ভয়ঙ্কর মানুষটাকে দেখে আরেকটু হলেই হাত থেকে কমিকের বাক্স খসে পড়ে যাচ্ছিল কিশোরের।

লাফিয়ে এলিভেটরে উঠে লোকটা বলল, সরি, চমকে দিলাম। গোয়েন্দাদেরকে একধারে সরে যেতে দেখে হাসল। কাঁধের গিঁটলি হয়ে যাওয়া একটুকরো মাংস দুই আঙুলে টিপে ধরল সে। ল্যাটেক্স সেজেছি আমি। কমিকের মাংস খসা ভূত। প্রতিযোগিতার সাজ। কেমন লাগছে?

একেবারে বা-বাবা, তোতলাতে লাগল কিশোর, বাস্তব!

লবিতে পৌঁছল এলিভেটর। যেমন তাড়াহুড়ো করে উঠেছিল, তেমনি করেই নেমে গেল মাংস খসা ভূত। জনতার ভিড়ে হারিয়ে গেল। লবির আরও অনেকেই নানা রকম সাজে সেজেছে। সবই কমিক বইয়ের চরিত্র। এলিভেটর থেকে নেমে মারবেলের মেঝেতে বিছানো কার্পেটের ওপর দিয়ে ক্রোমের ফ্রেম করা অ্যানাউন্সমেন্ট বোর্ডের দিকে এগোল তিন গোয়েন্দা। ইনটারকমিকন, পড়ল কিশোর, মেইন কনফারেন্স হল। তাকাল দুই সহকারীর দিকে। অনেক বড় মনে হচ্ছে।

সম্মেলন যেখানে হবে সেদিকে এগোল ওরা। সাধারণ একটা কাঠের টেবিলের সামনে একদল মানুষকে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। টেবিলের পেছনে বসে একটা মেয়ে। সোনালি রঙ করা চুল। মাঝখানে কালো রঙের একটা শিং গজিয়েছে, চুলগুলোকেই বাঁধা হয়েছে ওরকম করে। গায়ে কালো রঙের টি-শার্ট, তাতে সাদা অক্ষরে লেখা: ইনটারকমিকন স্টাফ। তিন গোয়েন্দা কাছে যেতেই বলল, দশ ডলার করে প্রতিটি।

ওদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে, কালো কালির বড় একটা ইঙ্ক প্যাড থেকে স্ট্যাম্পে কালি নিয়ে ছাপ দিয়ে দিল গোয়েন্দাদের ডান হাতের উল্টো পিঠে।

কিশোর লক্ষ করল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় রবিনের হাতটা ধরে রাখল মেয়েটা এবং এই প্রথম হাসল।

মুসাও ব্যাপরটা লক্ষ্য করেছে। কিশোরের দিকে মাথা কাত করে বলল, রবিনটা যে কি জাদু করে বুঝি না! মেয়েগুলো ওকে দেখলেই আরেক রকম হয়ে যায়…

যা খুশি করুকগে। হাতের ছাপটার দিকে তাকাল কিশোর। লেখা হয়েছেঃ ইন্টারকমিকন-ডে ১। বিড়বিড় করল সে, টিকেটের চেয়ে খরচ কম, ফাঁকিবাজিরও ভয় নেই। ইচ্ছে করলেই আমরা নিয়ে গিয়ে কোন বন্ধুকে দিয়ে দিতে পারব না এটা, টিকেট হলে যেমন পারা যায়। মোট কথা যাকে দেয়া হয়েছে শুধু তার জন্যেই এটা প্রযোজ্য।

রবিনের পেছন পেছন কনফারেন্স হলের দরজায় এসে দাঁড়াল দুজনে। দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশালদেহী এক লোক। ষাঁড় যেন। এর গায়েও কালো টিশার্ট। হাত বাঁড়াল টিকেট চাওয়ার ভঙ্গিতে।

যার যার ডান হাত বাড়িয়ে দিল তিন গোয়েন্দা।

ছাপগুলো পরীক্ষা করল লোকটা। তারপর হাসল। বেরিয়ে পড়ল একটা ভাঙা দাঁত। সরে গেল একপাশে। পা বাড়াল তিন গোয়েন্দা। ঢুকল এসে যেন এক সাংঘাতিক পাগলখানার মধ্যে।

