কাহিনী সংক্ষেপ

পাগলা কুকুর বললেই হয়, মিডিয়া সম্রাট ম্যাডক ফাউলার আগামীকালের খবর আজকের বলে চালাবার আপতৎপরতায় মেতে উঠেছেন। সঙ্গে আছে কবির চৌধুরীর ছেলে টেকনো-টেরোরিষ্ট খায়রুল কবির আর জার্মান কিলিং মেশিন ডিক মেনাচিম। চীনের বিরুদ্ধে ব্রিটেনকে যুদ্ধে নামাবার সমস্ত আয়োজন যখন সম্পন্ন, বাধা হয়ে দাঁড়াল মাসুদ রানা। ব্যক্তিগত আক্রোশ উন্মাদ করে তুলল ফাউলারকে, সিদ্ধান্ত নিলেল নিউক্লিয়ার বোমা ফেলে ঢাকাকে হিরোশিমা বানাবেন। রাডারে ধরা পড়ে না এমন একটা জাহাজ নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ছুটে আসছেন তিনি, সঙ্গে আছে ওঅরহেড ফিট করা ক্রুজ মিসাইল। প্রশ্ন হলো, রানা কি করছে?

***

এক.

পাহাড়-চূড়া, উপত্যকা, মালভূমি ও গিরিখাদ সাদা তুষারে ঢাকা পড়ে আছে, আসা-যাওয়ার পথ হয়ে উঠেছে পিচ্ছিল ও বিপজ্জনক, অবশ্য সেজন্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার কাজ থেমে নেই। এশিয়া, ইউরোপ আর আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসেছে ওরা। দরদাম ঠিক হলে অনেকেই শুধু বায়না করে যাবে, অস্ত্রের চালান ডেলিভারি নেবে অন্যত্র; আবার কেউ কেউ ব্ৰীফকেস ভর্তি ডলার নিয়ে এসেছে, প্ৰয়োজনীয় জিনিস পাওয়া গেলে এখুনি কিনে নিয়ে যাবে।

এ সেই ইতিহাস প্ৰসিদ্ধ খাইবার পাস, পাক-আফগান বর্ডারের ঠিক ওপরে। গিরিখাদটার ভেতর নির্জন ল্যান্ডিং স্ট্রিপটা প্ৰকৃতিরই অবদান, ওটা থাকায় জায়গাটা চোরা-কারবারীদের জন্যে আদর্শ একটা বাজার হয়ে উঠেছে। খাইবার পাস সরু, আঁকাবাঁকা একটা প্যাসেজ; হিন্দুকুশ পর্বতমালার সদস্য সাফিদ কুহ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে বিস্তৃত–দুই দেশের মধ্যবর্তী দুর্গম ও  বৈরী এলাকা পার হওয়ার একটা মাধ্যম। সমদ্ধ একটা ইতিহাস আছে খাইবার পাসের। যীশুর জন্মের পাচশো বছর আগে পারস্যের প্রথম দারিয়ুস এই গিরিপথ ধরে সিন্ধু নদ পর্যন্ত এসেছিলেন। রাডইয়ার্ড কিপলিং তাঁর কবিতায় এই অঞ্চলের ব্রিটিশ আমলটাকে ধরে রেখেছেন। সমুদ্রসমতল থেকে তিন হাজার পাঁচশো ফুট ওপরে খাইবার পাস, পাহাড়শ্রেণীর ফাঁকে দুটো নদী বয়ে যাচ্ছে। শত শত বছর ধরে লোকজন কাফেলা নিয়ে আসা-যাওয়া করায় একটা পথ তৈরি হয়েছে, তবে সেটা বড় বেশি উঁচুনিচু। পরে শক্ত ও সমতল একটা রাস্তা বানানো হয়। পাকিস্তানের দিকটায় রেললাইন আছে, চৌত্ৰিশটা টানেল আর চুরানব্বুইটা ব্রিজ ও কালভার্ট পেরিয়ে সীমান্তে পৌঁছুতে হয়েছে।

এয়ারস্ট্রিপ মানে পাহাড় ঘেরা একটা মালভূমি। সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারীরা এক মাস পরপর কেনাবেচার জন্যে মিলিত হয় এখানে। এটাই একমাত্র সময় যখন ঝগড়াবিবাদ ভুলে শান্তি বজায় রাখা হয়, স্থগিত রাখা হয় প্রতিশোধ গ্রহণ, ঝেড়ে ফেলা হয় বিদ্বেষ ও সন্দেহ। এক মাস পরপর এই বাজারে ভাড়াটে সৈনিক, খুনী, সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, মৌলবাদী ফ্যানাটিক, চাঁদাবাজ মধ্যস্বত্বভোগীদের সমাবেশ ঘটে। ঠিক দাম দিতে পারলে সব জিনিসই পাওয়া যাবে এখানে–স্কাড মিসাইল, হাঙ্গেরিয়ান মর্টার, একে-ফরটিসেভেন, গ্রেনেড, রাসায়নিক অস্ত্র, হেলিকপ্টার গানশিপ, এবং এমনকি একজোড়া মিগ-টোয়েন্টিনাইনও আছে। পুরোপুরি ফুয়েল ভরা, সশস্ত্র, ওড়ার জন্যে তৈরি অবস্থায়।

কেউ গুনছে না, তবে আজকের বাজারে একশোর কিছু বেশি লোক জড়ো হয়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। অনেকেই উল্টো দিকে রওনা হয়ে, বহু ঘুরপথ পেরিয়ে এখানে পৌছায়। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা নেই, শান্ত পরিবেশে কেনাবেচা চলছে। চারদিকে সশস্ত্র গার্ডদের কড়া পাহারা, নিরাপত্তার কোন অভাব নেই। তবে এই বাজার কাদের আয়োজন, কারা নিরাপত্তার দিকটা দেখাশোনা করছে, সেটা কেউ জানে না। শুধু গুজব শোনা যায় নেপথ্যে আছে জার্মান মাফিয়া চক্র। ক্রেতা ও বিক্রেতার কাছ থেকে রসিদ ছাড়াই খরচার টাকা আদায় করা হয়। আমন্ত্ৰিত অতিথিরা আয়োজকদের পরিচয় নিয়ে মাথা ঘামায় না, তারা শুধু নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়। সশস্ত্র গার্ড আর  ইনফ্রারেড গ্যাটলিং গান সহ রাডার ডিশ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, দর কষাকষিতে মন দেয়।

