লাফ দিয়ে সরে গেল মুসা। কাঁচের টুকরো থেকে বাঁচাতে দুই হাত ঝটকা দিয়ে উঠে এল মুখের সামনে। কেবিনের মেঝেতে এসে পড়ল একটা মোটা আধপোড়া লাকড়ি। সময়মত মাথাটা সরিয়ে ফেলায় অল্পের জন্য লাগেনি মাথায়। জানালা দিয়ে ওকে সই করেই বোধহয় ছুঁড়ে মেরেছিল কেউ।

এক টানে হুক থেকে পার্কাটা খুলে নিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল মুসা। ছাড়বে না লোকটাকে।

কিন্তু বাইরে এসে মুনস্টোনকে ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়ল। জে নিয়ে আসছে মুন। বিশ গজ দূরে রয়েছে এখনও। তার পক্ষে এত তাড়াতাড়ি লাকড়ি ছুঁড়ে আবার স্নেজের কাছে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া সে ছুঁড়তেই বা যাবে কেন?

মুন চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা, এদিক দিয়ে কাউকে যেতে দেখেছ?

না! জবাব দিল মুন। কী হয়েছে?

কিশোরও বেরিয়ে এল। মুসাকে জিজ্ঞেস করল, লোকটাকে দেখেছ নাকি?

মাথা নাড়ল মুসা। না!

তারমানে পালিয়েছে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর।

কাছে এল মুন। ততক্ষণে জেফরি আর জোসিও বেরিয়ে এসেছে। জেফরির হাতে একটা লাকড়ি। লাঠির মত করে ধরেছেন।

ওদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল কিশোর। নেই। আমার মনে হয় বনের ভিতর দিয়ে পালিয়েছে।

সব শুনে মুখ কালো হয়ে গেল মুনের। জ্বলে উঠল চোখ। কী শুরু হলো আমাদের শহরটায়!

হাতের দিকে তাকালেন জেফরি। লাকড়ি দেখে অবাক হলেন। ওটা কীভাবে এসেছে তার হাতে, মনে করতে পারলেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই। কেবিনে চলো। ভাঙা জানালাটা বন্ধ করা দরকার। ঘরে ঠাণ্ডা ঢুকবে।

সারি দিয়ে ঘরে ঢুকল সবাই।

কালো রঙের একটা প্লাস্টিকের চাদর খুঁজে বের করল জোসি। কাঁচভাঙা জানালার ফোকরটা বন্ধ করতে ওকে সাহায্য করলেন জেফরি। ঝাড়ু দিয়ে কাচের টুকরোগুলো মেঝে থেকে সরিয়ে ফেললেন এরিনা। তারপর চা ঢাললেন। চা খাওয়ার জন্য সবাই এসে টেবিলে বসল।

জোসির দিকে তাকালেন এরিনা। তোমার ঘর তো শূন্য। কোনও খাবারই নেই। আমাদেরগুলোও পুড়ে ছাই। দোকানে যেতে হবে।

আমি লিস্ট বানাচ্ছি।

চামচ দিয়ে নেড়ে চা ঠাণ্ডা করছে কিশোর। বলল, আগুন লাগার কারণ এখনও জানি না আমরা। আপনাআপনি লেগেছে, না কেউ লাগিয়ে দিয়েছে জানি না। তবে কড়িটা আপনাআপনি উড়ে আসেনি। কেউ জানালা দিয়ে ছুঁড়ে মেরেছে। নীচের ঠোট কামড়াল। তারপর চামচটা রেখে মুখ তুলে তাকাল। কে?

সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না! ধরতে পারলে আজ…দাঁত কিড়মিড় করলেন জেফরি।

এ সব ঘটনা এখন ডালভাত হয়ে গেছে গ্লিটারে, মুন বলল। থিম পার্ক বানানো নিয়ে ঝগড়া করে শহরটাই ধ্বংস হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।

মুনের কথা সমর্থন করল জোসি। ইদানীং প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে যাচ্ছে শহরে। আগেও যে একেবারে ঘটত না তা নয়, তবে এখনকার মত এত বেশি না।

তারমানে তোমরাই একমাত্র লক্ষ্য নও? কিশোরের প্রশ্ন। কিশোরের দিকে তাকাল মুন। কিশোর, তোমাদের কথা সব আমাকে বলেছে জোসি। তোমরা গোয়েন্দা। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছ। আমাদের গ্লিটারের রহস্যটার সমাধান করতে পারবে?