লবির শান্ত পরিবেশের তুলনায় এই জায়গাটাকে মনে হলো আরব্য রজনীর কোন সরগরম মেলা, কিংবা বাজার। বিশাল হলঘরে পাতা হয়েছে কাঠের শত শত ফোল্ডিং টেবিল। কিছু টেবিল ব্যবহার হচ্ছে কাউন্টার হিসেবে, রাশি রাশি কমিকের বই স্তূপ হয়ে আছে ওগুলোতে। কিছু টেবিলে গায়ে গায়ে লাগিয়ে স্টল তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি স্টলের পেছনে লাগানো হয়েছে তাক আর ডিসপ্লে বোর্ড, ওগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে রঙচঙে কমিকের বই। বইগুলোকে যত্ন করে অয়েল পেপারে মোড়া হয়েছে। সংগ্রাহকের জিনিস। যার পছন্দ হবে অনেক দাম দিয়ে কিনবে।

অনেক মানুষ। যেখানে ফাঁক পেয়েছে গাদাগাদি করে রয়েছে। হাঁটার উপায় নেই। অনেক কষ্টে ঠেলেঠুলে এগোতে হয়। বুড়ো-বাচ্চা, সব বয়েসের মানুষই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে কমিকের ওপর, দামদর করছে। পছন্দ হলে কিনছে, না হলে সরে যাচ্ছে আরেক কাউন্টারে। বিচিত্র সব পোশাক পরে রয়েছে অনেকে, ক্রেতাবিক্রেতা উভয় দলেই আছে এই সাজের বাহার। হট্টগোলে কান ঝালাপালা।

পাথর হয়ে যেন দরজায় দাঁড়িয়ে আছে তিন বন্ধু। লম্বা, পাতলা লাল চুলওয়ালা, ইনটারকমিকনের টি-শার্ট পরা একজন মানুষ সরে এলেন ভিড়ের ভেতর থেকে। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে হাসলেন।

প্রথম এলে বুঝি, বললেন তিনি। তোমাদের অবাক হওয়া দেখেই বুঝেছি। নাটকীয় ভঙ্গিতে বললেন, ইনটারকমিকনে স্বাগতম। আমি লুই মরগান। এই কনভেনশনের চীফ। হাসলেন। পাগলাগারদ মনে হচ্ছে তো? কিশোরের হাতের বাক্সটার দিকে তাকিয়ে বললেন, তো, কি নিয়ে এলে?

ওদের কথা শোনার পর হাসিটা বাড়ল তাঁর। অনেক পাইকার পাবে এখানে। হাত ছড়িয়ে স্টলগুলো দেখালেন তিনি। সব চেয়ে বড় গ্রুপটা হলো সুমাতো কমিকস। তাদের টাকা আছে, ভাল দাম দিতে পারবে। ওই যে, ওদিকটায় ওদের স্টল। লম্বা একটা আঙুল তুলে ঘরের একধারে দেখালেন।

নির্দেশ মত ঘরের ওই পাশটায় চলে এল তিন গোয়েন্দা। ছোট একটা স্ট্যান্ডের কাছে এসে থামল কিশোর, কমিকের সাথে সাথে টি-শার্টও বিক্রি হয় ওখানে। তিনজনের জন্যেই একটা করে শার্ট কিনল সে। ওগুলোতে ছাপ মারা রয়েছেঃ কমিক লাভারস ডু ইট উইথ পিকচারস।

সুমাতো কমিক লেখা স্টলটা চোখে পড়ল ওদের। অনেক বড়। ডান পাশের অর্ধেক জুড়ে দেয়াল ঘেঁষে বিরাট এক দোকান সাজানো হয়েছে। খরিদ্দারও প্রচুর।

টেবিলের কাছে যাওয়ার আগে দ্বিধা করল তিন গোয়েন্দা। সব কিছু দেখে নিয়ে তারপর যেতে চায়।

পাঁচজন অল্পবয়েসী লোক দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপাশে। খরিদ্দার সামলাচ্ছে। একজনের এক কানে দুল। সে কথা বলছে একটা ছোট ছেলের সঙ্গে। একটা থান্ডারবীম কমিকের তিন নম্বর সিরিজটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দিয়ে দিলাম চার ডলারেই। বইটার মলাটে নায়কের ছবি আঁকা। নিজের চোখ থেকে লেজার রশ্মি বের করে ট্যাঙ্ক ফুটো করে ফেলছে। তোমার ভাগ্য ভাল, খোকা। পেয়ে গেলে। এখানে আর কোন দোকানে এই কমিক পাবে না।