কিন্তু সন্ত্রাসীরা জানে না যে তাদের সিকিউরিটি ফুটো করা হয়েছে। ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা ও সিক্রেট সার্ভিসের স্টাফ লন্ডনে বসে গোটা চোরা বাজারের ওপর নজর রাখছেন। বাজারে উপস্থিত তাদের একজন প্রতিনিধির কাছে লুকানো একটা ভিডিও ক্যামেরা আছে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি সিগন্যাল পাঠাচ্ছে সে।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিচুয়েশন কমে এক জোড়া বিশাল মনিটরের সামনে বসে আছেন ওঁরা। চোরা বাজারের রঙিন ও জ্যান্ত দৃশ্যাবলী বিস্মিত ও বিহবল করে তুলেছে সবাইকে। ওদের মধ্যে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের ডিরেক্টর মারভিন লংফেলো আছেন, আছেন তাঁর চীফ অভ স্টাফ বিল হ্যামারহেড, রুশ জেনারেল দিমিত্রি জুকোভস্কি, ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল রবিনহুড, এবং আরও কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা। অ্যাডমিরাল রবিনহুডের আপত্তি সত্ত্বেও জেনারেল জুকোভস্কিকে আজ ব্রিটিশ লিজেন্স হেডকোয়ার্টারে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মারভিন। লংফেলো, কারণ হিসেবে বলেছেন। খাইবার পাসে আসলে কি ঘটছে তা রাশিয়ানদের নিজের চোখে দেখা উচিত। ফিল্ড থেকে ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট পাবার পর বিএসএস চীফ অভিযোগ করেছিলেন, খাইবার পাসে রাশিয়ার চোরাই অস্ত্ৰ বেচাকেনা চলছে। অভিযোগটা রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করার পরই ডিফেন্স মিনিস্ট্রির সিচুয়েশন রূমে জেনারেল জুকোভস্কিকে আমন্ত্রণ জানান তিনি। কতিপয় মিলিটারি পাওয়ারহাউসের অন্যতম বলে গণ্য করা হয় অ্যাডমিরাল  রবিনহুডকে, কর্তৃত্ব ফলাতে ভালবাসেন; তার আপত্তি মর্যাদা না পাওয়ায় বিএসএস চীফের ওপর। মনে মনে খেপে আছেন তিনি, সময় ও সুযোগ পেলে বদলা নিতে ছাড়বেন না।

সিচুয়েশন রূমটা বিশাল গুহার মত দেখতে, আটকোনা। একজোড়া সিনেমা-সাইজ ভিডিও স্ক্রিন রয়েছে দেয়ালে। মেঝের মাঝখানে বিভিন্ন স্তরে সাজানো রয়েছে কমপিউটর, ডেস্ক, টেলিফোন ছাড়াও বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার নানা সরঞ্জাম ও উপকরণ। সঙ্কটের সময় এই সিচুয়েশন কমেই কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়। পরিস্থিতি সিরিয়াস হয়ে উঠলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ডাক পড়ে। আজ অবশ্য ডাকলেও আসতে পারতেন না তিনি, পূর্বনির্ধারিত সফরে জার্মানীতে চলে গেছেন। তবে যাবার আগে পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তিনি অ্যাডমিরাল রবিনহুডকে দিয়ে গেছেন।

রুশ অস্ত্রের বিরাট একটা চালান খাইবার পাসে আনা হবে, এই খবর পাবার পর অ্যাডমিরাল রবিনহুড এইচএমএস চেস্টারফিল্ডকে গালফ অভ ওমানে টহল শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সব রকম প্রস্তুতিই নেয়া  আছে, প্রয়োজনে এই সিচুয়েশন রমে বসেই চোরা বাজারে দ্রুত মিসাইল নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিতে পারবেন তিনি। পাক ও আফগান সরকার আগেই অনুমতি দিয়ে রেখেছে, বাজারটা কেউ ধ্বংস করে দিতে পারলে খুশিই হয় তারা। বাজারের আয়োজকরা এত বেশি শক্তিশালী আর সংগঠিত যে কয়েকবার সৈন্য পাঠিয়েও কোন লাভ হয়নি। কিভাবে যেন আগাম খবর পেয়ে সটকে পড়ে তারা, দুর্গম পার্বত্য এলাকায়। সমস্ত অস্ত্র লুকিয়ে ফেলে।

বিল হ্যামারহেড মাথায় একটা হেডসেট পরে আছেন, বাজারে উপস্থিত ক্যামেরা অপারেটরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করছেন তিনি। হাতে লাল একটা লেযার পেন, সেটার সাহায্যে বিরাট স্ক্রীনে ফুটে ওঠা ছবিগুলোর দুএকটা চিহ্নিত করছেন। বিস্ময়ে রুদ্ধবাক দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে। আমরা যেমন সন্দেহ করেছিলাম, সন্ত্রাসীরা এখানে নিয়মিতই অস্ত্র কিনতে আসে, বললেন তিনি। ওদিকে ওটা চাইনিজ লংমার্চ স্কাড। বাম পাশে দেখুন, একজোড়া ফ্রেঞ্চ এ-সেভেনটিন অ্যাটাক হেলিকপ্টার, দশ জোড়া রাশিয়ান মর্টার…

চোরাই মাল, বাধা দিয়ে বললেন জেনারেল জুকোভস্কি, চেহারায় বিব্রত ভাব।

আর কাঠের বাক্সের ভেতর ওগুলো আমেরিকান রাইফেল, চিলিয়ান মাইন। আর জার্মান এক্সপ্লোসিভ, বলে চলেছেন বিল হ্যামারহেড। মারভিন লংফেলোর দিকে তাকালেন একবার।

বিএসএস চীফ ভুরু উঁচু করলেন। আইডি?

