স্লেজ থেকে নেমে পড়ল জোসি। চেঁচিয়ে বলল, নামমা! নামো! গাড়ি ঘোরাতে হবে!

লাফিয়ে নামল কিশোর-মুসা। দৌড় দিল জোসির পিছনে। রুক্ষ বরফ। লাগাম পরা অবস্থায়ই কুকুরগুলোকে টেনে নিয়ে এল ওরা। গ্লিটারের দিকে মুখ করাল। স্নেজের মুখও ঘুরিয়ে দিল একই দিকে।

লাফ দিয়ে আবার স্নেজে গিয়ে উঠল কিশোর-মুসা। লাগাম ধরে চিৎকার করে উঠল জোসি, ডায়মণ্ডহার্ট! হাইক! হাইক!

সামনে ঝাঁপ দিল কুকুরটা। বরফে নখ বসাল। ওর পেশীবহুল শক্তিশালী বুকে চেপে বসল চামড়ার লাগাম। দেখাদেখি বাকি কুকুরগুলোও একই কাজ করল। ছুটতে শুরু করল স্লেজ।

নদীর ভাটির দিকে চলেছে এখন ওরা। জেফরি টিনুকের কেবিনের ওপর কুণ্ডলী পাকিয়ে উড়ছে কালো ধোঁয়া।

ফুল স্পিডে কুকুরগুলোকে ছুটিয়ে নিয়ে চলল জোসি। চিৎকার করে ক্রমাগত নির্দেশ দিতে থাকল, টান, ডায়মণ্ড, টান! টেনে যা!

লাগামের সঙ্গে গা মিলিয়ে দেহটাকে টান টান করে ফেলেছে ডায়মণ্ডহার্ট। জরুরি অবস্থা আঁচ করে ফেলেছে কুকুরগুলো।

জোসি, কী হয়েছে বলো তো? এতক্ষণে জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেল কিশোর।

বুঝতে পারছি না, চিন্তিত ভঙ্গিতে জবাব দিল জোসি। অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে আগুন লাগাটা এখানে ভয়ানক ব্যাপার। পুরো শহরটাই কাঠের তৈরি।

টেডের দিকে তাকাল কিশোর। শহর থেকে দ্রুত দূরে সরে যাচ্ছে ওর স্লেজ। অবাক হলো কিশোর। আগুন দেখেনি নাকি? ওকে বলা দরকার।

চিল্কার করে ডাকল জোসি, টেড! এই টেড!

ফিরেও তাকাল না টেড। যেন জোসির ডাক ওর কানেই ঢোকেনি।

আবার ডাকল জোসি। এবারও তাকাল না টেড। কুকুর-বাহিনী নিয়ে ছুটতে ছুটতে সরে যেতে লাগল শহর থেকে দূরে।

থামল না কেন? মুসার প্রশ্ন।

এতদূর থেকে বোধহয় আমার ডাক শুনতে পায়নি, জবাব দিল জোসি।

কিন্তু কিশোরের যথেষ্ট সন্দেহ হলো। সমতল জমাট বরফের ওপর দিয়ে এমনিতেই শব্দ চলে বহুদূর। তা ছাড়া এখানে বাধা দেবার মতও কিছু নেই। জোসিকে উপেক্ষা করার জন্য শুনেও না শোনার ভান করেছে টেড। জরুরি কাজে সহায়তা করার জন্য ওকে ডাকা হয়েছে, সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারেনি।

ওদেরকে নদীতীর পার করিয়ে আনল ডায়মণ্ডহার্টের দল। কেবিনের কাছের সমতল জায়গাটায় পৌঁছল স্লেজ। গাড়ি থামাল জোসি। লাফিয়ে নামল কিশোর ও মুসা।

ইতিমধ্যে শহরের লোক জড় হয়ে একটা স্বেচ্ছাসেবী অগ্নিনির্বাপক-বাহিনী গঠন করে ফেলেছে। নারী-পুরুষ সবই আছে তাদের মধ্যে। সবার হাতে বালতি। কেবিনের কাছ থেকে লম্বা সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে ওরা। সারির এক মাথা একটা পানির ট্যাংকের কাছে, অন্য মাথা কেবিনের কাছে। হ্যাণ্ড পাম্প লাগানো একটা লম্বা হোস পাইপ নিয়ে দৌড়ে এল তিনজন লোক।