তাড়াতাড়ি টাকা বের করে দিল ছেলেটা, যেন দেরি করলেই হাতছাড়া হয়ে যাবে ওই অমূল্য সম্পদ।

নিচু গলায় দুই বন্ধুকে বলল রবিন, আসার সময় এইমাত্র দেখে এলাম আরেকটা স্টলে, এক ডলারের কমিকের স্কুপে ফেলে রেখেছে ওই একই জিনিস।

মুসা বলল, পঞ্চাশ সেন্ট দিয়ে আমি নতুন কিনে পড়েছি।

সুমাতো স্টলের আরও কাছাকাছি এসে তিন গোয়েন্দা দেখল এক জায়গায় একটা টেলিভিশনে ভিসিআর লাগিয়ে রেখেছে একজন সেলসম্যান। শজারুর কাটার মত খাড়া খাড়া চুল, গায়ে কালো টি-শার্ট। অ্যাসট্রোঅ্যাইসেস কমিকের কিছু দৃশ্য দেখাচ্ছে। ইদানীং টিভিতে বেশ গরম করে রেখেছে ওই নতুন সাইন্স ফিকশনটা। বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। লোকটা বলছে, এই পার্টটা টিভিতে আসতে আরও দুএক হপ্তা লাগবে। চালাকি করে আগেই জোগাড় করে ফেলেছি আমরা। শহরের কেউ দেখার আগেই পেয়ে যাচ্ছেন। জলদি নিয়ে নিন, শেষ হওয়ার আগেই।

বলে খরিদ্দারদের দিকে কি-করে-ফেলেছিনু-রে এমন একটা ভঙ্গিতে তাকাল সে।

বছর বিশেক বয়েসের এক তরুণ টাকা বাড়িয়ে দিল।

ফিসফিস করে মুসা বলল, অযথা টাকা খরচ করছে। কয়েকদিন অপেক্ষা করলে বিনে পয়সায়ই দেখতে পারত। চাইলে ভিসিআরে রেকর্ডও করে নিতে পারত।

টাকা দিচ্ছে একটা জালিয়াতি করে আনা টেপের জন্যে, রবিন বলল।

নিশ্চয় ঘুষ দিয়ে নিয়ে এসেছে। নয়ত সিন্ডিকেট যখন টিভি কোম্পানিতে পাঠাচ্ছিল ছবিটা, তখন স্যাটেলাইট বীম দিয়ে ধরে রেকর্ড করে ফেলেছে। মহা শয়তান ব্যাটারা!

কত রকমের পাগল যে আছে দুনিয়ায়, কিশোর বলল। টাকাও আছে খরচও করছে। ওরা কিনছে বলেই ঠকানোরও সুযোগ পাচ্ছে। দেখি, আমরা কি করতে পারি?

এগিয়ে গেল কিশোর।

একজন সেলসম্যান মুখ তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, বলো, কি করতে পারি?

দ্বিধা করছে তিন গোয়েন্দা।

ও, তোমরা কিনবে না? বেশ, না কিনলে সরে দাঁড়াও। যারা কিনবে তাদের জায়গা দাও।

না, কিশোর বলল, আমরা কিনব না।

স্টলের কাছ থেকে সরে এসে রবিনের দিকে তাকাল সে। বলল, এরা ডাকাত। বেচতে পারব না এদের কাছে। ওটা কোথায় দেখেছিলে? চার ডলারেরটা যেখানে এক ডলারে বিক্রি করে?

ওদিকে, রবিন বলল। ইমারজেন্সি একজিটের কাছে। কি যেন একটা নাম। পাগল না উন্মাদ, কি যেন।

স্টলের নামের সঙ্গে ম্যাড কথাটা জুড়ে দেয়া হয়েছে অবশ্য, তবে মালিক সত্যি পাগল কি-না কে জানে! যদিও তাঁকে দেখলে পাগল বলেই সন্দহ হবে। এলোমেলো কোঁকড়া কালো চুল, পুরু গোঁফ। দোকানের নাম ম্যাড ডিকসনস ওয়ার্ল্ড। তরুণ সহকারীকে ডেকে বললেন, জনি, চট করে ওপরে গিয়ে আরও কয়েক বাক্স কমিক নিয়ে এসো। তারপর ঘুরতেই চোখ পড়ল লম্বা, বিষন্ন চেহারার একজন মানুষের দিকে। চাঁদিতে টাক। তিনপাশে পাতলা চুল, ধূসর হয়ে এসেছে।

ধমকে উঠলেন ম্যাড, আবার এসেছেন?

