসলো ওরা। আরিফ সাহেব তখনও ফেরেননি। মামী রান্না তৈরীতে ব্যস্ত।
কিশোর বললো, সেদিন যে মামী একটা লোককে খাম্বায় উঠতে দেখেছিলো, আমার ধারণা ওই লোকই যন্ত্রটা লাগিয়েছে ফোন বক্সে।
কে সে? মুসার প্রশ্ন। আমাদের ওপর নজর রাখে কেন? কি চায়? কাঁ
কাচ ভাঙুরার অ্যাসিসট্যান্ট হতে পারে, কচি বললো।
ঠোঁট কামড়ালো কিশোর। তা পারে।
আসল ব্যাপারটা কি বলো তো? রবিন বললো, এতো আঁটঘাট বেঁধে এভাবে গাড়ির কাঁচ ভাঙার কি মানে? এয়ার পিস্তল, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, পুলিশ ব্যাণ্ড রেডিও, ওয়্যারট্যাপ…নাহ্, এতো সব জিনিসপত্র নিয়ে শুধু শুধু মজা করার। জন্যে কাঁচ ভাঙছে না!
ঠিক, আঙুল নাচালো মুসা। অন্য কোনো কারণ আছে। লাভজনক কিছু। নইলে এতো সব করতে যেতো না।
লাভজনক কাজই তো করে, কচি বললো। গাড়িতে অনেক সময় দামী জিনিস রেখে যায় লোকে। উইশীল্ড ভেঙে সেগুলো চুরি করে চোরটা। ওই যে। ঈগলটা যেমন করলো। অনেক দামী জিনিস। ওই একটা বিক্রি করলেই সারা জীবন। খেতে পারবে।
এদেশে ওই ঈগল বিক্রি করতে পারবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিশোরের দিকে তাকালো রবিন। কিশোর, তুমি কি বলো?
বলে আর কি হবে? এই কেস খতম।
হাঁ হয়ে গেল অন্য তিনজন। নীরবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে।
হ্যাঁ, এই কেস শেষ, আবার বললো কিশোর। লোকটাকে হারিয়েছি আমরা।
চুপ করেই রইলো তিন শ্রোতা।
আমরা এখন জানি টেন-স্পীডওলাই কাঁচ ভাঙে, কিশোর বললো। কিন্তু সে কে, জানি না। ওর নাম জানি না, পরিচয় জানি না, ওর সম্পর্কে কিছুই জানি না। অন্ধকারে তার চেহারাও দেখতে পারিনি ভালোমতো। সে জেনে গেছে, তার পরিচয় ফাস হওয়ার পথে, ফলে ডুব দেবে এখন। আর হয়তো গাড়ির কাঁচ ভাঙবে না। যদি না ভাঙে ধরবো কিভাবে?
হতাশায় গুঙিয়ে উঠলো মুসা। তাই তো! জানি ওই ব্যাটাই শয়তান, কিন্তু ধরতে পারছি না!
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো কিশোর। রহস্যের সমাধান আমরা করেছি। কিন্তু অপরাধীকে ধরতে পারলাম না।
চুপ করে ভাবতে লাগলো চারজনে।
ঘড়ির দিকে তাকালো মুসা, আর বসে থেকে কি লাভ? চলো, শুতে যাই।
হ্যাঁ,তাই চলো, আফসোস করে বললো রবিন। এই কেস এখানেই শেষ। গাড়ির কাঁচও আর ভাঙবে না, লোকটাকেও ধরতে পারবো না।
তোমাদের তো কিছু হবে না, ক্ষতিটা হলো আমার, বিষণ্ণ কণ্ঠে বললো। কচি। চেহারা দেখে মনে হলো কেঁদে ফেলতো, লজ্জায় পারছে না। মস্ত ক্ষতি। আব্বাকে কিছুতেই বোঝাতে পারবো না, আমার সঙ্গে শত্রুতা করে নয়, চুরি করার জন্যে গাড়ির কাঁচ ভাঙে একটা চোর! ড্রাইভিং লাইসেন্স করাটাই সার হলো আমার! গাড়ি আর চালাতে পারবো না!
বিদায় নিয়ে বাস ধরতে চললো কচি।
.
১২.
পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে বসে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো এনায়েত। উল্লাহ। চোখে অবিশ্বাস। বললো, বলিস কি? এয়ার পিস্তল দিয়ে কাঁচ ভাঙে?
হ্যাঁ, আব্বা, তাই। কাল রাতে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে কিশোর। ভূত থেকে-ভূতের সাহায্যে কিভাবে সাইকেলওয়ালার কাঁচ ভাঙার খবর জেনেছে সব কথা বাবাকে খুলে বললো কচি।
ভূত-থেকে-ভূতে! নামটা ভালোই দিয়েছে। আইডিয়াটাও চমৎকার! বুদ্ধি। আছে ছেলেটার, হাসলো এনায়েত উল্লাহ। তা পুলিশের কাছে মুখ খুলেছে। চোরটা?
পুলিশকে বলা হয়নি এখনও।
বলা হয়নি? ভ্রুকুটি করলো এনায়েত উল্লাহ। কেন? তোরা নিজেরাই ধরার চেষ্টা করবি নাকি?
না।
তাহলে?
লোকটা কে তা-ই জানি না আমরা এখনও, আরেক দিকে তাকিয়ে বললো কচি। ওর নাম জানি না, কোথায় থাকে জানি না, বিদঘুঁটে টুপি আর গগলস পরে থাকে বলে চেহারাও দেখতে পারিনি।
জানিসই না লোকটা কে? ভুরু কোঁচকালো এনায়েত উল্লাহ।
না, ধরতে পারলে তবে তো জানবো। তার আগেই পালালো। তবে…তবে, আমার মনে হয় কিশোর যেভাবেই হোক বের করে ফেলবে..পারবে ও! পারবেই!