হেডসেটে কথা বললেন হ্যামারহেড। হোয়াইট ফেস টু ব্ল্যাক নাইট। ডান দিকে দাঁড়ানো লোকগুলোর ওপর জুম করুন ক্যামেরা, প্লীজ।

বহু লোককে পাশ কাটিয়ে একজন লোকের মুখে স্থির হলো ক্যামেরা। ভিডিও ইমেজে অস্ত্র ব্যবসায়ী বা সন্ত্রাসীর চেহারা এখন স্পষ্ট। একটা বোতামে চাপ দিলেন হ্যামার, হেডক্রীনের চেহারা দেখে কম্পিউটর তার নিজের মেমোরি ঘাটছে। আধ সেকেন্ডের মধ্যে কয়েক হাজার চেহারা ফুটল ভিডিও ক্রীনে, আলোর একটা ঝ্লকের মত দেখাল, তারপর স্থির হলো একটা পাসপোর্ট সাইজ ছবি, পাশে তার ডোশিয়ে। তথ্যগুলো দ্রুত বলে গেলেন, কার্ল হেকলার। সাবেক পূর্ব জার্মানীর বিফফ টেরোরিস্ট গ্রুপের সদস্য। এখন সে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে লেবাননে কাজ করছে। লোকটার মুখ অস্বাভাবিক লম্বাগাল দুটো গর্তে বসা, কালো চুল, চোখে সানগ্লাস।

ক্যামেরা আরেকটা মুখের ওপর স্থির হলো। ফেসিয়াল ম্যাচিং প্রোগ্রাম আবার তার খেলা দেখাচ্ছে।

শিতো ইসাগুরা। রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ। টোকিওর সাবওয়েতে হামলার অভিযোগে তাকে খোজা হচ্ছে। বর্তমানে কাজ করছে জায়ারেতে, কোনও একটা গেরিলা গ্রুপের সঙ্গে। ইসাগুরা জাপানী, একহারা গড়ন, শজারুর কাঁটার মত টুল খুলি কামড়ে আছে, ঠোঁটে ফু-মান্চু গোফ থাকায় চেহারাটা ভয়ঙ্করই লাগে।

ক্যামেরা এবার ফোকাস করল চারজন লোকের ওপর। তারা বাক্স দিয়ে বানানো একটা ডেস্কের চারধারে দাঁড়িয়ে। তিনজন পুব ইউরোপের বাসিন্দা, অপর লোকটা উপমহাদেশীয়–ভারতীয়, পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী। তার মুখে ঘন কালো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চোলা আলখেল্লার ওপর ওভারকোট চড়িয়েছে, মাথায় একটা ফেজ টুপি। বয়েস আন্দাজ করা কঠিন, পচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে হতে পারে। অত্যন্ত সুদর্শন চেহারা, দীর্ঘদেহী। নড়াচড়া বা দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে আভিজাত্যের ভাবটুকু স্পষ্ট। বিশাল মনিটর ফ্রীনে অসহিষ্ণু দেখাল তাকে, ইঙ্গিতে বডিগার্ডদের কাছে ডাকছে। বডিগার্ডরা সসম্ভমে এগিয়ে এসে একটা ব্ৰীফকেস খুলে বাকি তিনজনকে দেখাল–ভেতরে থরে থরে সাজানো রয়েছে মার্কিন ডলার। ফেসিয়াল ম্যাচিং প্রোগ্রামের বোতামে চাপ দিলেন হ্যামারহেড, লোকটার ডোশিয়ে ফুটে উঠল ক্রীনে, পাসপোর্ট সাইজের ছবি সহ।

খায়রুল কবির। বেশ বেশ বেশ। ইনি অত্যন্ত রহস্যময় এক ব্যক্তি। স্বীকার করতে আপত্তি নেই, ইনিই টেকনোটেরোরিজমের উদ্ভাবক। সন্দেহ করা হয় তার নামের আগে বা পরে চৌধুরী ছিল, কিন্তু টাইটেলটা তিনি বাদ দিয়েছেন পরিচয় গোপন করার স্বার্থে। বিশেষ করে বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের ধারণা, ইনি আসলে কুখ্যাত কবির চৌধুরীর পুত্র। অবশ্য স্রেফ সন্দেহই করা হয়, আজ পর্যন্ত কোন প্রমাণ সংগ্রহ করা যায়নি। এফবিআই তাঁকে তিন বছর ধরে খুঁজছে, ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে পাশাপাশি দুটো হোটেল বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে। আমেরিকাতেই লেখাপড়া শিখেছেন। অ্যানার্কিস্ট হিসেবে কাজ করছেন পাচ বছর, একবারও ধরা পড়েননি। বর্তমানে নগদ টাকার বিনিময়ে কাজ করেন। আমি তাঁকে ভয় তো পাইই, সমীহও করি, কারণ ভদ্রলোক সত্যি বাপের মতই বিরল একটি প্রতিভা।

স্ক্রীনে দেখা গেল ব্ৰীফকেস ভর্তি টাকা দিয়ে চৌকো একটা ছোট লাল বাক্স কিনল খায়রুল কবির। বাক্সটা খুলল সে, কিন্তু ঢাকনির আড়ালে থাকায় লন্ডনের দর্শকরা ভেতরে কি আছে দেখতে পেলেন না। এনলার্জ করুন, নির্দেশ দিলেন বিএসএস চীফ মারভিন লংফেলো। হ্যামারহেডের নির্দেশে সাইটে উপস্থিত ক্যামেরা অপারেটর বাক্সটার ওপর ক্যামেরা জুম করল, আর ঠিক সেই সময়। প্রতিপক্ষ একজনের সঙ্গে কথা বলার জন্যে সামান্য একটু পাশ ফিরল খায়রুল কবির, বাক্সটার ভেতর কি আছে সবাই এবার তা দেখতে পেলেন। ওহু গড! লংফেলোকে বিস্মিত দেখাল। সিআইএ-কে এটার ভিডিও টেপ দেখানো হবে।

অ্যাডমিরাল রবিনহুড কাধ ঝাকালেন। এসপিওনাজ সংক্রান্ত ব্যাপারে তার কোনই আগ্রহ নেই। পঞ্চান্ন বছর বয়েসে এখনও তাঁর স্বাস্থ্য ফেটে পড়ছে। ধবধবে সাদা প্ৰকাণ্ড মুখে সব সময় মারমুখো একটা ভাব। কতৃত্ব ফলাতে ভালবাসেন তিনি, সবাইকে তা ভুলে থাকতেও দেন না। রুশ জেনারেল জুকোভস্কির দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখতে পাচ্ছেন তো, আমাদের তথ্যে কোন ভুল নেই। খাইবার পাসে রাশিয়ান অস্ত্রই বেশি।

জেনারেল জুকোভস্কির বয়েস ষাট, অত্যন্ত সুদৰ্শন; তার ইংরেজিও খুব ভাল। চোরাই মাল, কয়েক হাত ঘুরে ওখানে পৌছেছে। তবে সবই যে আমাদের কাছ থেকে চুরি গেছে, তা নয়। আফগান ওঅরফিল্ডে ওগুলোর বেশিরভাগই আমেরিকানরা দখল করে নেয়, চোরেরা তাদের কাছ থেকে নিয়ে গেছে।

বড় একটা যুদ্ধ বা বিপ্লব ঘটাবার জন্যে যথেষ্ট অস্ত্র আর গোলাবারুদ দেখা যাচ্ছে ওখানে,বুক ফুলিয়ে, সশব্দে, ফুসফুসে বাতাস ভরলেন অ্যাডমিরাল রবিনহুড। কাজেই প্ল্যান বি শুরু করা যেতে পারে, কি বলেন? চোরা বাজারের ওপর হামলা চালাবার সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়ে রেখেছেন তিনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি পেয়েছেন, কাজেই আর কারও সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন বোধ করছেন না। লাল ফোনটা ধরার জন্যে হাত বাড়িয়ে বিল হ্যামারহেডের দিকে তাকালেন। আপনাদের লোককে কেটে পড়তে বলুন।

বিএসএস চীফ মারভিন লংফেলো বাধা দিলেন। অ্যাডমিরাল, এটাকে আমি একটা সামরিক সমস্যা বলে স্বীকার করছি, কিন্তু তাই বলে….

