শহরের পশ্চিম সীমান্তে সতর্ক শান্ত্রীর মতো দাঁড়ানো পাহাড়টার নাম গ্রে বাট। শহরের ঠিক মাঝখান থেকে ক্রমশ ঢালু হয়ে শেষ বাড়িটার মোটামুটি শদুয়েক গজ দুরে হঠাৎ খাড়া ওপর দিকে উঠে গেছে প্রায় পাঁচশো ফুট। রাত। পাহাড়ের পাথুরে দেয়ালে উদীয়মান চাঁদের রূপালি আলো প্রতিফলিত হয়ে ঝিলমিল করছে। শীতের সময় মাঝে মাঝে বড়সড় পাথর চাই গড়িয়ে পড়ে নীচে, পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা বসতিটাকে যেন পিষে মারতে চায় নির্মমভাবে।

দশটা বেজেছে বেশিক্ষণ হয় নি। ঘুমের চাদরে মুড়ি দিয়েছে গোটা গ্রে বাট শহর। নিঝুম প্রকৃতি কেবল বাট স্যালুন, বাফেলো স্যালুন আর ডেলহ্যান্টিস মারকেন্টাইল স্টোর-এ এখনও আলো জ্বলছে। শহরের প্রধান সড়ক বাট স্ট্রীটের ঢালের শেষ প্রান্তে শেরিফের অফিসেও আলো দেখা যাচ্ছে।

বাট স্ট্রীটে হাঁটছে সোনিয়া ম্যাকনেয়ার, একা। খাড়া পাহাড়ের ছায়ায় দাঁড়ানো বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে।

 স্বচ্ছন্দ সাবলীল ভঙ্গিতে এগোচ্ছে মেয়েটা; মাঝে মাঝে থেমে ঘাড় ফিরিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাইছে চাঁদের দিকে। এক বাক্স রিবন রয়েছে হাতে, কোরা শর্ট-এর দোকান থেকে ফিরছে ও; বিয়ের পোশাকের চূড়ান্ত ট্রায়াল দিয়ে এল।

সোনিয়া ম্যাকনেয়ার, ছিমছাম গড়ন, চলাফেরায় কিশোরী-সুলভ চপলতা, সারাক্ষণ হাসি লেগে আছে দুঠোঁটে, চোখজোড়ায় চঞ্চল দৃষ্টি। আগামী রোববারের পরের রোববারেই ওর বিয়ে, অধীর আগ্রহে দিন গুনছে।

স্যাটারলিদের পুরোনো বাড়ির ছায়ায় মৃদু নড়াচড়ার শব্দে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সোনিয়া। অন্ধকার থেকে এলোমেলো অথচ দ্রুত পায়ে এদিকে এগিয়ে আসছে একটা লোক।

ভেতরে ভেতরে একটু চমকে উঠলেও ভয় পেল না সোনিয়া, দাঁড়িয়ে পড়ল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করল লোকটাকে, পারল না। দৌড়ে পালানোর কথা ক্ষণিকের জন্যেও ওর ভাবনায় এল না। গ্রে বাট-এ রাতে রাস্তায় বেরোনো মেয়েদের জন্যে মোটেই বিপজ্জনক নয়।

অগ্রসরমান লোকটা গ্রে বাটের কেউ নয়, যখন বুঝতে পারল, দেরি হয়ে গেছে। অপরিচিত এবং নেশাগ্রস্ত দৌড়বে বলে ঘুরে দাড়াল সোনিয়া। গেটের কাছে এসে পড়েছে আগন্তুক। হ্যাচকা টানে গেট খুলেই সোনিয়ার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সে। পা বাড়ানোর সুযোগ পেল না সোনি, ধরা পড়ে গেল।

চিৎকার করার জন্যে মুখ খুললও, নোংরা একটা হাত চেপে বসল মুখের ওপর; প্রচণ্ড চাপে দম বন্ধ হয়ে এল। পাঁজাকোলা করে কোলে তুলে নিল ওকে আগন্তুক। গেট দিয়ে ঢুকে নির্জন অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

সহসা তীব্র আতঙ্ক ভর করল সোনিয়ার বুকে। প্রবল বেগে হাত, পা, ছুঁড়তে শুরু করল ও; কামড়ে দিতে চাইল মুখে চেপে বসা হাতে। কেবল আরও শক্ত হলো হাতের চাপ। শরীরের সর্বশক্তি করে করে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করল সোনিয়া, লাভ হলো না। লোকটা অসম্ভব শক্তিধর, তার সাথে ও পারবে কেন?

