মালভূমির মত জায়গাটার চূড়ায় উঠে শহরটা দেখতে পেল সে। লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল, হ্যাটের ব্রিম তুলে দিল খানিকটা। ঢালের নিচে ছোট্ট শহরটাকে আগাগোড়া খুঁটিয়ে দেখল এবার। চওড়া রাস্তার দুপাশে সারি সারি বাড়ি, একেবারে শেষ মাথায় ক্রুশঅলা দালাটাই গির্জা। ওটা ছাড়িয়ে দিগন্তের বুকে চলে গেছে সরু ট্রেইল, ঊষর প্রান্তরে গিয়ে মিশেছে। পুবে সুবিস্তৃত পর্বতসারির পাদদেশে সবুজ বনভূমি, শহর থেকে মাইল দুই দূরে; মাঝখানের জায়গাটুকু মোটামুটি সমতল। সরু নালার মত একটা ক্রীক এঁকেবেঁকে চিরে গেছে জায়গাটাকে। উল্টোদিকে, দুর্গম প্রান্তর পাঁচ মাইল দূরে রকি পর্বতমালায় গিয়ে মিশেছে। লিয়ন সিটির আশপাশে কোন সমভূমি বা রেঞ্জের চিহ্ন নেই, বোঝার উপায় নেই আসলেই এটা কোন ক্যাটল টাউন কি-না।

শহরের ওপর ফিরে এল তার দৃষ্টি। ধূলি-ধূসর অপরিচ্ছন্ন রাস্তা। বাড়িগুলোয় যে ধুলোর পুরু আস্তর জমেছে রঙজ্বলা ফ্যাকাসে চেহারা দেখে তা এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে। প্রখর রোদে রাস্তার ধূলিকণা চিকচিক করে উঠল। ফাকা রাস্তায় একটা নেড়ি কুকুর আর তিনটে মুরগী চোখে পড়ছে। লিয়ন সিটির জন্যে এটাই স্বাভাবিক। শহরটা অ্যারিজোনার একেবারে শেষপ্রান্তে, সামনে আরও বিশ মাইল গেলে পড়বে সল্টলেক মরুভূমি। তারপর, চল্লিশ মাইল দূরে মেক্সিকোর সীমানা। আর এদিকে সবচেয়ে কাছের শহর সিলভার টাউন একশো মাইল দূরে, তা-ও সেটার অস্তিত্ব কেবল গুটিকয়েক ভগ্নপ্রায় দালানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দুএকজন ভবঘুরেকে পাওয়া যেতে পারে যারা চলার পথে ভাঙা ওই বাড়িগুলোকে শ্যাক হিসেবে ব্যবহার করছে। পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে রূপোর একটা দানা খুঁজে পেয়েছিল এক বুড়ো, সেই থেকে পনেরো দিনের মধ্যে গজিয়ে ওঠে শহরটা। শেষ হতেও সময় লাগেনি। প্রকৃতির অণ্ডার ফুরিয়ে যেতে বছর ঘোরার আগেই কেটে পড়েছে। ভাগ্যান্বেষী লোকগুলো। হঠাৎ কেউ উপস্থিত হয়ে পড়লে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যে সেখানে আছে কেবল রঙজ্বলা প্রায় মুছে যাওয়া একটা জীর্ণ সাইনবোর্ড আর বুটহিলে ডজন দুয়েক কবর।

লিয়ন সিটির অবস্থা সিলভার টাউনের চেয়ে ভাল বলা যাবে না। পার্থক্য কেবল একটাই-লোকজনের বসতি আছে এখানে। নেহায়েত ঠেকা ছাড়া দুর্গম প্রান্তর পাড়ি দিয়ে এমন একটা শহরে আসবে না কেউ। তার ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। জেদ আর প্রতিশোধস্পৃহা গত তিন বছর তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ওকে, বৈরী পশ্চিমের বিভিন্ন ট্রেইলে কেটে গেছে হাজারটা রাত। পথ চলতে চলতে ক্লান্তি, হতাশা গ্রাস করে ফেলেছে ওকে। মনেপ্রাণে প্রার্থনা করছে এখানেই যেন থামতে হয়। নইলে ফিরে যেতে হবে, কিংবা আরও এগিয়ে সল্টলেক পাড়ি দিতে হবে। শেষ সূত্রটা ছিঁড়ে যাওয়ায় নতুন সূত্র খুঁজতে হবে।

তবে ওর মন বলছে ভিন্ন কিছু—এ শহরে থাকাটা ওর কাছে অভিজ্ঞতার নতুন উৎস বা দুবেলা খাওয়া আর অলস সময় কাটানোর ফাঁকে কিছু মানুষকে দেখার মধ্যেই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকবে না, ফেলে আসা অনেকগুলো শহরের বেলায় যেমন ঘটেছে। তবে যে-কোন শহরে কোন আগন্তুক যেমন ঠাণ্ডা অভ্যর্থনা পায়, এখানেও তাই জুটবে ওর কপালে। এটাই স্বাভাবিক।

স্পার দাবাল সে, ঢাল বেয়ে এগোল সোরেলটা। সকাল থেকে টানা ছুটছে বলে ক্লান্ত। ঘামে চিকচিক করছে ওটার রেশমী কালো পশম। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ায় বিশ্রাম আর খাবারের অধিকার জন্মেছে ওটার। আগে আস্তাবলে যেতে হবে, ভাবল সে, ঘোড়াটার যত্নের ব্যবস্থা করার পর বেল্টের নিচে নিজের চুপসে যাওয়া পেটের গতি করা যাবে।

ঢাকার মুখে কামারের দোকান। হাপর টানছে লোকটা। চোখ তুলে ওকে দেখল একবার, নির্লিপ্ত নীল চোখ কিংবা মুখে কোন ভাবান্তর নেই। তারপর নিজের কাজে মনোযোগ দিল, গনগনে আগুনে লোহার টুকরোটা ঠিকমত বসিয়ে দিল।

দুপাশের বাড়িগুলোর ওপর নজর বুলাল সে। ব্যাংক, নাপিতের দোকান, লঅফিস, সেলুন, জেনারেল স্টোর, লিভারি স্ট্যাবল…সবই আছে। খানিক এগিয়ে প্রথম আস্তাবলটা পেয়ে থামল ও। এতক্ষণ টুলে বসে ওকে দেখছিল হসল্যার, উঠে এগিয়ে এল। ঠোঁটের কোণে সস্তা তামাকের রোল করা সিগারেট।

হাউডি, স্ট্রেঞ্জার! অনেক দূর থেকে আসছ মনে হয়? একমুখ ধোয়া ছেড়ে জানতে চাইল মাঝবয়সী লোকটা। গলাটা ফ্যাসফ্যাসে, মনে হলো ঠাণ্ডা লেগেছে। বেল্টের ওপর মাঝারি সাইতের একটা ভুঁড়ি, পেটের কাছে বাকস্কিন শার্ট ফুঁড়ে বেরোতে চাইছে। অস্থির দৃষ্টি লোকটার নীল রঙের চোখে, কোথাও স্থিরভাবে তাকাচ্ছে. না!