হ্যাঁ, সামরিক সমস্যাই, এবং বিশ্বাস করুন…. , থেমে গেলেন অ্যাডমিরাল, ফোনের রিসিভারে নির্দেশ দিলেন, এইচএমএস চেষ্টারফিল্ড….

হেডসেটে দ্রুত কথা বলছেন বিল হ্যামারহেড। খাইবার পাসে উপস্থিত তাঁদের প্রতিনিধির সঙ্গে, হোয়াইট ফেস টু ব্লাক নাইট, বু কিং প্ল্যান বি শুরু করতে যাচ্ছেন।

…এবং বিশ্বাস করুন, আগের অসমাপ্ত কথার খেই ধরে মারভিন লংফেলোকে বললেন অ্যাডমিরাল রবিনহুড, আপনার মত আমিও আশপাশের গ্রামগুলো সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তবে ওগুলো কম করেও দুমাইল দূরে। আর ক্রুজ মিসাইল এতটা নিখুঁত যে টার্গেটের দুই গজের মধ্যেই আঘাত হানবে।

মি. লংফেলো সকৌতুকে জিজ্ঞেস করলেন রুশ জেনারেল, আপনি কি সন্ত্রাসীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বিগ্ন?

তার দিকে কটমট করে  তাকালেন বিএসএস চীফ। আমার উদ্দেশ্য পরিস্থিতিটা পুরোপুরি বুঝতে পারা। সেজন্যেই অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে যোগ্য একজন স্পাইকে ওখানে পাঠানো হয়েছে।

ফোনে হুঙ্কার ছাড়লেন অ্যাডমিরাল রবিনহুড, ব্লু কিং টু গ্রীন হেলমেট। ফায়ার করার অনুমতি দেয়া হলো।

প্রায় আড়াই হাজার মাইল দূরে, গালফ অব ওমানে পুরোপুরি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এইচএমএস চেস্টারফিল্ড। এটা একটা ডিউক ক্লাস ফ্ৰিগেট, টাইপ থ্রী; সঙ্গে আছে আটটা ম্যাকডোনেল ডগলাস হারপুন টু-কোয়াড লঞ্চার, সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল ছোড়ার জন্যে। সারফেস-টু-এয়ার মিসাইলের জন্যে আলাদা  লঞ্চার আছে। ফায়ার করার নির্দেশ পেয়েই ব্রিজ থেকে ইন্টারকমের মাধ্যমে অপারেশনস রূমে মেসেজ পাঠালেন ক্যাপটেন, ফায়ার করার প্রস্তুতি নিন। গণনা শুরু হলো–ফাইভ, ফোর, থ্রী, টু….

ডেকের লঞ্চার ঘুরে গিয়ে পজিশন নিল, পরমুহুর্তে বিস্ফোরিত হয়ে বেরিয়ে গেল একটা ক্রুজ মিসাইল। মিসাইল ছুটছে, অপারেশন রূম থেকে ইন্টারকমে চিৎকার করলেন ফায়ারিং অপারেটর।

লন্ডন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিচুয়েশন রূম; আলাদা একটা ভিডিও ক্রীনে দর্শকরা এখন স্যাটেলাইটের চোখ দিয়ে মিসাইলটার পথ ও অগ্রগতি চাক্ষুষ করছেন। চেস্টারফিল্ডের ইন্টারকমে যা কিছু বলা হচ্ছে তা-ও তাঁরা শুনতে পাচ্ছেন। চেহারা দেখে বোঝা গেল জেনারেল জুকোভস্কি প্রভাবিত হয়েছেন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়েলেৎসিনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের নিজেদের সিচুয়েশন রূমটাকে আরও উন্নত করতে হবে।

টার্গেটে আঘাত করতে আর বাকি চার মিনিট আট সেকেন্ড, ফায়ারিং অফিসার রিপোর্ট করলেন। ফ্রিগেট থেকে খাইবার পাসের চোরা বাজারের দূরত্ব কমবেশি আটশো মাইল।

হেডসেটে উত্তেজিত গলায় কথা বলছেন বিল হ্যামারহেড, ব্ল্যাক নাইট! চার মিনিট পর সংঘর্ষ! সরে যান, প্লীজ, সাইট ছেড়ে সরে যান! অপরপ্রান্ত থেকে হেডসেটের মাধ্যমে কিছু একটা শুনতে পেয়ে ভুরু কোচকালেন, তারপর চোরা বাজারের ছবি ফুটে থাকা ভিডিও মনিটরের দিকে কুঁকলেন–দেখলেন, ডান পাশের মিগটাকে আড়াল করে রেখেছে বাদামী রঙের একটা জীপ। হ্যাঁ, দেখতে। পাচ্ছি জীপটাকে। কিন্তু, না! ওখানে আপনার আর থাকা। চলে না! প্লীজ, মি….., ভুলে নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে সামলে নিলেন নিজেকে, …প্লীজ, ব্ল্যাক নাইট, ফর গডস সেক, আর এক সেকেন্ডও দেরি করবেন না!

চীফ অব স্টাফের গলায় জরী তাগাদা, লক্ষ করে মনিটরের দিকে ঝুঁকলেন মারভিন লংফেলোও। একটা জীপ সত্যি সত্যি ডানপাশের মিগটাকে আড়াল করে রেখেছে। উপস্থিত বাকি সবাই অপর মনিটরে মিসাইলের যাত্রাপথ অনুসরণ করছেন, দুফুট দূরে শুরু হওয়া নতুন নাটকের দিকে কারও খেয়াল নেই।

চেস্টারফিল্ডের ফায়ারিং অফিসার রিপোর্ট করলেন, চার মিনিট পর সংঘর্ষ।

মুখে তৃপ্তির হাসি, বিএসএস চীফের দিকে ফিরলেন। অ্যাডমিরাল রবিনহুড। সব ভাল যার শেষ ভাল, কি বলেন?

