স্যালুন খোলা থাকে সারাদিনই। মাঝে মধ্যে অবশ্য পোকার জমে উঠলে রাতেও খোলা রাখা হয়। ব্যাট উইং ডোর ঠেলে স্যালুনের চৌকাঠে দাঁড়াল এসে সলটার। ভেতরটা অস্পষ্ট। খানিকক্ষণ ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সে। চোখ সইয়ে নিল। বারটেন্ডার দাঁড়িয়ে রয়েছে বারের পেছনে। জনা দুয়েক লোককে গেলাস হাতে দেখা গেল সেখানে। কোণের দিকে একটা চারকোনা টেবিলে বসে রয়েছে। কয়েকজন। জোহানকে চিনতে পারল সলটার। ম্যাকগ্র আর অসকারের র‍্যাঞ্চের আরও কয়েকজনকেও টেবিলে দেখতে পেল সে।

বেশ শোরগোল চলছে টেবিলটাতে। সেদিকে এগোল সলটার। জোহান হারছে বুঝতে বাকি রইল না তার। ও বাপের কাছ থেকে হাতখরচের জন্যে যে টাকা পায় তার বেশিরভাগটাই যায় ম্যাকগ্রর পকেটে। জুয়া খেলে আদায় করে নেয় সে। বাকিটা মদ খেয়ে ওড়ায় জোহান। সঙ্গে ম্যাকগ্র তো থাকেই। ম্যাকগ্রর সঙ্গে মিশে নিজের ভবিষ্যৎ ঝরঝরে করছে জর্জ ওয়াগনারের বোকা ছেলেটা, ভাবল সে।

টেবিলটার কাছে পৌঁছল সলটার, দাঁড়াল জোহানের ঠিক উল্টোদিকে। উত্তেজনায় টানটান অবস্থা ছেলেটার। মাত্র বিশ বছর বয়স ওর। অথচ ভাব ভঙ্গিতে যেন বিরাট বীরপুরুষ। কাউকে পরোয়া করে না। এর জন্যে সবচেয়ে বেশি দায়ী ওর বারা। অতিরিক্ত লাই দিয়ে মাথা খেয়েছে ছেলেটার। এখন আর সামলাতে পারছে না।

জোহানের ডানপাশে বসেছে ম্যাকগ্র। বছর চল্লিশেক বয়স। লম্বা। পেশীবহুল শরীর। গোল মুখটাতে অসংখ্য ভঁজ। চোখ দুটো থেকে যেন সবকিছুর প্রতি বিতৃষ্ণা ঝরে পড়ছে।

হঠাৎ চোখ তুলে চাইল সে। চোখাচোখি হল সলটারের সঙ্গে। ম্যাকগ্রর মুঠো শক্ত হল হাতের কার্ডগুলোতে। পরক্ষণেই চোখ নিচু করে আবার খেলায় মন দিল সে।

জোহান, তোমার সাথে কথা আছে, নরম গলায় ডাকল সলটার।

ওর দিকে চাইল জোহান। ক্ষণিকের জন্যে বিরক্তি দেখা দিল তার চোখে। তারপর মৃদু হাসল।

কি খবর, সলটার? বাবা পাঠিয়েছে?

কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম খোঁজ নিয়ে যাই, বলল সলটার।

বাবা-ছেলের বিবাদ মেটাতে মেটাতে বিরক্ত হয়ে গেছে সে। সলটার নিজে নির্বিরোধী লোক। পারিবারিক অশান্তি মোটেও পছন্দ নয় তার। তবু জড়িয়ে পড়তে হয় এসবে। বাবা-ছেলের বিরাদকে কাজে লাগাচ্ছে ম্যাকগ্র। উৎসাহিত করছে ওর অর্ধেক বয়সী জোহানকে। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বক্স ডব্লিউ এর প্রত্যেকে।

তুমি বারে গিয়ে ড্রিংক নাও। আমার কথা বললেই হবে। আমি আসছি, ওর দিকে না চেয়েই বলল জোহান।