স্যাডল ছেড়ে নেমে পড়ল আগন্তুক, উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। এমন কোন প্রশ্ন নয় ওটা, সাধারণ শুভেচ্ছা বিনিময়ের মতই। হ্যাট খুলে কাপড় থেকে ধুলো ঝাড়ল। দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করল ও, এ ফাঁকে বাতাসে ওড়া ধুলো থিতিয়ে এল আস্তে আস্তে।

প্রতিদিনের জন্যে পঁচিশ সেন্ট, স্ট্রেঞ্জার, সোরেলটাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার সময় বলল সে, মুখ থেকে সিগারেট না সরিয়েই। দানা-পানি আর দলাই-মলাইসহ। সস্তা, তাই না?

তোমার এখানে থাকার জায়গা হবে?

দুটো বাঙ্ক আছে। ওগুলোর জন্যে পঁচিশ সেন্ট। আর খড়ের গাদায় যদি রাত কাটাও, তবে পনেরো সেন্ট দিতে হবে।

আস্তাবলে বাঙ্ক, এই প্রথম শুনল সে। একপাশে ওঅশ বেসিন দেখে এগোল সেদিকে। পাশে রাখা গামলা থেকে পানি তুলে হাত-মুখ ধুল। কয়েকদিনের ক্ষৌরি না-করা মুখে দাড়িগুলো খসখসে, কাটার মত লাগছে। সামনের দেয়ালে ঝোলানো ছোট্ট আয়নায় মুখ দেখল-ক্লান্ত এক যুবকের থমথমে অবয়ব। দাড়ি আর পথচলার ক্লান্তি ওর বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে।

কিছু বললে না যে? পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে হসল্যার। সিগারেটের শেষাংশ বুটের তলায় পিষল। খড়ের গাদায় না বাকে থাকবে?

একটা বাঙ্ক খালি রেখো। রাতে আসব আমি।

আগে টাকা দাও, হাত বাড়িয়ে দিল সে। মুখ ধোয়ার জন্যে পাঁচ সেন্ট, আর যদি গোসল করো তবে দশ-সাবানসহ।

মুচকি হাসল আগন্তুক, লোকটার বাড়তি কিছু টাকা কামানোর প্রয়াস অপছন্দ করলেও সে-সম্পর্কে কোন মন্তব্য করল না। কপাল মন্দ তোমার, মিস্টার। আগাম পাওনা মেটাতে পারছি না, অল্প কিছু খুচরো পয়সা আছে আমার পকেটে। আগে আমাকে পেটের তাগিদ মেটাতে হবে, যদি এরপরও কিছু অবশিষ্ট থাকে তো তোমার পাওনা মেটাব। নইলে…।

আচ্ছা বেয়াড়া লোক তো তুমি! আমার পাওনা শোধ দেবে কিভাবে?

ভেবো না, আমার কাছে দুটো ঈগল আছে। ওগুলো অবশ্য এখুনি ভাঙানোর ইচ্ছে নেই।

তাকিয়ে থাকল হসল্যার, ওর হাব-ভাব বোঝার চেষ্টা করছে। অস্থির দৃষ্টি কিছুক্ষণ ধরে লেগে থাকল ওর মুখে, তারপর অসহায় ভঙ্গিতে কাঁধ উচাল। যন্ত্রণা দেখছি! বিড়বিড় করে বিরক্তি প্রকাশ করল। যতসব ফুটো পকেটঅলাদের নিয়ে আমার কারবার! পয়সা না দিয়ে শেষে কেটে পড়বে না তো?

বেরিয়ে এসে ফুটপাথে দাঁড়াল সে। নজর বুলাল পুরো শহরের ওপর। আগ্রহী হয়ে দেখার নেই কিছু, নিতান্ত সাধারণ একটা শহর। উল্টোদিকে বিশ গজ দূরে একটা ক্যাফে দেখতে পেয়ে এগোল। রাস্তা পেরিয়ে কাচের দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল ভেতরে।

একটা টেবিলে বসে খাচ্ছে তিনজন। চোখ তুলে একবার দেখল ওকে, তারপর খাওয়ায় মনোযোগ দিল। রান্নাঘরের দরজায় দেখা গেল সাদা অ্যাপ্রন পরা মাঝবয়সী এক মহিলাকে, মেক্সিকান। চুলে সাদা ছোপ পড়তে শুরু করলেও চেহারায় বোঝা যায় নিঃসঙ্গ পুরুষের বুকে কাঁপন ধরানোর মত আকর্ষণ একসময় তার যথেষ্টই ছিল। হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছল মহিলা, মুখটা লালচে দেখাচ্ছে। এতক্ষণ বোধহয় চুলোর কাছে ছিল।

আঙুল উঁচিয়ে হ্যাটের কিনারায় ছোঁয়াল আগন্তুক, কাছের টেবিলে বসে পড়ল। সবচেয়ে সস্তা খাবার দাও আমাকে, ম্যাম, মহিলা এগিয়ে আসতে বলল।

স্টু, মটরশুটি, বেকন আর কফিতে চলবে? মাথা ঝাঁকাল সে, পকেট থেকে খুচরো পয়সা বের করল। কত? নব্বই সেন্ট। আগে খেয়ে নাও।

দারুণ ক্ষুধার্ত ছিল, খাওয়ার সময় টের পেল আগন্তুক। সকালে সূর্য ওঠারও আগে শেষ দুই টুকরো জার্কি দিয়ে নাস্তা করেছে। খালি পেট ভরেছে কফিতে। তারপর আর পেটে কিছু পড়েনি। ধীরে সময় নিয়ে খাওয়া সারল ও। রান্নাটা ভাল। গত কয়েকদিন ধরে শুকনো জার্কি আর বেকন খেতে খেতে মুখ বিস্বাদ হয়ে গেছে।

কফির মগ টেবিলে নামিয়ে রেখে এঁটো থালা-বাসন নিয়ে চলে গেল মহিলা।

কফি শেষ করে সিগারেট ধরাল সে। খাওয়ার দাম টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়াল এরপর, হ্যাট তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগোল।

আজব চিড়িয়া, কোত্থেকে যে আসে এরা! পেছনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ একটা গলা শুনতে পেল ও। মিসেস বার্থেজ, এসব আজেবাজে লোককে এখানে ঢুকতে দেয়া উচিত নয় তোমার।

ঘুরে লোকটার দিকে তাকাল আগভুক। এখানে ঢোকার পর একবার নজর বুলিয়েছিল, ঝামেলা বা বিপদের আশঙ্কা করেনি। তারওপর পেটের তাগিদই ওকে অন্য কোন দিকে নজর না দিতে বাধ্য করেছিল। এবার সময় নিয়ে দেখল তাকে-ধোপ-দুরস্ত দামী পোশাক, শহুরে লোক। পুবের কোন শহরে একে ভাল মানাবে। সুদর্শন, নিখুঁত চেহারা। ত্রিশের কাছাকাছি হবে বয়েস। বাদামী চোখে। নিতান্ত অবহেলা, বোঝা যাচ্ছে অন্যদের সহজে আমল দেয় না এ নোক। অন্যদের চ্যালেঞ্জ করে, খুঁচিয়ে এক ধরনের আনন্দও পায় বোধহয়। মোট কথা, সিদ্ধান্তে পৌঁছল ও, খুব বিপজ্জনক না হলেও এ ধরনের লোকের উপস্থিতি অস্বস্তি কর। সঙ্গীদের দিকে তাকাল আগন্তুক, তারপর দুজনকেই বাতিল করে দিয়ে ফিরল লোকটির দিকে। আমাকে কিছু বলছ, মিস্টার? নিস্পৃহ কণ্ঠে জানতে চাইল ও।