হু, কচির মতো এতোটা আশা করতে পারলো না এনায়েত উল্লাহ। আবার খাওয়ায় মন দিলো। দেখ, পারে যদি ভালো। তবে যতোক্ষণ আমাকে প্রমাণ দেখাতে না পারছিস, গাড়ির চাবি আমি তোক দিচ্ছি না।
মুখ কালো করে নাস্তা শেষ করলো কচি। তারপর রওনা হলো কিশোরদের ওখানে। সারারাত অনেক ভেবেছে সে। লোকটাকে ধরার মতো কোনো উপায় বের করতে পারেনি। আশা করছে তিন গোয়েন্দার মাথা থেকে কোনো বুদ্ধি বেরোবে।
গেট দিয়ে ঢুকেই দেখলো কচি, বাগানে রোদ পোহাচ্ছে রবিন আর মুসা। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কিশোর কই?
সেটা তো আমাদেরও প্রশ্ন, মুসা বললো।
বাড়িতে নেই, রবিন জানালো। ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম নেই। আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম। বাইরে যাচ্ছে বলে নাকি বেরিয়ে গেছে কিশোর। কোথায় যাবে বলে যায়নি। তারপর থেকে এই বসেই আছি।
একটা চেয়ারে বসলো কচি। সাইকেলওয়ালাকে পাকড়াও করার কোন উপায় করতে পেরেছো? কোন বুদ্ধি-টুদ্ধি?
নিরাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো দুই সহকারী গোয়েন্দা।
আধ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। তবু কিশোর ফিরলো না।
আরও পাঁচ মিনিট পর দেখা গেল তাকে। ঢুকছে গেট দিয়ে।
কিশোওর! চিৎকার করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো মুসা।
কোথায় গিয়েছিলে? রবিন বললো। সারাটা সকাল তোমার জন্যে বসে– আছি।
হাসলো কিশোর। আসলে ঠিকমতো আলোচনা করতে পারলে কাল রাতেই সমস্যার সমাধান করে ফেলা যেতো। মাঝরাতে হঠাৎ খিদেয় ঘুম ভেঙে গেল। রাতে কম খেয়েছিলাম। তুমি আর মুসা জিজ্ঞেস করেছিলে না, গাড়ির কাঁচ কেন ভাঙে সাইকেলওয়ালা?
কেন! প্রায় একই সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো অন্য তিনজন।
সেটাই আলোচনা করবো এখন, হাসলো গোয়েন্দাপ্রধান। এখন আমাদের বুঝতে হবে কেন উইশীল্ড ভাঙে। আর তাহলেই জেনে যাবো লোকটা কে।
নীরবে বসে রইলো তিন শ্রোতা। একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তারপর তাকালো কিশোরের মুখের দিকে।
আমি কিছুই বুঝতে পারবো না, সাফ জানিয়ে দিলো রবিন।
কচি বললো, না হয় কারণটা জানা গেলই, তাতে লোকটাকে চিনবো কিভাবে? যে কেউ এ কাজ করে থাকতে পারে।
জানা যাবে, দৃঢ়কণ্ঠে বললো কিশোর। গাড়ির কাঁচ কেন ভাঙে জানতে পারলে এটাও বুঝে যাবো কোন জায়গায় তাকে খুঁজতে হবে।
কি যে বলো কিছুই বুঝতে পারি না, অনুযোগের সুরে বললো মুসা। ঠিক আছে, তোমার কথাই সই। মেনে নিলাম, উইশীল্ড কেন ভাঙে বুঝতে পারলেই সমস্যার সমাধান হবে। এখন বলো, কেন ভাঙে? গাড়ির কাঁচ পছন্দ করে না বলে?
নাকি সে গাড়িই পছন্দ করে না? হিংসা? কেন লোকে চালাবে, আমি পারবো না, ওরকম কিছু? রবিনের প্রশ্ন। সে জন্যেই গাড়ির ক্ষতি করে?
না, মাথা নাড়লো কিশোর, ওসব নয়। তাহলে গাড়ির শুধু একটা বিশেষ কাঁচই ভাঙতো না। সব ভেঙে দিতো। কিংবা গাড়ির অন্য ক্ষতিও করতো। কিন্তু তা না করে যেন প্ল্যান করে খুব সাবধানে একটা করে কচি ভাঙে। এমন একটা ভাব করে রাখতে চায়, যাতে লোকে মনে করে ব্যাপারটা নিছকই দুর্ঘটনা।
পাগল হতে পারে, মুসা বললো, সেয়ানা পাগল। কাঁচ ভাঙতে ভালোবাসে, আবার ধরাও পড়তে চায় না।
পাগলের অতো সূক্ষ্ম বুদ্ধি হবে না, কিশোর মানতে পারলো না মুসার কথা। হ্যাঁ, বড়লোকের ওপর অনেকের রাগ থাকে, তাদের ক্ষতি করতে পারলে খুশি হয়। আর রেগে গিয়ে মানুষ যখন কোন কাজ করে বুদ্ধি তখন ঘোলা হয়ে যায়। বোকামি। কিংবা ভুল করে বসে। ওরকম কারো কাজ হলে এতোদিনে ধরা পড়ে যেতো।
হ্যাঁ, তা ঠিক, একমত হলো কচি।
আসলে এই লোকটা পাগল-টাগল কিছু না, কিশোর বললো। খুব বুদ্ধিমান। কাঁচও ভাঙছে, আবার অত্যন্ত চালাকির সঙ্গে লুকিয়ে রাখছে নিজেকে।
তাহলে হয়তো প্রতিশোধ, রবিন বললো। কি বলো?
কার ওপর?