কেন, পুলিশ কিছু করতে পারছে না?

দমকল বাহিনী যেমন নেই-আগুন লাগলে আমাদের নিজেদেরকেই আগুন নিভাতে হয়-দেখলেই তো, পুলিশও নেই আমাদের শহরে, কথাটা বলে আবার মুদির লিস্ট দেখায় মন দিলেন এরিনা।

পুলিশ না থাকলেও দরকার পড়লে স্টেট ট্রুপারদের ডাকতে পারি আমরা, মুন বলল। তবে কখনও ওদের ডাকার প্রয়োজন পড়েনি। এবার মনে হয় পড়বে।

হুঁ, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা আমরা করব।

এখানে, আলাস্কার এই দুর্গম অঞ্চলে জীবনযাত্রা মোটেও সহজ নয়, কিশোর, জোসি বলল। সব সময় কোন না কোন বিপদ লেগেই আছে। তোমাদের রকি বিচের মত নিরাপত্তা আর সুযোগ-সুবিধা পাবে

এখানে। কলের চাবিতে মোচড় দিলে সাপ্লাইয়ের পানি আসে না, হাসপাতাল নেই, একশো মাইলের মধ্যে একজন ডাক্তারও নেই।

সে-কারণে সাধারণ ছোটখাট দুর্ঘটনাকে আমরা তেমন কিছুই মনে করি না, এরিনা বললেন। সব কিছু নিয়ে ভাবতে গেলে টিকতে পারতাম না। অনেক কিছুই মনে রাখি না আমরা। কিন্তু কেউ আমাদের কেবিনে আগুন দিলে, সেটা আমরা ভুলতে পারি না।

আপনাদের বিরুদ্ধে কার এমন আক্রোশ থাকতে পারে? জিজ্ঞেস করল মুসা।

ব্ৰিণ্ডল জ্যাক, একসঙ্গে বলে উঠলেন এরিনা ও মুন। এরিনা বললেন, শিকারের ওই জায়গাটা নিয়ে দশ বছর হলো জেফরির সঙ্গে ঝগড়া। এখনও মিটমাট হলো না।

অস্বস্তি বোধ করছেন জেফরি। জ্যাক বদমেজাজী, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ঘরে আগুন দেয়ার মত এতবড় একটা অন্যায় কাজ সে করবে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু আমি ভাবছি আরেকজনের কথা। ইডিটারোড রেসে জিততে পারলে ভাল টাকা পাওয়া যায়। এ সময় আমাদের ঝামেলায় ফেলে দিতে পারলে রেসে মনোযোগ দিতে পারবে না জোসি।

তাই বাধা দিয়ে আমাকে রেসে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে চাইছে, এই তো বলতে চাও? ভুরু নাচাল জোসি। তুমি কি টেডকে সন্দেহ করছ, চাচা? ঝামেলা পাকিয়ে আমাকে যদি ঠেকাতে চায়, লাভ হবে না, আমি ওকে ছাড়ব না…।

জেফরির দিকে ফিরল কিশোর। আঙ্কেল, থিম পার্ক বানানোয় আপনি বিরোধিতা করছেন। আপনি দলের নেতা। এ নিয়ে আপনার সঙ্গে শত্রুতা করছে না তো বিপক্ষের কেউ?

জানি না। তবে ইলকিস বিগস মরিয়া। ওর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। তবে তাই বলে কারও ঘরে আগুন দেয়ার মত খারাপ লোক না ও।

ভাবছি, আমি আর কিশোর গিয়ে একটু ঘোরাঘুরি করে খোজখবর নিয়ে আসব কি না, মুসা বলল। আমরা এখানকার বাসিন্দা নই। লোকে আমাদের সঙ্গে মন খুলেই কথা বলবে।

তা ঠিক, হাসল জোসি। দুজন চিকাকোকে সন্দেহ করবে না লোকে।

কিশোর জিজ্ঞেস করল, নতুন কেউ এলে তাকে চিকাকো বলে নাকি?