শাট আপ! কর্কশ গলায় ধমক দিলেন মারভিন লংফেলো।

এই ধমক অপ্রত্যাশিত ও অবিশ্বাস্য, অ্যাডমিরাল এতটাই অবাক হলেন যে রাগ করতে ভুলে গেলেন। নিজের অজান্তেই মনিটরের দিকে তাকালেন, বিএসএস চীফের দৃষ্টি অনুসরণ করে।

জীপটা সরে গেল, মিগের ডানাটা মনিটরে এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ফিন্ডে বিএসএস-এর প্রতিনিধি যা দেখতে পাচ্ছে, লন্ডনে বসে এরা সবাইও এখন তাই দেখতে পাচ্ছেন। সাইট থেকে বিএসএস প্রতিনিধি কেন সরছে না, সবার কাছেই তা স্পষ্ট হয়ে গেল।

গুড গড! মস্ত । একটা ঢোক গিললেন অ্যাডমিরাল। ওটা কি…?

সিক্রেট সার্ভিসের চীফ অব স্টাফ জবাব দিলেন, একটা সোভিয়েত এসবি-ফাইভ নিউক্লিয়ার টর্পেডো! ডিভাইসটা মিগের ডানায় ফিট করা রয়েছে।

মারভিন লংফেলো গর্জে উঠলেন, মিসাইল ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিন!

জেনারেল জুকোভস্কি আতঙ্কে বিড়বিড় করছেন, ওহ গড, এ কি সৰ্বনাশ হতে যাচ্ছে।

হেডসেটে কথা বলছেন হ্যামারহেড, জীপটা সরাবার জন্যে ধন্যবাদ, ব্ল্যাক নাইট। গুড ওঅর্ক। কিন্তু আর এক সেকেন্ডও ওখানে থাকবেন না। সরে যান, প্লীজ, সরে যান!

লাল ফোনটা আবার ছো দিয়ে তুলে নিলেন অ্যাডমিরাল রবিনহুড। এইচএমএস চেষ্টারফিল্ড, আর্জেন্ট! জেনারেলের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, মিসাইল আঘাত করলে ওটা কি বিস্ফোরিত হবে?

জুকোভস্কি কাঁধ ঝাকালেন। হতেও পারে। আর যদি না-ও হয়, ওটায় এত বেশি প্লুটোনিয়াম আছে যে চেরনবিলকে পিকনিক মনে হবে। রেডিয়েশন! গোটা পার্বত্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে! জমাট বরফে, ওয়াটার সাপ্লাইয়ে…

কাছাকাছি গ্রামটার কি হবে? জিজ্ঞেস করলেন হ্যামারহেড। ওটা খালি করানো সম্ভব?

তিন মিনিটে? জেনারেল জুকোভস্কির চোখ দুটো বিফোরত হয়ে আছে। দুর্গম পাহাড়ী এলাকায়?

অ্যাডমিরাল ফোনে চিৎকার করছেন, ব্লু কিং টু গ্রীন হেলমেট অ্যাবর্ট মিসাইল! অ্যাবর্ট মিসাইল!

চেস্টারফিল্ডের ব্রিজ থেকে অ্যাডমিরালের নির্দেশ ইন্টারকমে পুনরাবৃত্তি করলেন ক্যাপটেন, অ্যাবর্ট মিসাইল!

অ্যাবর্ট বাটনে চাপ দিলেন ফায়ারিং অফিসার, কিন্তু কিছুই ঘটল না। স্যার, মিসাইল ধ্বংস করার জন্যে বোতামে চাপ দিয়েছি, কিন্তু ফল পাচ্ছি না–ওটা এরই মধ্যে পার্বত্য এলাকায়  পৌছে গেছে।

অকস্মাৎ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিচুয়েশন রূমে অস্থির মৌমাছির মত ব্যস্ত হয়ে উঠলেন সবাই। শুরু হয়ে গেল চিৎকার–চেঁচামেচি আর ছুটোছুটি। অন্তত দশটা ফোনে কথা বলছেন অফিসাররা।

আবার চেষ্টা করুন! লাল ফোনে হুঙ্কার ছাড়লেন অ্যাডমিরাল। বারবার চেষ্টা করুন!

ফিল্ড এজেন্টের সঙ্গে কথা বলছেন হ্যামারহেড, ব্ল্যাক নাইট? আপনি এখনও ট্রান্সমিট করছেন কেন?

মনিটরের চারধারে চরম আতঙ্কের সামরিক সংস্করণ চাক্ষুষ করছেন ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস চীফ মারভিন লংফেলো; সবাই দিশেহারা ও অস্থির, তবু কোথাও এতটুকু বিশৃঙ্খলা নেই। তিনি নিজে পুরোপুরি শান্ত, প্রায় অস্বাভাবিকই বলতে হবে। তবে তিনি ও বিল হ্যামারহেড যা জানেন বাকি সবাই তা জানেন না। চীফ অব স্টাফকে ফিসফিস করে বললেন, ক্যামেরায় কিন্তু এখন কেউ নেই।

হ্যামারহেড জবাব দিলেন, তাহলে তো খুবই ভাল। তিনি অন্তত ওখানে নেই।

মাথা নাড়লেন মারভিন লংফেলো। ওকে তুমি এতদিনেও চেনোনি? যেখানে আছে বলে মনে করা হয় সেখানে কি কখনও থাকে?

 

 

*

সন্ত্রাসীদের দুজন গার্ড আগুনের পাশে বসে গা গরম করছে কোন ধারণাই নেই আর মাত্র দুমিনিট পর নিশ্চিত মৃত্যু ঘটবে। একজন গার্ড ঠোঁটে সিগারেট গুজে সারি সারি নিস্তব্ধ পাহাড়ের দিকে ঘাড় ফেরাল। একটা সোনালি ডানহিল লাইটার উদয় হলো তার মুখের সামনে, সিগারেটের ডগায় আগুন ধরিয়ে দিল। একবার ধোয়া টেনে চোখ ফেরাল গার্ড, দেখতে চায় কোন বন্ধু সাহায্যটুকু করল। ভাল করে তাকাবার আগেই প্রচণ্ড এক ঘুসি। খেয়ে জ্ঞান হারাল সে। তার হাত থেকে খসে পড়া পিস্তলটা ছো দিয়ে তুলে নিল মাসুদ রানা, সেটা দিয়ে বাড়ি মারল দ্বিতীয় গার্ডের চাদিতে।

হাতে সময় কম, দ্রুত ও সহজ পদ্ধতিতে কাজ সারছে রানা, তা না হলে প্রাণ নিয়ে এই জায়গা ছেড়ে পালাতে পারবে না। এরই মধ্যে একটা প্ল্যান তৈরি করেছে ও, সেটা এখন আর বদলানো সম্ভব নয়। রয়্যাল নেভীর ক্রুজ মিসাইল আসছে, টার্গেট এরিয়া থেকে নিউক্লিয়ার টর্পেডো সহ মিগটাকে সরিয়ে ফেলাই একমাত্র সমাধান; মাসুদ রানার কেতাবে কাপুরুষের মত পালানোর কথা লেখা নেই।

ডানহিল লাইটারটা উল্টো করে লুকানো সুইচে চাপ দিল রানা। খুদে একটা এলসিডি কাউন্টডাউন শুরু করল–ফাইভ, ফোর….