ভদ্রলোক বললেন, ফ্যান ফানের কপিটার জন্যে সাড়ে তিনশো দিতে রাজি আছি।

মাথা নাড়লেন ডিকসন। পাঁচ।

আরও বিষন্ন হয়ে গেলেন ভদ্রলোক। দর কষাকষি শুরু করলেন, ঠিক আছে, সাড়ে চার।

ছয়।

কিন্তু লেখা তো রয়েছে মাত্র সাড়ে চারশো! মরিয়া হয়ে উঠলেন যেন ক্রেতা।

এখন আর ছয়ের কমে বেচব না। জনাব পাগলও কম যান না। বুনো দৃষ্টি ফুটেছে চোখে।

হাত মুঠো করে ফেললেন ক্রেতা। বেশ ছয়ই দেব। হাসি ফুটল পাগলের চোখে। বলতে বেশি দেরি করে ফেলেছেন। এখন সাত।

চোয়াল স্কুলে পড়ল লোকটার। সাত! বেচতে চান না নাকি কারও কাছে?

কারও কাছে বেচতে চাই না কথাটা ঠিক নয়। আপনার কাছে চাই না।

ঝটকা দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন ক্রেতা। গটমট করে চলে গেলেন। সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। মিস্টার ডিকসনের দিকে ফিরে বলল, কাস্টোমারদের সঙ্গে এরকম আচরণই করেন নাকি?

সবার সঙ্গে করি না। যারা বেশি বিরক্ত করে, ঘাড়ে এসে চাপতে চায়, তাদের সঙ্গে করি। বড় একটা কমিক পাবলিশিং কোম্পানিতে চাকরি করে। ভীষণ বিরক্ত করে এসে। কিশোরের বাক্সটার দিকে তাকালেন ডিকসন। তোমরা কি জন্যে এসেছ? কিনবে, না বেচবে?

বেচব। বাক্সটা টেবিলে রেখে ডালা খুলল কিশোর।

ভেতরের জিনিসগুলো দেখলেন ডিকসন। ভাল জিনিস কিছু আছে। চোখ চকচক করছে তার। সিলভার এজ-এর বই দুটো তো বেশ ভাল কন্ডিশনে আছে। তাছাড়া কিছু নাম্বার ওয়ানস…ঠিক আছে, যা আছে, আছে। পুরো বাক্সটাই বেচে দাও। চারশো ডলার দেব।

দাম শুনে কান গরম হয়ে যাচ্ছে টের পেল কিশোর। বুঝল, মুখেও রক্ত জমছে। শুরুতেই এত! তার পরেও বলল, মাত্র চার? অর্ধেকও তো বলেননি। দাম জানা আছে আমার…

বাধা দিয়ে ম্যাডম্যান বললেন, ওভারস্ট্রীট গাইডে দেখিয়েছ তো? ওরা বলবেই। আরও অনেক দাম হাঁকবে, কিন্তু কিনবে না। শয়তানি আরকি। কি লিখে রেখেছে দেখোনি? কেউ যাতে এসে কিছু বলতে না পারে। লিখেছে, আমাদের কাছে যা আছে, ওগুলো আরও অনেকের কাছেই থাকতে পারে। দামেরও তফাৎ হতে পারে। কাজেই কেনার আগে চিন্তা করে নেবেন। আমরা লাভ করার জন্যেই বসেছি, লাভ করব।

সেটা তো সততার পরিচয় দিয়েছে, কিশোর বলল। লাভ করবে বলেছে ডাকাতিও করছে না, ঠকাচ্ছেও না…এর বেশি আর বলতে পারল না সে। টেনে সরিয়ে নিয়ে গেল তাকে রবিন আর মুসা। নিচু গলায় বলল, কি যা-তা বকছ অনেক বেশি দিতে চাইছে, দিয়ে দাও। খরচ করেছি একুশ ডলার, পাচ্ছি চারশো আর কত!

