১৬.
যত তাড়াতাড়ি পারল, টায়ার বদলে নিল বোরিস। কিন্তু তাতেও দশ মিনিটের বেশি লেগে গেল। ইতিমধ্যে নিশ্চয় কয়েক মাইল এগিয়ে গেছে ভাটা।
অদ্ভুত এক শূন্যতা অনুভব করছে রবিন। কেন যেন তার মনে হল, কিশোর আর মুসাকে আর কোনদিন দেখতে পাবে না।
রবিন, এখন কি করা? ড্রাইভিং সিটে রবিনের পাশে উঠে বসেছে আবার বোরিস। পুলিশের কাছে যাব?
কি হবে? ভ্যানের লাইসেন্স নাম্বার নিতে ভুলে গেছি আমি, একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছে রবিন। পুলিশকে কি বলব?
কি যেন ভাবল বোরিস। সোজা পথ। ভ্যানটা যেদিকে গেছে সেদিকেই যাই, বলতে বলতেই ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে গিয়ার দিল সে। নির্জন হাইওয়ে ধরে ট্রাক ছোটাল। আবার পশ্চিমে।
গ্রাভ কম্পার্টমেন্ট থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের একটা ম্যাপ বের করল রবিন। তাতে দেখল, কয়েক মাইল সামনে এক জায়গায় পথটা দুভাগ হয়ে গেছে। একটা শাখা চলে গেছে সুন্দর সৈকত শহর লং বীচ-এর দিকে। আরেকটা শাখা গেছে স্যান পেড্রোতে।
রেডিওতে একটা বন্দরের কথা বলা হয়েছে। লং বীচে বন্দর নেই, স্যান পেড্রোতে আছে। তারমানে ওদিকেই গেছে ভ্যানটা।
বোরিস, স্যান পেড্রোর দিকে যেতে হবে, বলল রবিন।
হোকে, একমনে গাড়ি চালাচ্ছে ব্যাভারিয়ান।
পুরানো ইঞ্জিনের শক্তি নিঙড়ে যত জোরে সম্ভব ছুটে চলেছে ট্রাক। মগজে। ভাবনার ছুরি চালাচ্ছে রবিন, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না রত্নদানো খুঁজতে গিয়ে ডাকাতদের হাতে পড়ল কি করে মুসা আর রবিন! তাদেরকে বস্তায় ভরে নিয়ে যাচ্ছে কেন মৃরিশ থিয়েটারের দারোয়ান বার্ট ইঅং! বেশিক্ষণ ভাবনা-চিন্তার সময়। পেল না সে, দুই রাস্তার মোড়ে পৌঁছে গেল ট্রাক।
স্যান পেড্রোর রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে আনল বোরিস। গতি সামান্য শিথিল করতে হয়েছিল, আবার বাড়িয়ে দিল।
শিগগিরই স্যান পেড্রোর সীমানা দেখা গেল দূর থেকে। রাস্তার দুপাশে বিস্তীর্ণ মাঠে কালো কালো অসংখ্য বিন্দু দেখা যাচ্ছে। কাছে এলে বোঝা গেল ওগুলো কি। ডেরিক। কুৎসিত দানবের মত দাঁড়িয়ে আছে বিশাল কালো যন্ত্রগুলো, মাটির তলা থেকে তেল ভোলার জন্যে বসানো হয়েছে।
বন্দরে এসে ঢুকল ট্রাক। তেলমেশানো ঘোলা পানিতে গাদাগাদি করে ভাসছে। ছোট-বড়-মাঝারি অগুনতি জলযান। নানারকম জাহাজের মাঝে মাঝে রয়েছে মাছ। ধরার নৌকা আর লঞ্চ
প্রায় প্রতি মুহূর্তে বন্দরে ঢুকছে কিংবা বন্দর ত্যাগ করছে। একের পর এক বোট, জাহাজ, ফ্রেইটার।–
ট্রাক থামলি বোরিস। কোনদিকে যাবে এবার? কোথাও দেখা যাচ্ছে না সবুজ, ভ্যানটা। হাজারো জলযানের যে-কোনটাতে থাকতে পারে মুসা আর কিশোর। কোটাতে নিয়ে গিয়ে তোলা হয়েছে ওদেরকে, কি করে বোঝা যাবে?
রবিন, কিছু ভাবতে পারছি না আমি! তিক্ত কণ্ঠে বলল বোরিস। আর কোন আশা নেই!
কি জানি! কপালে আঙুল ঘষছে রবিন। রেডিওতে বলল-হঠাৎ এমনভাবে লাফিয়ে উঠল সে, যেন বোলতা হুল ফুটিয়েছে। চাঁদিতে কেবিনের ছাতের বাড়ি লাগতেই ধুপ করে বসে পড়ল আবার। চেঁচিয়ে উঠল, রেডিও! হ্যাঁ, রেডিও! বন্দরে ঢুকে আবার কথা বলবে বলেছিল! পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে সে।
বেশি তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কয়েক সেকেণ্ড দেরি করে ফেলল রবিন। পকেটের এখানে-ওখানে বেধে গেল ওয়াকি-টকি, কিন্তু হাতে বেরিয়ে এল অবশেষে।
বোতাম টিপে ওয়াকি-টকি অন করে দিল রবিন, কানের কাছে নিয়ে এল যন্ত্রটা। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতে লাগল সে। কথা বলবে তো? নাকি এতক্ষণে বলে ফেলেছে? ন_
রবিনকে চমকে দিয়ে হঠাৎ জ্যান্ত হয়ে উঠল স্পীকার: অপারেশন থিয়েটার! বোট নামিয়ে দিয়েছি। সাঁইত্রিশ নাম্বারে থাক, পাঁচ মিনিটের মধ্যেই তুলে নেব। মালপত্রসহ যাত্রীদেরকে তৈরি রাখ। সঙ্গে সঙ্গেই যাতে বেটে তুলে নেয়া যায়।
অপারেশন থিয়েটার বলছি, বার্টের গলা শোনা গেল স্পীকারে। বোটটা দেখতে পাচ্ছি। যাত্রী আর মালপত্র ট্রাকে তৈরিই আছে। তুলতে দেরি হবে না।
গুড। আমরা আরও কাছে এলে একটা সাদা রুমাল নাড়বে, তাহলে বুঝব কোন গোলমাল নেই। ওভার অ্যাণ্ড আউট।
চুপ হয়ে গেল স্পীকার। রবিন চেঁচিয়ে উঠল, বোরিস, জলদি, সাঁইত্রিশ নাম্বার জেটি! মাত্র পাঁচ মিনিট সময় আছে হাতে!
কিন্তু সাঁইত্রিশ নাম্বার কোন্টা? স্যান পেড্রোতে আসিনি আগে কখনও, এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে বোরিস।
কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে। জলদি!