একপাশে পাহাড়ের মত । উঁচু হয়ে রয়েছে তেলের ড্রাম, সেগুলোর পিছনে ছুড়ে দিল লাইটারটা, তারপর ঝেড়ে দৌড়। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স হেডকোয়ার্টার ঢাকা থেকে এই লাইট গ্রেনেড নিয়ে এসেছে ও। পাঁচ সেকেন্ড পর ফাটল সেটা, সেই সঙ্গে গোটা  বাজার এলাকায় বিস্ফোরিত হলো বিশৃঙ্খলা আর হাঙ্গামা।

একটা স্কাড মিসাইল ক্যারিয়ার ওকে পাশ কাটাচ্ছে। চিনতে পেরে সঙ্গত কারণেই দাঁতে দাত ঘষল রানা। আট চাকার একটা ট্রাক, ফ্ল্যাটবেডটা লম্বা তাতে মিসাইলটা আটকানো রয়েছে তেরছা ভঙ্গিতে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এক মধ্যবয়স্ক ছাগলদাড়িকে এটা কেনার জন্যে দরদাম করতে দেখা গেছে খানিক আগে। মিসাইল ক্যারিয়ারের ড্রাইভার আগুন দেখে আর দেরি করেনি, নিরাপদ দূরত্বে সরে যাবার চেষ্টা করছে। লাফ দিয়ে ওটায় চড়ল রানা, ঠিক যখন অটোমেটিক রাডারের নির্দেশে গ্যাটলিং গান বিস্ফোরণের দিকে ঘুরে গেল। ওর তৈরি ডাইভারশন এরিয়ায় ঝাঁক ঝাঁক বুলেট ছুটছে।

রানার পরনে ঢোলা ওভারকোট, মাথায় হ্যাট, গলায় একটা উলেন মাফলার জড়ানো, ফলে হেডসেটটা ঢাকা পড়ে আছে। এতক্ষণ বিল হ্যামারহেডের গলা পেয়েছে, এবার স্বয়ং মারভিন লংফেলোর শান্ত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, যথেষ্ট হয়েছে, মাই বয়; এবার তুমি ওখান থেকে সরে এসো।

ইতিমধ্যে সবাই ছুটোছুটি শুরু করে দিয়েছে। গার্ডরা ছুটছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের শান্ত করার জন্যে, আর ত্রেতা-বিক্রেতারা অদৃশ্য শত্রুর উদ্দেশে এলোপাতাড়ি গুলি করছে। কেউ কাউকে ভাল করে চেনে না, ফলে ভুল বোঝাবুঝিও শুরু হলো, নিজেরাই নিজেদেরকে গুলি করছে। মহা গোলযোগের মধ্যে কেউ খেয়ালই করল না যে স্কাড মিসাইল ক্যারিয়ার ধরে ঝুলে রয়েছে এক লোক। ক্যারিয়ারটা ওদেরকে পাশ কাটিয়ে দূরে সরে এল।

মোটা টাকা দিয়ে কেনা লাল চৌকো বাক্সটা শক্ত করে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে আছে খায়রুল কবির, নায়কসুলভ সুদর্শন অবয়ব রাগে লালচে হয়ে আছে। চোখে আগুন, বডিগার্ডদের খোঁজে। চারদিকে দৃষ্টি বুলাচ্ছে। হতচ্ছাড়ারা গেল কোথায়! ডিভাইসটা হাতে পাবার জন্যে দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরতে হয়েছে তাকে, এখন পাবার পর সেটা যদি হারাতে হয়, দুঃখের আর সীমা থাকবে না।

প্যাক থেকে আরেকটা ডিভাইস বের করে স্কাড ক্যারিয়ারের গায়ে চাপড়ে বসিয়ে দিল রানা। ভেহিকেলটা মিগগুলোর কাছাকাছি পৌছে গেছে দেখে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ল, তারপর গড়িয়ে দিল শরীরটা।

কয়েক সেকেন্ড পর বিস্ফোরিত হলো ডিভাইস, স্কাড মিসাইল থেকে আগুনের উস্ফিগরণ শুরু হলো। শিখাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, গোটা বাজার ঢেকে ফেলতে খুব বেশি সময় নেবে না।

কবিরের দুজন বডিগার্ড লাফ দিয়ে একটা জীপে চড়ল, কিল ঘুসি মেরে নিচে ফেলে দিল ড্রাইভার আর প্যাসেঞ্জারকে। জীপ ঘুরিয়ে মনিবের কাছে চলে এল তারা। জীপে চড়ল কবির, চিতকার করছে, গেট দ্য হেল আউট অব হিয়ার! তার দুজন বডিগার্ডই আমেরিকান। সমস্ত হৈ-চৈ হাঙ্গামা পিছনে ফেলে রাস্তার দিকে ছুটল জীপ।

রয়্যাল নেভীর মিসাইল পৌঁছুতে আর সম্ভবত দুই মিনিট বাকি, গড়ান দিয়ে কাছাকাছি মিগটার তলায় চলে এল রানা, ওটার ডানাতেই নিউক্লিয়ার উইপন রয়েছে। এয়ারক্রাফটের নিচে দাঁড়িয়ে কয়েকটা বুলেট হোল পরীক্ষা করছিল পাইলট, ঘাড় ফেরাতে এক মুহুর্ত দেরি করে ফেলল। তার পা ধরে হ্যাচকা টান দিল রানা। লোকটা পড়ে যেতে সিধে হয়ে দাঁড়িয়ে লাথি মারল মাথায়। চিন্তার জন্যে না থেমে পাইলটের হেলমেটটা হাতে নিয়ে ককপিটে উঠল। ওর পিছনে নিজের সীটে বসা কো-পাইলট  চেঁচিয়ে উঠল, পিস্তল বের করে গুলি করতে যাচ্ছে। ঘুরে এক ঘুসিতে লোকটার নাক চ্যাপ্টা করে দিল রানা। তারপর হাতের হেলমেট দিয়ে মাথায় বাড়ি মারল। সীটের ওপর জ্ঞান হারাল কো-পাইলট।

