জারভিস আগে আগে চলেছে, পেপি রয়েছে তার পাশে। জুলিয়াস অনুসরণ করছে ওদের। তার পিছন পিছন আরও যেন কে আসছে, কিন্তু ফিরে দেখার প্রবৃত্তি হলো না জুলিয়াসের। বৈঠকখানা আর রান্নাঘর পার হয়ে পশ্চিমের বারান্দা ধরে এগিয়ে গেল ওরা। তার নিজের ঘরটার পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখল দরজাটা বন্ধ। সম্ভবত ঘরটা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে না। উল্টো দিকে মেহমানের আর তার পাশেই পরপর পেপি আর জারভিসের ঘর। বাবার ঘরটা বারান্দার একেবারে শেষ মাথায়।

শোবার ঘরের তুলনায় ঘরটা বেশ বড়। বিছানা ছাড়াও ঘরে একটা বড় টেবিল, বইয়ের শেলফ আর কয়েকটা আরামদায়ক ভারি চেয়ার পাতা রয়েছে। জানালার পর্দা সব ক’টাই টানা, ভিতরটা তাই বেশ অন্ধকার। বিরাট ডবল বিছানায় বাবা শুয়ে আছেন। তার দেহের কাঠামোটা অন্ধকারেও আবছা দেখা যাচ্ছে। বিছানার পাশেই ছোট একটা টেবিলে এক জগ পানি, একটা গ্লাস, বোতলে কিছু ওষুধ আর কয়েকটা বই রাখা রয়েছে।

জারভিস আর পেপিই প্রথম এগিয়ে গেল। নিচু গলায় জারভিস ফিসফিস করে বলল, ও এসেছে, বাবা, মনে রেখো ডাক্তার কি বলেছে!

ওকে এখানে আসতে বলল, বললেন সেবাস্টিন দত্ত।

তার গলাটা ভীষণ দুর্বল আর কাঁপা শোনাল। গলার স্বরটা স্বাভাবিক মনে হলো না। এগিয়ে গেল জুলিয়াস। জারভিস আর পেপি একটু সরে জায়গা করে দিল ওকে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না জুলিয়াস। সে আশাই করতে পারেনি বাবা এতখানি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন। একেবারে রোগা আর। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে মুখটা, চোখ দুটো কোটরে ঢুকে গেছে। চেনাই যায় না!

বাবা, তুমি যে এরকম অসুস্থ কিছুই জানতাম না আমি, জানলে…

জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিলেন সেবাস্টিন দত্ত। বেরিয়ে যাও!

বিস্ফারিত চোখে চেয়ে আছে জুলিয়াস। শব্দ দু’টোর অর্থ বুঝেও বুঝতে পারছে না সে। এ হতে পারে না! বাবা কিছুতেই তাকে ও কথা বলতে পারেন না! কিন্তু তাই তো বললেন! তাদের সম্পর্ক তো এমন ছিল না? হঠাৎ কি করে কি ঘটল?

বাবা…, কিছু একটা বলতে শুরু করেছিল জুলিয়াস।

আবার তাকে বাধা দিলেন সেবাস্টিন দত্ত। এবার তার গলা আগের চেয়ে কিছুটা জোরাল শোনাল। বেরিয়ে যাও! তোমার মুখ আর দেখতে চাই না, আমি। আমার ছেলে না তুমি। বেরিয়ে যাও!

কিন্তু কেন, বাবা?

অসহায়ভাবে জারভিসের দিকে চাইলেন সেবাস্টিন দত্ত। যেন তার কাছেই আপীল করছেন। ওকে বের করে দাও। তোমার তো নিজের লোকজন আছে, ওকে আমার চোখের সামনে থেকে দূর করো। সবাইকে বলে দিয়ো ও আমার ছেলে না। বোলো আমার বড় ছেলে মরে গেছে।

নিশ্চল পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল, জুলিয়াস। একটা কথাও বলল না, মুখ দিয়ে কথা সরছে না তার। কিছুই বুঝতে পারছে না সে, অথচ ঠিকই শুনেছে, ওই কথাগুলোই উচ্চারণ করেছেন সেবাস্টিন দত্ত…তার বাবা!