গাড়ি কোম্পানির ওপর।
সেটা আমেরিকায় কিংবা জাপানে হতে পারে, যেখানে গাড়ি তৈরি হয়। কোম্পানিতে কোম্পানিতে রেষারেষি থাকলে, প্রতিযোগিতা থাকলে সেটা ভাবা। যেভো, যদিও গাড়ি কোম্পানির মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান এতো বাজে কাজ করবে না। আর বাংলাদেশে যেখানে গাড়ি তৈরিরই কোন কোম্পানি নেই, সেখানে। এসবের প্রশ্নই ওঠে না।
তাহলে ওই কথাই ঠিক। গাড়ির মালিকদের ওপরই লোকটার রাগ।
অনেক গাড়ির কাঁচ ভাঙা হয়েছে, নথি, কিশোর বললো। এতোগুলো মানুষের ওপর রাগ কিংবা ঘৃণা কোনটাই থাকতে পারে না একজনের।
তাহলে পাগলই, মুসা বললো।
কিন্তু পাগলের মতো আচরণ তো করছে না, প্রতিবাদ করলো কচি।
তাহলে আমি ফেল, দুহাত নাড়তে নাড়তে বলল মুসা। হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, কেন ভাঙে শয়তানটাই জানে!
কিশোর, সামনে ঝুঁকলো রবিন, ঈগলের ব্যাপারটা এর মধ্যে আনছি না। কেন? এমনও তো হতে পারে সমস্ত সূত্র লুকিয়ে আছে ওটার মাঝেই? অন্য সব গাড়ির কাঁচ ভাঙা তার কাছে একটা বাহানা মাত্র। আসলে ভাঙতে চেয়েছে ওই একটা গাড়িরই কাঁচ, যেটাতে মুদ্রা ছিলো। আর মুদ্রা চুরির ব্যাপারটাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্যে, মানে, পুলিশের চোখ অন্য দিকে সরানোর জন্যেই এতোগুলো গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে।
চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলালো কিশোর। তোমার কথায় যে যুক্তি একেবারেই নেই তা নয়। তবে সেক্ষেত্রে কাঁচ ভেঙে আরও জিনিস চুরি করতো, যাতে সবাই মনে করে কাঁচ ভাঙাই হয় চুরি করার জন্যে। সাধারণ চুরির মধ্যেই পড়ে গেছে মুদ্রা চুরির ব্যাপারটাও। তাই না?
তাহলে… আবার ভাবতে আরম্ভ করেছে মুসী। কথা শেষ করলো না।
আর কি কারণ হতে পারে? মুসার কথাটাই যেন শেষ করলো কচি।
আমিও আর কিছু ভেবে পাচ্ছি না, মাথা নাড়লো রবিন।
ভাবলে আরও অনেক সম্ভাবনা বেরিয়ে আসতে পারে, কিশোর বললো। তবে মুসার কাল রাতের একটা কথা আমার কাছে খুব মূল্যবান মনে হয়েছে।
আমি বলেছি! মুসা অবাক। কাল রাতে?
হ্যাঁ, বলেছো। তুমি বলেছো, গাড়ির কাঁচ ভেঙে কার কি লাভ?
চোখ মিটমিট করতে লাগলো অন্য তিনজন।
লাভ? ভুরু কুঁচকে বললো কচি। গাড়ির কাঁচ ভেঙে লাভ?
বুঝেছি! তুড়ি বাজিয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো মুসা। তারপর বসে পড়লো। আবার ধীরে ধীরে। ঠিক, লাভ! তাদের লাভ, যারা গাড়ির জানালার কাঁচ বানায়, কিংবা সাপ্লাই দেয়!
ঠিক, ঠিক! রবিনও উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে নিশ্চয় ওরকম কাঁচ তৈরির কোন কোম্পানি নেই। বাকি রইলো যারা সাপ্লাই দেয়। বিদেশ থেকে আমদানী করে। আর নিশ্চয় ওই-কাঁচ আমদানী কোন একটা প্রতিষ্ঠানই করে থাকে। একচেটিয়া ব্যবসা।
ঠিক এই কথাটাই আমি বলতে চাইছি, নথি, হাসিমুখে বললো কিশোর। যারা কাঁচ আমদানী করে। গাড়ির কাঁচ ক্রমাগত ভাঙতে থাকলে তাদেরই লাভ। কারণ কাঁচ ছাড়া গাড়ি চালানো সন্ত্র নয়। বাধ্য হয়েই নতুন আরেকটা লাগাতে হবে মালিককে। আরও একটা ব্যাপার কি লক্ষ করেছো? শুধু টয়োটা গাড়িরই কাঁচ ভাঙে। তারমানে শুধু টয়োটার কাঁচই আমদানী করে তারা।
তেমন প্রতিষ্ঠান আছে এদেশে? কচির প্রশ্ন। খোঁজ লাগাতে হয়।
নিশ্চয় আছে। সকালে সেটা খুঁজতেই বেরিয়েছিলাম, কিশোর বললো। কয়েকটা মেকানিক শপে খোঁজ নিয়েছি। সবাই একটা নামই বললো। গাড়ির ওই কাঁচ একটা কোম্পানিই আমদানী করে। মডার্ন গ্লাস কোম্পানি।
.
১৩.
