ঠিক শুনেছ তুমি? মুসাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর। শিওর, ওই একই গলা?

র‍্যঞ্চ বাড়িটা থেকে বেরিয়ে ডবল মার্চ করে পাহাড়ী পথ ধরে একটা পেট্রল স্টেশনে নেমে আসতে বিশ মিনিট লেগেছে মুসার, হেডকোয়ার্টারে ফোন করেছে। আরও বিশ মিনিটের মাথায় বোরি আর রবিনকে নিয়ে গাড়িসহ পৌঁছেছে কিশোর, তিনজনেই ফিরে যাচ্ছে এখন রকি বীচে।

যা যা ঘটেছে সব বলেছে মুসা। মাথার নিচে হাত রেখে ট্রাকের মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে পড়েছে সে।

শিওর মানে? ঘুমজড়ানো গলায় বলল মুসা, একশোবার শিওর। মিসটার উলকই তখন ফোন করেছিল। ওই একই কণ্ঠ টেনে টেনে কথা বলে।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটা শুরু হয়েছে। মাথামুণ্ড কিছু বুঝতে পারছে না। কেন একজন তার নিজের পূলেই একটা তিমি লুকিয়ে রেখে ওটাকে খুঁজে বের করার অনুরোধ জানাবে, এবার তার জন্যে একশো ডলার পুরস্কার ঘোষণা করবে?

অনেক ভেবেও কিছু বুঝতে পারল না কিশোর! এখন আর পারবে না, বুঝতে পারল। প্রশ্নটা মনে নিয়ে ঘুমাতে হবে। হয়তো ঘুম ভাঙার পর পেয়ে যাবে জবাব।

প্রথমে মুলার বাড়িতে তাকে নামিয়ে দেয়া হলে তারপর রবিনকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে ইয়ার্ডে ফিরে এল বোরিস আর কিশের কথ হয়েছে, আগামী সকালে যত তাড়াতাড়ি পারে এসে হেডকেটরে মিলি হারে তিন গোয়েন্দ।

পরদিন রবিন এল সবার পরে। মা আটকে দিয়েছিলেন। সবে বেরোতে যাচ্ছে রবিন, ডেকে বললেন, নাস্তার পরে অনেক কাপ-ডিশ জমে আছে, ওগুলো ধুয়ে দিয়ে গেলে তার উপকার হয়।

ইয়ার্ডের এক কোণে তিন গোয়েন্দার ওয়ার্কশপের বাইরে সাইকেল রাখল রবিন। একটা ওয়ার্কবেঞ্চের ওপাশে জঞ্জালের গায়ে কাত হয়ে যেন অবহেলায় পড়ে রয়েছে একটা লোহার পাত, ইচ্ছে করেই রাখা হয়েছে ওভাবে। সরাল ওটা রবিন। বেরিয়ে পড়ল মোটা একটা লোহার পাইপের মুখ। এর নাম রেখেছে ওরা দুই সুড়ঙ্গ। জঞ্জালের তলা দিয়ে গিয়ে পাইপের অন্য মুখটা যুক্ত হয়েছে মোবাইল হোমের মেঝের একটা গর্তের সঙ্গে।

পাইপের ভেতর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এসে, ট্রেলারের মেঝের গর্তের মুখে লাগানো পাল্লা তুলে অফিসে ঢুকল রবিন। অন্য দুজন অপেক্ষা করছে।

ডেস্কের ওপাশে তার নির্দিষ্ট চেয়ারে বসেছে কিশোর। পুরানো একটা রকিং চেয়ারে গা ঢেলে দিয়েছে মুসা, পা রেখেছে ফাইলিং কেবিনেটের একটা আধখোলা ড্রয়ারের ওপর। কেউ কিছু বলল না।

এগিয়ে গিয়ে একটা টুলে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসল রবিন।

সব সময়ই যা হয়, আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আলোচনার শুরুতে মুখ খুলল প্রথমে কিশোর, বড় রকম কোন সমস্যায় যদি পড়োও, ভাবতে ভাবতে তোমার মন গিয়ে ধাক্কা খায় কোন দেয়ালে, সামনে পথ রুদ্ধ থাকে, রবিনের দিকে তাকাল সে, দুটো উপায় খোলা থাকে তোমার জন্যে। হয় দেয়ালে মাথা কুটে মরা, কিংবা ওটা ঘরে গিয়ে অন্য কোনখান দিয়ে কোন পথ বের করে নেয়া।