থ্যাংকস, বারের দিকে হাঁটা দিল সলটার। এ সময় কানে এল ম্যাকগ্রর গলা। নিচু গলায় বলল কি যেন। ওকে উদ্দেশ্য করে বলেছে বুঝতে পারল সলটার। লাল হয়ে উঠল তার মুখ। শক্ত হল মুঠো। তবে ফিরল না সে। এগিয়ে গেল বারটেণ্ডারের দিকে। বিয়ারের অর্ডার দিল। বারের পেছনের আয়নাটায় চোখ গেল ওর। দেখল ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে ম্যাকগ্র। ওর স্যাঙাত্রা হাসছে। কেবল মাথা নিচু করে বসে রয়েছে জোহান। অস্বস্তি বোধ করছে সে।

রাগে গা জ্বলে গেল সলটারের। বহুকষ্টে নিজেকে সংযত করল সে। ফালতু ঝামেলায় জড়ানো ঠিক হবে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল ও। মৃদু চুমুক দিচ্ছে বিয়ারের ক্যানে। এসময় বারের কাছে এল জোহান।

বিশটা ডলার হবে, সলটার? প্রশ্ন করল সে।

অত টাকা নিয়ে ঘুরি না আমি।

মিথ্যে বল না, বক্স ডব্লিউতে তুমি আমার একমাত্র বন্ধু। অথচ বিশটা ডলার ধার দিতে পারছ না?

তোমাকে ধার দিলে টাকাটা যাবে ম্যাকগ্রর পকেটে। কাজেই দেব না।

ঠিক আছে। তোমাকে চিনলাম-বলল জোহান।

আমার কিছু করার নেই, জোহান। তোমাকে আমি ঘোড়া আর অস্ত্র চালাতে শিখিয়েছি। কিন্তু ভাল-মন্দের পার্থক্য এখনও শেখাতে পারিনি। আবার বলছি, জোহান এই লোকগুলো ভাল নয়। এদের সঙ্গে মিশে নিজেকে নষ্ট কর না। নিজেকে পুরুষ ভাবছ তুমি। অথচ সেটা প্রমাণ করতে পারছ না।

থাক আর শুনতে চাই না। এসব কথা অনেক শুনেছি। তোমরা সবাই এক, চিৎকার করে উঠল জোহান। স্যালুনের সবার চোখ এখন ওদের দিকে। একদৃষ্টে এ দিকেই চেয়ে রয়েছে ম্যাকগ্র আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা।

আবার শোনা গেল জোহানের চিৎকার। বাবার সঙ্গে জাহান্নামে যাও তুমি। দালাল কোথাকার। আমার পৌরুষ নিয়ে কথা বলে আবার আমার বোনের পিছে ঘুরঘুর করে। কাপুরুষ। সাহস থাকলে তানিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াও গিয়ে যাও।

ঝলসে উঠল সলটারের ডানহাত। প্রচণ্ড ঘুসিটা লাগল জোহানের বাঁ গালে। ছিটকে পড়ল সে।

কয়েকটা চেয়ার সরানর আওয়াজ কানে এল সলটারের। এগিয়ে আসছে ম্যাকগ্র, ধীর পদক্ষেপে। পেছনে তার দলের লোকেরা। ওর উদ্দেশ্য স্পষ্ট বুঝতে পারছে সলটার। দীর্ঘদিন ধরে বোধহয় এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতে ছিল

কাজটা ভাল করলে না, সলটার, কর্কশ কণ্ঠে বলল ম্যাকগ্র। এগিয়ে এসেছে। সে বারের কাছে।

জোহান ওয়াগনার আমাদের বন্ধু। আমি থাকতে ওর গায়ে টোকা পড়তে পারে না।

পড়ল তো, বেয়াদবি করলে ভবিষ্যতেও পড়বে, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল সলটার। স্যালুনে এখন পিন পতন নিস্তব্ধতা। কেবল জোহানের জোরে জোরে, শ্বাস নেয়ার শব্দ ছাড়া কিছু কানে আসছে না। হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে সে। ওর বাপ হলেও একই কাজ করত, বলল সলটার।

তুমি ওর বাপ নও। অথচ ভাবটা এমন যেন বক্স ডব্লিউ তোমার।

বক্স ডব্লিউ আমার হোক আর যারই হোক তোমার এত লাগে কেন? তুমি ওটার ফোরম্যান হতে পারনি, সেজন্যে?