লাল রঙা একটা পাকা বাড়ি। একতলা। পেছনে আরও তিনটে বাড়ি, পাকা দেয়াল, ওপরে টিনের চাল। এক সীমানার মধ্যেই বাড়িগুলো, কাঁটাতারের ছয় ফুট উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা। এই হলো মডার্ন গ্লাস কোম্পানি। জায়গাটা শহরের বাইরে, খিলক্ষেত এলাকায়। উত্তরা এবং গুলশানের মাঝামাঝি, দুটো জায়গা থেকেই বেশি দূরে নয়। সামনের দিকে মূল গেট ছাড়াও ডেলিভারি ট্রাক আর কর্মচারীদের ঢোকার জন্যে আরেকটা গেট আছে একপাশে। সামনের বিল্ডিংটায় অফিস আর শো রুম। পেছনের টিনের চালাওয়ালাটা গুদাম। লাল বাড়িটার পাশে বেশ ছড়ানো একটা চত্বর রয়েছে। ওখানে গিয়ে ট্রাক কিংবা অন্য গাড়ি দাঁড়ায়, মাল বোঝাই করার জন্যে। গাড়ি পার্ক করার জায়গাটা এখন অর্ধেক খালি।
কোম্পানির মালিকই কি কাঁচ ভাঙে? প্রশ্ন করলো রবিন।
ঠিক নেই, জবাব দিলো কিশোর। তবে সে সম্ভাবনাও কম।
পাশে ছোট একটা মার্কেট তৈরি হচ্ছে। ওটার হাতে দাঁড়িয়ে কাঁচ কোম্পানির ওপর নজর রেখেছে তিন গোয়েন্দা আর কচি।
সেলসম্যানের কাজও হতে পারে, নিচের চত্বরের দিকে তাকিয়ে বল না কিশোর। যতো বেশি কাঁচ বিক্রি করবে ততো বেশি কমিশন পাবে। কমিশনের লোভেই হয়তো ভাঙে। কিংবা নতুন সেলসম্যান রাখা হয়েছে। মালিককে খুশি করার জন্যে সে এই কাজ করে বা করায়। অন্য কোন কর্মচারীর কাজও হতে পারে। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক কাঁচ বিক্রি না হলে চাকরি খোয়ানোর ভয় আছে। হয়তো তার।
সেটা জানবো কিভাবে? কচি বললো। চেহারাই তো দেখিনি।
চেহারা না দেখলেও শরীর দেখেছি। লম্বা, পাতলা, সম্ভবত কম বয়েসী। বয়স্ক লোকেরা সাধারণত ওরকম টেন-স্পীড সাইকেল চালায় না।
তাকিয়েই রয়েছে ছেলেরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে নিচের কাজকর্ম দেখছে। মূল। বাড়িটার মুখ রাস্তার দিকে নয়, ডানের পার্কিং লটের দিকে। বয়ে আরেকটা আছে, সেটাতে শুধু ট্রাক কিংবা ভ্যানগাড়ি ঢোকে, মাল বোঝাইয়ের জন্যে। আর ঢোকে খুচরা খরিদ্দার। নানা রকম গাড়ি আসছে যাচ্ছে সেখানে-পিকআপ, ভ্যান, কার। সব টয়োটা। এবং সবগুলোর কাঁচ ভাঙা।
দেখে তো মনে হয় পাইকারী বিক্রি করে এরা, মুসা বললো কিছুটা অবাক হয়েই। তাহলে ওই গাড়িগুলো আসছে কেন এতো বেশি?
শুধু পাইকারী বিক্রিতে বোধহয় চলছিলো না আর, জবাবটা দিলো কচি। খুচরাও শুরু করেছে।
মূল বাড়িটার সামনের দিকের দেয়াল প্রায় পুরোটাই কাঁচের। ভেতরে অফিস। ডেস্ক, চেয়ার, ফাইলিং কেবিনেট দেখেই বোঝা যায়। গুদাম থেকে বড় বড় চ্যাপ্টা বাক্স এনে তোলা হচ্ছে বায়ের চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ট্রাকে। ওটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা ট্রাক, মাল বোঝাই। সেটা থেকে মাল খালাস করে নিয়ে গিয়ে ভরা হচ্ছে গুদামে। দু-তিনজন লোক অফিস থেকে কিছুক্ষণ পর পরই বেরিয়ে। এসে গুদামে ঢুকছে, বাদামী কাগজে মোড়া চ্যাপ্টা চ্যাপ্টা প্যাকেট বয়ে নিয়ে আবার চলে যাচ্ছে অফিসে। বুঝতে অসুবিধে হয় না প্যাকেটগুলোতে রয়েছে কাঁচ। গাড়ি নিয়ে যারা আসছে তাদের অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছে ওই কাঁচ।
কাউকেই কিন্তু সাইকেলওয়ালার মতো লাগছে না, কর্মচারীদের কথা বললো কচি।
না, একমত হলো কিশোর। ওই লোকটা নিশ্চয় অফিসে কাজ করে। কোনো কেবিনে বসে রয়েছে, কিংবা গুদামের ভেতর। গুদাম-কর্মচারীও হতে পারে। আর সেলসম্যান হলে তো অফিসে থাকবে না। নিশ্চয় বেরিয়ে গেছে দোকানে দোকানে খোঁজ নিতে, কার কি মাল লাগবে।
মাল নামানো হয়ে গেলে বেরিয়ে গেল ট্রাক। যেটাতে বোঝাই হচ্ছিলো, সেটা রইলো, মাল তোলা এখনও শেষ হয়নি।
কি করবো, কিশোর? রবিন জিজ্ঞেস করলো। এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখবোই?
না, খালি হওয়ার অপেক্ষা করছি, জবাব দিলো কিশোর। ট্রাকগুলো চলে গেলেই গুদামের সামনেটা খালি হয়ে যাবে। মাল খালাস কিংবা বোঝাইয়ের কাজ না থাকলে গুদামের ভেতরেও লোক থাকবে বলে মনে হয় না। তখন কচিকে নিয়ে আমি যাবো অফিসের দিকে। কথা বলার চেষ্টা করবো কর্মচারীদের সঙ্গে। শশী। রুমের জিনিস দেখার ভান করবো। এই সুযোগে তুমি আর মুসা গিয়ে গুদামে ঢুকবে। সূত্র খুঁজবে।
কি সূত্র? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
সাইকেলওয়ালাকে ধরা যায় এরকম কিছু?
আর তোমরা কি জিজ্ঞেস করবে?