জোসি বলল, হ্যাঁ। এক শীত কাটানোর পর চিকাকোর বদলে তোমরা হয়ে যাবে সাওয়ার-ডো, অর্থাৎ টক হয়ে যাওয়া ময়দার তাল। শব্দটা চালু করেছিল পুরানো আমলের স্বর্ণসন্ধানীরা। রুটি বানাতে ময়দার সঙ্গে ঈস্টের বদলে সাওয়ার-ডো ব্যবহার করত ওরা…

রুটি, রুটি! মনে করিয়ে দিয়ে ভাল করেছ, এরিনা বললেন। ময়দা দরকার। আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস। মুসা, যদি জেনারেল স্টোরের দিকে যাও তোমরা, জিনিসগুলো নিয়ে এসো। পারবে?

পারব,মুসা বলল।

এই যে লিস্ট।

ভালই হলো, কিশোর বলল। জিনিস কেনার ছুতোয় সহজেই স্টোরের মালিকের সঙ্গে কথা বলতে পারব।

কেবিন থেকে বেরিয়ে হেঁটে চলল দুজনে। কিছুদূর যেতে সামনে পড়ল গোল্ড ফেরানি। মাথায় এখন লাল ঘেঁড়া টুপি। গায়ে একটা সবুজ পার্কা।

থাকতে এসেছ নাকি এখানে? রুক্ষ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল বুড়ো।

না, রেস দেখতে এসেছি, মুসা বলল। ইডিটারোডের ডগ রেস।

বাঁকা চোখে ওদের দিকে তাকাল গোল্ড। নাকি সোনা খুঁজতে?

না, সোনা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের আগ্রহ ডগ রেসে।

সত্যি কথা বলল।

সত্যি কথাই বলছি।

ভাল। শোনো ইডিটারোডের সব খবর আমার জানা। টেড আর জোসি রেসে অংশ নিতে যাচ্ছে, তা-ও জানি। এটা গ্লিটারের জন্য একটা বড় খবর। তারচেয়েও বড় খবর আছে এখানে, যার দেখার চোখ আছে সে ঠিকই দেখতে পাবে।

কী খবর? কিশোরের প্রশ্ন।

নাকের একপাশে টোকা দিল গোল্ড। তা বলব না। গোপন ব্যাপার। চলি। কয়েক পা গিয়ে ফিরে তাকাল লোকটা। সোনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাতে যেয়ো না, তাহলে বিপদে পড়বে।

কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। ও কী বলল, কিছুই তো বুঝলাম। সোনার খনিটনি পাওয়া গেছে নাকি এখানে? যেটা এখনও গোপন রয়েছে?

কী জানি! চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল। তবে আমার মনে হয় না। এখানে কোন কথা গোপন থাকে না। সোনার খনির মত এতবড় একটা খবর… সময় হলেই জানা যাবে। চলল।

শহরের ভিতর দিয়ে হাঁটার সময় চারপাশে নজর রেখে চলল মুসা। অনেক কিছুই দেখার আছে। একটা কেবিনের ছোট্ট জানালার কাছে বসে আছে দুটো ছোট ছেলে। মার্বেলের মত গোল কালো চোখ। খানিক দূর গিয়ে একজন বুড়ো মানুষের সঙ্গে দেখা। চেহারায় বয়েসের ভঁজ। পিঠে বাঁধা লাকড়ি, বোঝার ভারে কুঁজো। আরেকটা কেবিনের পাশ কাটানোর সময় ঘরের দরজায় বসা দুটো হাস্কি কুকুর লাফ দিয়ে উঠে দুজনের দিকে দাঁত খিচানো শুরু করল।

জেনারেল স্টোরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মুসা বলল, অকারণে থিম পার্ক করতে চাইছে না ওরা। টুরিস্ট এখানে সত্যি আসবে। দেখার অনেক কিছু আছে।

স্টোরের সামনে এসে দাঁড়াল দুজনে। ঠেলা দিয়ে দরজার পাল্লা খুলল। ওপরে লাগানো একটা ঘণ্টা টুং-টাং করে বেজে উঠল। ঘরে ঢোকার পর পাল্লা লাগানোর সময় আবার বাজল ঘণ্টা।