জুলিয়াসের হাত ধরল জারভিস। পিছন থেকে মেডক এসে দাঁড়াল তার অন্যপাশে। বলল, চলো, নিজের কানেই তো শুনলে।

হ্যাঁ, শুনেছি, আড়ষ্ট ভাবে জবাব দিল সে।

আড়চোখে জারভিসের দিকে চাইল জুলিয়াস। ছেলেটার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে বিজয় উল্লাস। এখন থেকে সে-ই সেবাস্টিন দত্তের একমাত্র পুত্র। জুলিয়াস আর তার সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে আসবে না।

চলো, তাড়া দিল মেডক।

মাথা ঝাঁকিয়ে পেপির দিকে চাইল সে। অদ্ভুত একটা ভাব ফুটে উঠেছে ওর মুখে। চমকে গেছে মেয়েটা, ভিতরে ভিতরে ভয়ও পেয়েছে-হয়তো বাবার জন্যেও চিন্তিত সে। জুলিয়াসের দিক থেকে বাবার দিকে মুখ ফেরাল পেপি। ওরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে রওনা হতেই বাবার বিছানার ওপর ঝুঁকে পড়ে নিচু স্বরে কি যেন বলল, শুনতে পেল না জুলিয়াস।

বসার ঘরে ফিরে এল ওরা। এখনও বিহ্বল বোধ করছে জুলিয়াস। মাথাটা ঠিক কাজ করছে না ওর। সব কিছুই নিরর্থক আর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

তুমি তো এখন এখান থেকে চলে যাচ্ছ, তাই না? প্রশ্ন করল মেডক।

জুলিয়াস কোন জবাব দেয়ার আগেই জারভিস বলে উঠল, ওকে অবশ্যই যেতে হবে-এখানে আর জায়গা নেই ওর।

নড়ে উঠল জুলিয়াস। হ্যাঁ, চলেই যাব আমি। তবে বাবা যে কেন আমার ওপর রাগ করেছেন কিছুই বুঝতে পারলাম না। তার শরীর এত অসুস্থ না থাকলে ব্যাপারটা আলাপ করে দেখা যেত।

তাতে কোন লাভ হত না, মেডক বলল। তুমি যেদিন ঘর ছেড়ে গেছ সেদিনই সেবাস্টিন আমাকে বলেছিল তার সঙ্গে তোমার সব সম্পর্ক শেষ।

ডাহা মিথ্যে কথা বলছে লোকটা, জানে জুলিয়াস, কিন্তু ওর সাথে তর্ক করে মিছে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তুমিই তাহলে র‍্যাঞ্চ চালাচ্ছে, মেডক? অনুমানে ঢিল ছুঁড়ল জুলিয়াস।

না, আমি চালাচ্ছি, তাড়াতাড়ি বলে উঠল জারভিস। বাবা অসুস্থ হবার পর থেকেই র‍্যাঞ্চ চালাচ্ছি আমি, মেডক আমার ডান হাত।

একে একে ওদের দু’জনকেই ভাল করে দেখল জুলিয়াস। নিজের দাবি তাড়াতাড়ি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে জারভিস। মেডকও কোন আপত্তি করল না এতে। জারভিসের নেতৃত্ব দেয়ার কোন ক্ষমতা নেই, মেডকই যে র‍্যাঞ্চ চালাচ্ছে বুঝে নিতে কষ্ট হলো না জুলিয়াসের। এ কি ধরনের খেলা খেলছে মেডক? এতে ওর কি লাভ? একটু খটকা লাগলেও কাঁধ ঝাঁকিয়ে প্রশ্নটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিল সে। তার বাবাই যখন তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন তখন এসব নিয়ে মিছে ভেবে কি লাভ?

কোথায় যাবে বলে ঠিক করেছ? প্রশ্ন করল মেডক।

ঠিক নেই, জবাব দিল সে, কি করব এখনও কিছু ঠিক করিনি।

সবার সামনে একটু অপদস্থ করার জন্যে জারভিস বলে উঠল, কিছু টাকা পয়সা লাগবে তোমার?