দিশে হারিয়ে ফেলল সোনিয়া। অজানা ভয় বাড়তি শক্তি যোগাল ওকে। কিন্তু সাড়াশির মতো শক্ত দুটি হাতের চাপ এতটুকু কমল না। হাত পা ছুঁড়ছে, ও, আঁচড়ে দিচ্ছে লোকটার মুখে, কিন্তু কোনও পরোয়াই করছে না সে।

হাঁপাচ্ছে এখন আগন্তুক, নিঃশ্বাসের তপ্ত ছোঁয়া লাগছে সোনিয়ার চোখে মুখে। লাথি মেরে শূন্য ঘরের দরজা খুলল লোকটা, ঢুকে পড়ল ভেতরে।

এক হাতে সোনিয়াকে শরীরের সঙ্গে চপে রেখে অন্য হাতে টান মেরে, ফড়ফড় করে ওর পোশাক ছিড়ে ফেলল লোকটা; তারপর ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলল।

ভয়ে, আতঙ্কে চিৎকার করতেও যেন ভুলে গেছে সোনিয়া। করুণ আবেদন ঝরল, ওর কণ্ঠে, দয়া করো! হায় খোদা, দয়া করো:

কিন্তু বৃথা, কাকুতি মিনতিতে গলল না কঠিন পাথর। শুরু হলো ওর জীবনের ভয়ঙ্করতম এবং লজ্জাকর অভিজ্ঞতা। বাধা পেয়ে খেপে উঠছে লোকটা প্রতিমুহূর্তে, হিংস্র জানোয়ারের মতো হুঙ্কার দিচ্ছে। দুহাতে ক্রমাগত চড় বসাচ্ছে সোনিয়ার মুখে। অবশেষে একসময় চেতনা হারাল সোনিয়া, নিথর হয়ে পড়ে রইল।

সারা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে জ্ঞান ফিরল সোনিয়ার; সেই সঙ্গে অপার্থিব আতঙ্ক আর সীমাহীন লজ্জা ভর করল মনে কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে বাড়িটায়, একা পড়ে আছে ও।

উঠতে গিয়ে ব্যর্থ হলো সোনিয়া; হামাগুড়ি দিয়ে, পোশাক খুঁজল। কয়েকটা ছেড়া টুকরো ছাড়া কিছু পাওয়া গেল না। একটা চেয়ারে ভর দিয়ে কোনওমতে উঠে দাড়াল ও।

বেতস পাতার মতো কাঁপছে থরথর করে। চিন্তা করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। টলমল পায়ে একটা খোলা দরজার দিকে এগোল সোনিয়া; দরজা পেরিয়েই হোঁচট খেলো, হুমড়ি খেয়ে পড়ল একটা বিছানার ওপর। বিছানার চাদরে দুর্গন্ধ, তবু গায়ে জড়িয়ে নিল, শুয়ে রইল ওভাবেই। কাঁপছে, হু-হুঁ করে কাদছে মেয়েটা।

বেদনার্ত হৃদয়ে একটা ভাবনাই জেগে উঠছে বারবার: মাত্র এক ঘণ্টা আগেও ফুলের মতো নিষ্পাপ সুন্দর জীবন ছিল ওর; অথচ এখন কিছুই অবশিষ্ট নেই।

আস্তে আস্তে কাঁপুনি থামল। কিছুটা ভাবতে পারছে এখন। ক্রমশ ক্রোধ জেগে উঠছে মনে। যে লোকটা ওর সর্বনাশ করল, প্রচণ্ড ঘৃণা বোধ করছে তার প্রতি।

ওর এই ক্ষতি কোনওদিন পূরণ হবার নয়, কিন্তু আর কিছু না হোক, লোকটাকে তো অন্তত শাস্তি দেয়া যায়।

ময়লা চাদর গায়ে জড়িয়ে উঠে দাঁড়াল সোনিয়া; এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে এল বাইরে।

উঠোন পেরিয়ে বড় রাস্তায় এল। দুটো স্যালুনের বাতিই নিভে গেছে, আঁধারে ডুব দিয়েছেডেলহ্যান্টিস মারকেন্টাইল; কিন্তু শেরিফের অফিসে এখনও আলো দেখা যাচ্ছে।

বাড়ি ফিরবে না শেরিফের অফিসে যাবে স্থির করতে এক মুহূর্তের বেশি সময় নষ্ট করুল না সোনিয়া; সোজা শেরিফের অফিসের দিকে ছুটে গেল। অন্ধকার, নিস্তব্ধ রাতে গলা বেয়ে উঠে আসা আর্তনাদ ঠেকানোর আর কোনও উপায় নেই।

.