দমকল নেই? চারপাশে তাকিয়ে দমকলের গাড়ি খুঁজতে লাগল মুসার চোখ।

নাহ, জোসি জানাল।

ট্যাংক থেকে পানি নিয়ে বালতি এগিয়ে দিতে থাকল অগ্নিনির্বাপকদের বালতি-বাহিনী। কেবিনের সবচেয়ে কাছে দাঁড়িয়েছে চওড়া কাঁধওয়ালা একজন শক্তিশালী পুরুষ। পাশের লোকটার হাত থেকে বালতি নিয়ে পানি ছুঁড়ে দিচ্ছে আগুনের ওপর। খালি বালতিটা পাশের লোকটাকে ফিরিয়ে দিয়ে আরেকটা ভরা বালতি নিচ্ছে ওর হাত থেকে। হাতে হাতে খালি বালতিটা চলে যাচ্ছে ট্যাংকের কাছে, পানি ভর্তি হয়ে আবার ফিরে আসছে প্রথমজনের হাতে। পানি বহনের কাজ দ্রুত চলছে এভাবে।

তুষার সরানোর একটা বেলচা তুলে নিয়ে কিশোরের দিকে ছুঁড়ে দিল জোসি। আরেকটা দিল মুসাকে। তৃতীয় আরেকটা নিজে নিয়ে চিৎকার করে বলল, আগুনে তুষার ফেলতে থাকো। বেলচা তুলে দেখাল, ওই যে আমার চাচা-চাচী।

বেলচায় করে তুষার তুলে নিয়ে কেবিনের খোলা জানালা দিয়ে ভিতরে ছুঁড়ে দিল কিশোর। ফেলতে থাকল এভাবে। কঠিন কাজ। অল্পক্ষণেই হাঁপিয়ে গেল। মুখ দিয়ে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে বরফ-কণায় রূপান্তরিত হচ্ছে বাতাস। বিচিত্র আকৃতি। কোনটা রিঙ, কোনটা লম্বা। মুসাও পাল্লা দিয়ে তুষার ফেলছে ঘরের ভিতর। ঘোঁৎ-ঘোৎ শব্দ বেরোচ্ছে মুখ দিয়ে। এখন ওদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছে আরও অনেকে। জ্বলন্ত কেবিনটা ঘিরে ফেলেছে অগ্নিনির্বাপক-বাহিনী।

তুষার ফেলার দিকেই কিশোরের নজর ছিল এতক্ষণ, এখন খেয়াল করে দেখল, আগুনের শিখা আর দেখা যাচ্ছে না। শুধু ভলকে ভলকে উঠে যাওয়া সাদা ধোঁয়া। আগুনের কারণে দূরে সরে থাকতে বাধ্য হয়েছিল এতক্ষণ মেরুর ঠাণ্ডা। সুযোগ পাওয়ামাত্র কামড় বসাল আবার। গায়ে। কিশোরের মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেল।

আগুনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জেতা মানুষগুলো উল্লাসে চিৎকার করে উঠল। চওড়া হাসি ফুটল কিশোর-মুসা-জোসির মুখেও। একে অন্যের পিঠ চাপড়ে দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করল ওরা।

চাচা-চাচী আর চাচাত বোন মুনস্টোনের সঙ্গে কিশোর ও মুসাকে পরিচয় করাতে টেনে নিয়ে গেল জোসি। স্তব্ধ হয়ে গেছে টিনুক পরিবার। সহায়-সম্পত্তি বলতে যা ছিল ওদের, কেবিনটার সঙ্গে সঙ্গে সব গ্রাস করে নিয়েছে আগুন।

খুব খারাপ লাগছে আমার, মিস্টার টিনুক, সহানুভূতির সুরে কিশোর বলল।

জোর করে মুখে দুর্বল হাসি ফোটালেন জোসির চাচী। জবাবটা তিনিই দিলেন। থ্যাংক ইউ। মিস্টার বলা লাগবে না, ওকে শুধু জেফরি বললেই চলবে। আমাকে এরিনা। আমরা এখানে অত সৌজন্য আর ফর্মালিটির ধার ধারি না। তোমাদের জন্য আমারও খারাপ লাগছে। গ্লিটারে এলে বেড়াতে, আর এ সময়ই এ রকম একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। খাতির-যত্নও করতে পারব না ভালমত। আজ রাতটা কোথায় কাটাব, সেটাই জানি না।

অত চিন্তা করছ কেন, চাচী, জোসি বলল। আমাদের বড় কেবিনটাতেই থাকো। ধীরে সুস্থে তোমাদের কেবিনটা আবার বানিয়ে নিয়ো।

নিজেদের কেবিনের পোড়া দরজার কাছে গিয়ে ভিতরে উকি দিলেন জোসির চাচা। দেখে, ফিরে এলেন আগের জায়গায়।

মুন জিজ্ঞেস করল, কী দেখলে, বাবা?