মাথায় হেলমেট পরে কন্ট্রোল প্যানেলের দিকে তাকাল রানা, মিগ-টোয়েনটি নাইনের সঙ্গে পরিচয়টা ঝালাই করে নিচ্ছে। মিগ চালিয়েছে ও, তবে বহুকাল আগে। মাত্র দশ সেকেন্ডের মধ্যে সব মনে পড়ে গেল। মিগ-টোয়েনটি নাইনের রেঞ্জ সাতশো পনেরো মাইল, গ্রাউন্ড টার্গেটে আঘাত করার জন্যে একই সঙ্গে বহন করতে পারে মিসাইল, রকেট ও বোমার পুরো লোড। ডানার একটা শক্তিশালী কামান ফিউজিলাজের সঙ্গে মিশে গেছে। আরও আছে বিশেষ ধরনের রাডার, এঞ্জিনিয়াররা যেটাকে লুক-ডাউনড্রস্ট-ডাউন বলে–ওটা থাকায় লো-ফ্লাইং এয়ারক্রাফট  বা মিসাইলকে সনাক্ত ও আঘাত করা  যায়। ঘন্টায় এক হাজার  চারশো পঞ্চাশ মাইল গতি, মাত্র এক মিনিটের মধ্যে আকাশের পঞ্চাশ হাজার ফুট ওপরে উঠে যেতে পারে। রানা আশা করল, এই স্ট্যাটিস্টিক্স যেন নির্ভুল হয়। এঞ্জিন ফায়ার করল ও, জোড়া ক্যানাপি বন্ধ করার জন্যে চাপ দিল বোতামে।

প্রায় পঞ্চাশ ফুট দূর থেকে দ্বিতীয় মিগের পাইলট দৃশ্যটা হা করে গিলছে। চোখের ভুল নয়, এক লোক সত্যি সত্যি একটা মিগ চুরি করছে! এ তো দেখা যাচ্ছে ভারি মজা…

দ্বিতীয় মিগের এঞ্জিন জ্যান্ত হয়ে উঠল।

মিগটাকে গড়িয়ে এয়ারস্ট্রিপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে রানা, এরইমধ্যে সন্ত্রাসীদের কয়েকজন টের পেয়ে গেল আসলে কি ঘটছে। মিগ লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে তারা। কেউ কেউ জীপে চড়ে ছুটে আসছে।

প্লেনটাকে এক চক্কর ঘোরাল রানা, এঞ্জিন থেকে বিস্ফোরিত হয়ে বেরিয়ে আসা বাতাস ঝাড় দেয়ার ভঙ্গিতে দূরে সরিয়ে দিল জীপ আর সন্ত্রাসীদের। এরপর ডানার নিচে গানগুলো কাজে লাগাল, আগুন ধরিয়ে দিল বিস্ফোরক আর রকেটের কয়েকটা স্তুপে। খাড়া ও আকাশ ছোয়া শিখার পাচিল তৈরি হলো, রানওয়েতে  পৌঁছুনো পর্যন্ত ওদেরকে দূরে সরিয়ে রাখবে।

প্লেন ঘুরিয়ে নিয়ে আবার রানওয়ের দিকে ফুল স্পীড ছুটল রানা, চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকাল একবার, ধারণা করছে। যে-কোন মুহুর্তে মিসাইলটাকে দেখতে পাবে।

রানা তাকিয়ে আছে, সামনের মেঘ ভেদ করে উদয় হলো ক্রুজ মিসাইল, সরাসরি ওকে লক্ষ্য করে ছুটে আসছে। এই মুহুর্তে সময়ের হিসাবে সূক্ষ্ম কোন ভুল হলেও মৃত্যু নিশ্চিত। থ্রটল টেনে ধরেছে রানা–মিসাইলটা সরাসরি ওর ওপর দিয়ে ছুটে গেল; বলা যায় মাথার চুল দুভাগ করে–পরক্ষণেই কন্ট্রোল কলাম ঠেলে দিল সামনে। মিগের চাকা শূন্যে উঠল, একই সময়ে ওটার পিছনে বিস্ফোরিত হলো মিসাইল, দ্বিতীয় মিগটা চোখের পলকে অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হলো।

সিচুয়েশন কমে গত দুই মিনিট কেউ কোন কথা বলছেন না, ঘরের ভেতর টান টান উত্তেজনা, দম বন্ধ করে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। সাইট থেকে ক্যামেরা সরেনি, তবে ফ্রেম থেকে সরে গেছে মিগটা। মিগের ডানায় ফিট করা নিউক্লিয়ার টর্পেডো দেখতে না পাওয়ায় ব্রিটেনের সামরিক ও ইন্টেলিজেন্স অফিসাররা কেউ কেউ প্ৰমাদ গুনছেন, আবার কেউ কেউ প্রার্থনা করছেন। সংঘর্ষের নির্দিষ্ট সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে, ফায়ারিং অফিসার সেকেন্ড গুনছেন। তারপর তাঁরা দেখলেন মনিটরের সম্পূর্ণ দৃশ্যই সহস্র টুকরোয় বিস্ফোরিত হলো। সমস্ত ক্রীনের ইমেজ হয়ে দাঁড়াল ভিডিও সো।

ওদিকে ত্রুজ মিসাইলের সংঘর্ষ মাটির বুকে নরক তৈরি করেছে। অস্থির একটা বিশাল অগ্নিগোলক ল্যান্ডিং স্ট্রিপের ওপর গম্বুজের আকৃতি নিচ্ছে, রানার মিগটাকে গ্রাস করে ফেলবে। থ্রটল ঠেলে দিয়ে দ্রুত ওপরে, আরও ওপরে উঠে যাচ্ছে রানা, আতঙ্কে নীল হয়ে গেছে মুখ। অবশেষে কমলা রঙের গম্বুজের আঁচ আর ধোয়ার নাগাল থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল মিগ পরিচ্ছন্ন আকাশে।