শেরিফের জীর্ণ পুরাতন সুইভেল চেয়ারে বসে ডেস্কের উপর সবুট পা তুলে দিয়েছে ক্লিফ ফ্যারেল। কেন যেন অস্থির বোধ করছে; মাত্র এক হপ্তা পর ওর বিয়ে, সেটাই হয়তো কারণ। ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠল ক্লিফের ঠোঁটে, সোনিয়া ম্যাকনেয়ার যার হবু স্ত্রী, অস্থির তো তার লাগবেই।

দীর্ঘদেহী একহারা গড়নের যুবক ক্লিফ ফ্যারেল; মেহদীন পাকানো শরীর; কদিন আগে ছাব্বিশে পা দিয়েছে। বছর দুই হলো, জেস স্টোন বাট কাউন্টির শেরিফ হবার পর থেকে ও ডেপুটি শেরিফের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

পাহাড় চূড়ার জমাট বরফের মতো নীলাভ ওর চোখ, সুন্দর করে ছাটা মাথাভর্তি সোনালি চুল। মুখে সব সময় অমায়িক হাসি লেগে আছে। কিন্তু প্রয়োজনের মুহূর্তে এই হাসিমাখা মুখই চোখের পলকে কঠিন হয়ে ওঠে।

অ্যাশট্রেতে সিগারেট ঠেসে নিভিয়ে, ডেস্ক থেকে পা নামিয়ে উঠে দাঁড়াল ক্লিফ ফ্যারেল। আর্তনাদ করে উঠল চেয়ারটা।

হাঁটতে হাঁটতে জানালার সামনে এসে দাঁড়াল ও; তারপর ঘুরে সেলব্লকের দরজার কাছে এল, অন্যমনস্কভাবেই লাথি হাঁকাল গরাদে। আজ কয়েদী নেই জেলে, খামোকা বসে না থেকে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লেই ভালো হত।

আবার জানালার কাছে এসে বাইরে চোখ ফেরাল ফ্যারেল। নিকষ অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছে না রাস্তায়। তবে ওপাশের দোকানপাটের আবছা কাঠামো ধরা যাচ্ছে। অস্থির ভাবটা আবার ফিরে এল ওর মধ্যে।

ঢালু রাস্তায় ক্ষীণ নড়াচড়া ধরা পড়ল ক্লিফের চোখে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল ও। পরমুহূর্তে এক টানে দরজা খুলে বেরিয়ে এল। ক্ষণিকের জন্যে মেয়ে কণ্ঠে ফুপিয়ে ওঠার শব্দ এল কানে ছুটে এল সোনিয়া, দুহাতে বুকে টেনে নিল ক্লিফ।

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে কিছু বলতে চাইল সোনি, কিন্তু একটা শব্দও বেরোল না মুখ দিয়ে। দুহাতে ওকে কোলে তুলে নিল ফ্যারেল। অফিসে ঢুকে পা দিয়ে ঠেলে দরজা বন্ধ করল, তারপর কম্পিত অবিশ্বাসভরা কণ্ঠে বলল, কী হয়েছে! দোহাই খোদার, বলো, তোমার কী হয়েছে?

একটা লোক! টানা দেয়া তারের মতো কাঁপছে মেয়েটা। নিজেকে সামলাতে পারছে না। খটাখট বাড়ি খাচ্ছে দুপাটি দাঁত।

কে? ভয়ঙ্কররকুম শান্ত ক্লিফ ফ্যারেলের কণ্ঠ; হিংস্র দৃষ্টি ফুটে উঠেছে দুই চোখে, যেন জ্বলছে দপদপ করে।

ওর বুকে মাথা গুঁজে রেখেছে সোনিয়া, কাঁপছে। চিনি না। স্যাটারলিদের ভাঙা বাড়ির উঠোনে লুকিয়েছিল। হায় খোদা…!

আরও শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরল ক্লিফ। যেন এভাবেই মেয়েটার মনের সব ভয় দূর করা যাবে, কাপুনি থ্রামবে। মৃদু কণ্ঠে বলল, তাকে আমি ধরব, সোনি। যেভাবেই হোক!

অসহায়ের মতো সোনিয়াকে ধরে বসে আছে ক্লিফ, সান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। সোনিয়ার মুখের দিকে তাকাল। ঠোঁট দুটো কেটে গেছে, রক্ত বেরোচ্ছে, ফুলে উঠছে। এক চোখে চোট লেগেছে, কালশিটে পড়ে গেছে ওখানে। চামড়া ছড়ে লাল হয়ে গেছে এক পাশের গাল।

চলো, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিই?