ধীরে এগোল ট্রাক। একটা লোকও চোখে পড়ছে না। রোববারের এই সকালে নির্জন হয়ে আছে এলাকাটা, মৃত বন্দর যেন। সামনে একটা বাঁক। মোড় নিয়েই পুলিশের গাড়িটা দেখতে পেল ওরা।
ওই গাড়িটার পাশে, জলদি! আঙুল তুলে দেখাল রবিন।
জোরে ছুটে এসে পুলিশের গাড়ির পাশে ঘঁাচ করে ব্রেক কষল বোরিস।
জানালা দিয়ে মুখ বের করে চেঁচিয়ে বলল রবিন, এই যে, স্যার, সাঁইত্রিশ নাম্বার জেটিটা কোথায়, বলবেন?
সাঁইত্রিশ? বুড়ো আঙুল দিয়ে পেছন দিকে দেখাল অফিসার, রবিনরা যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে।-তিনটে ব্লক পেছনে। না না, গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না, এটা ওয়ান ওয়ে। সামনে চার ব্লক যেতে হবে সোজা, ডানে মোড় নিয়ে—
অফিসারের কথা শেষ হওয়ার আগেই এক কাণ্ড করল বোরিস। গ্যাস প্যাড়ালে পায়ের চাপ বাড়িয়ে বনবন করে স্টিয়ারিং ঘোরাল। প্রচণ্ড গর্জন করে উঠল ইঞ্জিন, দুই চাকার ওপর ভর দিয়ে আধ চক্কর ঘুরে গেল গাড়ি, টায়ার ঘষা খাওয়ার তীক্ষ্ণ কর্কশ আওয়াজ উঠল, পরক্ষণেই খেপা ঘোড়ার মত লাফ দিয়ে আগে বাড়ল। ট্রাকটা। তীব্র গতিতে ছুটে চলল যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে।
হেইই! বেআইনী… চেঁচিয়ে উঠল অফিসার, মাত্র দুটো শব্দ রবিনের কানে ঢুকল, বাকিটা ঢাকা পড়ে গেল ইঞ্জিনের শব্দে।
দেখতে দেখতে তিনটে ব্লক পেরিয়ে এল ট্রাক।
মোড় নিন! মোড় নিন! আঙুল তুলে দেখাল রবিন। পথের মোড়ে খাটো একটা সাইনবোর্ড, তাতে ৩৭ নাম্বার লেখা, তলায় তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে। কোনদিকে যেতে হবে।
আবার টায়ারের কর্কশ আর্তনাদ তুলে মোড় নিল ট্রাক। সামনে জেটিতে ঢোকার গেট ভারি লোহার পাতের ফ্রেমে মোটা তারের জাল লাগিয়ে তৈরি হয়েছে। পাল্লা।
সবুজ ভ্যানটা পানির প্রায় ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের বাম্পারের ঠিক পেছনে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সাদা রুমাল নাড়ছে একজন লোক। জেটি থেকে মাত্র শখানেক গজ দূরে একটা লঞ্চ, দ্রুত এগিয়ে আসছে এদিকেই।
দরজায় তালা! ট্রাকের গতি কমাল বোরিস।
পেছনে সাইরেনের শব্দ। ট্রাকের পাশ দিয়ে শা করে বেরিয়ে কয়েক গজ সামনে গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল পুলিশের গাড়িটা।ঝটকা দিয়ে খুলে গেল একপাশের দরজা। রিভলভার হাতে লাফিয়ে নেমে এল পুলিশ অফিসার। ছুটে এল ট্রাকের দিকে।
ট্রাক থামিয়ে দিয়েছে বোরিস। তার পাশে এসে হাত বাড়াল অফিসার, ইউ আর আণ্ডার অ্যারেস্ট! ওয়ান ওয়েতে ইউ টার্ন নিয়েছ, বেআইনীভাবে গতি বাড়িয়েছ। দেখি, লাইসেন্স দেখি?
সময় নেই, অফিসার, আপনি বুঝতে পারছেন না! চেঁচিয়ে বলল বোরিস। জলদি সাঁইত্রিশ নাম্বারে ঢুকতে হবে…
…লোডিং আজ বন্ধ, বোরিসকে থামিয়ে দিয়ে বলল অফিসার। ধানাই পানাই বাদ দাও। লাইসেন্স দেখি।
বোরিসের কাঁধের ওপর দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দিল রবিন। অফিসার, সত্যিই বুঝতে পারছেন না আপনি! ওই ভ্যানে দুটো ছেলেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে! প্লীজ, সাহায্য করুন আমাদেরকে!
ওসব কিচ্ছা-কাহিনী বাদ দাও, খোকা, সবুজ ভ্যানটার দিকে একবার চেয়েই মুখ ফিরিয়ে নিল অফিসার। ওসব অনেক শোনা আছে, বোরিসের দিকে চেয়ে। বলে উঠল, কই, লাইসেন্স কই?
প্রতিটি সেকেণ্ড এখন মূল্যবান, দ্রুত এগিয়ে আসছে লঞ্চ, কিন্তু অফিসারকে বোঝানো যাচ্ছে না সেটা। মরিয়া হয়ে চেঁচিয়ে উঠল রবিন, বোরিস, গেট ভেঙে ঢুকে যান! যা হয় হবে!