বাজে কথা বলবে না, রেগে উঠল ম্যাকগ্র। সলটার বুঝল জায়গামত খোঁচা দিয়েছে সে। এক কদম এগিয়ে এল ম্যাকগ্র। হাত চলে গেছে কোমরে। পিস্তলের বটে। ওকে কভার দিচ্ছে স্যাঙাত্রা।

বিপদ আঁচ করল সলটার। ওর ডান হাত নেমে এল কোল্ট ৪৪ এর বাটে। ম্যাকগ্রর দিক থেকে চোখ সরাল না সে।

ঝামেলা করতে চাও? কঠিন গলায় প্রশ্ন করল সলটার। এক মুহূর্তের নীরবতা। এসময় উঠে দাঁড়াল জোহান।

না, বলল সে। চাইল ম্যাকগ্রর দিকে। তুমি কথা দিয়েছিলে। মনে নেই?

কিসের কথা দেওয়া-দেওয়ি? সলটারের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা। এরা তোমাকে কি কথা দিয়েছে, জোহান?

কয়েকজন বয়স্ক লোক এসময় উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। জুয়া খেলছিল। ওদের উঠে যেতে দেখে বুঝল সলটার, গোলমাল এড়ানো যাবে না। না যাক, যে কোন কিছুর জন্যই প্রস্তুত রয়েছে সে।

জোহান, দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন? বার্নে যাও। আমি আসছি, বলল সলটার।

ওকে লক্ষ্য করে ঘুসি ছুঁড়ল জোহান। সৎ করে মুখ সরিয়ে নিল সলটার। লাগাতে না পেরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল জোহান। ওর বাঁ কাঁধে সজোরে ধাক্কা দিল সলটার। আবার মাটিতে পড়ে গেল সে।

গত কবছরে বড় বেশি বাড় বেড়েছে তোমার। তোমাকে সাইজে আনতে হবে, চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকগ্র। চেষ্টা করে দেখ, পাল্টা বলল সলটার। মানা করেছে কে?

ম্যাকগ্রর মুখে কথা সরল না। সলটারের চেহারা রাগে থমথম করছে। ম্যাকগ্রর সঙ্গের লোকগুলো পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। কোনমতে উঠে দাঁড়াল জোহান। টলতে টলতে এগোল সলটারের দিকে।

সোজা গিয়ে ঘোড়ায় চাপ। আমার সঙ্গে র‍্যাঞ্চে ফিরবে তুমি, হুকুমের ভঙ্গিতে ওকে বলল সলটার। কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল জোহান। যা বলছি কর। তুমি কি চাও কেউ মারা যাক? প্রশ্ন করল সলটার।

কে মরবে? তুমি না আমি? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ম্যাকগ্র। চোখ দুটো তার ধকধক করে জ্বলছে। সলটার বুঝল যে-কোন মুহূর্তে আক্রমণ হতে পারে।

সেটা ভাল করেই জান, শান্ত কণ্ঠে বলল সে।

তোমাকে মজা দেখাতাম, ধীরে ধীরে বলল ম্যাকগ্র। কেবল আইন অমান্য করতে চাই না বলে ওকে কথা শেষ করতে দিল না সলটার।

আইনের কথা তোমার মুখে আগে কখনও শুনিনি, শান্তস্বরে বলল সে। সত্যি কথাটা স্বীকার করতে লজ্জা কিসের? আসলে আমাকে ভয় পাও তুমি।