না, মিসেস বার্থেজকে বলছিলাম, কাছে দাঁড়ানো মহিলার দিকে তাকাল সে, চাপা হাসি দেখা গেল চোখে-মুখে। ওকে কিছু বলেছি আমি? সঙ্গীদের উদ্দেশে শুধাল।

মুখ টিপে হেসে উঠল অন্যরা, উত্তরে মাথা নাড়ল।

আচ্ছা, বেন, মোটাসোটা সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল সে, চোখে কৌতুক। লিয়ন সিটিতে এ ধরনের ছোঁকছোঁক করা ভবঘুরেদের আসা-যাওয়া কিভাবে বন্ধ করা যায়, বলো তো? এরকম একটা আইন করার সময় হয়তো হয়েছে-ইচ্ছে করলেই কেউ যেখানে-সেখানে ঢুকতে পারবে না।

বিশেষ করে এই ক্যাফের কথা বোঝাতে চাচ্ছ তুমি? হেসে পাল্টা জানতে চাইল বেন, উদ্দেশ্যপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল অন্য সঙ্গীর দিকে।

তুমি বোধহয় আমার সম্পর্কেই বলছ, শান্ত, সাবলীল কণ্ঠে খোশ-গল্পে বাধ সাধল আগন্তুক। নির্বিকার দেখাচ্ছে তাকে। আমি ছাড়া আর কেউ এখানে নেই। তোমার বন্ধুদের যদি বলে থাকো, উল্টোদিকে বসা দুজনকে দেখাল। তাহলে মিটে গেল ব্যাপারটা। আমার তাতে কিছু যায়-আসে না।

ধক্ করে জ্বলে উঠল লোকটার চোখ, দাড়িয়ে পড়ল সে।

মি. ক্রুশার, দয়া করে শান্ত হয়ে বসো, চাপা স্বরে বলল মহিলা, কণ্ঠে বিরক্তি চাপা থাকল না। একজন ভদ্রলোকের আচরণ কি রকম হওয়া উচিত তা বোধহয় তোমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। ঘুরে আগন্তুকের দিকে ফিরল, তার ভয় হলো হয়তো এখানেই শেষ হবে না ব্যাপারটার; আগন্তুক সদিচ্ছা দেখালে অবশ্য তা ঘটতে পারে। প্রত্যাশা নিয়ে তার দিকে তাকাল মিসেস বার্থেজ। আগন্তুকের মধ্যে আগ্রহ না দেখে খুশি হলো, এগোল দরজার দিকে।

তাকে অনুসরণ করে পোর্টে বেরিয়ে এল সে। ধন্যবাদ তোমাকে, মৃদু স্বরে বলল মহিলা। তোমরা আগে থেকে পরিচিত?

প্রথম দেখলাম ওকে।

বুঝতে পারছি না। এমনিতে সে খুব ভদ্র আচরণ করে সবার সাথে, হঠাৎ…

হয়তো আমার চেহারা-সুরৎ ওর পছন্দ হয়নি, ক্ষীণ হেসে বাধা দিল সে। ওর মত দ্র কাপড় নেই পরনে, পকেটেও পর‍্যাপ্ত টাকা নেই।

তাতে ওর কিছু আসে-যায় না।

বোধহয় আসে-যায়, সে চায়নি ওর সামনের টেবিলে একজন ভবঘুরে বসে থাকুক, নড করল আগন্তুক, মহিলাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পোর্চ ছেড়ে নেমে সাইডওঅক ধরে এগোল।

শহরটা একবার চক্কর দেয়া যাক, ভাবল সে। গির্জা পর্যন্ত হেঁটে চলে গেল। পশ্চিমের কোন বিচ্ছিন্ন শহরে যেমন থাকে এখানে তারচেয়ে বেশিই আছে, গির্জার পাশে স্কুলটা দেখে ভাবল। ব্যাংকটা শহরের প্রায় মাঝখানে। ছোট দুটো হোটেলও আছে।

ফেরার পথে প্রথম সেলুনে ঢুকে পড়ল আগন্তুক। বাইরের চেয়ে ভেতরে আলো কম। একপাশে বিশাল বার, বাকিটা জুড়ে ছড়ানো-ছিটানো টেবিল আর চেয়ার। দেয়ালের কোণে আয়না লাগানো, কেউ ইচ্ছে করলে এককোণে বসেও সবার ওপর নজর রাখতে পারবে। বারের সামনে রাখা টুলের সারির একটায় বসে হুইস্কির ফরমাশ দিল সে। চোখ বুলাল অন্যদের ওপর। দুটো টেবিলে পোকার খেলা চলছে, কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে কয়েকজন। আরেকটা টেবিলে বসে গল্প করছে তিন পাঞ্চার, সামনে হুইস্কির বোতল আর গ্লাস।

বারের ওপর গ্লাস নামিয়ে রাখল মোটাসোটা বারকিপার। থলথলে মুখ, চর্বির আধিক্যে চোখগুলো প্রায় সময়েই বুজে থাকছে। সবল ভারী হাত বারের ওপর রেখে ঝুঁকে এল সে। কাজ খুঁজছ নাকি?

মন্দ হয় না তাহলে। পকেটের অবস্থা সুবিধের নয়।

টেম্পলার লোক খুঁজছে। উত্তরে মাইল খানেক গিয়ে প্রথম ট্রেইল ধরে এগোলে বাথানটা পেয়ে যাবে। ওর হাল বিশেষ সুবিধের নয়, ঠিক মত বেতন দেয়ার অবস্থাও নেই। খরা আর রাসলাররা ডুবিয়ে ছেড়েছে। এদিকে ওকে নোটিশ দিয়েছে ক্রুশার। হয়তো দুই মাস পরই ব্যাংকের সম্পত্তি হয়ে যাবে বাথানটা।

ক্রুশার?

হেনরী ক্রুশার, ব্যাংক মালিকদের একজন।

হয়তো ক্যাফেতে দেখা সুবেশী ওই লোকটাই, বয়সটা কমই-ভাবল আগন্তুক।

অথবা প্রাইসের স-মিলে যেতে পারো। সকালে পা কেটে ফেলেছে ওর এক লোক। পরিশ্রম করতে রাজি থাকলে ওখানেই যাও। প্রাইস ভাল বেতন দেয়।

কোথায় পাব ওকে?