এমন কিছুই একটা বোধহয় ভাবছিল বোরিস, রবিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই সামনে লাফ দিল ট্রাক। পেছনে চেঁচিয়ে উঠল অফিসার, কানেই তুলল না ব্যাভারিয়ান।
ভয়ঙ্কর গতিতে এসে গেটের পাল্লায় সামনের বাম্পার দিয়ে আঘাত হানল। ট্রাক। তীক্ষ্ণ বিচিত্র শব্দ তুলে প্রতিবাদ জানাল যেন পাল্লা, পরক্ষণেই বাঁকাচোরা হয়ে ছিঁড়ে ভেঙে খুলে এল কজা থেকে, ট্রাকের বাম্পারে আটকে থেকে কয়েক গজ এগোল, তারপর খসে পড়ল পথের ওপর। পাল্লা মাড়িয়েই এগোনর চেষ্টা করল। ট্রাক, কিন্তু পারল না। তারের জাল আর বাকাচোরা ইস্পাতের পাত জড়িয়ে ফেলল সামনের দুই চাকা। কান-ফাটা শব্দ করে ফেঁসে গেল একটা টায়ার। এখনও সবুজ ভ্যানটা রয়েছে পঞ্চাশ ফুট দূরে।
রবিন, এস! বলতে বলতেই এক ঝটকায় কেবিনের দরজা খুলে লাফিয়ে পথে নামল বোরিস। ছুটল।
দড়ি ছেঁড়া পাগলা ষাঁড়ের মত এসে বার্টের ঘাড়ে পড়ল বিশালদেহী ব্যাভারিয়ান। চমকে উঠে পকেটে হাত দিতে গেল ডাকাতটা, বোধহয় পিস্তল বের করার জন্যে, কিন্তু পারল না। তার আগেই দুহাতে ধরে তাকে মাথার ওপর তুলে। পানিতে ছুঁড়ে ফেলে দিল বোরিস।
দ্রুত সামলে নিল বার্ট। গতিক সুবিধের নয় বুঝে গেছে, সোজা লঞ্চের দিকে সাঁতরাতে শুরু করল সে।
ভ্যান থেকে বেরিয়ে এল রিক আর জিম, একজনের হাতে একটা রেঞ্চ, আরেকজনের হাতে টায়ার খোলার লীভার। একই সঙ্গে আক্রমণ চালাল বোরিসের ওপর।
ঝট করে বসে দুজনের আঘাত প্রতিহত করল বোরিস, আবার সোজা হয়ে উঠে খপ করে ধরে ফেলল দুই ডাকাতের অস্ত্র ধরা দুই হাত, প্রায় একই সঙ্গে।
কব্জিতে প্রচণ্ড মোচড় খেয়ে চেঁচিয়ে উঠল রিক আর জিম। হাত থেকে খসে পড়ল অস্ত্র। ঘাড় ধরে জোরে দুজনের মাথা ঠুকে দিল বোরিস। তারপর ঠেলে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল পানিতে।
রবিন বসে নেই। ভ্যানের পেছনের খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে ডাকল, মুসাআ! কিশোরও!
রবিন! বস্তার ভেতর থেকে শোনা গেল কিশোরের ভোঁতা কণ্ঠ। জলদি বের কর আমাদেরকে!
রবিন! জলদি, আর পারছি না! ওফ, বাবারে! প্রায় কেঁদে ফেলল মুসা। কিভাবে যেন গড়িয়ে এসে তার পেটের ওপরে পড়েছে কিশোর।
ওদিকে, জিম আর রিকও বার্টের পিছু নিয়েছে। তিনজনকেই তুলে নিয়ে নাক ঘোরাল লঞ্চ। দ্রুত ছুটল কয়েকশো গজ দূরের বড় একটা মাছধরা জাহাজের দিকে।
পুলিশও পৌঁছে গেছে। বোরিসের ক্ষমতা দেখেছে ওরা, কাজেই সাবধানে এগোচ্ছে। হাতে রিভলভার।
বোরিসের হাতের নাগালের বাইরে দাঁড়িয়ে রিভলভার নাচাল অফিসার। ইউ আর আণ্ডার অ্যারেস্ট! খবরদার, নড়বে না! গুলি খাবে!
আরে, আমাকে পরে ধরতে পারবেন! লঞ্চটার দিকে আঙুল তুলে চেঁচিয়ে। বলল বোরিস, ওদেরকে ধরুন! পালাচ্ছে তো!
ইতিমধ্যে কিশোর আর মুসার বস্তার বাঁধন কেটে দিয়েছে রবিন। দ্রুতহাতে বাঁধন কেটে মুক্ত করে দিল কিশোরকে। দুজনে মিলে মুক্ত করল মুসাকে।
ছেলেদেরকে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে অফিসারের। আরে, কি কাণ্ড! তোমরা বস্তার ভেতরে কি করছিলে?
রবিনের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে একটা ছোট বস্তার বাঁধন কেটে ফেলল কিশোর। ভেতরে হাত ঢুকিয়ে বের করল একমুঠো নোট। ছুঁড়ে দিল অফিসারের দিকে। এই হল কাণ্ড! ব্যাংক ডাকাতি!
কিছুই বুঝতে পারল না যেন অফিসার। হাঁ করে চেয়ে আছে কিশোরের মুখের দিকে।
ভ্যান থেকে নামল কিশোর। অফিসারের সামনে এসে দাঁড়াল। জলদি করুন! নইলে পালিয়ে যাবে ডাকাতেরা! জলদি ধরুন ওদের!
ইয়ে, মানে তোমরা কারা!…মানে… এখনও কিছু বুঝতে পারছে না অফিসার।
বুঝিয়ে বলতেই হল অফিসারকে। মূল্যবান অনেক সময় নষ্ট হল তাতে।
.
১৭.
পাঁচ দিন পর, শনিবার। হেডকোয়ার্টারে বসে আলাপ আলোচনা করছে তিন। গোয়েন্দা।
ওই অফিসারটা একটা আহাম্মক! ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল মুসা। তাড়াতাড়ি করলে ধরতে পারত ব্যাটাদের, কিন্তু ওকে বোঝাতেই তো সময় গেল।
ইন্টারপোল দায়িত্ব নিয়েছে, বলল কিশোর। ধরেও ফেলতে পারে।
কি জানি! তবে, রিকের সোনার দাঁত ভরসা। ওটাই চিনিয়ে দেবে ওকে। ধরা। পড়লে ওই দাঁতের জন্যেই পড়বে।
আরে না-আ! হাত নাড়ল রবিন। সোনার দাঁত অনেকেই বাধায় ওরকম। এই তো, সেদিন পিটারসন মিউজিয়মেও তো একজনের দেখলাম। একটা ছেলে…
তড়াক করে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিলোর। অদ্ভুত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রবিনের মুখের দিকে, যেন তাকে আর কখনও দেখেনি। পিটারসন মিউজিয়মে সোনার দাঁত! উত্তেজনায় রক্ত জমছে তার মুখে। রবিন! আগে বলনি কেন? কেন বলনি আগে?
একটা কাব স্কাউটের মুখে সোনার দাঁত, এতে অবাক হওয়ার কি আছে? কিছুই বুঝতে পারছে না রবিন। বলারই বা কি আছে? ভুলেই গিয়েছিলাম…এখন কথা উঠল…
ইসস, আরও আগে যদি বলতে! এদিক-ওদিক মাথা নাড়ল কিশোর। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, এই সময় বাইরে থেকে মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল, কিশোর, আছিস ওখানে? মিরো এসেছে।
মুসা গিয়ে মিরোকে নিয়ে এল।
অবাক চোখে হেডকোয়ার্টারের জিনিসপত্র দেখল মিরো। তারপর একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল, কিশোর-স্যান, তোমাদেরকে বিদায় জানাতে এলাম। আগামীকালই জাপানে ফিরে যাচ্ছি আমরা।
এত তাড়াতাড়ি টেবিলে দুই কনুই রেখে সামনে ঝুঁকল কিশোর। প্রদর্শনী শেষ?