মুঠো পাকিয়ে তেড়ে এল ম্যাকগ্র। সলটারের চেয়ে অনেকখানি লম্বা সে। ওজনেও বেশি। কিন্তু সেজন্যে মোটেও ভীত নয় সলটার। প্রস্তুত সে। ম্যাকগ্রর ডান হাতের ঘুসিটা আসতেই বাঁ হাত তুলল সলটার। হাতুড়ির বাড়ি পড়ল যেন হাতে। পরক্ষণেই পাল্টা আঘাত হানল সে। চোয়ালে প্রচণ্ড ঘুসি খেয়ে, টলতে টলতে কয়েক কদম পিছিয়ে গেল ম্যাকগ্র। সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাল সলটার। সামান্য এগিয়ে এসে আরও গোটা কয়েক ঘুসি বসাল ওর নাকে মুখে। ফ্লোর আঁকড়ে ধরল ম্যাক, চোখে আঁধার দেখছে। মুহূর্ত পরেই ধেয়ে এল সে, গোয়ারের মত। বোধ বুদ্ধি প্রায় লোপ পেয়েছে তার। সামান্য সরে গেল সলটার। তার ডান হাতের প্রচণ্ড ঘুসিটা লাগল ম্যাকগ্রর চোয়ালে। আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হল না ম্যাকগ্রর পক্ষে। আর্তনাদ করে উঠল সে। দড়াম করে পড়ে গেল স্যালুনের মেঝেতে। ঠোঁট আর নাক ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে, ফুলে উঠেছে চোয়াল। হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে রইল ও। বিশাল বুকটা হাপরের মত ওঠা-নামা করছে।

আর কেউ আছে? দর্শকদের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল সে। শক্ত দেখাচ্ছে তার মুখ। কেউ টু শব্দটি করল না। র্যাফটার ও-র লোকগুলো হতবাক হয়ে গেছে বিশালদেহী ওস্তাদের দুরবস্থা দেখে। ঠিক আছে, বলল সলটার। খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে এল সে। জোহানের দিকে চেয়ে বলল, এখনও দাঁড়িয়ে আছ? তোমাকে ঘোড়া রেডি করতে বলেছিলাম না?

ওর কথায় মাথা নেড়ে সায় জানাল জোহান। মেঝেতে শুয়ে থাকা ম্যাকগ্রর দিকে একবার দেখে নিয়েই প্রায় ছুটে বেরোল স্যালুন থেকে।

বক্স ডব্লিউ-এর লোকজনের সঙ্গে লাগতে এস না। সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি, অসকারের র‍্যাঞ্চের লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বলল সলটার।

ঘুরে দাড়াল কথা শেষ করেই। বুটের শব্দ তুলে বেরিয়ে গেল স্যালুন ছেড়ে। ঘোড়র কাছে পৌঁছে স্যাডলে চেপে বসল। স্যালুনের দরজার দিকে এক ঝলক চাইল সে। নাহ্ কোন সাড়াশব্দ নেই। পিস্তলের বাঁট থেকে হাত সরিয়ে নিল ও। ঘোড়া হোটাল আস্তাবলের দিকে। দ্রুতবেগে। আস্তাবলে ঢুকে জোহানকে ঘোড়ায় স্যাডল পরাতে দেখল সে। শেরিফও রয়েছে খানিকটা দূরে। ঘোড়া রেডি করছে। ওদের সঙ্গে যাবে।

মাফ করে দিয়ো সলটার, বলল জোহান। আমার ভুলের জন্যে সত্যিই কেউ মারা যেতে পারত। আমি ভাবতেও পারিনি ওরা আমার পক্ষ নেবে।

ওরা তোমার পক্ষ নেয়নি, জোহান, হালকা ভাবে বলল সলটার। ম্যাকগ্র বহুদিন ধরে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমাকে শায়েস্তা করতে চায়। তোমার অজুহাতে সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছিল।

ভাল শিক্ষা পেয়েছে ম্যাকগ্র, বলল জোহান। জীবনেও ভুলবে না।

তাই? শ্রাগ করল সলটার। শেরিফ এগিয়ে এল এসময়। ওদের কথা কানে গেছে তার। আজকের ব্যাপারটা তোমাকে একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি, জোহানকে বলল সলটার।

কি হয়েছে, সলটার? প্রশ্ন করল শেরিফ। কোন গোলমাল?