বেশিই পাব, কিশোর বলল। এক কথায়ই যখন চারশো দিতে রাজি হয়েছে, জিনিসের দাম আরও অনেক বেশি। দরাদরি করতে অসুবিধে কী?

ম্যাডম্যানের দিকে ঘুরতে গেল কিশোর। কিন্তু ঘোরা আর হলো না। দৃষ্টি আটকে গেল নীল সোনালি রঙের ওপর।

ওদেরই বয়েসী একটা মেয়ে। বেশ লম্বা। সুন্দর সোনালি চুল প্রায় কোমরের কাছে নেমে এসেছে। নীল সিল্কের আলখেল্লা গায়ে। ভেতরে পরেছে হলুদ রঙের একটা বাদিং স্যুট, রঙটা এতই উজ্জ্বল, সোনালিই লাগছে। হাত আর পা পুরোপুরি বেরিয়ে আছে। পায়ে হলুদ বুট। হাঁটাও খুব সুন্দর। চোখ ফেরানো যায় না।

কিশোরও ফেরাতে পারছে না।

সেটা দেখে হাসলেন ম্যাড। চোখে লেগে যায়, না? কস্টিউম কনটেস্টে স্টেলারা স্টারগার্লের মত পোশাক পরেছে। কেন প্রতিযোগিতায় জিতে যায় এরা, বুঝি…

হ্যাঁ, দামের ব্যাপারটা, কমিক বিক্রির কথায় ফিরে এল কিশোর। বলেই আবার চোখ ফেরাল মেয়েটার দিকে।

দেখি তো আবার, বলে বাক্সে আবার হাত ঢোকালেন ডিকসন। দশটা কমিক টেনে বের করে বললেন, এগুলো আমি সহজেই বেচতে পারব। আসলে দামও এগুলোরই। ঠিক আছে, একটারই দামদর হোক। তিনশো দিতে রাজি আছি।

শুনছে না কিশোর।

তোমাকে দামের কথা বলছে, কিশোর, কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল রবিন।

জোর করে যেন মেয়েটার ওপর থেকে চোখ সরাল গোয়েন্দাপ্রধান। মেয়েদের দিকে এভাবে সাধারণত তাকায় না সে। নিশ্চয় কোন কারণ আছে, বুঝতে পারছে, তার দুই সহকারী।

মোটামুটি ভালই দাম বলেছেন, বলেই আবার মেয়েটার দিকে ঘুরতে শুরু করল কিশোরের মুখ।

এক পলকের জন্যে যেন ঝিলিক দিয়ে উঠল হলুদ রঙ। পরক্ষণেই লাল কস্টিউম পরা একটা মূর্তির আড়ালে চলে গেল মেয়েটা। মঠবাসী ভিক্ষুর আলখেল্লার মতই লাগছে পোশাকটা, রঙ বাদে। মূর্তিটা আরও কাছে এলে কিশোর দেখল, মুখোশ পরেছে লোকটা। সাদা-কালো মড়ার মুখ। না না, কঙ্কালের মুখ।

আনমনেই মাথা নেড়ে আবার ম্যাডম্যানের দিকে ফিরল কিশোর। অন্যমনস্ক অবস্থাটা চলে গেছে। বলল, তিনশো ডলার বললেন, না? আমাদের সব চেয়ে দামি মাল এগুলোই। যে কেউই কিনতে চাইবে, কেবল এগুলোর জন্যেই…

আলখেল্লা পরা মড়াটা তার প্রায় গা ঘেঁষে চলে গেল। বাদুড়ের ডানার মত দুলে উঠল লাল আলখেল্লার প্রান্ত। বিরক্ত হয়ে ঘুরে তাকাল কিশোর।

নাটকীয় ভঙ্গিতে মূর্তিটাকে হাতে তুলতে দেখল সে। ছড়িয়ে দিয়েছে লম্বা লম্বা আঙুল। টান টান হয়ে গেছে হাতের ফ্যাকাসে চামড়া। চারটে ছোট ছোট বল পড়ল মেঝেতে।

ধোঁয়ায় ঢেকে গেল ম্যাড ডিকসনের স্টলটা।

<

Super User