ব্যস, বোঝো এখন, মরোগে দেয়ালে মাথা কুটে! রাবনের দিকে চেয়ে হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল মুসা। কিশোর, তোমার দোহাই লাগে, ল্যাটিন ছেড়ে ইংরেজি বলো। চাইলে বাংলাও বলতে পারো, তা-ও এত কঠিন লাগবে না।

ম্যারিবু শ্যাটানোগার কথা বলছি, কঠিন কথার সহজ ব্যাখ্যা করল কিশোর। ম্যারিবু শ্যার্টানোগা, চার্টার বোট ফিশিং।

হতাশ ভঙ্গিতে দুই হাত তুলল মুসা। কিছু বুবলি না।

ডাকো তাকে, কিশোরকে বলল রবিন। আমার মনে হয় না, সে এতে জড়িত। তবে জিজ্ঞেস করতে দোষ কি?

নাস্তার পর থেকে কয়েকবার চেষ্টা করেছি, বলল কিশোর। সাড়া নেই।

হয়ত মাছ ধরতে গেছে, জেলে তো, মন্তব্য করল মুসা। বাড়িতে না থাকলে ফোন রবে কি করে? নাকি বাড়ি না থাকলেও ফোন ধরে লোকে? বুঝতে না পেরে রেগে যাচ্ছে সে।

আমার মনে হয় ও জড়িত, মুসার কথায় কান দিল না কিশোর। সোমবারে বাড়িতে টিনহা শ্যাটানোগাকে ফোন করেছিল কেউ। তাকে তিমিটার কথা বলেছে…

রোভার, বাধা দিয়ে বলল মুসা। নাম যখন একটা রাখা হয়েছে, তিমি তিমি করে রোভার বলতে দোষ কি?

আচ্ছা, ঠিক আছে যাও, রোভারই, মুসার কথা রাখল কিশোর। টিনহাকে ওশন ওয়ারম্ভে ফোন করা হয়নি, কারণ যে করেছে তার জানা আছে সোমবারে ফোন ধরবে না কেউ। জিমবা শ্যাটানোগার বাড়িতে করতেই পারবে না, কারণ তার লাইন কাটা।

আর ব্রাদার শিয়াওঁর মন্দিরেও করবে না, রবিন যোগ করল, কারণ সে বোবা সেজেছে। কোন লাভ নেই ওখানে করে।

বাকি থাকল আর মাত্র একজন শ্যাটানোগা, যার বাড়িতে ফোন আছে, বলল কিশোর। যে স্যান পেড্রোতে বাস করে, মাছ ধরার জন্যে বোট ভাড়া দেয়। হতে পারে, সে টিনহার আত্মীয়, তার ওখানেই ফোন করেছে লোকটা।

হুঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন। গতরাতে উলফকে বলেছে টিনহা, বাপের জন্যেই নাকি তার কথা শুনছে।

বেশ, গোমড়া মুখে বলল মুসা, ম্যারিবু নাহয় বাবাই হলো টিনহার, তাতে কি? দেয়ালের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক?

সহজ, বুঝিয়ে বলল কিশোর। টিনহা আর উলফ আমাদের কাছে মুখ খুলবে। খুললেও মিছে কথা বলবে, আর উলফ কিছুই বলবে না। ওদের কাছ থেকে যেহেতু কিছু জানতে পারছি না আমরা, অন্যের কাছ থেকে ওদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। সে জন্যেই স্যান পেড্রোতে গিয়ে ম্যারিবুর সঙ্গে কথা বলতে চাই, সে কতখানি জড়িত বোঝার জন্যে।

যদি বাড়ি না থাকে? প্রশ্ন তুলল মুসা। মাছ ধরতে গিয়ে থাকে?

তাহলে তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে, কিংবা অন্য জেলেদের সঙ্গে কথা বলব। জিজ্ঞেস করব টিনহার সম্বন্ধে কি জানে, ম্যারিবুর কোন বন্ধু বা পরিচিত লোক আছে কিনা উলফ নামে। বোঝার চেষ্টা করব, রোভারকে রেখে আমরা যখন ফিরে আসছিলাম সেদিন, ওরাই বোট থেকে চোখ রেখেছিল কিনা আমাদের ওপর।

ঠিক আছে, উঠে দাঁড়াল মুসা, চান্স খুবই কম, তবু চেষ্টা করতে ক্ষতি নেই। তা স্যান পেড়োতে যাব কি করে? তিরিশ মাইলের কম না। বোরিস নিয়ে যাবে?