ব্যাংকের পাশের গলি ধরে পুবে কিছুদূর গেলে পেয়ে যাবে মিলটা।

ধন্যবাদ।

হুইস্কি শেষ করে উঠে দাঁড়াল আগন্তুক। সময়টা এখানেই কাটানো যাক, সিদ্ধান্ত নিল সে, পোকার টেবিলে চেয়ার খালি হয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল, তারপর অন্য কেউ আগ্রহী হলো না দেখে বসে পড়ল। ডিলার লোকটা তাস বাটার ফাঁকে দেখল ওকে। ভাবলেশহীন মুখ, পেশাদার। অন্য দুজন তা না হলেও একেবারে আনাড়িও নয়। চোখের অস্থির চাহনি সতর্ক করল ওকে, ধারণা করল কোন ঝামেলা হলে এদের কাছ থেকেই আসার সম্ভাবনা বেশি।

তাস কখনও ঠকায়নি ওকে। কারণটা বোধহয় এই, হিসেব করে যুক্তি দিয়ে খেলে সে। আজও খেলল। খেলার ফাঁকে লোকজনের টুকরো টুকরো কথা কানে আসছে। পশ্চিমের যে কোন শহরে সেলুন হচ্ছে খবরের জন্যে আদর্শ জায়গা। কয়েক ঘণ্টায় মোটামুটি একটা চিত্র পেয়ে গেল-কেভিন লপার, হেনরী ক্রুশার, রিক স্যাভেজ…বেশ কয়েকটা নাম। পাঁচটা বাধানের নাম কানে এসেছে, খরার প্রকোপ চলতে থাকায় ঘুরে-ফিরে তা নিয়েই ওদের আলোচনা বেশি হচ্ছে। অবশ্য রাসলিং নিয়েও আলোচনা করেছে।

নিজের পকেটের অবস্থা কাউকেই বুঝতে দেয়নি আগন্তুক। প্রথম দুই ঘণ্টায় দুএকটা ঝুঁকি নিয়েছে কেবল, কাজে লেগে যাওয়ায় বেশ কিছু লাভ হয়েছে। ডিলার লোকটা চুরি করছে, কিন্তু ওর বেলায় তা করছে না, কারণটা বুঝতে পারল না ও। লোকটাকে বাজিয়ে দেখতে চাইল, উৎসাহ দেখা গেল না, তার মধ্যে। অবাক হলো ও, জুয়াড়ী এড়িয়ে যাচ্ছে ওকে, কিন্তু সুযোগ পেলেই অন্য দুজনকে কচুকাটা করতে দ্বিধা করছে না।

হেরে গিয়ে খেপে গেল ওরা। বাজিয়ে দেখতে গিয়ে আরও হারল। যথেষ্ট হয়েছে ভেবে হিসাব করে খেলা শুরু কৱল আগন্তুক। একটা ড্রিঙ্ক দিয়ে যাওয়ার সময় ওর পাশে এসে দাঁড়াল বারকিপার। তোমার দিন দেখছি আজ, স্ট্রেঞ্জার! হালকা সুরে বলল চর্বির দলা। লেসলির তো তলানিতে এসে ঠেকেছে, ডিলারের দিকে ইঙ্গিত করে যোগ করল।

আমার পক্ষ থেকে সবাইকে ড্রিঙ্ক দাও।

অন্য দুজন খেলে বোম হয়ে আছে। অনবরত সিগারেট ফুঁকে নিজেদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।

শেষ দানটা বেশ বড়সড় হলো। সব চিপস পকেটে ঢুকিয়ে উঠে দাঁড়াল ও।

আরে, তুমি দেখছি চলে যাচ্ছ? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে উঠল ডান পাশের লোকটা। মগের মুল্লুক নাকি? ইচ্ছে হলো আর যখন-তখন চলে যাবে?

ভাগ্য আজ তোমাদের সাথে নেই, বন্ধুরা। আরও খেললে শেষে ফতুর হয়ে যাবে। ভরাডুবি হওয়ার আগেই সাবধান হওয়া ভাল নয় কি? আমার পক্ষ থেকে ড্রিঙ্ক নাও মাথা ঠাণ্ডা করে ভেবে দেখো ঠিক বলেছি কি-না।

চুরি করেছ তুমি? অভিযোগ করল অন্যজন।

ওর দেয়া তাসে খেললাম আমরা, ডিলারকে দেখাল আগন্তুক। ভজকটটা কোথায় হয়েছে বুঝছি না তো। তুমি যা বলেছ, ঘুরে লোকটার দিকে তাকাল। প্রমাণ করতে পারবে? কেউ বললেই তো…

তুমি চুরি করেছ! চড়া গলায় ওকে বাধা দিল প্রথমজন। রাগে ফুলে উঠেছে গলার পেশীগুলো। এর মধ্যে প্রমাণ দেয়ার কি আছে? আমাদের টাকা এখন তোমার পকেটে এবং কেটে পড়তে চাইছ তুমি। এটাই তো যথেষ্ট। কি বলো, লেসলি?

ছোট্ট করে মাথা ঝাঁকাল ডিলার, ঠোঁটে মৃদু হাসি।

তো? লোকটার মুখোমুখি হলো ও, চেয়ার পেছনে ঠেলে দিয়েছে।

সেলুনের বাকি লোকগুলো দেখছে ওদের।

খেলতে হবে তোমাকে! জেদী স্বরে বলল পাশের লোকটা।

উঁহুঁ, দৃঢ় স্বরে ঘোষণা করল আগন্তুক। সুযোগ পেলে আরেক দিন হয়তো খেলা যাবে। কিন্তু আজ আর নয়।

দুপা এগোতে সক্রিয় হয়ে উঠল ওরা। লাফিয়ে ওর পথরোধ করল পাশের লোকটা। চোখের কোণ দিয়ে আগন্তুক দেখতে পেল টেবিল থেকে হুইস্কির বোতল তুলে নিয়েছে অন্যজন। দেখো, বন্ধুরা, অযথাই মাথা গরম করছ, হালকা সুরে বলল ও যদিও তাতে বিন্দুমাত্র আপসের সুর. নেই বরং চাপা বিরক্তি প্রকাশ পেল।

জেফ, এই ব্যাটা দেখছি আমাদের জ্ঞান দিতে চাইছে! দুপা এগিয়ে এসে সামনে দাড়াল বোতলঅলা। চলো, টাকা নিয়ে কেটে পড়ার খায়েশ ওর মিটিয়ে দেই।

লোকটাকে দেখল আগন্তুক, গায়ে-গতরে জোর ভালই, আছে। তুলনায় অন্যজনকে শীর্ণদেহী বলা চলে। চোখে একরাশ জেদ, বোঝা যাচ্ছে একেও টপকে যেতে হবে। ডিলারের দিকে ফিরল ও, লোকটাকে নিস্পৃহ দেখাচ্ছে কিন্তু চোখে চাপা কৌতূহল। আগন্তুক নিশ্চিত হলো এ লড়াইয়ে অংশ নেবে না ডিলার, বরং ও কিভাবে লোকগুলোকে সামাল দেয় তা দেখতে আগ্রহী। পুরোপুরি পেশাদার লোক। অন্তত একজন তো কমল, ভাবল আগন্তুক।

টাকাগুলো টেবিলে রাখো, স্ট্রেঞ্জার। তারপর মানে মানে কেটে পড়ো, বলল লিউক। নির্দেশের মত শোনাল কথাগুলো।