না, প্রদর্শনী চলবে, বিষণ্ণভাবে মাথা নাড়ল মিরো। শুধু বাবা আর আমি ফিরে যাচ্ছি। বাবাকে বরখাস্ত করেছে কোম্পানি। আর একদিন মাত্র চাকরি আছে তার।
আন্তরিক দুঃখিত হল তিন গোয়েন্দা।
কি যেন ভাবল কিশোর। তারপর বলল, মিরো, পিটারসন মিউজিয়মে আর মাত্র একদিন প্রদর্শনী চলবে, না?
হ্যাঁ। আগামীকাল চলে বন্ধ হয়ে যাবে। অন্য শহরে চলে যাবে।
কাগজে পড়লাম, কালও চিলড্রেনস ডে।
হ্যাঁ। আগেরবার গণ্ডগোলের জন্যে ঠিকমত দেখতে পারেনি ছোটরা, তাই আরেক দিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তারমানে সময় বেশি নেই হাতে। মিরো, তোমার বাবা শেষমেশ একবার সাহায্য করবেন আমাকে? বলে দেখবে?
সাহায্য? ভুরু কোঁচকাল মিরো।
আমার কথামত কাজ করবেন?
হয়ত করবে! গোল্ডেন বেল্ট ফিরে পেলে এখনও সম্মান রক্ষা হয়, চাকরি থাকে বাবার। বলে হয়ত রাজি করাতে পারব তাকে।
তাহলে চল যাই, উঠে দাঁড়াল কিশোর। গাড়ি নিয়ে এসেছ?
কোম্পানির গাড়ি।
গুড। রবিন, মুসা, তোমরা থাক। রবিন, রত্নদানোর কেসটা লিখে ফাইল করে ফেল, মিস্টার ক্রিস্টোফারকে দেখাতে হবে। মুসা, ছাপার মেশিনের একটা রোলার ঠিকমত ঘুরছে না, দেখবে ওটা? আমি আসছি। কাল নাগাদ গোল্ডেন বেল্ট রহস্যের কিনারা হয়ে যাবে।
হাঁ হয়ে গেছে মুসা আর রবিন। তাদেরকে ওই অবস্থায় রেখেই মিরোকে নিয়ে দুই সুড়ঙ্গে নেমে পড়ল কিশোর।
সামলে নিতে পুরো এক মিনিট সময় লাগল রবিন আর মুসার।
রবিন, অবশেষে বলল মুসা। কি করে কিনারা হবে?
জানি না! দুই হাত নাড়ল রবিন, মাথা নাড়ল এদিক-ওদিক। কাগজ-কলম টেনে নিল। খানিকক্ষণ গুম হয়ে বসে থেকে শেষে চেয়ার ঠেলে উঠে পড়ল মুসা। অযথা ভেবে লাভ নেই। তারচেয়ে মেশিনটা সারিয়ে ফেললে একটা কাজ হয়ে যায়।
শেষ বিকেলে রহস্য আরও জমাট হল। কিশোরের কাছ থেকে ফোন এল হেডকোয়ার্টারে। দুই সহকারীর জন্যে নির্দেশ: হেডকোয়ার্টারে ঢোকার সবকটা পথ ভাল মত পরীক্ষা করে দেখ। জরুরি এক আর গোপন চার-এ যেন কোন গোলমাল না থাকে। বার বার বেরিয়ে দেখ, কোনরকম অসুবিধে হয় কিনা। সবুজ ফটক এক, দুই সুড়ঙ্গ, সহজ তিন আর লাল কুকুর চার দিয়েও বেরোও বার বার। দেখ, ছয়টার মধ্যে কোন্ পথটা দিয়ে সবচেয়ে সহজে, সবচেয়ে কম সময়ে ঢোকা যায়।
মুসা কিংবা রবিন কোন প্রশ্ন করার আগেই লাইন কেটে গেল ওপাশ থেকে।
রবিনের নোট লেখা শেষ, মুসারও মেশিন সারানো হয়ে গেছে। কেন গোপন পথগুলো দিয়ে ঢুকতে-বেরোতে বলেছে কিশোর, কিছুই বুঝতে পারল না ওরা। তবু দেরি না করে কাজে লেগে গেল। কিশোর যখন করতে বলেছে, নিশ্চয় কোন না কোন কারণ আছে।
গোপন পথগুলো দিয়ে বার বার ঢুকল-বেরোল দুই সহকারী গোয়েন্দা। দুজনেই একমত হল, সবচেয়ে সহজে সবচেয়ে কম সময়ে ঢাকা কিংবা বেরোনো যায় সহজ তিন দিয়ে।
.
১৮.
রাতের খাবারের সময় হল, কিশোরের দেখা নেই। আরও এক ঘণ্টা দেরি করে ফিরল সে, উত্তেজিত কিন্তু হাসি হাসি চেহারা। রবিন আর মুসা দেখে অবাক হল, সুকিমিচি কোম্পানির গাড়িতে করে নয়, ট্যাক্সি নিয়ে এসেছে গোয়েন্দাপ্রধান। গাড়ি থেকে মিরোকে চুপিচুপি নামতে দেখে আরও অবাক হল দুই সহকারী গোয়েন্দা।
মিরোকে নিয়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকল কিশোর, কেউ দেখে ফেলবে এই, ভয় যেন করছে।
এই যে, এসেছ! বলে উঠলেন মেরিচাচী। কিশোর, এত দেরি কুলি কেনরে? আমরা এদিকে ভেবে মরি। দেখ, চেহারার কি ছিরি করে এসেছে! আরে, এই, কিশোর, জ্যাকেটের বোতাম লাগাতেও তোর কষ্ট হয় নাকি? কোমরের কাছে। লাগাস না কেন? বিচ্ছিরিভাবে ঝুলে আছে।
মিরোকে একটা চেয়ার দেখিয়ে নিজে আরেকটাতে বসে বলল কিশোর, আস্তে, চাচী, আস্তে। একসঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করলে কোনটার জবাব দেব?
এই যে, বসে পড়লি তো? কোথায় কোথায় ঘুরে এসেছে কে জানে! হাতে মুখে ময়লা-যা, জলদি ধুয়ে আয় ভাল করে।
মিরোকে নিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে এল কিশোর।
খেতে খেতে মুখ তুললেন রাশেদ চাচা। কিশোর, আবার কিসে জড়িয়েছ? তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, আর কখনও ডাকাতদের সঙ্গে মিশবে না। বস্তায় ভরে এবারই তো দিয়েছিল সাগরে ফেলে। ভাগ্যিস রবিন গিয়েছিল…খবরদার, ডাকাতির কেস আর কখনও নেবে না।
গেছিলাম তো রত্নদানো ধরতে, ডাকাতের পাল্লায় পড়ব তা কি আর জানি? বসতে অসুবিধে হচ্ছে যেন কিশোরের। খালি নড়ছে, একবার এভাবে বসছে, একবার, ওভাবে।
হুমম! জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না রাশেদ চাচা। ভাজা গরুর মাংসে ছুরি চালালেন, কাঁটা চামচ দিয়ে এক টুকরো মুখে ফেলে চিবাতে চিবাতে বললেন, তা এখন আবার কি ধরে এলে? জিন, না পরী?