জেনারেল স্টোরের চেহারাটা মুসার অনুমানের সঙ্গে মিলল না। এত কিছু দেখবে আশা করেনি। ঘরের মাঝখানে পেটমোটা বিরাট একটা কালো রঙের লোহার স্টোভ বসানো। সামনে রাখা দুটো পুরানো কাঠের চেয়ার। দেয়ালের অসংখ্য তাক জিনিসপত্রে বোঝাই। টিনের খাবার থেকে শুরু করে ঘড়ি, হাতুড়ি, হারিকেন, সব আছে। কাপড়ের বস্তায় ভরা ময়দা, চাল আর পোষা জানোয়ারের খাবার ঘরের কোণে স্থূপ করে রাখা। কাঠের একটা কেবিনেট আছে, তাতে ভর্তি উলের শার্ট, প্যান্ট, দস্তানা, মোজা আর লাল রঙের প্লেইড ক্যাপ। ঘরের পিছনে বুনো জানোয়ারের রোমশ চামড়ার স্থূপ। শিকারিদের কাছ থেকে কেনা।

কাউন্টারের ওপাশ থেকে বেরিয়ে এলেন যিনি, একেবারে খাপে খাপে মানিয়ে গেছেন এই পরিবেশের সঙ্গে। বয়েস পঞ্চাশ। হাড্ডিসর্বস্ব লম্বা শরীর। মস্ত টাক। শার্ট আর টাইয়ের ওপরে নীল-সাদা ডোরাকাটা অ্যাপ্রন।

জোসেফ টিনুকের বন্ধু তোমরা, দোকানী বললেন, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে এসেছ। আমি লুক স্টার্লিং। আমাকে মিস্টার স্টার্লিং ডেকে জিভে ব্যথা করার দরকার নেই। শুধু লুক বলবে।

এখানে কি কেউ মিস্টার শব্দটা সহ্য করতে পারে না নাকি? প্রশ্ন না করে পারল না মুসা।

না, পারে না। এই বুনো প্রকৃতির মধ্যে ওই শব্দটা খুব বেমানান, রীতিমত কানে পীড়া দেয়। তো, কী কী জিনিস দরকার?

এরিনার দেয়া লিস্টটা বের করে দেখাল কিশোর।

নিজেরাই তুলে নাও, লুক বললেন।

মুসাকে ইশারা করল কিশোর। লিস্ট মিলিয়ে তাক থেকে জিনিসগুলো তুলে নিতে লাগল মুসা।

সাংঘাতিক কাণ্ড, বুঝলে, ওই আগুন লাগার কথা বলছি, ওপরের তাকে রাখা কিছু টিনের খাবার নামিয়ে আনার জন্য একটা মই বেয়ে উঠে গেলেন লুক। সে-কারণেই বলি, নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকা দরকার। এমনই দরিদ্র অবস্থা শহরটার, ছোটখাট একটা দমকলবাহিনী পোরও সামর্থ্য নেই। তবে, থিম কোম্পানি যদি আসে…

আপনি কি ওদের আসা চান, মিস্টার স্টার্লিং? মুসা জিজ্ঞেস করল।

বলেছি না মিস্টার বলার দরকার নেই। শুধু লুক। হ্যাঁ, তোমার প্রশ্নের জবাব হলো, আমি নিরপেক্ষ। আমি হলাম দোকানদার। আমার জন্য সব সমান। পক্ষপাতিত্ব করে কাস্টোমারদের বিরাগভাজন হতে চাই না। দলাদলিটা ওরাই করুক। শহরবাসী যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই আমি নির্দ্বিধায় মেনে নেব। তবে ইলকিস বিগৃসের কথায়ও যুক্তি আছে, অস্বীকার করতে পারব না। ওর কোম্পানি আলাস্কার বহু জায়গাতেই এ ধরনের টুরিস্ট স্পট বানিয়েছে। লোকে কী চায় ওরা জানে…

দরজার ঘণ্টা বাজল। থেমে গেলেন তিনি। ঘরে ঢুকল একটা লোক, এখানকার রোদ আর বরফের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে, দেখেই বোঝা যায়। গায়ে পুরানো মলিন পার্কা। কাউন্টারে রাখা বড় একটা বয়েম দেখিয়ে পঁচিশ সেন্ট দামের ক্যাণ্ডি চাইল।

ক্যাণ্ডি বের করে দিলেন লুক। লোকটার হাত থেকে পাঁচ সেন্টের পাঁচটা মুদ্রা নিয়ে ঝনাৎ করে ড্রয়ারে ফেললেন। লোকটা বেরিয়ে গেলে বললেন, ওর নাম জো সারটন। চার ছেলেমেয়ের বাপ। ওদের মুখে খাবার যোগাতে হয়। কাপড়ের অবস্থা দেখেই তো বুঝলে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। থিম পার্ক হলে ভাল চাকরি পাবে। টাকা আসবে। অবস্থা ফিরে যাবে।