বললে তো যাবেই, কিন্তু উচিত হবে না। ইয়ার্ডে অনেক কাজ, বোরিস আর রোভার দুজনেই খুব ব্যস্ত।

তাহলে?

রোলস রয়েসটার কথা একেবারেই ভুলে গেছ? চাইলেই তো পেতে পারি আমরা ওটা।

ঠিকই তো। অনেকদিন চড়ি না তো, ভুলেই গেছি। ফোন করব রেন্ট আ রাইড কোম্পানিতে, হ্যামসনকে?

করে দিয়েছি আমি। এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই। চলো, বাইরে যাই।

ওরা বেরোনোর কয়েক মিনিট পরেই ইয়ার্ডের খোলা গেট দিয়ে ঢুকল বিশাল এক গাড়ি, রাজকীয় চেহারা। পুরানো মডেলের এক চকচকে কালো বোলস রয়েস, জায়গায় জায়গায় সোনালি কাজ করা। এক আরবী শেখের জন্যে তৈরি হয়েছিল, শেখের পছন্দ হয়নি, নেয়নি, তারপর রেন্ট আ রাইড কোম্পানি রেখে দিয়েছে গাড়িটা। বাজিতে জিতে তিরিশ দিন ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছিল একবার কিশোর, তিরিশ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর জোরজার করে আরও দুদিন ব্যবহার করতে পেরেছিল। তারপর আর পারবে না, কঠোর ভাবে বলে দিয়েছিলকোম্পানির ম্যানেজার। সেই সময় অগাস্ট নামে এক ইংরেজ কিশোরকে রক্তচক্ষু খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল তিন গোয়েন্দা। যাওয়ার সময় অগাস্ট ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে, তিন গোয়েন্দা যখনই চাইবে, তখনই তাদেরকে গাড়িটা দিয়ে সাহায্য করতে হবে কোম্পানির, খরচ-খরচা যা লাগে; সব তার।

অগাস্ট চলে যাওয়ার পর গাড়িটা ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন পড়েনি, আজ পড়েছে।

গাড়ি থেকে নামল ধােপদুরস্ত পোশাক পরা ইংরেজ শোফার হ্যানসন। বিনীত ভঙ্গিতে সালাম জানাল তিন কিশোরকে।

এই ব্যাপারটা কিশোরের পছন্দ নয়, কিন্তু হ্যানসনকে বললে শোনে না। কর্তব্য পালন থেকে বিরত করা যায় না খাটি ইংরেজ বলে অহঙ্কারী লোকটাকে।

প্রায় নিঃশব্দে ছুটে চলেছে রোলস বয়েস। তিরিশ মাইল পথ পাড়ি দেয়া কিছুই ওটার শক্তিশালী ইঞ্জিনের জন্যে। স্যান পেড্রোতে পৌঁছল গাড়ি। ফোন বুক লেখা ঠিকানা টুকে নিয়েছে কিশোর। সেইন্ট পিটার স্ট্রীট খুঁজে বের করল হ্যানসন।

ডকের ধারে পথ। দু-ধারে পুরানো ভাঙাচোরা মলিন বাড়িঘর, বেশিরভাগই কাঠের। কয়েকটা স্টোর আছে, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বড়শিতে গাঁথার জ্যান্ত টোপ আর চকোলেট-লজেন্স থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসই পাওয়া যায় ওগুলোতে।

একটা স্টোরে খোঁজ নিতেই ম্যারিবুর বাড়ি চিনিয়ে দিল। আশপাশের অন্যান্য বাড়ির চেয়ে সুরক্ষিত মনে হলো এটা, তিন তলা বিল্ডি, মাটির নিচেও একটা তলা রয়েছে, তাতে অফিস। জানালায় লেখা রয়েছে? চার্টার বোট ফিশিং।

জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখল কিশোর, একটা ডেক্ষের ওপর একটা ফোন, আর আশেপাশে কয়েকটা কাঠের চেয়ার। একটা প্যাকে ঝুলছে কি সাঁতারের পোশাক আর ডুবুরীর সরঞ্জাম।

দরজার দিকে চলল তিন গোয়েন্দা। এই সময় দরজা খুলে বেরিয়ে এল একটা লোক। আবার লাগিয়ে দিয়ে তালা আটকে দিল। ফিরে কিশোরকে দেখেই চমকে গেল। পকেটে চাবি রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল, কি চাই?