মিরোকে সাহায্য করতে গিয়েছিলাম, জাপানী কিশোরের কাঁধে হাত রাখল গোয়েন্দাপ্রধান। বড় বিপদে পড়েছেন ওর বাবা। একটা বেল্ট চুরি হয়েছে, ওটা খুঁজে বের করতে গিয়েছিলাম।
গোল্ডেন বেল্টের কথা বলছ? চিবানো থেমে গেছে রাশেদ চাচার। পারবে বের করতে? আমি অনেক ভেবেছি, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারিনি কোন দিক দিয়ে কিভাবে ওটা বের করে নিয়ে গেল চোরেরা।
মাথা ঝাঁকাল শুধু কিশোর, কি বোঝাতে চাইল সে-ই জানে।
এরপর আর বেশি কথাবার্তা হল না। খাওয়া শেষ হল।
অনেক প্রশ্ন ভিড় করে আছে রবিনের মনে, কিন্তু কিশোরকে জিজ্ঞেস করার সুযোগই পেল না। কেমন যেন ঝিম মেরে বসে আছে গোয়েন্দাপ্রধান। আরেকটা ব্যাপার, এই গরমের বিকেলে জ্যাকেট পরে আছে কেন সে? মেরিচাচী বলায়। কোমরের কাছের বোতাম লাগিয়েছে, টান টান হয়ে আছে জায়গাটা। হঠাৎ কি করে এত চর্বি জমে গেল তার পেটে!
অন্ধকার নামতে শুরু করতেই উঠে দাঁড়াল কিশোর। রবিন, মুসা, চল। হেডকোয়ার্টারে যাই।
ম্যাগাজিন পড়ছেন রাশেদ চাচা, ডিশ-প্লেট ধুচ্ছেন চাচী। চুপচাপ বেরিয়ে এল ছেলেরা।
হেডকোয়ার্টারে ঢুকেই দুই সহকারীকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, যা বলেছিলাম করেছ?
মাথা ঝাঁকাল মুসা আর রবিন।
করা উচিত হয়নি, বলল মুসা। রাস্তার ওপাশে কয়েকটা ছেলে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল, আমাদেরকে দেখেছে। গোপন পথগুলো দেখে ফেলেছে ওরা।
আমাদের ওপর চোখ রাখার জন্যে শুঁটকিই হয়ত পাঠিয়েছে, রবিন বলল। আমারও মনে হয় কাজটা উচিত হয়নি, তুমি বললে বলেই করলাম।
ঠিকই করেছ, সন্তুষ্ট মনে হল কিশোরকে। আমারও সময় খুব ভালই কেটেছে, পরে বলব সব। এস, এখন আমাদের কোন একটা অভিযানের কথা শোনাও মিরোকে। ও শুনতে চায়।
আগ্রহী শ্রোতা পাওয়া গেছে, খুশি হয়েই গল্প শুরু করল রবিন।
বাইরে অন্ধকার গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। মাথার ওপরের স্কাইলাইটের ঢাকনা হাঁ করে খুলে দিয়েছে কিশোর, তারাজ্বলা কালো আকাশ চোখে পড়ছে।
ফিসফিস-করে-কথাবলা-মমির গল্প সবে মাঝামাঝি এসেছে, এই সময় নড়েচড়ে উঠল কিশোর। এক এক করে বোতাম খুলল, গা থেকে খুলে ফেলল জ্যাকেট। শার্টের নিচের দিকটা তুলে দেখাল দুই সহকারীকে।
প্রফেসর বলতে যাচ্ছিল রবিন, কিন্তু প্রফে বলেই থেমে গেল। অস্ফুট একটা শব্দ করে উঠল মুসা। দুজনেরই চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
কিশোরের কোমরে সম্রাটের সোনার বেল্ট!
বড় বড় চারকোনা সোনার টুকরো, তাতে উজ্জ্বল পাথর বসানো। না, কোন ভুল নেই, গোল্ডেন বেল্টই পরে আছে গোয়েন্দাপ্রধান।
ভীষণ ভারি! নড়েচড়ে বসল কিশোর। পরে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কোমর থেকে বেল্ট খুলে টেবিলে রাখল সে।
মুখে খই ফুটল দুই সহকারীর। নানা প্রশ্ন। বেল্টটা কোথায় পেয়েছে কিশোর? পরে রয়েছে কেন? কেন কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেয়নি? কেন…
হঠাৎ ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা। খুদে কুৎসিত একটা মানুষের মুখ দেখা দিল। পরক্ষণেই ভেতরে উঠে এল মানুষটা। হাতে ইয়াবড় এক ছুরি। জ্বলন্ত চোখে ছেলেদের দিকে চেয়ে ভয়াবহ ভঙ্গিতে ছুরি চাল সে। ঠিক সেই মুহূর্তে খুলে গেল লাল কুকুর চার-এর-দরজা। ছুরি হাতে ঢুকল আরেকজন খুদে মানুষ। খুলে গেল সহজ তিন, দেখা গেল আরেকটা মুখ, সেটার পেছনে আরেকটা।
বিচ্ছুরা, তীক্ষ্ণ গলায় চেঁচিয়ে উঠল এক আগন্তুক, এবার ভালয় ভালয় বেল্টটা দিয়ে দাও তো!
পায়ে পায়ে চারপাশ থেকে এগিয়ে আসতে শুরু করল চার বামন।
বিদ্যুৎ খেলে গেল যেন কিশোরের দেহে। ছোঁ মেরে বেল্টটা তুলে নিয়েই লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল টেবিলে। স্কাইলাইটের ওপাশে আটকানো দড়ির সিঁড়ি টেনে নামল। চেচিয়ে বলল, মিরো, জলদি!
দড়ির সিঁড়ি বেয়ে ট্রেলারের ছাতে উঠে গেল মিরো। বেল্টটা তার হাতে দিয়ে মুসা আর রবিনের দিকে তাকাল কিশোর। তোমরাও ওঠ!