মুনকে দেখছে মুসা। বয়েসে ওদের চেয়ে বছরখানেকের ঘোট। সুন্দরী। গভীর নীল চোখ।

পিছন দিকটাতেই ক্ষতি বেশি হয়েছে, জেফরি জানালেন। কিছু জামা-কাপড় আর ফার্নিচার বোধহয় বাঁচানো যাবে।

বাঁচানো গেলেও সাফ করতে জান বেরোবে, মুন বলল। যে পরিমাণ কালিঝুলি আর ছাই পড়েছে।

স্টোভটা জ্বেলে দিয়ে আসি, জোসি বলল।

মুসা জিজ্ঞেস করল, আমরা কোনও কাজে লাগতে পারি?

মাথা নাড়ল জোসি, না। আমিই পারব।

যে কেবিনে কিশোরদের থাকতে দিয়েছে, তার পরের কেবিনটার দিকে এগোল জোসি।

জেফরির দিকে ফিরল কিশোর। আগুন লাগল কীভাবে?

জানি না, মাথা নাড়লেন জেফরি। লাকড়ি আনতে বনে গিয়েছিলাম আমরা। ফিরে এসে দেখি জানালায় আগুনের আলো। দেখেই বুঝে গেলাম, চিমনির আগুন না।

কী করে বুঝলেন? জিজ্ঞেস করল মুসা।

জবাব দিতে যাচ্ছিলেন জেফরি, বাধা দিল মুন। ফিসফিস করে বলল, বাবা, আস্তে। ব্ৰিণ্ডল জ্যাক আসছে।

শক্ত হয়ে গেল জেফরির চোয়াল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, আসতে দাও!

ঘুরে তাকাল কিশোর। ব্ৰিণ্ডল জ্যাককে দেখল। চেহারা আর ভাবভঙ্গি সন্দেহ জাগায়। মুখে বিচিত্র বাঁকা হাসি। ঠোটের এক কোণ বাঁকিয়ে হাসে। চোখে কুটিল দৃষ্টি।

দুঃখই লাগছে, জেফ, জ্যাক বলল। অবশ্য এমনিতেও পুরানো হয়ে গিয়েছিল কেবিনটা, নতুন আরেকটা বানাতে হতই। দেরি না করে শুরু করে দাও, বানাতে সময় লাগবে না। যে কাজটা ভাল, পারো, সেটা বাদ দিয়ে কেন যে জানোয়ার ধরতে যাও বুঝি না। ওসব তোমার কর্ম নয়। একটা পরামর্শ দিই শোনো, এখনও সময় আছে, জানোয়ার ধরা বাদ দিয়ে কেবিনের ব্যবসায় লাগো। গ্লিটারকে যদি সত্যিই থিম পার্ক বানানো হয় কখনও-এবং আমার বিশ্বাস, হবে-তাহলে কাজের অভাব হবে না তোমার।

তোমার পরামর্শ ছাড়াই এতকাল কাটিয়েছি, বাকি দিনগুলোও কাটাতে পারব! কঠিন কণ্ঠে বললেন জেফরি।

জ্যাকের ঠোটের কোণে হাসিটা বাড়ল। এই একটিবার অন্তত আমার পরামর্শ তোমাকে শুনতেই হবে, জেফ, নইলে শীতে জমে মরবে। যদি চাও তো তোমার কেবিন বানানোয় সাহায্য করতে পারি আমি।

ব্যঙ্গ করছে কি না জ্যাক বোঝা গেল না।

ভুরু কুঁচকে গেল জেফরির। চোখের পাতা সরু হয়ে এল। এত হাসি কেন তোমার মুখে, ব্ৰিণ্ডল? আগুন লাগানোয় তোমার হাত ছিল না তো?