আমি না, জিজ্ঞেস করাবো কচিকে দিয়ে। ওর ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। তাছাড়া ওদের গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে চার চারবার। কাঁচের কথাই জিজ্ঞেস করবে। ও দামদর জানবে।
ঠিক আছে, বললো রবিন।
আরও আধ ঘণ্টা কাজ চললো গুদামের সামনের চত্বরে। তারপর বেরিয়ে গেল ট্রাক। চর খালি হয়ে গেল।
সময় হয়েছে, কিশোর বললো অবশেষে। মুসা, রবিন, মনে রাখবে খুব বাজে একটা লোককে নিয়ে কারবার করছি আমরা। বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে যে কোন সময়। সাইকেলওয়ালা এখানে আছে এরকম কোন চিহ্ন দেখলে গুদামের সামনের দরজা কিংবা জানালায় চকের দাগ দিয়ে রাখবে। আশ্চর্যবোধক চিহ্ন। আমি আর কচি সঙ্গে সঙ্গে তখন বাড়ি চলে যাবো। মামাকে বলে পুলিশ নিয়ে ফিরে আসবো।
ছাতের ওপর থেকে নেমে এলো ওরা। অর্ধেক হয়ে বন্ধ হয়ে আছে মার্কেট তৈরির কাজ। বোধহয় টাকা-পয়সার অভাবেই। লোকজন কেউ নেই। ছাতে। উঠতে তেমন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। নামতেও জবাবদিহি করতে হলো না।
গ্লাস কোম্পানির পাশের দরজাটাও খোলা, সামনেরটাও। এদিক ওদিক তাকিয়ে চট করে ঢুকে পড়লো মুসা আর রবিন। গুদামের দিকে এগোলো।
কচিকে নিয়ে কিশোর ঢুকলো শো রুমে। চারজন খরিদ্দার দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলছে তিনজন সেলসম্যান। কাউন্টারের ওপাশে বিরাট ব্রিট তাক নানা রকম কাঁচে বোঝাই। কিছু কাঁচ আছে নকশা করা, কিছু নকশা ছাড়া। সাদা কাঁচ আছে, রঙিন কাঁচ আছে। এসবই বাড়ি-ঘরের জানালার শার্সিতে লাগানো হয়। খরিদ্দাররা দেখে, পছন্দ করে, অর্ডার দেয়।
বাঁয়ের কাঁচের দেয়ালের ওপাশে আরেকটা ঘর। অফিস। একজন মহিলা আর দুজন পুরুষ কর্মচারীকে দেখা যাচ্ছে।
খরিদ্দারদের পেছনে দাঁড়িয়ে সেলসম্যানদের দেখছে কিশোর। তাদের একজন। মোটাসোটা বয়স্ক মানুষ। আরেকজন লম্বা, পাতলা, তরুণ। চোখে চোখে কথা হয়ে গেল কচি আর কিশোরের। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে সামান্য মাথা ঝাঁকালো। ওরা।
কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে এখন কথা বলছে দুজন খরিদ্দার।
এই সুযোগে চারপাশে চোখ বোলাতে লাগলো কিশোর। কাঁচের দেয়ালের ওপাশের মহিলা তরুণী। যথেষ্ট লম্বা, প্রায় পুরুষের সমান, পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি। পুরুষদের একজন লম্বা, মাঝবয়েসী। কোণের দিকে কাঁচে ঘেরা একটা খুপরিমতো ঘরে বসে আছে। একা। খুপরির কাঁচের দেয়ালে লেখা রয়েছে।
শরাফত আহমেদ
ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
তারমানে ওই লোকটাই এই কোম্পানির মালিক। বেশ বড় একটা ডেস্কের ওপাশে বসে আছে লম্বা আরেকজন মানুষ। বয়েস প্রৌঢ়ত্বের কোঠা ছাড়িয়ে গেছে। ডেস্কে তার পদবী লেখা প্ল্যাস্টিকের বোর্ড দাঁড়িয়ে রয়েছেঃ
জেনারেল ম্যানেজার।
কিশোর! কানের কাছে ফিসফিস করে উঠলো কচির কণ্ঠ।
ঝট করে ফিরে তাকালো কিশোর। সেলসম্যানদের একজন, সেই তরুণ লোকটা হেঁটে যাচ্ছে পাশের দরজার দিকে। গুদামে যাওয়ার চত্বরে বেরোনোর পথ। ওটা।
.
১৪.
কিশোরদেরকে ভেতরে ঢুকে যেতে দেখলো মুসা আর রবিন। চত্বরে অপেক্ষা করলো আর মিনিট দুয়েক। কাউকে আসতে না দেখে দ্রুতপায়ে এগোলো গুদামের দিকে। নির্জন। কেউ নেই। মূল বাড়িটার পেছনে গুদামের দিকে মুখ করে রয়েছে। একটিমাত্র জানালা। দরজা আছে। সব বন্ধ।
আরেকবার এদিক ওদিক তাকিয়ে চট করে গুদামে ঢুকে পড়লো দুজনে।
ভেতরে অলৌ কম। জানালা নেই। দরজা দিয়ে যা আসছে তাতে ভেতরের অন্ধকার কাটছে না। ফলে সারাক্ষণ বৈদ্যুতিক আলো জ্বেলে রাখতে হচ্ছে। সারি। সারি তাক, ওগুলোতে নানা রকমের প্যাকেট আর বাক্স। মেঝেতে একটার ওপর আরেকটা সাজিয়ে স্কুপ করে রাখা হয়েছে ছোট-বড় কাঠের বাক্স। বাদামী কাগজে মোড়া অনেক কাঁচ,দেখা গেল একটা তাকে। কান পেতে রইলো কিছুক্ষণ দুজনে। নিশ্চিত হয়ে নিলো ভেতরে ওরা ছাড়া আর কেউ নেই।
লম্বা শেলফগুলোর মধ্যে দিয়ে রয়েছে চলাচলের জন্যে সরু গলিপথ। সে পথে এগোলো ওরা। তাকের মধ্যে ফাঁক দেখলেই উঁকি দেয়, মাথা নিচু করে তাকায় শেলফের নিচের ফাঁকে। সাইকেলওয়ালার ব্যবহৃত জিনিসের চিহ্ন খুঁজছে।
কিছুই পাওয়া গেল না।
গুদামের শেষ প্রান্তে পার্টিশন দিয়ে ছোট একটা অফিস করা হয়েছে। তবে সেটা বোধহয় এখন আর অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। কারণ ওটার ভেতরেও বাক্স বোঝাই করে রাখা হয়েছে। অফিসের জিনিসপত্র রাখার একমাত্র কাঠের আলমারিটা এখন খালি। ব্যবসা বোধহয় খারাপ যাচ্ছে, লোক ছাটাই করতে বাধ্য হয়েছে মালিক।
আবার গুদামের সামনের দিকে চলে এলো ওরী। ভেতরে আরও খুঁজে দেখার ইচ্ছে আছে। তবে তার আগে দেখে নিশ্চিন্ত হতে চায় যে কেউ আসছে না। আগের মতোই নির্জন চত্বর। সামনের গেট দিয়ে গাড়ি আসা-যাওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোন গাড়িই পাশের গেট দিয়ে ঢুকছে না।
কেউ নেই… বলতে গিয়েই থেমে গেল মুসা।
কি হলো! তার পাশে এসে দাঁড়ালো রবিন।
দুজনেই দেখতে পাচ্ছে, খুলে যাচ্ছে মূল বিল্ডিং থেকে চত্বরে বেরোনোর দরজা।
.