সব দোষ আমার, মাথা নিচু করে বলল জোহান। শেরিফকে খুলে বলল পুরো ঘটনাটা। সলটার লক্ষ করল শক্ত হয়ে উঠল শেরিফের মুখের পেশীগুলো।

সলটার, ম্যাককে তো চেনই। ও তোমাকে ছেড়ে দেবে না। যেভাবেই হোক এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করবে, বলল শেরিফ।

আমি ওর প্রতি লক্ষ রাখব, দাঁতের ফাঁকে বলল সলটার। আমি ফোরম্যান। হওয়ার পর থেকেই আমার ওপর খেপে রয়েছে ও। জোহান, দেখলেই তো ওরা কেমন, দোহাই তোমার, ওদের কাছ থেকে দূরে থাক।

সে আর বলে দিতে হবে না, বোদ্ধার মত বলল জোহান। চল, রওনা দিই, বাবার সঙ্গে কথা আছে আমার।

শেরিফও যোগ দিল ওদের সঙ্গে। তিনজনে বেরিয়ে এল রাস্তায়। চলল শহর ছেড়ে। কেউ কথা বলছে না। তবে সলটারের মাথায় কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে স্যালুনের ঘটনাটা। ম্যাকগ্রর চোখের দৃষ্টি ভাল লাগেনি ওর। কি ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। কে জানে। আচ্ছা, বাবাকে কি ম্যাকগ্রই মেরেছে? বাবার সঙ্গে সেদিন ম্যাকগ্রও বেরিয়েছিল। ভাবনাগুলো খোঁচা দিচ্ছে মনে। ব্যাপারটা তলিয়ে ভেবে দেখতে হবে।

আপনি কোথায় চলেছেন? জোহান জিজ্ঞেস করল শেরিফকে। রেঞ্জে কিছু হয়েছে?

হ্যাঁ, শেরিফ র‍্যাঞ্চের ঘটনা খুলে বলল জোহানকে।

আমি আপনাদের পাশে আছি, বলল জোহান। ওর বলার ভঙ্গিতে এমন একটা দৃঢ়তা আছে যার ফলে ওর দিকে চমকে তাকাল সলটার। কিন্তু ওর চেহারা দেখে কিছু আন্দাজ করতে পারল না সে।

ওই তিনজন কারা হতে পারে? প্রশ্ন করল জোহান।

জানি না, জবাব দিল সলটার। তবে আমরা ট্র্যাক অনুসরণ করব। তুমিও থাকতে পার আমাদের সাথে। হয়ত কিছু বেরিয়েও যেতে পারে। ডজন খানেক রাসলার আছে এ দলে, কোন সন্দেহ নেই। আর ওদের হেডকোয়ার্টারও রয়েছে এ রেঞ্জেই। আমি পাহারার ব্যবস্থা করতে চাই। অবশ্য সব র‍্যাঞ্চারের সঙ্গে আলাপ করেই যা করার করব। রাসলাররা ধরা না পড়া পর্যন্ত পাহারার ব্যবস্থা থাকবে।

আমিও থাকতে চাই, বলল জোহান।

যেখানটাতে ফ্লিন্টকে গুলি করা হয়েছিল সেখানে এসে পড়ল ওরা। শেরিফ নজর বোলাল চারপাশে। তারপর রাসলারদের ট্র্যাক অনুসরণ করে অসকারের র‍্যাঞ্চে চলে এল ওরা। এ পথ দিয়েই রেড রিজের দিকে পালিয়েছে গরু চোরের দল।

কাজটা কঠিন, বলল শেরিফ। আরও লোক লাগবে।

সে তোমার ব্যাপার, পাল্টা বলল সলটার। আমি কাজ চালিয়ে যাব। জোহান, তুমি র‍্যাঞ্চে ফিরে যাও। তোমার বাবাকে সব কথা বলবে। আর জো, মার্টিন আর বেটকে নিয়ে ফিরে আসবে।