না, ছিল না, সহজ কণ্ঠে জবাব দিল জ্যাক। থাকলে নিভানোয় সাহায্য করতে আসতাম না। তুমি তোক ভাল না, জেফ, তাই অন্যের জায়গায় ফাঁদ পেতে শয়তানি করতে পারো, কিন্তু আমি তো আর তোমার মত নই। যাক, কেবিনটা পুড়ে যাওয়ায় কিছুদিন শান্তিতে থাকতে পারব। এখানে তোমাকে কেবিন বানানোয় ব্যস্ত থাকতে হবে, বনে গিয়ে আমার ফাঁদ পাতায় বাগড়া দিতে পারবে না। টেনে টেনে হাসতে লাগল ও।

মুঠোবদ্ধ হয়ে গেল জেফরির হাত। শঙ্কিত হলো কিশোর। হাতাহাতি না বেধে যায়।

মুসাও চোখের পাতা সরু করে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে আছে।

আগুনটা কীভাবে লেগেছে বলে তোমার ধারণা? জেফরি জিজ্ঞেস করলেন।

এটা কোনও প্রশ্ন হলো? জ্যাক বলল, ম্যাচের কাঠি, মশালের আগুন, ঘরের মধ্যে হ্যারিকেন উল্টে পড়া… কাঠের কেবিনে আগুন ধরানোটা কোন ব্যাপারই না। যেভাবেই ধরুক, তোমার কেবিনটার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে, জেফ। কিন্তু কী আর করবে। অ্যাক্সিডেন্ট তো আর বলে কয়ে আসে না।

ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল জ্যাক। ওর পিছু নিতে যাচ্ছিলেন জেফরি। ধরে ফেললেন এরিনা। না না, যেয়ো না।… বাইরে ঠাণ্ডা লাগছে। ঘরে চলো। চা খাই। রাতের খাওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে।

বাবা-মা চলে গেলে কিশোরদের দিকে ফিরল মুন। ফাঁদ পাতা নিয়ে বাবা আর ব্ৰিণ্ডল আঙ্কেলের ঝগড়াটা চিরকালের। দেখা হলেই শুরু করে। ঝগড়া না করে ওই সময়টা যদি থিম পার্ক নিয়ে মাথা ঘামাত, ভাল করত। থিম পার্কের কথা জোসি তোমাদের কিছু বলেছে নাকি?

বলেছে, জবাব দিল মুসা। পার্ক বানানোর ব্যাপারে তোমার বাবার কী মত?

বাবা পুরোপুরি এর বিপক্ষে, মুন বলল। বাবা বলে, থিম পার্কটা হতে দিলে আমরা হয়ে যাব সার্কাসের জানোয়ার। টুরিস্টরা আসবে, এমন ভঙ্গিতে তাকাবে আমাদের দিকে, যেন আমরা অদ্ভুত কোন জীব। প্রকৃতির মাঝে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারও হারাব আমরা।

কিশোর জিজ্ঞেস করল, ব্রিণ্ডল জ্যাক কী বলে? সে কোন্ পক্ষে?

কীভাবে বলি? ও একটা অদ্ভুত চরিত্র। বাবা যদি কিছু করে, সে করবে ঠিক তার উল্টো। জেদ করেই যেন করে এ সব। হয়তো এ ক্ষেত্রেও বিপক্ষেই যাবে।

সেজন্যই কি তোমাদের কেবিনে আগুন ধরাল? হেসে বলল মুসা।

মুসার দিকে তাকাল মুন। না, এত পাগল না! শহরের বাড়িঘর যে সব কাঠের তৈরি, তা তো নিশ্চয় দেখেছ। শীতকালে শুকিয়ে ঠনঠনে হয়ে থাকে। বাতাস বইছে না বলে আজ বেঁচে গেছি। একটু বাতাস থাকলেই আমাদের কেবিনের আগুন সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ত। পুড়ে ছাই হতো গোটা শহর। পাগল হয়ে না গেলে এখানকার কোন লোক কারও ঘরে আগুন দেবে না, সেটা যার ঘরই হোক।

দুজনকে নিয়ে জোসিদের কেবিনে ঢুকল মুন। ঘরের ভিতরটা এখনও ঠাণ্ডা। তবে স্টোভের আগুনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। ঘর গরম হতে দেরি হবে না। গায়ের পার্কা খুলে ফেললেন এরিনা। ঝুলিয়ে রাখলেন দরজায় গাঁথা হুকে। পাঁচ গ্যালনের একটা ক্যান থেকে কেটলিতে পানি ঢেলে চুলায় চাপালেন।