তিন লাফে কাউন্টারের শেষ মাথায় চলে এলো কিশোর। ওদিকেই চত্বরে বেরোনোর দরজাটা। হাত নেড়ে ডেকে বললো, এই যে ভাই, শোনেন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। আমার কথাটা খুব জরুরী।
আসছি, দরজা ঠেলে খুলতে খুলতে বললো লোকটা। বেশি দেরি হবে না।
এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে, রেগে যাওয়ার ভান করলে কিশোর। কথা বলছেন তো বলছেনই। আমাদের কি চোখে পড়ে না? মালিক কে আপনাদের? তার সঙ্গে কথা বলবো।
দরজার হাতলে হাত রেখেই থমকে গেল সেলসম্যান। দ্বিধা করছে। এ রকম করে যখন কথা বলছে নিশ্চয় হোমড়া চোমড়া কারও ছেলে।
মালিক কে? কড়া গলায় আবার জিজ্ঞেস করলো কিশোর। হাত তুলে কাঁচের অফিসে একলা বসা মানুষটাকে দেখিয়ে বললো, উনি?…এই কচি, এসো, বাবার কথা গিয়ে বলি। বলবো, আমাদেরকে পাত্তাই দেয়নি আপনাদের সেলসম্যান।
চলো, কিশোরের অভিনয় দেখে মনে মনে অবাক না হয়ে পারলো না কচি।
যা বোঝার বুঝে গেল সেলসম্যান। এই ছেলেকে বেশি ঘাটানো উচিত হবে না। চাকরি চলে যেতে পারে তাহলে। দরজার হাতল ছেড়ে দিয়ে কাউন্টারের কাছে ফিলে এলো সে। জিজ্ঞেস করলো, কি চাই?
একটা রোলস রয়েসের কাঁচ, গম্ভীর মুখে বললো কিশোর। ভেতরে ভেতরে পেট ফেটে যাচ্ছে হাসিতে।
রোলস রয়েস! বিস্ময়ে ভুরু উঁচু হয়ে গেল সেলসম্যানের। এতো দামী গাড়ির কাঁচ পাবো কোথায়?
সেটা আমি কি জানি? বাবা বলে পাঠালো নিয়ে যেতে, নিতে এলাম।
কোন মডেলের? মড়েল জানলে বলতে পারবো। টয়োটার কোন কাঁচ ওটায় লাগে কিনা দেখা যেতে পারে।
ঊনিশশো সাইতিরিশ মডেলের সিলভার ক্লাউড, আমেরিকায় যে গাড়িটাতে চড়ে ওরা, হ্যাঁনসন চালায়, সেটার কথা বলে দিলো কিশোর।
মরা মাছের মতো হাঁ হয়ে গেল সেলসম্যানের মুখ। ঢোঁক গিললো। ফ্যাকাশে মুখে রক্ত ফিরতে সময় লাগলো। তারপর ধীরে ধীরে মাথা নাড়লো, নামই শুনিনি। কখনও, দেখা দূরে থাক। গাড়িটা কি নিয়ে এসেছো?
আপনি করে বলুন, ঝাঝালো কণ্ঠে বললো কিশোর। তুমি শুনতে ভালো লাগে না আমার।…না, গাড়ি আনিনি।
তাহলে দয়া করে যদি ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও..মানে, দেন, তাহলে চেষ্টা করে দেখতে পারি টয়োটার কাঁচ ফিট করে কিনা।
.