না। প্লিজ, ক্লিফ, এখন না!

অফিসের কাউচে সোনিয়াকে শুইয়ে দিল, ফ্যারেল। হাঁটু গেড়ে বসল পাশে। দ্বিধাগ্রস্ত। এই মুহূর্তে সোনিয়ার কাছে থাকা দরকার, ওকে একা রেখে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু এখানে বসে থাকার অর্থ দুবৃত্তকে বিনা বাধায় পালানোর সুযোগ দেয়া।

উঠে দাঁড়াল ক্লিফ ফ্যারেল। ওঅশ স্ট্যান্ডের গামলায় ঠাণ্ডা পানি ঢেলে একটা তোয়ালে ভিজিয়ে আস্তে আস্তে সোনিয়ার রক্তাক্ত মুখ মুছে দিল। ভয়ার্ত চোখে ক্লিফের দিকে তাকাল সোনিয়া, দৃষ্টিতে বেদনা, সীমাহীন গ্লানি। প্রায় নিঃশব্দে নড়ে উঠল ওর ঠোঁটজোড়া। ওকে খুন করতে হবে, ক্লিফ! যেভাবে পারো! শাস্তি দাও লোকটাকে, ওর কারণেই আমাদের বিয়ে ভেঙে গেল!

কে বুলেছে! কেন একথা বলছ? না হয় একটু চোট পেয়েছ, তাতে কী? দুদিনেই সেরে যাবে। বিয়ে ভাঙার প্রশ্নই উঠে না।

সোনিয়ার চেহারা দেখে লোকটার টুটি কামড়ে ছিড়তে ইচ্ছে করছে ফ্যারেলের। অস্ফুট কণ্ঠে সোনিয়া বলল, আমার মতো মেয়েকে কেউই কথা শেষ হলো, না, কান্নায় ভেঙে পড়ল!

চলো তোমাকে বাড়ি দিয়ে আসি, বলল ফ্যারেল, তারপর ডাক্তারের কাছে যাব।

এবার আপত্তি করল না, সোনিয়া। হতাশার ছাপ ওর চেহারার প্রতিটি রেখায়। ওকে কোলে তুলে নিল ক্লিফ ফ্যারেল। সোনি, আমি একবিন্দু বাড়িয়ে বলছি না, তোমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যেও না, বলতে পারো স্বার্থপর হয়ে পড়েছি, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না আমি।

ওর কথা সোনিয়া শুনেছে কিনা বুঝল না ক্লিফ। ভাষাহীন শূন্য দৃষ্টি ফুটে উঠল ওর চোখে। আতঙ্কে শিউরে উঠল ক্লিফ। সোনিয়াকে নিয়ে জেলহাউস থেকে বেরিয়ে এল, দ্রুত এগোল ওদের বাড়ির দিকে।

একটু পরেই গেটে পৌঁছে গেল, লাথি মেরে গেট খুলে প্রায় ছুটল দরজার উদ্দেশে। পা দিয়ে দুরজায় ধাক্কা মেরে, অধৈর্যভাবে অপেক্ষা করতে লাগল। এখন কাঁপছে না সোনিয়া। ওর চেহারা দেখতে পাচ্ছে না ফারেল, কিন্তু বুঝতে পারছে, এখানে আসার ফাঁকে ভয়ঙ্কর পরিবর্তন এসেছে মেয়েটার মাঝে।

ধুলো-মলিন জানালার কাঁচের ওপাশে আলোর আভাস দেখা গেল।

পরমুহূর্তে দরজা খুলে গেল।

আমি ক্লিফ, কর্কশ কণ্ঠে বলল ফ্যারেল, সোনিকে নিয়ে এলাম। মারাত্মক একটা দুর্ঘটনায় পড়েছিল ও। সোনিয়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল ক্লিফ। প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও দ্রুত সামলে নিয়ে একরাশ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সোনিয়ার বাবা জুলস ম্যাকনেয়ার। হাউমাউ কান্না জুড়ে দিল সোনিয়ার মা।

দ্রুত দোতলায় এসে সোনিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিল ফ্যারেল। মুহূর্তের জন্যে দাঁড়িয়ে ওর ভীত-সন্ত্রস্ত চেহারার দিকে তাকাল। শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে ওকিন্তু মনের ওপর যে আঘাত লেগেছে?