উঁহু, তোমাদের কথাগুলো পছন্দ হচ্ছে না আমার।

নিকুচি করি তোমার পছন্দের! খেপে গিয়ে ঘুসি চালাল জেফ।

এরকম কিছু হতে পারে, জানত আগন্তুক। সরে গিয়ে ঘুসিটা কাটাল, তারপর হাত চালাল। উড়ে গিয়ে টেবিলের ওপর আছড়ে পড়ল জেফ। হুড়মুড় করে তাকে নিয়ে উল্টে পড়ল টেবিলটা। মেঝেতে মাথা ঠুকতে জ্ঞান হারাল সে।

ঝটিতি ঘুরে দাঁড়াল ও, লিউক ওর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ক্ষিপ্রতার সাথে যোতল চালিয়েছে। বলিষ্ঠ কাঁধে লাগল আঘাতটা। বোতল ভেঙে হুইস্কি আর কাচের টুকরো ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। দুপা এগিয়ে লিউককে ধরে ফেলল ও, ঝটপট দুটো ঘুসি হাঁকাল। মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল লোকটা। রাগে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল এবার, হাত বাড়াল পিস্তলের দিকে ছুটে এসে পা দিয়ে তার হাত মেঝের সাথে চেপে ধরল আগন্তুক। ককিয়ে উঠল লোকটা।

ঝুঁকে হোলস্টার থেকে পিস্তলটা বের করে নিল ও, তারপর নামিয়ে আনল লিউকের দিতে। জ্ঞান হারানোর আগে খিস্তি করল সে।

পিছিয়ে এল আগন্তুক, ঘুরল ডিলারের দিকে।

নিজের চেয়ারে বসে আছে লেসলি উইলিয়ামস। অস্বস্তিভরে হাসল, কাঁধ উঁচাল অসহায় ভঙ্গিতে। বোকামির দণ্ড দিল ওরা, হালকা সুরে মন্তব্য করল।

কিন্তু তুমিই ওদের উস্কে দিয়েছ! শীতল কণ্ঠে অভিযোগ করল আগন্তুক। চুরি করেছ তুমি কিন্তু তা আমার ওপর চাপাতে চেয়েছ।

ঠিক বললানি, বন্ধু, হাসি ম্লান হলো না লেসলির।

তুমি একটা আস্ত মিথ্যুক এবং সস্তা চোর! তোমার মত বহু লোক দেখেছি আমি, হাত সাফাই করে যারা নিরীহ লোকের পকেট খালি করেছে। শেষপর্যন্ত ওরা শহর বা ক্যাম্প ছেড়েছে নয়তো বুটহিলে শুয়েছে। টেবিলের ওপর লিউকের পিস্তলটা ছুঁড়ে দিল ও।

লেসলি উইলিয়ামসের হাসি মুছে গেল। রাগ ফুটে উঠল চোখে। গানফাইটের আশঙ্কায় একপাশে সরে গেল সেলুনের সব লোক। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। চোখ সরিয়ে নিয়ে টেবিলে রাখা পিস্তল দেখল জুয়াড়ী, তারপর আগন্তুকের উরুতে চলে গেল তার দৃষ্টি। দুপা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছে সে পনেরো ফুট দূরে, শরীর টান টান। ক্ষিপ্রবেগে পিস্তল তুলে নিতে উরুর কাছে আলতোভাবে পড়ে আছে ডান হাত।

হঠাৎ নিজেকে গুটিয়ে নিল লেসলি, ক্লিষ্টভাবে হাসল। দেখো বাপু, ও জিনিসটা ভাল চালাতে জানি না আমি। তাছাড়া আমাদের মধ্যে এমন কিছু ঘটেনি যে ডুয়েল লড়তে হবে। ব্যাপারটা অন্য কোনদিন মিটিয়ে ফেলব আমরা।

সেদিন টেবিলটা দেয়ালের আয়নার কাছ থেকে সরিয়ে ঘরের মাঝখানে রাখবে আশা করি, আর ওই ফুলহাতা কোটটা পরে এসো না।

ত্যাগ করল ডিলার। তোমার ইচ্ছেমতই হবে, মিস্টার, জোর করে নিজেকে ভাবলেশহীন রাখার চেষ্টা করল যদিও তার চালাকি ধরা পড়ে গেছে।

হচ্ছে কি এখানে, অ্যাঁ? সজোরে খুলে গেল ব্যাটউইং দুরজা, ভরাট কর্তৃত্বপূর্ণ একটা স্বর শোনা গেল।

আর সবার মত ঘুরে সেদিকে তাকাল আগন্তুক, বিশালদেহী এক লোক এসে দাঁড়িয়েছে। ঘরের যে কোন লোকের চেয়ে অন্তত ইঞ্চি ছয়েক লম্বা হবে। প্রচণ্ড চওড়া বুকের ছাতি, পঁয়তাল্লিশ ইঞ্চির কম হবে না। শার্টের পকেটের ওপর আঁটা টিনের তারাটা বিশাল বপুর তুলনায় বেশ ছোটই লাগছে।

তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল আগন্তুকের দৃষ্টি। লিয়ন সিটির মার্শালের মুখের ওপর স্থির হলো। পাথরে গড়া একটা মুখ যেন, অনেকগুলো কাটা দাগ সেখানে। কানের গোড়ার কাছে উর্দিষ্ট চিহ্নটা খুঁজে পেল। সারা শরীরে প্রশান্তির পরশ, অনুভব করল সে, তিনটে বছরের বিরামহীন চলা শেষ হয়েছে বোধহয়। এমন একটা মুখই খুঁজছিল।

খুঁটিয়ে ওকে দেখছে মার্শাল। তোমাকে আগে কখনও দেখিনি।

দেখার কথাও নয়, আজই এসেছি।

কোথায় উঠেছ?

শহরে ঢোকার মুখে প্রথম আস্তাবলটায়।

কে যেন হেসে উঠল, মার্শাল সেদিকে ফিরতে চুপ মেরে গেল। ঘুরে বারকিপারের দিকে তাকাল সে। এ দুটোর মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করো, বব, অবলীলায়, বাম হাতে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। ডিলারের দিকে ফিরল এবার। তোমার কোন অভিযোগ আছে?

না। যা ঘটেছে তাতে ওর কোন দোষ নেই। ঘরের আরও দুজনকে জিজ্ঞেস করল মার্শাল। মোটামুটি একই বক্তব্য পাওয়া গেল। আনমনে মাথা ঝাঁকাল সে, বারকিপারকে ড্রিঙ্ক দেয়ার ইঙ্গিত করল। টেবিলে রাখা তাস তুলে নিয়ে ফেটতে শুরু করল এরপর। তো লেসলি, এ নিয়ে একমাসের মধ্যে তিনবার ঝামেলা বাধল তোমার টেবিলে। এভাবে চললে কিন্তু খেলাটা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব আমি। আর তোমাকে লিয়ন সিটি ছাড়তে হবে।

দেখো, রিক, আজকের ব্যাপারটায় আমার হাত ছিল না।

শাট আপ, লেসলি! আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না, মুখিয়ে উঠল মার্শাল, থাবড়া মারল টেবিলে। পিস্তলটা দুহাত লাফিয়ে উঠে আবার টেবিলেই পড়ল, আর টেবিলটা কাঁপতে থাকল। তোমার মত ঘঁচোড় জুয়াড়ীদের এই রিক স্যাভেজ ভাল করেই চেনে, বহুবার শায়েস্তা করেছে। বোলচাল বাদ দিয়ে আসল কথায় আসো! এই লোকটা কোন ভজকট করেছে?

