শান্ত রইল কিশোর। আপনি কি ডেপুটি গ্যারেট?

হ্যাঁ, বলেই গর্জে উঠল শেরিফ, অনেক জ্বালাতন হয়েছে! মরা মানুষের ধাঁধা, যত্তসব! তোমাদেরকে অ্যারেস্ট করলাম।

কিন্তু, প্রতিবাদ জানাল রবিন, আমরা…

শান্তকণ্ঠে কিশোর বলল, ভাল করে খেয়াল করে দেখুন, ডেপুটি, পাতাগুলো কেমন শুকিয়ে আছে। আমরা আসার অনেক আগে ভাঙা হয়েছে এসব ডাল, সম্ভবত গতকাল। আমরা এইমাত্র এসেছি।

তোমরা, ডেপুটির কণ্ঠে সন্দেহ। কারমলের গুপ্তধনের জন্যে না এলে কিসের জন্যে এসেছ?

আমরা খুঁজতেই এসেছি…।

বলেছিলাম না! চেঁচিয়ে উঠল ডেপুটি। ঠিকই আন্দাজ করেছি আমি।

কিন্তু, দৃঢ়কণ্ঠে বলল কিশোর। এই পুকুর আর গাছপালার সঙ্গে গুপ্তধনের সম্পর্ক নেই। ভুল করে এগুলো নষ্ট করে দিয়ে গেছে লোকেরা। আমরা ওদের দলের কেউ নই। মিসেস কারমল আমাদের ভাড়া করেছেন তাঁদের জিনিস খুঁজে দিতে।

ভাড়া? সন্দেহ যায়নি শেরিফের।

আমরা গোয়েন্দা, জানাল মুসা।

চীফ ইয়ান ফ্লেচারের দেয়া সার্টিফিকেট বের করে দেখাল কিশোর। ইচ্ছে করলে ফোন করে তাঁর কাছ থেকে আমাদের কথা জেনে নিতে পারেন। মিসেস কারমলকেও ফোন করতে পারেন।

শাগ করল ডেপুটি। চীফের সই বলেই মনে হচ্ছে। তাহলে তোমরা তিন গোয়েন্দা? মাথা চুলাকাল সে। তোমাদের বিশ্বাস কারমল সত্যিই কিছু

লুকিয়েছে? ফালতু রসিকতা নয়?

না। আর আমরা আপনার সাহায্য চাই।

আমার সাহায্য? বলে কি! আমি কি সাহায্য করব?

বিলাবংটা কোথায় আমাদের বলবেন,মুসা বলল।

হাঁ হয়ে গেল ডেপুটি। বিলাবং! সেটা আবার কি জিনিস?

ডোবা, কিংবা ঝর্না, বলল কিশোর। কোন ধরনের জলাশয়। যেটাতে আপনি আর কারমল মাছ ধরতেন। পার্কে আছে ওরকম জায়গা?

আছে। পুরানো একটা দীঘি। আগে পর্বতের ওদিক থেকে পানি আনতে হত আমাদের। পরে ওয়াইনেজ ক্রিকে বাঁধ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন আর পানির জন্যে ওখানেও যাওয়ার দরকার পড়ে না। মাঝে মাঝে মাছ ধরতে যায় লোকে, বিশেষ পাওয়া যায় না। বসন্তে ছাড়া অন্য সময় পানি খুব কম থাকে। পুরানো সব ফিডার ক্রিকগুলোকে সিমেন্টে বাঁধ দিয়ে মুখ আটকে দেয়া হয়েছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে ওই মেইন ক্রিকটা বাদে। ওখানে একটা পুরানো হাউসবোট আছে, তাতে উঠেই ছিপ ফেলতাম আমরা।

কোনদিক যেতে হবে, বলবেন স্যার? অনুরোধ করল রবিন।

সহজ। ওই যে পথটা, ওটার পাশেই পড়বে। পার্কের মেইন বাস স্টপের কাছে গিয়ে নিচে তাকালেই দেখতে পাবে।

ডেপুটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাইকেলের দিকে দৌড় দিল তিন গোয়েন্দা। দ্রুত পেডাল ঘুরিয়ে চলল। খানিক পরেই দেখতে পেল বাধটা, ওদের ওপরে, ডান দিকে। বিশ ফুট চওড়া পানির ধারা বয়ে চলেছে সগর্জনে। উঠেই চলল ছেলেরা, বাঁধের পাশাপাশি এসে থামল। এখান থেকে একটা কাঁচা রাস্তা চলে গেছে ওয়াইনেজ ক্রিকে। মূল সড়কটা দীঘির পাশ দিয়ে গিয়ে পাক খেয়ে উঠে গেছে পর্বতের ওপরে।

কাঁচা রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোতেই নজরে এল হাউসবোট। ধাড়ির পাড়ে বঁধা। ওখানে বাঁধের জলধারা তিরিশ ফুট চওড়া। তীব্র গতিতে ছুটছে বোটের পাশ দিয়ে।

যাক, সাইকেল কাত করে রাখতে রাখতে বলল রবিন, বটল অ্যাণ্ড স্টপার অবশেষে বিলাবং দেখাল আমাদের।

এখন অ্যাবাভ দ্য অ্যাপলস অ্যাণ্ড পেয়ারস অল অ্যালন খোঁজা দরকার, বলল মুসা। সিঁড়ি। আমার মনে হয় ওটাই।