দরজা খুলতে দেখে বরফের মতো জমে গেছে রবিন ও মুসা। ওদের মনে হলো। অনন্ত কাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে ওরা খেলা চত্বরে রোদের মাঝে, আর খুলেই চলেছে দরজাটা। এই খোলার যেন আর শেষ নেই।
তারপর ধীরে ধীরে আবার বন্ধ হয়ে গেল।
হাউফ! করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মুসা।
এসো, তাড়া দিলে রবিন। জলদি ঢুকে পড়ি ওটায়। দুই নম্বর গুদামটা। দেখালো সে।
প্রায় দৌড়ে এসে দ্বিতীয় গুদামে ঢুকলো ওরা। এটার ভেতরটাও প্রথমটারই মতো অন্ধকার। আলো জ্বেলে রাখতে হয় সর্বক্ষণ। সারি সারিতাক। তবে তাকগুলোর বেশির ভাগই খালি।
প্রথম ঘরটার মতোই এটাতেও খুঁজতে শুরু করলো ওরা। এখানেও কিছু পেলো। না। আরেকবার এসে উঁকি দিলো দরজায়। কাউকে দেখা গেল না। মূল বাড়ি থেকে বেরোলো না কেউ। চত্বরে বেরিয়ে একছুটে এসে ঢুকলো তৃতীয় এবং সব চেয়ে– ছোট গুদামটায়। অন্য দুটোর মতোই এটাতেও আলো কম। কিছু মালপত্র রয়েছে কয়েকটা তাকে। ঘরের মাঝখানে একটা বড় টেবিল। তার ওপর কাঁচ কাটার যন্ত্রপাতি। পাশে কয়েকটা লম্বা লম্বা টুলও রয়েছে। কাজ হয় ওগুলোতে।
বায়ের শেলফগুলো ধরে পেছনে এগোলো রবিন। মুসা এগোলো ডান পাশ দিয়ে। চোখে লাগার মতো কিছুই দেখতে পেলো না। এই গুদামের পেছনেও পার্টিশন দেয়া একটা ছোট অফিস রয়েছে। জিনিসপত্রে ঠাসা।
রবিন! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।
অফিসের পেছনের দেয়াল ঘেঁষে কয়েকটা বাক্সের ওপর তেরপল টেনে দেয়া। ছিলো। সেটা সরাতেই বেরিয়ে পড়েছে একটা টেন-স্পীড বাইসাইকেল। দেয়াল। ঘেঁষে দাঁড় করানো।
এইটাই? রবিন এলে আবার বললো মুসা।
কি জানি! দ্বিধা করলো রবিন। অন্ধকারে দেখেছি। রঙ-টঙ তো দেখিনি। তবে এ রকম সাইকেলও এ শহরে দেখিনি আর। এটাই হবে।
সীটটা কিন্তু বেশ উঁচু। লম্বা মানুষের মাপে বসানো।
আরও ভাল করে দেখার জন্যে এগোতে গেল মুসা। হাতের ধাক্কায় উল্টে পড়ে গেল ওপরের একটা বাক্স।
রবিন আর মুসা দুজনেই আশঙ্কা করেছিলো ঝনঝন করে কাঁচ ভাঙবে। কিন্তু তেমন আওয়াজ হলো না। তবে কি কাঁচ নেই ভেতরে?
বাক্সটা সোজা করে বসিয়ে ডালা তুলে দেখলো মুসা। তারপরেই অস্ফুট শব্দ করে উঠলো। কি আছে দেখার জন্যে রবিনও এসে উঁকি দিলো ভেতরে।
পাওয়া গেল একটা ক্যাপ, চশমা, ব্যাকপ্যাক, তার ভেতরে রেডিও, হেডফোন, হলদে রঙের একটা স্পোর্টসম্যানদের জামা, কালো পায়জামা, আর সাইকেল চালানোর উপযোগী একজোড়া কেডস জুতো।
.
সেলসম্যানকে ওদিকে ব্যস্ত রেখেছে কিশোর, বেশ, ধরুন, এখানকার কোন কাঁচ ফিট করলো না। আনিয়ে তো দিতে পারবেন?
তা-ও জানি না, জবাব দিলো লোকটা। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি। অনেক সময় লাগবে। যে মডেলের কথা বলছেন, সিঙ্গাপুরেও পাওয়া যাবে কিনা। যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ফ্যাক্টরিতে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনতে হবে। প্রচুর দাম। পড়ে যাবে তাতে।
পড়লে পড়বে, তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত নাড়লো কিশোর। ভাঙা কাঁচ না বদলে তো আর গাড়ি চালানো যায় না।
তা বটে, স্বীকার করলো সেলসম্যান। মুখ দেখেই আন্দাজ করা গেল মনে মনে বলছে, ব্যাটা তোদের টাকা তোরা পানিতে ঢালবি, তাতে আমার কি?।
গুড, লোকটার কথায় খুব যেন সন্তুষ্ট হয়েছে কিশোর, এমন ভঙ্গি করলো। তারপর বললো, আরেকটা গাড়ির কাঁচ লাগবে। ক্যাডিলাক। উনিশশো সাতান্ন…
কিশোর! ডেকে উঠলো জানালায় দাঁড়ানো কচি। উত্তেজনায় শক্ত হয়ে
কী? বিরক্ত ভঙ্গিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো কিশোর। তারপর যেন নেহায়েত অনিচ্ছার সঙ্গেই এগিয়ে গেল। ধমকের সুরে বললো, কথা বলছি যে দেখো না? কচির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কি দেখে ডাকা হয়েছে তাকে, দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হলো না। কচির মতো সে-ও দেখলো, ছোট গুদামটার জানালায় বড় করে চকে আঁকা আশ্চর্যবোধক।
আহ, জ্বালিয়ে মারলো! বিরক্ত স্বরে বললো সে। সময় অসময় বোঝে না!
সেলসম্যানকে পুরোপুরি অন্ধকারে আর বিস্মিত করে রেখে কচিকে নিয়ে বেরিয়ে এলো কিশোর।
বাইরে বেরিয়ে আর হাসি চাপতে পারলো না।
কচিও হাসতে হাসতে হাত নেড়ে বললো, যা গুল মারতে পারো না তুমি! রোলস রয়েস, ক্যাডিলাক…এমন করে বলছিলে, আমারই বিশ্বাস করে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। সেলসম্যানের আর কি দোষ? কিশোরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে রসিকতার সুরে জিজ্ঞেস করলো, তা এদেশে তোমার কোটিপতি বাবাটি কে হে?
হেফাজত আলি পাটোয়ারি, হেসেই জবাব দিলো কিশোর। নাম শোনোনি? আগে কাগজ ফেরি করে বেচতো, এখন করে সোনার ব্যবসা, গোল্ড স্মাগলার। শুনতে খুব ভালো লাগে, না? কি গালভরা নাম। মানুষকে বলেও শান্তি। প্রচুর টাকা আছে আব্বা হুজুরের। আর আছে কয়েক ডজন পোষা সন্ত্রাসী। কেউ কিছু বললেই ঠিচু, বলে পিস্তলের ট্রিগার টেপার ভঙ্গি করলো সে। সে জন্যেই তো কাউকে কেয়ার করি না। মুখের ওপর যা খুশি বলে দিই।…নাও, চলো এখন, পুলিশকে খবর দিতে হবে।
.