না। ও ফেয়ার খেলে জিতেছে।

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মার্শাল। চেয়ারটা কাঁপতে শুরু করল, ভেঙে পড়বে যেন। তো, আরেকবার হারলে তুমি, লেসলি! একটা, অচেনা লোক তোমাকে টেক্কা দিয়ে জিতে গেল, আর তা সহ্য করলে?

আমি হারিনি, রিক। হেরেছে ওরা দুজন।

তো এতক্ষণে বোঝা গেল ব্যাপারটা। তোমার চেয়ে সেয়ানা মনে হয়?

ভাল খেলে, জুয়াড়ীর সংক্ষিপ্ত জবাব।

লপার শুনলে খুশি হবে। সে তো খেলার লোকই পায় না। কি, জমবে ওর সাথে?

মন্দ হবে না।

আগন্তুকের দিকে ঘুরল রিক স্যাভেজ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখল কিছুক্ষণ। থাকছু নাকি?

শহরটা আমাকে আগ্রহী করে তুলেছে।

সশব্দে চেয়ার ছাড়ল মার্শাল। ও দুটো কোথায়, বব? বারকিপের দিকে ফিরে জানতে চাইল।

পোর্চে আছে। বলেছি তোমার সাথে দেখা করে যেতে।

ভাল করেছ। দরজার দিকে এগোল স্যাভেজ, জুতো জোড়া, মেঝেতে ভরাট শব্দ তুলছে। হাতের তালু দিয়ে ব্যাটউইং দরজার পাল্লা ঠেলে বেরিয়ে গেল। পাল্লাজোড়া ফিরে এসে এত জোরে পরস্পরের সাথে বাড়ি খেল যে মনে হলো ভারী কিছু একটা মেঝেতে আছড়ে পড়েছে। এসো আমার সাথে! বাইরে মার্শালের চাপা গলার নির্দেশ শোনা গেল একটু পর।

জুয়াড়ীর ওপর আগন্তুকের চোখ। বিষদৃষ্টিতে মার্শালের পেছন দিকটা দেখছে লেসলি উইলিয়ামস, চোখে তীব্র ঘৃণা। বিড়বিড় করে বলল কি যেন। তারপর মেঝেতে একদলা থুথু ফেলল। ঘরের অন্যান্য তোক নিজেদের চরকায় তেল দেয়া মনস্থ করল এবার, যার যার জায়গায় ফিরে গিয়ে ঘটনাটা নিয়ে আলাপ করতে শুরু করল।

দরজার দিকে এগোল আগন্তুক।

সাবধানে থেকো, বন্ধু, চাপা স্বরে পেছন থেকে বলল জুয়াড়ী। অন্তত আজকের রাতটা।

ঝট করে ঘুরে দাঁড়াল সে, তাকাল লেসলি উইলিয়ামসের চোখে।

বেশ কিছু ডলার জিতেছ তুমি। অনেকেই ভাবতে পারে তোমার পকেটে থাকার চেয়ে ওগুলো তাদের নিজেদের পকেটে থাকাই ভাল হবে।

ব্যাপারটা অত সহজ হবে না।

সময় করে এসো একবার, ওপরে থাকি আমি, নিচু স্বরে বলল সে যাতে অন্য কেউ শুনতে না পায়। তোমার সাথে বেশ কিছু কথা আছে। মনে হচ্ছে একই দলের লোক আমরা।

স্থির দৃষ্টিতে জুয়াড়ীর দিকে তাকিয়ে থাকল ও। বুঝতে চেষ্টা করছে লোকটার এত রাখ-ঢাক আর উদ্দেশ্যপূর্ণ কথার পেছনে কি থাকতে পারে। আচরণে আর কথাবার্তায় যতটা সহজ-সরল মনে হচ্ছে মোটেও তা নয় সে-এটুকু নিশ্চিত। একটু আগেও ওকে শত্রু ভাবছিল অথচ এখন যেন নিজের দলে টানতে চাইছে। কারণটা কি? বোঝা যাচ্ছে মার্শাল রিক স্যাভেজের কারণে বদলে গেছে জুয়াড়ীর মনোভাব, এবং স্যাভেজকে ঘৃণা করে লোকটা।

লেসলি উইলিয়ামস আর কিছু না বলায় দরজার দিকে এগোল আগন্তুক।

বেরিয়ে এসে ব্যাংকের দিকে এগোল ও। সন্ধ্যার আর বেশি দেরি নেই। ফুটপাথ আর রাস্তায় বেশ কিছু লোক দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগই সাধারণ পাঞ্চার, ভবঘুরে অথবা ক্যাটম্যান; নেস্টর বা সাধারণ ব্যবসায়ীও আছে। একটা হোটেলের সামনে তিনজন মেক্সিকানকে দেখতে পেল ও, নিজেদের মধ্যে আলাপে ব্যস্ত। অন্য কোন দিকে ভুলেও মনোযোগ দিচ্ছে না। সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এদিকে মেক্সিকানদের বসতি অ্যারিজোনার অন্য যে কোন জায়গার চেয়ে বেশি।

খুরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত রাস্তা পেরিয়ে ব্যাংকের পাশের গলিতে ঢুকে পড়ল সে। স্রেফ কৌতূহল বশে তাকাল ল-অফিসের দিকে। জানালা পথে মার্শালকে দেখা যাচ্ছে, নিজের চেয়ারে বসে আছে। সামনে জেফ আর লিউক দাঁড়িয়ে। পকেট হাতড়ে টাকা বের করে এগিয়ে দিল ওরা, তারপর বেরিয়ে এল বিরস মুখে।

দাঁড়িয়ে থেকে পুরো ঘটনাটাই দেখল ও। রিক স্যাভেজের সাথে কি ধরনের রফা হলো ওদের, জরিমানা? কিন্তু সে তো কোন অভিযোগ করেনি! শ্রাগ করে এগোল আগন্তুক, এটা তার ব্যাপার নয়। অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানোই বুদ্ধিমান লোকের কাজ।

গলি ধরে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসতে একরাশ ঠাণ্ডা বাতাস লাগল ওর শরীরে, পাইনের সুবাস নাকে দোলা দিল। পাহাড়ের দিকে তাকাল ও। আবছাভাবে চোখে পড়ছে চিরুনির মত খাজগুলো, শেষ বিকেলের আলোয় ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে আসছে। কিছুদূর এসে দেখতে পেল ছোটখাট কেবিনটা, ভোলামেলা জায়গাটার একেবারে কোণে, গুটি কয়েক পাইন আর কটনউডের ছায়ায় দাঁড়িয়ে। একপাশে অনেকগুলো গাছের গুড়ি পড়ে আছে, কাহেই বেশ কিছু চেলা করা কাঠ আর মাল টানার একটা ওয়াগন। নামমাত্র শেডের নিচে স্ট্র-তে দুটো তাগড়া খচ্চরকে খড় দেয়া হয়েছে। পাশে ওঅটর ট্রাফ। পুরো জায়গাটা পরিচ্ছন্ন।