ঠোঁটজোড়া বেঁকে গেল ওর; ঘাড় ফিরিয়ে সোনিয়ার বাবা-মায়ের দিকে তাকাল। দোহাই লাগে, আপনারা অস্থির হবেন না! চোট পেয়েছে সোনি, আপনারা নন। এখন আপনাদেরই ওকে সাহস যোগাতে হবে। আপনাদের সাহায্য, সহযোগিতা ওর সবচেয়ে বেশি দরকার এই মুহূর্তে

ওর কর্কশ কণ্ঠস্বরের কারণেই কিনা কে জানে, সোনিয়ার বাবা মাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হলো ক্লিফ। এখুনি ডাক্তার আনছি আমি, আবার বলল ও।

তাড়াতাড়ি নীচে নেমে অন্ধকার রাস্তায় বেরিয়ে এল ক্লিফ ফ্যারেল। একদৌড়ে দুব্লক দূরে ডাক্তারের বাড়িতে পৌঁছুল। হাঁপাতে হাঁপাতে করাঘাত করল দরজায়।

বাড়ির ভেতরে আলো জ্বলল। দরজা খুলে দাঁড়াল ডাক্তার রুফাস বোনার, এম ডি, ঢিলেঢালা ফ্লানেরের শার্ট তার গায়ে, উস্কোখুস্কো মাথাভর্তি চুল।

জলদি তৈরি হয়ে নাও, ডাক্তার, বলল ফ্যারেল। সোনির অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে!

ভেতরে এসো, কর্কশ অথচ স্পষ্ট ডাক্তারের কণ্ঠস্বর।

ভেতরে ঢুকে দরজা আটকাল ক্লিফ। মুহূর্তের জন্যে ওকে জরিপ করল ডাক্তার। তারপর ঘুরে শোবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। অ্যাক্সিডেন্ট? কীভাবে? শোবার ঘর থেকে প্রশ্ন করল সে।

একটা লোক, সোনিয়া চেনে না, কোরা শর্টের দোকান থেকে ফেরার পথে হামলা করেছে ওকে।

ওকে কী…?

ডাক্তার শব্দটা এড়িয়ে যাওয়ায় সারা শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেল ফ্যারেলের। কঠিন কণ্ঠে জবাব দিল, হ্যাঁ, মেরেছে। কেমন যেন করছে এখন। আমি…আতঙ্কে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে আমার ডাক্তার!

প্যান্ট আর জুতো পরে শার্ট গায়ে চাপাতে চাপাতে বেরিয়ে এল ডাক্তার বোনার। ফ্লানেলের শার্টটা, খোলে নি; ওটার নীচের অংশ প্যান্টের নিচে গোঁজায় কোমরের কাছে বেঢপভাবে ফুলে আছে।

বোতাম লাগিয়ে প্যান্টের নীচে ভালো করে শার্টটা টেনে দিল ডাক্তার। কোট, টুপি আর দরজার পাশের টেবিল থেকে ব্যাগ তুলে নিয়ে বলল, চলো!

ডাক্তারের পেছন পেছন বাইরে এসে দরজা আটকে দিল ক্লিফ।

লোকটাকে ধরতে পেরেছ?।

না। তবে ধরব। ডাক্তারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত এগোল ক্লিফ। ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে ও। সোনি ভালো হবে তো, ডাক্তার? মেয়েরা এসব সামলে উঠতে পারে?

কেউ পারে কেউ পারে না। বিয়েটা ভেঙে দিচ্ছ নাতো? পাগল? সোনির কী দোষ?

অস্পষ্ট শব্দ করল ডাক্তার, সন্দেহমিশ্রিত কণ্ঠে বলল, কিন্তু পরে-শহরের সবাই যখন জানবে?।

কেউ জানবে না… থেমে গেল ফারেল। কথাটা ঠিক নয়, যত চেষ্টাই করুক, জানাজানি হবেই, গোপন রাখা যাবে না। আর জানাজানি হলেই বা, কী আসে যায়?

সেটা অবশ্য তোমার ওপর নির্ভর করে।

সোনিয়াদের বাড়িতে পৌঁছুল দুজনে, গেট খুলে ভেতরে ঢুকল। দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছিল জুলস ম্যাকনেয়ার, নিঃশব্দে ঢোকার জায়গা করে দিল।

দোতলায় উঠে গেল ডাক্তার বোনার। ওপর থেকে সোনির মায়ের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। অসহায়ের মতো সোনির বাবার দিকে তাকাল ক্লিফ।

বেজন্মাটাকে ধরো, ক্লিফ, জীবন দিয়ে হলেও!বলল জুলস ম্যাকনেয়ার।

<

Super User