গুদামের জানালার নিচে ঘাপটি মেরে বসে আছে রবিন আর মুসা। ওরা যে জিনিস। পেয়েছে সেটা বোঝানোর জন্যে জানালায় চিহ্ন আঁকার পর পেরিয়ে গেছে দশটি মিনিট।
আধ ঘণ্টার বেশি লাগবে না, হিসেব করে বললো রবিন। বাসে কিংবা বেবিতে করে বাড়ি যাওয়া, মামাকে দিয়ে থানায় টেলিফোন করানো, তারপর থানা। থেকে পুলিশ নিয়ে আসা…ওই আধ ঘণ্টাই যথেষ্ট।
ওকে যদি আমরা ধরতে পারতাম ভালো হতো, মুসা আফসোস করলো।
হয়তো হতো। তবে তার জন্যে দুঃখ করার কিছু নেই। রহস্যের কিনারা তো। আমরাই করলাম। ধরার চেষ্টা হয়তো এখনও করা যায়, কিন্তু উচিত হবে না। ব্যাটার কাছে পিস্তল-টিস্তল থাকতে পারে। এয়ার পিস্তল তো আছেই।
কিন্তু তার পরেও… বলতে গিয়ে থেমে গেল মুসা।
পাশের গেট দিয়ে ঢুকলো একটা নীল রঙের গাড়ি। তীব্র গতিতে চত্বরে ঢুকে অতো জোরে ব্রেক কষলো, কর্কশ আর্তনাদ করে উঠলো টায়ার। গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে এগোলো এক তরুণ।
মুসা, দেখো দেখো! ফিসফিসিয়ে বললো রবিন।
লম্বা, পাতলা শরীর। চেহারা ফ্যাকাশে, যেন রক্তশূন্যতায় ভুগছে। লম্বা লম্বা চুল নেমে এসেছে ঘাড়ের ওপর। গায়ে নীল স্পোর্টস জ্যাকেট। খাড়া পাতলা ঠোঁট। চঞ্চল চোখের তারা, যেন সার্বক্ষণিক দ্বিধায় অস্থির। ধূসর প্যান্ট পরনে, পায়ে কালো চকচকে জুতো। মূল বাড়িটার দিকে এগোচ্ছে। কেমন একটা কর্তৃত্বময় ভঙ্গি, যেন কোম্পানিটার মালিক সে-ই।
সাইকেলওয়ালার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে, নিচু গলায় বললো রবিন।
বাড়িটায় গিয়ে ঢুকলো সে।
ঘড়ি দেখলো মুসা। গাড়ির নম্বরটা নিয়ে রাখা দরকার। পুলিশ আসার আগেই চলে যেতে পারে।
নোটবুকে নম্বর লিখছে মুসা, এই সময় ঝটকা দিয়ে খুলে গেল চত্বরে বেরোনোর দরজা, প্রায় ছুটে বেরিয়ে এলো লম্বা লোকটা। দ্রুতপায়ে চত্বর পেরিয়ে এগোলে মূসা আর রবিন যে গুদামটায় লুকিয়ে আছে সেটার দিকে।
আরি, এদিকেই তা আসছে! আঁতকে উঠলো রবিন।
লুকানোর জায়গা খুঁজতে শুরু করলো দুজনেই।
জলদি! মুসা বললো, শেলফের নিচে!
দরজার কাছেই একটা বড় বাক্সের পেছনে শেলফের নিচে কিছুটা খালি জায়গা পাওয়া গেল লুকানোর মতো। হামাগুড়ি দিয়ে কোনোমতে তার মধ্যে গিয়ে ঢুকলো দুজনে।
এতো জোরে দরজা খুললো তরুণ, দড়াম করে গিয়ে পাল্লাটা বাড়ি খেলো দেয়ালের সঙ্গে। কোনো দিকে না তাকিয়ে দুটো শেলফের মাঝখান দিয়ে পেছন– দিকে প্রায় দৌড়ে গেল সে। ওর জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দও কানে আসছে গোয়েন্দাদের। আবার যখন বেরিয়ে এলো, মাথায় ক্যাপ পরা, বিচিত্র। চশমাটা ঝুলছে গলায়, সাইকেল চালানোর কাপড়গুলো ঢোকানো ব্যাকপ্যাকে। ব্যাগটা ঝুলছে সাইকেলের হ্যান্ডেলবারে।
সমস্ত প্রমাণ নিয়ে যাচ্ছে! হিসিয়ে উঠলো মুসা। নষ্ট করে ফেললে গেল! আর প্রমাণ করা যাবে না সে-ই কাঁচ ভাঙতো!
থামানো তো যাবে না! যা খুশি করে বসতে পারে!
কিন্তু ততক্ষণে বেরোতে শুরু করে দিয়েছে মুসা। একবার দ্বিধা করে রবিনও তাকে অনুসরণ করলো।
জিনিসগুলো গাড়িতে তুলছে ব্যাটা! আরেকবার হিসিয়ে উঠলো মুসা।
গাড়ির পেছনের বুটে সাইকেলটা ঢোকানোর চেষ্টা করছে ও।
আমার কাছে তো মোটেও ভয়ঙ্কর লাগছে না লোকটাকে, মুসা বললো। অতো ভয় পাচ্ছি কেন? রবিন প্রতিবাদ করার আগেই লাফিয়ে উঠে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল সে।
তাকে দেখেই সাইকেলটা ফেলে দিলো লোকটা। তাড়াতাড়ি গিয়ে উঠে বসলো গাড়িতে। ছুটতে শুরু করলো মুসা।
ফিরে তাকালো আবার লোকটা। জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ডান হাত। হাতে ধরা বিকট চেহারার একটা পিস্তল।
মুসার দিকে তাক করেছে!