বিনা প্রতিবাদে ছাতে উঠে গেল দুই সহকারী গোয়েন্দা। তাদের ঠিক পর পরই উঠে পড়ল কিশোরও।
টেবিলে উঠে পড়েছে দুই বামন, একজন ইতিমধ্যেই সিঁড়ি ধরে ফেলেছে।
ট্রেলারের ছাতে আটকা পড়েছে চার কিশোর। কোনদিকে যাওয়ার পথ দেখা। যাচ্ছে না। ওদিকে ছুরি হাতে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করেছে এক বামন।
কোন্ দিক দিয়ে কিভাবে সরে যাবে, আগেই ভেবে রেখেছে যেন কিশোর। ট্রেলারের গায়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে পুরানো একটা স্লিপার, বাচ্চাদের কোন পার্ক থেকে কিনে এনেছেন রাশেদ চাচা। লোহার কয়েকটা মোটা মোটা কড়ি আড়াআড়ি পড়ে আছে স্লিপারের ওপর।
একমুহূর্ত সময় নষ্ট করল না কিশোর। নিচের দিকে পা দিয়ে উপুড় হয়ে। স্লিপারে শুয়ে পড়ল। শ করে কড়ির তলা দিয়ে নেমে চলে এল কাঠের গুড়োয় ঢাকা মাটিতে। ডেকে সঙ্গীদেরকেও নামতে বলল। কিশোরের মতই একে একে নেমে এল মিরো, রবিন, মুসা। জঞ্জালের ভেতর দিয়ে পথ করা আছে, তাতে ঢুকে পড়ল চারজনে।
স্লিপারে আড়াআড়ি করে কড়ি রাখা আছে, এটা জানে না বামনেরা। অন্ধকারে ভাল দেখতেও পেল না। তাই শুয়ে না নেমে স্লিপারে বসে পড়ল এক বামন। শা করে খানিকটা নেমেই থ্যা করে বাড়ি খেল কড়িতে, আটকে গেল তার শরীরে, রাতের অন্ধকার চিরে দিল তার তীক্ষ্ণ চিৎকার।
এদিক দিয়ে নয়! চেঁচিয়ে সঙ্গীদেরকে বলল বামনটা। বেরিয়ে যাও! ঘুরে এসে ধর বিচ্ছুগুলোকে! ওরা বেরিয়ে যাচ্ছে!
ছাতে হুড়োহুড়ির শব্দ হল। স্কাইলাইট দিয়ে টপাটপ আবার ট্রেলারের ভেতরে লাফিয়ে নামল বামনগুলো। সবচেয়ে সহজ পথ সহজ তিন দিয়ে বেরোবে।
ওদের ধরতেই হবে! চেঁচিয়ে বলল আবার কড়িতে আটকাপড়া বামনটা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার স্লিপার বেয়ে ছাতে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছে সে। বেল্টটা নিয়ে গেছে বিচ্ছুগুলো!
অনেকগুলো কাঠের গুঁড়িতে ঘেরা ছোট্ট একটুখানি খোলা অন্ধকার জায়গায় গাদাগাদি করে বসেছে ছেলেরা।
তীক্ষ্ণ হুইসেল বেজে উঠল হঠাৎ। সে-রাতে দ্বিতীয়বার চমকাল রবিন আর মুসা। পুলিশের হুইসেল। মাথা তুলে দেখল, প্রায় আধডজন ছায়ামূর্তি ছুটে আসছে ইয়ার্ডের আঙিনা ধরে।
মিনিটখানেক হুটোপুটির শব্দ হল, পুলিশের উত্তেজিত কণ্ঠ আর বামনদের তীক্ষ্ণ চেঁচামেচি শোনা গেল। ইতিমধ্যে তিন সঙ্গীকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। কিশোর।
চার বামনকেই ধরে ফেলেছে পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে মিস্টার টোহা মুচামারুও রয়েছেন।
বন্দীদেরকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে ভোলা হল।
বাবার কাছে এসে দাঁড়াল মিরো। দেখলে তো, বাবা, কিশোর-স্যানের বুদ্ধি? তুমি তো পাত্তাই দিচ্ছিলে না, অথচ গোল্ডেন বেল্ট খুঁজে বের করল সে, অপরাধীদের ধরিয়ে দিল।
আয়্যাম সরি, কিশোর, লজ্জিত কণ্ঠে বললেন মুচামারু। তোমাদেরকে…
আরে না না, কি যে বলেন, স্যার, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর।
যা-ই বল, কিশোর, অসাধ্য সাধন করেছ তোমরা। পুলিশই হাল ছেড়ে দিয়েছিল…মিরোর কথা না শুনলে যে কি ভুল করতাম! এক ভুল তো করেছিলাম তোমাদেরকে মিউজিয়ম থেকে বের করে দিয়ে!
এই যে, বাবা, বেল্টটা নাও, মুচামারুর হাতে গোল্ডেন বেল্ট তুলে দিল, মিরো।
তিন গোয়েন্দাকে বার বার ধন্যবাদ জানিয়ে মিরোকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলেন মিস্টার মুচামারু।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের চীফ ইয়ান ফ্লেচার আরও কিছুক্ষণ দেরি করলেন, কিছু প্রশ্ন করলেন কিশোরকে। তারপর তিনিও গিয়ে গাড়িতে উঠলেন। চলে গেল পুলিশের গাড়ি।
কিশোর! এইবার ধরল মুসা। কি করে এসব ঘটল কিছুই তো বুঝতে পারছি।! ওই বামনগুলোই তো রত্নদানো সেজেছিল, না?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ইবলিস একেকটা।
গোল্ডেন বেল্ট কি ওরাই চুরি করেছিল?
তো আর কারা? কাব স্কাউট সেজে ঢুকেছিল মিউজিয়মে। রবিন সোনার দাঁতটার কথা না বললে কিছুই বুঝতে পারতাম না। গোল্ডেন বেল্ট নিয়ে হাওয়া হয়ে যেত ব্যাটারা।
.
১৯.
অনেকদিন পর আবার মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে ঢুকেছে তিন গোয়েন্দা। বিশাল টেবিলের ওপাশে বসে আছেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক। আগের মতই রয়েছে ঘরের পরিবেশ, কোন কিছু বদলায়নি এতটুকু।
মোটাসোটা ফাইলটা পরিচালকের দিকে ঠেলে দিল রবিন।
ফাইলে ডুবে গেলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। অনেকক্ষণ পর মুখ তুলে বললেন, চমৎকার! আবার কৃতিত্ব দেখালে তোমরা।
লজ্জিত হাসি হাসল রবিন আর মুসা। কিশোরের মুখ লালচে হয়ে উঠল।
বামনরাই তাহলে রত্নদানো সেজেছিল, আপনমনেই বললেন পরিচালক। ওদের সঙ্গে ভাব করেছে বব, এটা জানার পর ভারনিয়ার চেহারা কেমন হয়েছিল দেখতে ইচ্ছে করছে।
প্রথমে রেগে গিয়েছিলেন, বলল কিশোর। বব অবশ্য জানত না, তাকেও ফাঁকি দিয়েছে বার্ট। ব্যাংক ডাকাতির ব্যাপারটা জানলে বব রাজি হত না কিছুতেই। খুব লজ্জা পেয়েছে সে, হাতে-পায়ে ধরে মাপ চেয়েছে ফুফুর, কাছে। মাপ করে দিয়েছেন মিস ভারনিয়া। তিনি ঠিক করেছেন, বাড়ি বেচে দিয়ে সাগরের পারে কোথাও একটা ছোট কটেজ কিনবেন। পুরানো বাড়িতে আর থাকবেন না।
ভালই করেছে, মাথা দোলালেন পরিচালক। আচ্ছা, এবার কিছু প্রশ্নের জবাব দাও তো! নোটে লেখনি। গোল্ডেন বেল্ট চুরি করল কিভাবে? কোথায় লুকিয়ে রাখল? বামনরা কি করে জানল তোমার কাছে বেল্টটা আছে?