না, দরকার নেই, জবাব দিল জুলিয়াস।

দরজা খুলে উঠানে বেরিয়ে এল সে। রাস্তার টেবিলে যারা ছিল তাদেরই দেখতে পেল বাইরে। এতক্ষণে সবার কাজে বেরিয়ে যাবার কথা-নাকি কাজই করছে ওরা? জুলিয়াস যাওয়া পর্যন্ত উঠান পাহারা দিচ্ছে কারও নির্দেশে?

দু’জন রয়েছে আস্তাবলের কাছে, একজন এড, অন্যজন ব্রায়েন। একমাত্র ব্রায়েনকেই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। একটা ঘোড়া বাগে আনার চেষ্টা করছে সে।

এডের মুখে একটা প্রচ্ছন্ন কৌতুকের হাসি লেগে রয়েছে। তাহলে শেষ পর্যন্ত চলে যাচ্ছ? খুব খারাপ কথা।

দিন আরও আসবে, বলল জুলিয়াস।

তার মানে?

বুঝে নাও।

পার্ক ছেড়ে চলে যাচ্ছ?

পার্ক ছাড়তে যাব কেন?

ছাড়লে আয়ু বাড়বে তোমার।

কাষ্ঠ হাসি হাসল জুলিয়াস। তাহলে আমার শঙ্কিত হওয়া উচিত?

কেন, টের পাও না?

না, আপাতত সবই উল্টোপাল্টা লাগছে, শান্তভাবেই বলল জুলিয়াস। ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখব-হয়তো একটা সমাধান পেয়েও যেতে পারি।

একটা ঘোড়ার গলায় রশি পরিয়ে বের করে এনেছে ব্রায়েন। জিন চড়াতে গিয়ে পিছলে পড়ে গেল। ব্যথা পায়নি, তবু উঠে বসে গালাগালি আরম্ভ করল ও। ওর গালির স্টক শুনে না হেসে পারল না এড। জুলিয়াসও হেসে ওর দিকে এগিয়ে জিনটা তুলে ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দিল।

আমাকেও উঠতে একটু সাহায্য করো, বলল ব্রায়েন। বুড়ো হয়েছি বলে এখন আর কেউ খেয়ালও করে না।

দূর, তোমার আর এমন কি বয়স হয়েছে?

নিচু হয়ে হাত বাড়িয়ে ব্রায়েনকে টেনে তুলল জুলিয়াস। ওঠার সময়ে সে ফিসফিস করে জুলিয়াসের কানেকানে বলল, শহরে দেখা করো আমার সাথে কথা শেষ করেই ঝাড়া দিয়ে ওর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে আবার ঘোড়াটাকে গালাগালি করতে থাকল ব্রায়েন।

ওর বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। একটু নুয়ে পড়ছে শরীরটা, চামড়া কুঁচকানোর দাগ স্পষ্ট দেখা যায়। অনেকদিন আগেই তার অবসর নেয়া উচিত, ছিল, কিন্তু তাতে সে কোনমতেই রাজি নয়। সে বলে, সারাটা জীবন আমার ঘোড়ার পিঠেই কেটেছে, বাকি যে কটা দিন বাচি ঘোড়ার পিঠেই কাটাতে চাই আমি। আসলেও সে তাই চায়।

বাঁধন খুলে নিজের ঘোড়ায় চড়ে পিছন ফিরে চাইল জুলিয়াস। জারভিস, পেপি আর মেডক বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। সবাই ওরা চেয়ে দেখছে তাকে। হয়তো গোপনে তার ঘর থেকে বাবাও চেয়ে দেখছেন। বুকের ভিতরটা কেমন খালি খালি লাগছে, একটা হাত তুলে বিদায় জানাল জুলিয়াস-কিন্তু জবাবে কাউকে হাত নাড়াতে দেখা গেল না।

এডের পাশ দিয়ে যাবার সময়ে সে বলল, আমার উপদেশ শোনো, ভেগে যাও।

কথাটা ভেবে দেখব, জবাব দিল সে।

ঘোড়া ছুটিয়ে ক্রেস্টলাইনের দিকে এগিয়ে চলল জুলিয়াস। একবারও আর পিছন ফিরে চাইল না।