ওরা আসতে চাইবে না, জোহান বলল। আজ রবিবার। ওরা হয়ত শহরে যেতে চাইবে। সবাই তো আর তোমার মত নয়।

তবে তুমি তাকে নিয়ে এস গে, শেরিফকে বলল সলটার। আমি আর জোহান থেকে যাই। কি বল? প্রশ্ন করল সে।

আগে জানা দরকার ট্রাকগুলো কোথায় গেছে, গম্ভীর স্বরে বলল শেরিফ। চিন্তিত। অসকারের বাড়ি এখান থেকে সাত মাইল দূরে। এপথ ধরে গেলে লয়েডের র‍্যাঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছব আমরা। তাই না?

হ্যাঁ, বলল সলটার।

ঘোড়া দাবড়াল, ওরা। ঘণ্টাখানেক পরে রেঞ্জ পেরিয়ে গেল, তিনজনে। রিজ কান্ট্রির পাহাড়গুলোর কাছে পৌঁছল ওরা। রুক্ষ জমি। ভাঙা-চোরা। ঘাস প্রায় চোখেই পড়ে না এখানে। বিশাল সব পাথর পড়ে রয়েছে এখানে ওখানে।

আকাশের দিকে চাইল সলটার। রোদ মরে এসেছে। খুব বেশিদূর আজ আর এগোনো যাবে না। এখনও ট্র্যাক অনুসরণ করছে ওরা। চারদিক নিঃশব্দ। ঘোড়ার খুরের শব্দ ছাড়া আর কিছু কানে আসছে না।

এখানেই থামা যাক, আচমকা বলল শেরিফ। রুক্ষ জমিতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে ওদের ছায়া। সারা রাত এভাবে চললেও বোধ হয় পথ ফুরোবে না। রাসলাররা বোকা নয়। ওরা সরাসরি, আস্তানায় ফেরেনি। পসি অনুসরণ করতে পাঞ্জে, সেই ভয়ে। খুব সম্ভব আশপাশের কোন শক্ত জমিতে ট্রাক নষ্ট করে নিয়েছে। তারপর ফিরে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে।

হতে পারে, ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নামল সলটার। সতর্ক দৃষ্টিতে চাইল মাটির দিকে। কলোরাডো সীমান্তের কাছাকাছি এসে গেছে তারা। যে কোন মুহূর্তে পাথুরে জমিতে ট্র্যাক হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে আশা ছাড়ল না সে।

এখন কি করতে চাও? অসহিষ্ণু গলায় সলটারকে প্রশ্ন করল জোহান। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। খানিকবাদে আর ট্র্যাক দেখা যাবে না। সঙ্গে লোকও নেই যে ক্যাম্প করব। আপনি কি বলেন, শেরিফ?

কি আর বলব। সব সময় যা করি এবারও তাই করতে হবে। ফিরে যাব, হতাশ গলায় বলল শেরিফ। এপর্যন্ত এসে বারবারই ব্যর্থ হয়েছি আগেও।

না, তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল সলটার। কিছুতেই না, ট্র্যাক ফুরানো না পর্যন্ত যাব আমরা। তিনজন আছি, তিনদিকে যাব।

খামোকা সময় নষ্ট করছি আমরা। তারচেয়ে বরং ফিরে গিয়ে পসি বাহিনী পাঠাই। পুরো এলাকা চষে চোরদের খুঁজে বার করবে। আমি বলছিলাম কি, সলটার, এখনকার মত ফিরে যাই চল, মিনমিন করে বলল শেরিফ।

তুমি চাইলে ফিরে যেতে পার, বলল সলটার। আবার রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নিল সে। জোহান, তুমি র‍্যাঞ্চে গিয়ে লোক নিয়ে এস। যত দ্রুত সম্ভব। সাথে কদিন চলার মত খাবার আর পানিও আনবে। দেখ আবার শহরে চলে যেয়ো না।