লম্বা শ্বাস নিল কিশোর। পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলাম প্রথমে। রবিন সোনার দাঁতটার কথা বলার পর বুঝলাম সব কিছু। শুধু একটা সোনার দাঁত! ভুরু সামান্য কুঁচকে গেছে মিস্টার ক্রিস্টোফারের। শার্লক হোমসও পারত কিনা সন্দেহ!
সহজ ব্যাপার তো, স্যার, বলল কিশোর। ছোট ছেলেদের দাঁত একবার। পড়লে দ্বিতীয়বার গজায়, বাধানো সোনার দাঁত লাগানর দরকার পড়ে না। তারমানে মিউজিয়মের বাচ্চা ছেলেটা আসলে বয়স্ক মানুষ। আর ওই আকারের বয়স্ক মানুষ একমাত্র বামনই হতে পারে।
ঠিকই অনুমান করেছিলে।
যখনই বুঝে গেলাম, বামনরা গিয়েছিল কাব স্কাউট সেজে, দুইয়ে দুইয়ে চার যোগ করে নিতে অসুবিধে হল না। হলিউডে ওদের বাস, সিনেমা টেলিভিশনে ওরা অভিনয় করে, দড়াবাজিতে ওস্তাদ, চুরিচামারিতেও পিছিয়ে নেই ওদের অনেকেই। পিটারসন মিউজিয়মে অলঙ্কারের প্রদর্শনী শুরু হল, চোরডাকাতের ভিড় জমল শহরে। রত্ন-চুরির ফন্দি করল ইঅং। বামনদেরকে দলে টানল। সুন্দর প্ল্যান করেছে। সে। এক মহিলা অপরাধীকে ডেন মাদার সাজিয়ে বামনদের কাব স্কাউটের পোশাক পরিয়ে পাঠানো হল মিউজিয়মে। টোড মার্চকে ভাড়া করা হল মিউজিয়মের ভেতরে বিশেষ একটা সময়ে সামান্য অভিনয় করার জন্যে। অভিনয় শুরু করল মার্চ, লোকের চোখ তার দিকে আকৃষ্ট হল, এই সুযোগে ব্যালকনির সিঁড়ির গোড়ায় চলে গেল চার বামন। বাইরে থেকে কানেকশন কেটে আলো নিবিয়ে দিল বার্ট, মেকানিক সেজে গিয়েছিল সে-ই। দ্রুত ব্যালকনিতে উঠে গেল চার বামন। ওদিকে অন্ধকার। হলঘরে তখন নরক গুলজার শুরু হয়ে গেছে।
তারপর? কিশোরের দিকে ঝুঁকে এসেছে মুসা।
বামনরা সঙ্গে করে দড়ি নিয়েছিল, বলল কিশোর। তিনজন দড়ি ধরে রইল ওপর থেকে, চতুর্থজন দড়ি ধরে নেমে এল বেল্টের বাক্সের ওপর। বাক্স ভেঙে বেল্টটা বের করে নিতে বেশিক্ষণ লাগল না। দড়ি ধরে টেনে আবার তাকে ব্যালকনিতে তুলে নিল তার সঙ্গীরা।
হুমম! আস্তে মাথা দোলালেন পরিচালক। ওরা দক্ষ দড়াবাজিকর, আমার ধারণা, কাজটা করতে তিরিশ সেকেণ্ডও লাগেনি। এখন বুঝতে পারছি, কেন। নেকলেস চুরি না করে বেল্ট চুরি করেছে ওরা। নেকলেসের বাক্সের ওপর নামার কোন উপায় ছিল না।
হ্যাঁ, বলল কিশোর। বেল্টটা বাক্স থেকে সরাল বটে, কিন্তু জানে এত ভারি একটা জিনিস তখন হল থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারবে না। কাজেই লুকিয়ে। ফেলল।
হলের ভেতরেই লুকিয়েছে? কিন্তু পুরো মিউজিয়ম তো তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে, পাওয়া যায়নি বেল্ট।
আসল জায়গাতেই খোঁজেনি ওরা। খুব মাথা খাঁটিয়ে লুকানর জায়গা ঠিক করেছে বামনরা। বেল্ট লুকিয়ে ফেলল, পরে সুযোগমত একদিন এসে নিয়ে যাবে। বলে। সেদিন রাতে যদি ব্যাটাদের না ধরা যেত, পরের দিনই চিলড্রেনস ডে-তে আবার কাব স্কাউট সেজে গিয়ে বেল্ট বের করে নিয়ে যেত ওরা, কোন একটা সুযোগ সৃষ্টি করে।
হুমম! মাথা দোলালেন পরিচালক।
ব্যাংক ডাকাতি হয়ে গেল, বার্টকে ধরতে পারল না পুলিশ। চার বামনকেও ধরতে পারল না। বোর্ডিং হাউসে খোঁজখবর করতে গিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু মুখে তালা এঁটে ছিল বামনের গোষ্ঠী। অনেক ভেবে ঠিক করলাম, ফাঁদ পেতে ওদেরকে ধরতে হবে, এছাড়া আর কোন উপায় নেই।
অ, এই ব্যাপার! মুখ গোমড়া করে ফেলেছে রবিন। আমাকে আর মুসাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করেছিলে!