মেডক লেটনের বয়স ঊনচল্লিশ। জীবনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছে সে। তার বেশির ভাগই আইন-বিরোধী। এককালে সে কিং ফিশার, বিউড়ি, কারসন বাদার্স আর থ্যাডো টার্নার ব্যান্ডের সাথেও কাজ করেছে। তবে দলের একজন হিসেবেই ছিল-নাম ডাক হয়নি তার, পুলিশের খাতাতেও নাম ওঠেনি। ভাগে যা পেত তাতে তার চলা মুশকিল হয়ে দাঁড়াত বলে মাঝে মধ্যে চাকরি করে। সভাবে খেটে খেতে হত তাকে। তার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল একদিন সে একটা বিরাট দাও মারবে। কিন্তু সেটা যে কি হবে ইডেন পার্কে চাকরি নেয়ার সময়ও এ সম্বন্ধে কোন ধারণা ছিল না তার।

হঠাৎ ওর জন্যে দুটো অনুকূল ঘটনা ঘটল! জুলিয়াস বাড়ি ছেড়ে ঘুরতে বেরুল আর সেবাস্টিন দত্ত অসুখে পড়লেন। জারভিসের ওপর র‍্যাঞ্চ চালানোর দায়িত্ব পড়ল। জারভিসকে সামলানো কঠিন কিছু নয়, ধাপ্পা দিয়ে কয়েকজনকে ডিঙিয়ে হাল ধরে বসল মেডক।

একটা ভয় ছিল তার, জুলিয়াস যে-কোন সময়ে ফিরে আসতে পারে, কিন্তু তিন মাসের মধ্যে ফিরল না সে। নিজের প্ল্যান অনুযায়ী একে একে পুরোনো সবাইকে বিদায় করে সেই জায়গায় নিজের লোক ভর্তি করল মেডক। শহরে হঠাৎ হিউ হাপার আর হোয়েল কিডের দেখা পেয়ে ওদেরও কাজে বহাল করে নিল সে। একজন বড় কেউ হয়ে উঠেছে মেডক। এক বছর আগেও কিছুতেই ওরা মেডকের আদেশে কাজ করতে রাজি হত না, কিন্তু এখন মেনে নিয়েছে।

প্রথমে তার ইচ্ছা ছিল র‍্যাঞ্চ আর সেবাস্টিন দত্তের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে যতটা সম্ভব হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়বে। কিন্তু র‍্যাঞ্চের লোকজন সব তারই। পুরোনো প্ল্যান বাতিল করে সে এখন আরেকটা চমৎকার প্ল্যান এটেছে।

জুলিয়াস অদৃশ্য হতেই মেডক বলে উঠল, দুঃখ হয়, ছেলেটাকে ভালই লাগত আমার। কে জানে, এখন কি আছে ওর কপালে? ওদের বাজিয়ে দেখতে চায় মেডক।

চুলোয় যাক, ব্যাটা, নিজের মতামত প্রকাশ করল জারভিস।

এটা তোমার মনের কথা হতে পারে না, প্রতিবাদ করল পেপি।

মনের কথাই।

আমার কিন্তু দুঃখই হচ্ছে ওর জন্যে।

প্রাণ খুলে হাসতে ইচ্ছে করছে মেডকের। কৃত্রিম বিষণ্ণ মুখে সে বলল, লোকজনকে এবার কাজে যাবার নির্দেশ দাও, জারভিস। কি করতে হবে তা তো তোমার সাথে সকালেই আলাপ হয়েছে। তুমি কাজ শুরু করাও, আমি ওই নতুন লোকটার সাথে বাকি কথা সেরে নিয়েই হাজির হচ্ছি।

ঠিক আছে, এদিকটা আমি নিজেই দেখছি, বলল জারভিস।

ইশারায় এডমন্ডকে ডেকে কেবিনে ঢুকল মেডক। এড যখন কেবিনে ঢুকল মেডক তখন সারা ঘরময় পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। এডকে ঢুকতে দেখে হেসে বলল, এই যে, এড, ভালই হলো তুমি এসে গেছ।

হ্যাঁ, বসেই ছিলাম, তোমার চিঠি পেয়ে ভাবলাম ঘুরে আসি। অনেক লোকজন যোগাড় করেছ দেখছি?

ওদের চেনো নাকি তুমি?

বেশির ভাগই চিনি। তা মতলবটা কি তোমার? যুদ্ধে নামবে?