লম্বা-পাতলা লোক, ঢালু কাঁধ, মুখে বয়েসের রেখা। পরনে মলিন নীল সুট, সাদা শার্ট, খয়েরি টাই।

লোকের চেহারা, পোশাক, আচার-ব্যবহার খুব খুঁটিয়ে দেখা কিশোরের স্বভাব। এসব থেকে লোকটা কেমন স্বভাব-চরিত্রের, কি করে না করে, বোর চেষ্টা করে। তার অনুমান খুব কমই ভূল হয়। এই লোকটাকে দেখে তার মনে হলো, কোন ছোট দোকানে কেরানী কিংবা হিসাব রক্ষকের কাজ করে, কিংবা হয়তো ঘড়ির কারিগর। শেষ কথাটা মনে হলো লোকটার ডান চোখের দিকে চেয়ে।

ডান চোখের নিচেটায় অদ্ভুত ভাবে কুঁচকে গেছে চামড়া, অনেকটা কাটা দাগের মত মনে হয়। হয় মনোকল পরে লোকটা, নয়তো ঘন্টার পর ঘন্টা ম্যাগনিফাইং গ্লাস চোখে আটকে রাখে, ঘড়ির কারিগররা যে জিনিস ব্যবহার করে।

মিস্টার ম্যারিবু শ্যাটানোগাকে খুঁজছি, ভদ্রভাবে বলল কিশোর।

বলো।

আপনি মিস্টার শ্যাটানোগা?

হ্যাঁ। ক্যাপটেন শ্যাটানোগা।

অফিসে ফোন বাজল। দরজার দিকে ঘুরে তাকাল ম্যারিবু, খুলবে কিনা দ্বিধা করল, শেষে না খোলারই সিদ্ধান্ত নিল।

আমাকে দিয়ে আর কি হবে? ম্যারিবুর কণ্ঠে হতাশা। গত হপ্তায় ঝড়ে আমার বোট ডুবে গেছে। লোকে মাছ ধরার জন্যে ভাড়া নিতে আসে, বোট দিতে পারি না।

সরি, বলল রবিন। আমরা জানতাম না।

তোমরা কি মাছ ধরতে যেতে চাও?

শুদ্ধ ইংরেজি বলে, ম্যারিবু। কথায় তেমন কোন টান নেই, তবে বলার ধরনে বোঝা যায়, ইংরেজি তার মাতৃভাষা নয়। হয়তো মেকসিকো থেকে এসেছে, ডাবল রবিন, অনেকদিন আমেরিকায় আছে।

না না, মাছ নয়, তাড়াতাড়ি বলল কিশোর, আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আপনার মেয়ের কাছ থেকে একটা খবর নিয়ে এসেছি।

আমার মেয়ে? একটু যেন অবাক হলো ম্যারিবু। ও, টিনহার কথা বলছ?

হ্যাঁ।

তা খবরটা কি? জিজ্ঞেস করল ম্যারিবু।

না, তেমন জরুরী কিছু নয়। ওশন ওয়ারল্টে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, এদিকে আসব বলেছিলাম। আপনাকে জানাতে বলল, আজ অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করবে সে।

অ, একে একে কিশোর, রবিন আর মুসার ওপর নজর বোলাল ম্যারিবু। তোমরা তিন গোয়েন্দা?

মাথা ঝাঁকাল মুসা। আবাক হয়েছে, কি করে ক্যাপটেন শ্যাটানোগা তাদের কথা জানল? তারপর মনে পড়ল, টিনহাকে একটা কার্ড দিয়েছিল কিশোর। তাদের কথা নিশ্চয় বাবাকে বলেছে টিনহা।

তোমরা এসেই, খুশি হলাম, হেসে হাত বাড়িয়ে দিল ম্যারিবু। খাওয়ার সময় হয়েছে। চলো না কিছু খেয়ে নিই। কাছেই দোকান।

ধন্যবাদ জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল মুস! খাওয়ার আমন্ত্রণে কোন সময় না করে না সে।