কেবিনটা ছোট হলেও মজবুত। চিমনিতে ধোঁয়া উঠছে। নয়-দশ বছরের একটা ছেলে বেরিয়ে এল পোর্চে, দেখল ওকে, তারপর ছুটে ভেতরে ঢুকে পড়ল। আগন্তুক পোর্চ পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই চল্লিশোর্ধ্ব এক লোক বেরিয়ে এল। ছোটখাট মজবুত শরীর।

মি. প্রাইস? জানতে চাইল সে।

মাথা ঝাঁকাল লোকটা, চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল।

ববের কাছে শুনলাম তোমার একজন লোক দরকার।

ভেতরে এসো, বলে ঘুরে দাঁড়াল নিকোলাস প্রাইস। তারপর জোরাল গলায় ডাকল মার্ক নামের কাউকে। তোমার মা-কে আমাদেরকে কফি দিতে বলল, ছেলেটা দরজায় এসে দাঁড়াতে বলল সে।

প্রাইসের পেছনে ভেতরে ঢুকল আগন্তুক। ছোট কামরাটাই সম্ভবত কাঠ ব্যবসায়ীর অফিস। একটা টেবিল আর চারখানা চেয়ার। দেয়ালের কাছে ছোট ডেস্কে কাগজপত্র। ওপাশে গিয়ে নিজের চেয়ারে বসল প্রাইস, হাত বাড়িয়ে দিল। আমার পরিচয় তো জানোই। তুমি?

জেমস, হাত মেলানোর সময় জানাল আগন্তুক।

শুধু জেমস? কুটি করল প্রাইস।

ওটাই কি যথেষ্ট নয়?

থমকে গিয়ে কি যেন ভাবল সে, তারপর কাঁধ ঝাঁকাল। নামে কি আসেযায়। আমার দরকার কাজ। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি তা পারবে।

মার্ক প্রাইস, ছেলেটা, একটা ট্রে-তে কফি আর বিস্কুট পরিবেশন করে কেটে পড়ল।

দুজন লোক ছিল আমার, কফিতে চুমুক দিয়ে বলল কাঠ ব্যবসায়ী। একদিনের ব্যবধানে দুজনকেই হারালাম। পরশু রাতে জুয়া খেলতে গিয়ে লেসলি উইলিয়ামসের গুলিতে মারা পড়েছে একজন। মদে চুর হয়ে ছিল লোকটা, জুয়াড়ীকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেই বিপদ ডেকে এনেছে। আর অন্যজন, সকালে কাজ করার সময়ও মাতাল ছিল। কাঠ ফাড়তে গিয়ে নিজের পায়ে কোপ মেরে বসেছে। বোঝে অবস্থা, যত্তসব মাতাল নিয়ে আমার কারবার! তুমিও আবার ওরকম না তো?

উত্তর দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না জেমস।

পাশের ক্রীকটা দেখেছ? ওটা ধরে মাইল দুই গেলে পেয়ে যাবে জঙ্গলটা। ওখান থেকেই কাঠ সগ্রহ করি আমরা। গাছ কাটা, ফাড়ানোর পর বাড়তি কিছু কাজও করতে হবে। হোটেল, ক্যাফে আর কয়েকটা বাড়িতে কাঠ দিয়ে আসতে হবে। তবে সন্ধ্যার আগেই ছুটি পেয়ে যাবে।

দুপুরে আমার এখানে খাবে। রাতে এখানেই থাকতে পারো, সে তোমার ইচ্ছে। মাসে চল্লিশ ডলার। পরিশ্রমের তুলনায় বেতন হয়তো কম কিন্তু ইদানীং ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না আমার। তাছাড়া ওই লোকটাকেও কিছু টাকা দিতে হবে, আমার কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়েছে বেচারা। যাকগে, তোমার পোষাবে?

শেষ চুমুক দিয়ে মগ নামিয়ে রাখার সময় মাথা ঝাঁকাল জেমস। ড্রয়ার খুলে চুরুট বের করে ওকে অফার করল প্রাইস।

কাজটা ভাল না লাগলে আগে থেকে জানিয়ে, হুট করে কেটে পড়ো না। বিপদে পড়ে যাব তাহলে। গরু রাইড করার জন্যে লোক এখানে যথেষ্ট আছে কিন্তু কাঠ কাটার তোক পাওয়া মুশকিল।

চুরুট ফুকছে জেমস, নিকোলাস প্রাইসকে ওর পছন্দ হয়েছে।

আরেকজন না পাওয়া পর্যন্ত তোমাকেই চালিয়ে নিতে হবে। উঠেছ কোথায়?

ঠিক করিনি এখনও।

এখানে চলে এসো। হোটেলে থেকে টাকা নষ্ট করার দরকার কি? যাও, জিনিসপত্র নিয়ে এসো…আর আমাদের সাথে সাপার খাবে।

বেরিয়ে এসে ফিরতি পথে এগোল জেমস। অন্ধকার হয়ে এসেছে। আবছাভাবে চোখে পড়ছে গলিটা। মূল রাস্তার কাছে আসতে সেলুনের হৈ-হল্লা কানে এল, রাস্তায় লোকজনের চলাচল বেড়েছে। পশ্চিমের আর সব শহরের মত সন্ধ্যার পরপর সরব হয়ে উঠেছে মরা শহরটা, যেন ঘুম থেকে জেগেছে। মাঝরাতের পর আবার নীরব হয়ে যাবে।

আস্তাবলে এসে সোরেলটাকে ছাড়িয়ে নিল ও। কিছুটা নিরাশ হয়েছে হসল্যার, বিরক্তি প্রকাশ করতেও ছাড়েনি। স্যাডলে না চেপে হেঁটে ফিরতি পথ ধরল জেমস। দুধারের বাড়ি আর দোকান থেকে আসা আলোয় রাস্তার আঁধার পুরোপুরি দূর হয়নি। পাশের বাড়ি থেকে একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে এল, চিৎকার করে কি যেন বলল এক মহিলা, বাচ্চার মা বোধহয়। জড়ানো গলায় তাকে গাল দিল একটা পুরুষকণ্ঠ, তারপর একটা চড়ের শব্দ ভেসে এল। বোধহয় মহিলার গালে পড়ল, চাপা ফোঁপানির শব্দে ধারণা করল জেমস।

শ্রাগ করে নিজের পথে এগোল ও পশ্চিমে বিচিত্র সব মানুষের কারবার, লিয়ন সিটিতেও তাই। একটা দিন পেয়োনোর আগেই ওর অভিজ্ঞতা কম হয়নি। তবে এ দম্পতির ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক, অহরহ ঘটছে সর্বত্র। ওর কাছে এদের আচরণ আলাদা কোন অর্থ বহন করে না যতটা করে লেসলি উইলিয়ামস, রিক স্যাভেজ বা হেনরী কুশারের আজকের আচরণ। এখন বোঝার উপায় নেই, কিন্তু কয়েকটা দিন গেলে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