তারমানে থিম পার্কের পক্ষে ভোট দিচ্ছে ও? কিশোর বলল।

অন্যদিকে চোখ ফেরালেন লুক। উঁহু। জো স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে হ্যাঁ ভোটের মধ্যে সে নেই। কিন্তু ভাল থাকতে চাইলে ওর হ্যাঁ ভোটই দেয়া উচিত।

এরিনার লিস্টের সমস্ত জিনিসপত্র দুটো কার্ডবোর্ডের বাক্সে প্যাকেট করে দিলেন লুক। একটা কাচের বাক্স ভর্তি অ্যাথাবাস্কান হস্তশিল্পের দিকে মুগ্ধ চোখে কিশোরকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন, অনেক দামি ওগুলো। নেবে?

মেরিচাচীর জন্য একটা শো-পিস নেয়ার কথা ভাবছে কিশোর। হাসল। এখন না। পরে। জিনিসগুলো খুব সুন্দর।

ক্যালকুলেটর বের করে জিনিসের দাম হিসেব করলেন লুক। বিল বানালেন। টিনুকদের বাকির খাতায় লিখে রাখব। তোমরা এসো আবার। বাড়ি ফেরার আগে এসো। সস্তায় ভাল কী দেয়া যায়, চিন্তা করে দেখব।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, লুক, কিশোর বলল।

দুটো বাক্স নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এল মুসার পিছন পিছন।

বাইরে আসতেই বিগসের সঙ্গে দেখা। বলল, এমন কোনও জিনিস নেই যা লুকের দোকানে পাবে না। সব ধরনের খবরাখবর আর মন্তব্যও পাবে, বিনে পয়সায়। সম্ভব হলে এর জন্যও পয়সা নিত। মুখে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, কিন্তু ভীষণ লোভী। থিম পার্কের কথা কিছু বলল নাকি? পক্ষে না বিপক্ষে?

পক্ষে-বিপক্ষে বোঝা গেল না, মুসা জানাল। তবে থিম পার্ক হলে শহরের গরিব মানুষদের দুঃখ ঘুচবে, এ কথাটা জোর দিয়েই। বললেন।

বিগ বলল, আমাদের নিজেদের স্বার্থ তো আছেই। তবে সত্যি সত্যি আমরা গিটারের মানুষকে সাহায্য করতে চাই। বাইরের সাহায্য ওদের প্রয়োজন।

কিন্তু আপনার কোম্পানি থিম পার্ক বানাতে গেলে তো অনেক কিছু বদলাবে, তাতে জায়গাটার মৌলিকত্ব নষ্ট হবে, কিশোর বলল।

হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে উন্নতি যে হবে, এটাও তো ঠিক। যে কোনও পরিবর্তনের কথা শুনলেই ভয় পায় লোকে, নতুন কিছুকে গ্রহণ করতে শঙ্কিত হয়। আমার কাজ হলো ওদের বুঝিয়েশুনিয়ে ভুল ভাঙাননা, থিম পার্কের পক্ষে ভোট দিতে রাজি করানো; বোঝননা, এখানে থিম পার্ক হওয়াটা ওদের জন্য কতটা জরুরি।

কিন্তু কী করে বোঝাবেন?

কেন, ভাল ভাল কথা বলব। ওদের উন্নতির কথা শোেনাব, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাব। আচ্ছা, এখন যাই। সময় নেই, পরে কথা বলব। হোম অফিসের সঙ্গে কথা বলা দরকার। টেলিফোন-টেলিগ্রাফ কিছুই তো নেই গ্লিটারে, লুকের টু-ওয়ে রেডিওটাই একমাত্র ভরসা। আমাদের থিম পার্ক হলে টেলিফোন সুবিধা পাবে এখানকার মানুষ। আদিমতা বর্জন করলে আমরা আধুনিকতার সুযোগ-সুবিধা পৌছে দেব ওদের কাছে।

দোকানে ঢুকে গেল বিগস্।

হাঁটতে লাগল কিশোর ও মুসা। কিছুদূর এগোতেই চিৎকার শুনে পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল দুজনে। নদীর ধারে লম্বা একটা নৌকার কাছে। বসে বরফ চাপড়ে বিলাপ করতে দেখল জো সারটনকে।

<

Super User