খেতে খেতেই প্রচণ্ড ঝড় আর বোট হারানোর গল্প শোনাল ম্যারিবু।

বিংগো উলফ নামের এক লোককে মাছ ধরতে নিয়ে গিয়েছিল বাজা ক্যালিফোর্নিয়ায়। উপকূলের কয়েক মাইল দূরে থাকতেই কোন রকম জানান না দিয়ে আঘাত হানে ঝড়। বোট বচানোর অপ্ৰণ চেষ্টা করেছে ম্যারিব, কিন্তু। ঢেউয়ের সঙ্গে কুলাতে পারেনি। কাত হয়ে ডুবে যায় বোেট। কোন রকমে টিকে ছিল দুজনে, ভেসে ছিল, পরনে লাইফ-জ্যাকেট ছিল তাই রক্ষা। অবশেষে কোস্ট গার্ডের জাহাজ ওদেরকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে।

শুনে খুব দুঃখ পেল দুই সহকারী গোয়েন্দা। রবিন জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, বোটটা বীমা করানো আছে কিনা, কিন্তু তার আগেই বলে উঠল কিশোর, আপনার মেয়ে খুব ভাল সাঁতারু, ক্যাপ্টেন। তিমির সঙ্গে যা সাঁতারায় না। ভাল ট্রেনার।

উঁ!…হ্যাঁ হ্যাঁ, ওশন ওয়ারল্ডে।

অনেকদিন ধরেই একাজ করছে, না? জিজ্ঞেস করল রবিন। বুঝতে পেরেছে, টিনহার আলোচনা চালাতে চায় কিশোর।

বেশ কয়েক বছর।

অনেক দূরে যেতে হয় রোজ, ওশন ওয়ারল্ড তো কম দূরে না, কিশোর বলল। এখান থেকেই যায় বুঝি?

আনমনা হয়ে মাথা ঝাঁকাল ম্যারিবু। অন্য কিছু ভাবছে, বোঝা যায়। কফি শেষ করল। তারপর ধীরে ধীরে বলল, আসলে হয়েছে কি, তিন গোয়েন্দাকে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করছে যেন সে, তিমিকে ট্রেনিং দেয়ার ব্যাপারে মিস্টার উলফের খুব আগ্রহ। সান্তা মনিকায় পাহাড়ের ওপর তার একটা বাড়ি আছে। বাড়িটার ঠিকানা দিল সে, যেটা আগের রাতেই চিনে এসেছে মুসা। একটা সুইমিং পুল আছে তার বাড়িতে। অনেক বড় পুল।

রাস্তায় বেরোনোর আগে আর কিছু বলল না ম্যারিবু। আবার তিন গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা হবে, এই ইচ্ছে প্রকাশ করে, হাত মিলিয়ে বিদায় নিল।

ছেলেরা বার বার ধন্যবাদ দিল তাকে আতিথেয়তার জন্যে।

চলে যাচ্ছে লম্বা লোকটা। সেদিকে চেয়ে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর।

হুঁমম! মুসার কথার জবাবে, না এমনি বলল কিশোর, বোঝা গেল না। হাঁটতে শুরু করল। মোড়ের কাছে গাড়ি রেখে এসেছে।

গাড়ি ছাড়ল হ্যানসন। গলি থেকে বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, বাড়ি পাওয়া গেছে?

হ্যাঁ, জবাব দিল মূসা। খুব ভাল লোক। আমাদেরকে খাওয়াল।

তাই নাকি? ফিরে তাকাল একবার হ্যানসন, তারপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করল আবার পথের ওপর। ভুল হয়েছে আপনাদের। গাড়ি যেখানে রেখেছিলাম, তার পাশেই একটা গ্যারেজ আছে, দেখেছিলেন? চাকায় হাওয়া দিতে নিয়ে গিয়েছিলাম, দেখি পুরানো এক দোস্ত, মেকসিকান। সে বলল, ক্যাপটেন শ্যাটানোগার বোট ডুবে গেছে।

হ্যাঁ, বলেছে আমাদেরকে, বলল রবিন।

যে বলেছে, সে অন্য লোক, ক্যাপটেন শ্যাটানোগা নয়।

কেন নয়? লম্বা লোকটা চলে যাওয়ার পর এই প্রথম কথা বলল কিশোর। ভাবে মনে হলো না অবাক হয়েছে, এটাই যেন আশা করছিল সে।

কারণ, ক্যাপটেন শ্যাটানোগা এখন হাসপাতালে। খুব অসুস্থ। কড়া নিউমোনিয়া বাধিয়েছে। এতক্ষণ পানিতে থাকা, হবেই তো। কারও সঙ্গে কথা বলার ক্ষমতা নেই বেচারার।

<

Super User