নিকোলাস প্রাইসের আস্তানায় ফিরে এল জেমস। বেডরোল আর স্যাডল ছাড়িয়ে সোরেলকে নিয়ে করালে চলে এল। ওটাকে দানাপানি দিয়ে দলাই-মলাই করল। খচ্চরগুলো নাক কুঁচকে সন্দেহের চোখে দেখল ওকে, তারপর খড়ের দিকে মনোযোগ দিল। একজন মহিলা বেরিয়ে এসেছে পোর্চে, খেয়াল করল জেমস। হাতে বালতি। করাল থেকে বেরিয়ে মহিলার দিকে এগোল ও। নড করল। ত্রিশোর্ধ, স্বাস্থ্যবতী মহিলা মিসেস প্রাইস। বালতি রেখে হাত বাড়িয়ে দিল সে।

ওগুলো আমাকে দাও, ম্যাম। এটা পুরুষদের কাজ।

মহিলার চোখে দ্বিধা, অস্বস্তিভরে তাকাল সদ্য নিযুক্ত লোকটির দিকে। না, আমিই পারব। এটা তোমার কাজের মধ্যে পড়ে না।

তাতে কি, মাটিতে রাখা বালতি তুলে নিল জেমস। কোত্থেকে আনতে হবে, ম্যাম, ক্রীকের পানি নিশ্চয়ই খাও না?

ব্যাংকের পেছনে কারসনদের কল থেকে নিয়ে এসো, ওটাই কাছে হবে।

পানি নিয়ে ফিরে খাবার ঘরে পৌঁছে দিল জেমস। খেয়াল করল বাসনকোসন ধোয়ার জন্যে ওঅশ বেসিনে ব্যবহারের পানিও ফুরিয়ে গেছে। ক্রীক থেকে পানি এনে দুটো পাত্রে ভরল ও।

তোমার কষ্ট হলো। মার্কের বাবা নেই, হোটেলে গেছে পাওনা আনতে। দুদিন ধরে কলটা ঠিক করতে বলছি। কাঠ কাটার জন্যে তোক কম থাকায় ওকেও হাত লাগাতে হচ্ছে। এদিকটা দেখার সময়ই পায় না বেচারা।

জেমস দেখল বিছানার ওপর বইপত্র নিয়ে বসেছে মার্ক। পড়ার চেয়ে ওর ব্যাপারে মনোযোগ বেশি ছেলেটার। চোখাচোখি হতে হাসল সে। জেমস নড করল ওকে, তারপর বেরিয়ে এল।

নিক এলেই খাবার দেব, পেছন থেকে বলল মহিলা। হাত-মুখ ধুয়ে এসো তুমি।

বেরিয়ে এসে স্যাডল ব্যাগ থেকে ক্ষুর আর কাপড় নিয়ে ক্রীকের কাছে চলে এল ও। দাড়ির জঙ্গলে হাত বুলাল। যতদূর মনে হচ্ছে পরিবারটা আন্তরিক, এদের সাথে তার সম্পর্কটা সুন্দরভাবেই শুরু হোক। নোংরা কাপড় আর দাড়ি নিয়ে টেবিলে বসা ঠিক হবে না। ক্রীকের পানিতে নেমে পড়ল ও। আন্দাজের ওপর মুখ ক্ষৌরি করল, আয়না ছাড়া অনায়াসে কাজটা করতে পারে। অনিশ্চিত যার জীবন সে পকেটে আয়না নিয়ে ঘুরে বেড়ায় না।

একটু পর খেতে বসল ওরা। খাওয়ার আগে প্রার্থনা করল প্রাইস, চোখ বন্ধ করে আছে। ছেলেটার সাথে বারবার চোখাচোখি হচ্ছে জেমসের, দারুণ কৌতূহলী মনে হচ্ছে ওকে।

খাওয়া শেষে বেডরোল নিয়ে ক্রীকের কাছে চলে এল জেমস, বিছানা করল। সময় নিয়ে সিগারেট রোল করল। ধরিয়েছে এসময় ওকে ডাকল প্রাইস, সাড়া দিতে সেখানে চলে এল কাঠ ব্যবসায়ী।

আরে তুমি দেখছি এখানে শোয়ার আয়োজন করেছ! বিস্মিত গলায় বলল সে। আমাদের একটা কামরা তো খালি পড়ে আছে। ওটা ব্যবহার করতে পারো।

খোলা ছাদই আমার কাছে স্বচ্ছন্দের, মি. প্রাইস, হেসে বলল জেমস। বাউণ্ডুলে মানুষ তো, অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে ওকে দেখল সে, তারপর শ্রাগ করে ফিরে গেল।

শুয়ে পড়ে সারা দিনের কথা ভাবল জেমস। মন্দ কাটেনি। অস্বচ্ছ একটা ধারণা নিয়ে এখানে আসা বোধহয় বিফলে যাবে না। একজনকে যখন পাওয়া গেছে তখন অন্যদেরও পাওয়া যাবে। উটকো ঝামেলা হিসেবে দেখা দিতে পারে লেসলি উইলয়ামস বা হেনরী ক্রুশার। জুয়াড়ীকে সামলানো কঠিন হবে না। ছোট্ট এ শহরের হেনরী কুশারের সাথে ওর আবার দেখা হবে এটা যেমন নিশ্চিত, তেমনি এ-ও ঠিক ওকে মোটেও পছন্দ করতে পারেনি লোকটা। প্রথম পরিচয়ের তিক্ততা খুব কমই কাটে, সেটা বরং পরে বাড়ে আরও। ত্রিশ চলছে ওর, অনেক বছর ঘুরে-ফিরে দেখেছে দেশটা। জানে পছন্দ করার মত লোককে প্রথম দেখায় ভাল লাগে, অন্তত খারাপ লাগে না। এ পরিবারটির ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে-জেমস জানে, এদের সাথে ভাল কিছু সময় কাটবে ওর। প্রাইস দম্পতি সত্যিই আন্তরিক, পছন্দ করার মত মানুষ। ঠিক উল্টোটা হয়েছে হেনরী ক্রুশারের বেলায়। আর রিক স্যাভেজকে এই প্রথম দেখলেও তার সাথে জেমসের জীবনের সবচেয়ে তিক্ত ঘটনা জড়িয়ে আছে। ঘটনাটা ওকে তিনটে বছর ধরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, ক্লান্তিহীন পথ চলতে প্রেরণা জুগিয়েছে। অপরিসীম ঘৃণা ওকে নাচার করে ছেড়েছে; বিন্দুমাত্র ধৈর্যহারা হয়নি সে, জানত একদিন ঠিকই ওদের খুঁজে পাবে।

সামনে কঠিন সময়, নিজের জীবন বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে মোটেই ভাবছে না ও। বরং এক ধরনের ক্লান্তিকর উল্লাস অনুভব করছে শরীরে, কারণ ওর পথচলা শেষ হয়েছে-গন্তব্যে পৌঁছে গেছে সে।

এবার প্রতিশোধের পালা।

<

Super User