খাড়া একটা কাঠের সিঁড়ি, বরং মই বলা ভাল, বোটের মেইন ডেক থেকে উঠে গেছে কেবিনের চ্যাপ্টা ছাতে। ছুটল মুসা। একটা তক্তা ফেলে বোটে ওঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওটা বেয়ে গিয়ে বোটে উঠল সে। তারপর সিঁড়িতে। রেলিঙে, ঘেরা ছাত। পুরানো কাঠের বাক্স, মাছের খাবারের টিন, আর আরও নানারকম জঞ্জাল পড়ে রয়েছে।

লেডি ফ্রম ব্রিস্টল খোঁজ, কিশোর বলল।

খুঁজতে শুরু করল ওরা। বাক্স উল্টে, মাছের টিন ঝাড়া দিয়ে, জঞ্জাল সরিয়ে,  যত রকমে খোঁজা সম্ভব কিছুই বাদ দিল না। কিন্তু কিছু পাওয়া গেল না। এমনকি আলগা কয়েকটা তক্তা সরিয়ে তার তলায়ও উঁকি দিল কিশোর।

নাহে, নিরাশ হয়ে মাথা নাড়ল মুসা, ব্রিস্টলের সঙ্গে রাইম মেলাতে পারছি না।  কিন্তু এখানেই থাকার কথা, জোর দিয়ে বলল কিশোর। আমি শিওর, ঠিক পথেই এগোচ্ছি। গ্যারেট একজন পুলিশম্যান, কারমলকে চিনত। গ্যারেটই এই বিলাবঙের খোঁজ দিয়েছে আমাদের। ভুল হতে পারে না।

তীরে দাঁড়িয়ে কিছু দেখার কথা বলেনি তো কারমল? রবিন প্রশ্ন তুলল।

রেলিঙের ছাতে দাঁড়িয়েই চারপাশে তাকাল ওরা। খাঁড়ির দুতীরেই বন। দূরে উঠে গেছে পর্বতের ঢাল। শুকনো, সিমেন্টে তৈরি একটা নালা ঢাল বেয়ে নেমে এসেছে। ব্রিস্টলের সঙ্গে ছন্দে মেলে, এরকম কিছু চোখে পড়ল না।

আচ্ছা, হুইসল না তো? বলে বোটের সামনের হুইলহাউসের ছাতে বসানো হোট একটা এয়ার-হর্ন দেখাল কিশোর।

হুইসল অবশ্য বলা যায়, ধীরে ধীরে বলল মুসা। তরে আসলে ওটা হর্ন। তাছাড়া ব্রিস্টল আর হুইসলের মধ্যে ঠিক ছন্দে মিলছে না। কোনদিকে নির্দেশ করছে ওটা, কিশোর?

ওপরে, রবিন বলল। আকাশের দিকে।

ঠিকই বলেছ, মুসা, একমত হল কিশোর। আসলে আমরা যা খুঁজছি সেটা ব্রিস্টলের সঙ্গে পুরোপুরি মিলতে হবে। আর এমন কিছুকে নির্দেশ করবে, যা থেকে বেরিয়ে আসবে রাইডস ফ্রম আ ফ্রেন্ড-এর সমাধানের সুর। হয়ত ভুল করেছি আমরা, ভূল জায়গায়…

সবাই শুনতে পেল শব্দটা। নিচে কোনখান থেকে এসেছে, ভারি একটা তক্তা মাটিতে পড়েছে বোধহয়।

রেলিঙের ধারে ছুটে গেল ছেলেরা। তীরে দাঁড়িয়ে আছে শুঁটকি টেরি। ওদের দেখে দাঁত বের করে হাসল।

আবার দেখা হয়ে গেল, একেবারে ঠিক সময়ে, বলে খিকখিক করে উঠল সে। সব শুনেছি, সিঁড়িটা কোথায় তা-ও জানি। ধাঁধার সমাধান এবার করেই ফেলব। হাসি। এই সুযোগে কিছুক্ষণ বেড়িয়ে আস তোমরা।

কিশোর! চিৎকার করে বলল রবিন। হাউসবোটটা খুলে দিয়েছে।

মাটিতে পড়ে আছে তক্তা, যেটা বেয়ে উঠেছে ওরা। যে দড়ি দিয়ে বোটটা বেঁধে রাখা হয়েছিল, ওটা খোলা, পানিতে পড়েছে। দুমদাম করে সিঁড়ি বেয়ে মেইন ডেকে এল ছেলেরা। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই তীর থেকে দশ বারো ফুট সরে চলে এসেছে বোট, গা ভাসিয়ে দিয়েছে স্রোতে।

মুঠো পাকিয়ে দেখাল মুসা। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, শুঁটকি, ধরতে পারলে…

যাও, বেড়িয়ে এস খোকাবাবুরা, চেঁচিয়ে বলল টেরিয়ার। ঘন্টাদুয়েকের মধ্যে তীরে উঠে আসতে পারবে। খুব সন্তুষ্ট দেখাচ্ছে তাকে। ঘুরে দৌড় দিল কাঁচা রাস্তার দিকে।

দাঁড়াও, ধরে নিই আগে! শাসিয়ে বলল মুসা। ঘাড় মটকে না দিয়েছি তো আমার নাম মুসা আমান নয়…।

সব্বেনাশ! আঁতকে উঠল রবিন। বাঁধ!

মুসা আর কিশোরও ফিরে তাকাল। ভেসে যাচ্ছে বোট, গতি বাড়ছে দ্রুত। বাড়ছে পানির গর্জন। বাঁধের ওপর দিয়ে গিয়ে জলপ্রপাতের মত নিচে আছড়ে পড়ছে বিশাল এই জলরাশি।

<

Super User