দুটো খালি ক্যান তুলে নিতে নিতে মুন বলল, আরও পানি লাগবে। ঝর্না থেকে নিয়ে আসিগে।

একটা ক্যান দাও আমার হাতে, হাত বাড়াল মুসা। আমিও তোমার সঙ্গে যাই।

হাসল মুন। দরকার নেই। তুমি ভাবছ আমার কষ্ট হবে? এ সব আমাদের দৈনন্দিন কাজ, জন্মের পর থেকে করে আসছি। শ্লেজ নিয়ে চলে যাব। কোনও অসুবিধে হবে না।

মুন বেরিয়ে গেলে জোসি ঢুকল। মলিন হাসি হেসে বলল, খুব বিরক্ত লাগছে, না? আমাদের জীবন এমনই। বিপদে ভরা। নানা

প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের টিকে থাকতে হয়।

জোসি, এরিনা বললেন, তুমি চলে যাওয়ার পর ব্ৰিণ্ডল এসেছিল। আরেকটু হলেই হাতাহাতি বেধে যাচ্ছিল দুজনে।

কী নিয়ে? থিম পার্ক?

ঝগড়া তো করল ফাঁদ পাতা নিয়ে, তবে আমার মনে হয় থিম পার্কের পরিকল্পনাটাই আসল কারণ। তোমার চাচা যেহেতু পার্ক বানানোর বিপক্ষে, জানা কথা ব্ৰিণ্ডল যাবে পক্ষে, সব সময় উল্টো, এটাই তো হয়ে আসছে। ভোটটা শেষ হলে বাঁচি। এদিক ওদিক কিছু একটা হয়ে যাক। শহরটাকে দুই ভাগ করে ফেলেছে ওই থিম কোম্পানি। সবার ওপর সবাই খেপা। এমন তো কখনও হয়নি। এ কী গজব নেমে এলো!

কোন দল জিতছে? জানতে চাইল কিশোর।

মুখ বাঁকাল জোসি। বোঝা যাচ্ছে না। আগামী হপ্তায় ভোটাভুটি শেষ হওয়ার আগে বুঝতে পারবও না কিছু। কেউ মুখ খোলে না। কে যে কাকে সাপোর্ট করছে, বোঝা কঠিন।

লুক স্টার্লিঙের কথাই ধরা যাক। সে কাকে সাপোর্ট দিচ্ছে, কিছুতেই বুঝতে দেয় না, এরিনা বললেন। চালাক তোক তো। ওর দোকান থেকে মাল কেনা বন্ধ করে দেবে এই ভয়ে কাস্টোমারদের বুঝতে দেয় না কোন পক্ষ সমর্থন করে ও। সবার মন রক্ষা করে চলতে চায়।

অকারণ ভয়, জেফরি বললেন। লোকে ওর দোকান থেকে জিনিস কিনতে বাধ্য, কেউ ওকে পছন্দ করুক বা না করুক।

টেডের ব্যাপারটা কী? জিজ্ঞেস করল মুসা।

হাসল জোসি। টেডের এখন একটাই ভাবনা, ইডিটারোড রেসে আমাকে পরাজিত করা। এ ছাড়া ওর মগজে আর কোন চিন্তা খেলে না। ওর বাবা মিস্টার সিউল থিম পার্কের পক্ষে। শুনলাম, ব্ৰিণ্ডলও গিয়ে তার সঙ্গে খাতির জমিয়েছে।

সিউলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমি, জেফরি বললেন। চুপ করে থাকে, কোন জবাব দেয় না। মুশকিল। ওদের ধারণা, পার্ক হলে শহরের ক্ষতি না হয়ে বরং লাভ হবে, আয় বেড়ে যাবে লোকের।

জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল কিশোর। মাত্র কয়েক গজ দূরে মাথা তুলে রেখেছে কালোবন। জেফরি, জোসি, জোসির বাবা-সবার কেবিনই এই বনের মধ্যে। কেউ আগুন লাগাতে চাইলে বনের ভিতর দিয়ে এসে সহজেই কাজটা সেরে যেতে পারে। জেফরিকে কথাটা বলতে যাচ্ছিল কিশোর, কিন্তু তার আগেই জানালায় এসে পড়ল একটা ভারী জিনিস। ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল কাঁচ।

<

Super User