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল, চোখ বুজে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করল। রানা। পেরেছে ও, সোভিয়েত টর্পেডো সরিয়ে আনতে পেরেছে। মনে মনে গাল দিল অ্যাডমিরালকে, ব্যাটা উজবুক! এখন প্রশ্ন হলো, যায় কোথায়? এইচএমএস চেস্টারফিল্ড বহু দূরের পথ, কাজেই ওদিকে যাবার প্রশ্ন ওঠে না। ছাগলদাড়ির চেহারাটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। আশা করা যায় খাইবার পাসে পটল তুলেছে লোকটা। তবে পেশোয়ারে তার একজন সঙ্গীর অপেক্ষা করার কথা। অবৈধ অস্ত্রের চালান নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখন পেশোয়ারে গিয়ে ওই লোককে যদি পাকড়াও করা যায়, ওর অ্যাসাইনমেন্ট পুরোপুরি সফল বলে গণ্য করা হবে।

দীর্ঘ বহু বছরের ত্যাগ, সাধনা ও নিষ্ঠার কল্যাণে সম্ভাবনাময় বাঙালী জাতির অন্যতম গৌরবে পরিণত হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান–মাসুদ রানা। বুকে সৎ সাহস লালন আর দেশের জন্যে প্রয়োজনে অশ্রুবিসর্জন দেয়ার সঙ্কল্প ওকে মহত্ত্ব দান করেছে। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স একটা নিঃপ্রাণ কাঠামো মাত্র, প্রেরণাদাতা প্ৰাণ-পুরুষ বলতে বোঝায় মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) রাহাত খানকে, আর তার নিজের হাতে গড়া মাসুদ রানা হলো ঘনঘোর অন্ধকারে আশার একটা আলো। অক্লান্ত এক বীর যোদ্ধা। একাই একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে, এরকম স্পাই বিসিআইতে আরও কয়েকজন আছে, এই অভাগা জাতি তাদেরকে নিয়েও কম গর্বিত নয়। তবে মাসুদ রানার সঙ্গে বোধহয় কারুরই কোন তুলনা চলে না।

বেশ কিছুদিন থেকে গুজব শোনা যাচ্ছিল বিদেশ থেকে চোরা পথে চট্টগ্রামে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র আসছে। এক শ্রেণীর মৌলবাদী ফ্যানাটিক দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্যে বিদেশী শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, বিপুল পরিমাণ অস্ত্ৰ এনে ক্যাডারদের মধ্যে বিলি করাই তাদের উদ্দেশ্য। গুজবের সত্যতা জানার জন্যে ইন্টারপোলের সাহায্য প্রার্থনা করে বিসিআই। এক মাস তদন্ত করার পর ইন্টারপোল রিপোর্ট করে, গুজব মিথ্যে নয়, কুখ্যাত এক রাজাকার পরিবার অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা শুরু করেছে, সরাসরি খাইবার পাস থেকে অস্ত্র কিনে আনছে তারা। বিসিআই হেডকোয়ার্টারে ডাক পড়ল মাসুদ রানার, অপরাধীদের নিমূল করার দায়িত্ব দেয়া হলো ওকে।

ঠিক ওই সময় ব্রিটিশ সিক্রেট  সার্ভিসও ইন্টারপোলে খোঁজ খবর নিচ্ছিল, জানতে চাইছিল আন্ডারগ্রাউন্ডে যে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র আসছে তার উৎসটা কোথায়। তাদেরকে ইন্টারপোল জানাল, উৎস হলো পাক-আফগান সীমান্ত, অৰ্থাৎ খাইবার পাস। এই তথ্য পাবার  পর ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস খাইবার পাসের চোরাই অস্ত্রের বাজার ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়, তা না হলে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পারা যাবে না। পাক ও আফগান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা। দুই সরকারই ইতিবাচক সাড়া দিতে দেরি করেনি। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল ফিল্ডে কাকে পাঠানো হবে তাই নিয়ে। এজেন্টকে পশতু, পাঞ্জাবী আর উর্দু ভাষায় দক্ষ হতে হবে, তার চেহারাটাও হওয়া চাই স্থানীয় লোকজনদের মত, তা না হলে ধরা পড়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। সমাধানের পথ দেখাল ইন্টারপোল। তারা জানাল, বিসিআই মাসুদ রানাকে খাইবার পাসে পাঠাচ্ছে। বিএসএস চীফ মারভিন লংফেলো ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন, কথা বললেন সরাসরি জেনারেল রাহাত খানের সঙ্গে। এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে, কাজেই বিএসএস চীফের অনুরোধ রক্ষা করতে রাজি হলেন বিসিআই চীফ। ঠিক হলো খাইবার পাসে রানা ব্রিটিশদেরও প্রতিনিধিত্ব করবে।

এই মুহুর্তে ব্রিটিশ সিচুয়েশন রুমে হাসছেন সবাই। হেডসেট থেকে টেনে একটা প্লাগ খুলে ফেলেছেন মারভিন লংফেলো, ফলে রানার গলা উপস্থিত সবাই শুনতে পাচ্ছেন। রানা বলছে, কো-পাইলটকে নিয়ে পেশোয়ারে ল্যান্ড করতে যাচ্ছি আমি। মি. লংফেলো, কি ঘটেছে সবই আপনারা দেখেছেন। আশা করি বাজারটা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মানে আমার কাজ শেষ।

আমরা সবাই তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ, মাই বয়, লংফেলো বললেন। তুমি সম্ভবত শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা থেকে দুনিয়াকে বাঁচিয়েছ। নিউক্লিয়ার ডিভাইসটা বিস্ফোরিত হলে কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ত। অ্যাডমিরাল রবিনহুড বলছেন তোমার প্রতি তিনি চিরঋণী হয়ে থাকবেন…

তার প্রতি আমার একটাই অনুরোধ, নামটা পাল্টাতে বলুন। রবিনহুড একটা আদর্শের নাম, ব্যক্তিবিশেষ ব্যবহার করলে সেটার অমর্যাদা করা হয়।

চোখ-মুখ গরম আর লাল হয়ে উঠলেও, অপমানটা নীরবে হজম করলেন অ্যাডমিরাল।

লংফেলো বললেন, তোমার কাজ শেষ, এ-কথা বোধহয় ঠিক নয়। ওখানে খায়রুল কবিরকে দেখা গেছে। তার হাতে কি ছিল তুমি দেখেছ।

হ্যাঁ, দেখেছি। কবির সম্ভবত বড় ধরনের কোন অপরাধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ওকে শায়েস্তা করার প্রয়োজনে তোমার সাহায্য দরকার হলে পাব তো? জানতে চাইলেন বিএসএস চীফ।

হ্যাঁ, অবশ্যই।

<

Super User