রাগ কোরো না, রবিন, এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। পথগুলো বামনদেরকে দেখানর দরকার ছিল, নইলে ঢুকত কি করে ওরা? পরিচালকের দিকে ফিরল কিশোর। হ্যাঁ, রবিন সোনার দাঁতটার উল্লেখ করতেই সব বুঝে গেলাম। তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম মিউজিয়মে। মিস্টার মুচামারুকে সব খুলে বললাম, তারপর দুজনে মিলে খুঁজে বের করলাম সোনার বেল্টটা…
কোন জায়গা থেকে? কথার মাঝে প্রশ্ন করল মুসা।
আসছি সে-কথায়। বেল্টটা কোমরে পরে চলে গেলাম বামনদের বোর্ডিং হাউসে। রত্নদানো সেজেছিল যে চারজন, তাদের নেতাকে ডেকে আনতে অসুবিধে হল না। গোল্ডেন বেল্ট আমি পেয়ে গেছি, সেকথা বললাম তাকে। জ্যাকেট তুলে এক পলক দেখালামও জিনিসটা। বললাম, চল্লিশ হাজার ডলার নগদ দিলে বেল্টটা তাকে দিয়ে দিতে পারি। টাকাটা কোথায় হাতবদল করতে হবে, সেকথাও বললাম। ইয়ার্ডের ঠিকানা দিয়ে বেরিয়ে এলাম বোর্ডিং হাউস থেকে।
তারমানে, পরিচালক বললেন। তুমি ধরেই নিয়েছিলে, ওরা তোমার কাছ। থেকে বেল্টটা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেই।
হ্যাঁ। ওরা যদি টাকা নিয়েও আসত, তাহলেও কেস ওদের বিরুদ্ধে চলে যেত। এত টাকা ওরা পেল কোথায়, জানতে চাইত পুলিশ। বেল্ট চুরির কেসে না জড়ালেও তখন ডাকাতির কেসে ফেসে যেত ওরা।
রাস্তার পাশের ছেলেগুলো তাহলে ছেলে নয়! বিড়বিড় করল রবিন। বামনরাই ছেলে সেজে আমার আর মুসার ওপর চোখ রেখেছিল। বিরক্তি ঝরল তার কণ্ঠে। ওদেরকে জানাতে চেয়েছিলে, কোন পথে হেডকোয়ার্টারে ঢোকা সহজ
হ্যাঁ, চেয়ারে সামান্য নড়েচড়ে বসল কিশোর। মিস্টার মুচামারুকে সব বুঝিয়ে বলেছি, কি করে কি করতে হবে। ঠিক সময়ে দলবল নিয়ে এসে ট্রেলারের আশপাশে লুকিয়ে রইলেন চীফ ইয়ান ফ্লেচার। সঙ্গে মিস্টার মুচামারুও এলেন। বামনরা আক্রমণ করল আমাদের, ধরা পড়ল।
একটা কথা বার বার এড়িয়ে যাচ্ছ তুমি, হাসলেন চিত্রপরিচালক। আমাদেরকে টেনশনে রাখার জন্যেই বুঝি? কোথায় লুকানো হয়েছিল গোল্ডেন বেল্ট?
যেখানে কেউ খুঁজবে না, কিশোরও হাসল। মিস ভারনিয়ার বাড়িতে জানালায় উঠে ভয় দেখিয়েছিল রত্নদানো, ওরফে বামনেরা। কি করে? হিউম্যান ল্যাডার, স্যার। একজনের কাঁধে আরেকজন উঠে একটা জ্যান্ত মই বানিয়ে ফেলত ওরা সহজেই…
দাঁড়াও, দাঁড়াও, হাত তুললেন পরিচালক। বোধহয় বুঝতে পারছি, কোথায় লুকানো ছিল গোল্ডেন বেল্ট। ফাইলের পাতা উল্টে গেলেন দ্রুত হাতে। একটা জায়গায় এসে থামলেন, হ্যাঁ, এই যে, পেয়েছি। স্পষ্ট করে লিখেছে সব রবিন। মিউজিয়মের ছাত গম্বুজ আকৃতির, তারমানে দেয়াল গোল। দেয়ালের মাথায় খাজ, গম্বুজটা তার ওপর বসানো, অনেকটা ঢাকনার মত করে। ছবি ঝোলানর জন্যে ওরকম খাজ রাখা হয়েছে। ওই খাঁজেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল গোল্ডেন বেল্ট।
আমিও তাই ভেবেছিলাম, স্যার, হাসছে কিশোর। কিন্তু মই লাগিয়ে উঠে দেখলাম, পিঠ-বাঁকা খাজ, ওখানে বেল্ট রাখার উপায় নেই, পড়ে যাবে।
ভুরু কুঁচকে গেল চিত্রপরিচালকের। সামান্য হাঁ হয়ে গেছে মুখ। শব্দ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের বাতাস বের করে দিলেন। তাহলে কোথায় ছিল বেল্টটা?
খাজে চ্যাপ্টা জায়গা নেই, বলল কিশোর। বোকা বনে গেলাম। কোথায় আছে গোল্ডেন বেল্ট, কিছু বুঝতে পারলাম না। ভাবছি, এই সময় গালে এসে লাগল ঠাণ্ডা হাওয়ার পরশ। চকিতে বুঝে গেলাম..
এয়ার কণ্ডিশনিং! স্বভাব-বিরুদ্ধ কাজ করে বসলেন পরিচালক, উত্তেজনায়। চেঁচিয়ে উঠলেন।
হ্যাঁ, স্যার, এয়ার কণ্ডিশনিং। বাতাস চলাচলের জন্যে সরু যে চ্যানেল করা হয়েছে, তারই একটার মুখের জালি খুলে নিয়েছে চোর, কালো সুতো দিয়ে জালির সঙ্গে বেল্টটা বেঁধেছে। বেল্ট সুড়ঙ্গের ভেতরে ঝুলিয়ে দিয়ে আবার জায়গামত লাগিয়ে দিয়েছে জালিটা। ওখানে খুঁজতে যায়নি কেউ, কারণ মই ছাড়া ওখানে। পৌঁছানো অসম্ভব। হিউম্যান-ল্যাডার বানিয়ে বামনেরা এই কাজ করেছে, কল্পনাও। করতে পারেনি কেউ।
একসেলেন্ট, মাই বয়েজ! উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে পরিচালকের চেহারা। ভারনিয়ার কাছে আমার মুখ রেখেছ তোমরা। থ্যাঙ্ক ইউ।
আমরা তাহলে আজ আসি, স্যার, উঠে দাঁড়াল কিশোর। রবিন আর মুসাও উঠল।
আরে বস, বস, হাত তুললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। আইসক্রীমের অর্ডার দিচ্ছি। এত সুন্দর একটা কাহিনী নিয়ে এলে, আর খালি মুখে চলে যাবে?
হাসি একান-ওকান হয়ে গেল মুসার। বন্ধুদের আগেই ধপ করে বসে পড়ল সে চেয়ারে।
রত্নদানোর এই ছবিটায় শিগগিরই হাত দিতে চাই, বললেন পরিচালক। নাম কি রাখা যায়, বলত? ফোর লিটল নোমস হলে কেমন হয়?
চারটে খুদে রত্নদানো, বিড়বিড় করল কিশোর বাংলায়। ইংরেজিতে বলল, লিটল নয়, স্যার, ডেভিল রাখুন। ফোর ডেভিল নোমস।
ঠিক, ঠিক বলেছ, একমত হলেন পরিচালক।