কি যে বল না তুমি, অভিমান ঝরে পড়ল জোহানের কণ্ঠে। শহরে আর যাই কিনা সন্দেহ।

না গেলেই ভাল, দৃঢ়তার সঙ্গে বলল সলটার। এখন চটপট রওনা হয়ে যাও। আমি চিহ্ন রেখে এগোব। তুমি ওদের নিয়ে ঠিক এখানটাতে ফিরে আসবে। তোমরা আসার আগেই রাত হয়ে যাবে। কাজেই ক্যাম্প করে কাল ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পার। তারপর আমাকে অনুসরণ করবে।

আপনি কি করবেন? শেরিফের দিকে চেয়ে জানতে চাইল জোহান।

তুমি গিয়ে লোক নিয়ে এস। আমি সলটারের সঙ্গে যাব। কাল দেখা হবে আশা করি, বলল শেরিফ।

মাথা ঝাঁকাল জোহান, উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে সে। ঘোড়া ছোটাল। সেদিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে লাগাম ঝাঁকাল সলটার। চলতে শুরু করল ঘোড়া। শেরিফ সঙ্গ নিল ওর।

সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। এখনও অবশ্য সলটারের চোখে পড়ছে ট্র্যাক। রিজ কান্ট্রির দিকে এগোল ওরা।

ঘন কালো ছায়া এখন ওদের চারপাশে। চুপ করে রয়েছে শেরিফ, ফলে কেমন যেন একটা একাকীত্ব ঘেঁকে ধরেছে সলটারকে।

দাগ চোখে পড়ছে, সলটার? প্রশ্ন করল শেরিফ। তোমার চোখ তো আমার চেয়ে ভাল।

দাগ-টাগ পরে। আগে একটা ভাল জায়গা চোখে পড়ে কিনা দেখি, জবাবে বলল সলটার। রাতটা কাটাতে হবে। কাল খুব ভোরে আবার খুঁজতে শুরু করব।

স্যাডল থেকে নামল ওরা। চারদিকে পাথরের স্তূপ। সলটার বুঝতে চেষ্টা করল কোথায় রাত কাটাবে।

আমার তৈরি হয়ে আনা উচিত ছিল, বলল শেরিফ। বোঝা উচিত ছিল বাইরে রাত কাটাতে হতে পারে। আসলে রাসলারদের দোষ নেই! সব দোষ আমার এই বুড়ো গর্দভের।

কথাগুলো মিথ্যে সেটা তুমি নিজেও জান, মৃদু হেসে বলল সলটার। তোমার যোগ্যতা সম্বন্ধে কারও কোন সন্দেহ নেই। দোষ আমাদের কপালের।

হঠাৎ সচকিত হল সলটার। কি যেন নড়ে উঠেছে। চোখের কোণে দেখতে পেয়েছে সে। সোজা হল ও। ঘুরে দাঁড়াল।

কতগুলো পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল এক মুখোশধারী। হাতে উইনচেস্টার।

কে ওখানে? ভারী গলায় প্রশ্ন করল শেরিফ। সলটারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে। ওদের দুজনের হাতই চলে গেছে পিস্তলের বটে।

কোন চালাকি চলবে না, হুমকি দিল আগন্তুক। হাত তুলে দাঁড়াও। শেরিফ, তুমিও।

অনিচ্ছাসত্ত্বেও আদেশ পালন করল ওরা। আঁধার ভেদ করে দেখার চেষ্টা করল লোকটিকে। কিন্তু মুখোশের কারণে কিছুই চোখে পড়ল না তার।

খিস্তি করল হার্পার। শেষ মুহূর্তে তার হাত ঝলসে উঠল কোল্টের বাঁটে। চিৎকার করে সতর্ক করল সলটার। কিন্তু শুনল না শেরিফ। পরমুহূর্তেই গুলি খেয়ে আর্তনাদ করে উঠল সে। ছিটকে পড়ল। গুলির প্রতিধ্বনি ঢেকে দিল তার আর্তচিৎকার। সলটার একবার কেঁপে উঠতে দেখল শেরিফের দেহ। তারপর স্থির হয়ে গেল শেরিফ।

<

Super User