হাসল মেডক। না, তার দরকার হবে বলে মনে হয় না-তবু সব ব্যবস্থাই রেখেছি। পেপিকে কেমন লাগল তোমার?

সুন্দর।

সুন্দর, ব্যস?

না, বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায়, বলল এড। মেয়েটাকে নিয়েই কি আমার কাজ?

সেই রকমই প্ল্যান আমার। পছন্দ হয়?

সন্দেহ নেই, কাজটা আকর্ষণীয়।

তাহলে কাজে লেগে যাও। আমিও সাহায্য করতে পারব তোমাকে। কিন্তু সে কথা পরে হবে, আগে বলো জুলিয়াস আর তুমি দু’জনে এখানে একসাথে। কিভাবে পৌঁছলে?

ঘটনাচক্রে তাই ঘটল, সহজভাবেই জবাব দিল এড।

সন্ধানী দৃষ্টিতে ওর দিকে চাইল মেডক। জুলিয়াসকে দেখেই চমকে উঠেছিল সে, তার ওপর সাথে এডকে দেখে একেবারে ভিতর পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে ওর। সে ভাবছে এডের সম্পর্কে ভাল করে না জেনে ওকে এর মধ্যে ডাকা ঠিক হয়নি। ওর সম্বন্ধে বলতে গেলে কিছুই জানে না মেডক। থ্যালন্ডোর দলে দু’জনেই একসাথে কয়েক মাস কাজ করেছে ওরা। দলটা ভেঙে যাবার পরে এড কোথায় যাচ্ছে জানা ছিল ওর-ব্যস ওই পর্যন্তই।

তুমি বুঝছ না, এড, বলে উঠল মেডক। ওই জুলিয়াস লোকটা আমাদের অনেক ঝামেলায় ফেলতে পারে। রাতের বেলাতেই ওকে তুমি শেষ করলে সেই হাঙ্গামা থেকে রেহাই পাওয়া যেত।

তাকে আমার গুলি করা উচিত ছিল বলছ?

নিশ্চয়ই।

কিন্তু আমি কি করে চিনব তাকে?

তোমরা কি গিরিপথ ধরে এসেছ?

হ্যাঁ।

ওখানে একজন লোক বসিয়েছিলাম আমি জুলিয়াসের জন্যে। লোকটার নাম এবেল বেইন।

মারা গেছে সে। বুক ভরে একটা শ্বাস নিল মেডক। কি হয়েছিল?

আমার হাতেই মারা পড়েছে লোকটা। না, চমকে উঠো না, লোকটা কে, আর ওখানেই বা কি করছিল, এসব আমার জানার কথা নয়। পছন্দ না হয় জাহান্নামে যাও তুমি।

দু’জনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রইল। দু’জনই নীরব। এড কি ভাবছে ঠিক ধরতে পারছে না মেডক। এটা ঠিক যে চিঠিতে আরমান্ড ফর্কে লোক রাখার কথা কিছু জানায়নি সে। হতে পারে এবেল বেইন যে মেডকেরই লোক তা জানত না সে। কিন্তু ঘটনা যা ঘটেছে তা ওর মোটেই পছন্দ হচ্ছে না। আর ওদের দুজনের এক সাথে হাজির হওয়াটাও ভাল চোখে দেখছে না ও।

নিজেই ভেবে দেখো, বলল এড। তোমার পছন্দ হয় থাকব, নয়তো চলে যাব, তোমার এখানে চাকরি না করলেও আমার চলবে।

তুমিও মনে কোরো না যে তোমাকে ছাড়া আমাদের চলবে না, রাগতস্বরে জবাব দিল মেডক। তোমাকে ছাড়াও চলবে। থাকলে কাজে লাগাতে পারব, সে জন্যে ভাল টাকাও দেয়া হবে। এখন থাকা না থাকা তোমার ইচ্ছা-কি করতে চাও?

জানালা দিয়ে বাইরে চাইল এড। ওর কাঁধের ওপর দিয়ে মেডকের চোখে পড়ল, পেপিকে দেখা যাচ্ছে উঠানে। এড ঘুরে দাঁড়াবার আগেই সে অনুমান করে নিল ওর জবাব কি হবে।

<

Super User